তুমি বললে আজ পর্ব-৮+৯

0
423

#তুমি_বললে_আজ_২
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ০৮.

.
সকালের মিষ্টি রোদের ছোঁয়ায় ঘুমের রেশটা না কা/ট/লেও গাড়ে কড়া রোদে ঘুমটা হালকা হয়ে এলো। মিটমিট করে চোখ খুলে বালিশের পাশে থেকে মোবাইলটা হাতে নিলাম। সময় দেখার জন্য ফোনটা অন করতেই চোখ দুটো বড় বড় আকৃতির হয়ে গেল আমার। তড়িৎগতিতে শুয়ে থাকা থেকে লাফিয়ে উঠলাম। সাড়ে নয়টা বাজে, এত দেরিতে ঘুম ভাঙলো? আজকে তো কলেজ আছে, কলেজে যাবো কখন? এত বেলা হয়ে গেল তবুও কেউ আমাকে ডাকলো না কেন, আজকে? অন্তত রিফাপু বা আম্মুর তো ডাকার কথা ছিলো।
তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম। তাসফি ভাইয়ের সাথে কাটানো পুরনো স্মৃতি গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছিলাম, বুঝতেই পারি নি।
খুব অল্প সময়েই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলাম ওয়াশরুম থেকে। চট জলদি জামাটা পাল্টে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে এলাম রুম ছেড়ে। রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই প্রচন্ড অবাক হয়ে গেলাম। এত শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ। কেন? বাসার সবাই কোথায়? এই সময় তো বাসায় সবার থাকার কথা, এখন তো ফুপিরাও আছে। তাহলে? মনের কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে গেলাম বসার রুমের দিকে। সবাইকে একসাথে দেখে আরও অবাক হয়ে গেলাম। সবাই একসাথে এভাবে বসার রুমে কি করছে? কারোর মুখে কোন কথা নেই।

সোফায় বড় চাচা ও আব্বু বসে আছে একপাশে, অপর পাশে তাসফি ভাইয়া, সাকিল ভাইয়া ও সামিরা ফুপি, সামনের একটা চেয়ারে বসে আছেন রামিসা ফুপি। রান্না ঘরের দরজার ডাইনিং রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আম্মুও বড়মা। বসার রুমের এক কোণায় রিমি আপু এবং তার পাশে থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে রিফাপু। সবকিছু যেন আমার মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। দিক-বিক না পেয়ে ফুপির পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, ফুপির কাঁধে হাত রাখতেই আমার দিকে তাকালো ফুপি। আমি মৃদু স্বরে বলে উঠলাম,
“কি হয়েছে ফুপি?”

প্রতিত্তোরে কিছু না বলে জোরে একটা ফেলে আবারও সামনে তাকালো ফুপি। ঠিক বুঝতে পারছি না ব্যাপারটা কি, কিন্তু মনে হচ্ছে বেশ ঝামেলা পাকিয়েছে কেউ। কিন্তু কে? কিন্তু কথাটা মাথায় আসতেই ফট তাসফি ভাইয়ার কথাটা মাথায় এলো। তারমানে কি তাসফি ভাই? চট করে ওনার দিকে তাকালাম। মাথাটা হালকা নিচু করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখ মুখের ভাবভঙ্গি দেখে নে হচ্ছে সদ্য ঘুম থেকে উঠে এসেছেন হয়তো। বিন্দু বিন্দু পানির কণা এখনো লেগে আছে মুখে, চোখগুলো থেকে এখনো ঘুমের রেশটাও হয়তো যায় নি। এই চার বছরে মারাত্মক সুন্দর হয়ে গেছেন উনি। কিন্তু সুন্দর কথাটা কি যায় ওনার সাথে? ছেলেদের তো সুন্দর বলতে নেই, তাহলে কি বলা যায় ওনাকে? এতদিনের লুকিয়ে রাখা সুপ্ত অনুভূতিরা যেন ডানা ঝাপটিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে ওনাকে দেখে। আলতে করে একটুখানি ছুঁয়ে দেবার বাসনা জাগছে আমার ছোট্ট মনের কুঠিরে, ঠিক আগের মতো। চার বছর আগের মতো নানান বাহানায় একটুখানি ছুঁয়ে দেবার ইচ্ছে হচ্ছে ওনাকে। কিন্তু চাইলেই তো আর সম্ভব নয়, এতটা কাছে থাকলেও দূরত্বটা যে বহুগুণ। মাঝের দেয়াল সুবিশাল আকৃতির।

