তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-০৩

0
1530

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৩
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

হঠাৎ ‘দেড় ব্যাটারি ‘ নাম শুনে চমকে যায়। কারণ এই নামে ভাইয়া আমাকে ভার্সিটিতে ডাকে। ভাইয়া আমাকে ভার্সিটিতে যতবার ডেকেছে ততবারই শাস্তি দেওয়ার জন্য। শরীরের তাপমাত্রা আবার বেড়ে গেছে তাই অহি মেডিসিন আনতে গেছে আর আমাকে বলেছে সোজা ক্লাসে চলে যেতে। এখন ভাইয়ার ডাকে যদি না যাই পরে আরো ভয়ঙ্কর শাস্তি দিবে।

আমি এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না? ভাইয়ার কাছে যাবো নাকি ক্লাসে চলে যাবো। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। ভাইয়া আর ছোঁয়া এক সাথে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চয়ই আমাকে অপমান করার জন্যই ডাকছে।

কী হলো দেড় ব্যাটারি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গেছে নাকি? ( চেঁচিয়ে)

ইতি মধ্যে ক্যাম্পাসে হাসির রোল পড়ে গেছে। আমি আস্তে আস্তে ভাইয়ার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ভাইয়ার সামনে দাঁড়াতেই ভাইয়ার বন্ধুরা এসে ভাইয়ার পাশে দাঁড়ায়। আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে ক্যাম্পাসের কিছু স্টুডেন্ট। সবাই এসেছে মূলত মজা দেখতে।

মিস দেড় ব্যাটারি দিন দিন আপনার সাহস তো বেড়ে যাচ্ছে। আমার গার্লফ্রেন্ডকে অপমান করছেন।

আমি কাঁপা কাঁপা গলায় কিছু বলতে যাব তার আগে ভাইয়া এক হাত তুলে থামিয়ে দেয়।

তুমি এখন বলবে তুমি ছোঁয়াকে অপমান করো নাই তাই না?

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই।

তোমার এসব লেইম এক্সকিউজ আমি বিশ্বাস করবো তুমি ভাবলে কী করে? ( রেগে )

ভাইয়া বড় বড় শ্বাস নিয়ে একটু শান্ত হয়ে বলে,

তো মিস দেড় ব্যাটারি আপনাকে কী শাস্তি দেওয়া যায়?

মুখে হাত দিয়ে ভাবার অভিনয় করে কথাটা বলল ভাইয়া। ভাইয়ার এমন ভাবার ভঙ্গী দেখে আমার আত্না কেঁপে ওঠে। সকালের স্বপ্নটা যদি সত্যি হয়ে যায় এটা ভেবেই আমার গলা শুকিয়ে আসছে। ভাইয়া কি সত্যি সত্যি আমাকে পুকুরে ফেলে দিবে।

হুম পেয়েছি। তুমি কান ধরে এক পা তুলে এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি যতক্ষণ না বলবো ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে।

আমি যে অপরাধ করি নাই। সেই অপরাধের জন্য শাস্তি কেনো গ্রহণ করবো। আপনি ভার্সিটির সিনিয়র বলে আপনার সব অন্যায় আবধার সবাই মেনে নিবে সেটা আশা করবেন না।

আভিয়ান দেড় ব্যাটারির সাহস বেড়ে গেছে।

আভিয়ান ভাইয়ার বন্ধু রনি ভাইয়া কথাটা বললো।

তাই তো দেখছি।

ভাইয়া কথাটা বলে আমার দিকে কয়েক পা এগিয়ে আসে। আমি ভয় পেয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যাই। ভাইয়া আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে আমি ভয় পেয়ে মাথা কিছুটা পিছনে হেলিয়ে দেই। ভাইয়া আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,

তোর নাগরের দেওয়া সেই সো পিছ টা কিন্তু আমার কাছে। যদি আমি ভেঙে ফেলি তখন কেমন হবে? তুই তো জানিস আমার জিনিস ভাঙতে প্রচুর ভালো লাগে।

প্লিজ ভাইয়া তুমি ওটা ভেঙো না। ( মিনতির সুরে)

তুই যদি আমার কথা না শুনিস তাহলে তো ভাঙতে হবেই।

না না না আমি তোমার সব কথা শুনবো।

গুড।

ভাইয়া আমার থেকে একটু দুরে সরে দাঁড়ায়। হালকা কাশি দিয়ে বলে,

নাউ স্টার্ট।

আমি কাঁপা কাঁপা হাতে কান ধরি এক পা তুলে দাঁড়াই। সবাই হাসাহাসি করছে আমাকে নিয়ে। কেউ কেউ চিৎকার দিচ্ছে। আবার কেউ সিটি বাজাচ্ছে। আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে লজ্জায় অপমানে। মাথা ঘুরছে চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসছে। আমি পড়ে যেতে নিবো তখনি আমাকে কেউ পিছন থেকে ধরে ফেলে। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাই। পরিচিত মুখ দেখে খুশিতে আমার চোখ ছলছল করে ওঠে।

সাফাত ভাইয়া।

সাফাত ভাইয়া আমার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখা স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে বলে,

এখানে কোনো সার্কাস হচ্ছে যে তোমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছো। যে যার ক্লাসে যাও। ( রেগে + চিৎকার করে )

