তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-০১

0
2752

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সূচনা_পর্ব
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

এক লোকমা খাবার মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই কেউ আমার গালে ঠাসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। আমি হতভম্ব হয়ে চোখ তুলে তাকাতেই দেখি রেগে অগ্নিমূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আভিয়ান ভাইয়া। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই বড় মা ( আভিয়ান ভাইয়ার মা) গম্ভীর কন্ঠে বলে,

এটা কোন ধরনের অসভ্যতামু আভিয়ান। খাওয়ার মাঝে কেউ কাউকে থাপ্পড় মারে। কণা বড় হয়েছে তুমি এভাবে ওর গায়ে হাত তুলতে পারো না। সেই রাইট তোমার নেই।

আম্মু বড় মাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

আহ আপা চুপ করো তো। আভিয়ান এমনি এমনি কিছু করে না। নিশ্চয় এই মেয়ে এমন কিছু করেছে যার জন্য আভিয়ান রেগে গেছে আর থাপ্পড় মারছে।

তোর সাহস কী করে হয় ছোঁয়াকে অপমান করার? ছোঁয়াকে ছোটলোক বলছিস কোন সাহসে?

আম্মু এসে আমার গালে ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

তোর সাহস কী করে হয় আমার ভাইয়ের মেয়েকে অপমান করার? ছোঁয়া ছোটলোক না তুই ছোটলোক। খাস তো অন্যের ঘাড়ে বসে। এতো মানুষ মরে তুই কেন মরতে পারিস না। কেনো যে তোরে জন্ম দিতে গেলাম। তোর জন্য আমি সব হারিয়েছি।

আম্মু আমি………

কিছু বলতে যাব তার আগেই গলায় খাবার আটকে যায়। কাশতে কাশতে চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে।

যত্তসব ঢং।

আম্মু মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। আমি বাঁচি বা মরি তাতে আম্মুর কিচ্ছু আসে যায় না। আমি মারা গেলেই বরং খুশি হবে। আভিয়ান ভাইয়াও হনহনিয়ে চলে যায়। শুধু থেকে যায় বড় মা। বড় মা আমারে এক গ্লাস পানি খাওয়ায়। আমি বড় মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেই। বড় মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

বড় মা আমি ছোঁয়াকে কিছু বলি নাই। ছোঁয়া আমাকে যা তা বলে অপমান করেছে কিন্তু আমি একটা কথাও বলি নাই। বড় মা সবাই কেনো আমার সাথে এমন করে? ছোঁয়া তো আমার মামাতো বোন ওর সাথে তো আমার কোনো শত্রুতা নেই। তবু ছোঁয়া কেনো আমাকে সহ্য করতে পারে না।

আরে কণা মা খাবারটা শেষ করে যা। যাহ মেয়েটা চলে গেলো খাবারটাও শেষ করলো না।

আমি ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে দরজা লক করে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলাম। কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

___________

ঘুম ভাঙলো কোনো কিছুর তীক্ষ্ণ আওয়াজে। চোখ খুলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। মাথাটা প্রচণ্ড বারি লাগছে। মাথায় তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছে। দরজায় কেউ নক করছে। ঢুলু ঢুলু পায়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। দরজা খুলতেই কেউ আমার মুখে কাপড় ছুড়ে মারলো। এভাবে কাপড় ছুড়ে মারায় চোখ বন্ধ করে নিলাম। কারো রাগী কন্ঠে পিট পিট করে চোখ খুলি,

সারাদিন এভাবে শুয়ে বসে কাটালে চলবে। আমার কাপড়গুলো কে পরিষ্কার করবে। তুই জানিস না কাজের লোকদের ধোয়া কাপড়-চোপড় আমার পছন্দ নই। তাড়াতাড়ি কাপড়গুলো ধুইয়ে পরিষ্কার কর।

আম্মু কাপড়গুলো কালকে সকালে ধুয়ে দেই। এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কাপড় ধুয়ে গোসল করলে আমার ঠান্ডা লেগে যাবে।

মহারানী সকালে ওঠে দৌড়ে ভার্সিটি চলে যাবেন। ভার্সিটির থেকে এসে ন্যাকামি করে বলবেন আম্মু আমার একদম মনে ছিল না। আমি কোনো কথা শুনতে চাই না তুই এখনি এই কাপড়গুলো ধুইয়ে দিবি। কালকে ছোঁয়া আসবে। কতদিন পরে আমার ভাইয়ের মেয়েটা আমার বাসায় আসছে। কিছু ভালো মন্দ রান্না করে খাওয়াতে হবে তো। একদিন সন্ধ্যার সময় গোসল করলে মরে যাবি না।

কথাটা বলে আম্মু মুখ বাকিয়ে রুম থেকে চলে যায়। আমি হাতের পিঠ দিয়ে চোখের পানিগুলো মুছে নেই। তারপর দুই হাতে কাপড়গুলো তুলে নেই।

আমি কেঁদে কেঁদে মরে গেলেও কেউ দেখার নাই। যেখানে নিজের মা আমাকে সহ্য করতে পারে না সেখানে অন্য কেউ।

ওয়াশরুমে এসে কাপড় ধোয়া শুরু করলাম।

( আমি মিহিকা তাহসিন কণা। এবার ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ি। কোনো দিন মায়ের ভালোবাসা পায়নি। বাবা কোথায় আছে কেউ জানে না। ছোটবেলা থেকেই একা একাই বড় হয়েছি।)

____________________

কাপড় ধোয়া শেষ হলো রাত ৮ টাই। শরীর অনেক ক্লান্ত লাগছে। একেবারে গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলাম। মাথা থেকে টাওয়াল খুলে বেলকনিতে মেলে দিলাম। চুলগুলো ভালো করে মুছে বালতিতে কাপড় ভরে নিলাম। বালতি নিয়ে পা বাড়ালাম ছাদের উদ্দেশ্যে। ছাদের সিঁড়িতে পা রাখতেই ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। রাতে ছাদে একা আসতে আমার ভয় করে। এক হাত জামার মুঠো করে আরেক হাতে শাড়ি ভরা বালতি নিয়ে এক পা এক পা করে ছাদের দিকে এগোতে লাগলাম।

ছাদে আসতেই ভূতের ভয়টা ঝেঁকে ধরলো। পাশের বাসার দাদুর কাছে শুনে ছিলাম রাতে ছাদে আসলে ভূতে গাড় মটকে দেয় নাহলে ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। ছাদের লাইটটা অন করে দোয় দরুদ পড়তে পড়তে কাপড়গুলো ছাদে মেলে দিলাম। হঠাৎ মনে হলো ছাদে আমি ছাড়া আরও কেউ আছে।

চোখ বন্ধ করে সুরা পড়া শুরু করলাম। পিট পিট করে চোখ খুলে পিছন ফিরে তাকালাম। ছাদের রেলিং ঘেষে আভিয়ান ভাইয় দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। আমি তাড়াতাড়ি কাপড় টেনে ঠিক করলাম। মাথায় ভালো করে উড়না দিয়ে দিলাম।

আবার ভাইয়ার দিকে তাকালাম। কিন্তু ভাইয়ার দৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই। শুনেছিলাম ভূত নাকি অন্য কারো রুপ ধারণ করতে পারে। এটা আবার ভাইয়া রুপি ভূত নয়তো। এটা ভাবতেই আমার আত্না কেঁপে ওঠলো। কারণ ভাইয়া কোনো দিনও আমার দিকে এমন ভাবে তাকায়নি। আমি ভাইয়ার ভূতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দিলাম এক দৌড়।

কণা এভাবে দৌড়ে চলে যাওয়াতে আভিয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। আভিয়ান ২ ঘন্টা ধরে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ ছাদের লাইট জ্বলে যাওয়াতে ভ্রু কুচকে পিছনে তাকায়। তার জানা মতে রাতে কেউ ছাদে আসে না। পিছন ফিরে দেখে কণা দাঁড়িয়ে আছে চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায় আভিয়ান। সে ভেবে পাচ্ছিলো কণা রাতের বেলা কেনো গোসল করছে। কণার হাতে বালতি দেখে বুঝতে পারে কেনো কণা রাতে গোসল করেছে।

এই মেয়ে যখন থেকে ছাদে এসেছে তখন থেকে এমন অদ্ভুত বিহেভ কেনো করছে? প্রথমে ছাদের লাইট অন করে চোখ বন্ধ করে কিসব বিড় বিড় করলো। পরে বিড় বিড় করে কাপড় মেলে দিল কোন দিকে না তাকিয়ে। চলে যেতে নিয়েও আবার পিছন ফিরে আমাকে দেখে চোখ বন্ধ করে কিসব বিড় বিড় করলো। তারপর ৫ সেকেন্ড আমার দিকে
তাকিয়ে ছাদ থেকে দৌড়ে চলে যায়। অহির ( আভিয়ানের বোন) কাছে শুনেছিলাম কণা একা ছাদে আসতে ভয় পায়। বাই এনি চান্স কণা আমাকে ভূত ভাবলো নাতো।

আভিয়ান মনে মনে কথাগুলো বলে।

____________

রুমে এসে বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলাম। এতোটা দৌড়ে আসায় হাঁপিয়ে গেছি। উফ খুব বড় বাঁচা বেঁচি গেছি। চোখ মুখে পানি ঝাপটা দিলাম। চুলগুলো বেণী করে ঘুমিয়ে পড়লাম।

_____________

১১ টার দিকে ঘুম ভেঙে গেলো। শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। বুঝতে পারলাম জ্বর এসেছে। ঠান্ডা লাগার কারণে কান ব্যথাও করছে। ছোটবেলা থেকেই হালকা ঠান্ডা লাগলেই আমার কান ব্যথা করে। জ্বরের কারণে চোখ খুলতে পারছি না। বিছানা ধরে কোনো মতে ওঠে বসলাম। ড্রয়ার খুঁজে শুধু প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোনো ঔষধ পেলাম না ।কাউকে ডেকে ঔষধ চাইলে। ঔষধ তো দিবেই না কতগুলো কথা শুনিয়ে দিবে। বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে গিয়ে মাথায় পানি দিলাম। কাবার্ড থেকে কম্বল বের করে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।

__________

কলেজের গেইটে পা রাখতেই আচমকা কেউ আমাকে কোলে তুলে নেই। পড়ে যাওয়ার ভয়ে গলা জড়িয়ে ধরি। তাকিয়ে দেখি ভাইয়া কোলে আমি। ভাইয়া আমাকে কলেজের সামনে পুকুরে ছুড়ে মারে।

চলবে