হঠাৎ তাসফি ভাইয়া আমার দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পরে গেল, সহসায় ছুটে গেল আমার ওনাকে নিয়ে ভাবনা গুলো। চোখ ফিরিয়ে নিলাম ওনার থেকে। ইস্! মানুষটা এমন কেন? একটু লুকিয়েও দেখা যায় না, সাথে সাথে চোরের মতো ধরে ফেলেন, ব/জ্জা/ত লোকটা। নিশ্চয়ই কোন গন্ডগোল পাকিয়েছেন, নয়লে এভাবে চুপ মে*রে আছেন কেন?

.
“ছেলেটা কি করে? বাসা কোথায়?”

মিনিট পাঁচেক পর হঠাৎ করে বড় বাবার কথায় চকিত হয়ে তাকালাম ওনার দিকে। বুঝতে পারলাম না কথাটা ঠিক কাকে উদ্দেশ্য করে বললেন। কেউ কোন কথা না বলাতে বড়মা এক প্রকার ধমক দিয়েই উঠলেন।

“কথা কানে যাচ্ছে না, তোর বাবা কি বলে? বল ছেলে কি করে?”

কথাটা বুঝে উঠতেই রিফাপুর দিকে তাকালাম। ছলছল চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা বুঝতে আর একটুও সময় লাগলো না আমার। নিশ্চয়ই সাদিক ভাইয়ার কথাটা কোন ভাবে জেনে গেছে। এমন অবস্থায় রিফাপু কে দেখে প্রচন্ড খারাপ লাগা শুরু হলো। টলমলে চোখে মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই তাসফি ভাই ফট করে বলে উঠলেন,
“ওকে কেন বলছো মামাী? আমি বলছি ছেলেটা কি করে।”

সাথে সাথে সবাই তাসফি ভাইয়ের দিকে তাকালো। হয়তো কেউ ধারণায় করতে পারে নি তাসফি ভাইয়া রিফাপু ও সাদিক ভাইয়ার ব্যাপারটা জানতে পারে। আমি তৃপ্তির একটা নিশ্বাস ছাড়লাম যেন। যাক ব/জ্জা/ত লোকটা ঠিক সময়েই নিজের মুখটা খুলেছেন। এখন যে করেই হোক ব্যাপারটা ম্যানেজ করে নিবেন, ওনার কথায় বাসার সবাই রাজিও হয়ে যাবে। এতটুকু বিশ্বাস আমার আছে ওনার প্রতি।

“ওর নাম সাদিক, পেশায় ডাক্তার, আমার অনেক কাছের বন্ধু।”

অবাক হয়ে গেলাম আমি। তাসফি ভাইয়ের কাছের বন্ধু মানে? কই আগে তো শুনি নি, রিফাপুও তো কিছু বলে নি। একটু থেমে তাসফি ভাই আবারও বলে উঠলেন,
“সাদিক আমার কাছের বন্ধু, কথাটা শুনে হয়তো ভাবছো ছেলেটা ভালো, কিন্তু ও তোমাদের ভাবনার থেকে অনেক ভালো ছেলে।”

“কিন্তু ছেলেটা ও….”

নিরবতার মাঝে বড় বাবা কিছু বলতেই থেমে দিলেন তাসফি ভাই। অকপটে বলে উঠলেন,
“তুমি চাইলে সাদিক কে বাসায় আসতে বলতে পারি। আমার কথায় এতটুকু ভারসা রাখতে পারো মামা।”

“তোর প্রতি আমাদের পুরো ভরসা আছে তাসাফি। কিন্তু এভাবে?”

“সাদিকের সাথে আমারও কথা হয়েছে বাবা। ছেলেটা অতান্ত ভালো, তাছাড়া তাসফির পুরনো বন্ধু। আর মোট কথা সাদিক তো বেকার ছেলে নয়, রাজশাহী মেডিকেলে ওর বেশ নাম ডাকও আছে।”

সাকিল ভাইয়া কথার মাঝেই বলে উঠলেন। বড় বাবা এবার হয়তো কিছুটা নরম হলেন। বললেন,
“কিন্তু এভাবে কিভাবে হয়? আমার বন্ধুর ছেলেকে তো….”

“আমি জানি মামা, কিন্তু রিফা যথেষ্ট এলার্ড, ওরও তো এতে মতামত থাকা প্রয়োজন। হুট করে তো তোমরা কোন সিদ্ধান্ত ওর উপর চে*পে দিতে পারো না।”

তাসফি ভাইয়া কথাগুলো বলে একটু থামতেই বড় বাবা বলে উঠলেন,
“তোর উপর আমাদের ভরসা আছে তাসফি। সাকিল যখন বলছে তখন তো ছেলেটা ভালো হবেই হয়তো। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? এহসানের সাথে আমার এতদিনের সম্পর্ক। ওর একমাত্র ছেলের জন্য রূপাকে চেয়েছিলো, কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়, এখন যদি রিফাকে ও।”

এতটুুকু বলেই থামলেন বড় বাবা। অপর দিকে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো রিফাপু। বড় বাবা সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বলে উঠলেন,
“তুই তো সবকিছুই জানিস তাসফি। একটু অন্তত বোঝার চেষ্টা কর।”

“বোঝার চেষ্টাটা তুমি একটু করো মামা। রিফা সাদিকের সাথে ভালো থাকবে, যেটা তোমার বন্ধুর ছেলের সাথে পারবে না।”

একটু থেমে সেকেন্ডর মতো সময় নিয়ে গম্ভীর গলায় আবারও বললেন,
“আমার যেটা করেছিলে রিফার সাথে তেমনটা করার চেষ্টা করো না মামা। হোক সেটা সাময়িক বা পুরোপুরি ভাবে বিচ্ছেদ। এমনটা করার চেষ্টা করলে আমি কিন্তু নিজ দ্বায়িত্বে বড় ভাই হিসেবে রিফার সাথে সাদিকের বিয়ে দিবো, আর সেটা তোমাদের ভালো লাগবে না।”

“তাসাফি…. মামার সাথে কেমন করে কথা বলতে হয়, ভুলে গেছিস?”

তাসফি ভাই থামতেই ফুপি এক প্রকার চিৎকার করেই উঠলো। ফুপির পাশে থেকে হালকা কেঁপে উঠলাম আমি। একদম চুপ করে আছে সবাই, কারোর মুখে যেন কোন কথা নেই। তাসফি ভাইয়া গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন সোফা থেকে। আমার দিকে তাকাতেই ওনার মুখের অবস্থা দেখে কিছুটা চমকে গেলাম। মুহুর্তেই পুরো মুখ সহ চোখ দুটো লাল বর্ণে ধারণ করেছে। ওনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রচন্ড রেগে গেছেন, কিন্তু হঠাৎ কি এমন হলো যে উনি একটা কথা বলেই এতটা রেগে গেলেন? ফুপির দিকে তাকিয়ে একই ভাবে হালকা চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,
“হ্যাঁ! ভুলে গেছি আম্মু। কারণ বিচ্ছেদের যন্ত্রণাটা আমি জানি, প্রতিনিয়ত অনুভব করি। হোক না সেটা সাময়িক, কিন্তু বিচ্ছেদ তো বিচ্ছেদ ই হয়, এর যন্ত্রণাটাও একই হয়। রিফা আমার অনেক আদরের, আমার সাথে হওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তি ওর সাথে আমি হতে দিবো না। কিছুতেই নয়।”

সবাই একেবারে নিরুত্তর হয়ে গেল। তাসফি ভাইয়ার কথার পিঠে আর কেউ কোন কথা বলার সাহস পেল না। আমি বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম ঠিক কোন ঘটনার কথা বলছেন উনি? কি করেছে বড় বাবা ওনার সাথে? কই আমি তো এমন কিছু জানি না।
তাসফি ভাই আমার দিকে আবারও তাকাতেই বুকে হাজারো শব্দে ধুকধুক করে উঠলো ওনার চাহনিতে। হঠাৎ ওনার চেহারার এমন পরিবর্তন হয়ে গেল কেন ঠিক বুঝতে পারছি না। ওনার মায়া মায়া চোখ দুটো যেন খুব করে কাছে টানছে আমাকে, একটিবার ওনার কাছে যাবার আকুল আবেদন জানাচ্ছে।
তাসফি ভাইয়া বেশ কিছু সময় নিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন আমার থেকে। রিফাপুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
“রিফা… এখানে আর থাকতে হবে না, রুমে যা। পরবর্তীতে যে যাই বলুক না কেন, সোজা এসে আমাকে বলবি। ব্যাপারটা আমি দেখবো।”

আগের মতোই একই ভাবে দাঁড়িয়ে কেঁদে চলেছে রিফাপু। তাসফি ভাইয়া আবারও বলতেই রিমি আপু রিফাপুর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল রুমের দিকে। রিফাপু যেতেই তাসফি ভাইয়াও নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন। আবারও শান্ত পরিবেশে মুখরিত হয়ে গেল বসার রুমে। পিনপতন নীরবতার মাঝে কিছুটা সময় নিয়ে বড় বাবা কে উদ্দেশ্য করে আব্বু বলে উঠলো,
“ভাই, রিফার কথাটাও আমাদের একটু চিন্তা করা উচিত। তুমি এহসান ভাইয়ের সাথে কথা বলে ব্যাপার টা ক্লিয়ার করলেই একটা সমাধানে আসবে হয়তো।”

বড় বাবা আস্তে করে হুম বলে আবারও চুপ হয়ে গেলেন। সাকিল ভাইয়াও বড় বাবা কে কিছুটা বোঝানোর চেষ্টা করে উঠে গেলেন। সামিরা ফুপি ও রামিসা ফুপিও নানান কথা বোঝাতে লাগলেন বড় বাবা কে। তারপর একে একে সবাই চলে গেলেন রুমে। রাহাতরাও সবাই চলে গেল। বড়মাকে হঠাৎ কান্না করা দেখে আম্মু সান্ত্বনা দিতে লাগলো। কিন্তু ফুপি স্থির হয়ে সেখানেই আমার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছু সময়ের মাঝেই বাসার পরিবেশটা যেন পাল্টে গেল। আমি হতাশার নিশ্বাস ছেড়ে চলে আসতে নিলাম সেখান থেকে, হঠাৎ আমার হাত ধরে আঁটকে দিলো ফুপি। ফুপির দিকে তাকাতেই ছলছল করে উঠলো ফুপির চোখ দুটো। আমি কিছু বলতেই ফুপি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
“আমার ছেলেটা অনেক কষ্টে আছে রে রূপা, অনেক কষ্টে আছে। ওর সামনে দাঁড়ানোর সাহসটা যে আমি হঠাৎই হারিয়ে ফেলেছি মা। তুই একটু যা না ওর কাছে, একটু ভরসা হয়ে পাশে দাঁড়া, একটু ভালোবাসার হাত বাড়া।”

বুকের মধ্যে হাজারো বেগে একটা কম্পন সৃষ্টি হলো ফুপির শেষ কথাটা শুনে। আমি ওনার ভরসা হবো, ভালোবাসার হাত বাড়াবো? কিন্তু…. আমার কিন্তু কথাটা যেন ফুপি বুঝে গেল। আমার হাত দু’টো ধরে বলে উঠলো,
“আমার ছেলেটা একদমই ভালো নেই, ওর চোখে হাজারো বেদনা, মনে হাজারো যন্ত্রণা। দূরে থেকে এই চার বছরে বুঝতে না পারলেও আজকে কাছে থেকে ঠিকই বুঝতে পারছি। অনেক কষ্ট সহ্য করেছে ও, দূরে যেতে না চাইলেও বাধ্য হয়েছে যেতে, শুধু তোর জ্….”

কথাটা শেষ না করেই থেমে গেল ফুপি। কি বলতে চাইছিলো ফুপি? আমার জন্য? আমার জন্য তাসফি ভাইয়া দূরে চলে গেছিলেন? ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। ফুপি আবারও বলে উঠলো,
“কারোর জন্য না হলেও শুধু আমার জন্য যা রূপা, একবার যা আমার ছেলেটার কাছে। ছেলেটা আমার ভেতরে ভেতরে অনেক ভেঙে গেছে। আমার এই কথাটা অন্তত রাখ।”

চুপচাপ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ফুপির কথাগুলো শুনে চলেছি শুধু। ঠিক কি করা উচিত আমার, কিছুতেই বুঝতে পারছি না। মস্তিষ্ক থেকে চিন্তা করে না শব্দটা বেরিয়ে আসলোও মন থেকে ঠিক উল্টো শব্দটায় বেরিয়ে আসলো। মবের মধ্যে হাজারো শব্দ ধন্নি করে উঠলো একবার যাওয়া উচিত ওনার কাছে। মস্তিষ্কের কথাটা ঝেড়ে ফেলে মনের কথাটাকেই প্রশ্রয় দিলাম। ফুপিকে ছোট করে ‘হুম’ বলে এগিয়ে গেলাম তাসফি ভাইয়ার রুমের দিকে।

.
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মিনিট পাঁচেকের মাতো ভাবতে লাগলাম কিছু একটা। তাসফি ভাইয়ের লাল বর্ণে ধারণ করা চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই আবারও বুকের টিপটিপ শব্দটা বেরে গেল্। না জানি মানুষটা কি করছে রুমের মধ্যে। সাত-পাঁচ না ভেবে আস্তে করে দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলাম। ওনার রুমে পা দিতেই শিরশির করে উঠলো পুরো শরীর। ঠিক সাড়ে তিন বছর পর আজকে এই রুমে পা রাখলাম। এতদিনেও রুমের কোন কিছুই পরিবর্তন হয় নি, ঠিক আগের মতোই আছে।
রুমের চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখা পেলাম না তাসফি ভাইয়ার। ওয়াশরুমের দরজাটাও খোলা। বুঝে গেলাম, এই মুহুর্তে বারান্দায় আছেন উনি। সময় নষ্ট না করে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম বারান্দায়। রেলিঙে এক হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আকাশের দিকে তাকিয়ে। আমি একটু পায়ের শব্দ করেই ওনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। উনি বুঝতে পেরেও তাকালেন না আমার দিকে। মিনিট পাঁচেক পর ধৈর্য্যহারা হয়ে আমিই ডেকে উঠলাম ওনাকে।আস্তে করে বলতে নিলাম,
“তাসফি ভাইয়া আপনি আ্….”

কথাটা শেষ না হতেই উনি চট করে আমার দিকে ঘুরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন আমাকে। মাথাটা নিচু করে আমার ঘাড়ে চুলের মাঝে ওনার মাথা গুঁজে দেবার চেষ্টা করে গেলেন। প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠে হাজারো বিষ্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। এক মুহুর্তের জন্যও কল্পনা করতে পারি নি উনি হঠাৎ এমন কোন কান্ড করবেন।

.
.
চলবে……

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ০৯.

.
অপ্রত্যাশিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মানুষ মুষড়ে পড়ে। পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং সময়টা থেকে ছিটকে ফেলে অনেককে। কিন্তু আমি? আমার কি করা উচিত এই অনাকাঙ্ক্ষিত অপ্রত্যাশিত ঘটনায়। কি রিয়াকশন দেওয়া উচিত আমার? এখনো সেটাই স্থিতি করতে পারি নি। তাসফি ভাইয়া নিজের সাথে এমনভাবে মিশিয়ে নিয়েছেন নড়াচড়া করারও শক্তি যেন হাড়িয়ে ফেলেছি। ওনার থেমে থেমে ফেলা নিশ্বাস বারংবার আমার ঘাড় ছুঁয়ে বুকে, পিঠে আছড়ে পড়ছে, শিরশির করে উঠছে যেন শরীরের প্রতিটা লোম গুলো।
এই মুহুর্তে ওনাকে তো দূরে ঠেলে দেবার কথা, কিন্তু সেই কাজটা কেন করতে পারছি না আমি, কেন নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি না ওনাকে? চার বছর পর ওনার একটুখানি ছোঁয়া কি আমাকে দূর্বল বানিয়ে দিলো? হোক না সেটা দ্বিতীয়বারের মতো।

প্রায় দশ মিনিটের মতো একই ভাবে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছেন তাসফি ভাইয়া। মনে হচ্ছে একটুখানি ছাড়া পেলেই পালিয়ে যাবো দূরে কোথায়, হারিয়ে যাবো ওনার থেকে বহুদূর। দীর্ঘ চার বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো ওনার ছোঁয়া থেকে কেন জানি নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ইচ্ছে হচ্ছে না। মিশে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে নতুন তাসফি ভাইয়ের পুরোনো ছোঁয়া পাবার আসায়।
নিজেকে সংগত করে হালকা নড়ে ওঠার চেষ্টা করলাম। একটু সময় নিয়ে যখন ওনাকে সরাতে পারলাম না, তখন আস্তে করে বলে উঠলাম,
“ছাছ্..ছাড়েন…. কেক্..কেউ চলে আসবে তো।”

ছাড়লেন না উনি, একই ভাবে জড়িয়ে রাখলেন আমাকে। আমি আবারও নড়াচড়া করে ওনাকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে বলে উঠলাম,
“তাসফি ভাইয়া, ছাড়েন না প্লিজ! কেউ চলে আসবে তো, কি ভাববে এভাবে দেখলে?”

