তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব-২২+২৩

0
656

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_২২

আমার মাথা একদম ঠিক আছে। এখন মাত্র ৯ টা বাজে। আপনি এখনি আমাদের বাসার নিচে আসবেন।

তোমাদের বাসার নিচে যেতে আমার মিনিমাম দুই ঘন্টা লাগবে। যেতে যেতে ১১টা বেজে যাবে।

বাজলে বাজুক আপনি আসবেন। এটাই ফাইনাল ডিসিশান।

দেখা করাটা কী খুব দরকার?

হুম ভীষণ দরকার। আপনি আসবেন কী না বলুন?

যদি না আসি।

আপনার সাথে আমি আর কথা বলবো না। আপনি আমাকে আর ফোন দিবেন নাহ। আল্লাহ হাফেজ।

আরে আরে ফোন রেখে দিচ্ছো কেনো? আমি কী বলছি যে আসবো না? তোমাদের মেয়েদের এক দোষ সম্পূর্ণ কথা না শুনে লাফাতে শুরু করো। আমি বলছি যদি না আসি। এটা তো বলিনি যে আমি আসবো না।

তার মানে আপনি আসছেন।

দেখি।

দেখি টেখি বললে চলবে না। আপনাকে আসতেই হবে।

যদি কোনো প্রবলেম হয়। তোমার ভাইয়া বা বাবা দেখে। আর আমিও এখন দেখা করতে চাইছিলাম না। সময় হ………

আমি ঠিক ১১ টায় আমাদের বাসার নিচে আপনার জন্য অপেক্ষা করবো।

কণা কথাটা বলেই ঠাস করে কলটা কেটে দেয়। সে জানে তার প্রেমিক পুরুষ আসবেই। ফোনটা আবার বাঁজছে। নাম্বারটা দেখে কণা ফোনটা রেখে দেয়। কিন্তু ফোন থামার নাম নেই ননস্টপ বেঁজে চলেছে। কিছুক্ষণ পরে মেসেজের টুং টাং শব্দ হতে থাকে। কণা মেসেজ ওপেন করে।

আমি তোমাদের বাসার নিচে এসে তোমাকে কল দিব। আমি কল দিলে তারপর বাসা থেকে বের হবা।

একদম পাকামি করবে না কিন্তু। আমার কথার বাইরে গেলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।

আমি নিচে এসেই তোমাকে কল দিব। প্লিজ তুমি আগে এসো না। এতো রাতে একা বাইরে আসা তোমার ঠিক হবে না।

কণা মেসেজগুলো পড়ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। আর ভাবছে, এই লোকটা সত্যিই পাগল। তাকে নিয়ে এতো পজেসিভ।

কণা অপেক্ষা করছে তার প্রেমিক পুরুষের একটা কলের।

২ ঘন্টা পর

দেখতে দেখতে দুই ঘন্টা কেটে গেলো। কিন্তু কণার তার কোনো খবর নেই। কণা অস্থির হয়ে ঘরময় পায়চারী করছে। তার আর তর সইছে না। তার এতোদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে। ফোনের মেসেজ টোন বেঁজে ওঠা। কণা তড়িৎ গতিতে ফোনটা হাতে নেয়। তাড়াতাড়ি মেসেজ ওপেন করে।মেসেজটা দেখেই কণার মন খারাপ হয়ে যায়।

আমি আজকে আসতে পারবো না। প্লিজ লহ্মিটি রাগ করো না। সময় হলেই আমি তোমার সাথে দেখা করবো। এতোদিন যখন অপেক্ষা করেছে। প্লিজ আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো। জানো তো অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়।

কণা মেসেজটা দেখে রাগে দুঃখে ফোনটা ছুঁড়ে মারে। সে মনে মনে কঠিন প্রতিজ্ঞা করে আর কোনো দিন সে এই বজ্জাত লোকের সাথে কথা বলবে না। তাকে দুই ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে এখন বলে আসতে পারবে না। বলবে না সে কথা আর কোনো দিন। সরি বলেও আর লাভ হবে না।

৫০

দুই দিন পর

সাফাত বেলকনিতে বসে সিহারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। যে ছেলেটা সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে পারতো না সেই ছেলের হাতে সিগারেট। নিজেই সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে।সত্যিই ভাগ্য জিনিসটা বড্ড অদ্ভুত। ভাগ্য কখন কাকে কোথায় এনে দাঁড় করায় কেউ বলতে পারে না। হাতের দুই আঙ্গুলের ফাঁকে সিগারেট নিয়ে ফোনের গ্যালারীতে ঢুকে। সাফাতের গ্যালারি বন্যার ছবিময়। সিগারেটে টান দিতে দিতে ছবিগুলোতে চোখ বুলাচ্ছে। সাফাতের চোখ থেকে টুপ করে এক ফোঁটা অশ্রু ফোনের স্কিনে পড়ে।

সব কিছু ভাঙলে শব্দ হয় কিন্তু, মন
ভাঙলে শব্দ হয়না। তাইতো যার মন
ভাঙে সেই একমাত্র বুঝে ব্যাথা কত।

সাফাত একে একে বন্যার সব ছবি ডিলেট করে দেয়। লাস্ট একটা ছবি ডিলেট করতে গিয়ে সাফাতের হাত আটকে যায়। এটা তো সেই ছবি যেদিন সে বন্যাকে প্রোপোজ করেছিল। হাতে হাত রেখে কত শত গল্প করেছিল। কথা দিয়েছিল সারাজীবন বন্যার পাশে থাকবে। কিন্তু সে তার কথাটা রাখতে পারেনি। সারাজীবন পাশে থাকার কথা দিয়ে মাঝ পথেই হাত ছেড়ে দিতে হলো এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর নিষ্ঠুর নিয়মের জন্য।

সাফাত ফোনের ব্যাক কভারটা খুলতে গিয়েও খুলতে পারে না। এটা যে বন্যা পছন্দ করে তাকে কিনে দিয়েছিল। বন্যার কত শত স্মৃতি রয়ে গেছে তার রুম জুড়ে। ফোনের কভারটা রেখে দেয়। থাক না কিছু স্মৃতি। সে না হয় স্মৃতি নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবে।

সাফাত সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ বেলকনি দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। বসা থেকে ওঠে দাঁড়ায় টলমল পায়ে রুমের ভিতর প্রবেশ করে। বিছানায় শুয়ে সাফাত একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। আরেকটা নিদ্রাহীন রাত কাটবে তার। এই দুইদিন তো বন্যার ছবিগুলো দেখে দিন পার করে দিয়েছিল। আজকে সে কী করবে? বন্যার একটা ছবিও তার ফোনে অবশিষ্ট রাখেনি।

দরজার আড়াল থেকে সরে যায় তাহসিন আহম্মেদ। বিষণ্ণ মন নিয়ে পা বাড়ান় নিজের রুমের দিকে। তিনি জানেন তার ছেলের ভালো নেই। ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেছে তাই তো তার কাছে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না। ছোটবেলার মতো কষ্ট পেলে উনার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেঁদে কেটে বুক ভাসায় না। কিন্তু তিনি তো বাবা তিনি ছেলে মেয়েদের মনের অবস্থা বুঝতে পারেন। তিনি বুঝতে পারছেন নাহ আল্লাহ উনার কোন পাপের শাস্তি উনার ছেলে মেয়েদের দিচ্ছে।

৫১

নোমান সোফায় বসে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর ঘুমন্ত মুখশ্রীর দেখে। ঘুমন্ত অবস্থায় কতো নিষ্পাপ লাগছে। সে ভাবে এই মুখ জুড়ে এতো মায়া কেনো? আল্লাহ জেনো পৃথিবীর সমস্ত মায়া এই মুখশ্রীতে ঢেলে দিয়েছে। এই মায়াবী রাজকন্যাটা যদি শুধু তার হতো। তাহলে কী খুব বেশি অন্যায় হয়ে যেতো?

বন্যা কাত হয়ে শুতেই নোমানের চোখ আটকে যায় এক নিষিদ্ধ জায়গায়। নোমান দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। এই রমণীকে দেখার অধিকার যে তার নেই। এই রমণীর মনের অধিকারী যে অন্য কেউ। শরীর দিয়ে কী হবে যদি মনটায় না পায়। বন্যা বাসর রাতেই সব বলে দিয়েছিল। তাদের মাঝে কোনো কিছু গোপন রাখেনি।

দোষটা তো তারই। তার উচিত ছিল বিয়ের আগে বন্যার সাথে কথা বলার। বন্যার বিয়েতে মত আছে কী না সেটা জিঙ্গেস করা। কিন্তু সে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দে এতোটা বিভোর ছিল যে বন্যার বিয়েতে মত আছে নাকি নেই সেই কথাটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। ভালোবাসার মানুষকে সে তো পেয়েছে ঠিকই কিন্তু…..।

নোমান ভাবছে তার কী করা উচিত সে বুঝতে পারছে না? তার কী বন্যাকে তার ভালোবাসার মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নাকি জোর় করে নিজের কাছে আটকে রাখা উচিত। জোর করে আটকে রেখে কী লাভ? জোর করে তো ভালোবাসা পাওয়া যায় না। বন্যা তো তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে। বন্ধু হয়ে তো তার উচিত বন্ধুর কাছে বন্ধুর ভালোবাসাকে ফিরিয়ে দেওয়া।

আর সে তো বন্যাকে ভালোবাসে। ভালোবাসার মানুষ খুশি থাকলেই তো সে খুশি থাকবে। নোমান তার ডিসিশান নিয়ে নিয়েছে। সে সাফাতের সাথে কথা বলবে। বন্যার কাছে তার ভালোবাসার মানুষ সাফাতকে ফিরিয়ে দিবে।

এটা ভেবেই সে বন্যার ফোনটা হাতে নেয়। ওয়ালপেপারে সাফাতের ছবি দেখে তার বুকটা ধক করে ওঠে। আচ্ছা এখানে যদি তার ছবি থাকতো। তাহলে কী খুব বেশি ভুল হয়ে যেতো। নিজের বোকা বোকা ভাবনায় নিজেই হাসে। সে সাফাতের ফোনে কল দেয়। একবার রিং হতেই সাফাত ফোন রিসিভ করে। সাফাত ফোন রিসিভ করেই বলে,

আসসালামু আলাইকুম।

নোমান কথা বলতে গিয়েও আমতা আমতা করছে। কী বলবো ভেবে পাচ্ছে না? নিজের স্ত্রীর প্রাক্তনের সাথে কিভাবে কথা বলবে তা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে।

যা বলার বলে ফেলুন মিস্টার নোমান।

সাফাতের মুখে নিজের নাম শুনে চমকে ওঠে নোমান। সে বুঝতে পারছে না সাফাত কী করে বুঝতে পারলো যে সে ফোন করেছে? নোমান আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাফাত বলে,

আপনি হয়তো অবাক হচ্ছেন আমি কী করে বুঝলাম আপনি ফোন করেছেন? যেখানে আপনি কল দিয়ে একটা কথাও বলেনি। সাধারণত বন্যা এতো সকালে ঘুম থেকে ওঠে না। আমার একটা ধারণা ছিল আপনি আমাকে কল করতে পারেন।

চলবে…..

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_২৩

আপনি হয়তো অবাক হচ্ছেন আমি কী করে বুঝলাম আপনি ফোন করেছেন? যেখানে আপনি কল দিয়ে একটা কথাও বলেনি। সাধারণত বন্যা এতো সকালে ঘুম থেকে ওঠে না। আমার একটা ধারণা ছিল আপনি আমাকে কল করতে পারেন।

এটা কীভাবে সম্ভব? আমরা তো পূর্ব পরিচিত নই যে একজন আরেক জনের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য ফোন দিব।

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দ্বারা বুঝতে পেরেছি। আমি জানি বন্যা আপনাকে আমার কথা বলে দিয়েছে। আর আপনি বন্যার কাছে আমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছেন। সবাই তো নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে সুখী দেখতে চায়। তেমন আপনিও চান। আমি জানি যে, আপনি বন্যাকে ভালোবাসেন।

সত্যিই আপনি অনেক ট্যালেন্টেড। বন্যা যতটুকু বলেছিল তার থেকেও বেশি ট্যালেন্টেড। বন্যার কাছে আপনার কথা শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এখন আপনার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম সত্যিই আপনি একজন অসাধারণ ব্যক্তি। যাই হোক আপনি যখন সবটা বুঝতে পেরেছেন। তাহলে চলুন কোথাও একটা মিট করি।

সাফাত আলতো হেসে বলে, তার দরকার নাই। আপনি যেটা চাচ্ছেন সেটা আর সম্ভব নয়। বন্যা এখন আপনার স্ত্রী।

আপনি কিন্তু চাইলে বিয়েটা আটকাতে পারতেন। বা আমাকে ইনফর্ম করলে আমি নিজেই বিয়েটা ভেঙে দিতাম। কিন্তু আপনি সেই চেষ্টা করেননি।

চেষ্টা তো করেছিলাম। যখন বুঝলাম বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই তখন হাল ছেড়ে দিলাম। মেনে নিলাম ভাগ্যকে। বন্যা আমার ভাগ্যে ছিল না আপনার ভাগ্যে ছিল। তাই তো পেয়েও তাকে পাওয়া হলো না। সারাজীবন পাশে থাকার কথা দিয়েও পাশে থাকতে পারলাম না। মাঝ রাস্তায় ছেড়ে দিতে হলো। আশা করি আপনি সারাজীবন বন্যার পাশে থাকবেন।

কিন্তু বন্যা তো আপনাকে ভালোবাসে।

মিস্টার নোমান ভালোবাসা অল্পতে শেষ হয় না। ভালোবাসা জীবনে একবার ও আসে না। ভালোবাসা জীবনে একবার না বহুবার বহুরুপে আসে। নাইবা হলেন বন্যার প্রথম ভালোবাসা শেষ ভালোবাসা হয়ে দেখিয়ে দিন মেয়েটা বড্ড ভালোবাসার কাঙাল। ছোটবেলা থেকে কারো ভালোবাসা পায়নি। খুব ছোট থাকতে বাবাকে হারিয়েছে। মা যে কেমন সেটা নিজেই দেখেছেন। টাকার জন্য নিজের মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে আপনার কাছে। অবাক হবেন নাহ আমি সবটা জানি। আপনার আর বন্যার বিয়ে হওয়ার আগেই আমি আপনার সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নিয়েছি। বন্যাকে তো আর যার তার হাতে তুলে দিতে পারি না। ভালোবেসে বন্যাকে আগলে রাখুন দেখবেন ঠিক একদিন বন্যাও আপনাকে ভালোবেসে ফেলবে।

নোমান আফসোসের সুরে বলে, আজকে আমার ভীষণ আফসোস হচ্ছে। আপনার আগে কেনো আমার সাথে বন্যার দেখা হলো না। আমার ভাগ্যেই যখন বন্যা ছিল তাহলে বন্যার প্রথম ভালোবাসা আমি কেনো হলাম না?

আফসোস করবেন নাহ নোমান। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আপনি বন্যার প্রথম ভালোবাসা না হলেন শেষ ভালোবাসা হোন।

বন্যা না হয় একদিন আমাকে ভালোবেসে ফেলবে। আমরা দুইজন সংসার করবো। কিন্তু আপনার কী হবে? এমন ছন্নছাড়া হয়ে তো জীবন চলবে না।

আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। আপনি ভাবুন কীভাবে বন্যার মনে নিজের জায়গা করে নিবেন। আমি আছিই বা এই…….। ভালো থাকবেন। বন্যাকে ভালোবেসে আগলে রাখবেন। সারাজীবন পাশে থাকবেন। আশা করি আমার মতো মাঝ পথে হাত ছেড়ে দিবেন নাহ। আল্লাহ হাফেজ।

সাফাত নোমানকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই তাড়াতাড়ি ফোনটা কেটে দেয়। নোমান ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকাতেই ভূত দেখার মতো চমকে যায়। বন্যা বিছানার ওপর বসে তার দিকে ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে। না না তার দিকে না তার হাতে থাকা বন্যার ফোনের দিকে। নোমান তাড়াতাড়ি ফোনটা রেখে দেয়। ক্যাবলা কান্তের মতো একটা হাসি দিয়ে বলে,

না মানে কয়টা বাজে সেটাই দেখছিলাম।

বন্যা নোমানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, আপনার কী আমাকে বোকা মনে হয়? নিজের হাতে ফোন রেখে আমার ফোন নিয়েছেন সময় দেখার জন্য। হাউ ফানি। যেটা পারেন নাহ সেটা বলতে যান কেনো? আগে মিথ্যা বলতে শিখুন তারপর মিথ্যা বলতে আসবেন।

নোমান কিছু বলার জন্য আমতা আমতা করছে। বন্যাই আবার বলে,

আপনি সাফাতকে কেনো ফোন দিয়েছিলেন?

না মানে।

দেখুন আপনার কাছে কিছু লুকাতে চাইনি বলে আমি আমার আর সাফাতের সম্পর্কে বলেছিলাম। কিন্তু আপনি এ নিয়ে যে জামেলা করবেন সেটা আমি বুঝতে পারিনি। কেনো সাফাতকে ফোন দিয়ে কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছেন। সাফাত আমার প্রাক্তন তাই ওর ব্যাপারে আপনি নাক না গলালেই আমি খুশি হবো। আর হ্যাঁ আশা করি ভবিষ্যৎ আর সাফাতকে ফোন দিবেন নাহ।

কথাগুলো বলে বন্যা ওয়াশরুমে চলে যায়। নোমান বুকে হাত দিয়ে জুরে একটা শ্বাস নেয়। এতক্ষণ যেনো তার দমটা আটকে ছিল। সাফাত মনে মনে ভাবছে, খুব বাঁচা বেঁচে গেলাম, মেয়ে তো নয় জেনো ধানি লঙ্কা।

৫২

কপালে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে কণা ধপ করে চোখ খুলে ফেলে। একটা মানুষকে নিজের দিকে জুকে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে যায় কণা। সে মানুষ দেখতে পাচ্ছে না শুধু একটা মানুষের অবয়ব দেখা যাচ্ছে। কণা ভয় পেয়ে ধড়ফড়িয়ে শোয়া থেকে ওঠে বসে। কণা টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালানোর জন্য হাতরে হাতরে খোঁজছে টেবিল ল্যাম্পটা। কিন্তু হাতের নাগালে পাচ্ছে না টেবিল ল্যাম্পটা। মানুষের অবয়ব কণার আরো কাছে চলে আসে। কণা ভয়ে সিটিয়ে যায়। দেওয়ালের সাথে লেগে বসে আছে।

যাকে দেখার জন্য এতোদিন উতলা হয়ে ছিলে। আজকে তাকে দেখেই ভয় পাচ্ছো। দিস ইজ নট ডান ধূলিকণা।

কী সব বলছেন আপনি? কে আপনি? আপনার সাহস কী করে হলো আমাকে ধূলিকণা ডাকার? লজ্জা করে না আপনার এতো রাতে একটা অবিবাহিত মেয়ের রুমে আসতে।

ইশ এভাবে তাকিয়ো না তোমার চোখ দুটো দেখলে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। রাগলে তোমার নাক লাল হয়ে যায়। ইচ্ছে করে এক কামড় দিয়ে খেয়ে ফিলি। নিজের দেওয়া নামে ডাকতে আবার সাহস লাগে। লজ্জা শরম ভয়
তিন থাকতে নেই। আমি তোমার সেই চিঠি প্রেরক।

কণা এবার ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট অন করে। সামনে বসে থাকা লোকটিকে দেখে চমকে ওঠে কণা। সে এ কাকে দেখছে? তার সামনে আদিয়াত আয়মান তুর্ণ বসে আছে কণার বিশ্বাসই হচ্ছে না।

আপনি?

কেনো অন্য কাউকে আশা করছিলে নাকি?

আমি এখন কাউকেই আশা করছিলাম না। আপনি এখানে কী করছেন?

এতোদিন নিজেই আমাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলে। আর আজ যখন আমি দেখতে আসলাম তখন বলো আমি এখানে কী করছি। দিস ইজ নট ডান।

আপনিই সে?

হ্যাঁ আমিই তোমার সে। তোমার চিঠি প্রেরক। তোমার প্রেমিক পুরুষ।

না এটা হতে পারে না। প্লিজ আপনি এখান থেকে চলে যান।

কী হতে পারে না? তুমি বললেই আমি চলে যাব নাকি। এতদিন তুমি আমাকে দেখার জন্য পাগলামি করছে। আজ থেকে আমি পাগলামো করবো।

প্লিজ চলে যান নাহ। আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক হতে পারে না?

কেনো হতে পারে না? আমি কী তোমার যোগ্য নই।

আপনি নন বরং আমি আপনার যোগ্য নই। আপনি আমার থেকেও আরো বেটার কাউকে ডিজার্ভ করেন। আমার কোনো যোগ্যতাই নেই আপনার পাশে দাঁড়ানোর। আমার মতো একটা কুৎসিত চেহেরার অধিকারী মেয়েকে আপনার পাশে মানায় না।

কুৎসিত চেহেরা কথাটা শুনেই আদিয়াত ভীষণ রাগ ওঠে যায়। কণার গাল চেপে ধরে।
চিৎকার করে বলে,

কতবার বলেছি তোকে নিজেকে কুৎসিত বলবি না। নিজেকে ছোট করে দেখবি না। তোর আমার পাশে দাঁড়ানোর যোগ্যতা আছে কী না নেই? সেই বিছার আমি করবো। তুমি কেনো বুঝতে পারো না তুমি আমার কাছে কি।

চলবে……..