তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-০২

0
1831

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

ভার্সিটির গেইটে পা রাখতেই আচমকা কেউ আমাকে কোলে তুলে নেই। পড়ে যাওয়ার ভয়ে গলা জড়িয়ে ধরি। তাকিয়ে দেখি ভাইয়ার কোলে আমি। ভাইয়া আমাকে ভার্সিটির সামনের পুকুরে ছুড়ে মারে। আমি বাঁচার জন্য ছটফট করছি। কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্য করছে না। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখছে। ভাইয়ার চোখ মুখে এক অদ্ভুত আনন্দের আভা দেখা যাচ্ছে। আমি আস্তে আস্তে তলিয়ে যাচ্ছি পানির গভীরে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট। দম বন্ধ হয়ে আসছে।

ননননননননননায়া।

কী হয়ছে কণা? এভাবে চিৎকার করছিস কেনো? কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখছিস? ( অস্তির হয়ে)

অহি।

আমি অহিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।

আমার কলিজাটা বুঝি ভয় পেয়েছে?

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৮ টা বাজে।

অহি এতো সকালে তুই আমার রুমে। কারো কিছু হয়েছে।

না। আমি তো সারা রাত এখানেই ছিলাম। রাতে তোর এতো জ্বর এসেছিল যে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। জল পট্টি দিলাম ঔষধ খাওয়ালাম তবু জ্বর কমছিল না। শরীর মুছিয়ে দেওয়ার পর জ্বর একটু কমে। তোর এতো জ্বর আর তুই আমাকে একবারের জন্য ও ডাক দিলি না।

( অহি আভিয়ান ভাইয়ার বোন। আমার সুখ দুঃখের সাথী। আমার দুজনেই সমবয়সী। অহি আমার থেকে কয়েক মাসের বড়।)

তুই তো বাসায় ছিলি না।

আমাকে ছাড় তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি। খাবার খেয়ে মেডিসিন খেতে হবে। এখনো জ্বর পুরোপুরি কমেনি।

অহি প্লিজ খাবার আনিস না। আমার এখন খাওয়ার একদম ইচ্ছা নেই। প্লিজ জোর করিস না।

তোর কোনদিন তো খাওয়ার ইচ্ছে থাকে না। না খেয়ে খেয়ে নিজের কী অবস্থা করেছিস? আয়নায় দেখলে তুই নিজেকে নিজেই চিন্তেই পারবি না। আমি তোর কোনো অজুহাত শুনতে চাই না। তুই চুপচাপ এখানে বসে থাক। আমি খাবার নিয়ে আসছি।

অহি কিচেনে কণার জন্য খাবার তৈরি করছিল তখন আভিয়ান আসে।

আজকে সূর্য কোনদিকে উঠছে আমাদের অহিরানী আজকে কিচেনে।

অহি কোনো কথা না বলে চুপচাপ নিজের কাজ করতে থাকে।

কী হলো কথা বলছিস না কেনো?

অহি নিশ্চুপ।

মুখে টেপ লাগিয়েছিস নাকি?

অহি তবু কোনো কথা বলে না।

কালকে ফুফির বাসা থেকে নিয়ে আসিনি বলে আমার বোনটা আমার ওপর রাগ করছে।

অহির গাল টেনে কথাটা বলে আভিয়ান। অহি নিজের গাল থেকে আভিয়ানের হাত সরিয়ে দেয়।

প্লিজ ভাইয়া এসব বোন টোন বলে একদম আদিখ্যেতা করো না।

আচ্ছা যা বোন ডাকবো না। এখন আমাকে কফি করে দে।

দেখছো না আমি খাবার তৈরি করছি।

এই খাবার কার জন্য তৈরি করছিস? তুই তো
দুধ খাস না।

কণার জন্য।

কণার জন্য তুই খাবার তৈরি করছিস কেনো?

অহি আভিয়ানের কথার উত্তর না দিয়ে খাবার ট্রে নিয়ে কিচেন থেকে চলে যায়।

অহি খাবার নিয়ে রুমে ঢুকতেই আমি চোখ মুখ কুচকে ফেলি। অহি আমার সবচেয়ে অপ্রিয় খাবার দুধ নিয়ে আসছে। দুধ আমার একদমই ভালো লাগে না। অহি আমার সামনে খাবার ট্রে রাখে।

এতো খাবার কে খাবে? ( চোখ বড় বড় করে )

কে আবার তুই খাবি।

আমি এতো খাবার খেতে পারবো না।

অহি কোনো কথা না বলে আমার মুখে খাবার ভরে দিতে থাকে। আমি যখন আর খাবো না বলে মুখ ঘুরিয়ে নেই তখন অহি আমার গাল চেপে ধরে একের পর এক খাবার আমার মুখে পুরে দেয়। আমি না পারছি ফেলতে না পারছি গিলতে কোনো মতে খাবারগুলো গিলে ফেলি। আমাকে খাওয়ানো শেষ করেই অহি বিজয়ের হাসি হাসে।

এই খাবারগুলো এখন কার পেটে গেলো?

