তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব-৩৪

0
634

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৩৪

কণা ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিল। সময়টা এখন সন্ধ্যা ৭ টা। আজকে একদিন হলো তাদের বাসায় এসেছে। আদিয়াদ কোনো একটা বিশেষ কাজে বাইরে গেছে। যাওয়ার আগে বলে গেছে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।

অসময়ে কলিংবেল বেঁজে ওঠায় কণা একটু বিরক্ত হয়। পরক্ষণেই আদিয়াত এসেছে এটা ভেবেই কণার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। কণা হাসি মুখে দরজা খুলে দেয়। কিন্তু দরজাটা খুলে অপর প্রান্তের দুই ব্যক্তিকে দেখে নিমিষেই কণার মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায়। মুখ অন্ধকার মেঘে ঢেকে যায়। কণার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদিয়াত আর ছোঁয়া। আদিয়াত ছোঁয়ার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

এটা দেখেই কণার মাথা ঘুরে আসে। কণা দরজা থেকে দু পা পিছিয়ে আসে। কণা বুঝতে পারছে না ছোঁয়া এখানে কী করছে? আর ছোঁয়ার সাথে আদিয়াতই বা কেনো? আদিয়াত কণাকে পাশ কাটিয়ে ছোঁয়াকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে। তারপর ধাক্কা মেরে ছোঁয়াকে ফেলে দেয়। ছোঁয়া টাল সামলাতে না পেরে সোফার ওপর পড়ে যায়।

আদিয়াতের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। আদিয়াতের চোখে মুখে হিংস্রতা ফুটে ওঠেছে। কণা কিছুই বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে? সাফাত আর তিশান আহম্মেদও রুম থেকে বের হয়ে আসে। কিছুক্ষণ পরে পর পর আভিয়ান, ঐশি, অহি, আর আরুহি। সাফাত তাকিয়ে আছে অহির দিকে। একদিনেই মেয়েটার মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। অহির মলিন মুখেও ফুটে ওঠছে রাগ।

সবাইকে এক সাথে দেখে কণা একটু বেশিই অবাক হলো। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান আর ফাহিমও এলো। আদ্রিয়ান মাথা নিচু করে আছে একবারের জন্য ও মাথা উঁচু করে তাকায় নি। আদিয়াত ছোঁয়ার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কাঠ কাঠ গলায় বলে,

কণার সামনে সবটা স্বীকার কর আর ক্ষমা চা।

কিন্তু ছোঁয়া মুখ খুলতে নারাজ। আর কণার কাছে ক্ষমা চাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। কণার মতো একটা মেয়ের কাছে সে ক্ষমা চাইবে। এটা কল্পনাতেই সম্ভব। অহি এগিয়ে আসে। ছোঁয়ার চুলের মুঠি ধরে ঠাস ঠাস করে চারটা চর বসিয়ে ছোঁয়ার গালে। ছোঁয়ার ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। অহি ছোঁয়ার চুলটা জুড়ে টেনে ধরে। ছোঁয়া ব্যথায় কুঁকিয়ে ওঠে। অহি আরো দুই তিনটে থাপ্পড় মারে। ছোঁয়া কিছু বলতে পারছে না। কারণ এর আগেও তার কয়েক বার মার খাওয়া হয়ে গেছে।

তুই সত্যিটা বলবি নাকি আমার হাতে খুন হবি।

কীসের সত্যি বলবো? আমি কোনো সত্যি টত্যি জানি না।

বুঝতে পেরেছি তুই এভাবে সব স্বীকার করবি না। আদিয়াত ভাইয়া আপনি পুলিশকে খবর দিন। একে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো আমি। রিমান্ডে গেলে এমনিই সব স্বীকার করবে। তুই বলবি নাকি আমি তোকে মেরে ফেলবো।

আমি কিছু বলবো না।

আদিয়াত এতক্ষণ অনেক কষ্টে নিজের মাথা ঠান্ডা। নিজের রাগটা কনট্রোল করছিল। এখন আর নিজের রাগটা কনট্রোল করতে পারলো না। ছোঁয়ার গালে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল।

কণার ওপর এ্যাটাক কে করিয়েছিল। কণার মুখে এসিড নিক্ষেপের নির্দেশ তুই দিয়েছিলি না?

