তুমি আসবে বলে পর্ব-১৬+১৭+১৮+১৯

0
271

# তুমি আসবে বলে

# নুসাইবা ইভানা

পর্ব-১৬

“আই ওয়ান্নাহ কিস ইউ? প্লিজ গিভমি ওয়ান কিস!
আরহা এক পা,এক পা, করে পেছনে যাচ্ছে, আর বলছে, আপনার মাথা ঠিক নেই চেনা নেই জানা নেই ছি
– প্লিজ ওয়ান কিস।
– প্লিজ দয়া করে আমাকে যেতে দিন ছাড়ুন আমাকে যেতে দিন। আরহার দু’হাত আটকে দিয়েছে নিজের দু’হাত দিয়ে।লোকটির শক্তির সাথে পেরে উঠছে না আরহা।আরহা জোড়ে চিৎকার করবে তার আগেই ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে বসলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সে নিজের রুমেই আছে। ও তার মানে এটা স্বপ্ন ছিলো! বেড সাইড টেবিল থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে গলা ভিজিয়ে নিলো। কিছু সময় ঝিম ধরে বসে থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে সকাল দশটা ছুঁই ছুঁই বেড ছেড়ে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ঠোঁট মুছছে বারবার। ছি কি বাজে স্বপ্ন।

সকালের সোনালি রোদ জানালার পর্দা ভেদ করে মেঘের মুখে এসে পরছে চোখমুখ কুঁচকে এপাশ থেকে ওপাশ ঘুরে গেলো নাহ তবুও রোদ পিছু ছাড়ছে না। বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো। মোবাইল দেখে মনে পরলো কালকে রাতের মেসেজের কথা মোবাইল হাতে নিয়ে চেক করতেই খুব বড় সর একটা ধক্কা খেলো।

নিজেকেই নিজে বলছে, মেঘ শেষ পর্যন্ত ফেক আইডিতে মেসেজ দূর এতো বোকা হলাম কবে? ওই আইডির নাম হুবহু আদিয়াত নুজহাত আরহা নামে আর তার ছবি গান দিয়ে ভরপুর। উফ কি করে ভুলে গেলাম সেলিব্রিটিদের নামে এরকম হাজারটা ফেক আইডি থাকে। মেসেজ রিকোয়েস্ট দিয়ে নিজের আইডি আনলক করে রেখেছিলো। ঘুম থেকে উঠে দেখে। এক মেয়ে নিজের অনেক গুলো ছবি পাঠিয়েছে। আর টেক্সট করে বলছে, আমি দেখতে কম সুন্দরী না আপনি চাইলে আমি আপনার সাথে রিলেশন করতে রাজি।এরকম হাবিজাবি টেক্সট। সাথে সাথে মেয়েটিকে ব্লক করে দিলো। বালিশে হেলান দিয়ে বসে আগামীকালের প্রোগ্রামের গানটা শুনতে লাগলো।মেঘের মনে দু’টো কৌতুহল জন্মালো এক, এই মেয়েকে দেখার, কারন সব শো-তেই এই মেয়ের মুখে কাপড়ের আবরণ। দুই এটা জানতে কালকের গানটা কাকে ডেডিকেট করে গেয়েছে । মাঝে মাঝে অকারণেই অনেক কিছু জানার প্রতি আমাদের আগ্রহ তৈরি হয়। তবে তার সঠিক কারণ নিজেরাও জানিনা।

আরহা ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো নাস্তা করতে। নীলু আরহাকে দেখে বললো,ঘুম ভাঙলো শাহজাদী!
– হুম। তুমি কখন উঠলে আর জিজু কই?
– সে তো রাতেই চলে গেছে। আয় নাস্তা করি। শোন আমি ভাবছিলাম আমারা যদি কোথাও থেকে ঘুরে আসতাম।
– কোথায় যেতে চাও!
– সিলেট
-না সিলেট যাওয়া যাবে না কিছুতেই না।
– ঠিক আছে যাবো না।
আরহা নাস্তা করতে করতে ফোন ঘাটতেই নীলু আর ইমতিহানের ভিডিওটা সামনে এলো। ২৪মিলিয়ন ভিউ

নিজের ফোন থেকে প্রান্তকে কল করে ভিডিওটা সোশ্যাল সাইড থেকে ডিলিট করার ব্যবস্তা করতে বললো।

আরহার একটা কথা মনে পরলো উঠে এসে নিজের ব্যাগে কিছু খুঁজতে লাগলো। কালকে ক্লিনিক থেকে ফেরার সময় নার্স তাকে একটা চিরকুট দিয়েছিলো।

সেটাই খুঁজে বের করে পড়তে শুরু করলো, চিরকুটে লেখাছিল, মিস ছিচ কাঁদুনি ধন্যবাদ দেয়ার হলো এই নাম্বারে যোগাযোগ করবেন।
আরহা নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে দেখলো, কে লিখলো এমন ভাবে? আর ধন্যবাদ বা কেনো দেবো! একটা কল করবো? নাহ বরং টেক্সট করি, দেখুন আপনি কে আমি জানিনা।আপনাকে ধন্যবাদ কেনো দেবো তাও জনিনা। তবে ছিচ কাঁদুনি বলার জন্য আপনার আমাকে সরি বলা উচিৎ। টেক্সট সেন্ট করে দিলো।

তার এফবিতে যেয়ে মেঘ চৌধুরী লিখে সার্চ করলো। মেঘ চৌধুরীর অভাব নেই। কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবে। না এভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোন ভাবে আগে জানতে হবে দেখতে কেমন।

নীলুর রুমে এসে বললো, আপুই একটা কথা বলবে,
– একটা কেনো হাজারটা বলবো।
– সার্চ লিস্ট বেড় করে বলে এখান থেকে মেঘ চৌধুরী কোনটা বলো তো
– আরহা এটা আমি বলবো না। আর এখন তত ভালো আমার মনেই নেই।
– তুমি খেয়াল করে দেখো চিনতে পারো কি না।
– বাদ দে শোন ইমতিহান তার বন্ধুকে নিয়ে রাতে আমাদের এখানে ডিনার করবে।
– আচ্ছা কিন্তু আজ তো নূরের বার্থডে পার্টি সেখানেও তো যেতে হবে।
– আমি ভুলেই বসেছি। ঠিক আছে ইমতিহানকে বলে দিচ্ছি।

আদুরে কন্ঠে নীলুকে ডাকলো আরহা, আপুই শুধু এটা বলো, উনার পুরো নামটা কি!
– আরহু এসব কথা বলতে মানা করেছি তো। আর আমি চাইছি খুব তাড়াতাড়ি তোর আর প্রান্ত ভাইয়ের বিয়েটা দিয়ে দিতে।
– এবার উঠে দাঁড়িয়ে পরল আরহা অসহায় দৃষ্টিতে নীলুর দিকে তাকিয়ে বলে,তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি অন্য কারো বউ। বলেই চলে গেলো রুম ছেড়ে।

নীলু মনে মনে বলছে তোকে ছোট সাহেব মেনে নেবে না বোন। তোর জন্য প্রান্ত ভাই ঠিক আছে।

মেঘ ইমতিহানের রুমে এসে বলে তোর মোবাইলটা দে তো।
– কেনো আমার মোবাইলে তোর কি কাজ!
– আগে দে পরে বলছি।
ইমতিহানের ফোন ঘাটাঘাটি করে আরহার আইডি পেয়ে গেলো। তবুই আইডির নাম দেখে জিজ্ঞেস করলো। এই বলতো, #তুমি আসবে বলে এই আইডিটা কার!
– তোকে কেনো বলবো।
– বল না মানে এমন নামে কে আইডি খুলে সেটাই জানতে চাইছি।
– তুই এটা বল তোর সিক্রেট আইডি মেঘ জমেছে মনের আকাশে এটা কেমন নাম।
– বলবি না তাই তো?
– ওইটা নীলিমার বোনের আইডি।মানে ওই আইডিতে শুধু নিজের মানুষ। আর তাছাড়া তো প্রফেশনাল আইডি আছেই। তুই কবে থেকে মেয়েদের সম্পর্কে কৌতূহলী হতে শুরু করলি!
– আচ্ছা এই মেয়ের মুখ সব সময় এমন কাপড়ের আবরণ দিয়ে আড়াল করে রাখে কেনো?
– সেটা তো বলতে পারবো না হয়তো ব্যক্তিগত কোন কারণ আছে। বউ কে রেখে বউয়ের বোনের ব্যাপারে
ইন্টারেস্ট দেখালে বউ ঝাড়ুর বারি দিয়ে তাড়িয়ে দিবে।
– মেঘ জোড়ে জোড়ে হেসে বলে ঠিক বলেছিস। আচ্ছা তুই দেখেছিস তোর সেলিব্রিটি শালিকাকে!
– কালকেই দেখলাম। অসুস্থ ছিলো তাই তেমন করে কথা হয়নি।

আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আয় আজকে তো সামিরাকে এয়ারপোর্ট থেকে পিক করতে হবে।
– আবার এই ঝামেলা কেনো আসছে?
– তোকে আমার শালীকার পিছনে ঘুরতে বাঁধা দিতে
– নাইস জোক্স, মেঘ চৌধুরী কারো শাসন বারণ শুনে না। সেটা ভালো করেই জানিস।
– এই মেঘ তুই কি সত্যি সামিরাকে পছন্দ করিস না!
– পছন্দ কেনো করবোনা! পছন্দ করি তবে বন্ধু হিসেবে।
– বেচারি পুরো ভার্সিটি লাইফ তোর মতো মানুষের পিছনে ব্যয় করলো।
-আমি বলেছিলাম নাকি।
– তোর কি কোন পছন্দ আছে মেঘ। থাকলে আমাকে বল।
– নেই তবে হতে কতক্ষণ।
মেঘ হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে আসলো মোবাইল হাতে নিতেই আরহার টেক্সট দেখে। মনে পরলো কালেকে এটা ওই অসুস্থ মেয়েকে দিতে বলেছিলো নার্সকে।
মেঘ রিপ্লাই করলো, হসপিটালে নিলাম, চিকিৎসার খরচ দিলাম। এরপরেও ধন্যবাদ না দিলে কোন সমস্যা নেই। ভালো থাকবেন অকৃতজ্ঞ।

আরহার ফোনে নোটিফিকেশন আসতেই আরহা চেক করলো, টেক্সট দেখে কপাল কুঁচকে চিন্তা করছে। এটা কে? আমাকে তো প্রান্ত ক্লিনিকে নিয়ে গেছে।

প্রান্তকে কল করে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো প্রান্ত না অন্য কেউ তাকে ক্লিনিক নিয়ে এসেছিলো। আরহা আবার টেক্সট করলো। সরি
– মেঘ রিপ্লাই করলো, বাট হোয়াই?
– ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য। আর সরি আমি ভুল ভেবেছিলাম এর জন্য।
– ইটস ওকে। এখন কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ। নামটা কি আপনার।
– নুজহাত
– নাইস নেইম। ওকে টেক কেয়ার।
– ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকবেন। আপনার নামটা!

– মেহের।

– ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড. আপনার নামটা কেমন মেয়েলী।
– রিপ্লাই করলো না মেঘ। ততক্ষণে মেঘ নিচে চলে এসেছে নাস্তা করতে।

মেঘ নাস্তা করতে করতে বললো, হিয়ার কোন খোঁজ আছে?
– হঠাৎ তুই ওই মেয়ের নাম নিলি!
– কেনো জানি মনে হয় ওই মেয়ে যদি জানতে পারে তোর আর নীলিমার কথা তাহলে হয়তো প্রবলেম ক্রিয়েট করবে।
– ঠিক কথা বলেছিস। মেয়ে তো নয় যেনো বিষাক্ত ছাঁয়া। যেখানে পরবে সেখানেই ধ্বংস অনিবার্য। তোর বাসায় যদি ওই মেয়েকে জায়গা না দিতি তাহলে হয়তো এরকম কিছু হতোই না।

চার বছর পর হঠাৎ ইমতিহানের কথায় মেঘের টনক নড়ল। এই কথাটা মাথায় কেনো আসলো না। খাবার ছেড়ে উঠে পরলো।
– সরি এটা বলা উচিৎ হয়নি আমার। খাবার শেষ করে যা।
– আমার খিদে নেই। বলেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। ড্রাইভ করছে এলোমেলো ভাবে। হঠাৎ সামনে থেকে আরেকটা গাড়ি ধেয়ে আসছে….

#চলবে

#তুমি আসবে বলে

# নুসাইবা ইভানা

পর্ব- ১৭

আরহা গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলো চৌধুরী বাড়ির উদ্দেশ্যে ড্রাইভার ড্রাইভিং করছে আরহা মোবাইল নিয়ে ফেসবুকে নিউজ ফিড চেক করছে তার সিক্রেট আইডিতে খুব কম মানুষ এই আইডির ব্যপারে জানে পরিচিত কিছু ফ্রেন্ড ছাড়া তেমন কেউ জানেনা বলতে গেলে। দু’চারটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের ভিরে এক নামে চোখ আটকে গেলো। কি অদ্ভুদ নাম মেঘ জমেছে মনের আকাশে। কিছু সময় চিন্তা ভাবনা করে রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে নিলো। প্রোফাইল ঘেটে তেমন কিছুই দেখতে পেলো না তবে একটা কবিতা দেখে ভালো লাগলো সেটা কপি করে রাখলো আরহা
কবিতাটা বার কয়েক পড়ে নিলো

পুরোনো ডায়েরিটা আজ জ্বলিয়ে দিলাম। অনলে ছাঁই গুলো ভাসিয়ে দেবো। শ্রাবণে
স্মৃতি গুলো মুচে যাক,
ভিজে যাক শহর।
তোমার আড়ালে হৃদয় জ্বলুক;
নাইবা দেখলে দহন।
ডায়রীর যে আত্মা কথা তুলে রেখেছি যতনে।
তোমার কথা মনে পরলে দেখবো তা গোপনে।
যে অনলে পুড়ছি আমি, করছি হৃদয় ভার।
তাও আজ ভাসিয়া দিলাম,
বন্ধ করলাম দাঁড়।

যত পড়ছে ভালোই লাগছে হুট করেই তাদের গাড়িটা আরেকটা গাড়ির সাথে সংঘর্ষ হলো। আরহার মাথায় হালকা আঘাত লাগলো। ড্রাইভার নেমে এসে তর্ক করতে লাগলো, এই মিয়া দেখে গাড়ি চালাতে পারেন না। চোখ কি বন্ধ রেখে গাড়ি চালান। আরহাও গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো। লোকটি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে চেহারা ঠিকমতো বুঝা যাচ্ছে না। ড্রাইভার তো ননস্টপ বকবক করেই যাচ্ছে কি আশ্চর্য লোকটি কোন প্রতিত্তোর করছে না। আরহা নিজের মাথায় হাত রেখে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছে। গ্রে কালারের শার্ট পরা, হাতাগুলো কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা, চুল গুলো সুন্দর করে গুছানো, হাতে ব্রান্ডের ঘড়ি, খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি এক কথায় সুদর্শন যুবক। তবে নিচে তাকিয়ে কি দেখছে।

মেঘ গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরেই সামনের গাড়ির সাথে সংঘর্ষ করে ফেলে তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে লোকটির কথা শুনেই যাচ্ছে কারণ ভুলটা তার। তবে আর কত এই লোকতো থামছেই না। মেঘ মাথা সোজা করে লোকটিকে সরি বলতে চাইলো।

মেঘ মাথা উচু করতেই আরহা মেঘকে দেখতে পেলে। ছোট সাহেবকে চিনতে আরহার এক মূহুর্ত সময় লাগেনি সাথে সাথে আরহা অন্য দিকে ঘুরে গেলো। কোন রকম গাড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। ড্রাইভার কে কোন মতে ডাকলো। আরহার ডাক শুনে, ড্রাইভার কবির তাড়াতাড়ি আরহার সামনে আসলো। আশেপাশে জ্যম লেগে গেছে । আরহা বললো তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলো। বলেই গাড়িতে বসে পরলো। ড্রাইভার ড্রাইভিং সিটে বসতেই আরহা বললো বাসায় যাবো। সেই চেহারা, সেই মানুষটা যে চার বছর আগে তার ডান হাতে ক্ষত চিহ্ন করে দিয়ে বলেছিলো আর কখনো আমার সামনে আসলে মে*রেই ফেলবো। মে*রে ফেলবে আমাকে। সেদিন যে ভাবে গরম রড দিয়ে তার হাত পু*ড়ি*য়ে দিয়েছে তার আত্ম চিৎকার আর্তনাদ সব উপেক্ষা করে ঠিক এভাবেই তাকে মে*রেও ফেলতে পারবে! ভয়ে শরীর কাঁপছে আরহার।

মেঘ বোকার মতো তাকিয়ে আছে কি হলো সরি না শুনেই চলে গেলো। এবার সে নিজেও চলে যাচ্ছে। এখন একটাই কাজ কোন ভাবে হিয়াকে খুঁজে সত্যিটা জেনে নেওয়া। মন বলছে হতেই পারে সেদিন হিয়া কিছু করছে।হিয়ার ভার্সিটিতে এসে হিয়ার খোঁজ করলো তবে বিশেষ কোন লাভ হলো না হিয়া নাকি দু বছর ধরে পড়া লেখা করছে না। মনে মনে বলছে কোথায় খুঁজবো এই মেয়েকে। পকেট থেকে ফোন বের করতে যেয়ে খেয়াল হলো ফোন বাসায় ফেলে এসেছে। এবার বাসায় ফিরে যাচ্ছে মেঘ।

আরহা বাসায় এসে কারো সাথে কোন কথা না বলে সোজা চলে গেলো ওয়াশরুমে। ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে শাওয়ার অন করে বসে পরলো। চিৎকার করে কাঁদছে
আর বলছে সবাই নিজের কষ্ট দেখলো কেউ আমার কষ্টটা বুঝতে চাইলো না। কোন অন্যায় না করেই খু*নি ট্যাগ নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে কেনো?

নীলু দরজার ওপাশ থেকে জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর আরহাকে ডাকছে। এক পর্যায়ে নীলু দরজার পাশে বসে কেঁদে দিলো। নীলুর কান্নার শব্দ কানে যেতেই আরহা দ্রুত ওয়াশরুমের দরজা খুলে দিলো। নীলু ছুটে এসে আরহাকে জড়িয়ে ধরলো তোয়ালে নিয়ে আরহার মাথা মুছে দিচ্ছে একহাতে আরএক হাতে আরহাকে জড়িয়ে রেখেছে। সার্ভেন্টকে দিয়ে ড্রেস আনিয়ে আরহার হাতে দিয়ে বলে দু’মিনিটে চেঞ্জ করে আয় আমি দরজার এপাশেই আছি।

হিয়া বসে আছে মধ্য বয়স্ক এক লোকের সামনে হিয়ার হাত পা চেয়ারের সাথে বাঁধা মুখটাও বাঁধা ছিলো লোকটি হিয়ার মুখ খুলে দিয়ে হিয়ার সামনে বসলো।

মেঘ হন্তদন্ত হয়ে বাসায় আসলো, বাসায় প্রবেশ করতেই সামিরা এসে মেঘকে জড়িয়ে ধরতে নিলে মেঘ সরে দাঁড়ায় তুই জানিস এসব আমার পছন্দ না।
আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে শোন বাবা, মা তোদেরকে আমাদের বাসায় ইনভাইট করেছে।
– মানে আঙ্কেল আন্টিও চলে এসেছেন!
– হুম
ইমতিহান মেঘকে বললো,তুই সকালে বের হলি আর এখন আসলি ফোনটাও সাথে নিসনি।
তিনজন সোফায় বসে গল্প করছে এর মধ্যে একজন সার্ভেন্ট এসে মেঘের ফোনটা দিয়ে গেলো। মেঘ গল্প ছেড়ে ফোনে বিজি হয়ে গেলো। প্রথমেই আরহার মেসেজের রিপ্লাই দিলো। এটা আমার বাবা,মায়ের দেয়া নাম সুন্দর এবং আমার পছন্দের হতেই পারে এতো সুন্দর নাম আপনি আগে শুনেনি!

ফেসবুকে ডুকেও অবাক একসেপ্ট করছে। প্রথম মেসেজ করলো, সে কি এসেছে?

আরহা ড্রেস চেঞ্জ করে নীলুকে জড়িয়ে ধরে বললো আপুই ছোট সাহেব বাংলাদেশেই আছে আমি নিজে চোখে আজকে তাকে দেখেছি
– শান্ত হ আসতেই পারে তার জন্য তো নিজেকে তৈরী করতে হবে তার সামনে দাঁড়ানোর। যে অন্যায় তুই করিসনি সেই অন্যায়ের শাস্তি কেনো পাবি!এবার তোর জবাব দেয়ার সময় এসেছে। সেদিন ছোট ছিলি অসহায় ছিলি আজকের আরহা আর সেদিনের আরহার মধ্যে যেনো বিস্তার ফারাক দেখতে পায়। আচ্ছা আপুই ছোট সাহেবের নাম কি?
– সময় হলে জানতে পারবি এখন তুই রেস্ট কর আমিও ড্রেস চেঞ্জ করে আসি আমাকেও
ভিজিয়ে দিয়েছিস।

নীলু চলে যেতেই আরহা শুয়ে পরে। নিজের মোবাইলটা হাতে নিতেই অনেক নোটিফিকেশনের ভিরে মেঘের মেসেজও চোখে পরে। প্রথমেই রিপ্লাই করলো, রাগ করছেন কেনো আমি যাস্ট বললাম।
বাই দা ওয়ে আপনার আর কোন নাম নেই!
ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো না নেই।
– এখনো রাগ কমেনি
– আপনি কি আমার গার্লফ্রেন্ড যে আপনার সাথে রাগ করবো?
আরহা আর রিপ্লাই করলো না মনে মনে ভাবছে কি অদ্ভুত মানুষ।

মেসেঞ্জারে যেয়ে দেখে, মেঘ জমেছে মনের আকাশে, মেসেজ করেছে, আরহা রিপ্লাই দিলো সে আসলে লিখবো। তুমি এসে পরেছো।
-সাথে সাথে রিপ্লাই আসলো, ঠিকানা দাও মাক্স সুন্দরী এখনি আসছি!
-আপনাকে কে বললো আমি সুন্দরী
– ও তার মানে মিস আদিয়াত নুজহাত আরহা অসুন্দরী।
আরহা বোকা বনে গেলো জানলো কি ভাবে এটা আমার আইডি।
কে আপনি?
– মেঘ রিপ্লাই করলো মানুষ
– তা আপনি মিস্টার মানুষ নাকি মিসেস মানুষ
– হবো কোন একটা।
– তার মানে…..
– ও হ্যালো আপনি কি মিন করতে চাইছেন।
– যেটা আপনি বুঝতে পারলেন।
– বড্ড পাজি মেয়ে তো আপনি।
– হুম পাজি মেয়ে তবে কোন এক সুদর্শন যুবকের ওয়াইফ।
– হাসির ইমোজি দিয়ে লিখলো নাইস জোক্স
– আমি বিবাহিতা বিশ্বাস হচ্ছে না।
– আমি আপনার সম্পর্কে জানি সো মিথ্যে বলে লাভ নেই।
– আপনার সাথে মিথ্যে কেনো বলবো।
– মিস মাক্স সুন্দরী আপনি কি ভাবছেন আমি আপনার সাথে প্রেম করতে চাইছি? তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন।
– তো কি চাইছেন?
– আপনার মাক্সের আড়ালের চেহারাটা দেখতে চাইছি।
– আমার হ্যাসবেন্ড রাগ করবে।
– ওই পিচ্চি যেটা বলছি তাড়াতাড়ি করো

এতোক্ষণ ধরে সামিরা আর ইমতিহান এক ধ্যনে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে। এরকম হেসে হেসে কার সাথে কথা বলছে। ইমতিহান উঠে এসে ছো মেরে মেঘের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো।

#চলবে

# তুমি আসবে বলে

# নুসাইবা ইভানা

পর্ব-১৮

আরহা বুঝতে পারছেনা লোকটা কে তার পরিচিত কেউ হলে তো অবশ্য বুঝতে পারতো। তার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড নাকি প্রান্ত নিজেই। আরহা আবার টেক্সট করলো। এই সত্যি করে বলুন তো আপনি কে?

সাথে সাথে রিপ্লাই, তোমার উডবি।
– অসভ্য, অভদ্র এখনি ব্লক করছি।
– সরি মিস মাস্ক সুন্দরী মজা করলাম
মেঘ চেষ্টা করছে ইমতিহানের হাত থেকে ফোনটা নেওয়ার কিন্তু পেরে উঠছে না। আর সামিরা সামনে থাকাতে বেশি জোড়াজুড়িও করতে পারছে না।
ইমতিহান আরহা কে টেক্সট করলো, আপনার ভয়েস যদি এতো সুন্দর হয় না জানি আপনার চেহারা কতটা সুন্দর।
আরহা রিপ্লাই করলো না।
ইমতিহান আবার লিখলো, খুব শীগ্রই দেখা হচ্ছে, মিস মাস্ক সুন্দরী। উইত লাভ ইমোজি।

ইমতিহান মেঘের হাতে ফোনটা দিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো। সামিরা বোকার মতো তাকিয়ে আছে। মেঘ বললো, আমারো সময় আসবে তখন দেখে নেবো।
সামিরা বললো কি হয়েছে আমাকে বল, মেঘের ফোনে কি এমন ছিলো। দেখা আমাকেও।
– তোর দেখে কাজ নেই এগুলো আমাদের পার্সোনাল মেটার৷
মেঘ উঠে বলল, সামি শোন কয়েকদিন পরে ইমতিহানের বিয়ে তো তাই মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে।

আরহার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবে আর কয়েকদিন পর। আজ খুব মনে পরছে ছোট সাহেব কে সে একদিন বলেছিলো খারাপ রেজাল্ট করে আমাদের বাড়ির মান সম্মান ডোবাতে চাও। মনে মনে বলছে ছোট সাহেব আমি তো ভালো রেজাল্ট করেছি আপনার পরিবারের নাম নষ্ট হতে দেইনি। তবে কেনো সে পরিবার আমার থেকে কেড়ে নিলেন! আপনার জন্য শুধু আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটা আজ সবচেয়ে দূরের মানুষ। আরহা নীলুর রুমে আসলো নীলু তখন ওয়াশরুম আরহা দেখলো নীলুর বিছানার উপরে একটা ফটো এলবাম। হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলো। নাহ এটা তো কখনো দেখিনি। দেখিতো এটা কবে কার। আরহা ফটো এলবাম খুলতেই প্রথমে, মিসেস মারিয়া আর মোর্শেদ আফরোজের কিছু পিক দেখতে পেলে তাদের দেখেই চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে শুরু করলো, পরের ছবি গুলোতো একটা ছেলের ছবি ছেলেটার বয়স বারো থেকে পনেরো হবে।আরহা সামনের ছবি দেখবে তার আগেই নীলু আরহার হাত থেকে এলবামটা নিয়ে নিলো। শাসনের সুরে বললো, এখনো রেডি হচ্ছিস না কেনো! দেরি হচ্ছে তো নাকি! আরহা চলে আসলো নিজের রুমে। ড্রেস চেঞ্জ করে সুন্দর করে নিজেকে পরিপাটি করে নিলো আজকের পার্টির থিম কালার ছিলো রয়েল ব্লু। শাড়ির সাথে মেচিং জুয়েলারি পরে নিলো। নিজেকে আয়নায় দেখে নিয়ে নীলুর রুমে আসলো নীলুও ব্লু রঙের শাড়ি পরেছে। চলো আপুই দেরী হচ্ছে তো আবার গিফটও নিতে হবে। হুম চল বের হবে এর আগেই নীলুর ফোনে ইমতিহানের কল আসলো ভিডিও কল নীলু রিসিভ করে চুপ করে আছে, ইমতিহান হা করে তাকিয়ে আছে। কিছু সময় চুপ থেকে ইমতিহান বললো, তোমরা বার্থডে পার্টিতে যাচ্ছো নাকি নিজেদের জামাই খুঁজতে!
– মানে কি বলছো
– ডিয়ার ওয়াইফি এতো সুন্দর করে সেজেগুজে একা যেতে পারবেনা ঠিকানা দাও আমিও আসছি।
– পাগল হয়েছো আসছি মানে কি!
– তোমাকে মা*রা*ত্ম*ক সুন্দর লাগছে যদি কেউ নজর দেয়। আরহা পাশ থেকে বলে জিজু আমি থাকতে ইম্পসিবল।
– কেমন আছো পিচ্চি?
– ভালো। আপনি কেমন আছেন?
– ভালোছিলাম এখন নেই এতো সুন্দরী বউ আর শালিকা পার্টিতে গেলে কে ভালো থাকে বলো। আরহা বলে, আপনিও চলে আসুন জিজু ঠিকানা সেন্ট করে দিচ্ছি।

নীলু ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললো,এমন করলে তোমার সাথে আড়ি, যাবোনা তোমার বাড়ি, যতই কিনে দাও শাড়ি।

– হইছে বিবিজান আর ভয় দেখাতে হবে না আসছিনা আমি তবে নিজেকে ছেলেদের থেকে দূরে রাখবা।

মেঘ রেডি হচ্ছে ইমতিহান রেডি হয়ে অপেক্ষা করছে আজ ইমতিহানের কাজিনের বার্থডে দুজনেই সাদা শার্ট আর ব্লু কোর্ট, ব্লু প্যান্ট, ব্লু শু পরেছে।

আরহা আর নীলু গিফট নিয়ে চলে আসলো নূরদের বাসায় সবাই তে আরহাকে দেখে চোখ সরাতেই পারছে না। প্রান্ত আরহাকে দেখে বলে লুক ভেরি বিউটিফুল।
আরহা সৌজন্য হেসে বলে ধন্যবাদ।
নীলুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে এখানেও চলে এসেছে! চিপকু কোথাকার।
– বাদদে তো চল নূরকে গিফট দিয়ে আসি।
নুরকে গিফট দিতেই নূর বলে এসব না দিয়ে তুই একটা গান গেয়ে শোনালেই সবচেয়ে বড় গিফট হয়ে যেতো।
– নূরী আজকে দিনে কোন গান নয়! শুধু মাস্তি হবে।
– জানিস আমার কাজিন আর তার বন্ধু এসেছে।। ছেলে দুটো পুরাই হিরো।
– কেমন হিরো আলমের মতো!
– আরে রানবির কাপুরের মতো। এখন আম্মুর সাথে কথা বলছে,পরে দেখা করিয়ে দেবো।

কেককাটা হলো সবাই আনন্দ করছে কিন্তু দুই এলিয়েন রুম থেকে বের হয়নি।
সবাই কেক নিয়ে মাখামাখি করছে এর মধ্যে সার্ভেন্টের সাথে ধাক্কা লেগে আরহার শাড়িতে জুস পরে যায়। আরহা নূরকে জিজ্ঞেস করে ওয়াশরুম কোনদিকে।
– উপরে যে কোন একটাতে গেলেই হবে।
– আচ্ছা আমি ক্লিন করে আসছি।

ইমতিহান কিছু সময় বসে থেকে বলে, তুই এভাবে থাকলে থাক। আমি নিচ থেকে ঘুরে আসছি।
মেঘ উঠে বারান্দায় চলে গেলো দূর এসব ভালো লাগছেনা।

আরহা এক রুমে প্রবেশ করে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে ওয়াশরুমে ডুকে শাড়ি মুছতে থাকে। হুট করে লোডশেডিং হতেই আরহা জোড়ে চিৎকার দেয়।
আওয়াজ শুনে মেঘ রুমে এসে কাউকে দেখছেনা
আরহা হাত দিয়ে অনুমান করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসছে,হঠাৎ শাড়িতে পা আটকে পরে গেলো বেডের উপর। কিন্তু একি বেড তো এতো শক্ত নয় হাত দিয়ে ভালো ভাবে দেখছে এটা কি নাকের মতো আবার চুল। ভুত নয় তো জোড়ে চিৎকার করবে ভুত বলে তার আগেই কেউ মুখ চেপে ধরে বলে, একদম একটুও শব্দ করবেন না। আপনার মানসম্মান না থাকলেও আমার আছে।
এতোদিন পর এতো কাছ থেকে এই কন্ঠ চিনে নিতে আরহার সময় লাগলো না আর একটা কথাও বের করছে না মুখ দিয়ে। সরে আসার চেষ্টা করছে।

মেঘ খেয়াল করলো এই অনূভুতি তো সেদিনের অনূভুতির মতো, মনে হচ্ছে খুব কাছের কেউ! তার প্রতিটি নিশ্বাস আমার অতি পরিচিত। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মেঘ কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ইচ্ছে করছে মেয়েটিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে। হাত বাড়িয়ে নিজের হাত দিয়ে আরহার পুরো মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অদ্ভুত অনুভূতি অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব হচ্ছে।
আরহা ভয়ে কোন আওয়াজ বের করছে না।
– মেঘ অস্ফুট স্বরে বললো কে তুমি হৃদয়হরনী।
– আরহা বুঝতে পারছে না এটা কি সত্যি ছোট সাহেব নাকি অন্য কেউ!

মেঘ এবার আরহাকে নিজের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো। একহাত দিয়ে শাড়ি ধরে রেখেছে। বলো কে তুমি? তোমাকে এতো পরিচিত কেনো মনে হচ্ছে!

মেঘের গরম নিশ্বাস আরহার কানের কাছে পরতেই আরহার শরীরে কেমন করে উঠলো। নিজের কন্ঠ একটু অন্য রকম করে বলো ছাড়ুন আমাকে। আমি আপনাকে চিনিনা।
– মিথ্যে কেনো বলছো। আমার মন বলছে তুমি আরহা। বেখেয়ালি ভাবে আরহার নামটা মুখ থেকে বের হয়ে গেলো।
– আরহা এবার আরো ভয় পেলো তার মানে এটা ছোট সাহেব হয়তো নে*শা*গ্র*স্ত তাই আবল তাবল বলছে।

আরহা সরে আসতে চাইছে কিন্তু পারছে না।
এমন সময় ইমতিহান নিজের ফোনের ফ্লাশ অন করে রুমে আসতে আসতে মেঘ মেঘ করে ডাকতে থাকে।

মেঘ নামটা আরহার কানে বজ্রপাতের ন্যায় বাজছে হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে চোখ ভরে আসছে, যে কোন সময় বর্ষন নামবে।
মেঘ আরহাকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে করে নেয়। আর ইমতিহানকে বলে ডিস্টার্ব করিস না আমি ঘুমোচ্ছি তুই যাওয়ার সময় আমাকে ডেকে নিয়ে যাস।
মেঘ কথা বলছে এর মধ্যে মনে হলো কেউ থাকে জড়িয়ে ধরেছে।
আরহা মেঘের নাম শুনতেই মেঘকে জড়িয়ে ধরলো মনে হচ্ছে কত বছরের অপেক্ষার অবসান হলো।হঠাৎ করেই ভয় উবে গিয়ে একরাশ ভালোলাগা এসে ভর করলো।

মেঘ কিছু বলবে তার আগেই….

#চলবে

#তুমি আসবে বলে

# নুসাইবা ইভানা

পর্ব-১৯

সেই কখন থেকে আরহা বাসায় এসে জোড়ে জোড়ে গান গাইছে আর নেচেই যাচ্ছে। একেক গান গাইছে আর নাচছে এই রাতের বেলা আরহার ইচ্ছে করছে ডানা মেলে উড়ে যেতে,

নীলু আরহার রুমে এসে দেখে আরহা গান গাইছে,”উড়ে যা ডানা মেলে আজ রে কন্যা দক্ষিণে উতলা বাতাস। “মনটা কাড়িয়া গেলো সে চলিয়া দয়া মায়া তার নাই” নীলুকে দেখতেই নীলুকে নিয়ে ঘুরা শুরু করলো।
আরহা থাম বল কি হয়েছে এতো আনন্দের কারণ কি?

আরহা বেডে বসে পরলো এতোক্ষণ লাফালাফি করে হাপিয়ে গেছে একটু নিজেকে সময় দিয়ে নীলুর কোলে মাথা রেখে বললো, আপুই অনেক ভেবে দেখলাম যে আমাকে ছেড়ে গেছে তাকে আকড়ে ধরতে চাওয়া বোকামি। তারচেয়ে জীবনটা নতুন করে শুরু করি!আজকে থেকে প্রতিটি শো করবো মুখ খোলা রেখে।
ভাবছি একটা প্রেম করবো! তারপর সে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে তার বিরহে আমি পাগল হবো। দারুণ হবে।
– এসব কি বলছিস যা মুখে আসছে বলেই যাচ্ছিস। শরীর ঠিক আছে তো!আমি ডক্টরের সাথে কথা বলছি আগামীকাল সকালেই যাবো।
– আরে আমি একদম ফিট আছি তোমার আমাকে অসুস্থ মনে হচ্ছে কেনো! আমি সত্যি চাইছি নিজের মতো হাসিখুশি বাঁচতে কারো বিরহে থেকে লাভ কি বলো,যাকে দেখিনি চোখে তার জন্য মায়া করে কোন লাভ নেই এটা বুঝে গেছি। তাই এখন নিজের মতো করে বাঁচবো।
– সত্যি তুই নতুন করে জীবন শুরু করবি আমি অনেক খুশি। জানিস এটাই চাই তুই ভালো থাক যে চলে গেছে সে তো ফিরে আসবে না।
– হুম এখন থেকে ভালোবাসা শুরু
– ভালোবাসা শুরু মানে?
-আহ বুঝোনা কেনো ভালো থাকা শুরু বলতে যেয়ে ভালোবাসা শুরু বলে ফেলছি।
– আজকে পার্টি থেকে আসার পর থেকেই দেখছি তোর মাথাটা গেছে। আচ্ছা সত্যি করে বলতো ভুল বাল কিছু খাসনি তো!
– কি বলো এগুলা সামনে আসো দেখো আমার মুখে কোন গন্ধ আছে। এভরিথিং ইজ ফাইন।

মেঘ আজকে রাতে আর ঘুমোতে পারবে না।চোখ বন্ধ করলেই সেই মূহুর্ত চোখের সামনে ভেসে উঠে। মনে মনে বলে আমাকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেলে কি হবে! আমি ঠিক চিনতে পেরেছি তুমি আরহা। তবে তোমাকে এবার খুঁজে বের করবোই।তোমার স্পর্শ আমাকে এলোমেলো করে দেয় কেনো?যেদিন তোমাকে প্রনয় দিতে চাইলাম সেদিন তুমি আমাকে নিঃশ্ব করলে। তুমি আমার প্রথম অনুভূতি, প্রথম ভালোবাসা, প্রথম অপেক্ষা কিন্তু তোমার একটা ভুল আমার জীবন থেকে সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। কেনো করলো এমন তুমি?নিজের একান্ত কাছের মানুষকে জড়িয়ে ধরার মতো শান্তি হয়তো পৃথিবীতে অন্য কিছুতে নেই। এই যে তোমার একটু স্পর্শ সাতাশ বছরের যুবকের হৃদয় ঝড় তুলে দিয়েছে। তোমাকে কাছে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা জাগিয়ে তুলেছে।এর দায় কেবল তোমার।
মনে মনে ভাবছে মেয়েটা বড্ড বুদ্ধিমতী হয়েছে কি ভাবে আমাকে বোকা বানিয়ে চলে গেলো।

ফ্লাশব্যাক
আরহা মেঘকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ করে এমন হওয়াতে মেঘ একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায় হুট করেই মেয়েটা তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে। এদিকে ইমতিহান আসছে। মেঘ ইমতিহানকে বললো তুই নিচে যা ফ্লাশ অফ কর বিরক্ত করিস না। ইমতিহান কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো। মেঘ খেয়াল করলো তার বুকের কাছের শার্ট ভেজা ভেজা অনুভব হচ্ছে। আচ্ছা মেয়েটাকি কাঁদছে। এবার মেঘ মেয়েটাকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে অন্য হাতে নিজের মোবাইল খুঁজছে। আরহার চোখের পানি নাকের পানি দিয়ে মেঘের শার্ট ভিজিয়ে ফেলছে। এতো বছর যাকে দেখার জন্য চোখ ব্যকুল ছিলো সে তার সামনে আরহার ইচ্ছে করছে মেঘের ভিতর নিজেকে লুকিয়ে নিতে। ভাবতেই পারছেনা এই মানুষটা তাকে কোন এক সময় এতো কেয়ার করেছে!হুট করেই আরহার মনে পরলো সেদিনের কথা। মেঘকে অন্যমনষ্ক দেখে সুযোগ বুঝে নিজেকে আস্তে করে সরিয়ে নিয়ে দ্রুত পা ফেলে দরজার বাহিরে চলে আসলো। বাহিরে এসে দেয়ালে পিট ঠেকিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।
কাজটা এতো দ্রুত হয়েছে যে, মেঘ বুঝে উঠার আগেই আরহা গায়েব। মেঘ বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। নিজের মোবাইল খুঁজে ফ্লাশ অন করে বাহিরে এসে এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না। তবে নিজের শার্টের সাথে একটা ঝুমকো কানের দুল ঠিক পেলো। কানের দুলটা হাতে নিয়ে বেডে বসতেই কারেন্ট চলে আসলো। মেঘ ভালো ভাবে দুলাটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে তুমি আরহাই ছিলে তাইতো। এতোই যখন ভালোবাসো তবে সাহস করে সামনে কেনো আসছো না! নাকি নিজের ভুলের জন্য লজ্জিত তাই আসতে পারছো না। নাকি তিনটে মানুষের খু*নি তাই সাহস হচ্ছে না। এসব ভাবনার মাঝেই নিজের শার্টের দিকে তাকিয়ে ভাবে পিচ্চি আর বড় হলো না প্রথম বার কামড়ে দিয়েছে আর এবার নাকের জল চোখের জল দিয়ে শার্টের রফাদফা করে দিয়েছে।

আরহা নিচে এসেই নীলুকে না বলেই বাসায় চলে এসেছে। আরহা ভাবতেই পারছেনা ছোট সাহেব আর কেউ নয় তার একান্ত নিজের মানুষ তাকে কতটা কাছ থেকে দেখেছে। এখোনো মনে পরে প্রথম পিরিয়ডের কথা। কতটা কেয়ারিং তার বরটা। ভাবতেই ভালো লাগছে। ইশ তখন যদি জানতাম আপনি আমার বর তবে আরো দু’চারটা কামড় দিয়ে দিতাম। ভাবা যায় আপনার মতো রাগি মানুষ আমার বর।অথচ আপনাকে দেখার জন্য আমার চোখে ছিল তৃষ্ণা, হৃদয়ে ছিলো ব্যকুলতা। এখন আমার ছোট হৃদয়ের জমানো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভালোবাসার বিষাদ সিন্ধু জুড়ে আমি আপনার ভালোবাসার রং ছড়িয়ে দেবো। এবার দেখবো কি ভাবে দৃরে রাখতে পারেন আমাকে?

বর্তমান
দুজন মানুষ দু প্রান্তে একে অপরের চিন্তায় মগ্ন উভয়ের হৃদয়ের ভালোবাসা অভিমানের চাদরে মোড়ানো। এ অভিমান ভেঙে একে অপরকে কাছে টেনে নেবে নাকি অভিমানের পাহাড় গড়ে হারিয়ে যাবে দুজনেই অতলে।

আরহা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছে,আমার হৃদয়ে বিন্দু বিন্দু করে জমানো ভালোবাসা আপনাকে ঘিরে। আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে ছড়িয়ে রয়েছে আপনার প্রতি অভিমান। কোনটাকে ছাড়বো আর কোনটাকে আকড়ে ধরবো বলতে পারেন?
জানেন কিছু মানুষ কাছে থেকেও হৃদয় থেকে অনেক দূরে থাকে। আর কিছু মানুষ দূরে থেকেও হৃদয়ের অনেক কাছে থাকে। আপনি আমার সেই দূরত্ব যে দূর থেকেও আমার ভিষন কাছের কেউ।ভালোবাসি আপনাকে নিজের অজান্তেই অনেকটা। এ অনূভুতি প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই। কেনো ভালোবাসি এ প্রশ্ন নিজের কাছেই রয়ে যায়। তবুও দিন শেষে আপনাকে নিয়ে বাঁচতে চাই!

কিছু সময় বিছানায় এপাশ ওপাশ করে মেঘ ওঠে আসলো বারান্দায়। আজকের মেঘহীন ঝলমলে আকাশে পূর্ণ চাঁদের আলো, মৃদু বাতাস দু’একটা নিশাচর পাখির ডাক,বারান্দায় থাকা হাসনাহেনা গাছ থেকে বিমোহিত ঘ্রাণ উপভোগ্য একটা মূহুর্ত তবে এমন রাতে প্রেয়সীর হাত ধরে রাত্রি বিলাশ করলে মন্দ হতো না। নিজের ভাবনাকে নিজেই প্রশ্ন করছে কি ভাবছো তুমি আমার প্রেয়সী কি ওই বাচ্চা মেয়েটাই? কি ভাবে তাকে আপন করবো? তাকে দেখলেই যে বুকের ভিতর দহন হয়।

দুজনের মনে একি ঝড়। দুজনেই একি চাঁদের পানে তাকিয়ে ব্যক্ত করছে মনের কথা। তবে সে কথা যদি বাতাস বয়ে আনতো দুজনের কানে! যদি চাঁদ আয়না হয়ে মুখোমুখি করতো তাদের। যদি রাত জাগা পাখি গুলো বার্তাবাহক হয়ে পৌঁছে দিতো সংবাদ! তাহলে হয়তো মিটে যেতো দূরত্ব ঘুচে যেতো হৃদয়ের ব্যাধি।
পূর্ণ হতো ভালোবাসা, সমাপ্তি পেতো অপেক্ষা। একে অপরকে জড়িয়ে নিয়ে বলতো কানে মুখে, #তুমি আসবে বলে কত রজনী করেছি একা পার #তুমি আসবে বলে, কত বিকেল কেটেছে বিষন্নতায় #তুমি আসবে বলে আজকের আকাশ নতুন রুপে সেজেছে।

অবশেষে তুমি এসেছো আমার হৃদয়ে তোমার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে তোমার আগমন।

#চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন