তুমি যে আমার পর্ব-১১+১২

0
659

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_11

বর্ষা পাথর হয়ে বসে আছে। নড়তে পারছে না! কথা বলতে পারছনা! ওর ভাষা যেনো হারিয়ে গেছে। ও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
এই কিডনাপার ওকে কি বলে গেল? ও কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবে বুঝতে পারছে না। এমন সময় এমন কথা শোনার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিল না। প্রস্তুত থাকার কথাও না।ও যে পরিস্থিতিতে আছে যেমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে সেখানে এমন কিছু অসম্ভব।লোকটার দুর্দান্ত চালাক। লোকটা কি ভেবেছে বর্ষা বোকা। লোকটা তাকে যেন তেন ভাবে যা কিছু একটা বলবে আর বর্ষা বোকার মত তার কথা বিশ্বাস করে নেবে। ইম্পসিবল। আমি ছেলেমানুষি হতে পারে, খামখেয়ালি হতে পারি, কিন্তু অতটা বোকা না। লোকটার মতলব আমি খুব ভালোমতো বুঝতে পারছি।লোকটা আমাকে এইসব বলে আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে। ভালোবাসার জালে ফাসাবে। নিজের ওই সুন্দর চেহারা দেখিয়ে আমাকে ফাসাবে আমার আগেও কথা শত মেয়েকে না ফাঁসিয়েছে আল্লাহ জানে। আগে ভেবেছিলাম লোকটার বোদহয় মেয়েদের দিকে খারাপ নজর নেই। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার ধারণা ভুল। কত খারাপ লোকটা। সেদিন মাঝরাতে ওইসব করে আবার আজকে এইভাবে আমাকে জোর করে আমার কাছে এলো‌। বলতে বলতে বর্ষা নিজের হাত নিজের ঠোঁট চেপে ধরল। ওর এখন এই ঠোট কেটে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে অসভ্য ফাজিল লোক। লোকটাকে খুন করতে ইচ্ছে করছে।গেঞ্জি উপরে তুলে ঠোট ঘষতে লাগলো। অসভ্য লোকটা ছোঁয়া মুছে ফেলতে চাইছে। ঠোট জ্বলছে তাই বাধ্য হয়েই সরাতে হলো হাত।

কিডন্যাপ করে আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। আমাকে মাম্মি বাপির কাছ থেকে কিডন্যাপ করে এখানে এনে বন্দি করে রেখেছে। এখন সেই আমাকে এসে বলছে,

‘আমার মনে হচ্ছে আমি তোমার উপর ভুলবশত দুর্বল হয়ে পড়েছি। জানিনা কি হচ্ছে যেখানে যাচ্ছি সেখানেই তোমার এই মুখটা ভেসে উঠছে। তোমাকে মিস করছি। তোমার চিন্তা মস্তিষ্ক থেকে বের হচ্ছে না। যুদ্ধ ময়দানে দাঁড়িয়েও কিনা আমি তোমার কথা ভাবছি। What is happening to me. Why are you thinking of me? Tell me why?’

লোকটা আমার দুগালে নিজের দুই হাত চেপে ধরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলছে। আমি কঠিন দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। নিজের হাত সুযোগ বুঝে লোকটা কে মারার জন্য উদ্যত হচ্ছিলাম। লোকটা খুব চালাক সাথে সাথে আমার হাত ধরে নেয় খপ করে। আর নিজের একহাতে আমার দুই হাত মোচড় দিয়ে ধরে।আমি আহ্ করে উঠি।লোকটা আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে বলে,

‘দুটো ভালো কথা বলেছি বলে গায়ে হাত দেওয়ার সাহস দেখাবে না। ইডিয়েট গার্ল।’

বলে লোকটা আমার হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।

আর নিজের বুকের কাছে শার্টের বোতাম খুলে উন্মুক্ত করে দিলো বুক। আর ফর্সা স্থানে লাল হ‌ওয়া দেখালো যা আমি একটু আগে খামচি দিয়ে করেছি। কপালের রগ ফুলিয়ে রেগে নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো লোকটা। তারপর আমার কাছে এসে হাত উঠালো থাপ্পর দেওয়ার জন্য। আমি বাম কাত হয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম ভয়ে। কিন্তু গালের উপর কোন আক্রমণ না পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ মেলে দেখলাম হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিচে নামিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি তাকাতেই গম্ভীর গলায় বলল,

‘ আজকে মাফ করলাম নেক্সট টাইম আমার গায়ে আঘাত করার চেষ্টা করলে হাত কেটে রেখে দেবো।’

বলেই চলে গেলো।
তখন থেকে আমি এমন পাথর হয়ে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর লোকটা এসে মুড়ির বয়াম আরেকটা চিনির কৌটা রেখে গেল। আর আমার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,

‘ তোমার খাবার খেয়ে নিও!’

বলে শয়তানি হাসি দিয়ে লোকটা চলে যাচ্ছিল।আমি সাথে সাথে পেছন থেকে বলে উঠলাম,

‘ আমি এসব খেতে পারব না আমাকে ভালো খাবার দিন। ‘

‘এর থেকে ভালো খাবার তোমার কপালে আর জুটবেনা বর্ষামনি।’
বলেই বাঁকা হাসলো।

‘এই মনিটা আবার কে? আমার নামে কোথাও মনি টনি নাই আমার নাম শুধু বর্ষা।’

‘আমি কি বলছি নাকি তোমার নামে মনি আছে এটা তো আমি এড করে নিয়েছি।’

‘আপনি আমার নামে এসব এড করবেন কেন? আমার নাম শুধু বর্ষা বলতে চাইলে বর্ষা বলবেন না হলে কিছুই বলার দরকার নাই!’

লোকটা কিছুই বলল না। দরজাটা আমার মুখের উপর ঠাস করে বন্ধ করে চলে গেল। তখন আমি বাসায় আরেকজনকে দেখলাম। যাকে দেখে আমার চোখ গুলো রসগোল্লার মতো বড় হয়ে গেল।
এই লোকটা এখানে কি করছে?

.

‘আমি ছিলাম না। তুই একা সব সামলালি। তোর এতো বড় কাজে আমি পাশে থাকতে পারলাম না। আমার ভালো লাগছে না।’

বলেই শাওন মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে ফেলল।

‘এখনো বাচ্চাদের মত করিস নাতো শাওন! আমি তোর সাথে সিরিয়াস কথা বলতেছি।’

‘আমি তো সিরিয়াস কথাই বলছি আরিয়ান আমাকে পেছন থেকে আঘাত না করলে কি আমার সাথে পারতো না কি? একবারওকে কাছে পায়। আমাকে পেছন থেকে আঘাত করা শাস্তি আমি ওকে দেবোই।’

‘আরিয়ানের যা ব্যবস্থা করা পরে করা যাবে!’

‘তো এখন কি সিরিয়াস কথা বলতে চাইছিস?’

‘ আমার মনে হচ্ছে আমি এসব করতে পারবো না আমার হয়ে তুই কাজটা কর প্লিজ।’

‘বর্ষা ব্যাপারে কথা বলছিস?’

তূর্য এবার রেগে শাওন এর বাহুতে ঘুসি দিতে লাগল। শাওন ব্যথিত মুখ করে বলল,

‘ ভাই মারিস না কেবল সুস্থ হয়েছি। তোর মার খেয়ে তো আবার আমাকে বিছানায় পড়তে হবে। ‘

‘ আজ আমি তোকে আধমরা করে বিছানায় ফেলবো। কখন থেকে এক কথা বলে যাচ্ছি আর তুই কিনা না বুঝার ভান করছিস।’

‘ আচ্ছা সরি ভাই। এবার থাম আর বল কি বলেছিলি বর্ষা কে নিয়ে।’

তূর্য থেমে গেলো আর বললো, ‘ যা ছেড়ে দিলাম। এবার আমার সাথে মজা করলে তোকে আমি…

‘ আর করছি না। এবার বল‌।’

বর্ষাকে কিডন্যাপ করা থেকে সব বললো শাওন কে তূর্য। বর্ষাকে কিডন্যাপ করার কথা ছিলো শাওন এর কিন্তু সেটা তূর্য কে করতে হয়েছে। শাওন আহত হ‌ওয়ায়। সেই দিন শাওন আরিয়ানের সাথে মারামারীতে লিপ্ত হয়। আরিয়ান শাওনকে পেছনে থেকে আঘাত করে। আরিয়ান বিপক্ষে দলের বস।
কালো জগতের অনেক নাম ডাক ওর কিন্তু তূর্য এর থেকে কম। এজন্য আরিয়ান তূর্য কে মারতে চায়। তূর্য ওর বড় শত্রু। আর তূর্য বন্ধু শাওন ও তাই‌ তূর্যের হয়ে শাওন গেছিল আর বল স্বরুপ এসব হয়েছে।

শাওন সব শুনে বলছে, ‘ আমাদের তো এটাই ভাবা ছিলো‌। কিন্তু আমার মনে হয় কাজটা করা অপরাধ হবে। বাবার ভুলে মেয়েটাকে এতো বড় শাস্তি দেওয়াটা অন্যায় এখানে ওর তো কোন দোষ নাই।’

‘ তুই ওই মেয়ের হয়ে কথা বলছিস কেন? আর শোন শাস্তি দিতে হলে বর্ষাকেই ব্যবহার করতে হবে। কারণ ওই নিবিড় আহমেদ এর প্রাণ ভোমড়া ওনার মেয়ে। ওনার মেয়ের ক্ষতি হলে উনি সবথেকে বড় শাস্তি পাবে। যখন জানতে পারবে উনার ভুলে উনার মেয়ের সর্বনাশ হয়েছে তখনই এমনিতেই উনি ভেঙ্গে পড়বে। আর যেটা আমি চেয়েছিলাম সেটাই হবে।’

‘ তাহলে প্ল্যান মত কাজ শুরু করে দে।’

‘আমার হয়ে তুই কাজটা কর প্লিজ। আমি এসব করতে পারছিনা। ‘

‘হোয়াট!’

শাওন এক প্রকার চেঁচিয়ে উঠলো।

‘আমি অসম্ভব ভাই! তোর জন্য জান দিয়ে দেবো। সব করতে রাজি আছি। কিন্তু এটা আমাকে করতে বলিস না। আমি পারবো না।’

#চলবে

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#part_12

নিদ্রা আজ অনেকদিন পর হসপিটাল এসেছে। এক সপ্তাহ পর হসপিটাল এসেছে।স্টাফ রা ওকে দেখে খুশিতে ওর কাছে এসে কনগ্র্যাচুলেশন করতে লাগলো। বিয়ের খবরটা কারো কাছেই গোপন নেই অবশ্য নিদ্রা নিজেও গোপন করে নি। ওর সহকারি যে ডক্টর শাম্মি আফরোজা দুজন একসাথে কাজ করে বেস্ট ফ্রেন্ড বলা চলে দুজনকে। নিদ্রার কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,,

‘বলেছিলাম না ভাগ্য দুই সেকেন্ডে পরিবর্তন হতে পারে। আমার কথা মিলল তো তুমি তো বিয়েতে যেতে চেয়েছিলে না। এখন গিয়ে অবশ্যই আর আফসোস হচ্ছে না।বরংচ না গেলে তোমার আরো আফসোস হতো ভালবাসার মানুষকে ফিরে পাওয়ার শেষ আশাটুকু তুমি আর পেতে না।’

কথাটা বলে নিদ্রাকে ছেড়ে ওর মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো শাম্মি। নিদ্রা বলল,

‘থ্যাংক ইউ শাম্মি আমাকে ওইভাবে বুঝিয়ে পাঠানোর জন্য। অভ্রকে পাওয়ার পেছনে তোমার অবদান আছে অনেক। তোমার মতো একজন বোনের মত বেস্ট ফ্রেন্ড পাওয়া আমার ভাগ্যের ব্যাপার। আমি সত্যি খুব লাকি।’

‘আমিও খুব লাকি তোমার মত বোন পেয়ে। তুমি খুব ভালো মেয়ে নিদ্রা আর তোমার সাথে অন্যায় আল্লাহ করবে না। তুমি জীবনে অনেক কষ্ট করেছ আর পেয়েছো। সেসবের জন্য তোমার ভবিষ্যতে অবশ্যই এমন ভালো কিছু লেখা ছিল।’

নিদ্রা মুখটা মলিন করে বলল,’আমি শুধু অভ্র কে স্বামী হিসেবে পেয়েছি। কিন্তু ওর ভালোবাসা এখনো পায়নি। ও বর্ষা কে খুব ভালোবাসে এখনো। ওর জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়।’

আমার কথা শুনে শাম্মি রেগে গেলো,

‘কি তোমাকে ডিভোর্স দিতে চায়? ডিভোর্স কি হাতের মোয়া নাকি?বললেই হলো নাকি।তুমি একদম ডিভোর্স দিবে না যা বলার বলুক বিয়ে করাটা যত সহজ বিয়ে ভাঙ্গা টা এত সোজা না।দুজনের সম্মতি ছাড়া ডিভোর্স হবে না। আর এত তাড়াতাড়ি হবে না কমপক্ষে 3 মাস একসাথে থাকতেই হবে।’

‘হুম।’

‘একবার কাছে পেয়েছো ধরে রাখা জন্য যা করতে হয় করো। মেয়েরা চাইলে একজন ছেলেকে তার প্রেমে ফেলতে পারে। তুমি কি পারবে না? এখন তুমি একজন বাইরের মেয়ে না তুমি একজন স্ত্রী নিজের স্বামীকে নিজের কাছে রাখার জন্য নিজের ভালোবাসা ব্যবহার করো ভালোবাসার পারে সবকিছু করতে।’

‘আমার শাশুড়ি মা মানে অভ্রর মা আমার পাশে আছে। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে ও কি আমাকে ভালবাসবে? আমি কি পারব?’

‘ পারবে অবশ্যই।’

লাঞ্চের টাইমে সবাইকে নিয়ে পাশের রেস্টুরেন্ট যেতেই হলো নিদ্রাকে। সাথে আছে ডাঃ শাম্মি, ডাঃ জাব্বর ভাই, ও ডাঃ রিতাকে। রিতা খুব একটা নিদ্রাকে পছন্দ করত না। কারণ জাব্বর নিদ্রাকে লাইক করতো। আর রিতা জাব্বর কে পছন্দ করে‌।এজন্য দেখতে পারতোনা কিন্তু এখন যেহেতু নিদ্রার বিয়ে হয়ে গেছে তাই তার সাথে ভাব করার চেষ্টা করছে। রেস্টুরেন্টে সবাইকে বিয়ের ট্রিট দিতে হচ্ছে কারণ বিয়েতে কেউ যেতে পারেনি। নিদ্রা হাসিমুখে সবার সাথে রেস্টুরেন্টে বসে আছে। তখন রিতা ফট করে বলে উঠলো,

‘নিদ্রা তা তোমার হাজব্যান্ড কে ডাকো না এখানে। আমরা একটু পরিচিত হই। আমরা তো তাকে দেখিই
নাই। একটু দেখব আর পরিচিত হবো।’

রিতার কথা শুনে নিদ্রা পরলো বিপাকে।এখন অভ্রকে এখানে কিভাবে ডাকবে। ওরা তো হাজবেন্ড এর সাথে পরিচিত হতে চাইছে। আর অভ্রকে আমি কি করে হাজবেন্ড হিসেবে পরিচিত করাতে ডাকবো। ও জানে আমি ওকে মেনে নেই নি। এখন ডাকলে কেমন দেখা যায়। নিদ্রা চিন্তিত মুখে শাম্মির দিকে তাকালো। শাম্মি ওর চিন্তার কারণ বুঝতে পারছে।

কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিতা বলে উঠে, ‘ কি ব্যাপার নিদ্রা। তোমাকে চিন্তিত লাগছে কেন? হাজবেন্ডের সাথে পরিচিত হতে চাই বলায় নাকি। তুমি কি তোমার হাজবেন্ড এর সাথে আমাদের পরিচিতি করাতে চাও না নাকি?’

শাম্মি বললো, ‘ এসব কি কথা রিতা তা কেন চাইবে? অবশ্য‌ই পরিচয় করাবে। কিন্তু তুমি হয়তো ভুলে গেছি সেও আমাদের মতো একজন ডাক্তার তাই বললেই আসা যায় না।’

‘ তুমি বলছো কেন আমি তো নিদ্রাকে বলেছি। আর ডাক্তার তাই কি স্ত্রীর জন্য একটু আসতে পারবে না।’

বলেই মুখ বেকালো।

এবার রিতার সাথে জাব্বর ও বলতে লাগলো অভ্রকে আশার জন্য। সবার জরাজরিতে নিদ্রা ফোন হাতে তুলে নিলো চিন্তিত মুখে। রিতা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। নিদ্রা রিতার দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসি দিয়ে নাম্বারে ডায়াল করে।

‘ হ্যালো অভ্র।’

‘হ্যাঁ নিদ্রা কিছু বলবি নাকি? এই সময় কল করেছিস?’

নিদ্রা নিজে শুকনো ঠোঁট জিব্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে বলে, ‘ওই আসলে বলছিলাম কি তুই কি ফ্রী আছিস?’

‘ফ্রী! কেন বলতো?’

‘না মানে একটু আসতে বলতাম তুই কি একটু আমার সাথে দেখা করতে পারবি এখন।’

‘এখন! কেন কোন দরকার নাকি? তুই ঠিক আছিস?’

‘আমি ঠিক আছে তুই প্লিজ একটু আয়।’

‘ কোথায়?’

