তুমি আমার জিবন পর্ব-০৪

0
112

#তুমি_আমার_জিবন
#লেখিকা_তৃষা_খাতুন
পর্ব ৪

হঠাৎ বসার ঘরে চেঁচামেচির আওয়াজে আমি রুম থেকে বের হয়। তখন আব্রাহাম এর দাদির সাথে কথা বলার পর আব্রাহাম সেখানে চলে আসায় আমাকে রুমে পাঠিয়ে দেয় আমার শাশুড়ি।

এরা কি নিয়ে চেঁচামেচি করছে বুঝতে পারছি না। আমি নতুন বউ , আমি তো আর এখানে সেখানে এখন যেতে পারবো না। এটা শশুড় বাড়ি , তাও রুম থেকে বের হয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করি।

____

আব্রাহাম অনেক রেগে আছে , রাগে তার মুখ হালকা লাল হয়ে আছে। আব্রাহাম এর দাদি আর ফুফু অনেক রেগে রেগে আব্রাহাম এর মায়ের সাথে কথা বলছে ।

আমি জানতাম এ বউ ভালো না । দেখছিস কেমনে আমার ছেলেকে নিজের বশে রাখছে।আবার নাতি দারেও আমাগো আলাদা করার চেষ্টা করে,(দাদি)

আমি আগেই বলেছিলাম মা, ভাবি আমাদের পছন্দ করে না । আমাদের দেখতে পারে না । দেখছো না কেমন করে আব্রাহাম এর বিয়ে একা একাই সেরে ফেলেছে । একটা বার জানায় নি।(ফুফু)

আহ্ , তোমরা থামবে । কি জা তা বলছো(আব্রাহাম এর বাবা)

আমরা ঠিক বলছি, তোমার বউ আমাদের হিংসা করে। আমাদের সুখ তার সহ্য হয়না । বেয়াদব মহিলা কোথাকার

ফুফু মুখ সামলে কথা বলবেন কার সমন্ধে কথা বলছেন ভেবে বলছেন তো ।(হুংকার দিয়ে কথা টা বলে আব্রাহাম)

এদিকে আব্রাহাম এর মা আয়েশা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবার সব কথা শুনে যাচ্ছে।

তোর সাহস তো কম না মিমি । তুই আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার বউ কে অসন্মান করিস। রাগি কন্ঠে বলে উঠে আব্রাহাম এর বাবা আরিফ চৌধুরী।

তোমার বাড়িতে আসছি বলে কথা শুনাচ্ছো(ফুফু)

আব্রাহাম এর দাদি বলে উঠে,

আমি আগেই বলেছিলাম, এ বউ আমার সংসার ভাঙবে। দেখ কেমন ভাইবোনের মধ্যে ঝগড়া লাগাই দিলো। বলেই তিনি আজাহারি করতে শুরু করেন।

এদিকে আব্রাহাম এর বড় ফুফু আর ছোট চাচা নির্বিকার ভাবে সব পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছেন। এবার আব্রাহাম এর বড় ফুফু তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,

আহ্ মা থামো তো কি আবল তাবল বকছো। আর ভাবি কেন ঝগড়া লাগাবে এই পর্যন্ত ভাবি একটা কথা বলে নি। তোমরাই তাকে যা নয় তা বলছো।

তুই এভাবে আমারে বলতে পারলি, অবাক হয়ে কথা টা বলে উঠে দাদি।

হুম বললাম, তুমি কেন মাথা ঘামাচ্ছো। আব্রাহাম যথেষ্ট বড় হয়েছে। ভালো মন্দ বিচার করতে সে জানে। সে কবে কাকে বিয়ে করবে সে টা তার বেপার । তার বাবা মা তার জন্য মেয়ে পছন্দ করে বিয়ে দেয় , যেখানে আব্রাহাম এর কোনো আপত্তি নেই এ বিয়েতে তোমরা কেন ঝামেলা করছো বলো তো ।

“”কিন্তু বড় আপা

“”কিন্তু কি

আমি তো বড় ভাই কে বলেই ছিলাম, আমার মেয়ে রাইমার সাথে আব্রাহাম এর বিয়ে দিতে চাই

আব্রাহাম এর ফুফুর কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়।
বিশেষ করে আব্রাহাম। সে এ বেপারে জানতোই না ।

