তুমি যে আমার পর্ব-৪৩+৪৪

0
657

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#part_43

নিচে এসে শান্তার পাশে বসে ছিলো বর্ষা। অনেকক্ষণ পর রুমে এসে দেখলো তূর্য বিছানায় শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। ঘনঘন শ্বাস ফেলছে। বর্ষা দরজার আড়ালে উঁকি মেরে দেখছে। ঘুমিয়ে পরেছে ভেবে ধীরে শব্দ হীন পায়ে এগিয়ে গেলো বর্ষা তূর্য এর দিকে। কাছে এসে গভীর ভাবে তাকালো তূর্য এর মুখের দিকে। কি নিষ্পাপ লাগছে দেখতে। কে বলবে এই লোকটা কতোটা জগন্য নিংস্র হয়ে উঠে জাগ্রত অবস্থা। আর এখন ইনোসেন্ট মুখ করে ঘুমিয়ে আছে।
বুকের দিকে চোখ যেতেই তখনকার ব্যান্ডেজের কথা মনে পরলো বর্ষার। বুকের কাছে দুটো বোতাম খোলা তাতে ভেতরের ব্যান্ডেজ উঁকি মারছে। এই ব্যান্ডেজ কেন!উনাকে আঘাত ই বা কে করলো! এই দুদিন ছিলোই বা কোথায়!
বুকে হাত দিয়ে ব্যাথায় কুকড়িয়ে উঠেছিলো তখন তূর্য। ব্লিডিং হচ্ছিল উনি কি তা নিবারণ করেছে? পিন কালারের শার্ট পরনে তূর্য এর। বুকের কাছে চোখ আটকে যায় লাল হয়ে আছে।কিছু একটা ভেবে বর্ষা তূর্য এর পাশে বসে পরে আর কাঁপা হাতে শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করে। শার্ট সরিয়ে বুক উন্মুক্ত করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে তূর্য এর ব্যান্ডেজের সাদা জায়গা লাল টকটকে হয়ে আছে। এখনো ব্লিডিং হচ্ছে। আতকে উঠে বর্ষা। দিশেহারা হয়ে ফাস্ট এইড বক্স এনে রক্ত পরিষ্কার করতে লাগে। এই অবস্থায় উনি শুয়ে আছে কি করে। লোকটা আসলেই পাগল দেখছি। তূর্যের রক্ত মাখা ব্যান্ডেজ খুলে ফেলল বর্ষা। নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দেয়। অদ্ভুত বিষয় এর মাঝে তূর্য একটুও নড়ে না বর্ষা ভয় পেয়ে তূর্য কে নিচু স্বরে ডাকতে লাগে। নো রেসপন্স জোরে ডাকতে লাগে তাও কাজ হয় না। তার মানে জ্ঞান হারিয়েছে। ভয়ে বর্ষার হাত পা অসম্ভব ভাবে কাঁপছে। কি করবে এখন? যাকে একটুও সহ্য করতে পারে না তার জন্য বর্ষা কাঁদছে এটাও সম্ভব। বর্ষা কি ভেবে যেন দৌড়ে পাশের রুমে থেকে ডাক্তারকে ডেকে আনে। তিনি তূর্য এর বাবার ডাক্তার তার কথা মনেই ছিলো না। তিনি এসে তূর্য কে দেখে বলেছে। বুকে গভীর ক্ষত হয়েছিলো।সে জায়গায় আবার আঘাতের জন্য জ্ঞান হারিয়েছে। এখন ঘুমাচ্ছে খুব তারাতাড়ি ই জ্ঞান ফিরবে। রাতে জ্বর আসতে পারে বর্ষাকে ভয় পেতে মানা করলো। ডাক্তার ব্যাথার ইনজেকশন পুশ করে দিলো। তারাতাড়ি তিনি চলে গেলো।

বর্ষা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে তূর্য এর দিকে তাকিয়ে আছে। শুকনো মুখটা দেখে ওর বুকে চিনচিন ব্যাথা করছে। এই নিষ্ঠুর লোকটার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে কেন? তার যা খুশি আমার কিছু যায় আসে না। কিচ্ছু না। উনি যদি মরে যায় তাহলে তো আমার ই ভালো আমি ঝন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবো। নিজের মনে কথা গুলো আওড়ারে আওড়াতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলো। এই নিষ্ঠুর লোকটাকে নিয়ে একদম ভাববো না। কিন্তু বললেই কি হয় বর্ষা ভাবতে না চাইলেও ভাবনা এসে যায় অজান্তেই।

শান্তা একবার এসে খাওয়ার জন্য ডেকে গেছে বর্ষা খাবে না বলে দিয়েছে। বারান্দায় একাই জোসনা বিলাস করতে লাগলো‌। হঠাৎ কারো আর্তনাদে হতচকিত উঠলো বর্ষা। রুমে থেকে আসছে বর্ষা তূর্য এর কথা ভেবে ছুটে আসলো।
একটু আগেই তূর্য কে নিয়ে কতো কথাই না ভাবছিলো বর্ষা কিন্তু এখন সেই তূর্য এর গুঙ্গরানি শুনে সব ভুলে ছুটে এলো। তূর্য এর কাছে এসে উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘ কি হয়েছে আপনার? কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বলুন।’

তূর্য বিরবির করে কিছু বলছে বর্ষা বুঝতে পারছে না
তাই তূর্য এর মুখের কাছে ঝুঁকে কান পেতে শুনতে থাকে। তূর্য পানি চাচ্ছে। বর্ষা গ্লাসে পানি এনে তূর্য কে খাওয়াতে মাথার নিচে হাত দিয়ে মাথা উঁচু করে খাওয়াতে লাগে। তখন তূর্যকে স্পর্শ করতে বুঝতে পারে তূর্যের গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।

তূর্য পানি বেশি খেতে পারলো না। একটু খেয়েই পরে র‌ইলো। বর্ষা কপালে হাত দিয়ে চেক করে দেখলো আগুনের মতন গরম হয়ে আছে শরীর। ডাক্তার বলেছে জ্বর আসা স্বাভাবিক। কিন্তু এতো জ্বরে এইভাবে ফেলে রাখাটা মন সায় দিচ্ছে না বর্ষার মন। তূর্য দূর্বল চোখে একবার তাকিয়ে ছিলো। চোখের সামনে বর্ষাকে উদ্বিগ্ন হয়ে বসে থাকতে দেখেছে। বর্ষার চিন্তিত মুখ দেখে জ্বরের ঘোরেই মনে মনে হাসে তূর্য।

বর্ষা হঠাৎ মনে পরে ওর জ্বর হলে আম্মু মাথার কাছে বসে ওর মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিতো রাত জেগে। শরীর মুছে দিতে এতে কাজ হতো। বর্ষার তাই করার কথা ভেবে এক টুকরা কাপড় ভিজিয়ে আনে। আর বাটিতে করে পানি এনে তূর্য এর ডান পাশে বসে জলপট্টি দিতে লাগে। এর মাঝে তূর্য দুইতিন বার তাকিয়েছে। বর্ষা সেসব এ তোয়াক্কা করেনি। ঘুমে তাকাতে পারছে না বর্ষা তবুও ওইভাবেই তূর্য এর কপালের জলপট্টি দিতেই আছে। বসে থাকতে থাকতে বর্ষা ক্লান্ত হয়ে যায়। তূর্য অনেক ক্ষণ ধরে তাকায় না। ঘুমিয়ে পরেছে ও। বর্ষা ওইভাবেই সারারাত বসে র‌ইলো।শেষ রাতে তূর্য এর জ্বর কমে এসেছে। ও এখন ঘুমিয়ে আছে। সকালের মিষ্টি এক ফালি সোনালী রোদের আলো চোখে পরতেই তূর্য এর ঘুম ভেঙ্গে যায়। জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে সূর্য এর আলো। বুকের ব্যাথা কম লাগছে তূর্য এর কাছে। ও আস্তে করে চোখ মেলে তাকায়। শরীর ভাল হয়ে আছে, দূর্বল লাগছে। সাথে ডান হাতের বাহু ব্যাথা করছে। চোখ মেলেই ডান দিকে তাকাতেই চমকে উঠে। বর্ষা তূর্য এর ডান হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। কাল ঘুমের ঘোরে ওকে এখানেই বসে সেবা করতে দেখেছে তূর্য কাল অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিল যে ও কিছু বলতে পারিনি। নিজের জন্য এতো চিন্তা আর সেবা করা দেখে তূর্য এর ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি আসলো। এলোমেলো ভাবে চুল গুলো বর্ষার গালে লেপ্টে আছে‌। বাম হাত বাড়িয়ে তূর্য চুল সরিয়ে কপালে অধর ছুঁয়ে দিলো। সাথে সাথে বর্ষার ঘুম ভেংগে গেলো আর ধরফরিয়ে উঠে বসলো।

তূর্য এর কথা মনে হতেই তূর্যের কপালে হাত দিয়ে জ্বর চেক করতে লাগলো। এখন কম অনেকটা জ্বর। তূর্য যে জেগে ওর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে সেদিকে বর্ষার খেয়াল ই নাই। হঠাৎ তূর্যের চোঁখের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো বর্ষা। তূর্য জেগে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। বর্ষা ছিটকে উঠে গেলে বসা থেকে।
আর তারা তারি রুমে থেকে বেরিয়ে যায়।
সকাল সকাল শাওন এসে হাজির। এসেই তূর্য এর কাছে বসে আছে। তাই বর্ষা বেঁচে গেছে। কালকে নিজের পাগলামীতে নিজেই অবাক‌। তূর্য ঠিক চেপে ধরবে আর বলবে,
আমাকে না সহ্য করতে পারো না। আমি মরি বাঁচি তাতে তোমার কিছুই না তাহলে কালকে এতো সেবা যত্ন কেন করলে?
তখন কি উওর দিবো আমি। শান্তা কে দিয়ে তূর্য এর জন্য সূ্্যপ আর শাওন এর জন্য কফি পাঠিয়ে দেয়। আমি মুখোমুখি হতে না চাইলেই কি শান্তা এসে জানায় তূর্য আমাকে জরুরি তলব করে ডেকেছে। আমি কাচুমাচু মুখ করে রুমে আসি।

‘ আমাকে ডেকেছেন কেন?’

আমার কথায় দুজনের কথা ভঙ্গ হয়। তূর্য আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ শাওনের সাথে আজ কলেজে যাও। অনেকদিন তো কলেজে যাওয়া হয় না‌।’

তূর্য এর কথা শুনে চোখ তুলে তাকালো। তূর্য কে এই অবস্থায় রেখে যাওয়ার ইচ্ছা করছে না কিন্তু সেটা বুঝতে দেওয়া যাবে না।

‘ আমি একাই যেতে পারবো। যারতার সাথে যাওয়ার দরকার নাই।’

‘ একা তো আমি ছারবো না জানোই। তাই যেতে চাইলে রেডি হয়ে নাও। শাওন তোমাকে পৌছে দিবে। আসার আগে গাড়ি পাঠিয়ে দিবো চলে আসবা।’

‘ উনার সাথে আমি যাব না।”

‘ জেদ করো না বর্ষা। না হলেই এই শরীর নিয়েই আমাকে বের হতে হবে।’

‘ আপনারা আমাকে একা কেন ছাড়ছেন না আমি একা গেলে সমস্যা কোথায়? খাঁচায় বন্দী পাখির মতো টর্চার কেন করছেন আমার সাথে?’

‘ওকে যাওয়ার দরকার নাই‌। তুমি আর লেখাপড়া না করলেও আমার প্রবলেম নাই। আমি তোমাকে এইভাবেই মেনে নিবো।’

শাওনকে একটুও সহ্য করতে পারে না বর্ষা। দুজনের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিচে চলে এলো।

রাগে গজগজ করতে করতেই বর্ষা আলমারি থেকে ড্রেস নিয়ে রেডি নিচে নেমে গেল। বর্ষা নিচে এসে শান্তা কে খুব করে বলে গেলো তূর্য এর দিকে নজর রাখতে ও তারাতাড়ি ই চলে আসবে।

শাওন বর্ষার যাওয়ার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে তূর্যের দিকে অসহায় মুখে তাকিয়ে বললো,

‘ ব্রো ভাবি তো আমাকে তোমার থেকেও বেশি ঘৃণা করে দেখছি।’

‘ হুম কারণ ওর কাছে প্রথম ঠকবাজ তো তুই তাই।’

‘ ভয়ে আছি ভাবির জন্য না আমার প্রেম ব্রেকাপ হয়ে যায়।’

‘ হা হা হা তারাতাড়ি যা।’

শাওন চলে গেলো।

বর্ষা সারা রাস্তা মুখটা গম্ভীর করে রাখলো। কলেজে কাছে নামিয়ে শাওন চলে গেলো। তার আগে বাই ভাবি বললো‌। কিন্তু বর্ষা ফিরেও তাকালো না। ফ্রেন্ডরা সবাই ওকে দেখে এতোদিন আসেনি কেন জিজ্ঞেস করতে লাগলো। মিথ্যা কথা বানিয়ে বললো বর্ষা। তিশার সাথে বসে বর্ষা আনমনে বললো,

‘ তিশু একটা কথার জবাব দিবি!’

‘ কি কথা বল? তোর কি মনে খারাপ চোখ গুলো ও ফুলে আছে রাতে ঘুমাসনি?’

তিশার কথার জবাব না দিয়ে বললো বর্ষা, ‘ আচ্ছা ধর একজন কে আমি খুব ঘৃণা করি। যাকে পৃথিবীর সবচেয়ে অপছন্দ করি, এক মূহুর্ত ও তাকে আমি সহ্য করতে পারিনা। তাকে দেখলেই আমার রাগ উঠে। তার থেকে সব সময় পালাতে চাই। কিন্তু হঠাৎ করেই আমার সব উল্টাপাল্টা হয়ে গেলো। আগের মতো তাকে আমি ঘৃনা করতে পারছি না। আগের মতো আর রাগ ও হয়না। আগে যার মৃত্যু কামনা করতাম এখন তার অসুস্থতায় আমি কষ্ট পায়। তাকে অসুস্থ হতে দেখলে দিশেহারা হয়ে পরি তাকে সুস্থ করতে। আনমনেই তার জন্য ভালো দোয়া করি এমনটা কেন হচ্ছে আমার সাথে বল না প্লিজ।

তিশা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আমি ওর দিকে উওর এর আশায় তাকিয়ে আছি।

হঠাৎ ও বললো, ‘ হায় হায় বলিস কি? এই তোর না বিয়ে হয়ে গেছে। এমন কার জন্য হয় তোর। জামাই রাইখা কারে ভালোবাসলি তুই? সত্যি ক‌ইরা বল। তোর জামাই কত্ত হান্ডসাম তাকে এই ভাবে ঠকালি।’

‘ হোয়াট কি সব বলছিস? ভালোবাসা আসবে কোথা থেকে আমার কথা শুনে কি তোর এটাকে ভালোবাসা মনে হচ্ছে ফালতু।’

‘ মনে হ‌ওয়ার কি আছে। আমি তো সিউর তুই তোর ওই অসহ্য লোকটার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস। এখন কথা হচ্ছে এই লোকটা কে?’

বর্ষা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিশার দিকে। তারপর তিশার সাথে ঝগড়া করলো। তিশা ওর ঝগড়ার কিছু বুঝলো না। বর্ষা রাগ করে চলে গেলো ক্লাসে। তিশা এটা কি বললো ও নাকি ওই অসভ্য লোকটাকে ভালোবাসে অসম্ভব এটা হতেই পারে না। উনাকে আমি শুধু মাত্র ঘৃণা করি।

#চলবে……

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#part_44

ইম্পর্টেন্ট দুইটা ক্লাস করেই বর্ষা বেরিয়ে আসে কলেজ থেকে। অসুস্থ মানুষ টাকে একা বাসায় রেখে এসেছে প্রচুর চিন্তা হচ্ছে। বাসায় এসে বর্ষা দেখে তূর্য বাসায় নাই। শান্তার কাছে জিজ্ঞেস করলে বলে বর্ষা রা যাওয়ার এক ঘন্টা পর‌ই না কি তূর্য রেডি হয়ে ফোন কানে বেরিয়ে যায়।
রাগে কাঁধের ব্যাগটা ছুড়ে মারে বর্ষা। শরীরের এই অবস্থা উনি বেরিয়ে গেছেন। প্রচন্ড রাগে ওর চোখের কার্নিশে অশ্রু জমে। পাষাণ লোকটার জন্য কিছুক্ষণ ফুঁপিয়ে হাটুতে মুখ রেখে কাঁদতে লাগে।
কেঁদে-কেটে নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলে বর্ষা। চোখ দুটো ফুলে উঠেছে কাঁদতে কাঁদতে। ড্রেস ও চেঞ্জ করেনি বর্ষা ওইভাবেই চুপ করে থ মেরে বসে থাকে কিছুক্ষণ। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বাথরুমে গিয়ে ঝর্নার ঠাণ্ডা পানির নিচে দাঁড়িয়ে থাকে। সময় নিয়ে গোসল করে। এর মাঝে একবার শান্তা এসে দরজার ঠোকা দিয়ে বলে,

‘বউমণি আমনে কি নাহাইতাছেন?

বর্ষা গলা উঁচিয়ে বলে, ‘হ্যাঁ তুই খেয়ে নে। আমি পরে খাব!’

আর শান্তার আওয়াজ এলো না চলে গেছে বোধহয়। বর্ষা চুপচাপ পোশাক পাল্টে ভেজা চুল না মুছেই বারান্দায় গিয়ে ভেজা পোশাক মেলে দেয়। বিকেলে রক্তিম আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিচে গিয়ে খাবার খেয়ে নেয়। আম্মুকে কল করতে যাবে বর্ষা রুমে এসে তখন শান্তা ছুটে এসে বলে,

‘বউমণি তাড়াতাড়ি নিয়ে আহেন। দুইজন মেহমান আইছে!’

বর্ষা কপাল কুঁচকে শান্তার দিকে তাকিয়ে বলে,’এই সময় কে এসেছে?’

‘আম্নেরে আর দাদাবাবুরে ডাক দিতে বলল আমি বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে আসছি।’

‘তাদের ভেতরে এসে বসতে বল আমি আসতেছি।’

যেমন ছুটে এসেছিল সেই ভাবে একছুটে শান্তা চলে গেল। বর্ষা চুল হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে হালকা শুকিয়ে। কামিজ টেনে ঠিক করে ওরনা দিয়ে মাথা ঠেকে নিচে নেমে আসে। সোফায় বসে আছে নিদ্রা ও অভ্র তাদের দেখে অবাক হয়ে কাছে এসে দাঁড়াতে নিদ্রা হালকা করে জরিয়ে ধরে চুমু খায় কপালে বর্ষার। বর্ষার সাথে নিদ্রা সম্পর্ক বড় বোন ছোট বোনের মতো তাই এমন আদর করেই থাকে কিন্তু আজকে আদর ভালোবাসা কিছুটা অন্য রকম লাগছে বর্ষার কাছে।

নিদ্রার চোখ মুখ অন্য রকম লাগছে। তার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। কান্নার পূর্বাভাস লাগছে। যেন এখনি কান্না করে দিবে।
অভ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ ভালো আছেন ভাইয়া?’

অভ্র বর্ষার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বললো, ‘ এইতো ভালো। তোমাদের কি খবর?’

‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো।’

‘ অফিসার আদিল ক‌ই?’

‘ বাসায় নাই।’

‘ এই অবস্থায় কোথায় গেছে? সেদিন তো উনার অবস্থা খুব খারাপ দেখেছিলাম।’

বর্ষা অভ্রের দিকে বিষ্মিত হয়ে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বললো, ‘ কোনদিন? আপনি জানলেন কি করে উনি অসুস্থ?’

‘ আরে জানবো না সেদিন….

অভ্র কথা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই উপর থেকে চিৎকার ভেসে এলো। বর্ষা চমকে উপরের দিকে তাকালো। এটা তো নিদ্রা আপুর আওয়াজ। পাশে তাকিয়ে দেখি আপু নাই‌ উনি উপরে‌ কখন গেলো?
দুজনে ছুটে উপরে এলো। বর্ষা সোজা
শশুর এর রুমে এসে দেখে নিদ্রা বর্ষার শশুর কে জরিয়ে ধরে কাঁদছে আর বলছে,

‘ বাবা উঠো বাবা। এতো দিন পর তোমাদের কথা মনে পরলো আমার। আর তুমি এখন আমার সাথে কথা না এইভাবে বিছানায় পরে থাকতে পারো না।
আমার দিকে তাকিয়ে দেখো এই যে আমি তোমার আলিশা। তোমার মেয়ে তোমার কাছে ফিরে এসেছি। কথা বলো প্লিজ। একবার বুকে জরিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দাও কতোদিন তোমার বুকে মাথা রাখি না।

বর্ষা দরজার সামনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে কি হচ্ছে তার আগা মাথাও ওর মাথায় ঢুকছে না। গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে শুধু। নার্স নিদ্রাকে সরতে বলছে পেশেন্টের সাথে এমন করতে কিন্তু নিদ্রা কথা শুনছে না তাই অভ্র গিয়ে জোর করে ওকে নিয়ে আসলো। বর্ষার ওদের পেছনে গেলো। চোখে মুখে ওর চরম বিষ্ময়। আনিশা টা কে আবার! নিদ্রা আপু নিজেকে আনিশা বললো কেন? আর তূর্যের বাবাকে বাবাই বা বললো কেন! কি হচ্ছে এসব! নিদ্রা আপু এখনো কাঁদছে অভ্র ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে পানি দিতে বললো এক গ্লাস। শান্তা ছুটে এনে দিলো।
শান্তা ও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে নিদ্রার দিকে। বর্ষার কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,

‘ ব‌উমনি এই আফায় কান্দে ক্যান?’

বর্ষা ওর দিকে না তাকিয়ে বললো,’ জানি না।’

বর্ষা দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে। অভ্র ও নিদ্রার দিকে। অভ্র নিদ্রা কে বুকে জরিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর নিদ্রা কেঁদে সাগর বানাচ্ছে। বর্ষা ভাবছে তূর্যর বাবাকে বাবা কেন বললো তাহলে কি তূর্যর বোন নিদ্রা? কিন্তু কিভাবে? কিছু মাথায় ঢুকছে না। উফফ বেশি সময় নিয়ে গোসল করার জন্য মাথা ব্যাথা করছে।

সন্ধ্যা পার হয়ে গেলো তূর্য এলো না।নিদ্রা রা আটটা পর্যন্ত তার অপেক্ষায় চেয়ে র‌ইলো। কিন্তু এলো না। তাই চলে গেলো। এক কাপ কফি অভ্র ভাইয়া ছাড়া কিছুই খায়নি কেউ। কতো তোষামোদ করলাম কিন্তু নিদ্রা আপুকে কিছু খাওয়াতে পারলাম না। বর্ষা থাকতে বলেছিলো থাকলোও না। বর্ষা গালে হাত দিয়ে বিছানার বসে আছে। নিদ্রা আপুর বিহেভিয়ার কিছুর ওর বোধগম্য হচ্ছে না।
তূর্য কে এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে কি বলবে আমাকে? নাহ কি সব ভাবছি ওই লোকটা আমাকে কিছু বলবে জীবনে ও না! দশটা পেরিয়ে গেলো তূর্য এর দেখা নাই। উনি ওই শরীরের গেলো কিভাবে! বিছানায় থেকেই তো উঠতে পারছিলো না! এখন দিনরাত এক করে ফেললো বাইরে কাটিয়ে! বর্ষা শুয়ে পরলো। চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। আর ঘুমিয়ে ও পরলো তারাতাড়ি ই। কাল জেগেই ছিলো রাত তাই শুতেই চোখে রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিলো।

মধ্যরাতে কারো উষ্ণ স্পর্শ ও গরম নিঃশ্বাস শরীরে পরতেই ঘুম হালকা হয়ে গেলো বর্ষার। ড্রিম লাইটের আধো আধো অন্ধকার রুমে চোখ মেলে তাকাতেই বর্ষা দেখলো কেউ ওর গলায় মুখ ঠেকিয়ে নাক মুখ ঘষছে। বর্ষার শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো।হাত দিয়ে লোকটাকে ধাক্কা দিতে যাবে কিন্তু পারছে না। পারবে কি করে লোকটা বর্ষার হাত নিজের হাত দিয়ে আটকে রেখেছে। বর্ষা অনুভব করলো লোকটা ওর গলায় ঠোট ছুঁয়ে দিচ্ছে। ছটফট করতে লাগলো লোকটাকে সরাতে চিৎকার দিতে ও পারছে না। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। অনেক কষ্টে চিৎকার দিতে যাবে তখনই লোকটা মাথা উঁচু করে বর্ষার চোখের দিকে তাকালো বর্ষা অন্ধকারে ও তূর্য কে চিনতে ভুল করলো না। কথা বলবে তার আগেই বর্ষার কথা বলার ক্ষমতা কেড়ে নিলো তূর্য। আঁকড়ে ধরছে ওর ওষ্ঠ নিজের ওষ্ঠ দ্বারা। বর্ষা নিজের এক হাত আলগা পেতেই ঝট করেই বর্ষা হাত ছাড়িয়ে নিলো আর তূর্যের চুল খামচে ধরে সরানোর প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলো। পারছে না! কিন্তু ইচ্ছা মতো খামচে দিলো রাগে‌। তূর্য তাতেও সরলো না অনেকক্ষন পর ঠোঁট ছেড়ে গলায় মুখ ঠেকিয়ে র‌ইলো। ঠোঁট ছাড়ার আগে কামড়ে দিয়েছো তার ফলে বর্ষা ছাড়া পেতেই চেঁচিয়ে উঠে।

‘ রাক্ষস কোথাকার ছাড় আমাকে!’ চিল্লিয়ে উঠলো বর্ষা।

তূর্য বর্ষার হাত শক্ত করে ধরে এক হাতে আরেক হাতে মুখ চেপে ধরে বলে,

‘ ননসেন্সের মতো চিৎকার করা অফ করো। তোমার চিৎকার শুনার জন্য এখানে কেউ বসে নাই। এমন রোমান্টিক মুডে কেউ চিল্লাচিল্লি করে ইডিয়েট।’

বর্ষা উম উমম করছে খালি তূর্য ওর কপালে চুমু খেয়ে বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে পরে।বর্ষা ছাড়া পেতেই হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে বসে। জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগে। কিছুক্ষণ নীরব থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করে। তারপর রাগী দৃষ্টিতে তূর্য বন্ধ চোখের দিকে তাকায়। আচমকা বর্ষা ক্ষ্যাপা বাঘিনীর মত ঝাপিয়ে পড়ে তূর্যের উপর। দুহাতে গলা টিপে ধরে তূর্যের। সঙ্গে সঙ্গে চোখ মেলে তাকায় তূর্য। বর্ষার রাগী মুখটার দিকে তাকায়।

‘আজ আমি আপনাকে মেরেই ফেলবো।’ বলেই দুই হাতে শক্ত করে গলা টিপে ধরে। তূর্য ছাড়ানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করে না। শান্ত ভঙ্গিতে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ষা নিজেই থতমত খেয়ে গেলো। লোকটা কোন রিঅ্যাক্ট করছে না কেন এত শান্ত ভঙ্গিতে কিভাবে তাকিয়ে আছে? বর্ষা দুহাতে আরো শক্ত করে চেপে ধরে তাও তূর্যের কোন রিয়াকশন নাই। বর্ষা তূর্যকে এমন স্বাভাবিক থাকতে দেখে হকচকিয়ে যায়। হাত আলগা হয়ে আসে ওর। উনি সত্যি মানুষ তো। নাকি..

‘ কি হলো এতো তাড়াতাড়ি‌ই এনার্জি শেষ?’ তূর্য কথাটা বলেই হেঁচকা টানে বুকের উপর ফেললো বর্ষাকে। বর্ষা গলা থেকে দুহাত সরিয়ে বুকের কাছে শার্ট খামচে ধরে।

‘ এই শক্তি দিয়ে তুমি তো একটা পিপড়া কে ও মারতে পারবা না! আর মারতে এসেছ তূর্যকে! ভেরি ফানি সুইটহার্ট! আমাকে মারতে চাইলে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে আগে শরীরে শক্তি বাড়াও! তারপর না হয় আমাকে মারতে এসো কেমন! এখন চুপচাপ ঘুমাও! আমাকে ও ঘুমাতে দাও। আমি যে অসুস্থ ভুলে গেলে নাকি। কাল তো সারারাত জেগে স্বামী সেবা করলে। আর আজকেই মারার জন্য হাত উঠাচ্ছো? সত্যি নারী জাতিকে চেনা বড় কঠিন!’

‘ছাড়ুন আমাকে অসভ্য লোক!কাল কোন ভূত মাথায় চেপে ছিল যে আমি আপনার মত বদমাইশ, চরিত্রহীন লম্পট লোকের সেবা করলাম আল্লাহ জানে।’

বলেই বর্ষা তূর্যের বুকে খামছে নড়াচড়া করতে লাগল। আঘাতের স্থানে ব্যথা পেলেও টু শব্দ অবধি করল না তূর্য। বর্ষার মাথা শক্ত করে বুকে চেপে ধরে রাখলো। বর্ষা ছটফট করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

#চলবে…..