তুমি আসবে বলে পর্ব-১৩+১৪+১৫

0
296

# তুমি আসবে বলে

# নুসাইবা ইভানা

পর্ব-১৩

নীলু আরহাকে ধরে বলে, কি হয়েছে বনু এমন করছিস কেনো? তুই না চাইলে ইমতিহানের সাথে সব সম্পর্ক এখনি শেষ করে দিচ্ছি। বল আমাকে কি হয়েছে! আরহা চোখ বন্ধ করে রেখে ভাবছে কন্ঠ তো অনেকের একরকম হতেই পারে। আরহার চোখ থেকে টপ, টপ করে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। ডান হাতের বাহু চেপে ধরে আছে। নীলু বুঝতে পারছে এরকম আর কিছু সময় হলেই আরহার প্যানিক এট্যাক হবে। সেই ক্ষত স্থান থেকে নীলু আরহার হাত সরিয়ে নিয়ে আরহাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমার কথা শোন আরহু তুই ছাড়া আমার কেউ নেই! তুই এমন করিস না বনু বল আমাকে কি হয়েছে। আরহা কোন কথা না বলে নীলুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আপু সে আবার ফিরে এসেছে এবার আমাকে মে*রে ফেলবে আপু তুমি আমাকে লুকিয়ে রাখো।
– শান্ত হ আরহু আমি আছি তো কেউ তোর কোন ক্ষতি করতে পারবেনা এদিকে দেখ বোন আমার। আমার দিকে তাকা কার কথা বলছিস কিছু সময় এভাবেই কেটে যায়। আরহা নিজেকে শান্ত করে বলে আপু জানো আজকে জিজুর নাম্বারে কল করার পর একজন ফোন রিসিভ করেছিলো তার কন্ঠটা একদম এতটুকু বলতেই আরহার শরীর কাঁপতে লাগলো।
নীলু আরহাকে বললো, বলতে হবে না ভুলে যা। যা ছেড়ে এসেছিস! আপু যদি সত্যি সত্যি ছোট সাহেব ফিরে আসে তবে আমাকে আর বাঁচতে দেবে না।
– আর কোনদিন ফিরবে না নিজেকে শক্ত কর সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার।
– আমি পারবো না ওই মানুষটার সম্মুখীন হতে
– প্রয়োজন পরলে পারতে হবে। নীলু আরহার চোখের জল মুছে দিয়ে বলে, আর কাঁদবি না তো মানুষ যদি জানতে পারে তাদের প্রিয় সিঙ্গার এখনো বাচ্চাদের মতো এভাবে কাঁদে তবে কেমন হবে!

মেঘ বলে,কিরে এতো দেখি ভিতু কল কেটে দিলো। আরে রাখ তো তোর কন্ঠ শুনে হয়তো কেটে দিয়েছে
– কেনো আমি কি এ্যলিয়েন নাকি?
– হতেও পারিস, বলেই হেসে দিলো ইমতিহান। আচ্ছা মেঘ বিয়েটা কবে করছিস?
– মেঘ মনের আকাশ মহূর্তে কালো মেঘে ছেয়ে গেলো বিয়ের কথা মনে করতেই মেঘের মনে পরে গেলো সেই ছোট্ট আরহার কথা। শাড়ি এলোমেলো করে সদ্য ফোটা নিষ্পাপ গোলাপের কলি শুয়ে আছে।
– কিরে বল কবে বিয়ে করবি? কোথায় হারিয়ে গেলি!
-নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে বলে, আগে তোর বিয়ে হোক পরে ভেবে দেখবো,
– শোন বিয়েটা দুজন এক সাথে করে ফেলি কি বলিস!
– বাদ দে তো এসব বিয়ে করার সময় হলে করবো এখন তোর নিজেরটা নিয়ে চিন্তা কর।
– দেখ মেঘ সামিরা কিন্তু তোর জন্য ওয়েট করে আছে। একটা মেয়ে মানুষ আর কত অপেক্ষা করবে!
– আমি আগেই বলেছি এখনো বলছি আমি সামিরাকে বন্ধু ছাড়া অন্য কোন দৃষ্টিতে দেখিনা সেখানে বিয়ে করার তো কোন প্রশ্নই উঠছে না। তুই বরং ওকে বুঝিয়ে বল আমার আশা ছেড়ে দিতে।

– তোর সামিরাকে অপছন্দ করার মতো কোন কারন তো দেখছি না তাহলে সমস্যা কোথায়?
_এসব কথা বন্ধ করবি নাকি আমি এখানেই নেমে পরবো তুই একা যাবি!
– ওকে এসব কথা বাদ দিলাম তোর লাইফ তুই যা ইচ্ছে কর!

