তুমি বললে আজ পর্ব-৬+৭

0
487

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ০৬.

.
রুম ছেড়ে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে আসতেই আম্মু বড়মা এবং ফুপিদের চোখে পড়লো। কিছু একটা নিয়ে গভীর আলোচনায় ব্যস্ত ছিলোন সবাই, আমাকে দেখেই হঠাৎ চুপ হয়ে গেল। তাদের কি কথা হচ্ছিলো শুনতে না পারলেও তাসফি ভাইয়া কে নিয়ে কথা হচ্ছিলো সেই টা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছি। সবাইকে কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমারও কেমন জানি সন্দেহ লাগলো। কি এমন কথা বলছিলো তাসফি ভাইয়া কে নিয়ে, যে আমি আসতেই নীরবতায় ছেয়ে গেল সবাই।

“দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল তাড়াতাড়ি, সবাই অপেক্ষা করছে তো।”

রিফাপুর কথা শুনে তাকালাম, আর মাথা ঘামালাম না সবার কথায়, যেতেই হঠাৎ ফোনের কথাটা মনে পড়লো। সারাটাদিন ব/জ্জা/ত লোকটার কথা ভাবতে ভাবতে ফোনের কথাটায় ভুলে গেছি আমি। এগিয়ে গিয়ে ড্রয়িং রুমে র ট্রি টেবিল থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে চলে গেলাম ছাদের দিকে। চার তালার সিঁড়ি বেয়ে ছাদের দরজার কাছে আসতেই সবার গলা ভেসে আসলো কানে। এতদিন পর তাসফি ভাইয়ার আগমনে যে কাজিন মহলের আড্ডায় প্রাণ ফিরে এসেছে, সেটা বুঝতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না।

ছাদের মধ্যবর্তী স্থানে আসতেই বুকের টিপটিপ শব্দ শুধু হয়ে গেল, আড্ডার মধ্যমনি হওয়া মানুষটির দিকে নজর পরতেই। আরও একটু এগিয়ে যেতেই তাসফি ভাই তাকালেন আমার দিকে, অদ্ভুত একটা হাসি লেগে আছে ওনার ঠোঁটের কোণে। সবার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই রাহাত বলে উঠলো,
“মহারানীর আগমন ঘটেছে, সবাই তাহার উপর ফুলের বর্ষণ করো।”

কটমট চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। সবাই হো হো করে হেঁসে উঠলো, শুধু মাত্র তাসফি ভাই ছাড়া। সাকিল ভাইয়া সবাইকে চুপ করতে বলে আমার দিকে তাকালেন। মূলত আমার চুপ করে থাকার একমাত্র কারণ রিমি আপুর বর সাকিল ভাইয়া। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“যাক, অবশেষে ছোট শালিকার দর্শন পেলাম। তা শা*লি সাহেবা এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? জামাইয়ের আদর খাচ্ছিলেন বুঝি?”

“ভাইয়া….. আপনি ও?”

“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে, বসে পড়েন”

আবারও হেঁসে উঠলো সবাই। এদিকে আমি মুখ গোমড়া করে বসে পড়লাম ভাইয়ার একপাশে। হঠাৎ তাসফি ভাইয়া বলে উঠলেন,
“ভাইয়া, কি যে বলো না তুমি? বাচ্চাকাচ্চা মানুষ জামাইয়ের আদর সইতে পারবে কি? দেখা যাচ্ছে জামাই এক হাত কাছে আসতেই, ভয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটো*পুটি খা*চ্ছে।”

“দেখেন তাসফি ভাইয়া, আপনি কিন্তু….. ”

“দেখার সেই সুযোগটাই তো পেলাম না এতদিনে, তবে তুমি বললে আজ সেই সুযোগটা নিতে পারি।”

বলেই চোখ মা/র/লে/ন উনি। আমি ফট করে তাকালাম ওনার দিকে। একটা মানুষ কতটা ব/জ্জা/ত হলে সবার সামনে এসব কথা বলতে পারে? সবাই একেবারে চুপ হয়ে গেছে তাসফি ভাইয়ার কথা শোনার পর। আমি রেগে উঠে কিছু বলতেই রাহাত ফট করে বলে উঠলো,
“তাসফি ভাই, তোমরা বরং দেখাদেখি করো, আমরা আর এখানে থেকে কি করবো?”

“রাহাত…. এগুলো বলার জন্য ই কি আমাকে এখানে নিয়ে আসলা রিফাপু? থাকো তোমরা….”

বলেই উঠে দাঁড়ালাম, রিফাপু সাথে বলে উঠলো,
“আরে আরে, তুই কোথায়…..”

“আরে শালিকা, এতো রাগ করছো কেন? বসো তো এখানে।”

বলেই আমার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলেন সাকিল ভাইয়া। সবাই একেবারে চুপ হয়ে গেল। রিমি আপু বললো,
“এই মেয়েটার রাগ যে কবে কমবে, আল্লাহ মালুম। শ্বশুর বাড়ি গিয়ে যখন জামাইয়ের কে*লানি খাবি, এমনিতেই রাগটা কমে যাবে, দেখিস।”

কথার পিঠে কিছু না বলে নিরুত্তর হয়ে বসে রইলাম। হালকা করে মাথা উঠিয়ে তাসফি ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি উনি আগে থেকেই তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। এই মানুষটা সারাদিন কি দেখে এত আমার মাঝে, সেটাই বুঝলাম না। সাকিল ভাইয়া বলে উঠলো,
“ওর কথা রাখো এবার, শা*লাবাবুর কথা শুনি। তো শা*লাবাবু এবার কি প্ল্যান? পিএইচডি তো শেষ, ভার্সিটিতে জয়েন করছে কবে থেকে?”

“প্ল্যান তো অনেক বড় ভাইয়া। ভাবছি, এবার বউয়ের উপর পিএইচডি করে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সংসার সামলাবো।”

ওনার কথায় ফট করে তাকালাম ওনার দিকে। অদ্ভুত হাসি লেগে আছে ওনার ঠোঁটে। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে সবাই একত্রে হেঁসে উঠলো। আমি সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলাম ওনার থেকে। সাকিল ভাইয়া বললেন,
“বাহ্! এই না হলে আমার শা*লাবাবু। ভাবছি এবার আমিও আ….”

রিমি আপু রাগী চোখে তাকাতেই চুপ হয়ে গেল ভাইয়া। সাগর ভাইয়া বলে উঠলো,
“বাচ্চাকাচ্চা মানুষের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, আর আমরা জীবনে কি করলাম রাহাত? ভাইয়া, তাসফি ভাইয়ার সাথে সাথে এবার আমাদেরও একটা হি*ল্লে করেন।”

“এই না না…. আমার দরকার নাই। আমার বাচ্চা একটা গার্লফ্রেন্ড আছে, তাতেই হবে।”

রাহাতের কথায় ধমক দিয়ে রিফাপু বলে উঠলো,
“এই থাম তো তোরা। তোদের গার্লফ্রেন্ড আর বউ নিয়ে পড়ছিস কেন? তাসফি ভাই তুমি একটা গান শুনাও তো, এদের কথা আর ভালো লাগছে না শুনতে। কতদিন তোমার গান শোনা হয় না।”

এবার সবাই বেশ উত্তেজিত হয়ে গেল তাসফি ভাইয়ের গান শোনার জন্য। আমি তাকালাম ওনার দিকে, আমার সামনে বসায় থেকে চোখে চোখ পড়ে যাচ্ছে বারবার। ওনার দিকে তাকাতেই মনে হচ্ছে, আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন এক ধ্যানে। বারণ করে দিলেন উনি। বললেন এতদিন গান গাওয়া হয় নি, অভ্যাস নেই আর। কেউ শুনলো না ওনার কথা। সবাই আরও জেঁকে ধরলো। আমি চুপ করে কিছু বললাম না। মনে মনে ওনার গান শোনার ইচ্ছে প্রয়াস করলেও মুখ ফুটে কিছুই বললাম না। তাসফি ভাই হঠাৎ আমার দিকে তাকালেন, সাথে সাথে চোখে চোখ পড়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড চোখে চোখ রেখে ফিরিয়ে নিলেন, বললেন গান গাইবেন। সবাই খুশি হয়ে গেল ওনার কথায়। তাসফি ভাইয়া বললেন,
“রিফা, আমার গিটারটা তো এই বাসাতেই ছিলো। যা নিয়ে আয় তো।”

“তোমার রুমেই তো আছে। আমি পারবো না যেতে, এই রাহাত তুই যা।”

