তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব-৩৫ এবং শেষ পর্ব

0
1292

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৩৫

সুযোগ বুঝে আদ্রিয়ানকে প্রোপোজ করে ফেলি। আদ্রিয়ানও রাজি হয়ে যায়। তখন কী আর জানতাম আদ্রিয়ান সুন্দরের পুজারি। নতুন কাউকে পেলে আগের জনকে ভুলে যায়। আমাকে পেয়ে কণাকে ভুলে গিয়েছিল। আরুহিকে পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিতেও দুই বার ভাবেনি। এই আরুহির জন্যই আমি আদ্রিয়ানকে পায়নি। এই আরুহিকে আমি ছাড়বো না। ওকে আমি নিজের হাতে শেষ করবো। খুন করে ফেলবো ওকে। এমনিতেও জেলে যেতে হবে। আমি ওকে খুন করেই তবে জেলে যাব।

ছোঁয়া সেন্টার টেবিলের ওপর রাখা ছুড়িটা নিয়ে আরুহির গলায় জুড়ে চেপে ধরে। ছোঁয়া আরুহিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

জানিস তোকে আমি মারতাম না। কিন্তু তোকে না মারলে তুই আদ্রিয়ানের সাথে সুখে সংসার করবি সেটা আমি মেনে নিতে পারবো না। আমি আদ্রিয়ানকেই মারতাম কিন্তু আদ্রিয়ানকে আমি মারতে পারবো না। কারণ আমি আদ্রিয়ানকে ভালোবাসি। কিন্তু তোকে মারতে আমার একটুও হাত কাঁপবে না। আমি যখন আদ্রিয়ানকে পাইনি তখন আমি আদ্রিয়ানকে কাউকে পেতে দিবো না।

কথাগুলো বলেই ছোঁয়া পাগলের মতো হাসতে থাকে। আরুহির গলায় আরেকটু জুড়ে ছুড়িটা চেপে ধরে। সবাই আতঙ্কিত হয়ে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। সবাই বুঝতে পারছে এখন ছোঁয়ার মাথার ঠিক নেই। যে কোনো সময় যে কোনো কিছু করে দিতে পারে। আরুহিকে মারতেও ছোঁয়া দুই বার ভাববে না।

তখনি পিছন থেকে একটা মহিলা কনস্টেবল এসে ছোঁয়ার হাত থেকে ছুড়িটা কেড়ে নেয় আর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ছোঁয়ার গালে থাপ্পড় মারে। টাল সামলাতে না পেরে ছোঁয়া নিচে পড়ে যায়। মহিলা কনস্টেবল ছোঁয়াকে টেনে নিচে থেকে তুলে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। পুলিশ অফিসার আদিয়াতের সাথে কথা বলে চলে যায়। হঠাৎ সাফাত নিজের শরীরে সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করে। কিন্তু তার আশেপাশে ব্যথা পাওয়ার মতো কিছু দেখতে পায় না।

৬৯

আদিয়াত তাকিয়ে আছে কণার মলিন মুখটার দিকে। কণাকে কেমন প্রাণহীন লাগছে। আদিয়াত গিয়ে কণার গা ঘেষে বসে। কণার গালে হাত রাখে। কণা নিজের গাল থেকে আদিয়াতের হাতটা সরিয়ে দিয়ে আদিয়াতকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে হু হু হু করে কেঁদে দেয়।
হঠাৎ করে কণার এভাবে কান্না করায় আদিয়াত একটু থতমত খেয়ে যায়। আদিয়াত কণার কান্নার কারণ বুঝতে পারছে না। কণা ভাঙা ভাঙা গলায় বলে,

আদিয়াত আপনি আরো আগে কেনো আমার জীবনে এলেন নাহ? বলুন নাহ? কেনো এলেন নাহ? আপনি যদি আরো আগে আমার জীবনে আসতেন তবে আমার জীবন এভাবে এলোমেলো হয়ে যেতো না। নিজের মুখ লুকিয়ে রাখতে হতো না। আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলা হতো না। আপনি আরো আগে আমার জীবনে আসলে আমি আদ্রিয়ানের সাথে রিলেশনে যাওয়ার মতো ভুলটা করতাম নাহ। আপনি হতেন আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা।

আদিয়াত কণার ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রেখে বলে,

হুশশশ। কোনো কথা নয়।

কণার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,

ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে। প্রেম জীবনে একবার আসে না। প্রেম জীবনে বহুবার বহু রুপে আসে। আমি তোমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা হতে পারিনি তো কী হয়েছে? আমি তোমার জীবনের শেষ ভালোবাসা হবো। আমি তোমার জন্য কোনোদিনও অস্বস্তিতে পড়িনি। তুমি আমার ভালোবাসা। তোমাকে আমি যেকোনো সময় যেকোনো রুপে গ্রহণ করে নিতে রাজি।

আপনি আমাকে এতো ভালোবাসেন কেনো?

