তুমি আমারই পর্ব-০৫

0
3230

#তুমি_আমারই
#পর্ব_৫
#Sumaia_Jahan

আমি এখন রোদ্দুর ভাইয়ার গলায় ছুরি ধরে আছি।রোদ্দুর ভাইয়া অনেকক্ষণ ধরে আমার হাত থেকে ছোটার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমিও খুব শক্ত করে ধরে রেখেছি উনাকে তাই উনি আমার হাত কিছুতেই বেরতে পারছেন না।উনার এমন অবস্থা এ দেখে আমার খুব হাশি পাচ্ছে।

ফ্লাশ ব্যাক,

শ্বশুর মশাই এর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর শ্বাশুড়ি মা আমার হাত টা ধরে আমাকে বললো,

— আশপিয়া আমার সাথে একটু এসো তো।

উনার দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমি বললাম,

— কোথায় যাবো।

উনি আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে বললো,

— গেলেই দেখবে।এখন চুপচাপ আমার সাথে চলো।

আমি আর কথা বাড়ালাম না।শ্বাশুড়ি মানুষ আমাকে ভালোবাসে কোথাও নিয়ে যেতে চাচ্ছেন আমার এতো প্রশ্ন করা উচিৎ না। তাই উনার সাথে চুপচাপ যেতে লাগলাম।
শ্বাশুড়ি মা আমাকে একটা রুমে নিয়ে এলেন।অনেক গুলা মেয়ে বসে আছে। সাথে অনেক রকমের কসমেটিকস আর কয়েকটা শাড়ি। শ্বাশুড়ি মা আমার হাত ধরে মেয়ে গুলোর কাছে নিয়ে মেয়ে গুলোর উদ্দেশ্যে বললো,

— আমার বউমাকে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দেবে।এমনিতেও আমার বউমা খুব সুন্দর। এখন সাজিয়ে আরো সুন্দর করে দেওতো দেখি!

মেয়ে গুলো হাসিহাসি মুখে জবাব দিলো,

— জী ম্যাডাম আমরা এমনভাবে সাজিয়ে দেব যে আপনার বউমাকে আরো দিগুণ সুন্দর লাগবে।

আমি ওদের কথার মাঝে বলে ওঠলাম,

— মা আমি তো সেজেই আছি। আমাকে আবার সাজাতে হবে কেন?

শ্বাশুড়ি মা আমার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললেন,

— হুম তুমি সেজে আছো ঠিকই। কিন্তু আজ তো তোমাদের বাসর রাত।তাই এখন তোমাকে একটু নতুন করে সাজাচ্ছি।

শ্বাশুড়ি মায়ের কথাটা শুনে আমার মাথায় বাজ পড়লো। আমি এতোক্ষণ কিছু করিনি কারণ আমি জানতাম রোদ্দুর ভাইয়া আমাকে এতো সহজে ছাড়বে না।যে লোকটা ব্লাকমেল করে বিয়ে করতে পারে সে কি আমাকে এতো সহজে ছাড়বে? হয়তো নতুন কোনো ফন্দি এঁটে আমাকে আমাকে ঠিক আটকে রাখবে।তাছাড়াও দিয়া আর রাজিব ভাইয়ারও কোনো খোঁজ পাইনি। এই লোকটাকে তো বিশ্বাস নেই যদি ওদেরকে এখনো আটকে রাখে।তাই আমি ঠিক করেছি আগে দিয়া আর রাজিব ভাইয়ার খোঁজ নিবো।ওদের কে খুঁজে পাওয়ার পর আমি কোনো একটা প্লান করে এখান থেকে পালিয়ে যাবো।কিন্তু এখন তো দেখি সবাই ধরে নিয়েছে আমি এই বিয়ে টা মেনে নিয়েছি। এখন যদি শ্বাশুড়ি মা আমাকে ওই ব্লাকমেলওয়ালা বরের সঙ্গে বাসর ঘরে ডুকিয়ে দেয় তাহলে তো আমি শেষ।আমি আর ভাবতে পারছি না।তাই আমি তারাতাড়ি শ্বাশুড়ি মা কে বললাম,

— কিন্তু মা আমি তো আজ রুহির সাথে ওর রুমে ঘুমাবো।

শ্বাশুড়ি মা বললো,

— তুমি রুহির ঘরে কেন ঘুমাবে কেন?আজ রোদ্দুর এর সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে।নিয়ম অনুযায়ী তোমাদের আজ বাসর রাত।আজ তো তোমরা একসাথে এক ঘরে থাকবে।

আমি উনাকে কি করে বোঝাই আমি এই বিয়েটাই মানি না আবার বাসর রাত!ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছি আমি রুহি কে কথার কথা বলেছিলাম আমি ওর সাথে ঘুমাবো।এখন ওইটাই বলে দেখি।শ্বাশুড়ি মাকে বললাম,

— মা আসলে রুহি আজ আমার সাথে ঘুমাতে চেয়েছিলো।তাই আমি রুহি কে কথা দিয়েছিলাম আমি ওর সাথে ঘুমাবো।

শ্বাশুড়ি মা আমার কথায় একটু হেসে বললো,

— ও তাই বলো!আসলে রুহি এমনই ওর কারো সাথে ভালো বন্ধুত্ব হলে তার সাথে ও সবসময় গল্প করতে চায়। তাই ও তোমাকে বলেছে ওর সাথে ঘুমাতে। তুমি চিন্তা করো না আমি ওকে ঠিক সামলে নিবো।ও তো আর একেবারে ছোটো না।ওর এতটুকু বোঝার কথা আছে।

কথা গুলো বলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ধিয়ে সাথে সাথে চলে গেলেন।আমাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগই দিলেন না।আমি এখন কি করবো?যে করেই হোক একটা প্লান করতেই হবে। শ্বাশুড়ি মা চলে যাওয়ার পর মেয়ে গুলো আমাকে সাজাতে শুরু করলো।আমি এদের সাথে কোনো ঝামেলা করতে চাই না। কারন আমি যানি এরা আমার কোনো কথাই শুনবে না।তাই এদের সাথে ঝামেলা করে সময় নষ্ট না করে আমাকে এখন ঠান্ডা মাথায় একটা প্লান বের করতে হবে।ওরা আমাকে সাজাচ্ছে আর আমি ভাবতেছি কি ভাবে এই বাসর রাত আটকানো যায়।

হঠাৎ করে আমার চোখে পরলো টেবিলে সাজিয়ে রাখা একটা ফলের ঝুড়ির দিকে। তবে ফলের উপর না ফলের উপর থাকা ছুরিটা উপর।এখন এটাই আমার একমাত্র বাঁচার উপায়।আল্লাহ তোমাকে এক ঝুড়ি ধন্যবাদ সঠিক সময়ে সঠিক টা দেখানোর জন্য। কিন্তু শুধু এক ঝুরিই ধন্যবাদ তার থেকে বেশি না হুম। কারণ তুমি আমাকে বিয়ের সময় সাহায্য করোনি।তুমি চাইলেই কিন্তু আমি তখন রোদ্দুর ভাইয়ার হাতে ধরা পরতাম না।আর উনি আমাকে ব্লাকমেল করে বিয়েও করতে পারতেন না হুম।তাই তোমাকে শুধু এই সাহায্যের জন্যই এক ঝুড়ি ধন্যবাদ তার থেকে বেশি না।

কিছুক্ষন পরে মেয়ে গুলো আমাকে সাজিয়ে চলে যায়। ওরা চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আমি উঠে ফলের ঝুড়ি থেকে ছুরি টা নিয়ে নিলাম।ছুড়ি টা হাতে নিয়ে মনে মনে খুব আনন্দ পেলাম।ওই বেটাকে আজকে ভালোমতো টাইট দেবো।ভাবতেই মনের ভিতর শান্তি লাগছে।

হঠাৎ করে দরজা খোলার আওয়াজ হলো।আমি তারাতাড়ি ছুরি টা শাড়ীর আঁচলে লুকিয়ে ফেললাম।ছুরিটা কেউ দেখলে সন্দেহ করতে পারে।

ছুরিটা আঁচলে লুকিয়ে পিছনে ঘুরে দেখি রুহি এসেছে। ও আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে উত্তেজিত হয়ে বললো,

— ভাবিমনি তুমি এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন? তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে এখানে?

আমি নিজেকে সামলিয়ে বললাম,

— না না কোনো সমস্যা হয় নি। অনেকক্ষন বসেছিলাম তো তাই একটু দাড়িয়েছি।

রুহি আমার কথায় একটু শান্ত হলো তারপর বললো,

— ওহ আমিতো ভেবেছিলাম তোমার কোনো সমস্যা হয়েছে তাই তুমি এভাবে দাড়িয়ে আছো।

ওরা সবাই আমাকে নিয়ে কতো ভাবে কতটা ভালোবাসে।ওদেরকে ছেড়ে আমি কি করে যাবো।ভেবেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু আমাকে তো যেতেই হবে।উনি আমার সাথে যা করলেন তাতে আমি কেন যে কেউই মেনে নিতে পারবেন না।
তাছাড়া আমি যে ছোটো বেলায় অনি কে কথা দিয়েছি আমি ওর জন্য অপেক্ষা করবো।এখন আমি যদি অন্য কারো সাথে ঘর বাধি তাহলে অনিকে দেওয়া কথা রাখতে পারবো না।আমি যে ছোটো বেলা থেকেই অনি ভালোবাসি।ওকে নিয়েই ঘর বাধার স্বপ্ন দেখেছি। এখন আমি কিভাবে অন্য কারো সাথে ঘর বাধতে পারি?আমাকে শক্ত হতে হবে।রুহিকে বললাম,

— সরি রুহি মন খারাপ করো না আজ আমি তোমার সাথে থাকতে পারবো না।অন্য একদিন থাকবো।

রুহি হাসি মুখে বললো,

— ভাবিমনি আমি একটুও মন খারাপ করিনি।আমি তখন রোদ ভাইয়ার সাথে মজা করছিলাম ওকে রাগানোর জন্য।

তারপর ও আমাকে নিয়ে রোদ্দুর ভাইয়ার রুমে নিয়ে গেলো। রুমটা খুব সুন্দর।পুরো রুম ফুল দিয়ে সাজানো। মনে হচ্ছে কোনো ফুলের বাগানে ডুকে পরেছি।রুহি আমাকে বিছানায় বসিয়ে বললো,

— ভাবিমনি তুমি একটু ওয়েট করো আমরা রোদ ভাইয়ার থেকে পারিশ্রমিক নিয়ে নিয়ে ওকে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি।

রুহির কথায় একটু হাসি দিয়ে ওকে বললাম “যাও”।

তারপর ও রুমের সামনে থেকে দরজা লক করে কয়েকজন মিলে দরজা গিরে দাঁড়ায়।ওদের সঙ্গে রাহাতও ছিলো।

রুহি চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আমি ছুরি টা নিয়ে দরজার কাছে দাড়ালাম।
ওরা সবাই একসাথে হৈ হৈ করে ওঠলো মনে হচ্ছে রোদ্দুর ভাইয়া এসেছে। ওরা একসাথে বলে ওঠলো,

— আমাদের পারিশ্রমিক দেও রোদ ভাইয়া।

রোদ্দুর ভাইয়া গম্ভীর গলায় বললে,

— কিসের পারিশ্রমিক? আর তোরা এখানে একসাথে কি করছিস?

রুহি বললো,

— রোদ ভাইয়া ঢং করো নাতো তুমি জানো না আমরা কিসের পারিশ্রমিক নিয়ে এসেছি।ওকে আমিই বলে দিচ্ছি তোমার বাসর ঘর আমরা সবাই মিলে সাজিয়েছি। তারপর আবার তোমার বউকে তোমার রুমে ডুকিয়ে এসেছি।এখন তুমি আমাদের এতো কষ্টের পারিশ্রমিক দিবা।নয়লে তোমাকে রুমে ডুকতে দিবো না হুম।

রোদ্দুর ভাইয়া বললো,

— তোদের পারিশ্রমিক চাই তাই না?

সবাই একসাথে বললো,

— হ্যাঁ

তারপর আমি আর কিছু শুনতে পারিনি কিছুক্ষন পর দরজা খোলার শব্দ হলো।ওদের হাত থেকে এতো সহজে ছাড়া পেলো কি করে। মনে হয় ওদের টাকা দিয়েদিছে।যাইহোক এই রহস্য পরে সমাধান করা যাবে। এখন আমার কাজটা আগে করি।রোদ্দুর ভাইয়া দরজা গুলে ভেতর ঢুকতেই আমি রোদ্দুর ভাইয়ার গলায় ছুরি ধরি।

বর্তমানে,

রোদ্দুর ভাইয়া আমার হাত থেকে ছুটতে না পেরে আমাকে ধমক দিয়ে বললো,

— কি হচ্ছে টা কি আমার গলায় ছুরি ধরছো কেন?

আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলাম,

— ব্লাকমেল করে বিয়ে করছেন। এখন আবার বাসর ঘরে কি করতে আসছেন আমি কিছু বুঝি না মনে করছেন।

রোদ্দুর ভাইয়া হাসতে হাসতে বললো,

— এই জন্য তুমি আমার গলায় ছুরি ধরছো। তোমার মনে হয় আমি তোমার সাথে বাসর করতে এ ঘরে এসেছি।

কথাটা বলেই আবার হাসতে শুরু করলো।একটু থেমে বললো,

— বয়েই গেছে তোমার সাথে বাসর করতে। মা আমাকে জোর করে পাঠিয়েছে তাই আমি তো এসেছি। নাহলে কখনো আসতাম না।

উনার কথা শুনে আমি খুশিতে লাফিয়ে ওঠে বললাম,

— তারমানে আপনিও আমাকে পছন্দ করেন না।তাহলে তো সবকিছুর প্রবলেম সল্ভ। আপনি আমাকে কবে ডিভোর্স দিবেন?

রোদ্দুর ভাইয়া বললো,

— আগগে না আপনাকে আমি জীবনেও ডিভোর্স দিবো না।তোমাকে আমার সাথে সারাজীবন এভাবেই থাকতে হবে।এটা তোমার পানিশমেন্ট।

— কিসের পানিশমেন্ট?

— কেনো ভুলে গেছো বিয়ের আগে আমার হবু বউকে তুমি পালাতে সাহায্য করেছো।এটা তোমার অপরাধের পানিশমেন্ট। গড ইট!

আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো আমি ভেবেছিলাম আমাকে বোধ হয় এবার মুক্তি দেবেন।কিন্তু আমার আসায় এক বালতি পানি ঢেলে দিলো এই বজ্জাৎ লোকটা।
হঠাৎ আমার হাতের উপর কি যেন দিলো রোদ্দুর ভাইয়া। আমি তাকিয়ে দেখি আমার হাতে……

চলবে,,,,,

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ]