তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-০৫

0
1434

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৫
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

প্রেমে তো আমি অনেক আগেই পড়েছি। তার মায়বী মুখের মিষ্টি হাসিতে। শুধু তাকে বলতে পারি নাই। মা জানো ও সবার থেকে আলাদা। আর চার পাঁচটা মেয়ের মতো ও না। ওর মনের ভিতর কোনো জটিলতা বা প্যাচ নেই। ও একদম বাচ্চাদের মতো। আমার বাচ্চা প্রেয়সী। তার হাসির ধ্বনি এখনো আমার কানে বাজে।

ছেলের কথা শুনে মহিলাটি মুচকি হাসে। অবেশেষে তার বদরাগী ছেলে কারো প্রেমে পড়লো।

আমার সাথে কবে তোর প্রেয়সীর দেখা করাবি?

আগে বিডিতে ফিরি।

তোর সাথে তো তার দেখা হয় না অনেকদিন। এতোদিনে যদি তোর প্রেয়সী অন্য কারো হয়ে যায়।

আমি জানি সে আমারই আছে। অন্য কারো হয়ে গেলে আবার আমার করে নিবো। তুমি তো জানো যে জিনিসটা আমার পছন্দের সেই জিনিসটার দিকে কাউকে চোখ তুলেও তাকাতে দেই না। আর ও তো আমার কলিজা।
যে ওর দিকে চোখ তুলে তাকাবে তাকে আমি জানে শেষ করে দিবো। ( চোখ মুখ শক্ত করে)

ফ্রেশ বিছানার ওপর বসে ফোনটা হাতে নিলাম। ফোন হাতে নিয়ে আমি অবাক। ৭৫ মিসডকল সবগুলোই বন্যার। এতোগুলো কল দিলো আর আমি দেখলামই না। এখন কল দিলে শুরু করে দিবে বাংলা বেতার। আর এখন কল না দিলে কালকে ভার্সিটি গেলে আমার আবস্থা খারাপ করে দিবে। ‘অভাগা যেদিকে যায় নদী সেদিকেই শুকিয়ে যায়’ আমার অবস্থাও সেইম। ফোন দিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ। এই মাইয়া নিশ্চয়ই আমার ওপর রাগ করে ফোন বন্ধ করে দিয়েছে।

( আমি, অহি আর বন্যা তিনজন বেস্টফ্রেন্ড।আমরা তিনজন ক্লাস ওয়ান থেকেই একসাথে পড়াশোনা করছি। তিনজন এক ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য রাত দিন পড়াশোনা করছি। অহি আমার জেঠাতো বোন।)

এক গ্লাস পানি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

_______________

ঘুমের মাঝে অনুভব করছি কেউ আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই সে আরো জুড়ে চেপে ধরে আমাকে। আমি এবার পিট পিট করে চোখ খুলে তাকাই। হাত বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালাই। আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে অহি শুয়ে আছে। আমি নড়াচড়া শুরু করে দেই।

কণা প্লিজ নড়াচড়া করিস। একটু ঘুমুতে দে।

ঐ মাইয়া আমারে কী তোর কোলবালিশ পায়ছিস? আমার সাথে এমন চিমক্যা শুয়ে আছিস কেনো? আর তুই এতো রাতে আমার রুমে কী করছিস?

আমার রুমে ঘুম আসছিলো তাই তোর রুমে আসছি।

আসছিস ভালো করছিস। কিন্তু আমার সাথে এমন চিপক্যা আছিস কেনো?

মন চাইছিলো তোরে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই। তাই তোকে জড়িয়ে ধরলাম। ইউ নো না সব সময় মন যা চায় তাই করতে হয়।

উফ অহি তুই তো জানিস আমার সাথে যদি কেউ ঘুমায় তাহলেই আমার ঘুম আসে না। আর তুই তো আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছিস তাহলে আমি ঘুমুবো কী করে?

তুই এমন কেনো? আমার সাথে ১০০ জন থাকলেও আমার দিব্যি ঘুম চলে আসে।

মানুষ অভ্যাসের দাস। যেটা একবার অভ্যাস হয়ে যায় তা পরিবর্তন করতে অনেক সময় লাগে। সেই কোন ছোটবেলা থেকে একলা একটা রুমে থাকি। এতো বছরে কারো সাথে কোনো দিন থাকিনি। তাই কারো সাথে থাকার অভ্যাস নেই। ঘুমের মাঝে খারাপ স্বপ্ন দেখলে বালিশ জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতাম।

আমার চোখে পানি টলমল করছে। অহি বুঝতে পারছে কণা এখনি কেঁদে দিবে। তাই কণাকে হাসানোর জন্য বলে,

আমি তো শুধু জড়িয়ে ধরেছি তাতেই তোর ঘুম আসছে না। বিয়ের পর দেখা যাবে জামাইয়ের সাথে এক বালিশে ঘুমুতেও অসুবিধা হবে না। তখন তো ঠিকই জামাইয়ের বুকের ভিতর হান্দায়া পড়বি।

অহির কথা শুনে আমি লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছি। লজ্জায় কান গরম হয়ে গেছে। এই মেয়ে এতো লাগাম ছাড়া কথা কীভাবে বলে? এই মেয়ে এখন যদি না ঘুমায় তাহলে আমাকে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে হবে। আমি অহির মুখে হাত দিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। তারপর ওকে জুড় করে শুইয়ে দিলাম।

১০

ব্রেকফাস্ট করছি। আমরা বাম পাশে অহি ডান পাশে ছোঁয়া। আমার সামনা সামনি বসে আছে ভাইয়া। উনার পাশে বড় আব্বু। সবাই চুপচাপ ব্রেকফাস্ট করছি। বড় আব্বুর কড়া নির্দেশ খাওয়ার সময় নো সাউন্ড। সবাই এই নির্দেশ অক্ষরে আক্ষরে পালন করে। আমাদের বাসার কিছু রুলস আছে। রুলসগুলো অবশ্য বড় আব্বু তৈরি করা।

১। খাওয়ার সময় কোনো রকম কথা বার্তা হবে না। একে বারে পিন ড্রপ সাইলেন্ট।

২। সবাইকে সকাল ৮:৩০ এর আগে ডাইনিং টৈবিলে থাকতে হবে।

৩। রাত ৯ টায় ডিনার।

৪। ছেলে হোক বা মেয়ে সবাইকে রাত ৮ টার আগে বাসায় থাকতে হবে।

এই বাসার সবাই এই নিয়ম মেনে চলে। আমরাও এই নিয়ম মেনে বড় হয়েছি। এতো বছরের নিয়ম ভেঙে দিল ছোঁয়া।

বলছিলাম কি আভিয়া…….

ছোঁয়া কথাটা আর শেষ করতে পারলো না তার আগেই বড় আব্বুর চোখ রাঙানো দেখে ভয়ে চুপসে যায়।ছোঁয়া আর কথা বলার সাহস পায় না। খাওয়া শেষে বড় আব্বু ছোঁয়ার উদ্দেশ্যে বলে,

আমাদের বাসায় খাওয়ার সময় কেউ কথা বলে না। তুমি গেস্ট বলে তোমাকে কিছু বললাম না। নেক্সট টাইম যেনো এমন ভুল না হয়। আর মহুয়া তুমি তোমার ভাইয়ের মেয়েকে আমাদের বাসার নিয়মগুলো জানিয়ে দিবে। আমাদের বাসার নিয়ম মানতে না পারলে আমাদের বাসায় আসার দরকার নাই। ( গম্ভীর কন্ঠে )

ছোঁয়ার অবস্থা ফাটা বেলুনের মতো হয়ে গেছে। আমারতো সেই লেভেলের হাসি পাচ্ছে। কোনো রকমে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে হাসি আটকালাম। কারণ আমি যদি এখন হাসি তাহলে আমার অবস্থাও সেইম হবে। কথাগুলো বলে বড় আব্বু হনহন করে চলে যায়। বড় আব্বু চলে যেতেই অহি দম ফাটা হাসিতে ফেটে পড়ে।

অতি বাড় বেড়ো না ঝরে পড়ে যাবে।

কথাটা বলতে বলতে অহি চলে গেলো। আমিও চলে যেতে নিবো তখনি আম্মু আমাকে পিছন থেকে ডাক দেয়।

এই মেয়ে তুই কোথায় যাচ্ছিস?