ভালোবাসার জন্য কোনো কারণ লাগে না। ভালোবাসাটা এমনি এমনি হয়ে যায়। আমি তোমাকে কেনো ভালোবাসি? সেই কারণটা আমার অজানা। শুধু এতটুকু বলতে পারি তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। তুমি আমার অন্ধকার জীবনের আলো। তুমি আমার বেঁচে থাকার একটা কারণ। তোমাকে ছাড়া এই আদিয়াত কিছুই না।

আপনি কতো পারফেক্ট একজন মানুষ। আপনি আমার থেকে হাজার গুণ ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করেন।

আমার তো তোমার চেয়ে হাজার গুণ ভালো মেয়ে চাই না। আমার তো শুধু তোমাকেই লাগবে। বেঁচে থাকার জন্য লাগবে। প্রাণ খুলে শ্বাস নেওয়ার জন্য তোমাকে লাগবে। আমি সব ঠিক করে দিব। তোমাকে আবার তোমার আগের চেহেরা ফিরিয়ে দিব। এখন তো শুধু সময়ের অপেক্ষা।

সত্যিই আমি অনেক ভাগ্যবতী। তাই তো আপনার মতো একজন মানুষকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি।

অনেক হয়েছে এসব গুরু গম্ভীর কথাবার্তা। এখন এসব বাদ দাও। কাছে এসে বসো তো একটু মন ভরে আদর করি। তিন দিন হলো বিয়ে করেছি। কিন্তু এখনো নিজের বউকে একটু ছুঁয়ে দেখলাম নাহ। সত্যিই আমি অনেক ভদ্র একটা ছেলে।

আদিয়াতের কথায় কণা লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে যায়। আদিয়াত যে লাগামহীন কথাবার্তা বলা শুরু করবে সেটা কণার কল্পনারও বাইরে ছিল। কণা মুখ বাঁকিয়ে বলে,

ভদ্র না ছাই। অসভ্য একটা।

কণার কথা বলার স্টাইল দেখে আদিয়াত হেসে ফেলে।

৭০

প্রায় সবাই চলে গেছে শুধু রয়ে গেছে অহি। আদ্রিয়ানও থেকে যেতে চেয়েছিল কণার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য। কিন্তু তিশান আহম্মেদ না করে দিয়েছে। তিনি চান নাহ কণার নতুন জীবনে অতীতের কোনো ছায়া পড়ুক। অহি মুলত কণার সাথে দেখা করার জন্যই থেকে গেছে।

কণার রুমে যেতে হলে সাফাতের রুমের সামনে দিয়ে যেতে হয়। অহি কণার সাথে দেখা করার জন্য যখন কণার রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনি সাফাত অহির হাত ধরে টান দিয়ে নিজের রুমে নিয়ে আসে। আচমকা এমন হওয়াতেই অহি ভয়ে পেয়ে যায়। কিন্তু সামনে সাফাতকে দেখে অহির দৃষ্টি স্থির হয়ে যায়। অহিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফাত একটু অস্বস্তিতে পড়ে যায়। তবু নিজেকে সামলে নেয়। অহির দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বলে,

অহি আমি কী বলবো সত্যিই বুঝতে পারছি না। সেদিনের ব্যবহার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত। আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে তোমার সাথে সেদিন খারাপ ব্যবহার করতে চাইনি। নিজের অজান্তেই তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। আই’ম সরি। আই’ম রিয়েলি সরি। প্লিজ ফর গিভ মি।

সব সময় কী সরি বললেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়? আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিলে কী আপনি আপনার করা অপমান ফিরিয়ে নিতে পারবেন?

তার মানে তুমি আমাকে ক্ষমা করবা না?

সাফাত আর কিছু বলতে পারলো না। সাফাতের ধরে রাখা অহির হাতটা ডিলে হয়ে আসে। আচমকা সাফাত নিচে ঢলে পড়ে। সাফাতের এভাবে পড়ে যাওয়ার মানে অহি বুঝতে পারছে না। সাফাতকে কয়েক বার ডেকেও যখন অহি সাড়া পেলো না। তখন অহি ভয় পেয়ে যায়। মনের মাঝে অজানা ভয় হানা দেয়।

সমাপ্ত।

তুমি আমার প্রেয়সী সিজন-০১ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন