তুমি যে আমার পর্ব-১৩+১৪

0
672

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_13

‘এই মেয়ে তুমি এখানে শুয়ে কি করছ?’

কপালে সুক্ষ্য চিন্তার ভাঁজ ফেলে তূর্য আবার বলল,

‘আই তোমার মতলব কি বলতো? পালানোর ফন্দি আঁকছো নাকি?’

বর্ষা ঢোক গিলে তূর্য এর দিকে তাকিয়ে আছে।

‘কি পালানোর চেষ্টা করব? তা তো আমি সবসময়ই করি। পারলে এখনো আমি এখানে থাকতাম নাকি কবেই চলে যেতাম।’

‘কি যেন বলেছিলে তোমার বাপ্পি তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে তাই না!’

বর্ষা উঠতে চাইছে কিন্তু তূর্য এমন ওর দিকে ঝুঁকে কথা বলছে দেখে উঠতে পারছে না।

হুট করে তূর্য হাত বাড়িয়ে বর্ষার এক হাত ধরে টান মেরে শোয়া থেকে তুলে ফেলল। বর্ষা আচমকা টানে ভয় পেয়ে তূর্য এর শার্ট খামছে ধরে।

‘এভাবে কেউ টেনে তুলে।’

রেগে বললো বর্ষা আর তূর্য এর থেকে সরার চেষ্টা করল এখন ওর তূর্যের আশেপাশে থাকতে ভয় হয়।সেই দিনের পর এই লোকটা ও কাছে দেখলে ভয় পায়। তূর্য ওর হাত বর্ষার কোমর জড়িয়ে ধরে আছে। বর্ষার ছটফটে বুঝতে পেরে তূর্য বর্ষাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললো,

‘কেউ তুলে কিনা জানিনা আমি তুলি।’

বর্ষা তূর্য এর কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো, ‘ আপনার মতো খারাপ লোক এইসবি করবে উফ হাত ব্যথা করছে।’

বলে বর্ষা নিজের হাতে ডলতে লাগলো। তূর্য ভেতরে এসে বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে বর্ষাকে কিছু বলবে বর্ষা নিজে বলে ফেললো,

‘ শাওন আপনার এখানে কি করছে? উনিও আপনার লোক তাইনা?’

তূর্য বর্ষার কথায় অবাক হয়ে বলে, ‘ ইউ শাওন কে দেখলে কি করে?’

‘ দেখেছি! বলেন? ওই শাওন, আর আমাদের বাসার ড্রাইভার এরা সবাই আপনার লোক।’

‘হ্যাঁ আমার লোক।’

বর্ষা সোজা তূর্য এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আর বললো, ‘ আপনি আগে থেকেই আমার পেছনে এদের লাগিয়ে দিয়েছিলেন। আমাকে ফলো করার জন্য।’

তূর্য কিছু বললো না। বিরক্ত কর মুখ তাকিয়ে র‌ইলো বর্ষার দিকে।

‘কথা বলছেন না কেন? সত্যি করে বলেন না কেন তুলে এনেছেন আমাকে?’

তূর্য বর্ষার দিকে হাত বাড়িয়ে ওর হাত টেনে পাশে বসিয়ে দিলো বর্ষা হাত সরানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।

‘হাত ছাড়ুন। টাচ করবেন না আমাকে। ফাজিল লোক।’

তূর্য হাত ছাড়লো না। জোর করে ওর পাশে বসিয়ে দিয়ে বলল,

‘ হাত ধরায় এত প্রবলেম। আরো কত জায়গায় টাচ করব তখন কি করবে বর্ষা মনি।

বলেই তূর্য মুখ বাঁকা করে হাসলো। বর্ষা নিজের বাম হাত ছাড়ানোর জন্য ডান হাত দিয়ে তূর্য এর হাত সরানোর চেষ্টা করতেছে ছটফট করতেছে।

‘আমার হাত ছারুন। অসভ্য লোক।’

বকা শুনে তূর্য রেগে ওর এক হাতে বর্ষার দুই হাত শক্ত করে ধরে আর এক হাতে বষা গাল চেপে ধরে,

‘ আর একবার আমাকে ফাজিল অসভ্য বললে। অসভ্যতামি করেই অসভ্য হবো মাইন্ড ইট।’

ব্যথায় বর্ষা চোখ জল ভর্তি হয়ে গেছে। তূর্য বর্ষার গাল ছেড়ে দেয় আর বর্ষার এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে বলে,

‘তোমার বাপি মাম্মাকে দেখবে?’

