তুমি যে আমার পর্ব-০২

0
1128

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_2

কনে ছাড়া বর বসে আছে। মূহুর্তের মাঝে কি সব ঘটে গেল সব যেন সবার মাথার উপর দিয়ে গেলো।এতো পুলিশ পাহারা ছিলো তাদের মধ্যে থেকে ব্যারিস্টার নিবিড় আহমেদ এর একমাত্র মেয়েকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে গেছে কিডন্যাপার রা। এটা নিয়ে সবাই কানাঘোষা শুরু করে দিছে।

সবাই বলা বলি করছে। নিবিড় আহমেদের অনেক শত্রু আছে তার এই পেশার জন্য। তারাই এমনটা করেছে বলে সবাই আশংকা করেছে। নিবিড় আহমেদ চেয়ারের মাথা নিচু করে বসে আছে। তার পাশে দাড়িয়ে আছে তানিশা বেগম বর্ষার মা। তিনি কাঁদছে আর স্বামীকে বকে যাচ্ছে।

‘ আমার মেয়ের কিছু হলে আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না। অনেক বার বলেছি এসব কাজ ছেড়ে দাও। আমাদের কি কম আছে। এই পেশা ছারলে কি ভাতে মরবো। তুমি শুনোনি। আজ তোমার পেশার জন্য আমার মেয়েটাকে তাদের হাতে পরতে হলো। হাজার শত্রু বানিয়ে রেখেছো তুমি। আমার মেয়েকে এনে দাও আমি কিছু জানি না।’

নিবিড় আহমেদ কিছু বলছে না। কি বলবে সে কিছু বলার ভাষা তার নাই‌। চোখের সামনে থেকে তার একমাত্র আদরের মেয়েকে কেউ তুলে নিয়ে গেলো আর সে কিছু করতে পারলো না।

অভ্র হতভম্ব হয়ে বসে আছে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে কে এমন করে তুলে নিয়ে গেলো ও বুঝে উঠতে পারছে। লোকগুলো এসেই ওর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে রেখেছিল কিছু করতে পারেনি।

চিন্তিত হয়ে বসে আছে অভ্র তখন নিদ্রা এসে ওর পাশে বসে ওর হাতের উপর হাত রেখে বলল,

‘ তোর মনের মনে অবস্থা আমি বুঝতে পারছি অভ্র।’

অভ্র তাকালো নিদ্রার দিকে। নিদ্রা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো,

‘ তুই কাঁদছিস?’

অভ্র আচমকা নিদ্রাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।

অভ্র পেশায় একজন ডাক্তার। খুব শান্তশিষ্ট একজন মানুষ। এক দেখায় তার বর্ষাকে ভালো লেগেছিলো তারপর ভালোবাসা। পরিবারের থেকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ার অভ্র বর্ষার কথা বলে দেয় বাড়িতে। আর সবাই খোঁজ খবর নিয়ে বর্ষাকে পছন্দ করে আর বিয়ের ব্যবস্থা করে। নিদ্রা অভ্রের ফ্রেন্ড কলেজ লাইফ থেকে একসাথে লেখাপড়া করছে। পরে মেডিক্যালে ও একসাথে পরেছে। এখন দুজনেই ডাক্তার কিন্তু আলাদা হসপিটালে।
নিদ্রা আগে থেকেই তার এই ফ্রেন্ডকে মন প্রাণ দিয়ে রেখেছে কিন্তু কখনো বলেনি। বন্ধুত্ব নষ্ট হ‌ওয়ার জন্য। দূর থেকেই ভালোবেসে গেছে। মেয়ে হয়ে তার ভালোবাসার কথা নিজে থেকে বলা হয়ে উঠেনি। তাই মনে কোনে সুপ্ত ভালোবাসা চেপে রেখেছে কখনো প্রকাশ পায়নি।
পনেরো দিন আগে অভ্র জরুরী তলব করে ডেকে পাঠায় আর দেখা করে বলে।

‘ নিদ্রা তোকে একটা খবর দেওয়ার আছে। শুনলে তুই আনন্দে নেচে উঠবি।’

নিদ্রা কপাল কুঁচকে অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ তাই! তো বল কি এমন খুশির খবর নিয়ে এসেছিস তুই।’

অভ্র লাজুক হাসি দিয়ে বলে, ‘ আমি একজন কে ভালোবাসি। তুই তো সব সময় বলতি আমি কাউকে ভালোবাসলে যেন তোকে সবার আগে বলি। আর তাই সবার আগে তোকে জানালাম। আর তুই তো চাইতি আমি কাউকে ভালোবাসলে সব চেয়ে খুশি হবি তুই। আর আমাদের বিয়েতে সব দায়িত্ব তোর।’

নিদ্রা হতভম্ব হয়ে শুনছে। তাহলে কি অভ্র কাউকে ভালোবাসে।সেটাই ও বলছে। ও ভাবছে ও কাউকে ভালো বাসলে আমি খুশি হবো কিন্তু ও জানে না তো সে কেউটা আমি হলে খুশি হবো। অন্যকেউ হলে আমার বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাবে যন্ত্রণায়।
তাই হলো।

অভ্র খুশি মনে বলতে লাগলো,

‘ জানিস ওকে প্রথম দেখায়‌ই ভালোবেসে ফেলেছি। ওর ওই প্রানবন্ত হাসি যা আমাকে ওকে ভালো ভাসতে বাধ্য করেছে। টানা চোখ যে চোখে তাকিয়ে হারিয়ে গেছি।ওর জন্য বোধহয় আগে আমার কোন মেয়েকে মনে ধরে নি। কিন্তু ওকে এক পলক দেখেই ওর প্রেমে পরে গেছি। আমি ওকে খুব ভালোবাসে ফেলেছি। ‘

নিদ্রার চোখ ছলছল করে উঠেছে ভালোবাসার মানুষটির মুখে অন্য কাউকে নিয়ে এমন আবেগ কোন মেয়েই সহ্য করতে পারেনা। বুকটা ফেটে যায়। নিদ্রার ও যাচ্ছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছেনা।অভ্র নিদ্রার মুখ মলিন দেখে বলে,

‘ একি আমি ভেবেছিলাম এসব শুনে তুই খুশি হবি। কিন্তু হচ্ছে উল্টা তোকে খুশির জায়গায় দুঃখী লাগছে কেন? তুই কি খুশি হস নি।’

নিদ্রা হতচকিয়ে মলিন মুখে মিথ্যে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে বলে,

‘ আমি তো খুব খুশি ফাইনালি আমায় বোকা বন্ধুটাও প্রেমে পরেছে।কাউকে ভালোবেসেছে। আমি তো ভেবেছিলাম সারা জীবন তুই এইভাবেই থাকবি কাউকে ভালো ও বাসবি না আর আমার তোর বিয়ে খাওয়া হবে।’

অভ্র ওর কথা হাসে। নিদ্রা নিজের মনে কষ্ট লুকিয়ে রেখে বন্ধুর সামনে খুশি মুখে থাকা চেষ্টা করে আর জিজ্ঞেস করে,

‘ যাকে দেখে আমার বন্ধু এতো পাগল হয়েছে তার নাম কি? আর আমাকে দেখাবি না।’

‘ ওর নাম বর্ষা। আর এখন দেখাবো না বিয়েতে দেখবি।’

কারো চিৎকার শুনে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে নিদ্রা। চিৎকার করছে অভ্রর মা বকছে তার ছেলেকে তিনি বিয়েতে রাজি ছিলো কম। কারণ বর্ষা ছিলো খামখেয়ালি। আর বাচ্চা টাইপের উনি তাই বর্ষাকে পছন্দ করেন না । আর তার উপর বিয়েতে এসব দেখে তিনি চেঁচিয়ে বলছে,

‘ এজন্য এই মেয়েকে আমি আমার এই ছেলের জীবনে জড়াতে চাইনি। এখন কি হবে? মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে এখন বিয়েটা হবে কার সাথে। ব‌উ ছাড়া ছেলে নিয়ে বাড়ি গেলে কি মানসম্মত কিছু থাকবে। কতো আত্মীয় স্বজন বাসায় সবাই তো ব‌উ দেখার জন্য বসে আছে। মানসম্মত সব যাবে।’

অভ্ররে বাবা ও চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্ররের পরিবারের সবাই থমথমে মুখ করে কেউ দাঁড়িয়ে, বা কেউ বসে আছে।

নিদ্রা অভ্রকে শান্তনা দেওয়ায় চেষ্টা করছে। হঠাৎ অভ্ররের মা এগিয়ে এসে নিদ্রার হাত ধরে বলে উঠে,

‘ মা তুমি আমার ছেলেকে বিয়ে করবে।’

নিদ্রা কথাটা শুনেই থমকে যায়। অভ্র মায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কি সব বলছে মা।

বর্ষার বাবা পুলিশের সাথে কথা বলছে। মেয়েকে যে করছি হোক সুস্থ অবস্থায় চায় তিনি। কোন ক্ষতি হবে না তো অজানা ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। আল্লাহ কে ডাকছে মেয়েটা যেন ঠিক থাকে। নিজের দোষে মেয়ের কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।

একটু আগে যেখানে খুশির জোয়ার ছিলো সেখানে কিছুক্ষণের মধ্যেই সব কিছু এলো মেলো হয়ে গেলো। বর্ষার মা মেয়ের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পরেছে।

💮💮

বর্ষার সামনে দরজা খুলে একটা মাঝ বয়স্ক লোক এসে খাবার রাখলো বিছানায় উপর। তারপর চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। বর্ষা হা করে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে।এটা তো আমার বাসার ড্রাইভার। এক মাস যাবত তিনি আমাদের গাড়ি ড্রাইভ করেছে। আব্বু তাকে এনেছিলো। উনি এখানে কি করছে? এসবের পেছনে কি উনি ও জরিত নাকি? তাই হবে না হলে উনি এখানে কি করছে। লোকটা দরজার বাইরে পা রাখবে তখন বর্ষা তাকে চেঁচিয়ে ডেকে উঠলো,,

‘ এই যে দাঁড়ান আপনি।’

লোকটা ভয় পেয়ে দাড়িয়ে পরলো। বর্ষা বললো,

‘ আপনি আমার বাসার ড্রাইভার আন্কেল না?’

বর্ষা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। লোকটা পেছনে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না বলেই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে দরজা আটকে দিলো।
পেছনে থেকে বর্ষা চেঁচিয়ে ডেকে যাচ্ছে,

‘আরে আমার কথা শেষ হয় নি। দাড়ান দরজা আটকাচ্ছেন কেন?’

বলতে বলতে বর্ষা ছুটে দরজার কাছে চলে গেলো। আর দরজার উপর ধুমধাম হাত দিয়ে আঘাত করতে লাগলো। কিন্তু দরজা তো আটকানো শেষ তাই আঘাত করেও দরজা খুলতে পারলো না উল্টা নিজের হাতে ব্যাথা পেয়ে সরে এলো।
ভারি লেহেঙ্গা পরে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় বসে পরলো বর্ষা। খিদে পেয়েছে খুব ওর কিন্তু ও খাচ্ছে না। চঞ্চল বর্ষার ভয় পাচ্ছে। মাম্মা বাপির জন্য কান্না পাচ্ছে ওর। এই ড্রাইভার এই কিডন্যাপারের সাথে যুক্ত আছে ও সিউর।

এই রুমে কি আমাকে বন্দি হয়ে থাকতে হবে নাকি। একটা জানালাও নাই রুমে না আছে বেলকনি। বিচ্ছিরি রুম একটা। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিলো বর্ষা।আর একটু পর পর চিৎকার করে বলছে,

‘ প্লিজ ওপেন দা ডোর।’

এতোক্ষণ ওর এসব মজা লাগলেও এখন ভেতরে ভেতরে ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। ওই লোক গুলো তখন কিছু আমার মুখে দিয়ে অজ্ঞান করে এখানে এনেছে। আচ্ছা উনারা কি আমাকে মেরে ফেলবে নাকি।
বর্ষার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে। হাঁটু ভাঁজ করে কাঁদছে ওইভাবে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে।

দরজার কাছে থেকে যে লোকটা বর্ষাকে খাবার দিয়ে গেছে সেই লোকটা আরেকটা লোকটা বললো,

‘ বস মেয়েটাকে খাবার দিয়ে এসেছি।’

ভেতরে বসে আছে একটা লোক। যার দৃষ্টি ল্যাপটপের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ল্যাপটপের স্ক্রিনে বর্ষার ঘুমন্ত মুখটা দেখা যাচ্ছে।লেখিকা নন্দিনী নীলা বর্ষার রুমে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। তাই বর্ষা রুমে কি করছে না করছে সবই এই লোকটা দেখতে পাচ্ছে। স্কিনে দিকে চোখ রেখেই লোকটা হাতের ইশারায় দরজার কাছে লোকটাকে চলে যেতে ইশারা করলো। লোকটা সাথে সাথে চলে গেলো।

ল্যাপটপের সামনে বসে থাকা লোকটা তার ঠোঁটের কোনা বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললো,

‘দি হোন্টার হ্যাজ ব্রথ দি কেজ। নাও ইটস টাইম টু টেইম ইট।’

