#তুমি_আমার_জিবন
#লেখিকা_তৃষা_খাতুন
পর্ব ৬
আমি আর আহি অনেক ক্ষন বসে থেকে গল্প করছিলাম । তখন খাবার টেবিলে দাদি শাশুড়ি কে ওই কথা টা বলার পর দাদি শাশুড়ি আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছিল, পারলে মনে হয় আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খেত।তার দিকে খেয়াল না দিয়ে , আম্মার সাথে রুমে এসে খাবার খাই। এর পর আহি রুমে এসে নক করে,
আসবো ভাবী।
হুম আসো
কি করছেন, আপনাকে কি বিরক্ত করলাম নাকি। রুমে প্রবেশ করতে করতে কথা টা বলে আহি।
আরে বিরক্ত হবো কেন। আসো আমার এমনিতেই একা একা বসে থাকতে ভালো লাগছেনা ।
তাহলে তো ভালই হলো। এখন আমরা দুজন গল্প করতে পারবো।
হুম।
তুমি খাবার টেবিলে যা বললে না । একদম ঠিক কথা বলেছো। বুড়ি খুব বদ।
আরে এভাবে বলো না । ওনার বয়স হয়েছে কখন কি বলছে ঠিক নাই। আমার ওভাবে বলা ঠিক হয় নি।
আরে কিসের ঠিক হয়নি। একদম ঠিক হয়েছে ।কুটনামি করার সয়ম তো ঠিকই পারে। আর কখন কি বলতে হয় তা জানে না।
আচ্ছা তার কথা বাদ দাও।
হুম।
তুমি কোন ক্লাসে পড়
আমি এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে তুমি।
আমি ও ফার্স্ট ইয়ারে।
তাহলে তো ভালই হলো। আমরা এক সাথে কলেজ এ যেতে পারবো।
হুম। কিন্তু আমি তো অন্য কলেজ এ পড়ি। তোমার সাথে কিভাবে, আমার কথা শেষ না হতেই আহি বলে উঠে,
আরে চিন্তা কইরো না। ভাইয়া কয়েকদিনের মধ্যেই এখানে ভর্তি করিয়ে দিবে।
তাহলে তো ভালই হয়।
হুম।
দুজন মিলে একসাথে বসে গল্প করছে। গল্প করতে করতে তারা এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে , বিছানায়।
____________
এদিকে খাবার খেয়ে আব্রাহাম আর তার কাজিন গুলো সব বসার ঘরে গল্প করছিল। বাড়ির বড়রা সবাই খেয়ে , দুপুরে ভাত ঘুম দিচ্ছে।
আব্রাহাম এর ঘুম পাচ্ছে। বড় দিনে এই এক সমস্যা। দুপুরে খাবার পরে না ঘুমালে ভালোই লাগে না। অন্য দিন ভার্সিটি তে এই সময় ক্লাস থাকে তখন অতো সমস্যা হয় না। কিন্তু ছুটির দিনে না ঘুমালেই নয়।
আড্ডা দিতে দিতে যখন ঘুমে চোখ ঢুলছে , তখন সে বলে উঠে,
এই তোরা থাক , আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমাবো।
আব্রাহাম এর কথা শুনে, তার চাচাতো ভাই মাহিম বলে উঠে,
তুই তো ১০ টার দিকে ঘুম থেকে উঠলি, এখন দুপুর আড়াইটা বাজে, এর মধ্যেই ঘুমে চোখ ঢুলছে।
মাহিম এর কথা শেষ হতেই, আসিফ বলে উঠে,
ভাই আমার রাতে মনে হয়, হাডুডু খেলেছে তাই ঘুম হয় নি ।এখন ঘুমাতে চাইছে।
আসিফ এর কথা শুনে সবাই হাসতে লাগে। এদিকে আব্রাহাম দুম করে আসিফ এর পিঠে কিল মেরে বলে উঠে
বিয়াদব তোর আমি বড় ভাই , আমার সাথে ফাজলামি হচ্ছে।
আরে তুই তো আমার ১ মাসের বড় ।
১ মাস হোক আর ১ বছর হোক তোর আমি বড় ভাই। সন্মান দিয়ে কথা বল।
ওকে, সন্মান বড় ভাই
আসিফ এর কথা শেষ হতেই সবাই হাসতে হাসতে সোফায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।আর আব্রাহাম রাগে গজগজ করতে করতে ওখান থেকে উঠে যায়।
চলবে।
#তুমি_আমার_জিবন
#লেখিকা_তৃষা_খাতুন
পর্ব ৭
রুমে প্রবেশ করতে আমার বুকের ভেতর প্রশান্তি তবে ভরে গেল। আরু আর আহি দুজনেই গলা জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। এদের দেখে আমার ঘুম পাচ্ছে কিন্তু এদের জাগাতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু আমি ঘুমাবো কোথায়।