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার নিজেকে পরখ করে নিচ্ছে হিয়া। নিজেকে নিজে বলছে, আমাকে অপমান করেছিলে মিস্টার মেঘ! ভেবেছো ভুলে গেছি তোমার প্রতিটি অপমান! তোমার জীবন কি ভাবে বিষিয়ে তুলতে হয় আমার জানা আছে। যাস্ট ওয়েট। এই হিয়া যদি তোমার জীবনে কাল বৈশাখি ঝড় না এনে দেয় তবে আমার নামও হিয়া না।

প্রান্ত আগেই এসে অপেক্ষায় আছে আরহার জন্য। নীলুকে বার কয়েক কল করেও রেসপন্স পায়নি। প্রান্তর এসিস্ট্যান্ট বলছে স্যার আর কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন?।
– আমার আরহুর জন্য তো আমি সারাজীবন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি! তবুও চাই দিন শেষে তার মুখের হাসি আমার নামে হোক! সন্ধ্যা নামার পরে তার আশ্রয় স্থান হোক আমার প্রসস্থ বুক। তার প্রতিটি অশ্রু ঝরুক আমার নামে।আর সেই অশ্রু নিজের হাতে মুছে দিয়ে তার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে চাই!

আরহা আর নীলু এর মধ্যে চলে এসেছে, আরহাকে দেখেই প্রান্তের সময় সেখানেই আটকে গেলো অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরহার দিকে।

আরহা নীলুর কানের কাছে মুখ এনে বললো, এই বেহায়া লোকটা এখানে কেনো কি করছে? দেখে কেমন ক্যবলা কান্তের মতো তাকিয়ে আছে বিরক্ত।
নীলু এগিয়ে এসে হেসে বললো, আরে প্রান্ত ভাইয়া আপনি এখানে!
– মিস আরহার শো তাই মিস করতে চাইছিলাম না। আর ফ্রী ছিলাম তাই চলে আসলাম। প্রান্ত হাতে থাকা হলুদ গোলাপগুলো আরহার দিকে বাড়িয়ে দিলো।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেগুলো নিয়ে নিলো আরহা। একবার সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো নীলুর দিকে, যে দৃষ্টি জিজ্ঞেস করছে তুমি বলেছ আমার হলুদ গোলাপ পছন্দ!
নীলু আরহার দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পেরে বলে এভাবে দেখছিস কেনো হু তোর নজর লেগে যাবে তো। চল স্টেজে নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি!
আরহা নিজের মুখের সামনে একটা কালো কাপড়ের আবরণ দিয়ে নিলো, চলো। আচ্ছা একটা কথা বলো এই প্রান্ত ছেলেটা একটু বেশি গায়ে পরা টাইপের তাই না।
– বাদ দে তো চল তাড়াতাড়ি। আচ্ছা এটা বল আজকে কোন গানটা গাইবি।
– শুনলেই বুঝতে পারবা।

এখনো তিনজনের পার্ফামেন্সের পর আরহার পার্ফামেন্স।

দেখতে দেখতে আরহার স্টেজ ওঠার সময় হয়ে গেলো
উপস্থাপক বলছেন, এখন আমাদের সবাইকে নিজের সুমধুর কন্ঠে গান গেয়ে শোনাবেন এ সময়ের সবচয়ে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আদিয়াত নুজহাত আরহা। আরহার নাম এনাউন্সমেন্ট হতেই কড়া তালিতে মুখরিত হচ্ছে চারপাশ। তরুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় নাম আদিয়াত নুজহাত আরহা।
আরহা স্টেজে উঠে প্রথমে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নিলো। তারপর গান গাইতে শুরু করলো…

বলো তুমি আর কতদিন
রবে দূরে আমায় ছেড়ে

মনে মনে কল্পনাতে
আসো কেনো বারে বারে
কেনো একা ফেলে চলে গেলে
দুঃখ দিয়ে না ফেরার দেশে
এরি নাম কি ভালোবাসা

সখি ভালোবাসা কারে কয়
সখি ভালোবাসা কারে কয়
হৃদয়ের মন্দিরে আছো বসে তুমি
এব্যথা প্রাণে নাহি সয়
সখি ভালোবাসা কারে কয়
সখি ভালোবাসা কারে কয়

সবাই মুগ্ধ হয়ে আরহার গান শুনছে

ইমতিহান আর মেঘ আসতে একটু লেট করে ফেলেছে যদিও কিন্তু যেই মূহুর্তে ওরা দু’জনে স্টেজের লাস্টের দিকে এসে দাঁড়িয়েছে সেই মূহুর্তে মেঘ শুনতে পেলো মধুর কন্ঠে কেউ গাইছে…..

