তুমি যে আমার পর্ব-০৩

0
846

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_3

শাওনকে ট্রিটমেন্ট করছে যে ডাক্তার তিনি তূর্য দের পরিচিত। আগেও ওদের কারো জখম হলে উনি চিকিৎসা করেছে। তাকে ডেকে পাঠিয়েছে বর্ষাকে দেখার জন্য‌। বর্ষাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজে ওর পাশে বসে তাকিয়ে আছে। কেন তাকিয়ে আছে নিজেও জানে না। ডাক্তার এসেই বললো,

‘ তূর্য আমাকে ডেকেছো?’

ডাক্তার কে ও আঙ্কেল বলে ডাকে।ডাক্তার হোসেন এর দিকে তাকালো তূর্য। ডাক্তার হোসেন ভেতরে আসতে আসতে জিজ্ঞেস করছে। ভেতরে এসেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

বিছানায় লাল টকটকে লেহেঙ্গা পরিহিত একটা অল্প বয়সী মেয়ে শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে।
তূর্য তার দিকে তাকিয়ে তার হতভম্ব মুখটা দেখে বললো,

‘ আঙ্কেল দেখেন তো ওর কি হয়েছে?’

ডাঃ হোসেন তূর্যের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ এই মেয়ে কে তূর্য বাবা।’

তূর্য কিছু বললো না। বর্ষার পাশে থেকে উঠে দাঁড়ালো। উওর না পেয়ে আর জিজ্ঞেস করার সাহস করলো না। তূর্যেকে অনেক দিন থেকেই চিনে আর ছেলের মতো ভালোবাসে।তাই কেউ ওকে কিছু জিজ্ঞেস করতে না পারলেও তিনি করতে পারেন কিন্তু যেটা বলে না তা আর দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করার সাহস করে না। কারণ তিনি এই ছেলেটাকে যেমন ভালোবাসে তেমনি ভয় পায়।

ডাঃ হোসেন বসে বর্ষাকে দেখে বললো,’ খুব ভয় পেয়েছে আর খুব ক্ষুধার্ত মনে হয় দুই দিন কিছু খায়নি তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে।’

তূর্য বললো, ‘ ওর পায়েও আঘাত আছে।’

ডাঃ হোসেন পায়ের কাছে গিয়ে দেখলো জখম হয়ে আছে। ভাঙা কাঁচ ঢুকে আছে। উনি ব্যান্ডেজ করে দিলো। দুই ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরবে বললো। ডাঃ হোসেন উঠে তূর্য এর সামনে এসে বললো,

‘ জানিনা মেয়েটাকে কেন তুলে এনেছো? কিন্তু মেয়েটার ক্ষতি করো না। ওর জন্য আমার খুব চিন্তা হচ্ছে তুমি ওকে কোন উদ্দেশ্য ছাড়া তুলে আননি জানি।’

তূর্য বর্ষার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ডাক্তার হোসেন এর কথায় তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
‘ সরি ডাক্তার আঙ্কেল আপনার কথা আমার রাখা হবে না।’

মুখে বললো,’ শাওনের কি অবস্থা?’

‘ আগের থেকে বেটার। আরেকটা কথা এই মেয়ের ড্রেস চেঞ্জ করার ব্যবস্থা করো।এতো ভারি ড্রেস পরা থাকলে আরো অসুস্থ হবে।’

তূর্য চমকে বললো, ‘ হোয়াট এটা কি করে সম্ভব? কে করবে আপনি জানেন তো এখানে কোন মেয়ে নেই।’

‘ হুম জানি তাই তো তার ব্যবস্থা করতে বললাম।’

‘ মেয়ে আমি কোথায় পাব।আর বাইরে থেকে আনা ইম্পসিবল। কারণ এটা লুকানো কাজ।’

‘ তাহলে তুমি জানো কি করবে?’

‘ আমি কি করবো? আপনি ডাক্তার আপনি করেন?’

ডাঃ হোসেন তূর্যের কথা শুনে থমকে গিয়ে বললো,

‘ কি বলছো? আমি ডাক্তার আমার কাজ ট্রিটমেন্ট করা। জামা কাপড় বদলানো না।এসব আমি! কখনো না আসি।’

বলেই কোন রকম তূর্যের কাজ থেকে সরে এলো‌। বাইরে এসে বুকে ফূ দিলো কি অদ্ভুত কাজ।

তূর্য বোকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এখন এই চেঞ্জ টা করাবে কে।কপালে হাত দিয়ে আঙ্গুল চালাতে চালাতে বিছানায় বসে চিন্তা করতে লাগলো‌।
আর পরাবোই বা কি মেয়েদের পোশাক ও তো নাই।
একে সুস্থ রাখতেই হবে না হলে আমি আমার কাজ সম্পূর্ণ করবো কি করে?

