তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব-৩২+৩৩

0
640

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৩২

সকাল ঘুম থেকে ওঠেই সাফাত কণার রুমের সামনে যেতেই দাঁড়িয়ে যায়। সে তো ভুলেই গেছে কণা এখানে নেই। ব্রেকফাস্ট টেবিলে কণাকে ডাকতে গিয়েও চুপ হয়ে যায়। অতঃপর না খেয়েই ড্রাইনিং টেবিল ছেড়ে ওঠে পড়ে সাফাত। সবকিছুই নিরবে অবলোকন করছেন তিশান আহম্মেদ। তিনি জানেন সাফাত কখনো কণাকে ছাড়া খায় না। দুই ভাই বোন এরকম একজন না খেলে আরেকজন খায় না।

তিশান আহম্মেদও না খেয়ে ওঠে পড়ে। খাবার খাবারের মতোই পড়ে আছে। কেউ ছুঁয়েও দেখেনি। সাফাত না খেয়েই ভার্সিটি চলে যায়। সাফাত গাড়ি ড্রাইভ করছিল ঠিক তখনি গাড়ির সামনে একটা মেয়ে চলে আসে। সাফাত দ্রুত ব্রেক কষে। নাহলে নির্ঘাত মেয়েটা এখানেই নিজের প্রাণ হারাতো। সাফাত ভীষণ বিরক্ত হয়। কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়েটা কোনো দিকে না তাকিয়ে উল্টো দৌড় দেয়। সাফাতের মাথা গরম হয়ে যায়। একে তো হুট করেই গাড়ির সামনে চলে এসেছে তার উপর মেনার্সলেসের মতো সরি বা ধন্যবাদ না বলেই চলে গেছে।

সাফাত গাড়িতে একটা ঘুষি দিয়ে বলে, রিডিকিউলাস।

গাড়িতে ওঠে আবার ড্রাইভ করা শুরু করে। কিছক্ষণের মাঝেই ভার্সিটি চলে আসে। গাড়ি পার্ক করে ভার্সিটিতে ঢুকতেই অহি গোলাপ ফুল নিয়ে সাফাতের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে প্রোপোজ করে।

সকাল থেকে এমনিই সাফাতের মন মেজাজ ঠিক ছিল না। তার মাঝে অহির প্রোপোজ করাটা যেনো সাফাতের মেজাজটা বিগড়ে দিল। সাফাতের রাগটা তীর তীর করে বাড়তে লাগলো। আশেপাশের সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে সাফাতের মাথা ফেটে যাচ্ছে। সাফাত নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে নিজের রাগ কনট্রোল করতে পারছে না। সকাল থেকে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা ঘটনা সাফাতকে রাগানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। তার মাঝে অহির প্রোপোজ করাটা যেনো আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো।

সাফাত রেগে চিৎকার করে বলে, হেই স্টুপিড মেয়ে তোমার সাহস হয় কী করে আমাকে প্রোপোজ করার? আমি তোমার টিচার হই সেটা কী তুমি ভুলে গেছো? তুমি ফাজলামো পাইছো? প্রথম দিন থেকে বেহেয়ার মতো তুমি আমার পিছনে পড়ে আছো? একের পর এক ভুল করেই যাচ্ছো? আজকে তুমি সবকিছুর লিমিট ক্রস করে ফেলেছো? থাপড়ায়া তোমার গাল লাল করে দিতে ইচ্ছে করছে। তুমি আমাকে প্রোপোজ করলে আর আমি উত্তরে বলবো, আমিও তোমাকে ভালোবাসি। নেভার এভার। কখনোই আমি এটা বলবো না। কজ আই যাস্ট ডোন্ট লাইক ইউ।নিজেকে তুমি কী ভাবো? হুম? বিশ্ব সুন্দরী? নাঁচতে নাঁচতে প্রোপোজ করতে চলে আসলে। শুনো নেক্সট টাইম তোমাকে যেনো আমার আশেপাশে না দেখি। নেক্সট টাইম এমন কোনো ভুল করলে আমি ভুলে যাব যে এটা ভার্সিটি।

সাফাত রাগে হনহন করে চলে যায়। অহি ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে। অহির চোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু ঝড়ছে। হাতে গোনা কয়েকজন অহির দিকে তাকিয়ে হাসছে। এদিকটায় যাস্ট কয়েক জন মানুষ ছিল আর অহির বান্ধবীরা। অহির বান্ধবীরা এসে অহিকে টেনে তুলে।

৬৫

খাবার টেবিলে বসে কণা ঘুমে ঢুলছে। আদিয়াতের জন্য এক ফোটাও সে ঘুমুতে পারেনি। সারা রাত আদিয়াত তাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে ছিল। সারা রাত শুধু হাসফাস করেছে একটুও ঘুমাতে পারেনি। কেউ এভাবে ধরে রাখলে কী ঘুমানো যায়? আদিয়াতকে ছাড়ার কথা বলতেই আদিয়াত শুধু বলেছিল, অভ্যাস করে নাও এখন থেকে এভাবেই ঘুমাতে হবে। আদিয়াত ঘুমের দেশ তলিয়ে যায়। রাহেলা বেগম কণার পাশে এসে বসে। কণার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

কী হয়েছে মা? শরীর খারাপ লাগছে? নতুন জায়গা রাতে থাকতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? দেখতে তো পারছো এতো মানুষ সব আমাকে একা দেখতে হয়, একা করতে হয়। আমার একটা মেয়েও নেই যে আমাকে সাহায্য করবে।

আরুহি পাশ থেকে বলে, এখন আমাকে আর তোমার চোখে পড়ে না। তোমার কতো কাজে হেল্প করে দিলাম।

বয়স তো আর কম হলো না। এখন মনে হয় চোখেও কম দেখি। তুই আমাকে এতো গল্প করলি আর আমার চোখ দেখলো তুই ফোন নিয়ে ফুসুর ফুসুর করছিলি। চোখের ডক্টর দেখাতে হবে মনে হয়।

রাহেলা বেগমের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। আরুহি গাল ফুলিয়ে বসে। রাহেলা বেগম কণার দিকে তাকিয়ে বলে,

নিয়ম অনুযায়ী আজকে তো তোমাকে আর আদিয়াতকে তোমাদের বাড়ি যেতে হবে। খাওয়া দাওয়া করে একটু রেস্ট নিয়ে নিয়ো। বিকালে দিকে ও বাড়ি চলে যেয়ো। এই তোমরা তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো।

এটা বলে রাহেলা বেগম চলে যায়। কণা আদিয়াতের জন্য শান্তিতে খেতেও পারছে না। আদিয়াত নিজের পা দিয়ে কণার পায়ের ওপর স্লাইড করছে। কণা আদিয়াতের দিকে তাকালেই আদিয়াত মিটিমিটি হাসে। কণা আদিয়াতে পায়ে জুড়ে গুতা মারে। কিন্তু আদিয়াতের পরিবর্তে আদিয়াতের বন্ধু রবিন লাফিয়ে ওঠে পা ধরে। রবিন চিল্লায় বলে,

আমার পায়ে কে এতো জুড়ে লাথি মারলো?

কণার কাঁশি ওঠে যায়। কণা বেশ বুঝতে পারছে আদিয়াতের পরিবর্তে সে রবিনকে লাথি মেরেছে। কণা তাকিয়ে দেখে আদিয়াত মিটিমিটি হাসছে। কণার আর বুঝতে বাকি রইল না সবটাই আদিয়াতে কারসাজি। কণা ভয়ে ভয়ে আছে সবার সামনে আবার এটা ফাস না হয়ে যায় যে, সে লাথি মেরেছে। যদি সবাই জেনে যায় কেমন বিশ্রী একটা ব্যাপার হবে। নতুন বউ লাথি মারছে। সবাই কী ভাববে? রবিন আরুহির দিকে তাকিয়ে বলে,

আপনিই আমাকে লাথি মারছেন তাই না? আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেন নাহ জানতাম। তাই বলে এতো জুড়ে লাথি মারবেন। গাড়িতে আপনাকে আদিয়াতের সাথে বসতে দেয়নি বলে আপনি এভাবে প্রতিশোধ নিলেন।

আরুহি রবিন দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলে, হোয়াট ননসেন্স। আপনি এসব কী আবল তাবল বলছেন? আমি কখন আপনাকে লাথি মারলাম? আমার আর কোনো কাজ নেই যে আপনাকে লাথি মারতে যাব।

আপনিই আমাকে লাথি মেরেছেন। এটাই কোনো সন্দেহ নেই। আপনি আমার সোজাসুজি বসেছেন আর আপনার সাথেই আমার শত্রুতা। এখানে উপস্থিত আর কারো সাথেই আমার শত্রুতা নেই। এটাতেই প্রমাণিত হচ্ছে আপনিই আমাকে লাথি মেরেছেন? আপনি তো আমাকে খুন করার প্লেন করেছিলেন।

মানে? কী আজেবাজে কথা বলছেন?

