তুমি আমারই পর্ব-০৪

0
3391

#তুমি_আমারই
#পর্ব_৪
#Sumaia_Jahan

আমি তো ভেবেছিলাম বউ পাল্টে যাওয়ার কারনে আমার শ্বাশুড়ি মা স্টার জলসার সিরিয়ালের শ্বাশুড়িদের মতো আমার উপর ক্ষেপে যাবেন।আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করবেন।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় উনি এসব কিছু তো করলেনই না বরং আমাকে নিজের মেয়ের তো ভালোবাসছেন।শুধু শ্বাশুড়ি মা না শ্বশুর মশাইও আমাকে ভালোবাসছেন।
একটু আগে আমার সাথে বাড়ির সবার পরিচয় করিয়ে দিলো আমার শ্বাশুড়ি মা।
রোদ্দুর ভাইয়ার ছোট বোন রুহি।ও এবার ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।রোদ্দুর ভাইয়ার একটা ছোটো ভাইও আছে।ওর নাম রাহাত।রাহাদ অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।আমার এক ক্লাস জুনিয়র।
রুহি আর রাহাদ দুজনেই খুব মিশুকে। ওরা এসেই আমার সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।কে বলবে ওদের সাথে আমার একদিনের পরিচয়। ওদের দেখে মনে হচ্ছে আমি ওদের শত বছরের চেনা।ওরা আমায় কি বলে ডাকবে দুজনে মিলে আগে থেকেই নাকি ঠিক করে রেখেছে।ওরা আমাকে ভাবিমনি বলে ডাকবে।মাঝে মাঝে রুহি আর রাহাতের দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া লেগে যায়। আমি ওদের ঝগড়া গুলো খুব এনজয় করি।
ভাই বোনদের সম্পর্ক গুলো ঠিক কেমন হয় আমি ঠিক ভালোমতো জানি না।বাবা মার একমাত্র সন্তান হওয়ার কারনে আমার তো কোনো ভাই বোন ছিলো না। রুহি আর রাহাদ কে না দেখলে জানতামই না ভাই বোনের সম্পর্ক গুলো কতোটা মধুর হয়।আমার ভাবনার মাঝে রুহি আমাকে হালকা ধাক্কা দিলো। ওর ধাক্কায় আমি ভাবনা জগৎ থেকে বেরিয়ে এলাম।রুহি আমাকে বললো,

— ভাবিমনি কোথায় হারিয়ে গেলে? আমি সেই কখন থেকে তোমাকে কতো কিছু বললাম তুমি তো কিছুই বলছো না।

রুহি সাথে তাল মিলিয়ে রাহাত বললো,

— হ্যা ভাবিমনি এই রুহি এতোক্ষণ বক বক করতে করতে আমার কান ঝালাপালা করে দিলো।দেখো আমার কান এখনো ব্যাথা হয়ে আছে।দেখ রুহি আমার কানের যদি কিছু হয় তাহলে তোর কান দুটো কেটে নেব বলেদিলাম।

রাহাতের কথা শুনে রুহি তো রেগে আগুন ও রেগে জোরে রাহাতকে বললো,

— ভাইয়া তই কি বললি আমি বকবক করে তোর কান ঝালাপালা করে দিয়েছি!

রাহাত ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

— অবশ্যই! কেন তোর কোনো সন্দেহ আছে নাকি?

রাহাতের এমন কথা শুনে রুহির রাগতো এবার শেষ সীমানায় পৌঁছে যায়।এখন ওদের কে না থামালে ব্যপারটা মারামারির তে চলে যাবে।তাই রুহি রেগে কিছু একটা করতে যাবে তার আগেই আমি ওকে থামিয়ে রাহাত কে বললাম,

— রাহাত ও ছোটো মানুষ তাই একটু কথা বলতে পছন্দ করে। তুমি ওকে এবাবে বলো না।

রাহাত আমার কথা শুনে রুহি দিকে একবার অবাকের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমাকে বললো,

— ভাবিমনি তুমি কি ওকে ছোটো বলেছো।এতো বড়ো একটা মহিলা কে তুমি ছোটো বললে কি করে?

রুহি এবার কাঁদো কাঁদো সুরে বললো,

— ভাইয়া তুই আমাকে এভাবে ইনসাল্ট করতে পারলি!

আমি এবার রাহাতে দিকে তাকিয়ে বললাম,

— রাহাত দেখ তোমার কথায় ও কতোটা কষ্ট পেয়েছে। বেচারি একেবারে কেঁদেই দিলো।তুমি ওকে সরি বলবে তা আবার এক্ষুনি ওকে!

রাহাত মুখ ফুলিয়ে বললো,

— ভাবিমনি তুমি ওর জন্য আমকে বকলে?ঠিক আছে আমি ওকে সরি বলবো।তুমি বললে বলেই সরিটা বলছি নাহলে কিন্তু কোনোদিনও বলতাম না।

তারপর রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,

— সরি রুহু আমার কথায় খুব কষ্ট পেয়েছিস না।সরি আমি এভাবে বলতে চাইনি রে।প্লিজ আর এভাবে কাঁদিস না।আমি তো সরি বললাম।

রাহাতের কথায় আমি আর রুহি একসাথে হেসে দিলাম।ও মুখে রুহির সাথে ঝগড়া করলেও ও আসলে রুহিকে খুব ভালোবাসে।যেমন একটু আগে আমাকে বললো শুধু মাত্র আমার কথায় নাকি রুহিকে সরি বলবে।কারো কথায় যদি কেউ সরি বলে তাহলে কি এতো লম্বা ভাবে সরি বলে।ও যে মন থেকে সরিটা বলেছে তা ওর কথাতেই বোঝা যাচ্ছে।
ওর অভিনয় টা এভাবে ধরা পরে যাওয়াতে মাথা চুলকে একু হাসার চেষ্টা করে রাহাত বললো,

— আসলে এভাবে সরি বললে রুহি খুশি হবে তাই এভাবে বললাম আরকি।সরি টা কিন্তু ভাবিমনি তোমার কথায় বললাম। তোমরা আবার অন্য কিছু মনে করো না।

ওর কথায় আমরা আবার হেসে দিলাম।এরমধ্যেই রোদ্দুর ভাইয়া এসেছে। উনি এতোক্ষণ বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেছিলেন।সেখান থেকেই এসেছেন। এসেই বলে ওঠলেন,

— তোরা এতো হাসছিস কেন?এটা কি কোনো লাফিং ক্লাস নাকি?

— রোদ ভাইয়া তুমি তো দেখি দিনে দিনে হিংসুটে হয়ে যাচ্ছো।তুমি এখন হিংসুটে ও আর যাই হোও তাতে আমার কিছু আসে যায় না,এখন আমার ভাবিমনি এসে গেছে তোমাকে আর লাগবে না হুম। যাইহোক আজকে রাতে ভাবিমনি কিন্তু আমার সাথে আমার রুমে ঘুমাবে।(রুহি রোদ্দুর কে রোদ ভাইয়া বলে ডাকে)

রোদ্দুর ভাইয়া বললো,

— এহে আইছে কোথ থেকে আমার বউ আমার সাথে না ঘুমিয়ে উনার সাথে ঘুমাবে।যা ভাগ আমার বউরে আমি জীবনেও অন্য করো সাথে থাকতে দিবো না। আমার বউ আমার সাথেই থাকবে হুম।

আমি কোথায় থাকবো কোথায় ঘুমাবো সেটা সম্পুর্ন আমার ব্যাপার।বেটা আমারে ব্লাকমেল করে বিয়ে করে এখন আবার আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে আইছে।আমিও আশপিয়া কাউকে ভয় পাই নাকি!এখন থেকে এই বেটা যা বলবে আমি ঠিক তার উল্টো কাজটাই করবো হুম।হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেবো ব্লাকমেল করে বিয়ে করার মজা।তাই আমি বললাম,

— আপনি তো দেখি ভারী নিষ্ঠুর মানুষ। নিজের ছোটো বোনটা একটা আবদার করছে। কোথাই তার আবদার পুরোন করবেন তা না ওকে বকা দিচ্ছেন। আপনি বড়োই নিষ্ঠুর।কিন্তু আমি তো আপনার মতো না।রুহি তুমি একদম চিন্তা করো না তোমার ভাবিমনি আছে তো।আমি তোমার সাথে শুধু আজকে রাত কেন তুমি চাইলে প্রতিদিন দিনই থাকতে রাজি।তুমি শুধু একবার বলে দেখো?

রুহি খুশিতে লাফিয়ে ওঠে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলো,

— সত্যি ভাবিমনি? তুমি আমায় এত্তো ভালোবাসো।

একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমিও ওকে জড়িয়ে ধরলাম। আমি তো আসলে আমার ব্লাকমেলওয়ালা বরকে শিক্ষা দিতে এগুলো বলেছিলাম।কিন্তু ও তো দেখি সত্যি সত্যি মনে করেছে।তবে এটা ঠিক আমি রুহিকে সত্যিই ভালোবাসে ফেলেছি।শুধু রুহি কেন রোদ্দুর ভাইয়া ছাড়া এ পরিবারের সবাই কেই এই কয়েক ঘন্টায় ভালোবাসে ফেলেছি।ওরা এতোটাই ভালো যে না ভালোবাসে পারা যায় না। কিন্তু রোদ্দুর ভাইয়া এই পরিবারের একজন হয়েও এমন ঘাড়ত্যাড়া হলো কিভাবে কে জানে!মনে হয় উনাকে কুড়িয়ে পেয়েছ তাই হবে হয়তো।

আমাদের কথা শুনে রোদ্দুর ভাইয়া কিছু বলতে যাবে ঠিক তক্ষুনি শ্বশুর মশাই আর শ্বাশুড়ি মা এসে পড়েন তাই উনি কিছুই বলতে পারেন নি।কিন্তু আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বললেন পড়ে দেখে নিবেন।আমি উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে শ্বশুর মশাই আর শ্বাশুড়ি মায়ের দিকে মুখে হাসি হাসি ভাব করে তাকাই। শ্বশুর মশাই বললেন,

— আশপিয়া মা তোমার এখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে নাতো?আসলে বুঝতেই তো পারছো অনেক মেহমান আসছে তাই ওদের কে সামলাতে হচ্ছে তাই তোমাকে আমরা বেশি সময় দিতে পারছি না।

আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,

— না বাবা একদমই কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আপনারা দুজন আমাকে যথেষ্ট সময় দিয়েছেন। আজকে আপনাদের মতো মা বাবা পেয়ে আমি খুব খুব খুশি।

চলবে,,,,