তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-০৬

0
1367

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৬
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

আমাদের কথার মাঝেই আমাদের সামনে উপস্থিত হয় আভিয়ান ভাইয়াসহ তার সব বন্ধুরা। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে তাদের সবার হাতেই কোকের বোতল। আর ছোঁয়া আমার দিকে তাকিয়ে সয়তানি হাসি দিচ্ছে। উনাদের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে আবার আমাদের কথায় মনোযোগ দিলাম। আমি আর অহি শান্ত থাকলেও বন্যা তো শান্ত থাকার মানুষ না।

কী ব্যাপার আপনারা এভাবে সঙের মতো আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

তাদের সঙ বলাতে ছোঁয়া তেতে ওঠে বলে,

লাইব্রেরী কী তোমার বাপের যে আমরা কোথায় দাঁড়াবো সেটা তুমি ঠিক করে দেবে?

ঐ মাইয়া বাপ তুইলা কথা বলবি না। এমন একটা থাপ্পড় দিবো যে চৌদ্দ গোষ্ঠীর নাম ভুইল্লা যাইবি। তোর মতো ফালতু মেয়ের সাথে কথা বলে আমার মুখ নষ্ট করবো না।

আভি বেবি তোমার সামনে এই মেয়েটা আমাকে অপমান করছে আর তুমি কিছু বলবা না।

এই মেয়ে তুমি আমার সামনে আমার গার্লফ্রেন্ডকে অপমান করছো তোমার সাহস তো কম না।

আপনি কোন উগান্ডার প্রেসিডেন্ট যে আপনার গার্লফ্রেন্ডকে আমার পায়ে ধরে সালাম করতে হবে। কণা, অহিরে ভার্সিটিতে এই পিচ্চি ( আভিয়ান ভাইয়াকে দেখিয়ে) বেবি কী করছে এর তো শিশু পার্কে মায়ের কোলে বসে ফিটার খাওয়া উচিত।

এই মেয়ে আমার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলো আমি তোমার সিনিয়র।

সিনিয়র তো কী হয়ছে? সিনিয়রের মতো বিহেভ করলে ঠিকই ভদ্রভাবে কথা বলতাম।

তোমার সাথে আজাইরা আলাপ করার সময় আমার নেই। ঐ দেড় ব্যাটারি।

আমি কোনো কথা বললাম না। আমি আমার মতোই ফোন নিয়ে গুতা গুতি করতে থাকলাম। এমন একটা ভাব ধরলাম যে এই মুহূর্তে ফোন থেকে চোখ সরালেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। ভাইয়া আবার আমাকে ডাক দিলো।

ঐ দেড় ব্যাটারি শুনতে পাচ্ছো না।

তবু আমি কোনো কথা বললাম না। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছি কণা বলে যতক্ষণ পর্যন্ত না ডাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সাড়া দিবো না। হঠাৎ ভাইয়া আমার হাত থেকে আমার ফোনটা কেড়ে নিলো। এবার যেনো আমার মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে গেলো। আমি এবার রেগে চিৎকার করে বললাম,

কী সমস্যা আপনার? অন্যের পারসোনাল জিনিস নিয়ে টানাটানি করছেন কেনো? একটু আগে আমার বান্ধবীকে ভদ্রতা শিখাচ্ছিলেন। আপনার কী মনে হয় আপনি খুব ভদ্র?

বাহ বাহ একদিনের মাঝে এতো সাহস কই থেকে আসলো। গতকালকেও তো আমার ভয়ে ভয়ে মিও মিও করতে।

কথাটা বলাই আভিয়ান ভাইয়ার পুরো গ্যাং হাসা শুরু করলো। আমিও মনে মনে ভাবছি আমার এতো সাহস। আগে আমি ভাইয়ার সামনে গেলেই ভয়ে কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিতাম আর আজকে উনার চোখে চোখ রেখে চিৎকার করে কথা বলছি। ভাবা যায় আমি এতো সাহসী হয়ে গেলাম। ভাইয়া আমার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

কী দেড় ব্যাটারি কই হারিয়ে গেলে?

একদম দেড় ব্যাটারি, দেড় ব্যাটারি করবেন নাহ। আমার নাম দেড় ব্যাটারি না। আমার একটা নাম আছে সেই নামে যদি ডাকতে পারেন তাহলে ডাকবেন নাহলে না।

তোমার নাম দেড় ব্যাটারি হোক বা আধা ব্যাটারি হোক তাতে আমার কিছু আসে যায় না। তোমাকে কতক্ষণ ধরে ডাকছি তুমি সাড়া দিচ্ছো না কেনো?