রুমে চোখ বুলিয়ে, সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
____________________
ঘুম থেকে উঠে অচেনা জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করে আমি অবাক। আমি কোথায় এখন। হঠাৎ মনে হল আরে কাল তো আমার বিয়ে হয়েছে, আর আমি এখন শশুড় বাড়িতে ।
রুমে দেওয়াল ঘরিতে দেখি ৬ টা বাজে।
শুয়ে থেকে পাশে চোখ যেতেই দেখি আহি ঘুমাচ্ছে । কখন যে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। হঠাৎ চোখ সোফায় যেতেই দেখি আব্রাহাম ঘুমিয়ে আছে। তার দিকে তাকাতেই আমার বুকের ভেতর কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি দোল খেয়ে গেল। আমি উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আহি আর আব্রাহাম ঘুমিয়ে আছে। আমি আহির পাশে বসে ওকে আস্তে আস্তে ডাকি
“”আহি, এই আহি, উঠো, আহি।
আমার ডাক শুনে চোখ পিটপিট করে তাকালো, তাকিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।তার এ কান্ডে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
আহি কে আর না ডেকে রুম থেকে বের হয়ে ড্রইং রুমে প্রবেশ করতেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে যায়।
দেখে হাঁটতে পারো না । নাকি চোখ নেই। কথা টা শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়। একে তো সে নিজে আমাকে ধাক্কা দেয় আবার আমাকেই বলে দেখে চলতে পারি না ।
নিচে পরে যাওয়ায় পায়ে অনেক ব্যাথা পায়। ব্যাথায় চোখে পানি জল জল করছে। পায়ে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি সকালের সেই মেয়ে টা।
তাকে বলে উঠি,
আপনি দেখে চলতে পারেন না ।
এই তোমার তো সাহস কম না। আমার সাথে এ ভাবে কথা বলো।
আপনি যেভাবে কথা বলছেন আমিও সে ভাবে কথা বলছি। আর আমি না হয় চোখে দেখতে পায় না। কিন্তু আপনি তো দেখতে পান, তাহলে ধাক্কা খেলেন কেন।
আমার কথা শেষ হতেই রাইমা চেঁচিয়ে আব্রাহাম কে ডাকতে থাকে,
আব্রাহাম ভাইয়া, আব্রাহাম ভাইয়া।
রাইমার চিৎকার শুনে সবাই ড্রইং রুমে জরো হয়। আব্রাহাম এর ঘুম ভেঙ্গে যায়, রাইমার চিৎকার শুনে। সে তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে ড্রইং রুমে আসতেই, রাইমা ,
নেকা কান্না জুড়ে দিয়ে বলে উঠে,
তোমার বউ আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে , আবার আমাকেই বলে, আমি নাকি চোখে দেখতে পায় না। সে আমাকে যা নয় তাই বলে অপমান করলো। বলেই নেকা কান্না জুড়ে দেয়।
রাইমার কথা শুনে আব্রাহামের মেজাজ যায় গরম হয়ে। সে আরুর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
রাইমা যা বলছে তা কি সত্যিই।
আব্রাহামের কথা শুনে আরু রাগি চোখে তাকায় আব্রাহামের দিকে,
আরুকে এভাবে তাকাতে দেখে আব্রাহাম কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়।
তাদের দিকে তাকাচ্ছে বাড়ির সবাই। রাইমার মা তো আরু কে মনে হয় চোখ দিয়ে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। বাড়ির এই অবস্থা দেখে আব্রাহামের মা তরীঘোরী করে আরুর কাছে যায়। আরুর হাত ধরে বলে কি হয়েছে।
আরো ছল ছল চোখে আব্রাহামের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে মা আমি কিছু করিনি।
এবার রাইমার মা বলে ওঠে তুমি কিছু করোনি তা আমার মেয়ে কি মিথ্যা বলছে। তোমার তো সাহস কম না মেয়ে।
আব্রাহাম আরুর কাছে এসে আরুর হাত ধরে বলে কি হয়েছে তুমি আমাকে সত্যিটা বল,
আরু আব্রাহাম দিকে তাকিয়ে বলে,
আমি রুম থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ করে তার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায়। সে আমাকে বলে আমি নাকি অন্ধ আমি দেখতে পাই না তাই তার সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে। আমিও বলি আমার না হলে চোখ নিয়ে আমি অন্ধ আপনার তো চোখ আছে তো আপনি কেন দেখে চললেন না। আমার এই কথা শুনে তিনি আপনাকে ডাকতে শুরু করে।
আমার কথা শেষ না হতে রাইমা বলে ওঠে ,
এই মেয়ে মিথ্যা কথা বলছে। আমি তাকে কিছুই বলিনি।
আব্রাহাম বলে ওঠে আরু কেন তোমার নামে মিথ্যা কথা বলবে ।
আব্রাহামের কথা শুনে রাইমার মা বলে ওঠে,
সেটা তোর সেটা তোর বউকে জিজ্ঞাসা কর। আমার মেয়েকে কেন জিজ্ঞাসা করছিস।
আব্রাহাম বলে ওঠে,
আপনার মেয়ের সঙ্গে যখন ঝামেলা লেগেছে সে তো আপনার মেয়েকেই তো জিজ্ঞাসা করব।
রাইমার মা বলে ওঠে,
তোর বউয়ের কথা শুনে এখন কেমন মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার করবি।
আব্রাহামের বাবা বলে ওঠে আহ কি বলছিস তোরা এসব। রাইমা তোমার নামে মিথ্যা কথা বলে আরুর কি লাভ। তার সাথে তো তোমার কোন ঝামেলা নেই আজ প্রথম তোমাদের দেখা না হলে তোমার নামে মিথ্যা কথা বলবে কেন।
আরিফ হোসেনের প্রশ্নের রাইমা কিছুটা থতমত খেয়ে যায়। আরিফ হোসেনের প্রশ্নে সে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে, কোন রকমে বলে ওঠে আসলে মামা হয়েছে কি
আব্রাহামের বড় ফুফু সিমি বলে ওঠে,
কি হয়েছে না হয়েছে বাদ দাও এ ব্যাপারে আর কথা বলার দরকার নাই। আর রাইমা তোমাকে বলছি শুধরে যাও। আরু তুমি তো পড়ে গেছিলে তোমার কি কোথাও লেগেছে
আব্রাহামের ফুফুর কথা শুনে আমি চোখ জল জল করে ওঠে,
আব্রাহামের ফুফুর কথা শুনে সবার দৃষ্টি আরুর দিকে। আরু বলে ওঠে একটু পায়ে লেগেছে।
আমার কথাটা শুনা মাত্রই আব্রাহাম আরু হাত ধরে টেনে নিয়ে সোফায় বসিয়ে বলে
একটু দেখে চলবে না। দেখি কোথায় লেগেছে। বলে পা টা ধরে সামনে নিয়ে আসে। পায়ের পাতা পুরো ফুলে গেছে। আব্রাহাম আহির উদ্দেশ্যে বলেন,
আহি আমার রুম থেকে ওষুধের বক্স নিয়ে আয়।
আহি দৌড়ে গিয়ে রুম থেকে ওষুধের বক্স নিয়ে আসে। আহির হাট থেকে বক্স নিয়ে নিজে আরুর পায়ে ওষুধ লাগাতে লাগে।
আব্রাহামের দাদি বলে ওঠে, কত কি আর দেখা লাগবে আমারে। একটু কি লাগছে তাই এত ঢং।
আহি তার দাদিকে বলে,
সব বিষয়ে তোমার কথা না বললেই নয়। দেখছো তো ভাবির পায়ে লাগছে তারপরও এই কথা বলো কেন।
আহির কথা শুনে তার দাদি রেগে যায়। রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
আমি কিভাবে কথা বলব সেটাকে তোর থেকে শোনা লাগবে। আজকালকারের মাইয়াগো কিছু কোওয়া যাইবো না।
আহি বলে ওঠে
জানোই তো বলা যাবেনা তাহলে বল কেন।
রাইমা বলে ওঠে,
আহি তুই কিভাবে কথা বলছিস নানির সাথে। নানি তো কিছুই ভুল বলেনি।
আহি বলে ওঠে
চলবে