তুমি যে আমার পর্ব-১০

0
903

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_10

অভ্র প্রতিদিনের মত আজও রাত করে ফিরল। নিদ্রা বিছানায় হাটু উঁচু করে বসে ছিলো পরনে হলুদ শাড়ি। অভ্রের মা ওকে বলেছে শাড়ি পড়তে। শাড়ি পড়ে অস্বস্তি লাগলেও এটাই পরে। অভ্র একটু নজর পাওয়ার জন্য নিজেকে তেমন ভাবে সাজিয়ে রাখে যাতে অভ্রের ওর জন্যে ফিলিংস হয়।বিয়ের পরের দিন অভ্র ওভাবে চলে গিয়েছিলে সকাল-সকাল কাউকে কিছু না জানিয়ে। ও পরে এসে জানায় যে বর্ষাদের বাড়ি গেছিলো।
আমার ভালো লাগেনি কথাটা শুনে। বর্ষা মা অসুস্থ হয়েছে তার জন্য কেন অভ্রকেই ডাকতে হবে। দেশে কি আর ডাক্তার নাই? এটা ভাবা অবশ্য আমার নিচু মানসিকতার দিক কারণ অভ্র তো সেখানে কাজে গিয়েছিলো। একজন অসুস্থ মানুষ কে দেখতে তার চিকিৎসা করতে। কিন্তু আমার ভালো লাগেনি। এতে যে আবার বর্ষা ওর মনে চলে আসে। তার পরিবারের তার কথা আমি চাই অভ্রের সামনে বেশি আসুক।আমি কিছুতেই এবার অভ্র কে হারাতে পারবো না। তার জন্য অবশ্য আমি নিজের ছোট মন মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছি। আবার আমাকে জানিয়েছে ও বর্ষা কে খোঁজার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। নিজের ডাক্তারখানায় যতক্ষণ সময় দেওয়া লাগে তার বাইরে বাকি সময়টা বর্ষাকে নিয়ে পুলিশের কাছে দৌড় পারে। বর্ষার জন্য আমার কষ্ট লাগে। এভাবে একটা মেয়েকে কেউ কিডন্যাপ করে নিয়ে গেল। ওর কোন ক্ষতি করবে কিনা কে জানে? সত্যিই এই বিষয়গুলো একটা মেয়ের জন্য খুবই কষ্টকর। আর তার পরিবারও সবাই খুব কষ্টে আছে।সবাই চায় বর্ষা যেন ফিরে আসে। তাড়াতাড়ি ওকে যেন ফিরে পাওয়া যায়। বর্ষাকে যখন কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছিল। তখন আমার মনটা এটাই চেয়েছিল। কিন্তু অভ্রের সাথে বিয়ে হওয়ার পর আমারে এই চাওয়াটা পরিবর্তন হয়ে গেছে।আমি মন থেকে কিছুতেই চাইতে পারছি না বর্ষাকে পাওয়া যাক। আমি চাই ও যেখানেই আছে অসুস্থ থাক। যেখানে আছে সেখানেই ভাল থাক। কিন্তু ও যেন এভাবে সবার থেকে আড়ালে থাকে। ততদিন ওকে খুঁজে পাওয়া না যাক যতদিন অভ্র আমাকে না ভালোবাসে। অভ্রের মনে আমার জন্য ভালোবাসার সৃষ্টি হ‌ওয়া না পর্যন্ত।

আমার এই চাওয়াটা হয়তো খারাপ। নিজের স্বার্থের জন্য আমি একটা মেয়ের ক্ষতি চাইছি কিন্তু আমি বর্ষার ক্ষতি চাই না। ও যেখানে আছে সেখানে ওকে আল্লাহ সুস্থ রাখুক। বর্ষা এখন ফিরে আসলে অভ্র আর আমাকে ভালবাসবে না। আর আমি ওর মনে নিজের জন্য ভালোবাসা তৈরি করতে পারবোনা। অভ্রের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি এইটুকু স্বার্থপর হয়ে ও কষ্ট হচ্ছে না।

১১:১৫ অভ্র বাসায় আসলো। এসে অভ্র নিজের ঘামে ভেজা শার্টটা খুলে ফেলল তার আগে অবশ্য নিদ্রার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে ছিল এটা অবশ্য ওর সাজগোজ আর শাড়ি দেখি হয়েছে। কারণ কাল ওকে বলেছিল অভ্র,

‘কিরে তুই দেখি সবসময় সেজেগুজে শাড়ি পড়ে নতুন বউ হয়ে থাকিস। ব্যাপার কি তুই তো আগে শাড়ি পড়া খুব একটা পছন্দ করতি না।’

নিদ্রা কিছুটা থতমত খেয়ে বলে,’আমিতো নতুন ব‌উই।’

‘হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু আমরা দুজন তো এই বিয়েটা মানি না। তাহলে শুধু শুধু এসব নাটক করার কি দরকার?’

‘আমি তোকে কখন বললাম আমি বিয়েটা মানি না?’

কথাটা বলেই নিদ্রা ফেঁসে গেলো ভুলে কথাটা বলে ফেলেছে। অভ্র চোখ বড় করে নিদ্রার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,’কি বললি?’

নিদ্রা ঢোঁক গিলে বলল,’কিছু নাতো!’

অভ্র সন্দেহ চোখে তাকিয়ে ছিল নিদ্রা হেসে মজা করেছি বলেছে। তারপর অভ্র মেনেছে। সময় করে ওয়াশরুমে থেকে বেরিয়ে অভ্র সোফায় ঘুমানোর জন্য গেলো। এদিকে নিদ্রা অভ্রের জন্য না খেয়ে বসে আছে।
অভ্র কে শুতে দেখে নিদ্রা তাড়াতাড়ি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,

অভ্র কপাল কুঁচকে নিদ্রার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কি হয়েছে?’

‘ঘুমাচ্ছিস কেন আগেই। খাবি না?’

‘নারে আমি খুব ক্লান্ত এখন ঘুমাবো।’

‘খেয়েছিস কিছু?’

‘না’

‘না খেয়ে থাকবি নাকি পাগল হয়েছিস?’

‘আমার এখন খাওয়ার মত এনার্জি নাই আমি ঘুমাতে চাই।’

‘এত ক্লান্ত কি করছিস এত? রাত হল কেন আসতে? তোর ডিউটি তো নয় টায় শেষ হয়েছে! সেখান থেকে বাসায় আসতে পনেরো মিনিট লাগে।’

‘ওই থানায় গিয়েছিলাম। বর্ষার ইনফরমেশন কিছু পেয়েছে কিনা খবর নিতে।’

বর্ষা কথা শুনে নিদ্রার রাগ উঠে গেল।

‘এত সবের মাঝে আবার সেখানে যাওয়ার কি দরকার ছিল ? এত বর্ষা বর্ষা করে পাগল কেন হচ্ছিস? তোর পাগলামো আমার ভালো লাগছে না।তুই বেশি বেশি করছিস ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ওর ফ্যামিলি আছে।তোর কেন এত এসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে তাদের মেয়ে তারা দেখে নেবে। সারাক্ষণ বর্ষা বর্ষা করে দৌড়াদৌড়ি করেছিস ঠিক মতো খাচ্ছিস না আবার ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পরছিস‌। আমি যে তোর জন্য না খেয়ে বসে আছি সেসব খেয়াল করেছিস।একবার জিজ্ঞেস করেছিস আমি কিছু খেয়েছি কিনা। বর্ষা ছাড়া আর কারো দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন মনে করিস না।’

অভ্র হা করে নিদ্রার দিকে তাকিয়ে আছে।এভাবে নিদ্রা কথা বলছে ওর সাথে। বর্ষার নিয়ে ওসব বলায় খারাপ লাগলেও নিদ্রা ওর জন্য না খেয়ে আছে শুনে কিছু বললো না। এজন্য হয়তো রেগে এসব বলেছে মন থেকে না। নিদ্রা থামতেই অভ্র বললো,

‘ আচ্ছা যা খাবার নিয়ে আয়। আমি খুব সরি। আর আমার জন্য না খেয়ে থাকবি না।’

‘ আমার ইচ্ছে আমি থাকবো তোর কি?’

‘ প্লিজ ভাই যা ইচ্ছে কর। না খেয়ে থাকিস না।এতো রেগে যাস আমার হার্ট এ্যাটাক হয়ে যাবে। তোর ধানি লঙ্কা রুপ দেখে।’

নিদ্রা খাবার নিয়ে এলো গরম চোখে তাকিয়ে। দুজনে খেতে লাগলো।

‘ তুই আজ ও সেজেগুজে আছিস কেন?’

‘ আমার ইচ্ছা তাই। আচ্ছা আমাকে কেমন লাগছে বল না।’

‘ ভালোই।’

‘ শুধু ভালো।’

‘ তোর মতলব কি বলত?’

‘ আমার আবার কি মতলব থাকবে? এই শাড়িটা তোর মা দিছে।’

‘ ওহ।’

ছোট করে বলে আবার বললো।
‘ তোকে হলুদ পরী লাগছে।’

আমি চমকে তাকালাম। অভ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

খাওয়া শেষে ও গিয়ে সোফায় শুয়ে পরলো। আমি বিছানায় বসে থেকে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

‘ কি রে আজ কি ঘুমাবি না এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?’

‘ তোর সোফায় ঘুমাতে কষ্ট হয় অনেক তাই না অভ্র।’

‘ তা তো একটু হয়‌ই ।’

‘ বিছানায় ঘুমা আমি সোফায় ঘুমাই।’

‘ পাগল নাকি‌। তোর ও কষ্ট হবে। আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেবো।’

‘দুজনের ই কষ্ট হবে। তাহলে আয় দুজনে বিছানায় ঘুমাই। তাহলে আর কারো কষ্ট হবে না।’

অভ্র বিস্মিত হয়ে তাকালো।

.

তূর্য বর্ষার কাঁধ শক্ত করে ধরে কান্না থামাতে বলছে। বর্ষা চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে কাঁদতে কাঁদতে।
তূর্য ওর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলছে,

‘ স্টপ ক্রাইং।’

বর্ষা থামছে না ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আর তূর্য কে নিজের থেকে সরানোর চেষ্টা করছে।এই লোকটাকে ঘৃণা লাগছে ওর। রাতের কথা মনে পরলেই ভয়ে গুটিয়ে যায়।
তূর্য ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করেও পারছেনা। ধমক দিয়েও কাজ হচ্ছে না। এবার ও একটা কাজ করে বসলো। এ ছাড়া এই ইডিয়েট মেয়ের কান্না থামানোর ইম্পসিবল। তূর্য বর্ষার ওষ্ঠে সাথে নিজের ওষ্ঠ মিলিয়ে দেয়। বর্ষা এটা দেখে আরো রেগে যায়। কিল ঘুষি দিতে লাগে। বর্ষার চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে।

#চলবে……..