তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-০৭

0
1368

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৭
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

আম্মুর এইটুকু কথাই যেনো আমার মনে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো। খুশিতে আমার চোখ ছলছল করে ওঠলো। আজ থেকে হয়তো আমি আমার আম্মুর ভালোবাসা পাবো। আম্মুর পরের কথাটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

এই শুকনো মুখটা নিয়েই সারা রাত থাকতে হবে। আজকের রাতে তোর খাওয়া বন্ধ। তোর জন্য ছোঁয়াটা না খেয়েই ভার্সিটি চলে গেলো। তাই তোর খাওয়াও আজকে বন্ধ। এতো বছর পর আহানা আপা (আমার ফুফি) আমাদের বাসায় আসছে। আমি চাই না আহানা আপা তোকে দেখে রেগে যাক। আজকে আর তুই এই রুম থেকে বের হবি না।

কথাটা বলেই আম্মু আমাকে ধাক্কা দিয়ে রুমের ঢুকিয়ে বাইরে থেকে রুমের দরজা লক করে দেয়। ঠোঁটের কোনে যে হাসিটা ফুটে ছিল তা নিমেষেই উদাও হয়ে গেলো। মনে যে আশার আলো জেগেছিল তা কালো মেঘে ডেকে গেলো। দরজা ঘেষে বসে পড়লাম। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। ভাবলাম আম্মু হয়তো আজ থেকে আমাকে ভালোবাসবে। যেমন সব মা তার সন্তানকে ভালোবাসে। আমি হয়তো কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না। তাই তো কেউ আমাকে ভালোবাসে না।

আমার জীবনে কী এমন কেউ আসবে না যে আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসবে? আমাকে সব সময় আগলে রাখবে। আমি না খেলে সে খাবে না। আমি একটু ব্যথা পেলেই সে অস্থির হয়ে যাবে। আমি কান্না করলে সে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বুকে আগলে নিয়ে বলবে, আজকে কাঁদছো কাঁদো। আর কোনো দিন যেনো আমি তোমার চোখে পানি না দেখি। তুমি কেনো বুঝো না তোমার চোখ থেকে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লে তা আমার বুকে তীরের মতো বিধে।

কণা কথাগুলো বলে হু হা করে পাগলের মতো হাসি শুরু করে। কিন্তু চোখ থেকে অশ্রু ঠিকই গড়িয়ে পড়ছে।

আমিও না সত্যিই বোকা। আমি আকাশ কুসুম কল্পনা করছি। যেখানে নিজের মা আমাকে ভালোবাসে না সেখানে অন্য কেউ আমাকে ভালোবাসবে। হাউ ফানি।

১৪

জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে এলাম। ১০ মিনিট শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে এলাম। চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। বিছানাতে বসে থাকা মানুষটা দেখে আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি। আমি কল্পনাও করতে পারছি না ফুফি আমার রুমে এসে আমার বিছানায় বসে আছেন। উনি লাস্ট তিন বছর আগে আমাদের বাসায় এসেছিলেন। আমার ওপর রাগ করে যে আমাদের বাসা থেকে চলে গিয়েছিলেন। আজকে তিন বছর পর আবার আসছেন।

এতো বড়ো হয়ে গেলি এখনো ঠিক করে চুলটা মুছতে জানলি না। তোকে নিয়ে আর পারি না নিজের ঠিক করে খেয়ালও রাখিস না।

ফুফি টাওয়াল নিয়ে আমার চুল মুছে দিতে লাগলো। আজকে মনে হচ্ছে আমি আবার আমার পুরোনো ফুফিকে ফিরে পেলাম। যে আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতো। খুশিতে আমার চোখ ছলছল করে উঠলো।
ফুফি চুলগুলো মুছে দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিলো।

আজকে তোকে আমি নিজের হাতে খাইয়ে দিবো।

ফুফি ভাত মেখে আমার মুখের সামনে ধরে। আমি থম মেরে বসে আছি আর ফুফির দিকে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।

আমি মহুয়ার সব কথা শুনেছি। তুই খাবারটা খেয়ে নে তোকে মহুয়া কিচ্ছু বলবে না। আমার ওপর এই বাড়ির কারো কথা বলার সাহস নেই তুই তো জানিস। নে এবার হা কর।

আমি কিছু বললাম না আগের মতোই বসে আছি।

বুঝতে পারছি তুই তিন বছর আগের কথাগুলো ভাবছিস। তোকে এতো কথা শুনিয়ে আমিও ভালো ছিলাম না এতদিন। তোর সাথে অনেক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। ঐ দিন রাগের মাথায় তোকে অনেক কিছু বলে আমেরিকা চলে গিয়েছিলাম। এতোদিন ব্যস্ততার জন্য এই দেশে আসতে পারিনি। অহি আমাকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো আর তুই আমাকে দেখেও চুপি চুপি চলে এলি। তোর জন্য সবাই আমার ভাইকে অপমান করছিল তাই সহ্য করতে না পেরে রাগের মাথায় তোকে ঐ দিন এতোগুলো কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম। আমাকে ক্ষমা করে দে মা।

ছিঃ ছিঃ ফুফি তুমি আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে ছোট করো না। তুমি তো আমার মায়ের মতো আমাকে বকা দিতেই পারো। তার জন্য কী আমি কিছু মনে করতে পারি?

এই তো আমার লক্ষী মেয়ে। নে এবার তাড়াতাড়ি খাবারটা শেষ করে ফেল তো।

১৫

ফুফির রুমে বসে আছি। ফুফি আমাকে খাইয়ে দিয়ে উনার রুমে নিয়ে আসছেন গিফট দিবেন বলে। ফুফি আমার সামনে একটা লাগেজ রাখে।

এই না লাগেজটা। এখানে তোর সব গিফট রাখা আছে।

আমি লাগেজটার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। ফুফির মাথা কী খারাপ হয়ে গেলো?

ফুফি এই লাগেজের ভিতরের সব কিছু আমার?

ফুফি মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।

তুই এটা নিয়ে রুমে যা। আমি একটু রেস্ট নিবো অনেক টায়ার্ড লাগছে।

আচ্ছা।

______________

ভাইয়া রুমের সামনে দিয়ে আমার রুমে যাওয়ার সময় ভাইয়ার কিছু কথা আমার কানে আসে। আমি ভাইয়ার রুমের দরজাটা একটু ফাঁক করে রুমের ভিতরে উকি।

আরে ভাই আমার যেমন চেয়েছিলাম তার থেকে দুই গুন বেশি পেয়েছি।

____________________

আমাদের পে ………..

কে ওখানে?

আমি তাড়তাড়ি দরজার কাছে থেকে সরে আমার রুমে চলে এলাম। ভাইয়া আমাকে দেখতে পেলে কাচা গিলে খেতো। উফ খুব বাঁচা বেঁচে গেছি। আর জীবনেও কারো রুমে আড়ি পাতবো না।

_________

আভিয়ান দরজার কাছে এসে কাউকে দেখতে পায় না। করিডোরেও কাউকে দেখতে পায় না। নিজের মনের ভুল ভেবে কথা বলাই ব্যস্ত হয়ে যায়। কথা শেষে চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ফোনের তীক্ষ্ণ আওয়াজে ফট করে চোখ খুলে ফেলে। ফোনের স্কিনের নামটা দেখে মুখে হাসি ফুটে ওঠে আভিয়ানের। ফোনটা রিসিভ করে বেলকনিতে চলে যায় আভিয়ান।

১৬

রিকসা করে ভার্সিটি যাচ্ছি আমি আর অহি। ফোনটা আজকে বেশ ফুরফুরে। ফুফির জন্য আম্মু আমাকে কিছু বলতে পারে নি। আর কোনো কাজ করতে দিতে পারে নি। শুধু কটমট চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি আর অহি গল্প করতে করতে ভার্সিটি চলে এলাম। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে ভার্সিটির ভিতরে প্রবেশ করলাম। আমরা দুজন ক্লাসে চলে এলাম। ক্লাসে আগে থেকেই বন্যা বসে ছিল। একের পর এক ক্লাস করে ক্লান্ত হয়ে আমরা তিন জন গিয়ে ক্যান্টিনে বসলাম। বন্যা ক্যান্টিনে এসেই টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে দেয়।

আরে ইয়ার স্যারগুলো এতো বক বক কী করে? আমি তো শুনেই অতিষ্ট উনারা বলেন কী করে।

উনাদের কাজেই এইটা।

বন্যা হঠাৎই লাফিয়ে ওঠে। উচ্ছ্বাসের সাথে বলে, দোস্ত মেলায় যাবি। ঐ দিকে একটা ছোট খাটো মেলা হচ্ছে তোরা যাবি নাকি?

আমি তো যাবো। কণা তুই যাবি না?

আমি তো যাওয়ার জন্য এক পায়ে দাঁড়া। মেলা আমার ভীষণ ভালো লাগে।

আমিও যাবো।

নোমান ভাইয়া আমাদের সাথে বসতে বসতে বললো।

তাহলে সাফাত ভাইয়াকেও নিয়ে যায়।

হুম যা তুই গিয়ে সাফাত ভাইয়াকে বলে আয়।

আমি কেনো বলবো তুই গিয়ে বল।

অহি ধমক দিয়ে আমাদের দুজনকে থামিয়ে দেয়।

তোরা এরকম করতে থাকলে তো পরে মেলায় যাওয়াই হবে না। কণা তুই সাফাত ভাইয়াকে বল। সাফাত ভাইয়া তোর কথা ফেলতে পারবেন না। কণা কিছু আবদার করবে আর সাফাত ভাইয়া রাখবে না এটা কখনো হতে পারে।

আমি যাচ্ছি।

ক্যান্টিন থেকে বের হতেই সাফাত ভাইয়াকে পেয়ে গেলাম।

ও সাফাত ভাইয়া।

কী?

শুনো না।

না বললে শুনবো কী করে?

আমাদের সাথে মেলায় যাবে? সাফাত ভাইয়া প্লিজ চলো না।

কে কে যাবে?

আমি, তুমি ,অহি , বন্যা আর নোমান ভাইয়া।

আমি কখন বললাম আমি যাবো????

সাফাত ভাইয়া চলো না প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

অহি আর বন্যা এসেও সাফাত ভাইয়াকে যাওয়ার জন্য বলতে লাগলো।

কী ব্যাপার বলোতো তোমরা তিন জন মেয়ের সাথে আমাদের মতো অসহায় দুইটা ছেলে নিতে চাইছো কেনো?

আমি খুশিতে গদ গদ হয়ে বললাম, তোমাদেরকে আমাদের সাথে নেওয়ার দুইটা কারণ আছে।

কি কি ?

কারণগুলো হলো :

১। মেলায় অনেক মানুষ তাই তোমাদের আমাদের বডিগার্ড হিসেবে নিয়ে যাচ্ছি।

২। তোমাদের দুজনের পকেট খালি করার জন্য।

সাফাত ভাইয়া মজা করে বলে, সুন্দরী মেয়েদের বডিগার্ড হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

১৭

আমাদের গাড়িটা মেলার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমরা পাঁচ জন সাফাত ভাইয়ার গাড়ি করে এসেছি। আমি সবার আগে গাড়ি থেকে নেমে মেলার ভিতরে ঢুকে গেলাম। মেলাটা অনেক ছোট হলেও অনেক মানুষের ভিড়। আমি আরেকটু সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কোন দোকানে আগে যাবো সেটা ভাবছি।

তোমাকে অনেক কিউট লাগছে মিস ধুলোকণা।

কেউ কানের কাছে ফুঁ দিয়ে কথাটা বলে কানের লতিতে কামড় দিলো। আমি সাথে সাথে পিছনে তাকালাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। সবাই সবার মতো ব্যস্ত। হঠাৎ নজর যায় আমার উড়না দিকে। উড়নার এক পাশে একটা কাগজ কেউ বেধেঁ রেখেছে।

চলবে …..