আমি অহির দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটি।

নে এই মেডিসিনগুলো খেয়ে নে আর ভার্সিটির যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নে। আজকে আবার ঐ ফুটবল স্যারের ক্লাস আছে। মিস করলে কাচা গিলে ফেলবে। ‘ কণা তুই কালকে আমার ক্লাস মিস করেছিস কেনো? ক্লাস মিস করার জন্য তোকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে ‘। ( কন্ঠসর মোটা করে )

অহির কথা বলার ধরণ দেখে আমি ফিক করে হেসে দেই। আমার সাথে সাথে অহিও হেসে দেয়।

তুই রেডি হয়ে নে। আমি রেডি হয়ে আসছি তোকে নিয়ে একসাথে ভার্সিটি যাবো।

____________

আমি আর অহি ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হই। আমাকে দেখে আম্মু মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমার চোখ ছলছল করে ওঠে অহি আমার হাত চেপে ধরে বাসা থেকে বের হয়ে আসে। বাইরে বের হয়ে দেখি আভিয়ান ভাইয়া অহির জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছে। অহি ভাইয়াকে দেখেও না দেখার ভান করে ভাইয়ার গাড়ি ক্রস করে সামনে এগিয়ে যায়।

অহি গাড়িতে ওঠ।

আমি তোমার সাথে এক গাড়িতে কোথাও যাবো না।

কেনো?

যেদিন এই বাড়ির গাড়ি দিয়ে কণা ভার্সিটি যাওয়ার অধিকার পাবে সেদিন আমিও এই বাড়ির গাড়ি দিয়ে ভার্সিটি যাবো তার আগে নয়।

তুই আর কণা এক হলি নাকি।

আমরা তো একি। আমাদের মাঝে কোনো ভিন্নতা নেই কণা মেয়ে আমিও মেয়ে। কণা মেয়ে বলে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে আমার বেলা অন্য নিয়ম কেনো?

কণার কী যোগ্যতা আছে আমার সাথে এক গাড়িতে যাওয়ার?

কণার যদি তোমার সাথে এক গাড়িতে যাওয়ার যোগ্যতা না থাকে তাহলে আমার তো আরো নেই।

আমি নিরব দর্শকের মতো তাদের কথোপকথন শুনে যাচ্ছি। আমি জানি আমি এখানে কোনো কথা বললে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যাবে। তাই আমার চুপ থাকাই শ্রেয়। ভাইয়া রেগে স্টেয়ারিংয়ে একটা জুরে থাপ্পড় মেরে গাড়ি ড্রাইভ করে চলে যায়।

তুই ভাইয়ার সাথে এভাবে কথা না বললেও পারতি।

একদম ঢং দেখাবি। তুই চুপচাপ সব কিছু মেনে নিস বলেই সবাই তোর মাথায় চড়ে বসেছে। তুই যদি প্রতিবাদ করতি তাহলে নিজের বাসায় তোকে কাজের মেয়ের মতো থাকতে হতো না।

ভার্সিটির ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আছে আভিয়ান। আভিয়ানের এক হাত জড়িয়ে ধরে আছে ছোঁয়া। ছোঁয়া আভিয়ানের গার্লফ্রেন্ড। ছোঁয়া কণাকে একদম সহ্য করতে পারে না। সব সময় উৎ পেতে থাকে কণাকে অপমান করার জন্য। কণাকে দেখেই ছোঁয়া তার ন্যাকামো শুরু করে দেয়।

বেবি কণা আমাকে এতো অপমান করলো অথচ তুমি কণাকে কিছু বললে না।

কে বলছে বলি নাই? আমার কলিজাকে কেউ অপমান করবে আমি তাকে এমনি এমনি ছেঁড়ে দিবো। কণাকে কালকে থাপ্পড় মেরেছি। কাকিমাও দুইটা থাপ্পড় মারছে।

আমি তো দেখি নাই। তুমি আমার সামনে কণাকে শাস্তি দিবে।

একটা অপরাধের জন্য কাউকে দুইবার শাস্তি দেওয়া ঠিক না। প্লিজ বেবি কণার ব্যাপারে কোনো কথা বলো না। ওর কথা শুনতেও আমার অসহ্য লাগে।

তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না।

কে বললো বাসি না?

কাউকে বলতে হবে তুমি নিজেই প্রমাণ করে দিলে। তুমি যদি আমাকে ভালোবাসতে তাহলে আমার কথা শুনতে।

আচ্ছা বলো তুমি কণাকে কী শাস্তি দিতে চাও?

কণা আমাকে আমার বন্ধুদের সামনে অপমান করেছিল। তাই আমি চাই তুমি ওকে ভার্সিটির ক্যাম্পাসের সবার সামনে অপমান করো।

কীভাবে?

কণাকে বলবা কানে ধরে এক পা তুলে এই ক্যাম্পাসের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকতে।

ও আমার কথা কেনো শুনবে?

শুনতে বাধ্য করবে। ঐ দেখো আসছে।

ঐ দেড় ব্যাটারি এদিকে আসো।

হঠাৎ ‘দেড় ব্যাটারি ‘ নাম শুনে চমকে যায়। কারণ এই নামে ভাইয়া আমাকে ভার্সিটিতে ডাকে। ভাইয়া আমাকে ভার্সিটিতে যতবার ডেকেছে ততবারই শাস্তি দেওয়ার জন্য। শরীরের তাপমাত্রা আবার বেড়ে গেছে তাই অহি মেডিসিন আনতে গেছে আর আমাকে বলেছে সোজা ক্লাসে চলে যেতে। এখন ভাইয়ার ডাকে যদি না যাই পরে আরো ভয়ঙ্কর শাস্তি দিবে।

চলবে……