তূর্য চোখ খুলে বর্ষার দিকে তাকালো। ইডিয়েট মেয়ে ঝামেলা না করে যদি খাবার খেয়ে নিতো তাহলো এসব সাফার করতে হতো আমাকে।
উঠে গিয়ে আলমারি খুলে নিজের সাদা শার্ট ও একটা প্যান্ট এনে বিছানায় রাখে। বাম কাত হয়ে আছে বর্ষার মাথার ফুলিয়ে বাধা চুল গুলো এলো মেলো হয়ে চোখে মুখে ছরিয়ে আছে। তা দেখে না চাইতেও তূর্য এগিয়ে এসে ওর গালে স্পর্শ করলো।নিজের হাত কাঁপছে অদ্ভুত হাত সরিয়ে তাকিয়ে আছে হাতের দিকে।
‘আমার হাত কাঁপছে কেন?’

অবাক হয়ে ভেবে আবার হাত দেয় অদ্ভুত এখনো কাঁপছে। তূর্য তারাতাড়ি চুল সরিয়ে সরে পরলো‌।এই মেয়েকে টার্চ করলে আমার ওমন লাগছে কেন? হাত কাঁপছে! পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেই তূর্য রুমাল এনে ওর মুখ মুছে দিলো। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। এমন অদ্ভুত অনুভূতি কখনো হয়নি।তাই এসবের কারণ তূর্য জানে না। তারপর লাইট অফ করে দিলো। জীবনের প্রথম কোন নারীর সাথে এমনটা করছে। নারীদের থেকে দূরে থাকাটাই পছন্দ করে তূর্য। কিন্তু কি অদ্ভুত এখন তার একজন নারীর এতো কাছে আসতে হচ্ছে। কাঁপা হাতে নিজের কাজ শেষ করে লাইট না জ্বালিয়ে ছাদে চলে এলো।ছাদে ফ্লোরেই সোজা হয়ে শুয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে র‌ইলো। চোখ চিকচিক করছে পানিতে তূর্য এর। তারাতাড়ি মুছে ফেললো।

এদিকে বর্ষার জ্ঞান ফিরেছে। এবং ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের মধ্যে আজেবাজে স্বপ্ন দেখছে।ওকে রাক্ষসের মতো কেউ মেরে ফেলছে। চাকু দিয়ে আঘাত করতে আসছে, আবার বন্দুকের গুলি ছুড়ছে। তা দেখে ও ভয়ে চেঁচিয়ে উঠছে। আর বাস্তবে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। গড়াগড়ি খেয়ে বর্ষা থপ করে অন্ধকারে বিছানায় থেকে নিচে পরে যায়।
আর জেগে উঠে মৃদু চিৎকার করে চোখ মেলে তাকায়। অন্ধকার রুম এটা কোথায় ও। ভয়ে ওর সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। অন্ধকারে কিছু চিনতে পারছে না।
ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছি মনে হয় এখনি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। চোখ বন্ধ করে দুইবার নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে কেশে উঠল পুরো শরীর ব্যাথা হয়ে গেছে। ওইভাবে ফ্লোরে পড়ে রইল। চোখ দিয়ে অনবরত জল পরছে। তাকানোর বৃথা চেষ্টা করলো অনেকক্ষণ। কিন্তু সফল হতে পারলো না।
ওইভাবে পড়ে রইলো। তারপর আর কিছু মনে নেই।
সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে পড়তে শরীর জ্বলে উঠলো। ব্যাথা টান টান হয়ে আছে। আস্তে আস্তে হাত পা নাড়াতে ব্যাথা দম বন্ধ হয়ে আসলো ওর।
রোদে তীব্র আলো বর্ষার চোখে পড়ছে।অনেক কষ্টে আস্তে আস্তে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো। কিন্তু তাকিয়ে থাকতে পারলো না। আবার চোখ বন্ধ করলো

ব্যাথা নিয়ে হাত উঠিয়ে কপালে হাত দিলাম। রোদের আলো কমিয়ে চোখ মেলে তাকালো। চোখ মেলে বর্ষা কোথায় আছে বুঝার চেষ্টা করছে।
একটা অচেনা রুমের ফ্লোরে পড়ে আছে। রুমটা ওর কাছে একদমি অচেনা। এটাতো ওর রুম না। আমি এখানে কি করছি?
নিজের গায়ের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলো। কাল তো অন্য একটা রুমে ছিলো আর সেখানে ও বিয়ের লেহেঙ্গা পরে ছিলো। এখন এটা কোথায়? আর এই ডোলা কার শার্ট ও প্যান্ট কি করে শরীর এ এলো। অদ্ভুত ভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন যেন লাগছে ওর।
পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো ব্যান্ডেজ করা। ও ব্যাথা নিয়ে উঠে বসলো। তখন কেউ একজন রুমে প্রবেশ করলো। বর্ষা ঘাড় বাঁকিয়ে সেদিকে তাকিয়ে একটা অতি সুদর্শন যুবক দেখতে পেলো। ব্রয়লারের মুরগির মতো ফর্সা একটা লোক তার গায়ে কালো টি- শার্ট ও কালো ট্রাইজার। যাতে তাকে অত্যধিক ফর্সা লাগছে। এক কানে রিং, গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখের মনি নীল, সিল্ক ব্রাউন রঙের চুল।ছেলেটার ওকে ফ্লোরে পরে থাকতে দেখে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে এগিয়ে আসছে ওর দিকে। বর্ষা ব্যাথায় জর্জরিত এখন তাই ক্রাশ খেলো না। না হলে এলো সুন্দর ছেলে দেখে ও ক্রাশ নামক বাঁশ খেয়ে ফেলতো।ও এখন ভাবছে কে এই ছেলে এখানে কি করছে? আমি বা কোথায় আছি।

ছেলেটা এগিয়ে এসে ওর সামনাসামনি দাঁড়িয়ে ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

‘হোয়াট আর ইউ ডুইং সিটিং ডাউন।’

বর্ষা তাকিয়ে থাকতে পারছে না ওর মাথা ব্যাথা করছে। চোখ বন্ধ করে আবার খুলে তূর্য এর দিকে গলা উঁচু করে তাকালো। কিছু বলতে যাবে কিন্তু বলতে পারছে না মাথা ব্যাথা করছে। মাথা পরে যাবে তখন চট করেই তূর্য নিচু হয়ে বর্ষার মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে পরার হাত থেকে আটকায়।
বর্ষা মাথা তূর্যের বুকের সাথে মিশে আছে। আর তূর্য একজন মেয়েকে নিজের বুকে টেনে নেওয়ায় ওর হার্টবিট বেড়ে গেছে। আরেকটা জিনিস খেয়াল করলো মেয়েটার শরীর অনেক গরম। জ্বর এসেছে বোধহয়।
বর্ষা বিরবির করে বলছে ওর বুকে থেকেই,

‘ আমাকে কতো জন কিডন্যাপ করলো আল্লাহ। কাল এক মাক্স পড়া বোবা লোক, আবার আজকে একটা সুন্দর হ্যান্ডসাম বয়। হায় আল্লাহ এসব কি হচ্ছে?’

তূর্য ওর কথা শুনছে কিন্তু কিছু বলছে না।ওর কেন জানি মেয়েটার বোকা কথা শুনে হাসি পাচ্ছে হাসি কন্ট্রোল করে বললো,

‘ এই মেয়ে তুমি ফ্লোরে বসে আছো কেন?’

বর্ষা মাথা তূর্যের বুকে হেলিয়ে রেখেই বিরবির করে বললো,’ আমার খিদে লেগেছে খুব। আর মাথা ব্যথা করছে।’

তূর্য আর প্রশ্ন করলো না বর্ষাকে কোলে তুলে বিছানায় এনে বসালো বালিশে হেলান দিয়ে। বর্ষা বিরবির করছে আর ও কিছু বলছে। তূর্য সেসব তোয়াক্কা না করে সার্ভেন্টকে কল করে খাবার নিয়ে আসতে বললো। কিছু ক্ষণের মধ্যে খাবার চলে এলো। বর্ষার সামনে খাবার দিয়ে তূর্য বললো,

‘ এই নাও খাও।’

বর্ষা এক নজর খাবারের দিকে তাকিয়ে বললো,’মাম্মখ খাইয়ে দাও শরীর মাথা ব্যাথা করছে। আমি একা খেতে পারবো না।’

তূর্য পরলো বিপদে। এই মেয়ে কি সব বলছে এখানে ওর মাম্মা কোথা থেকে এলো।

‘ তোমার মাম্মা কে কোথায় পাবো। নিজের হাতে খাও চুপচাপ।’
বিরক্ত হয়ে বলল।

বর্ষা মাথা তুলে তূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ মাম্মা নাই। হুম আমাকে তো আম্মা বাপির থেকে কিডন্যাপ করেছেন। তাহলে আপনি খাইয়ে দিন আমি একা খেতে পারব না।’

‘ হোয়াট?’

চিৎকার শুনে বর্ষা ভয় পেয়ে যায়।জ্বরের ঘোরে আবোলতাবোল বলছে। আবার ধমক শুনে চমকে উঠে। আবার নিজের পোশাকের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

‘ আমাকে এই ঢোলা বাজে ড্রেস কে পরিয়েছে?’

চোখ ছোট ছোট করে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো বর্ষা।
তূর্য কথাটা শুনে থতমত খেয়ে গেলো।

#চলবে