সাফাত ভাইয়ের ধমক দেওয়ার সাথে সাথেই ক্যাম্পাস খালি হয়ে যায়। শুধু থেকে যায় ছোঁয়া, আভিয়ান ভাইয়া আর তার বন্ধুরা। সাফাত ভাইয়া এবার আভিয়ান ভাইয়ার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে,

তোদের কী আলাদা করে নিমন্ত্রণ করে যেতে বলতে হবে? ( ধমকে)

সাফাত ভাইয়ার ধমক দেওয়ার সাথে সাথেই আভিয়ান ভাইয়ার বন্ধুরা চলে যায়। কারণ সবাই সাফাত ভাইয়ার রাগকে ভয় পায়। সাফাত ভাইয়া এবার ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,

তুই কণার অভিভাবকও না আর না এই ভার্সিটির টিচার। তাহলে তুই কণাকে শাস্তি দিছ কোন অধিকারে?

( সাফাত ভাইয়া আভিয়ান ভাইয়ার ফ্রেন্ড। কিন্তু উনি ভাইয়ার মতোন না। অহির মতন উনিও সব সময় আমায় আগলে রাখেন। আমাকে নিজের ছোট বোনের মতো ভালোবাসে।)

দেখ সাফাত এটা আমাদের ফেমিলি মেটার। আমি চাই না বাইরের লোক এর ভিতর নাক গলাক।

তোদের ফেমিলি মেটার যদি পাবলিকলি আলোচনা করিস তাহলে নাক তো গলাতেই হবে। আর তুই তো কণাকে নিজের ফেমিলির কেউ বলে মানিস না। তাহলে তো কণাও বাইরের লোক।

কণাকে কিছু বললে তোর এতো জ্বলে কেন?

আরে বেবি তুমি বুঝো না উনার সাথে কণার লুতুফুতু সাইজের সম্পর্ক আছে।

এই মেয়ে তুমি আমার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলবা। আমি তোমার জুনিয়র বা ইয়ার দোস্ত না।

আরে সাফাত ভাইয়া আপনি কাকে কী বলছেন এই মেয়েগুলো ভদ্রতা বলতে কিছু জানে। যত্তসব ফালতু মেয়ে।

অহি তুই ছোঁয়াকে এভাবে বলতে পারিস না। ছোঁয়া তোর হবু ভাবি।

কীসের ভাবি? আমি তো তোমাকেই নিজের ভাই বলে মানি না। তাহলে ছোঁয়া আমার ভাবি…..

আমার চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে এলো। মুহুর্তেই অঙ্গান হয়ে ঢলে পড়ি সাফাত ভাইয়ার ওপর।

যখন ঙ্গান ফিরে তখন নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি। বাম হাত টান দিতেই হাতে ব্যথা অনুভব করি। বাম হাতে স্যালাইনের ক্যানেল লাগানো। তখনি কেবিনের দরজা ঠেলে প্রবেশ করে অহি আরেকজন মধ্য বয়স্ক লোক। সম্ভবত লোকটি ডক্টর।

ডক্টর আংকেল স্যালাইন শেষ হতে কতক্ষণ লাগবে?

৩০ মিনিট।

ওহ।

হুম। আমি এখন আসছি ৩০ মিনিট পর এসে স্যালাইন খুলে দিয়ে যাবো।

ওকে ডক্টর আংকেল।

ডক্টর আংকেল চলে যায়। অহি আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

অহি আমি এখানে কী করে আসলাম?

আমাদের কথার মাঝেই তুই হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে যাস। সাফাত ভাইয়া তোকে হসপিটালে নিয়ে আসে। ডক্টর তোকে দেখে বলে, ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করার ফলে তোর শরীর দুর্বল হয়ে গেছে তাই তুই সেন্সলেস হয়ে গেছিস।

সাফাত ভাইয়া কই?

উনার ইম্পর্টেন্ট কল এসেছিল তাই উনি চলে গেছেন।

ওহ। এখন কয়টা বাজে?

৪ টা।

আমি এতক্ষণ অঙ্গান ছিলাম?

না ডক্টর তোকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছিলেন।

আম্মু তো বলেছিলো আজকে ছোঁয়া আমাদের বাসায় যাবে। ছোঁয়ার জন্য তো রান্না করতে হবে। ছোঁয়া তো কাজের লোকদের হাতের রান্না খায় না। আম্মু তো আমার ওপর রাগ করবে।

এই চুপ করতো এই রকম মহিলাকে আবার কেউ মা ডাকে। যত্তসব।

অহি প্লিজ উনার সম্পর্কে এভাবে বলিস না। মা তো মাই হয়।

হসপিটালের সামনে দাঁড়িয়ে আছি রিকসার জন্য। একটা খালি রিকশা দেখে অহি দাঁড় করায়। আমরা দুজনই রিকসায় উঠে পড়লাম। এই হসপিটাল থেকে আমাদের বাসায় যেতে সময় লাগে ২০ মিনিট।

২০ মিনিট পর রিকসা থামে আমাদের বাসার সামনে। আমরা রিকসা থেকে নামি। অহি ভাড়া মিটিয়ে দেয়। কলিংবেল বাজাতেই মিতু এসে দরজা খুলে দেয়। বাসার ভিতরে প্রবেশ করতেই অহির গালে কেউ ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

চলবে…….