মন আজ পথ চেয়ে রয়
তুমি আসবে বলেছে হৃদয়

কেনো অভিমান করে চলে গেলে তুমি
এব্যথা প্রাণে নাহি সয়

সখি ভালোবাসা কারে কয়
সখি ভালোবাসা কারে কয়
হৃদয়ের মন্দিরে আছো বসে তুমি
এব্যথা প্রাণে নাহি সয়

গানটা শুনে মেঘের ভিতর কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। বুঝতে পারছে না কেনো। মনে হচ্ছে গানটা তার জন্য গাইছে মনের মাধুর্য মিশিয়ে কেউ তাকে ডাকছে! গান শেষ হতেই আবারো কড়া তালির শব্দ মেঘের কানে ভেসে আসতেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে মেঘ। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করছে আমি এসব কি ভাবছি! কেউ নেই আমার কেউ নেই একা আমি একা। এর মধ্যে ইমতিহান মেঘের কাঁধে হাত রেখে বলে,ভাই কি গানের কন্ঠ আমি তো ফিদা।
– তোর বউয়ের একমাত্র আদরের বোন সো ফিদা হয়ে লাভ নেই।
– হুম বউয়ের আদরের বোন বন্ধুর আদরের বউ তো হতেই পারে! কথাটা বলেই হেসে উঠলো ইমতিহান।
– না হতে পারে না আমি সারাজীবন চিরকুমার থাকবো। নো বিয়ে নো ঝামেলা।
-সময় হলে দেখা যাবে।
ইমতিহান নীলুকে মেসেজ করলো “আর কতখন বউ” তোমাকে দেখার জন্য আমার চোখ তৃষ্ণার্ত।
নীলু রিপ্লাই করলো আর দশ মিনিট।

আরহা আরো একটা গান গেয়ে বিদায় নিলো। হাই সিকিউরিটি থাকা সত্ত্বেও অনেকেই অটোগ্রাফ নেয়ার জন্য ভীড় করলো। অনেকে আবার সেলফি তুলছে।কোনমতে সেখান থেকে বের হয়ে এসেছে আরহা চেঞ্জিং রুমে যেয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো , জিন্স আর লং কুর্তি পরে নিলো মুখ ধুয়ে মেকাপ তুলে ফেললো।এখন ভালো ভাবে লক্ষ না করলে কেউ চিনতে পারবেনা এই মেয়েটাই আদিয়াত নুজহাত আরহা। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা গালের ক্ষত চিহ্নগুলো স্পষ্ট। মাক্স দেয়ার কারণে ততটা বোঝা যাচ্ছে না
আরহা বের হতেই নীলু বলে, তাড়াতাড়ি চল কতখন ধরে অপেক্ষা করছে বেচারা।
– এমন করছো কেনো এতো উতলা হতে নিষেধ করলাম না নিজেকে শক্ত রাখতে হবে। আইসক্রিমের মতো গলে গেলে চলবে না। নারকেলের মতো হতে হবে উপর দিয়ে শক্ত ভেতরে নরম। মনে থাকবে!
– হুম দাদী আম্মা খুব মনে থাকবে এবার তাড়াতাড়ি চল। দশ কদম হাঁটার আগেই অতীতের ভয়ংকর এক অধ্যায় সামনে উপস্থিত।

#চলবে

#তুমি আসবে বলে

# নুসাইবা ইভানা

পর্ব-১৪ (বোনাস পার্ট)
(প্রথম দেখা)

নীলু শান্ত স্বরে বললে আমাদের রাস্তা ছেড়ে দিন আমাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই তাহলে কেনো রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে আছেন!
– আহারে বেবি তোমাদের কষ্ট হচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকতে তা ফেমাস সিঙ্গার আদিয়াত নুজহাত আরহা যে বিবাহিত সেই সু খবরটা তার ভক্তবৃন্দ কি জানে?
– বাজে কথা বন্ধ করুন আর রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান
– এটাই তো সমস্যা আমার এর জন্যই তো হিয়া নামটা সবার চোক্ষশূল কারণ হিয়া সত্যি কথাটাই বলে
এবার আরহা সামনে এসে বলে অনেক বলেছেন আপনি এবার চুপ করুণ বড় বলে সম্মান করছি তবে নিজের লিমিট ক্রস করলে আমারও ভুলে যাবো আপনি আমাদের বড়।
– ওলে বেবির মুখে দেখি বুলি ফুটেছে তা বেবি এতো বড় হলে কবে শুনি? আমার তো মনে হয় এখনো নাক টিপলে দু*ধ বের হবে তার কথার কি ঝাঝ।
– আপনার মতো নিম্ন মানের মানুষের সাথে কথা বলতেও ঘৃণা হয়।
– এই তোর লজ্জা করেনা তিন তিনজন মানুষকে হত্যা করে এভাবে ঘুরছিস! আমি হলে কবেই গ*লা*য় দ*ড়ি লাগিয়ে ঝু*লে পরতাম।
এবার নীলু তেড়ে এসে বললো মুখ সামলে কথা বলুন বেহায়ার মতো অন্যের বাড়িতে থেকে সেই বাড়ির খেয়ে সেই বাড়ির বউকে অপমান করতে মুখে বাঁধে না!
– বউ সিরিয়াসলি সো ফানি। মেঘ কোনদিন এই বিয়েটাকে মানবে বলে তোমার মনে হয়?
প্রথম বার আরহার কানে পৌঁছলো মেঘ নামটা আরহা হিয়ার সামনে এসে বলে মেঘ, মেঘ কে? বলুন না আমাকে।
– অট্ট হাসি দিয়ে বলে ওলে বেবি বরের নামটাই জানো না দেখছি। আবার তার নামের ট্যগ লাগাও চৌধুরী বাড়ির বউ।
আরহা ছুটে একটু ফাঁকা জায়গায় চলে আসলো। কানে বাজছে মেঘ ওকে কোনদিন মেনে নেবে? যাকে না দেখেই, যার কথা না শুনেই নিজের মনে যার জায়গা দিয়েছে তার নামটা প্রথম শুনে আরহার কি অনূভুতি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। দু’চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে। আরহার কানে শুধু ওই একি শব্দ প্রতিধ্বনি করছে মেঘ কি কখন মেনে নেবে আরহাকে।

নীলু হিয়াকে বলে, আপনার মতো খারাপ মানুষ দুটো দেখিনি জীবনেও ভালো হবে না আপনার। নীলু কথাটা বলে ছুটে যাচ্ছে আরহার পিছু পিছু।

আরহা আর হিয়া চলে যেতেই হিয়া জোড়ে জোড়ে হেসে বলে, বাচ্চা মেয়েরা আমার খারাপ আর কি হবে। নিজেদের কি কি ক্ষতি হবে সেটা চিন্তা করো এই হিয়া নামক ঝড় তোমাদের জীবনে চলে এসেছে।

নীলু দ্রুত যাওযার সময় হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেলো নিচে পরে যাওয়ার আগেই কারো বাহুতে আবিষ্কার করলো নিজেকে রাগে লোকটির দিকে তাকাতেই সব কথা উবে গেলো নীলুর। রাগের বদলে এখন এক রাশ লজ্জা এসে ঘিরে ধরলো নীলুকে। লজ্জায় মুখ দিয়ে কথা বেড় হচ্ছে না। এদিকে ইমতিহান বলেই যাচ্ছে এই যে আপু আমাকে ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ান। আজকেই প্রথম প্রেমিকার সাথে দেখা করতে আসলাম এখন সে যদি এভাবে আমাকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখে তবে আমার সংসার শুরু হওয়ার আগেই শেষ। আপু শুনতে পাচ্ছেন প্লিজ ছাড়ুন।
অনেকেই তাকিয়ে আছে নীলু আর ইমতিহানের দিকে। ইমতিহানের বোকা বোকা কথা শুনে নীলু ইমতিহানকে আর একটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো
ইমতিহান কিছু বলবে তার আগেই নীলু ইমতিহানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,আমি এভাবে ধরে থাকলে আপনার প্রেম ভাঙার বদলে আরো গভীর হবে।
নীলুর কন্ঠ চিনতে একটুও দেরি হয়নি ইমতিহানের। এবার ইমতিহান নীলুকে আরো নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।
নীলু আস্তে করে বললো, এটা আপনার লন্ডন না। এটা বাংলাদেশ ছেড়েদিন আমাকে।
ইমতিহান নীলুকে ছেড়ে দিলো। দুজনেই কেউ কারো দিকে তাকাতে পারছেনা। মোবাইলে এতো জান, কলিজা বলে এখন সামনা সামনি দেখে মনে হচ্ছে দুজনেই দুজনের কাছে অপরিচিত। রাজ্যের সব জড়তা এসে ভীর করছে। দুজনেই ভুলে বসেছে তাদের সাথে কেউ ছিলো। অনেকটা সময় নীরবতায় কেটে যাওয়ার পর ইমতিহান বললো, নীলিমা চলো আমারা ওই বেঞ্চটাতে বসি।
দুজনে পাশাপাশি বসে আছে। এবার নীলু বললো কেমন আছেন?
ইমতিহান রাগ দেখিয়ে বললো ভালো ছিলাম তবে এই মূহুর্তে খারাপ হয়ে গেলাম।
– কেনো কি হয়েছে আমাকে বলুন!
– এতো দূর থেকে তোমার মুখ থেকে আপনি ডাক শুনতে এসেছি! আমি এখনি চলে যাবো।
– আরে রেগে যাচ্ছেন কেনো।
– আবার আপনি!
– এই এমন করছো কেনো বসতো।

মেঘ পার্কের একটা ফাঁকা জায়গার খুঁজছিলো কোলাহল মুক্ত নিরিবিলি জায়গা পেয়েও গিয়েছিলো আরাম করে সেখানে বসে আছে। তবে তার আরামের বারোটা বাজাতে কোথা থেকে এক মেয়ে এসে তার দিকে পেছন দিয়ে বসে ফেস ফেস করে কেঁদেই যাচ্ছে।
মেঘ মনে মনে ভাবছে মেয়েদের চোখের সাথে সমুদ্রের কোন সংযোগ আছে হয়তো! না হলে কথায় কথায় এতো চোখের পানি আসে কোথা থেকে?

একবার ভাবলো উঠে চলে যাবে কি ভেবে আবার জিজ্ঞেস করেই বসলো এই যে ম্যাম এ্যনি প্রবলেম?
নাহ কোন উত্তর দিচ্ছে না এবার মেঘ নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে মেয়েটির সামনে ধরে বললো এটা নিন আপনার কাঁদতে সুবিধা হবে।
মেঘ মেয়েটির হাতে রুমাল ধরিয়ে দিয়ে যেই না সামনে পা বাড়াবে তার আগেই মেয়েটি মাঠিতে পরে গেলো। মেঘ ঘুরে এসে মেয়েটিকে ধরলো। ততক্ষণে মেয়েটি জ্ঞান হারিয়েছে। মেঘ একবার মেয়েটির দিকে হাত বাড়ায় তো একবার সরিয়ে নেয়৷ জীবনে একবার শুধু আরহাকেই কোলে তুলেছিলো। দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছে কি করবে। সাত পাঁচ না ভেবে উঠিয়ে নিলো কোলে। কি আশ্চর্য মেয়েটিকে কোলে নেয়ার পর মেঘের একটুও খারপ লাগছে না বরং মনে হচ্ছে নিজের সবচেয়ে কাছের কেউ। আরহাকে কোলে নিয়ে বাহিরে এসে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো। একবার পাশ ফিরে মেয়েটিকে দেখলো তবে মুখে মাক্স থাকার কারনে ভালো দেখা গেলো না। গুগলে সার্চ করে আশেপাশের ক্লিনিক খুঁজে বের করে সেখানেই নিয়ে গেলো। তখনো মেয়েটি সেন্সলেস দ্বিতীয় বারের মতো কোলে তুলো নিলো। এবার এক অন্য রকম অনূভুতি বয়ে গেলো মনে হচ্ছে অনেক বছর পর হৃদয়ে প্রশান্তি ছেয়ে গেলো। সে সব নিয়ে চিন্তা করার সময় এখন নেই। মেঘ মেয়েটিকে নিয়ে ক্লিনিকের একটা কেবিনের বেডে শুয়ে দিলো। মেঘ যখন আরহাকে শুয়ে দিয়ে সরে আসতে চাইলো ঠিক তখন মনে হলো কেউ তাকে আকড়ে ধরেছে। মেঘ ফিরে তাকিয়ে অবাক হলো।

গল্প করতে করতে নীলু ভুলেই বসেছে আরহার কথা কথার এক পর্যায়ে ইমতিহান বললো,আমার সুইট শালিকা কোথায়! তার কন্ঠের প্রেমে পরে গেছি।
ইমতিহানের কথা কর্ণগোচর হতেই নীলুর হুশ আসলো আরহা। আরহা কোথায়! দ্রুত উঠে আরহাকে খুঁজতে লাগলো। সাথে সাথে ইমতিহান আসছে আর জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে। এদিকে পার্কের অধিকাংশ মানুষ নীলু আর ইমতিহানকে দেখছে আর অদ্ভুত ভাবে হাসছে।

মূলত কিছু সময় পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনা কেউ ক্যমেরা বন্ধি করে সেটা সোশ্যাল মিডিয়া দিতেই মহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। সে বিষয় বিন্দুমাত্র খবর নেই ইমতিহান আর নীলুর।
যদিও এখন অনেকেই এই অশালীন কাজটি করে থাকে। অনুমতি ছাড়া অন্যের ভিডিও, ছবি ধারণ করে সে সব সোশ্যাল সাইডে ছেড়ে দেয়। এর কারণে বিপরীত পক্ষের মানুষটার কতটা সম্মান নষ্ট হচ্ছে সে বিষয়ে তারা বড্ড উদাসীন।

নীলুর পিছন পিছন কিছুক্ষণ ছুটে। ইমতিহান নীলুর হাত ধরে তাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে, এভাবে এতো বড় পার্কে কাউকে খুঁজে পাবে বলো! তার চেয়ে স্থীর হও ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করি কি করা যায়।

নীলুর হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ভয়ে। যদি আরহার কোন সমস্যা হয়ে যায়। নিজের প্রতি বিরক্ত হচ্ছে নীলু ওই অবস্থায় কি ভাবে আরহাকে একা ছাড়লো?

#চলবে

# তুমি আসবে বলে

# নুসাইবা ইভানা

পর্ব- ১৫

মেঘ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। মেয়টির কয়েকটি চুল আটকে দিয়েছে মেঘকে। নিজের শার্টের বাটন থেকে তা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। যার ফলে মেঘ আরহার অনেকটা কাছে। আরহার নিশ্বাস এসে মেঘের মুখে পরছে। মেঘ কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আরহার কপালের উপর কিছু ছোট ছোট চুল ছড়িয়ে আছে। ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে চুলহগুলো সরিয়ে দিতে। শার্টের বাটন থেকে চুল ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত প্রস্থান করলো। বাহিরে এসে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে। বুঝতে পারছেনা এই মেয়েটাকে দেখে এমন অদ্ভুত অনুভূতি কেনো হচ্ছে?
মনে হচ্ছে শত জন্মের পরিচয়! খুব আপন কেউ!

নিজের মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। ইমতিহানের কল,রিসিভ করতেই ব্যস্ত কন্ঠে ইমতিহান বললো, কোথায় আছিস তুই! এদিকে নীলিমার বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।

কি বলছিস ছোট বাচ্চা নাকি খুঁজে পাওয়া যাবেনা। দেখ আছে কোথাও? আমিও পরেছি এক ঝামেলায় পার্কে একটি মেয়ে অসুস্থ হয়ে পরে তাকে নিয়ে নিকটতম ক্লিনিকে এসেছি।

প্রান্ত আরহার গান শুনছে তো শুনছেই কানে ইয়ার ফোন গুজে গান শুনেই যাচ্ছে। এমন সময় সশব্দে প্রান্তর ফোনটা বেজে উঠলো বিরক্তি ভাব মুখে ফুটে উঠলো, মনে হচ্ছে কেউ তার ইম্পরট্যান্টেন কোন কাজে বাঁধা দিয়েছে। তবে ফোনের স্কিনে নীলিমা নামটা দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। দ্রুত কল রিসিভ করলো।
নীলু কোনমতে আরহার কথা প্রান্তকে বলতেই প্রান্ত নীলুর কল কেটে দিয়ে তার এসিস্ট্যান্টকে কল করে।
নাহিদ কলটা রিসিভ করে বলে স্যার আপনার কথা মতো ম্যামের প্রতি নজর রাখছি।
– আরহা এখন কোথায়?
– ক্লিনিকে একজন সুদর্শন যুবক তাকে কোলে করে নিয়ে এসেছে।
– তুই এই কথা আমাকে এখন বলছিস?
– স্যার আপনিতো বলেছিলেন নজর রাখতে। আপনাকে বলতে তো বলেন নি!
রাগে ফোন কেটে দিলো প্রান্ত। নাহিদ ছেলেটা একটু সহজ সরল। আবার কল করে ক্লিনিকের ঠিকানা নিয়ে নিলো। এবার নীলুকেও ঠিকানা টেক্সট করে দিলো।

আরহার চিকিৎসা শেষে ডাক্তার মেঘকে বললো, একবার আমার কেবিনে আসুন।
মেঘ কেবিনে ঢুকে বসতেই, ডাক্তার বললো,দেখুন আমি জানিনা আপনার আর আপনার ওয়াইফের মধ্যে সম্পর্ক কি রকম। তবে আপনার স্ত্রী ডিপ্রেশনে আছে। আবার তার গালেও ক্ষত চিহ্ন দেখলাম।
মেঘ ডক্টরকে থামিয়ে দিয়ে বললো,আপনি ভুল ভাবছেন ডক্টর উনি আমার ওয়াইফ নন। আমিতো চিনিওনা তাকে। পার্কে অজ্ঞান অবস্থায় ছিলো মানবতার খাতিরে তাকে এখানে নিয়ে আসা।
– সরি আমি ভাবলাম হয়তো হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ
– ইটস ওকে ডক্টর। আচ্ছা ওনার জ্ঞান ফিরবে কখন!
– সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা লাগবে।
-তাহলে পেমেন্ট করে দিয়ে আমি চলে যেতে পারি। ধন্যবাদ ডক্টর।
– ধন্যবাদ তো আমার আপনাকে দেয়া উচিৎ এতো ভালো একটা কাজ করেছেন।
– এটাতো মানুষ হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিলো।

মেঘ ক্লিনিক থেকে বের হয়ে সোজা চলে আসলো নিজের বাসায়। ডক্টরের কথাটা কানে বাছজে আপনার ওয়াইফ। সব অভিমান ভুলে এ মূহুর্তে মেঘের ইচ্ছে করছে একবার আরহাকে দেখতে! পিচ্চিটা এখন আর হয়তো পিচ্চি নেই!দেখতে নিশ্চয়ই খুব সুন্দর হয়েছে। আজ হঠাৎ করে মেঘের মনে হচ্ছে সে হয়তো আরহার সাথে ভুল করেছে। গ্যাস ব্লাস্ট হওয়ার সাথে সত্যি হয়তো আরহার হাত ছিলো না।
এই চার বছর মেয়েটা কোথায় ছিলো কি করেছে খুব জানতে ইচ্ছে করছে। সব ভুলে অপ্রকাশিত ভালোবাসা প্রকাশ করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সব কিছু এই কিন্তুতেই আটকে যায়। সেদিনটা যদি জীবনে না আসতো তবে জীবনটা অন্য রকম হতো। কে বলবে বাহির থেকে এতো কঠিন মানুষটাও ভেতর থেকে এতোটা দুর্বল। কতশত মেয়েকে ইগনোর করেও এক মেয়ের মায়ায় আটকে আছে। কোথায় যেনো মনে হয় অদৃশ্য এক বাঁধনে আটকে আছে মেঘ। এ বাধঁন থেকে দূরে সরে ও কাছে আছে। আজকে আর পিছু না ফিরে বাসায় প্রবেশ করলো তখন প্রায় রাতের এগারোটা বাজে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ফোনের ফ্লাশ লাইটের আধো আলোতে এগিয়ে যাচ্ছে মেঘ চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেদিনের দৃশ্য খুব করে মনে আছে সেদিন আরহা সবার শেষে কিচেন থেকে বের হয়েছে তারপর কি এমন করে আসলো মেয়েটা যে ঘন্টার ব্যবধ্যানে সব শেষ হয়ে গেলো? হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ফিরে এসে মম।তোমাদের ছাড়া ভালো নেই।মেঘ উঠে বাহিরে চলে আসলো ঢুকার সময় দারোয়ান ছিলো না এখন দারোয়ান বসে আছে। যদিও প্রতি মাসে মেঘ দারোয়ানকে ঠিক মতো টাকা পাঠিয়ে দিতো কিন্তু কখন কেউ কাউকে দেখেনি। নিচে বসে থাকার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ধুলো লেগে আছে। দারোয়ান মেঘ কে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলো এই বাসায় কেনো ঢুকছো এখানে প্রবেশ নিষেধ লেখা দোখো না।
– আমি মেঘ চৌধুরী আঙ্কেল।
– বাবা তুমি কবে আসছো আমারে কইলা না কেন?
– এইতো দু’দিন হলো আসছি। আচ্ছা আঙ্কেল আমি ছাড়া এখানে আর কেউ আসে?
– হ আহে দুইটা মাইয়া। তয় তাগোরে আমি চিনিনা। মাঝে মাঝে আহে আবার কানতে কানতে যায়। একদিন জিঙাইলাম তোমাগো কি লাগে এই বাড়ির মানুষ।
– একটা মাইয়া কইলো বাবা,মা।
– আর কিছু জিজ্ঞেস করেননি কই থাকে কি করে মেয়ে দু’টো?
– না বাবা এতো কথা তো জিঙাই নাই।
দারোয়ানের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বলে এবার আসলে তাদের ঠিকানা জিজ্ঞেস করবেন। আমার কথা তাদের বলার দরকার নেই। তাহলে আজ আসি পরে দেখা হবে। নাম্বার দিয়ে গেলাম তাদের ঠিকানা জানতে পারলে কল করে বলবেন!
মেঘ বের হয়ে ইমতিহানকে কল করলো। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই ইমতিহান বললো, কই তুই?
– আমি চলে আসছি এখন তোদের বাসায় যাবো প্রচন্ড ঘুম পেয়েছে খেয়ে ঘুমাবো।
– শোন তুই আর বলতে পারলো না তার আগেই মেঘ কল কেটে দিয়েছে।

ইমতিহান নীলুকে বললো,এখনতো তোমার বোন কিছুটা সুস্থ বাসায় চলে যাই কি বলো, হুম চলো। আরহা দিকে একবার তাকালো ইমতিহান তারপর আস্তে করে নীলুকে বললো, তোমার বোনের গালে কিসের দাগ!
– সে অনেক কথা তোমাকে সময় করে বলবো এখন দেরি হচ্ছে। তুমি গাড়ি বের করো আমি আরহুকে নিয়ে আসছি।
প্রান্ত বললো,ছেলেটা কে নীলু?
– আমার উডবি
– ওহ আচ্ছা তবে আমিও তোমাদের সাথে আসি কি বলো!
– অনেক করেছেন প্রান্ত ভাই এবার আপনিও বাসায় ফিরুন। আমরা ঠিক চলে যেতে পারবো।

আরহা আর নীলু ভাবছে প্রান্ত আরহাকে ক্লিনিকে নিয়ে এসেছে।

নীলু আরহাকে বসিয়ে রেখে ডক্টরের সাথে কথা বলতে গেলো,
ডক্টর বললো, আপনি পেশেন্টের কি হন!
– বড় বোন
– আপনার বোন কোন বিষয় নিয়ে ডিপ্রেশনে আছে। হয়তো তার চেহারায় ক্ষত সে নিজে করেছে। চেষ্টা করবেন এসব থেকে তাকে বের করে আনতে। নয়তো যে কোন সময় বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ঔষধ গুলো ঠিক মতো খাওয়াবেন। আর অবশ্যই ভালো কোন সাইক্রেটিস দেখান।

নীলু ডক্টরকে বিদায় জানিয়ে চলে আসলো। কি করা উচিৎ সেই চিন্তায় বিভোর। আরহার কাছে এসে আরহাকে নিয়ে গাড়িতে বসলো। এখান থেকে বাসায় ফিরতে তিন ঘন্টার মতো সময় লাগবে। মানে রাত একটার বেশি বাজবে।

মেঘ বাসায় এসে খেয়ে শুয়ে পরলো তবে ঘুম আসছে না। ফোন ঘেটে আদিয়াত নুজহাত আরহা গান বের করলো। কয়েকটা গান শুনলো মনে মনে বলছে নিসন্দেহে সুন্দর কন্ঠ। যার কন্ঠ এতো সুন্দর তাকে তো একবার দেখতেই হয়।আরহার প্রোফাইল বের করলো। প্রত্যেক পিক মাক্স পরা প্রায় সব পিকের ক্যাপশন দেয়া# তুমি আসবে বলে। খানিন ক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে একটা মেসেজ সেন্ট করে দিলো। সেই তুমিটা কি এসেছে?মিস মাক্স সুন্দরী!

#চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন
হ্যাপি রিডিং 🥰