তুমি আমারই পর্ব-০৭

0
2948

#তুমি_আমারই
#পর্ব_৭
#Sumaia_Jahan

রোদ্দুর ভাইয়া যখন বললো অন্য নামে ডাকতে তখন আমার মুখ থেকে আপনাআপনি “অনি” নাম টা বেরিয়ে এলো।রোদ্দুর ভইয়া অনি নাম টা শুনে সাথে সাথে বলে ওঠলেন,

—- বাহ দারুন নাম দিয়েছো তো আমার! আমি এতোক্ষণ পর্যন্ত ভেবেও মনের মতো একটাও নাম পেলাম না আর তুমি এক সেকেন্ডেই আমার মনের মতো একটা নাম বের করে ফেললে?তুমি তো দেখছি দারুণ নামকরণ করতে পারো।

উনার কথায় আমার হুস ফিরলো সাথে সাথেই বললাম,

—- না এই নামে আমি আপনাকে ডাকতে পারবো না।আপনাকে বরং আমি অন্য আরেক টা নামে ডাকবো।

রোদ্দুর ভাইয়া মুখ ফুলিয়ে বললো,

—- না আমার অন্য কোনো নাম চাই না।আমার এই নাম টা খুব পছন্দ হয়েছে। তাই তুমি আমায় এই নামে ডাকবে মানে এই নামেই ডাকবে হুম!

আমি করুণ কন্ঠে বললাম,

—- প্লিজ এমন করবেন না! আমি কিছুতেই আপনাকে এই নামে ডাকতে পারবো না।একটু বোঝার চেষ্টা করুন।

রোদ্দুর ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে একবার ভালো করে তাকিয়ে বললো,

—- কেন?এই নামে আমাকে ডাকতে কি সমস্যা তোমার?

উনার প্রশ্নে আমি চমকে উঠলাম।এখন কি উত্তর দিবো আমি? যদি বলি এই নামের মানুষ টা আমার ভালোবাসার মানুষ।তাই এই নামে আমি অন্য কাউকে ডাকতে পারবো না। উনি যদি এখন আমার অনির কথা জেনে আবার অনির কোনো ক্ষতি করে দেন।আমাকে যদি অনির কাছে আর না যেতে দেন।না উনাকে কিছুতেই অনির কথা বলা যাবে না।তাই আমি জোর পূর্বক একটু হেসে বললাম,

—- না মানে এই নাম টা আমার একদম পছন্দ না তাই।

রোদ্দুর ভাইয়া বললো,

—- কিন্তু আমার তো খুব পছন্দ হইছে এই নাম টা।তোমার যদি এতোই অপছন্দ হয় এই নাম টা তাহলে তখন তখন এই নাম টা কেন বললে?

নিজের মাথায় নিজে বাড়ি মারতে ইচ্ছে করছে।তখন যে কেন এই নাম টা বলতে গেলাম?এখন কি করি এই লোকটা তো এখন গোয়েন্দার মতো প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। এখন কি উত্তর দেই? কিছু তো বলতে হবে। তাই বললাম,

—- আসলে আমার এই নাম তো একদম অপছন্দের তাই আগেই আপনাকে সতর্ক করতে চেয়েছি আপনি যেন এই নাম টা না বললেন।আর আপনি আমার পুরো কথা না শুনেই আপনি আপনার মতো কথা বলেই যাচ্ছেন।

কথা গুলো একনাগারে বলে উনার দিকে একবার আরচোখে তাকালাম।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি আমার কথাটা পুরো পুরি বিশ্বাস না করলেও একটু একটু ঠিকই বিশ্বাস করেছেন।এটা দেখে একটা মনে অনেক টা সাহস বাড়লো।
রোদ্দুর ভাইয়া কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলে ওঠলেন,

—- আমার এই নাম টা খুব পছন্দ হইছে। আমার এই নাম টাই চাই। তোমার শতো অপছন্দ হলেও তুমি আমায় এই নামেই ডাকবা এটাই ফাইনাল হুম।

উনাকে আমি অনেক বোঝালাম কিন্তু অনার একটাই কথা উনাকে ” অনি ” নামেই ডাকতে হবে। এটা নাকি উনার এতোটাই পছন্দ হইছে যে এটা ছাড়া অন্য কোনো নামে ডাকা যাবে না এই নামেই ডাকতে হবে এটাই উনার কথা।এ কথা থেকে উনি এক চুলও নড়বেন না।এমন ঘাড়ত্যাড়া লোক আমি জীবনেও দেখি নি।অবশ্য আমিও একটু আকটু ঘাড়ত্যাড়ামি করি কিন্তু এতো না হুম। যাইহোক এখন বাধ্য হয়ে উনাকে অনি বলেই ডাকতে হবে আমাকে কি আর করার।

হঠাৎ আমার মনে পরলো তখন আমাকে ঘুম থেকে ওঠাতে চেয়েছিলেন কেন? তাই উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,

—- আচ্ছা রোদ থুক্কু অনি আপনি ওই সময় আমাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য এতো কিছু করলেন কেন?