আমি কী আপনার বেতন ভুক্ত কর্মচারী যে আপনি ডাকবেন আর আমাকে সাড়া দিতে হবে? যত্তসব।

তোমরা সিনিয়রদের মুখে মুখে তর্ক করছো এর শাস্তি পেতে হবে তোমাদের দুজনকে ( আমাকে আর বন্যাকে দেখিয়ে )

এই কথাটা যেনো আগুনে ঘি ডালার মতো কাজ করলো। বন্যা চেঁচিয়ে বলে,

ঐ মিয়া তুই আমাদের কী শাস্তি দিবি? আমি তোদের এমন জুতা পিটা করবো যে সারাজীবনে ভুলবি না।

তোর সাহস তো কম না তুই আভিয়ানকে জুতা পিঠা করার কথা বলছিস। তুই জানিস আভিয়ান তোর কী অবস্থা করতে পারে? এই ভার্সিটিতে থেকে তোকে বের করে দিতে আভিয়ানের ২ মিনিট সময়ও লাগবে না।

আমি,অহি আর আভিয়ান ভাইয়ার বন্ধুরা নিরব দর্শকের মতো ওদের ঝগড়া দেখছি।

আভিয়ান কেনো তোর বাপও আমাকে এই ভার্সিটি থেকে বের করতে পারবে না। আমি নিজের যোগত্যায় এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ছি। তোর মতো টুইক্কা পাস কইরা এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়নি।

১২

আমি আর অহি বন্যাকে লাইব্রেরী থেকে নিয়ে আসলাম। কারণ একটু আগে প্রিন্সিপাল স্যার বকা দিয়ে গেছে লাইব্রেরীতে গন্ডগোল করার জন্য।

বন্যা মাথা ঠান্ডা কর আর নোমান ভাইয়ার সাথে ঝামেলা মিটিয়ে নে।

অহি প্যান প্যান করিস না। ঐ চামচিক্কার সাথে একেবারে ব্রেকআপ করে ফেলছি।

তুই ব্রেকআপ করে ফেলছিস বলে কী অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবে? এখন তো অন্য মেয়ের সাথে রিলেশনে চলে যাবে।

ঐ নোমান চামচিক্কা অন্য কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাক একবার খুন করে ফেলবো।

কেনো? তুই তো নোমান ভাইয়ার সাথে ব্রেকআপ করে ফেলছিলস।

ব্রেকআপ করছি বলেই অন্য মেয়ের সাথে রিলেশনে চলে যেতে হবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটা কথা বলেছিলেন,

তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে মুক্তি দাও।
যদি সে তোমার হয় তাহলে তোমার কাছেই ফিরে আসবে।
আর যদি ফিরে না আসে সে কখনো তোমার ছিলনা আর কোনদিনো তোমার হবে না।

তুই বলতে চাইছিস নোমানকে নোমানের মতো করে স্বাধীনভাবে চলতে দিবো। কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে বাধা দিবো না।

হুম একদম।

যদি নোমান অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে তার প্রেমে পড়ে যায় তখন?

তাহলে বুঝবি নোমান ভাইয়া কোনোদিন তোকে ভালোবাসিনি। শুধু তোর সাথে টাইমপাস করছে। কিন্তু নোমান ভাইয়াকে দেখে আমার টাইমপাস করার মতো ছেলে মনে হয় না। নোমান ভাইয়ার চোখে তোর জন্য আমি সত্যিকারের ভালোবাসা দেখছি। নোমান ভাইয়ার সাথে কথা বল যা।

আমি একা যাবো না তোরাও আমার সাথে চল।

আচ্ছা চল।

নোমান ভাইয়াকে খুঁজতে খুঁজতে ক্যান্টিনে পেয়ে গেলাম। নোমান ভাইয়া আর উনার দুই বন্ধু একসাথে বসে আছেন। নোমান ভাইয়া গলা ছেড়ে গান গাইছেন।

বোঝে না, বোঝে না
বউ আমার
বোঝে না, বোঝে না….

বোঝে না, বোঝে না
বউ আমার
বোঝে না, বোঝে না….

ভাইয়া আপনি এখনো বিয়েই করলেন আর আপনি বলছেন আপনার বউ আপনাকে বোঝে না। একটু মিস্টেক হয়ে গেলো না। গানটা এরকম হওয়ার দরকার ছিল না।

বোঝে না, বোঝে না
প্রেমিকা আমার
বোঝে না, বোঝে না….

বোঝে না, বোঝে না
প্রেমিকা আমার
বোঝে না, বোঝে না….

একদম ঠিক বলছো শালিকা আমার একটু ভুল হয়ে গেছে।

নোমান ভাইয়া আমার কথায় সাই দেওয়াতে বন্যা রেগে আগুন হয়ে যায়। নোমান ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

ঐ তুই কি বললি আমি তোরে বুঝি না।

শুরু হয়ে গেলো তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ।

১৩

ভার্সিটি শেষে বাসায় গিয়ে দেখি ফুফি আসছে। ফুফিকে দেখেই অহি দৌড়ে গিয়ে ফুফিকে জড়িয়ে ধরে। আমি কিছু না বলে সবার আড়ালে চুপি চুপি আমার রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। রুমের সামনে যেতেই আম্মুর সাথে দেখা। আম্মু আমার থুতনি ধরে বলে,

ইশ কোন সকালে আমার মেয়েটা খেয়ে গিয়েছিল। না খেয়ে মুখটা শুকিয়ে গেছে একেবারে।

আম্মুর এইটুকু কথাই যেনো আমার মনে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো। খুশিতে আমার চোখ ছলছল করে ওঠলো। আজ থেকে হয়তো আমি আমার আম্মুর ভালোবাসা পাবো। আম্মুর পরের কথাটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

চলবে……