ভার্সিটি।

দুপুরের রান্নাগুলো কে করবে?

কেনো প্রতিদিন যে করে সে। ( ভাবলেসহীন ভাবে )

তুই জানিস না ছোঁয়া কাজের লোকদের হাতের রান্না খায় না। সকালের ব্রেকফাস্ট আমি আর আপা তৈরি করছি। এখন তুই দুপুরের লাঞ্চ তৈরি করবি। ছোঁয়া আজকে ভার্সিটি যাবে না। আমাদের বাসা থেকে লাঞ্চ করে একেবারে তাদের বাসায় যাবে। তাড়াতাড়ি রান্না করা শুরু করে দে।

কাজের লোকদের হাতের রান্না না খেলে। যে খাবে তাকে রান্না করে খেতে বলো। আমি অন্যদের মতো চিটিং করে পাস করতে পারি না তাই ভার্সিটি যেতে হবে।

কথাটা বলে এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে এলাম। কারণ কিছুক্ষণ থাকলে আম্মুর আজে বাজে কথা শুনতে হবে। যার জন্য অহি থাপ্পড় খেয়েছে তার জন্য আমি রান্না করবো। ইমপসিবল। এটা আমার বাসা হলে কোন সময় ওকে গাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতাম। রেডি হয়ে অহিকে নিয়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হলাম।

১১

ভার্সিটি এসে আমি আর অহি বন্যাকে খুঁজছি। কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না। বন্যাকে খুঁজতে খুঁজতে লাইব্রেরী চলে এলাম। লাইব্রেরীতে এসে আমি আর অহি অবাক।নোমান ভাইয়া কানে ধরে বন্যাকে সরি বলছে। কিন্তু বন্যা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। এটা দেখে আমি আর অহি ফিক করে হেসে দেই। আমাদের হাসির শব্দে দুজনই আমাদের দিকে তাকায়। আমি আর অহি দুজনের কাছে যায়।

কী হয়ছে ভাইয়া?

তোমার বান্ধবী আবার আমার সাথে ঝগড়া করে ব্রেকআপ করছে।

তুমি বলতে চাইছো আমি তোমার সাথে শুধু ঝগড়াই করি। আমি ঝগড়াটে। আমি তো এখন পুরনো হয়ে গেছি। এখন তো আমাকে ভালো লাগবেই না। নতুন কাউকে পেয়ে গেছো। আমার কথাগুলো এখন তোমার কাছে ঝগড়াই মনে হবে।

কথাটা বলেই বন্যা কান্না শুরু করে দেয়।
নোমান ভাইয়া আর দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে।

বোইন তুমি তোমার বান্ধবীকে একটু বুঝাও। আমি আর পারছি না। আমার সব কথার শুধু উল্টো মানে বের করছে।

ভাইয়া আপনি যান। আমি বন্যাকে বুঝিয়ে নিয়ে আসছি।

নোমান ভাইয়া চলে যায়।

কী হয়ছে বন্যা তুই আবার কেনো নোমান ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করছিস?

কালকে আমরা ডেইটে গিয়েছিলাম। তখন ঐ নোমাইন্না স্টাইলিস মিতার সাথে কী সুন্দর করে হেসে হেসে বলেছিল তুই জানিস।

তো কী হয়ছে?

ও আমাকে রেখে অন্য মেয়েদের দিকে কেনো তাকাবে? আর কেনোই বা কথা বলবে?

এর জন্য রাগ করার কী আছে? একজনের সাথে কথা বলতেই পারে।

না পারে না।

আমাদের কথার মাঝেই আমাদের সামনে উপস্থিত হয় আভিয়ান ভাইয়াসহ তার সব বন্ধুরা। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে তাদের সবার হাতেই কোকের বোতল। আর ছোঁয়া আমার দিকে তাকিয়ে সয়তানি হাসি দিচ্ছে।

চলবে…….