বর্ষা চোখ বন্ধ করে ছিল ওর ভাল লাগছে না এই লোকটার দিকে তাকাতে। তাই ও চোখ বন্ধ করেছিল বাপি কে দেখবে শুনে ও চট করে চোখ মেলল। বিস্মিত চোখে তূর্য এর চোখের দিকে তাকালো।

‘সত্যি! তার মানে আপনি আমাকে বাসায় নিয়ে যাবেন।’

খুশি হয়ে বললো বর্ষা। তূর্য ওর উজ্জ্বল হাসি খুশি মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে।

‘ নো। ‘

‘না মানে কি তাহলে বাপি গিয়ে দেখবো কিভাবে?’

হাসিখুশি মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেল।
তূর্য নিজের ফোন বের করে বর্ষার দিকে ধরল। বর্ষা ফোনের দিকে তাকিয়ে নিজের বাপি মাম্মা কে দেখতে পেল। ও মাম্মা বলে চিৎকার করে উঠল, মাম্মার মুখে অক্সিজেন মাস্ক।তিনি হসপিটালের বেডে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে তার পাশে বাপি বসে আছে তার চোখে জল।

‘মাম্মার কি হয়েছে মাম্মা হসপিটালে কেন?’

কান্না গলায় বলল বর্ষা। তূর্য ফোন বন্ধ করে নিজের পকেট এ ভরে ফেলল। বর্ষা তাঁ দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল,,

‘ ফোন নিলেন কেন? দিন আমাকে কি হয়েছে মাম্মার দেখতে দিন। বাপি কাঁদছে কেন?’

‘ তোমার মাম্মা তার একমাত্র মেয়ে চিন্তায় হার্ট অ্যাটাক করেছে।’

‘কিহ?’

‘ ইয়েস।’

তূর্য বর্ষার হাত ছেড়ে দিয়েছে। বর্ষার নিজের হাত দিয়ে তূর্য এর হাত ধরে বলল,,

‘ আমাকে প্লিজ মাম্মার কাছে নিয়ে চলুন। আমি মাম্মার কাছে গেলে মাম্মা সুস্থ হয়ে যাবে।’

‘সরি বর্ষামনি‌। আমার কাছে রাজি না হলে আমি কিছু করতে পারবো না। আমার শর্তে রাজি হও। কালকেই তোমাকে বাসায় দিয়ে আসব।’

বর্ষার হাত তূর্য এর হাতের উপর থেকে পরে যায়।

‘ আমি পারবো না।ওমন জগন্য কাজে সম্মতি দিতে। আপনি আমাকে মেরে ফেলুন তাও ভালো। না হলে আমি নিজেই নিজেকে শেষ করে দেব।’

তূর্য বর্ষার দিকে ঘোরে আর ওর চোখে চোখ রেখে খুব কাছে গিয়ে বলে,

‘তুমি মরে যেতে চাও ওকে তুমি মরলে কিন্তু তোমার বাবা মাও হয়তো আর বাঁচবে না!তোমার নিখোঁজ হওয়ার জন্যই তাদের এই অবস্থা যদি জানতে পারে তুমি মরে গেছো তাহলে তাদের কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছো?’

‘আর আপনার সত্ত্বে রাজি হওয়ার পর আমি তাদের কাছে কোন মুখে গিয়ে দাঁড়াবো।’

‘তুমি বেঁচে আছো সাথে আছো ভেবে হয়তো তারা ভালো থাকবে! তুমি যদি এখন নিজেই নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করো। তাহলে তুমি শুধু মরে গিয়ে বেঁচে যাবে কিন্তু তোমার বাবা-মা কিন্তু আমার হাত থেকে বাঁচবে না তাদের আমি শাস্তি দিয়ে ছাড়বো। তাদের জীবনটা নরক এ পরিনত করে দেবো।’

‘কি ক্ষতি করেছে আমার বাপি আপনার যে আপনি তাদের এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন। আর আমার জীবনটা নষ্ট করছেন।’

‘সেটা তুমি তোমার বাপিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো। মাকে বাঁচাতে চাইলে আমার কাছে ধরা দাও আর চলে যাও মায়ের কাছে।’

বলেই তূর্য চলে গেলো। দরজার কাছে গিয়ে আবার পেছন ফিরে বলল,

‘শুধু নিজের কথা না নিজের বাবা-মার কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিও। তোমার সিদ্ধান্তের ওপর তাদের জীবন নির্ভর করছে।’

বলেই তূর্য এক সেকেন্ড দাঁড়ালো না। চলে গেলো।
শাওন ডাইনিং টেবিলে বসে চিকেন খাচ্ছে। তখন তূর্য নিচে আসে ও চিকেন এ কামড় দিতে দিতে বলে,

‘কিরে রাজি করানো শেষ?’

‘এত ঘাড়তেরা মেয়ে জীবনে দেখি নাই।’

‘হবে হবে চিন্তা করিস না নিজের জন্য না হলে বাবা-মার জন্য হবে।’

‘তুই এখন রেডি হয়ে বসে খাচ্ছিস কোথায় যাবি।’

‘আছে একটু দরকার কতদিন পর বের হব টানা এক সপ্তাহ বিছানায় পড়ে ছিলাম ভাবা যায়।’

তূর্য এর ফোন আসতেই তূর্য চলে আসে নিজের রুমে।

‘হ্যালো বস! এখানকার অবস্থা খারাপ মহিলাটির অবস্থা খুবই খারাপ বাচবে কিনা বোঝা যাচ্ছে না।’

‘ ডাক্তার কি বলেছে?’

‘ডাক্তাররা ঠিকমত বলতে পারছে না তারা তাদের চেষ্টা করছে!’

‘ডাক্তারকে হুমকি দে যত টাকা লাগে দেবো মহিলাটি যেন বাঁচে তার যেন কিছু না হয়। অসুস্থ হয়ে পড়ে থাক সমস্যা নাই প্রাণে যেন না মরে।’

‘ওকে বস।’

তূর্য এর লোকেরা বর্ষার মা যেখানে ভর্তি আছে সেই হসপিটালে পাহারা দিচ্ছে আর সব খবরা খবর তূর্য কে দিচ্ছে।
তূয চায়না বর্ষা মা মরে যাক তাহলে বর্ষায় কে আর রাজি করানো সম্ভব হবে না। তাকে যেভাবেই হোক বাঁচাতে হবে।

তূর্য এর লোকরা আবার ফোন দিয়ে বলল, বর্ষার মা জ্ঞান ফেরার পর থেকে নাকি মেয়ের নাম জপে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। তাতে তার কন্ডিশনারও খারাপ হচ্ছে। ডাক্তার বলেছে মেয়ের সাথে কথা না বলা পর্যন্ত মেয়েকে না দেখা পর্যন্ত নাকি তিনি শান্ত হবেন না। ডাক্তার আবার ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে। বারবার এমন ঘুমের ইনজেকশন দিলে তার লাইফে রিক্স হবে।

তূর্য পায়চারি করে ফোন হাতে বর্ষার রুমে এসে দরজা খুলতে লাগল। হয় বর্ষার মা মরবে না হলে বর্ষা।

#চলবে

#তুমি_যে_আমার
#Writer_Nondini_Nila
#Part_14

মায়ের অসুস্থতার কথা শোনার পর থেকে বর্ষা কাদছে। একদিকে পেটের ভেতর খিদে যন্ত্রণা আর একদিকে মায়ের অসুস্থ মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে কষ্টে। মায়ের এই অবস্থা দেখে কিভাবে নিজেকে শান্ত রাখবো বর্ষা।মায়ের হাসি মুখটা ভেসে উঠছে বর্ষার। বর্ষা একটু কিছু হলেই মা রাত দিনে করে বর্ষার সেবা যত্ন করেছে। আর আজ মায়ের এই অবস্থা ও তার পাশে থাকতে পারছেনা। আর সে কিনা তারই চিন্তায় এখন হসপিটালের বেডে পড়ে আছে। একটা সন্তানের কাছে এর থেকে কষ্টের আর কি হতে পারে? কি পাষাণ? কি নির্দয় লোকটা! এতটা পাষাণ লোক জীবনে দুটো দেখেনি বর্ষা। মায়ের এই অবস্থা জানার পরও কিভাবে তিনি এভাবে ওকে আটকে রাখতে পারল।
তার নিজের কি মা-বাবা নাই?উনি কি তার মা-বাবা কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারে না। ওর পরিবারের সাথে তার যত দ্বন্দ্ব লেগে থাকুক তার জন্য কেন এভাবে মায়ের থেকে সন্তানকে আলাদা করতে পারছে। আজ যদি মায়ের কিছু হয়ে যায় তাহলে ওই লোকটাকে আমি খুন করে ফেলবো। বর্ষা উঠে দাঁড়ালো বিছানা থেকে দরজার কাছে এসে আবার লোকটাকে ডাকবে ও।
বিছানা থেকে দাঁড়াতেই খট দরজাটা খুলে গেল চমকে চোখ মেলে তাকাল বর্ষা খোলা দরজার দিকে।লোকটা গম্ভীর মুখ রুমে প্রবেশ করলো, আর সাথে সাথে দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলো। তূর্য বর্ষার দিকে তাকিয়ে দেখলো বর্ষা খাটের পাশে
অশ্রু নয়ন চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। বর্ষা চোখ লাল টকটকে হয়ে ফুলে আছে। গালে এখনো পানি লেগে আছে। ওর দিকে খুব মায়া ভড়া চোখে তাকিয়ে আছে। বর্ষার এমন চোখ মুখ দেখে তূর্য এর বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো।
তূর্য পা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। কিছু একটা ভেবে পা বাড়াতে যাবে তার আগেই বর্ষা ঝড়ের গতিতে ছুটে তূর্য এর পায়ের কাছে বসে পরলো। আর তূর্যের পা দুহাতে জাপ্টে ধরল।

বর্ষার আচমকা কান্ডে তূর্য থমকে গেলো। বর্ষা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, ‘ আমাকে মাম্মার কাছে নিয়ে চলুন প্লিজ। আমি আপনার পায়ে পড়ছি। আমাকে একটা বার মায়ের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিন।’

বর্ষার কথায় প্রেক্ষিতে তুর্য কিছু বলল না। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বর্ষা কাঁদতে কাঁদতে অনেক কাকুতি-মিনতি করতে লাগবে। বর্ষার কান্নার কাকুতি মিনতি তে তূর্যের ওপর কতটা প্রভাব ফেলল বোঝা গেল না। বর্ষা হেঁচকি দিয়ে কাঁদছে। সামনে দাঁড়ানো এই পাথরের মত শক্ত মানুষটার দিক থেকে কোন আশার আলো পেলো না। পা ধরে থাকা অবস্থায় অশ্রুসিক্ত নয়নে মাথা তুলে পাষাণ হৃদয়ের লোকটার দিকে তাকালো।

বর্ষা নিজে থেকে পা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। এই লোকটার সামনে শত চোখের জল ফেলে কাকুতি-মিনতি করলেও তার ‌ কিছু আসবে যাবে না। বর্ষার চোখের জল কষ্ট এসব এই লোকটার জন্য সুখ ছাড়া আর কিছুই না। অর কষ্টে লোক আরো আনন্দিত হয়। বর্ষা উঠে দাঁড়িয়ে এই পাষাণ লোকটার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে একাধারে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।