লোকটা ফোন বেজে উঠলো। হাত বাড়িয়ে ফোন কানে নিতেই ওপরপাশ থেকে একজন বলে উঠল,

‘ বস জাফর ইকবাল কে তুলে এনেছি তাড়াতাড়ি চলে আসেন।’

ফোন কানে থেকে নামিয়ে লোকটা তার কালো কোর্ট পরে মুখে মাক্স , চোখে সানগ্লাস দিয়ে বেরিয়ে আসে। গন্তব্য তার এখন যেখানে আনা হয়েছে জাফর ইকবাল কে সেখানে। জাফর ইকবাল বিপক্ষে দলের আরিয়ানের লোক।
ছেলেটা সেখানে এসে দেখলো জাফর ইকবাল কে হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে।বেত দিয়ে মারা হয়েছে অনেক নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে। ছেলেটা নিজের চোখের সানগ্লাস ও মাক্স খুলে ফেললো।
ছেলেটা এসে সামনে চেয়ার পেতে বসে খুব শান্ত গলায় বললো,’ জাফর যদি বাঁচতে চাস তাহলে বলে দে শাওন কোথায়?’

জাফর তাকিয়ে আছে ছিল ছেলেটার দিকে। এই হলো তূর্য চৌধুরীর দিকে যার ভয়ে সবাই কাঁপে। ওর সামনে বসা ছেলেটার নাম তূর্য। এইটুকু ছেলেটা এতো বড় দলের লিডার ভাবা যায়। কতোই বা বয়স হবে পঁচিশ কি ছাব্বিশ। ছেলেরাও যে এতো সুন্দর হয় তূর্য কে না দেখলে জানতো না জাফর। এতো সুন্দর একটা ছেলে। প্রথম দিন এই তূর্য কে দেখে বিষ্ময় খেয়েছিলো। তূর্য ঠোঁটে বাঁকা হাসি যা মেয়েদের পাগল করতে বাধ্য করবে। নীল চোখ, অত্যন্ত সাদা গায়ের রং। বাচ্চা টাইপের ছেলে কিনা লিডার। জাফরকে তূর্য নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,

‘ কি রে মেয়েদের মতো তাকিয়ে আছিস কেন? আমি মেয়ে না ছেলে তাই লোভনীয় দৃষ্টি আমার উপর দিয়ে নিজেকে গৈ প্রমাণ করিস না। পরে দেখিস তার আগে বল শাওন কোথায়?’

জাফর তূর্যের কথা শুনে অপমানে মাথা নিচু করে ফেলে। কথা বলছে না দেখে তূর্য রেগে বন্দুক দিয়ে মাথা বরাবর বাড়ি দিলো। জাফর আর্তনাদ করে উঠলো,

‘ বলবি নাকি মরবি!’
তূর্যের ক্রোধান্বিত কথা শুনে জাফরের পিলে চমকে উঠলো। নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।দম যায় যায়
অবস্থা তার।

ভাঙা গলায় খুব কষ্ট করে জাফর বললো, ‘ আমি কিছু জানি না সব বস জানে।’

তূর্য আরো রেগে বললো, ‘ বোকা পেয়েছিস আমাকে। তূর্য কে বোকা গল্প শুনাচ্ছিস? তুই আরিয়ানের সব খবর জানিস আমি ভালো করে জানি। তাই ভঙ্গিতা না করে ঠিকঠাক বল বেশি কথা বলা পছন্দ করি না।’

জাফর তাও অস্বীকার করছে। তূর্য আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। বিদ্যুৎ শক দেওয়ার ইশারা করলো লোকদের। আর জাফরকে বিদ্যুৎ শক দেওয়া শুরু হলো। আর সাথে তাও মরণাপন্ন চিৎকার যেন বিল্ডিং কেঁপে উঠছে।
শেষ বার তূর্য জিজ্ঞেস করলো এবার ও অস্বীকার করতেই তূর্য রাগ আর কন্ট্রোল করতে পারলো না রিভলবার বের করে দুটো গুলি করে দিলো জাফরের বুকে।
জাফরের রক্তে তূর্যের শরীর রাঙা হয়ে গেলো। মরার আগে জাফর বলে গেলো কোথায় আটকে রেখেছে শাওনকে। তূর্য জাফর এর মৃত দেহের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ শেষমেষ বললি কিন্তু মরে গিয়ে। আগে বললেও তোকে মরতেই হতো।’

সেই রাতেই শাওনকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যায় তূর্য। শাওন ওর বন্ধু ও এক মাত্র সঙ্গি এই সব কাজের। যে সব সময় পাশে থেকেছে ওর।
এর মধ্যে ভুলে যায় বর্ষার কথা।
শাওনকে নিয়ে ওর বাগান বাড়ি সেখানে আসে। সেখানে ওর চিকিৎসা শুরু হয় । ওর অবস্থা খারাপ। প্রচুর মার খেয়েছে বেচারা। এক দিন পর জ্ঞান ফিরেছে। এক রাত এক দিন কাটিয়ে এই বাসায় আসে শাওনকে নিয়ে পরদিন রাতে। পরিচিত ডাক্তার বাসায় নিয়ে এসেছে। ওর সুস্থ হতে কয়েকদিন লাগবে। এক রাত দিন নির্ঘুম কাটিয়েছে তূর্য ক্লান্ত। ওর ঘুম প্রয়োজন। রুমে এসেই জামা কাপড় ছেড়ে বাথরুমে চলে যায়। আর ঝর্না ছেড়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আয়নায় দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় ওর লাল টকটকে চোখ দুটো। ফর্সা মুখ ক্লান্তির ছাপ। আরিয়ানের লোকের সাথে ভালো মারামারি হয়েছে শরীর এর অনেক জায়গায় আঘাত আছে। হাতে, পিঠে ও বুকে আঘাতের স্থানে পানি পরতেই জ্বলে উঠছে।
নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় ওর ফর্সা শরীর এ দাগ গুলো স্পষ্ট হয়ে আছে। আঘাতের স্থানে কখনোই ওর মলম লাগানো হয় না আজ ও হলো না।

তূর্য তোয়াল পেঁচিয়ে ভেতরে এসে অফ হুয়াইট রঙের টি- শার্ট পরে নেয়। আর ব্লু পান্ট। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সিল্ক ব্রাউন চুল গুলো হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে নেয়। বিছানায় ঠাস করে শুতে যাবে তখন ল্যাপটপের দিকে খেয়াল করে। আর তার সামনে গিয়ে চমকে উঠে,

বর্ষা বিছানার অবস্থা নাজেহাল। কালকের খাবার গুলো ফ্লোরে পরে আছে। বিছানায় চাদর তোশক সব লন্ডভন্ড হয়ে আছে। আর বর্ষা নাই। ও ভয় পেয়ে যায় এই মেয়েটা গেলো কোথায়?
এক পাশে দেখা যাচ্ছে শুধু স্কিনে। মেয়েটা কি পালিয়ে গেলো।

‘ ও নো।এটা আমার শিকার একে পালাতে দেওয়া যাবে না। এতো সিকিউরিটি গার্ডের মধ্যে কিভাবে পালালো।’

রাগে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তূর্যের। সমস্ত ক্লান্তি পাশে ফেলে রেখে চাবি নিয়ে বর্ষার রুমে এলো দৌড়ে।
ওর রুমের দুই রুম পরেই বর্ষার রুম।
দরজা খুলে ভেতরে যেতেই ফ্লোরের এক পাশে বর্ষাকে পরে থাকতে দেখা গেলো। এই সাইটটা স্কিনে দেখা যায় নি।বর্ষাকে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তূর্য।

কাছে যেতেই বুঝতে পারলো ওর জ্ঞান নেই। বিছানার যে অবস্থা এখানে রাখা সম্ভব না। রক্তে ছাপ দেখা গেলো এটা কোথা থেকে হয়েছে খোঁজার জন্য পায়ের দিকে নজর গেলো।ভাঙা প্লেট এ পা দিয়ে কেটেছে। তূর্য বর্ষাকে পাঁজকোলে তুলে রুমে থেকে বেরিয়ে এলো। কোলে তুলে ওর চোখ গেলো বর্ষার মুখের দিকে। ধবধবে ফর্সা না বর্ষা উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের। মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বাজে অবস্থা হয়ে আছে। বিয়ের সাজ এখনো আছে। লিপস্টিক, চোখের আইসেট কাজল লেপ্টে আছে। ওরনা তো গায়েই নেই।এইভাবে একটা মেয়েকে ওরনা ছাড়া দেখে কিছু টা অস্বস্তি বোধ করলো তূর্য। তারাতাড়ি নিজের বিছানায় এনে শুইয়ে দিলো বর্ষাকে।

#চলবে

(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা কেমন লাগছে যথার্থ মন্তব্য করবেন।)