___________

বাড়ির পরিবেশ টা হঠাৎ করে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। এতো ক্ষন যেখানে এতো হইচই, এতো চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছিল এখন সব নিস্তব্ধ হয়ে আছে। পুরো বাড়ি তে নিরবতা বিরাজ করছে। নিরবতা ভেঙ্গে আব্রাহাম বলে,

রাইমার সাথে আমার বিয়ের কথা আপনি বাবাকে বলেছেন কিন্তু কেন।অবাক হয়ে প্রশ্ন করি। আমি ছোট বেলা থেকেই আহিকে যেমন চোখে দেখি, এদের ও সেই চোখে দেখি। কোনো দিন রাইমা কে অন্য কোনো নজরে দেখিনি । সর্বদা ওকে বোন মনে করে আসছি । আর তার সাথে আমার বিয়ের কথা বলেছিল। প্রশ্ন টা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

আব্রাহাম এর বাবা বলে উঠে,

আমি নিজেদের মাঝে আত্তিয়তা। করতে চাইনি তাই আমি আব্রাহাম এর অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়েছি। এ বিয়ে তে সম্পুর্ন মত ছিল আব্রাহাম এর।তাই এ বেপারে কোনো কথা বলতে চাই না ।

কেন কোনো কথা বলতে চাও না। ওই মেয়ের থেকে আমার মেয়ে কোন অংশে কম বলো তো। ওই মেয়ের থেকে আমার মেয়ে বেশি সুন্দর। তাহলে

আব্রাহাম এবার বলে উঠে,

আচ্ছা বিয়ে টা আমি করবো । সংসারও আমি করবো । আমি কাকে বিয়ে করবো আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আর আমার বউ ওতো সুন্দর না হলেও চলবে। আপনার চোখে ও সুন্দর না হতে পারে । কিন্তু আমার চোখে সুন্দর। আর আমি সব সময় রাইমা কে বোনের চোখে দেখেছি। আহি তেমন, আমার বোন, তেমন রাইমাও । আর আমি কখনো রাইমাকে বিয়ে করতাম না।

কথাটা বলেই আব্রাহাম রুমে দিকে হাঁটা ধরে, রুমে সামনে এসে দেখে, আরু রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । সে আরুকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে পরে । বিছানায় বসে মাথার চুল খামচে ধরে। তার রাগে ক্ষোভে তার ভিতর টা জ্বলে যাচ্ছে। তার সামনেই তার মাকে কথা শুনালো আজ । তাহলে তাদের আড়ালে কতই না কথা শুনাই।

_____________

আমি তো এদের কথা শুনে এতো টুকু বুঝতে পারছি, আমার আর আব্রাহাম এর বিয়ে হওয়াই তাদের যত সব সমস্যা। আমি রুমে ঢুকে দেখি আব্রাহাম বেগে বসে আছে আমি রুমে যেতেই , আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

“”” দরজা লাগিয়ে দাও তো

আব্রাহাম এর কথা মত দরজা লাগিয়ে দিলাম।

“”” আমার কাছে আসো তো

“, কেন

“আসতে বলছি , আসো গম্ভীর হয়ে কথাটা বলে উঠে।

ধির পায়ে আব্রাহাম এর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম।

“হুম আসলাম, এবার, আমার কথাটা শেষ করার আগেই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।তার হঠাৎ জরিয়ে ধরাই আমার হার্টবিট দ্রুত গতিতে চলছে। আমার নিঃশ্বাস আটকে আসছে। আমি ভাবতে পারি নি সে এভাবে জড়িয়ে ধরবে।

__ আরুকে জরিয়ে ধরতেই , আমার হার্ট খুব দ্রুত গতিতে চলছে।কেমন যেন আমার বুক টা শিতল হয়ে গেল। আরুকে জরিয়ে ধরা অবস্থায় আরুর কানে কানে আস্তে আস্তে করে বললাম,

“”শুনেছি, পরুষের রাগ, তার ব্যাক্তিগত নারিকে জরিয়ে ধরলে কমে তাই তাই এ ট্রিক্স টা আমিও ট্রাই করলাম।

আমার কন্ঠ নালি কাঁপছে, শব্দ রা কোন অজানায় হারিয়ে গেছে, আমার মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। আমার কেমন অস্থির অনুভূতি হচ্ছে তা বোঝানো সম্ভব নয়।

চলবে