“প্লিজ রুপু, আমাকে ছেড়ে যাবার কথা বলিস না, এতটা অচেনা হয়ে আমার সামনে থাকিস না, এত শত অভিমান আমার প্রতি রাখিস না। নিতে পারছি না আমি তোর এই বদলে যাওয়াটা, ভাবতে পারছি না আমার প্রতি তোর এই পাহাড় সমান অভিমানটা।”

আবারও কেঁপে উঠলাম আমি। কি ছিলো ওনার বলা কথাগুলোর মাঝে? এতটা আবেগ, এত শত অনুভূতি জ্বড়ানো কথাগুলো আমাকে যেন নাড়িয়ে দিলো, আর ভালোবাসা? ভালোবাসাটাও তো মিশে ছিলো ওনার বলা প্রতিটা কথায়।
কিন্তু আমি তে বদলে যেতে চাই নি, অচেনা হতে চাই নি ওনার সামনে, আর না চেয়েছি ওনাকে ছেড়ে যেতে। কিন্তু উনি…. উনিই তো আমাকে ছেড়ে গেছেন, ফেলে রেখে গিয়ে ছিলেন আমার এই ছোট মনে হাজারো আঘাত ও য*ন্ত্র*ণা দিয়ে। তবুও তো আমি চেয়েছিলাম ওনাকে, শত শত পাগলামি করেছিলাম ওনার জন্য। কিন্তু আমার ছোট মনটা কাঁচের মতো ভেঙে দিয়ে উনিই তো মেতে ছিলেন কিয়ানা তে…..

কিয়ানার কথা মাথায় আসতেই মনে পড়লো সাড়ে তিন বছর আগের একটি বিকেলের কথা, যদিও অ্যামেরিকার ফ্লোরিডা শহরে তখন গভীর রাত। কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত তিক্ত স্মৃতিগুলো দৃশ্যপট হতেই হু হু করে উঠলো ভেতরটা। বারবার মনে হতে লাগলো ওনার ছোঁয়ায় দ্বিতীয় নারী আমি, কিন্তু আমি তো সেটা হতে চাই না…. চাই না আমার জিনিসে কাউকে ভাগ দিতে। কিন্তু উনি তো ওনার পুরোটাই অন্য কাউকে বিলিয়ে দিয়েছেন, কি করে মেনে নিবো আমি এটা?
ছটফটিয়ে তাসফি ভাইকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম আবারও। সামান্য জোরেই বলে উঠলাম,
“তাসফি ভাইয়া…. বললাম না ছেড়ে দিতে? আমার এসব পছন্দ নয়, আর কতবার বলবো আপনাকে? ছাড়েন বলছি।”

ওনার হাতটা একটু হালকা হতেই দু’হাতে ওনার বুকে হাত দিয়ে সরিয়ে দিলাম। জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস টেনে নিতেই তাসফি ভাইয়া আবারও এগিয়ে এলেন আমার দিকে। গালে দু’হাতে আলতো করে ধরে নরম গলায় বলে উঠলেন,
“এত কিসের অভিমান তোর, আমার প্রতি? কি করেছি আমি? কি ভুল করেছি আমি, বল রুপু? এতদিন আমাকে এড়িয়ে গেছিস, দিনের পর দিন লুকিয়ে থেকেছিস, আর কালকে আসার পর থেকে আমার সাথে এমন করছিস। কেন…. কি করেছি আমি?”

“কি করেছেন, জানেন না আপনি? নাকি বোঝার চেষ্টা করছেন না, কোনটা? এখন আমার থেকে জানতে চাইছেন, কি ভুল করেছেন?”

“হ্যাঁ… মানছি আমি, ভুল করেছি। অনেক বড় অন্যায় করেছি আমি তোর সাথে, কিন্তু কেন? এই কেন-র উত্তর তো জানতে চাইলি না?”

“জানতে চাই না আমি, আপনার কোন কিন্তু-র জবাব জানতে চাই না আমি। শুধু জানি আপনি আমায় ঠকিয়েছেন তাসফি ভাইয়া বলে, খুব বাজে ভাবে ঠকিয়েছেন। আমার কিশোরী বয়সের আবেগ নিয়ে খেলা করেছেন, উড়ন্ত মনে প্রেম জাগিয়ে ধপ করে নিভিয়ে দিয়েছেন। আপনি খুব খারাপ তাসফি ভাইয়া, আপনি খুব খারাপ …. ”

ধরা গলায় কথাগুলো শেষ করেই ঝরঝর করে চোখ থেকে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রুধারা। সাথে সাথে দু’হাত দিয়ে মুছে নিলাম। কিছুতেই এই মানুষটার সামনে কান্না করতে চাই না আমি, দেখাতে চাই না নিজের দূর্বলতা। দুই পা পিছিয়ে এসে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম, বারান্দার দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেলাম। মাথা উঠিয়ে ওনার দিকে তাকালাম, অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। ওনার দিকে তাকিয়েই আস্তে করে বলে উঠলাম,
“ফুপি অনেক কষ্ট পাচ্ছে আপনার জন্য। ফুপিকে অতন্ত কষ্ট দিয়েন না আপনি।”

“আর আমার কষ্ট গুলো? প্রতিনিয়ত জ্বলতে থাকা আমার বুকের দহন গুলো কে নিভিয়ে দিবে?”

অকপটে বলে উঠলেন তাসফি ভাইয়া। তাকানোর সাহসটা আর হলো না আমার, পিছন ফিরে বড় বড় পা ফেলে বেড়িয়ে এলাম ওনার রুম ছেড়ে। তা না হলে ওনার কথাগুলো মায়ায় আবারও জড়িয়ে দূর্বল বানিয়ে দিবেন আমায়, নতুন ভাবে আশা জাগাবেন ছোট মনের কুঠিরে, আবার এক পলকে সেটা ভেঙে গুড়িয়েও দিবেন। না…. আর কিছুতেই সেই সুযোগটা ওনাকে দিবো না আমি, দূর্বল হয়ে যাবো না ওনার সামনে।

.
রুমে ঢোকার আগেই আম্মু এসে আটকে দিলেন। সবাইকে ডেকে দিয়ে সকালের খাবার খেতে যেতে বললেন। যদিও এখন সকাল বলা যায় না। অন্যদিনের তুলনায় আজকে বাসার পরিবেশটা পুরোটাই ভিন্ন, সকালের খাবারটাও তৈরি হয় নি ঠিক সময়ে। আজকে আর আম্মু কথা পিঠে না বলার ইচ্ছে হলো না। মাথা ঝাঁকিয়ে নিজের রুমে না গিয়ে রিফাপুর রুমে ঢুকলাম, আম্মু চলে গেল সামনের রুমে, মানে তাসফি ভাইয়ার রুমে ওনাকে ডাকতে। আমি রিফাপুর রুমে ঢুকে রিমি আপু ও রিফাপুকে আসতে বললাম। রিফাপু না যেতে চাইলেও রিমি আপুর জন্য আসতে বাধ্য হলো। তারপর সাহিল ভাইয়া, সাগর ভাইয়া ও রাহাত কেও ডেকে নিলাম।

প্রতিদিনের মতো আজকে আর হৈ হুল্লোড় হলো না খাবার টেবিলে, আর না কেউ কোন কথা বললো। সবাই চুপচাপ খেয়ে গেল শুধু। তাসফি ভাইয়া আমার সামনে বসায়, ওনার দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম থেকে থেকে তাকাচ্ছেন উনি আমার দিকে। কেমন জানি অ*স্বস্তি হতে লাগলো ওনার আজকের তাকানো দেখে। তাই দ্রুত খাওয়া শেষ করলাম। টেবিল ছেড়ে ওঠার সময় একবার তাকালাম ওনার দিকে, মানুষটা তখনও তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। ওনাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারি না আমি।

রুমে এসে দরজাটা স্বযত্নে লাগিয়ে দিয়ে পায়চারী করে চলেছি রুম জুড়ে। ভেবে চলেছি তাসফি ভাইয়ার বলা কথা। কি বোঝাতে চাইছিলেন উনি? কেন চলে গেছিলেন? তখন ফুপিও কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল, ফুপির না বলা কথাতেও কিছুটা বুঝে গেছি তাসফি ভাই আমার জন্য দেশ ছেড়েছিলেন, কিন্তু কেন? আমার জন্য কেন-ই বা চলে গেলেন উনি? কই…. আমি তো কিছু করি নি, ওনাকে বারবার আটকাতে গিয়েও তো আমাকে উপেক্ষা করে চলে গেছিলেন। তাহলে? তাহলে ফুপি কেন বললো আমার জন্য? উফ্…. সব কিছু কেমন জানি জট বেঁধে যাচ্ছে মাথায়। ভাবতে পারছি না কিছু।
মাথাটা প্রচন্ড ভার ভার লাগছে, এই মুহুর্তে কিছুটা ঘুমের প্রয়োজন আমার। বাসার এত ঝামেলায় কলেজেও যাওয়া হয়ে উঠে নি। কিছুক্ষণ পরেই বারোটা বেজে যাবে, তাই গোছলটাও সেরে নিতে হবে, এতে যদি কিছুটা হলেও মাথার ভার ভার ভাবটা কমে যায়।
ওয়াশরুমে ঢুকে চটজলদি গোছল সেরে বেরিয়ে এলাম। কিছুটা হলেও মাথা ভারী ভারী ভাবটার লাঘব হলো। চুলটা ভালোভাবে মুছে নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। উপরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ দু’টো বন্ধ করে নিলাম। বন্ধ চোখের সামনে ভেসে উঠলো অতীতের মিষ্টি কিছু স্মৃতির পাতা।

.
মাত্র তিন দিন আগে আমার এইটের বোর্ড পরীক্ষা শেষ হয়েছে, তার মধ্যে শীতের শুরু। আমাকে আর পায় কে, সারাদিন উড়নচণ্ডীর মতো উড়ে উড়ে বেড়ানো টাই যেন আমার একমাত্র প্রধান কাজ ছিলো। তাসফি ভাইয়াও ইন্জিনিয়ারিং ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে লম্বা ছুটিতে এসেছিলেন বাসায়। প্রতিটি পরীক্ষাতেই আমাকে সাথে করে নিয়ে গেছেন আবার নিয়েও এসেছেন। প্রতিটা পরীক্ষায় ওনার সাথে ঘোরাঘুরিটা না হলেও শেষ পরীক্ষার দিনে একদম জেদ করেই আমাকে ঘুড়তে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। উনি একটু ধমক দিলেও ঠিকই সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাকে নিয়ে ঘোরাঘুরি করেছিলেন। সেদিন আমাকে বাসায় রেখে রাতের বেলা চলে যান, তারপর আর এই কয়েকদিনেও এই বাডায় আসেন নি।
তবে আজকে নাকি ফুপিদের আসার কথা। সেই সাথে আসবেন আরও একটা ভালোবাসার মানুষ। মাত্র গোছল সেরে নিজেকে পরিপাটি করতে ব্যস্ত হয়ে গেছি। হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে চমকে উঠলাম কিছুটা। ইস্ ফুপিরা চলে এসেছে হয়তো। তাড়াতাড়ি পিঠময় ছড়িয়ে থাকা ভেজা চুলটা আঁচড়ে নিলাম। বিছানা থেকে ওড়নাটা গলায় পেচিয়ে ছুটে গেলাম বাইরে।

এক ছুটে ড্রয়িং রুমের দিকে যেতেই হঠাৎ দরজার কাছে ঠা*স করে ধাক্কা খেলাম কারোর সাথে। মুখ থু*বড়ে মাটিতে পড়তে নিলেই পুরুষালী হাত দু’টো আঁটকে নিলো আমাকে। ভয়ে চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে দু’হাতে খা*মচে ধরলাম সামনের মানুষটির টি-শার্ট। কিছু সময় অতিক্রম হবার পর যখন মিটমিট করে চোখ দু’টো খুললাম, ভেসে উঠলো তাসফি ভাইয়ার অতি পরিচিত মুখটা। তাসফি ভাইয়াকে দেখে যেন মনের মধ্যে হাজারো প্রজাপতি ডানা ঝাপটাতে লাগলো। কিন্তু আমার সেই উড়ন্ত প্রজাপতিদের এক ধমকে থামিয়ে দিলেন তাসফি ভাইয়া। হালকা চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,

“পেঙ্গুইনের মতো এতো লাফাস কেন? বেয়াদব! সারাদিন নেচে নেচে না বেড়ালে শান্তি পাস না? আমার কোলে ওঠার জন্য হাত পা ভাঙার প্ল্যান করছিলি?”

.
.
চলবে…..