তূর্য বর্ষার হাতের কব্জি ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিলো।‌ বর্ষা হাত ছাড়ানোর জন্য ছটফট করে বললো,

‘ ছারুন আমাকে।’

বিছানায় বসিয়ে বর্ষার হাত ছাড়লো আর একদম বর্ষার মুখোমুখি হয়ে বসলো তূর্য।

‘ মায়ের সাথে কথা বলতে চাও! তাকে দেখতে চাও! তার কাছে যেতে চাও!’

বর্ষা তূর্যের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ হ্যা চাই। আপনি কি আমার চাওয়া পূরণ করবেন?’

তূর্য বর্ষার চোখে চোখ রেখে বলল, ‘অবশ্যই করবো। করবো না কেন? আমি অতটাও খারাপ না।’

বর্ষায় স্তম্ভিত হয়ে বললো, ‘; আপনি খারাপ না?’

‘খারাপ হলেও তো নিজে নিজেকে খারাপ বলতে পারিনা। তাইনা।’

‘ভালো ও বলতে পারেন না। আপনার মত খারাপ আমি জীবনে আর একটাও দেখি নাই। আমার দেখা সব থেকে খারাপ লোক আপনি।’

‘ জানি। তো তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলতে চাও। আমি তোমার এই ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারি। কিন্তু তার জন্য আমার ইচ্ছাটা ও তোমায় পূরণ করতে হবে। দশ মিনিট এ জানাও রাজি কিনা। তুমি রাজি হলে আজ তোমার মা বেঁচে যাবে। আর তুমি রাজি না হলে হয়তো আর কখনো মায়ের সাথে কথা বলার সুযোগ পাবে না।’

‘ মানে? কি বলতে চাইছেন?’

‘এত কথার উত্তর দিতে পারব না রাজি কিনা তাই বলো। দুই মিনিট চলে গেছে অলরেডি।তোমার মা তোমার জন্য পাগলামি করছে। সে তোমার সাথে কথা বলতে চায়। না পারলে হয়ত আর বাচবেনা তাই সিদ্ধান্ত তাড়াতাড়ি নাও। ‘

বর্ষা ফোন নেওয়ার চেষ্টা করে বলল, ‘ফোনটা দিন প্লিজ আমি মাম্মার সাথে কথা বলবো।’

‘নো আগে বলো রাজি কিনা!’

‘এমন একটা কাজে আমি কি করে রাজি হব আপনি বলেন?’

‘আই ডোন্ট নো! তোমার কাছে কি নিজের জীবন বড় নাকি মায়ের?’

‘অফকোর্স মাম্মার।’

‘তাহলে এত কি ভাবছো রাজি হয়ে যাও।’

বর্ষা চোখ বন্ধ করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো বুকের ভেতর টা ওর যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে। এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে মাম্মার জন্য। এদিকে তূর্য তাকিয়ে আছে বর্ষার বিধ্বস্ত মুখটার দিকে।
ঠোঁট নাড়িয়ে বলল,’ আর এক মিনিট আছে।’
বর্ষা চোখ বন্ধ রাখা অবস্থায় নিজের পাতলা শুকনো কাঁপা ঠোঁট নাড়িয়ে বলল,

‘আমি রাজি।’

রাজি কথাটা শুনে তূর্য ঠোঁটের কোনে হাসি চলে এলো। সেই নজরকাড়া সুন্দর হাসিটা হাসল তূর্য। বর্ষা চোখ মেলে সেই হাসিটা দেখলো। এই হাসিটা দেখলে ওর মন ভালো হয়ে যায়। এই সুন্দর হাসিটা হাসলে মনে হয় না এই লোকটা এত খারাপ। তার মনে দয়া মায়া কিছুই নাই। এসব বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। কিন্তু লোকটা সেই সবি।