নিদ্রা কিছু বলার আগেই রিতা ফোনটা নিয়ে গেল টান মেরে। নিদ্রা উঠে দাঁড়ালো,,

রিতা হাসিমুখে ফোন নিয়ে বলতে লাগলো,

‘এইযে দুলা ভাই আমরা আপনার শালিকা তাই এখন আপনার সাথে আমরা দেখা করতে চাই তাড়াতাড়ি চলে আসুন রেস্টুরেন্টে। বিয়ের সময় তো না বলেই বিয়ে করে নিয়েছেন এখন আমাদের ট্রিট দিতে হবে।’

রেস্টুরেন্টের ঠিকানা দিয়ে রিতা ফোন কেটে দিল। রিতার এমন অসভ্যের মতো কাজ দেখে শাম্মি এক ধমক দিয়ে ফোন নিয়ে নিদ্রাকে দিলো। নিদ্রার হাতে ফোন দিতেই। ফোন বেজে উঠল, অভ্র ফোন করেছে। নিদ্রা ভয়ে ভয়ে ফোনটা কানে নিল।

‘হ্যালো নিদ্রা নিদ্রা তুই নাকি কে ফোন ধরেছিল আর কি সব বলল?’

নিদ্রা সবার মাঝখান থেকে সরে এসে অভ্র কে বোঝানোর চেষ্টা করল। অভ্র বলল আসছে আমি।
নিদ্রা হাফ ছেড়ে বাঁচলো অভ্রের কথা শুনে। সবার সাথে এসে বসলো হাসিমুখে।

‘সবার আড়ালে কি কথা বললে গো নিদ্রা?’

রিতার কথায় নিদ্রা কিছু বললো না। শুধু বললো অভ্র আসছে।

খাওয়া-দাওয়া শেষ হ‌ওয়ার পর অভ্র আসলো। অভ্রের আসতে আধা ঘন্টা লাগল। ইমারজেন্সি কোন পেশেন্ট ছিলনা এজন্য তাড়াতাড়ি আসতে পেরেছে‌। সবার সাথে ভাল ব্যবহারই করল অভ্র। নিদ্রা তাতে খুবই খুশি হলো। রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে অভ্র বললো,

‘ তিনটা তো বেজে গেছে এখন যেতে পারবি।’

‘আমার তো পাঁচটা পর্যন্ত থাকতে হবে!’

‘বলে দেখতো যাওয়া যাবে কিনা। তাহলে একসাথে বাসায় ফিরতাম এই আরকি!’

‘একসাথে? তুই কি আর হসপিটালের যাবিনা।’

‘না একেবারে চলে এসেছি। এখন বাসায় যাব।’

‘আচ্ছা চল দেখি। ‘

হসপিটাল থেকে ছুটি নিতে পারল নিদ্রা। দু’জনে একসাথে বেরিয়ে পড়লো। বাসার উদ্দেশ্যে।

.

এই শাওন এখানে কি করছে? উনি তো সেই লোকটা। লাস্ট কয়েক দিন উনি আমাদের ফলো করেছে। যেখানে যেতাম ওনাকেই দেখতে পেতাম উনাকে।
যেভাবেই হোক উনি আমাদের সামনে আসতোই।আরে এসেই হেসে কথা বলতো আমার ফ্রেন্ডদের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করতো।আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের সবার কথা ছিল উনি আমাকে পছন্দ করেন। পরে আমাদের সবার আশা মিথ্যে করে দিয়ে উনি তিশা কে প্রপোজ করে বসে।

সে লোকটা এখানে কি করছে? কিডন্যাপার লোকটার সাথে শাওন এর কি সম্পর্ক? তিশার সাথে কথা বলতে পারলে ভালো হতো। এই শাওন কে আমার প্রথম থেকেই ভালো লাগতো না। সন্দেহ লাগতো। কিন্তু পরে যখন তিশা কে প্রপোজ করল তখন সন্দেহটা চলে গেছিল। সবাই ভেবেছি এজন্য হয়তো ফলো করতো‌। তিশা পছন্দ করে বিধায়। এখন তো মনে হচ্ছে আমাকে নজরে নজরে রাখার জন্য ফলো করতো।
এসব কি হচ্ছে পাগল হয়ে যাবে আমি। দরজার কাছে এসে আমি শুয়ে পরলাম। নিচ দিয়ে উঁকি দেবো তাই। আমি মাথা ফ্লোরের সাথে লাগিয়ে তাকিয়ে আছি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না। তখন খট করে দরজা খুলে গেল আমি ছিটকে উঠলাম। আমি ফ্লোরে শুইয়ে থেকেই উপরে তাকালাম আমার দিকে বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে লোকটা। আমি ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি। এই লোকটাকে এখন‌ই আসতে হলো।

#চলবে