খাওয়ার সময় আপনি আমাকে লাথি মেরেছেন। যদি আমার গলায় খাবার আটকে যেতো আর আমি মারা যেতাম। তখন আপনি কী করতেন?

আজব। আমি আপনাকে লাথি মারিনি।

আপনি লাথি না দিলে কে দিয়েছে?

আদিয়াত কণার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলে, টেবলের নিচে এটু হুলু বিড়াল আছে। ঐ বিড়াল তোকে লাথি মেরেছে।

আদিয়াত কণাকে বিড়াল বলায় কণা ভীষণ রেগে যায়। কণা আদিয়াতের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে টেবিল ছেড়ে ওঠে চলে যায়। কণার পিছু পিছু আদিয়াতও চলে যায় আর বাকিরা টেবিলের নিচে বিড়াল খোঁজতে ব্যস্ত। আদিয়াত গুণ গুণ করে গান গাইতে গাইতে কণার পিছু পিছু যাচ্ছে। আদিয়াত গুন গুন সুরের গান যেনো কণার রাগে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে।

কণা আদিয়াতের দিকে আরেকবার অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুমে ঢুকে যায়। রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে যাবে তার আগেই কণাকে ঠেলে আদিয়াত রুমে ঢুকে পড়ে। আদিয়াত রুমে ঢুকেই ঠাস করে দরজা বন্ধ করে ফেলে। কণা রাগে ফুসফুস করছে। আদিয়াত কণার কোমড় জড়িয়ে ধরে এক ঝটকায় নিজের কাছে টেনে নেয়।

ধূলিকণা বুঝি আমার ওপর রাগ করেছে?

কণা মুখ ফিরিয়ে নেয়।

পিচ্চি একটা মেয়ে আর এতো রাগ। এতো রাগ কই থাকে? হুম?

আদিয়াত কণার কোমড়ে একটা চিমটি কাটে।
কণা আদিয়াতের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে,

একদম আমাকে পিচ্চি বলবেন নাহ।

পিচ্চিকে পিচ্চি বলবো না তো কী বলবো? তুমি জানো তুমি আমার থেকে ৭ বছরের ছোট।

কণা কাঠ কাঠ গলায় বলে, আমি যখন এতোই পিচ্চি। তাহলে পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করলেন কেনো?

আদিয়াত কণাকে আরেকটু কাছে টেনে এনে বলে, ভালোবাসি তাই।

আদিয়াতের মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনে কণার রাগ কর্পূরের মতো উদাও হয়ে গেলো। কণা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিয়াতের দিকে। আদিয়াতের ফোন বেঁজে ওঠায়। আদিয়াত কণাকে ছেড়ে দেয়। ফোনের স্কিনের নামটা দেখে আদিয়াত দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যায়।

চলবে…….

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৩৩

আদিয়াতের মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনে কণার রাগ কর্পূরের মতো উদাও হয়ে গেলো। কণা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিয়াতের দিকে। আদিয়াতও কণার দিকে তাকিয়ে আছে। আদিয়াত হাত বাড়িয়ে কণার কপালের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয়। কণার মুখের ওপর ফুঁ দেয়। কণা চোখ বন্ধ করে ফেলে। হুট করেই আদিয়াতের ফোন বেঁজে ওঠে।

আদিয়াত কণাকে ছেড়ে দেয়। পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোনের স্কিনে তাকায়। ফোনের স্কিনের নামটা দেখে আদিয়াত কণাকে কিছু না বলেই দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যায়। কণা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আদিয়াতের যাওয়ার দিকে। কণা বুঝতে পারছে না আদিয়াত হঠাৎ করে এভাবে চলে গেলো কেনো? আর তার সামনে ফোনটা রিসিভ করলো না কেনো?

কণার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে অসংখ্য প্রশ্ন। কে ফোন করেছিল? আর কেনোই বা এতো গোপনীয়তা?