তূর্য এগিয়ে এসে বর্ষার গা ঘেঁষে বসলো। আর বললো,
‘ আমি জানতাম তুমি আজকে রাজি হবে। গুড গার্ল।’ বলেই মাথা হেলিয়ে বর্ষার ঠোঁটের উপর হালকা চুমু খেলো।

বর্ষা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলো। তূর্য সরে আসতেই বললো,

‘ মাম্মার কাছে নিয়ে চলেন।’

তূর্য নিজের ফোন বের করে কাউকে কল করলো। ফোনে কানে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ফোনের লোকটাকে কিছু বলে কল কেটে দিলো। আবার এগিয়ে এসে ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় বসলো‌। বর্ষা বুঝতে পারছে না কি করছে তূর্য ওকে নিয়ে যাচ্ছে না কেন মাম্মার কাছে।‌ তূর্য ল্যাপটপে কি যেন করলো তারপর বর্ষার সামনে ল্যাপটপ রেখে বললো,

‘এখন তোমার মায়ের সাথে কথা বলো কলে। আরেকটা কথা আলতু ফালতু কথা বললে কিন্তু কল কেটে দেওয়া হবে আধা ঘন্টা টাইম দিলাম। যত ইচ্ছা কথা বলো।’

বলেই তূর্য বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।

বর্ষার কথা বলল না। মায়ের সাথে এতো দিন পর কথা বলতে পারবে সেটা ভেবে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। 2 সেকেন্ডের মধ্যে মায়ের মুখটা ল্যাপটপে ভেসে উঠলো। বর্ষা মায়া ভরা চোখে নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ের চোখ বন্ধ তিনি ঘুমিয়ে আছে। পাশে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে বর্ষার মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে আছে তূর্য। বর্ষার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। বর্ষা কাঁপা গলায় মাম্মা বলে চেঁচিয়ে উঠলো। বর্ষার মা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

বর্ষা একাধারে ডেকে চলেছে। মেয়ের ডাকে মায়ের ঘুম তাড়াতাড়ি ছুটে গেলো। বর্ষার মায়ের কাছে তূর্য এর দুই লোক আছে । একজন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে আরেকজন ফোন হাতে বর্ষার মায়ের বেডের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষার মা চোখ মেলে ফোনের স্ক্রিনে নিজের মেয়েকে দেখতে পায়। মেয়েকে দেখেই উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,

‘ আমার বর্ষা মা।’

মায়ের কন্ঠ শুনে বর্ষার চোখ জলে ভড়ে উঠে। কান্না চলে আসে ওর ও কাঁদতে যাবে তখন তূর্য এর দিকে চোখ যায় কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে। ও তাকাতেই ইশারায় কান্না করতে মানা করে,
বর্ষা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নেয়।

‘ মাম্মা তুমি এত অসুস্থ হলে কিভাবে? আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করছো কেন? আমি একদম সুস্থ আছি আর খুব তাড়াতাড়ি তোমার কাছে চলে আসবো। তুমি আর আমাকে নিয়ে চিন্তা করে নিজের শরীর খারাপ করো না আমার কষ্ট হয়।’

‘ তুই আমার কাছে আয়। কোথায় তুই? কোথায় থেকে ফোন দিছিস?’

‘এখন বলা যাবে না। আমি এসে সব তোমাকে বলব। তুমি আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না।’

দুজনের মাঝে কথা চলতে লাগলো। আধা ঘন্টার বেশি চলে গেছে। বর্ষা আর ওর মা কথা বলেই যাচ্ছে। চল্লিশ মিনিট হতেই কল কেটে গেলো। বর্ষা রাগ নিয়ে তাকালো তূর্য এর দিকে,

‘ আধা ঘন্টা কথা বলার কথা বলেছিলেন কেটে দিলেন কেন?’

‘ চল্লিশ মিনিট বলেছো!’ গম্ভীর গলায় বলল তূর্য।

#চলবে