ছোঁয়া অহির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে,

হ্যাঁ হ্যাঁ সব আমি করেছি। আমি কণার ওপর এ্যাটাক করাই। কণার সুন্দর চেহেরাটা এসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়ার অর্ডার আমিই দিয়েছিলাম। কারণ আমি কণাকে সহ্য করতে পারতাম না। ও সবকিছুতেই ফাস্ট ছিল যেটা আমি সহ্য হতো না। আমি ছোটবেলা থেকেই ক্লাসে কখনো ফাস্ট থেকে সেকেন্ড হয়নি। শুধু মাত্র ওর জন্য ভার্সিটিতে সেকেন্ড হয়েছি। সব স্যারদের কাছে ও প্রিয় ছিল। যেটা আমি একদমি সহ্য করতে পারতাম না। তবু এটা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু কণা আমার কাছ থেকে আমার আদ্রিয়ানকে ও কেঁড়ে নিলো। আদ্রিয়ানের ওপর আমার প্রথম থেকেই নজর ছিল। ওকে আমার ভালো লাগতো। ওর কথা বার্তা চলাফেরা সবকিছুই আমার ভালো লাগতো। ওকে আমি সব সময়ই ফলো করতাম। ওর প্রত্যেকটা মুভমেন্ট আমি ফলো করতাম। দিনকে দিন ওর প্রতি আমার অনুভূতি গাড় হতে লাগলো। আস্তে আস্তে ভালো লাগাটা ভালোবাসায় পরিণত হলো। নিজের অজান্তেই আদ্রিয়ানকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু আদ্রিয়ান আমাকে পাত্তাও দিতো না। আদ্রিয়ান আমার দিকে ফিরেও তাকাতো না। আমাকে সব সময় এড়িয়ে চলতো। আমি নিজে থেকে কথা বলতে গেলে ইগনোর করতো। তবুও নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম আদ্রিয়ান আমার না হোক অন্য কারো তো হয়নি। আদ্রিয়ানকে নিয়ে কল্পনা জল্পনা করতে করতে পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যেতে থাকি। একদিন হুট করেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। হসপিটালে ভর্তি ছিলাম ৬ দিন। সুস্থ হয়েই ছুটে যায় ভার্সিটিতে আদ্রিয়ানকে এক নজর দেখার জন্য। ভার্সিটিতে গিয়ে কানা ঘুষা শুনতে পাই আদ্রিয়ান আর কণা রিলেশনে গেছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু রাতের মাঝেই আমার বিশ্বাস ভেঙে যায় আদ্রিয়ান আর কণার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেখে। নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে হঠাৎই আমার চোখের সামনে আদ্রিয়ান আর কণার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চলে আসে। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসটা ছিল ৬ দিন আগের। আমি মেনে নিতে পারছিলাম নাহ কণা আর আদ্রিয়ানের রিলেশনের ব্যাপারটা।

এই টুকু বলে থামে ছোঁয়া। এদিকে কণা কেমন জানি করছে। আদিয়াত গিয়ে কণাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে। আদিয়াত জড়িয়ে ধরতেই কণা আদিয়াতের বুকের সাথে লেপ্টে যায়।
অহি ছোঁয়ার দিকে আঙ্গুল তুলে বলে,

থামলি কেনো? সবটা বল। পরে তুই কী করলি?

ছোঁয়া দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করে, সেদিন রাতে আমি আর ঘুমাতে পারিনি। সারা রাত কাটিয়েছি কেঁদে কেঁদে। এক মিনিটের জন্য দু চোখের পাতা এক করতে পারিনি। সময় গড়াতে থাকে আমার ভিতরে প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। কণার এই হাসি খুশি মুখটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম নাহ। আমার চোখের সামনে আদ্রিয়ান আর কণা হাত ধরে ঘুরাঘুরি করতো, ফুচকা খেতো। তাদের এসব ন্যাকামো মার্কা প্রেম আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। মনে মনে প্লেন করে নেই কণার এই রূপ আমি এসিড দিয়ে ঝলসে দিব। আদ্রিয়ান তখন আর কণার দিকে ফিরেও তাকাবে না। তখন কণা দুইটা টিউশনি করাতো আর একটা টিউশনি ছিল আমার বাসার পাশের বাসায়। টিউশনি শেষ আদ্রিয়ানই সব সময়ই কণাকে নিতে আসতো। কিন্তু সেদিন আদ্রিয়ান আর তার ফ্রেন্ডদের সাথে ট্রুরে গিয়েছিল আর আমি সেই সুযোগটাই কাজে লাগাই। সেদিন আমি কণার কাছে পড়া বুঝতে যাই। পড়া বোঝার বাহানায় আমি কণার অনেকটা দেরি করে ফেলি। কণা পড়া বুঝাতে এতোই মগ্ন ছিল যে কখন ঘড়ির কাটা ৭ টার ঘর পেরিয়ে ৮ টার ঘরে চলে গেছে খেয়ালই করেনি। কণা ৮ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়। বাসা থেকে বের হয়ে কণা কোনো গাড়ি পায় না। তাই হাঁটতে শুরু করে। কণা যখন একা নিঝুম নিস্তব্ধ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল তখনি আমার লোকেরা কণাকে ঘিরে ধরে। সুযোগ বুঝে কণার মুখে এসিড ছুঁড়ে মারে। তাদেরও কণার ওপর আগে থেকেই রাগ ছিল। কারণ কণার জন্যই আদ্রিয়ান একদিন ওদের বেদারম মার মেরেছিল। ৭ দিন হসপিটালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল। তারপর থেকে ওরাও মরিয়া হয়ে ওঠে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। আমি ওদের আরো উস্কে দেই আর আমার প্লেনের কথা বলি। ওরাও রাজি হয়ে যায়। কণা যখন মাটিতে পড়ে ছটফট করছিল তখনি আমার পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছিল। আমার অন্তর ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল।

কণা আর সহ্য করতে পারলো না ছোঁয়াকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করলো। আদিয়াত কণাকে টেনে সরিয়ে ফেলে। ছোঁয়ার কোনো রিয়েকশন নেই। ছোঁয়া আবার বলতে শুরু করলো।

সুযোগ বুঝে আদ্রিয়ানকে প্রোপোজ করে ফেলি। আদ্রিয়ানও রাজি হয়ে যায়। তখন কী আর জানতাম আদ্রিয়ান সুন্দরের পুজারি। নতুন কাউকে পেলে আগের জনকে ভুলে যায়। আমাকে পেয়ে কণাকে ভুলে গিয়েছিল। আরুহিকে পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিতেও দুই বার ভাবেনি। এই আরুহির জন্যই আমি আদ্রিয়ানকে পায়নি। এই আরুহিকে আমি ছাড়বো না। ওকে আমি নিজের হাতে শেষ করবো। খুন করে ফেলবো ওকে। এমনিতেও জেলে যেতে হবে। আমি ওকে খুন করেই জেলে যাব।

চলবে……..