“আমাকে কেন বলছিস? তোকে বলছে, তুই যা না।”

কেউ নিচে যেতে রাজি হলো না আড্ডার আসর ছেড়ে। শেষমেশ অনেক কিছুর পর রাহাত কেই যেতে হলো। প্রায় মিনিট পনেরো পর তাসফি ভাইয়ার কালো রঙের গিটারটা নিয়ে এসে ওনার হাতে ধরিয়ে দিলো রাহাত। গিটারটা এতদিন পর দেখে মনে পড়ে গেল চার বছর আগের কিছু স্মৃতি। তাসফি ভাইয়া এই বাসায় আসলেই বায়না করতাম গিটারে সুর তুলে গান শোনাতে, উনি প্রথম কয়েকবার না না বললেও পরে ঠিকই আমার পছন্দের গান শোনাতে।
গিটারটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখলেন, টুং টুং করে কয়েকবার সুর তোলার চেষ্টা করলেন। দুই তিন বার চেষ্টা করেও থেমে গেলেন। হয়তো এতদিন পর গিটারটা হাতে নিয়েই এমন হচ্ছে। পুরোনো অনেক কিছুই যে বদলে ফেলেছেন উনি। জোরে একটা নিশ্বাস টেনে আমার দিকে তাকালেন, তারপর সুর তুলে গাইতে শুরু করলেন আইয়ুব বাচ্চুর বিখ্যাত সেই তুমি গানটা।

‘সেই তুমি.. কেন এতো.. অচেনা হলে…
সেই আমি, কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম….
কেমন করে, এত অচেনা হলে তুমি…
কিভাবে এত, বদলে গেছি এই আমি….
ওওওহও…. বুকেরি সব কষ্ট দু’হাতে সরিয়ে,
চলো বদলে যাই….
তুমি কেন, বোঝোনা…. তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়…
আমার সবটুকু, ভালোবাসা তোমায় ঘিরে…
আমার অপরাধ ছিলো যতটুকু, তোমার কাছে..
তুমি ক্ষমা করে দিও, আমায়…..!’

গানের একটা কলি গেয়েই থেমে গেলেন তাসফি ভাই। একদম নিরবতায় ছেয়ে গেল চারদিকে। গানটা শেষ করেও এক ধ্যানে তাকিয়ে আছেন উনি আমার দিকে। চোখ ফিরিয়ে নিলাম, এতক্ষণ বে/হা/য়া/র মতো ওনার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম আমি। ওনার সমস্ত আবেগ, ভালোবাসা, অনুভূতি দিয়ে গাওয়া গানটা যে আমাকেই কেন্দ্র করে, সেটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি। আমার অভিমান গুলো সরিয়ে দিতেই গানের প্রতিটা লাইন উৎসর্গ করছেন উনি। আর বসে থাকতে পারলাম না ওখানে, নিচের দিকে তাকিয়েও বেশ বুঝতে পারছি ওনার ওই অবাধ্য চোখ দুটো আমার দিকেই আবদ্ধ্য হয়ে আছে। ছলছল করে উঠলো চোখ দুটো, নিচের দিকে তাকিয়েই সবাইকে উদেশ্য করে বলে উঠলাম,
“আমি একটু আসছি, থাকো তোমরা।”

বলেই উঠে এলাম সেখান থেকে। কেউ কিছু বললো না, হয়তো কিছুটা হলেও সবাই আন্দাজ করে ফেলেছে। জোরে জোরে পা ফেলে ছাদের অপর পাশে এসে দাঁড়ালাম। চোখ দুটো বন্ধ করতেই কয়েক ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন হলো। বার কয়েক জোরে জোরে নিশ্বাস টেনে নিলাম। এই মানুষটাকে এত ভোলার চেষ্টা করেও কখনো ভুলেতে পারি নি, ভেবেছিলাম কিশোরী বয়সের আবেগ, সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এই চার বছরে ওনার প্রতি আমার অনুভূতি গুলো হাজার গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, শত চেষ্টা করেও ভুলতে পারি নি ওনাকে। হঠাৎই পাঁচ বছর আগের কিন্তু স্মৃতি ভেসে উঠলো চোখের সামনে।

.
তখন মাত্র ১৪ বছর বয়সের কিশোরী আমি। দূরন্তপনা আর বাচ্চামো লেগেই থাকতো সারাক্ষণ। পরিবারের ছোট মেয়ে হওয়ায় হুটহাট বাচ্চামিতে কেউ কিছু বলতো না। শাষণের মতোই আদরটাও অনেক বেশিই করতো। কিন্তু আমার সকল দুরন্তপনার অবসান ঘটতো তাসফি ভাইয়ার কাছে। ছোট থেকেই কেন জানি এক অকারণেই ভয় পেতাম ওনাকে, কিন্তু ভালোলাগাটাও ছিলো আকাশ ছোঁয়া। স্কুলের বান্ধবীদের প্রতিনিয়ত ভালোবাসার গল্প শুনে তাসফি ভাইয়াকে ভালোলাগার মাত্রাটা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছিলো। অজান্তেই এটা ওটার বায়না করতাম ওনার কাছে, কোন এক কারণে আমার বায়না গুলো অনায়াসেই পূরণ করতেন তাসফি ভাইয়া। সেবার ফাইনাল পরীক্ষার আগে কোন এক কারণে ঢাকা থেকে বাসায় এসেছিলেন উনি। পরের দিনেই চলে চলেন এই বাসায়। তাসফি ভাইকে অনেকদিন পর দেখে আমার খুশি গুলো ছিলো আকাশ সমান। সারাদিন তাসফি ভাইয়ার আশেপাশে কাটিয়েও মনটা কিছুতেই ভরলো না আমার। রাতে এক প্রকার লুকিয়েই ওনার রুমে ঢুকে গেলাম। পুরো রুমে খুঁজেও যখন ওনার দেখা পেলাম না, তখন বারান্দায় চলে গেলাম। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভেবে চলেছেন কিছু একটা। আমি গিয়ে পাশে দাঁড়াতেই উনি আমার দিকে ফিরে বলে উঠলেন,
“এই রাতের বেলা আমার রুমে কি করছিস? যা.. গিয়ে ঘুমিয়ে পর।”

“ঘুম লাগছে না ভাইয়া।”

“ঘুম লাগছে না তো আমার রুমে কি? গিয়ে বই খুলে পড়তে বস, এমনিতেই ঘুম আসবেই।”

“উহুম! অনেক পড়েছি এতক্ষণ।”

বলেই চুপ হয়ে গেলাম। তাসফি ভাইয়া হাজারো বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। একটু সাহস নিয়ে বললাম,
“একটা গান শোনান না ভাইয়া, অনেকদিন আপনার গান শোনা হয় নি।”

“রাত বিরাতে গান শোনার জন্য আমার রুমে আসছিস? বেয়াদব! যা… গিয়ে ঘুমিয়ে পর।”

“এমন ধমকাচ্ছেন কেন? একটা গান-ই তো শুনতে চেয়েছি।”

একটু জোরে করে কথাটা বলেই আবার সুর নরম করে ফেললাম। ওনার হাত ধারে বললাম,
“একটা শোনালে কি এমন ক্ষতি হবে? প্লিজ… প্লিজ ভাইয়া, একটা শোনার না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে, গিটারটা নিয়ে আয়।”

কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে কথাটা বলতেই খুশি হয়ে গেলাম আমি। প্রচন্ড উৎসাহের সাথে ছুটে গেলাম রুমে, ঠিক ততটাই উৎসাহের সাথে গিটারটা নিয়ে এসে ওনার হাতে দিলাম। তাসফি ভাইয়া বারান্দার ফ্লোরে বসে পড়তেই আমিও ওনার পাশে বসে পড়লাম। আমি একটা গানের কথা বলতেই সেই গানটা গাইতে শুরু করলেন। সেটা শেষ হতেই আমার বায়নায় আরেকটা গান শুরু করতেন। এভাবে একটার পর আরেকটা চলতেই থাকতো। কখন যে সেখানেই ঘুমিয়ে যেতাম, নিজেই বুঝতে পারতাম না। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠিকই নিজের রুমে আবিষ্কার করতাম নিজেকে।

.
অনেকটা নিকটে হঠাৎ কারোর অস্তিত্বের জানান পেতেই স্মৃতি থেকে বেরিয়ে এলাম। দু’হাতে চোখটা ভালোভাবে মুছে পিছন ফিরে তাকালাম সেই মানুষটাকে দেখতে। কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে দেখতেই চমকে উঠলাম কিছুটা, পরক্ষণেই সামলে নিলাম নিজেকে।

“আ..আপনি এখানে?”

“বাচ্চাকাচ্চা মানুষ, ভয় পেয়ে পরে টরে আছিস কি না। তাই ভাবলাম একটু একটু আদর টাদর দিয়ে ভুতের ভীতিটা কাটিয়ে দেই।”

.
.
চলবে…..

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ০৭.

.
ভালোবাসার মানুষের সামান্যতম আবদার অনায়াসেই রাখা যায়। তাদের কথাগুলো না চাইলেও মান্য করা যায়। তেমনি আমার ভালোবাসার একজন মানুষ হলো ফুপি। কেন জানি সবার চাইতে ফুপিকে একটু বেশিই ভালোবাসি, তার কথাগুলো সর্বত্র মান্য করার চেষ্টা করি।

ছাঁদে তখন তাসফি ভাইকে নিজের কাছে দেখে চলে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারি নি ওনার শক্তপোক্ত হাতের বাঁধনে আঁটকে পরে। মাথা ঘুড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে তাকালেও তখন কারোর দেখা মিলে নি। তখনই বুঝে গিয়েছিলাম সবাই প্ল্যান করেই আমাদের একটা রেখে চলে গেছে। তাসফি ভাইয়াকে তার রুপুর অভিমান গুলো ভাঙানোর সুযোগ করে দিয়ে গেছে। কিন্তু কেউ তো আর জানে না, ওই মানুষটাকে সকালে দেখার পরেই আমার রাগটা হারিয়ে গেছে, দুপুরে ওনার একটুখানি ভালোবাসার ছোঁয়া পেতেই আমার এতদিনের জমিয়ে রাখা পাহাড় সমান অভিমান গুলো নিঃশেষ হয়ে গেছে। কিন্তু…. কিন্তু কিছু পুরনো স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলেই আমার এই শান্ত মনে অশান্তের ঝড় উঠে যায়, এলোমেলো হয়ে যায় যেন সমস্তকিছু। ওনার করা অবহেলার থেকেও বারংবার মনে হতে থাকে, আমার একান্ত মানুষটার মনে অন্য নারীর বসবাস, শরীর জুড়ে অন্য নারীর বিচরণ। কিভাবে মেনে নিবো আমি?
তাসফি ভাইয়ার শক্তির সাথে না পেরে উঠে এক প্রকার বাধ্য হয়েই ছাঁদে থাকতে হয়েছিলো আমাকে। গা ছমছমে রাতের আঁধারে আমার ভীতি কাজ করে, সেই সুযোগটাও কাজে লাগিয়ে ছিলেন ব/জ্জা/ত মানুষটা। সবাই চলে আসার পরও ওনার সাথে প্রায় আধা ঘন্টার মতো সময় কাটাতে হয়েছে। তার সবটাই ছিলো আমার অভিমানগুলো ভাঙানোর সামান্যতম চেষ্টা।

ছাঁদ থেকে নিচে দেখি সবার খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে গেছে। তাসফি ভাই এবং আমার জন্যই অপেক্ষা করে চলেছেন আম্মু আর ফুপি। আমরা আসতেই আম্মু টেবিলে তাসফি ভাইয়ের জন্য খাবার বাড়তে বাড়তে আমাকেও বসতে বলে খাওয়ার জন্য। খাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তাসফি ভাইয়ার সাথে এবং হাতের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্তটা পাল্টে নিলাম। কিন্তু তাতে বাঁধ সাধলো ফুপি। এতবার বলার পর যখন নিজ হাতে খাইয়ে দিতে চাইলো, তখন আর না করতে পারলাম না। এই মানুষটাকে যে আমার কোন কাজে বারণ করতে ইচ্ছে হয় না। ফুপি আমাকে খাইয়ে দিতে শুরু করলেই তাসফি ভাইয়া অভিমানী সুরে বলে উঠলেন,
“বাহ্! তোমাদের এই বড় হওয়া বাচ্চা মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছো? আর আমি যে এতদিন পর বাসায় আসলাম, আমাকে কি চোখে পড়ছে না আম্মু?”

“না পড়ছে না। দেখছিস না, ওর হাতের কি অবস্থা?”

“আমার হাতেও ব্যাথা হচ্ছে, আমাকেও খাইয়ে দাও।”

বলেই খেতে খেতে প্লেট থেকে হাত উঠিয়ে নিলেন। আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম ওনার দিকে। ফুপিকে কড়া গলায় বলতে ইচ্ছে হলো, ‘একদম তোমার এই ব/জ্জা/ত ছেলেকে খাওয়াবে না ফুপি, আমার আদরের ভাগ একদম ওনাকে দিবা না।’ কিন্তু কিছু না বলে কটমট চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলাম।

“আহ্ তাসফি, তুই দেখি আরও বাচ্চা হয়ে গেছিস। দেখছিস তো ও খেতে পারছে না।”

“আচ্ছা… আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আবার ভালো মানুষ, তাই কিছু মনে করলাম না।”

“নে, আর নাটক করতে হবে না। হা কর।”

তাসফি ভাই নিজের প্লেট থেকে খেতে শুরু করতেই ফুপি এক কোলমা নিয়ে এগিয়ে দিলো ওনার দিকে। হেঁসে আমার দিকে তাকিয়েই খেয়ে নিলো। তারপর বলে উঠলো,
“তুমি বললে তাই নিলাম কিন্তু আম্মু। আমি আবার বাচ্চা কাচ্চাদের আদরে ভাগ বসায় না, কিন্তু প্রয়োজনে আদরে আদরে অতিষ্ঠ করে দিতে পারি।”

সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলাম আমি। ব/জ্জা/ত লোক একটা, কাকে আদর করবি কর না, আমার দিকে তাকিয়ে বলতে হবে কেন? কিয়ানা তো আছেই, প্রয়োজনে সারাদিন কোলে নিয়ে থাক, অ*সভ্য লোক কোথাকার। মনে মনে কঠিন ভাষায় একটা গালি দিলাম ওনাকে। ফুপি বলে উঠলো,
“চুপচাপ খাবারটা শেষ কর তো, বাজে কথা না বলে।”

তাসফি ভাইয়া কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে এক কোলমা মুখে দিলেন, তারপর অকপটে বলে উঠলেন,
“তোমার ছেলের বউকে একবার শুধু বাসায় আনতে দাও। তারপর দেখে তোমার আদরের প্রয়োজন হবে না, তোমার বাচ্চা বউমা আমাকে আদরে আদরে ভরিয়ে রাখবে।”

কয়েক সেকেন্ডর মতো চুপ থেকে আবারও বলে উঠলেন,
“আম্মু…. তাড়াতাড়ি আমার বউকে বাসায় আনার ব্যাবস্থা করো, একা একা ঘুমাতে আমার ভয় লাগে। না জানি কখন এই ছোট হার্টটা ঠাস করে ফেটে যায়।”

মনে মনে খুব বাজে ভাবে একটা গালি দিলাম ওনার কথাগুলো শুনে। অ*সভ্য ব/জ্জা/ত লোক একটা। কতটা খারাপ হলে মায়ের সামনে এসব কথাগুলো বলতে পারে? টেবিল থেকে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেলাম, তারপর চেয়ার ছেড়ে উঠে ফুপির দিকে তাকিয়ে বললাম,
“তোমার এই ব/জ্জা/ত ছেলেকে সামলাও ফুপি, আমি আর খাবো না।”

বলেই তাসফি ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি উনি বাঁকা হেঁসে তাকিয়ে আছেন। আর দাঁড়ালাম না, সোজা হেঁটে নিজের রুমে চলে আসলাম। দরজাটা ভালোভাবে লক করে দিলাম, যেন ব/জ্জা/ত লোকটা পরবর্তীতে রুমে আসতে না পারে।

.
বিছানায় শুয়ে আধা ঘন্টার মতো এপাশ ওপাশ করেও চোখে ঘুম ধরা দিলো না। হঠাৎ মোবাইলের কথা মনে হতেই, মোবাইলটা হাতে নিলাম। ব/জ্জা/ত মানুষটার সাথে দেখা হবার পর থেকেই ফোনের কথাটা ভুলেই গেছি আমি। ফোনে সময় দেখি বারোটা পেরিয়ে গেছে। আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কখন যে বারোটা পেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারি নি। কিন্তু একটা মনে করে অনলাইনে একটু টু দিলাম। নিউজ ফিডের প্রথম পোস্টেই তাসফি ভাইয়ার ছবি দেখে চমকে উঠলাম কিছুটা। আরে, এটা তো ওনার ফ্লোরিডা তে থাকাকালীন সময়ের ছবি, তাইলে আমার ফিডে কেমনে আসলো? আইডির নাম দেখে আরেক দফা অবাক হবার পালা আমার ইংরেজি গোটাগোটা অক্ষরে জ্বলজ্বল করছে ‘তাশরিফ রওনাফ তাসফি’ নামটি। আমি তো ওনাকে অনেক আগেই ব্লক করে রেখেছিলাম, সমস্ত সোশাল মিডিয়া থেকে। তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব? ওনার নামে ক্লিক করে আইডি তে ঢুকতেই আবারো অবাক হবার পালা আমার। ওনার সাথে ফ্রেন্ড হলাম কখন? সবকিছু যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আমার। আমি তো করি নি, আজ সারাদিন তো মোবাইলও হাতে নেই নি। সকালে তো ফোনটা বসার রুমে….. তাহলে কি তাসফি ভাই? উফ্! এই মানুষটা এমন কেন? ফোনে লক না দেওয়ার ফল আজকে পেলাম।

রাগ করে আবারও ব্লক দিতে গিয়েও হঠাৎ থেমে গেলাম, ওনার ডিপির পিছনের কভার ছবি দেখে। হাজারো বিষ্ময় নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম ছবিটার দিকে। আমার এই ছবিটা ওনার কাছে কি করে? লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া, সামনের কাটা চুলের একগুচ্ছ চোখের উপরে এসে বিছিয়ে গেছে, চোখ দুটো ঠিক ভাবে দেখা না গেলেও ঠোঁটে লেগে থাকা হাসিটা ঠিকই দেখা যাচ্ছে। সহসায় কেউ বুঝতেই পারবে না এটা আমার ছবি। ছবিটা প্রায় ছয় সাত মাস আগের তোলা। কিন্তু ওনার কাছে এলো কেমনে সেটাই বুঝতে পারছি না। ছবির ক্যাপশনে লেখা,
‘হাওয়ায় ভেসেছে মন,
মগ্ন মেঘে দিয়েছে সারা।
তোমার এক টুকরো হাসিতে,
আমি হয়েছি মাতোয়ারা…!’

প্রচন্ড অবাক হয়ে বসে আছি আমি। তাসফি ভাই এগুলো কেন করছেন? ভালোবাসেন? তবে, কিয়ানা? কিয়ানা আপুর সাথে তাহলে ওনার কিসের সম্পর্ক? অনেক কৌতুহল নিয়ে অল ফটোস্ এ ঢুকলাম। পুরোনো কিছু ছবি দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। ইস্ এই ছবিগুলো কত খুঁজেছি কাজিন মহলের সবার আইডি তে গিয়ে, কিন্তু পাই নি। কিন্তু তাসফি ভাইয়া প্রতিটি ছবিই যেন অনেক যত্নের সাথে রেখে দিয়েছেন। তাসফি ভাইয়ার সাথে আমার কিছু ছবি নজরে পড়তেই ঠোঁটের হাসিটা আরও প্রসস্থ হয়ে গেল। আগে ওনার সাথে ছবি তোলার জন্য কতই না পাগলামি করতাম, উনি কতই না জোর করে ছবি তুলতেন আমার সাথে।

.
সকালে স্কুলে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছি। এর মাঝেই কলিং বেলের শব্দ ভেসে আসতেই প্রচন্ড বিরক্ত হলাম। বড়মা বাসায় নাই, কয়েকদিনের জন্য বাবার বাসায় গেছে। রিফাপু কোচিংয়ে আর রিমি আপু পড়াশোনার জন্য শহরের বাহিরে। আম্মুও মাত্র ছাদে গেছে কালকের ভেজা কাপড় নিয়ে। এই মুহুর্তে বাসায় দাদী আর আমি ছাড়া তৃতীয় কোন ব্যক্তি নেই। দাদীর বয়স হওয়ায় তার তো দরজা খোলার প্রশ্নই আসে না। আবার বেজে উঠলো কলিং বেলের শব্দ। প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে চুলগুলো বেনি করতে করতেই রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। দাদীও দেখি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসছে। দাদীকে বসতে বলে এগিয়ে গেলাম দরজা খুলতে। এতক্ষণ যতটা বিরক্তি এসে ভর করেছিলো চোখে মুখে ঠিক তার থেকেও দ্বিগুণ উৎসাহিত হয়ে উঠলো দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা তাসফি ভাইয়াকে দেখে। আমাকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ধমকে উঠলেন,
“হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বেয়াদব! সর সামনে থেকে।”

ওনার ধমক খেয়েছে দু’পা পিছিয়ে ওনাকে যাবার জায়গা করে দিলাম। তাসফি ভাইয়া সোজা দাদীর কাছে চলে গেলেন। দাদীকে দেখে বলে উঠলেন,
“কি গার্লফ্রেন্ড, কি অবস্থা তোমার?”

আমি দরজাটা আঁটকে আসতেই দাদী বলে উঠলো,
“ভালো আছিস ভাই? কত দিন পরে দেখলাম তোকে। এত শুকে গেছিস ক্যা?”

“কি করবো গার্লফ্রেন্ড বলো? আমার তো আর তোমার মতো সুন্দরী বউ নাই, যে একটু যত্নআত্তি করবে। তাড়াতাড়ি আমার বিয়েটা দিয়ে দিলেও তো পারো।”

“তোর না হওয়া বউটা যে এখনো অনেক ছোট, আর একটু বড় হতে তো দে।”

“আহা! গার্লফ্রেন্ড তুমি বুঝলে না। বাচ্চা বউ থাকাটা যে কত মজা, সারাক্ষণ কোলে নিয়ে ঘোরা যায়। বেশি বেশি আদর করা যায়।”

“তুই যে বউ পাইয়ে আমারে ভুলে যাবি, সেটা কিন্তু বুঝবার পারছি। তাই এখন বিয়ের চিন্তা বাদ দে।”

আমি গোলগোল চোখ করে তাসফি ভাইয়া আর দাদীর কথাগুলো শুনে যাচ্ছি। তাসফি ভাইয়া আমার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। বললেন,
“তোমাকে ভুলে যাওয়া কি এতই সহজ গার্লফ্রেন্ড? তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা বলে কথা।”

“হু হু! সব বুঝি আমি। তুই যে এখন থেকেই রু….”

“তোর না স্কুল আছে? স*ঙ্গের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা রেডি হয়ে নে।”

দাদীর কথাটা শেষ না হতেই আমাকে ধমকে উঠলেন তাসফি ভাইয়া। আমও আবার কি করলাম যে এভাবে ধমকাতে হবে? ব/জ্জা/ত বদ*মাইশ একটা লোক, হু! সেখানে না দাঁড়িয়ে বিরবির করতে করতে রুমে চলে আসলাম। এবারের লম্বা ছুটিতে এসেছেন তাসফি ভাইয়া, ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে। ওনার আসাতে খুশি হলেও খুব একটা খুশি হতে পারলাম না। কারণ আর সপ্তাহ দুয়েক পরেই আমার এইটের বোর্ড পরীক্ষা। পড়াশোনা নওয়ে অনেকটা চা*পের মুখেই বলা যায়।
চট জলদি বাকিটা রেডি হয়ে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে এলাম। বসার রুমে এসেই দেখি আম্মু ইতিমধ্যে চলে এসেছে। আম্মু আর দাদীকে বলে বেরিয়ে আসতেই আমাকে আঁটকে দিলেন তাসফি ভাইয়া। আম্মুকে বলে উঠলেন,
“মামী আমি বরং ওকে স্কুলে দিয়ে আসি, বাসায় একা একা থেকে কি করবো।”

“আচ্ছা যা, দুপুরের আগেই ফিরিস কিন্তু।”

“আমি একেবারে রূপাকে নিয়ে আসবো নি, চিন্তা করো না।”

বলেই আমাকে এগোতে বললেন। আমার খুশি আর দেখে কে? তাসফি ভাইয়া আমার স্কুলে যাবার পর যখন ক্লাস ফ্রেন্ড সহ নাইন টেনের বড় আপুরা বলে ‘এটা তোমার কে হয়?’ তখন যেন নিজেকে সেলিব্রিটি সেলিব্রিটি মনে হয়। ইস্! আজকে কতদিন পর তাসফি ভাই আমাকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন। খুশিতে আটখানা হয়ে এগোতে লাগলাম, তাসফি ভাইয়া দাদীকে ‘আসছি গার্লফ্রেন্ড’ বলেই আসতে লাগলেন আমার পিছন পিছন।

.
.
চলবে…..

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।🖤