উনি বললেন,

—- আমাকে না জিজ্ঞেস করে ঘড়ির দিকে একবার তাকাও।

আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আমার চোখ দুটো রসোগোল্লার মতো হয়ে গেলো কারন ঘড়িতে দশটা বাজে। আমার মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেলো। আমি রেগে উনাকে বললাম,

—- কতক্ষণ আমাকে ডাকলেন না কেন?

রোদ্দুর বিরক্তি গলায় বললো,

—- আমি ডাকি নি? তোমাকে আমি সেই সকাল সাতটা থেকে ডেকেই যাচ্ছি কিন্তু তুমি তো তোমার মতো ঘুমিয়েই যাচ্ছো।যখন নয় টা বেজে গেলো তখন বুঝলাম তোমার এই ঘুম পানি ছাড়া ভাঙ্গবে না তাই পানি মেরে ভাঙ্গালাম।আর এই এক ঘন্টা তোমার সাথে বকবক করতে করতেই কেটে গেল। এখন বলো আমার দোষটা কোথায়?

আমি বললাম,

—- আপনারই তো সব দোষ। আপনি যদি আগেই পানি মারতেন তাহলে তো আমি আগেই উঠে যেতাম তাই সব দোষ আপনারই হুম।

রোদ্দুর হাত জোর করে আমাকে বললো,

—- হ্যা বুঝতে পারছি সব দোষ আমার। আমার খুব খিদে পেয়েছে। মা বলেছে আপনাকে না নিয়ে গেলে আমাকে খেতে দেবে না।তাই আপনার যদি একটু করুণা হয় তাহলে আমার সাথে আসুন। তাহলে আমার কপালে একটু খাবার জুটবে।

উনার অবস্থা দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে। আমারও অবশ্য খিদে পেয়েছে তাই আর কথা বাড়ালাম না উনার সাথে গিয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলাম।
সোফায় বসে বসে গল্পের বই পড়ছিলাম তখন রুহি আসে। রুহি কে দেখে হাসি মুখে ওকে ডাকলাম,

—- আরে যে আসো আসো।

রুহি আমার পাশে এসে বসলো আর জিজ্ঞেস করলো,

—- ভাবিমনি কেমন লাগছে বাড়িতে। বোর হচ্ছো না তো?

আমি বললাম,

—- না না বোর হবো কেন আমার ভালোই লাগছে এ বাড়িতে।

কালকে রাতের কথা মনে পরে গেলো।তাই রুহি কে জিজ্ঞেস করলাম,

—- আচ্ছা রুহি কালরাতে তোমার ভাইয়ার থেকে কয় টাকা পেলে?

রুহি মন খারাপ করে বললো,

—- টাকা আর কই পেলাম!

আমি খুব আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করলাম,

—- কেন? তোমাদের কে টাকা দেয় নি? তাহলে তোমরা ওনাকে ছেড়ে দিলে কেন?

রুহি আবারও মন খারাপ করে বললো,

—- আর বলো না ভাবিমনি ভাইয়া খুব চালাক।কাল যখন আমরা টাকা চেয়েছিলাম তখন ও সবাই কে বললো সবার গোপন খবর নাকি ভাইয়ার কাছে আছে তখন ওখান থেকে যদি আমরা না যাই তাহলে ও নাকি সবার বাড়ির লোকের কাছে বলে দেবে।এটা শুনে তো সবাই ওখান থেকে হাওয়া হয়ে গেছে।

কথা গুলো রুহি খুব মন খারাপ করে বললো।ওদের সবার কান্ডের কথা শুনে খুব হাসি পাচ্ছে। আবার উনার থেকে ওরা কনো টাকা আদায় করতে পারেনি তার জন্য খুব খারাপ লাগছে।

চলবে,,,,,

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]