৬৬

কণা থমথমে মুখে বসে আছে সাফাতের সামনে। কিছুক্ষণ আগেই এখানে এসেছে। কণা বাড়িতে এসেই সাফাত হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে রুমে। প্রায় পাঁচ মিনিট হলো কণা এভাবে সোফায় বসে আছে। আর সাফাত বিছানায় বসে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে কণার দিকে। সে বুঝতে পারছে না কণার কী হয়েছে? কিন্তু এই টুকু ঠিকই বুঝতে পারছে যে কণা ভীষণ রেগে আছে।

আদিয়াত চলে যাওয়ার পর পরই কণা অহিকে কল দেয়। কিন্তু অহির ফোন বন্ধ দেখায়। অহিকে ফোনে না পেয়ে কণা অহির বান্ধবীকে কল দেয়। অহির বান্ধবী অহির সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। সাফাত কীভাবে অহিকে অপমান করেছে সব। সবকিছু শোনে কণা স্তব্ধ হয়ে যায়। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না সাফাত অহিকে এভাবে অপমান করেছে। সাফাত মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান করে। আজ একটা মেয়েকে জন সম্মুখে এভাবে অপমান করলো আর অহিকে তো সাফাত ছোটবেলা থেকে চিনে। কণা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না।

সাফাত ভীতু কন্ঠে বলে, কী হয়েছে কণা তুই এভাবে বসে আছিস কেনো? আর আমাকে এভাবে টেনে আনলি কেনো?

কণা রাগে ফুসছে।

সাফাত এবার মজার ছলে বলে, আদিয়াত তোকে মারছে? মারারই কথা তোর মতো অর্কমারে প্রতিদিন নিয়ম করে তিন বেলা পিঠানোর দরকার।

ভাইয়া আমি একদম মজা করার মুডে নেই।

আমি তো মজা করছি না। আমিও অনেক সিরিয়াস। তুই কেনো বিশ্বাস করতে চাইছিস না। কী করলে বিশ্বাস করবি?

তুমি আমার বান্ধবীকে অপমান করেছ কেনো?

আমি অপমান করবো তাও আবার তোর বান্ধবীকে? আল্লাহ আমার কী আমার জীবনের প্রতি মায়া নেই। তোর মতো একটা পেত্নীর বান্ধবীকে আমি অপমান করবো।

তাহলে অহিকে কে অপমান করেছে?

অহির নামটা শুনেই সাফাতের মুখটা কালো হয়ে যায়। অহির সাথে অমন ব্যবহার করার জন্য সে নিজেও অনুতপ্ত। রাগের মাথায় অপমান করলেও রাগ পড়ে গেলে তার ভীষণ খারাপ লাগে। তারপর থেকেই তার ভিতরে ভীষণ অপরাধবোধ কাজ করছে। সে সারাদিন ভেবেছে কীভাবে অহির কাছ থেকে ক্ষমা চাইবে? কিন্তু সরি বলা আর হয়ে ওঠেনি। সরি বললেও তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। সে সরি বললেও তো অহি যেভাবে অপমানিত হয়েছে সেটা ভুলে যাবে না।

আমি ইচ্ছে করে অপমান করেনি। রাগের মাথায় অপমান করে দিয়েছি। আমি নিজে কী বলছিলাম সেটা আমিই নিজেই বুঝতে পারিনি।

তুমি এতো রেগে গেলে কেনো? ভালোবাসা কী অপরাধ? নাকি কাউকে ভালোবাসা অন্যায়। কারো তোমাকে কারো ভালো লাগতেই পারে। তোমাকে কেউ ভালোবাসতেই পারে। তাই বলে কী তুমি তাকে অপমান করবা? তাকে অপমান করার কোনো রাইট তোমার নেই। তার ভালোবাসাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য তুমি করতে পারো না।

ভালোবাসা কোনো অন্যায় না বা কাউকে ভালোবাসাও কোনো অপরাধ না। সবারই অধিকার আছে ভালোবাসার। ভালোবাসার মানুষের কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার। আমি অহির সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য সত্যিই অনুতপ্ত। অহি আমাকে ভালোবেসে এটা শুনে আমি রেগে যায়নি। আমি তো আগে থেকেই রেগে ছিলাম। ( সাফাত কণাকে সবটা খুলে বলে) ঐ মেয়েটার ওপর রাগ দেখাতে পারিনি বিধায় সবটা রাগ অহির ওপর এসে পড়ে। আমি সত্যিই অনেক অনুতপ্ত। আমি অহিকে সরি বলতে চাই। কিন্তু কীভাবে সরি বলবো বুঝতে পারছি না।

তুমি সরি বললেই কী সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? সবাই যে অহির দিকে বাঁকা চোখে তাকাবে। নানা জন নানান কথা বলবে তাদের মুখ কী বন্ধ হয়ে যাবে? তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী চেইন্জ হয়ে যাবে?

সরি বললে এসব কিছুই হয়তো হবে না। কিন্তু আমার মনের শান্তি মিলবে।

কণা,,,, কণা,,, কণা।

আদিয়াতের ডাক শুনে কণা লাফিয়ে ওঠে। সে তো এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিল তার সাথে আদিয়াতও এসেছে। আদিয়াতকে দরজার কাছে রেখে কণা যে সাফাতের রুমে এসেছিল আর বের হয়নি। সে এই বাড়িতে এসেছে প্রায় ১ ঘন্টা হয়ে গেছে এর মাঝে কণা আদিয়াতের কোনো খোঁজ নেইনি এমনকি দেখাও করেনি। এখন তার কী হবে? আদিয়াত তাকে এখন একবার হাতের কাছে পেলে আল্লাহ মাবুদ জানে কী করবে? যদি এখন না যায় হয়তো শাস্তির মাত্রা ডাবল হয় যাবে।

সাফাত কণার ভীতু মুখটা দেখে ফিক করে হেসে দেয়ে। কণা সাফাতের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই সাফাতের হাসি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তবুও সে মিটিমিটি হাসছে। সাফাতের হাসি দেখে কণা দমক দিয়ে বলে,

এই তুমি হাসছো কেনো?

কোথায় আমি হাসছি?

তোমার কী আমাকে কানা মনে হয়? আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তুমি হাসছো।

আমার মুখ আমি হাসবো না কী করবো সেটা আমার ব্যাপার। আমার ইচ্ছে হলে আমার মুখ দিয়ে আমি ক্লোজ আপ এ্যাড দিব।

কারণ ছাড়া যারা হাসে তাদের বোকা বলা হয়।

তোকে কে বলেছে আমি কারণ ছাড়া হাসছি? জানিস তো বাপের বাপ থাকে। এতক্ষণ তোকে দেখে আমি ভয় পাচ্ছিলাম আর তুই আদিয়াতের ডাক শুনেই ভয়ে কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিয়েছিস।

আরেকবার আদিয়াতের ডাক পড়ায় কণা সাফাতের দিকে চোখ পাকিয়ে চলে যায়। কিন্তু যাওয়ার আগে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো আমি তোমাকে পরে দেখে নিবো।

৬৭

কণা নিজের রুমের সামনেই পায়চারী করছে। রুমের ভিতর যাবে নাকি যাবে না তা নিয়ে দ্বিধা দন্ডে ভুগছে। হুট করে রুমের দরজা খুলে একটা হাত কণাকে ভিতরে টেনে নেয়। কণা চমকে ওঠে। আদিয়াত কণাকে দরজার সাথে চেপে ধরে। আদিয়াত হিসহিসিয়ে বলে,

নিজের বাড়িতে এসেই এই অদমটাকে ভুলে গেলেন মিসেস কণা? কেউ একজন যে চাতকপাখির মতো আপনার অপেক্ষায় বসে থাকে সেই কথা কী আপনার মনে থাকে না?

সরি। এমন আর হবে না। আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম।

আপনি তো সব ভুলেই যান? কিন্তু সব ভুলতো ক্ষমা করা যায় না। আপনাকে তো শাস্তি পেতেই হবে।

ককককী শা……

কণা আর কিছু বলতে পারলো না। কথাগুলো গলায় আটকে গেলো। আদিয়াদ কণার গলায় পর পর দুইবার ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়েছে। আদিয়াত এতো কাছে আসায় যেনো কণার দম বন্ধ হয়ে আসছে। কণা জুড়ে জুড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে। আদিয়াত মুচকি হেসে কণার কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়। লজ্জায় কণা চোখ তুলে তাকাতে পারছে না।

৬৮

কণা ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিল। অসময়ে কলিংবেল বেঁজে ওঠায় কণা একটু বিরক্ত হয়। পরক্ষণেই আদিয়াত এসেছে এটা ভেবেই কণার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। কণা হাসি মুখে দরজা খুলে দেয়। কিন্তু দরজাটা খুলে অপর প্রান্তের দুই ব্যক্তিকে দেখে নিমিষেই কণার মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায়। মুখ অন্ধকার মেঘে ঢেকে যায়। কণার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদিয়াত আর ছোঁয়া। আদিয়াত ছোঁয়ার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে…..