তুমি যে আমার পর্ব-৪৫

0
675

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#part_45(১ম অংশ)

ঘুম ভাঙ্গার পর বর্ষা নিজের উপর কারো অস্তিত্ব আবিষ্কার করলো। সাথে নাকে মুখে সুরসুরি লাগছে। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো তূর্য বর্ষার বুকে মাথা রেখে দুহাতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আর ওর মাথার খাড়া খাড়া সিল্ক চুল গুলো উড়ে এসে বর্ষার মুখে নাকে বাড়ি খাচ্ছে। নরতে ও পারছে না বর্ষা এইভাবে কেউ জাপ্টে ধরে। দম বন্ধ হ‌য়ে আসছে। বর্ষা তূর্য কে নিজের থেকে সরাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। মাথায় হাত দিয়ে ধাক্কা দিচ্ছে। না পেরে চুল টেনে ধরলো। সাথে সাথে তূর্য নরে উঠে গলায় মুখ গুজলো। বর্ষার রাগ তুরুঙ্গে উঠে গেলো। এক দিকে তূর্যের এমন গায়ে সাথে লেপ্টে থাকার জন্য ওর শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে। তার তূর্যের গরম নিঃশ্বাস কাঁধে পরছে। বর্ষার বুকের ভেতর ধুকপুক করছে অনবরত।
বর্ষার চেঁচামেচি তে তূর্য ঘুমঘুম চোখে মাথা তুলে তাকালো বর্ষার দিকে। বর্ষা তূর্য কে মাথা উঠাতে দেখতেই বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। আর ঝটপট উঠে পরলো বিছানায় থেকে।

‘ অসভ্য লোক! খালি মেয়েদের গা স্পর্শ‌ করতে মন চাই তাই না। লুচু কোথাকার!!’ রাগে হিসহিসিয়ে বললো বর্ষা।

তূর্য বর্ষার কথা শুনে বললো,’ মেয়েদের টাচ করতে মন চাইবে কেন? আমার তো শুধু ব‌উকেই স্পর্শ- আদর ভালোবাসতে ইচ্ছে করে! বুঝ না কেন বর্ষা মনি!’

‘ লুচ্চামির একটা সীমা থাকা দরকার। যতসব!’

বর্ষা বাথরুমে ঢুকে গেলো রাগে গজগজ করতে করতে। তূর্য বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো। হাসির শব্দ শুনে আরো রেগে ঠাস করে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলো বর্ষা। গোসল করে বর্ষা পরলো বেকায়দায়। তূর্য কে রাগ দেখাতে গিয়ে ড্রেস না নিয়েই গোসল করতে ঢুকেছে বর্ষা। এখন কি পরে বের হবে? এই ভুল করলাম কি করে আমি। ঠান্ডায় জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এদিকে তূর্য দরজায় টোকা দিয়েই যাচ্ছে। বের হতে বলছে বারবার। আমি নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছি। এভাবে কতোক্ষণ বা দাঁড়িয়ে থাকবো‌। বাধ্য হয়ে আমাকে তূর্যের কাছেই সাহায্য চাইতে হলো। উনি কি আমাকে হেল্প করবে? মনে তো হয় না! বলার পরও কোন রেসপন্স পেলাম না ওপাশ থেকে! তূর্য কে বর্ষা শান্তা কে ডেকে দিতে বলেছে। বর্ষা ইতস্ত বোধ করতে করতে আবার মৃদু স্বরে বলে উঠলাম,

‘ প্লিজ শান্তা কে একটু ডেকে দিন না।’ আবার বললাম। তূর্যকে ড্রেসের কথা বললাম না। উনি আমাকে হেল্প করার বদলে বিপদে ফেলতে পারে ওনাকে আমি একফোঁটাও বিশ্বাস করিনা। এজন্যই তো শান্তাকে ঠেকে দেওয়ার কথা বলেছি।

তূর্য আওয়াজ করে বললো, ‘হোয়াই? শান্তাকে ডাকবো কেন? কি দরকার? আমাকে বলো!!’

‘আপনাকে বলবো না বলেই তো শান্তাকে ডাকতে বলছি! ওকে ডাকুন না হলে আমি আজ সারাদিন ওয়াশ রুম থেকে বের হবো না।’

‘হোয়াট, বর্ষা মনি গেট আউট কুইকলি! আমার আজকে তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে।তাই যা সমস্যা আমাকে বলে। দ্রুত বের হ‌ও। না হলে দরজা ভেঙে ঢুকে আমার যেতে বেশি সময় লাগবে না সেটা তুমি জানো।’

‘আমি আপনাকে বলবো না বলেছি তো। শান্তা কে ডেকে দিন ব্যাস এইটুকু করুন না প্লিজ।’

‘ আমি কাউকে ডেকে দিতে পারব না সরি! যা বলার আমাকে বলো।’

‘আপনি আমাকে হেল্প করবেন না আমি জানি। আপনার মতো শয়তান লোক আমার হেল্প করা দূরে থাক উল্টা আমাকে হেনস্থা করবেন।’

‘ তোমার মত মাথামোটা না আমি ইডিয়েট।’

আমি আমতা আমতা করে বলে দিলাম। কিছু করার নাই ঠান্ডায় কুলাতে না পেরেই তূর্য কেই বলতে হলো। দুই মিনিটের মাথায় দরজায় টোকা
পরলো।

‘ কি হলো আবার দরজা ধাক্কাচ্ছে কেন? হেল্প করবেন না তো! জানতাম আপনার মতো শয়তান লোক কারো হেল্প করে নাকি। সব সময় সবার ক্ষতি করতে আপনি মজা পান!’

আমার কথা শুনে তূর্য ধমক দিয়ে বলল, ‘ এক থাপ্পর দিয়ে গাল ফাটিয়ে ফেলবো। একবার বের হ‌ও খালি। ইডিয়েট! দরজা না খুললে ড্রেস নিবে কিভাবে অদৃশ্য হয়ে দরজা টপকাবে নাকি?’

তূর্যর গম্ভীর গলায় কথা শুনে বর্ষা কেঁপে উঠে দরজা খুলে দিলো। হাল্কা ফাঁক করে হাত বাড়াতেই তূর্য হাতে ড্রেস না দিয়ে বর্ষার হাত ধরে। বর্ষা চোখ বড় করে তূর্যের মুখের দিকে তাকায়। তূর্যের ঠোঁটের কোনে হাসি।

‘ কি বলছিলে আমি শয়তান! কারো হেল্প করিনা?’

বর্ষা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল, ‘ প্লিজ হাত ছাড়ুন।’

‘ নো সুইটহার্ট! এতো সহজে তো তোমাকে ছাড় দিচ্ছি না। কতো কথাই না বললে এতক্ষণ। এতো সহজেই ছেড়ে দেবো তোমাকে ইম্পসিবল!’

বর্ষা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘ আমি অনেক অনেক সরি। প্লিজ জামা টা দিন।’

‘নো সুইটহার্ট। তোমাকে তো শাস্তি পেতে হবে!’

‘ শাস্তি?’ ভয়ার্ত গলায় বললো বর্ষা।

তূর্য বললো, ‘ ইয়েস শাস্তি! যদি শাস্তি গ্রহণ করো তাহলেই ড্রেস পাবে নাহলে ওইভাবেই থাক সারাদিন ভেজা পোশাকে বাথরুমে বসে।’

‘ আপনি আসলেই খুব খারাপ একজন মানুষ।’

‘ জানি‌। এবার বলো শাস্তি পেতে রাজি আছো নাকি?’

‘ আচ্ছা বলুন কি শাস্তি?’

‘ সেটা তো পরে বলবো এখন আগে কথা দাও যা বলবো তাই করবে।’

বর্ষা নিরুপায় হয়ে বললো, ‘ আচ্ছা এবার তো দিন।’

.
সকাল সকাল এমন একটা সত্যি জানতে পারবো আশা করেনি বর্ষা । তূর্যের সাথে সেই ঝামেলার পর ফ্রেশ হয়ে বর্ষা দৌড়ে নিচে চলে আসে। কি শাস্তি দেবে সে সব ভেবে মাথা খারাপ হয়ে আসে ওর। ভালো কোনো শাস্তি দেবে না সেটাও খুব ভালো করে ও জানে। শিকার যেহেতু করেছে শাস্তি মাথা পেতে নিতে হবে। তাই পালিয়ে বাঁচতেছে। বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে শান্তি পাওয়া যাবে। আচ্ছা উনি তো অসুস্থ ছিল। আজকে উনার শরীরে তো জ্বর নাই দেখেছি। বুকের ক্ষত কি গিয়েছে? জিজ্ঞেস করলেই বলবে স্বামীর প্রতি দূর্বল হয়ে গেছো বর্ষা মনি। এই পাষাণ লোকটাকে ভালোবেসে ফেললে নাকি?’

নাহ জিজ্ঞেস করা যাবে না। জিজ্ঞেস করলে আলতু ফালতু কথা বলবে। তূর্য ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় নিচে এলো। বর্ষা দাঁড়িয়ে তখন আকাশ পাতাল ভাবছিলো। তূর্য কে ইউনিফর্ম পরে আসতে দেখে আড়চোখে তাকালো। এ বাসায় আসার ছয় মাসের উপরে হয়ে গেছে এরমধ্যে তূর্য কে কয়েকদিন ছাড়া ইউনিফর্ম পড়ে বের হতে দেখা যায়নি। বর্ষা আড়চোখে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। তূর্য কে এই পোশাকে মারাত্মক সুন্দর লাগে। তাকালে চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়ে। নিষ্ঠুর লোকদের এত সুন্দর হওয়া উচিত না।উনার চরিত্র যতটাই খারাপ তার থেকেও ভয়ঙ্কর সুন্দর ওনার এই মুখটা। এই সুন্দর মুখটা দেখলে কে বলবে এই সুন্দর চেহারার আড়ালে লুকিয়ে আছে কত ভয়ঙ্কর একজন মানুষ।
মাথাটা নিষ্পাপ লাগে এই মুখের দিকে তাকালে। এই পোশাকে মনে হচ্ছে আদর্শ একজন পুলিশ অফিসার। যিনি অন্যায় করতে পারেন না কিন্তু এটা তো ভুল। সমস্ত খারাপ কাজ আর অন্যায়ের গ্র্যান্ডমাস্টার তো এই তূর্য। যে সমাজের চোখে পট্টি বেঁধে রেখেছে।সবার চোখে নিজেকে সমাজসেবক করে রেখেছে।

‘ হা করে তাকিয়ে আছো কেন? আমি জানি আমি হ্যান্ডসাম! তাই বলে ভাবে তাকিয়ে থাকবে! আমারও তো লজ্জা করে ছেলে বলে কি আমার লজ্জা নাই নাকি?’

বর্ষা থতমত খেয়ে গেলো একদম তূর্য এর কথা শুনে। তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম। ছিঃ কি লজ্জা! তাকানোর আর মানুষ পেলাম না! উনার দিকে এমন বেহায়ার মত তাকিয়ে ছিলাম! লজ্জায় বর্ষা মাথা কাটা যাচ্ছে! মাথা নিচু করে চুপচাপ খেতে লাগলো আর তাকালো না।

তূর্য খাওয়ার ফাঁকে আরেকবার বলেছে, ‘ তোমার‌ই তো বর। এতো লজ্জা পাচ্ছ কেন? আমার দিকে তাকিয়ে থাকার অধিকার তোমার আছে। তাই তাকিয়ে থাকতে পারো আমি মাইন্ড করবো না।’

লজ্জায় বর্ষার কান গরম হয়ে আসছে। একটু তাকিয়েছিলাম তাই এভাবে আমাকে লজ্জা দিচ্ছে খবিশ কোথাকার! জীবনটা আমার তেনাতেনা করে দিবে। এতো যেহেতু জানিস আমার তাকানোর অধিকার আছে তাহলে এইভাবে আমাকে অপমান কেন করলি অসভ্য!

হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল। শান্তা গিয়ে খুললো। নিদ্রা আপু এসেছে। আপু আজ একাই এসেছে। আপুকে দেখেই তূর্য খাওয়া শেষ করে উঠে দাড়ালো। নিদ্রা আপু এগিয়ে এসে তূর্য কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আমি খাওয়া রেখে তাকিয়ে আছি তাদের দুজনের দিকে চোখ বড় বড় করে। অনেক ক্ষণ পর ছেড়ে কি জানি বলতে লাগলো। তূর্যের চোখ লাল হয়ে আছে। চোখের কোনে পানি জীবনের প্রথম তার চোখে আমি পানি দেখতে পেলাম। হা করে তাকিয়ে আছি। তূর্য আপি বলতেই আমার মাথা আওলা জাওলা হয়ে এলো। তারমানে সত্যি এরা ভাই-বোন কিন্তু তাহলে এতো দিন আলাদা ছিলো কেন? এতোদিন পর বা কিভাবে চিনল কিছু বুঝতে পারছিনা।
দুজনে উপরে চলে গেল আর তূর্য ঠাস করে বেডরুমের দরজা বন্ধ করে ফেললো। ভেতরে কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছিনা। কান খাড়া করে বর্ষা ওপরের দিকে তাকিয়ে আছে।

নিদ্রা যাওয়ার আগে বর্ষার সাথেও কথা বললো বর্ষা তখন সোফায় বসে ছিলো। আপু ও তূর্য একসঙ্গে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।
বিকেলে তূর্য বাসায় ফিরে আসে। আর সেদিন রাতে প্রথম বারের মতো তূর্য বর্ষার সাথে ভালো করে কথা বলে। প্রথম বর্ষাকে তূর্য অর্ডার করে বলে,

‘বর্ষামনি দুই মগ কফি নিয়ে আসো তো!’

বর্ষা বিছানায় পা উঠিয়ে বসে ছিলো। হঠাৎ তূর্যের অর্ডার শুনে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায় বর্ষা।

‘কি হলো এমন হ্যাংলার মতো তাকিয়ে আছ কেন যাও। তোমার সাথে আমার ইমপর্টেন্ট কথা আছে।’

‘আমি….

‘ আমি বলবো বলেছি। তার মানে অনিচ্ছাসত্ত্বেও তোমাকে শুনতে হবে। তাই কুইক যাও!’

গটগট করে রুম থেকে রান্নাঘরে চলে এলো বর্ষা। গাল ফুলিয়ে কফি করে আবার রুমে এলো। তূর্য বেলকুনিতে ছিল সেখানে যেতেই এক মগ কফি নিজে নিলো ও আরেকটা বর্ষার কাছে রেখেই পাশে টেনে বসিয়ে দিলো।

অস্বস্তি নিয়ে পাশে বসলাম কিন্তু দূরত্ব বজায় রেখে। তূর্য আকাশের দিকে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। কফি শেষ করে পাশে মগ রেখে বর্ষার দিকে তাকালো। বর্ষা একটু ও খাইনি কফি। তূর্য বর্ষার হাত টেনে নিজের দিকে ঘুরালো। আর বলল,

‘ শাস্তি পেতে প্রস্তুত তো?’

বর্ষা চমকে উঠে বললো, ‘ মানে?’

‘ সকালের কথা ভুলে গেলে নাকি?’

বর্ষা আতকে উঠলো। সকালের কথা মনেই ছিলো না। আল্লাহ এখন কি শাস্তি দেবে আমাকে? ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি তূর্যের দিকে। তূর্যের মুখে দুষ্টু হাসি।

তূর্য মাথা এগিয়ে বর্ষার দিকে নিলো। বর্ষা ভয়ে পিছিয়ে গেলো। তূর্য বর্ষার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো, ‘ ভয় পেলে নাকি?’

বর্ষা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। ওর হৃদস্পন্দন জোরে জোরে বিট হচ্ছে। তূর্য এর গরম নিঃশ্বাস কাঁধে আছড়ে পড়ছে।

‘ কি শাস্তি দিবেন আমাকে?’ কাঁপা গলায় বলল বর্ষা। তূর্য বর্ষার কাছে থেকে সরে এসে বললো।

‘ আই নিড টু কিস!’

‘ কিইইই?’ চিৎকার করে উঠলো বর্ষা।

তূর্য নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে আবার বললো, ‘ ইউ হ্যাভ টু কিস মি! দিস ইজ ইওর পানিশমেন্ট!

বর্ষার হাত পা কাঁপছে। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে তূর্য এর দিকে।এ কি শাস্তি দিলো এই রাক্ষসটা ওকে। এবার ও কি করবে!
ভয়ে কপালে ঘাম ঝড়তে শুরু করছে।

তূর্য ঠোঁটে এগিয়ে এনে ইশারা করছে তারাতাড়ি করতে। বর্ষা ঢোক গিলছে শুধু।

‘ প্লিজ অন্য কিছু বলেন এটা আমি পারবো না।’

‘ এটা করতে হবে। তুমি আমাকে‌ কথা দিয়েছিলে আমি যা বলবো তাই করবে এখন এমন করলে তো হবে।’

‘ তাই বলে আমি আপনাকে চুমু খাবো ছিঃ এটা আম কখনোই পারবো না।’

‘ তাহলে তো আমাকে আর ও অনেক বড় শাস্তি দিতে হবে। দুইটার জন্য শাস্তি স্বরুপ বাসরটা করে ফেলি কি বলো? একটু আকটু স্পর্শ এ আমার মন ভরে না এবার না হয় ব‌উকে ইচ্ছে মতো আদর করবো কি বলো! তার মানে এটাই তুমি চাইছিলে বললেই হয় ! আমি তো পর না তোমার বর‌ই।’

‘কি সব বলছেন পাগলের মতো?’

‘ঠিকিই বলছি। এতো দিন হয়ে গেলো‌ এখনো ব‌উকে আদর করতে পারলাম না আজ না হয় আমার সেই ইচ্ছেটাই পূর…

ভয়ে বর্ষা ফট করেই তূর্যের গালে ঠোট ছুঁয়ে দেয়। তূর্যের কথা থেমে গেছে। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে বর্ষার মুখের দিকে।

এদিকে বর্ষার বুকের ভেতর কেমন যেন করছে। থরথর করে কাঁপছে ও। তূর্য কে নিজে থেকে স্পর্শ করে ওর অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে।

হঠাৎ করেই ওর মনে পরে গেলো। যেদিন রাতে তূর্য শর্ত মোতাবেক ওর কাছে আসা কিন্তু সেই রাতের কোন কথাই ওর মনে নাই শেষ সময় তূর্য ওর গলায় ঠোট ছুঁয়ে দিচ্ছিল। আর কিছু মনে নাই।
কিন্তু সকালে নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে ওর সাথে রাতে কি ঘটেছিলো। এই লোকটা ওর সতীত্ব হরণ করছে। একজন অবিবাহিত মেয়ের জন্য এটা কতোটা কষ্ট কর তা একটা মেয়ে ছাড়া কেউ বুঝে না। বুঝা সম্ভব না। সাথে সাথে বর্ষার চোখ মুখ কঠিন হয়ে এলো। বর্ষা রাগী চোখে তূর্য এর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘একবার জোর কাছে এসেছিলেন। ধর্ষণ করেছেন এই আমাকে। আবার ও আসতে চাইছেন ছিঃ এতো শারীরিক চাহিদা আপনার। তাহলে পতিতালয়ে যাচ্ছেন না কেন আমাকে কেন এই অত্যাচার করছেন কেন?’

কথা শেষ করতে পারলো না বর্ষা আচমকা আক্রমন এ থমকে গেলো। আপনা আপনি গালে হাত চলে গেলো বর্ষার। চোখে জমে উঠেছে অশ্রু। জল ভরা চোখে তূর্যের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ওর দৃষ্টি।

তূর্য বর্ষার হাত চুচড়ে ধরে বললো, ‘ আর একটা মিথ্যা অপবাদ দিলে মেরে পুঁতে ফেলবো তোকে আমি। শরীরের চাহিদা থাকলে এতো দিন তুই ভার্জিন থাকতে পারতি। চাইলেই জোর করে কবেই তোর উপর নিজের পুরুষত্ব ফলাতে পারতাম কিন্তু আমি তা চাইনি। অধিকার থাকার পর ও তোর কাছে যাইনি! জোর করিনি! তাও তুই বারবার আমাকে এক কথা বলিস! সেই রাতে কি হয়েছিলো দেখছিস তুই! দেখেছিস তুই আমি তোকে ধর্ষণ করেছি। না জেনে আমার উপর নোংরা তাকমা দেওয়া অফ কর না হলে আজকে তোকে আমি খুন করে ফেলবো।’

#চলবে……

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#part_45(২য় অংশ)

রাগে তূর্যের চোখ দুটো রক্ত লাল হয়ে উঠেছে।হাত এত শক্ত করে ধরেছে যে রক্ত জমাট বেধে গেছে বোধহয়। বর্ষা দুচোখ দিয়ে গলগল করে পানি পড়ছে ব্যাথায়। তূর্য ক্রোধান্বিত গলায় চিৎকার করে কথাগুলো বলে ঝামটা মেরে বর্ষাকে ছেড়ে উঠে গমগম করে বেরিয়ে এলো বেলকনি ছেড়ে। রাগে তূর্য টেবিল একটা লাথি মেরে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। সবকিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে তূর্যর। ভালো ভাবে কিছু কথা বলতে চাইলে কেন শুনতে নারাজ হবে বর্ষা কেন? তূর্য সোজা বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে ছুটে চলে গেল অজানা গন্তব্যে।
এদিকে বর্ষাকে তূর্য ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেছিলো তাই বর্ষা দোলনা থেকে ছিটকে পড়ে গেছে ফ্লোরে। দেয়ালে কপাল লেগে রক্ত বের হয়ে গেছে। বর্ষা মাথায় হাত দিয়ে কাঁদতে লাগে। গাড়ির হণ শুনে মাথা উঁচু করে উঁকি দিয়ে দেখে তূর্য এর গাড়ি চলে যাচ্ছে।

দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে চোখের জল ফেলতে লাগলো বর্ষা। আজকের এই ব্যবহারে ভেতর থেকে আরও বেশি ঘৃণা করতে লাগল তূর্যকে। এই মানুষটা শুধু ঘৃণা পাওয়াই যোগ্য। উনি মানুষকে শুধু কষ্ট দিতে পারে, আঘাত করতে পারে। এর বেশি আর কিছু হতে পারে না! কিচ্ছু না! নিজেই ডেকে আনে জোর করে। আবার নিজেই রাগ দেখিয়ে চলে যায়। সত্যি বললেই গায়ে ফোসকা পড়ে। খারাপ কাজ করতে পারবে কিন্তু তাকে খারাপ বলা যাবে না এ কেমন বিচার! এমন একটা লোকের সাথে কেন আমাকে জুড়ে দিলে আল্লাহ! এর থেকে আমাকে মৃত্যু দিতে পারতে! আমিতো মরতেও পারছিনা! আত্মহত্যা যদি মহাপাপ না হতো আমি এই কাজটাই করতাম। ভেসে যাক এই দুনিয়া! দুনিয়ার মানুষ! এইসব দেখে আমি ক্লান্ত ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেলাম! রুমের ভেতরে ফোনটা বেজে উঠেছে। এই সময় আম্মুর সাথে কথা বলি। আম্মু কল করেছে মনে হয়। এখন কথা বলার মুড নাই আমি। প্রচুর যন্ত্রণা করছে মাথা। কপালে হাত দিয়ে টাটকা রক্ত হাতে এলো। রক্ত দেখেই হুহু করে কেদে উঠলাম চিৎকার করে। শান্তার চেঁচামেচি শুনতে পেলাম। আমি নরলাম না আর না আওয়াজ করলাম ওই ভাবেই পড়ে রইলাম।

10 মিনিট পর শান্ত বেলকুনিতে এলো। আর বর্ষা কে দেখেই চেঁচিয়ে ছুটে এলো,

‘হায় আল্লাহ! ব‌উমনি আমনের কি হইছে? এমনে কইরা বইয়া আছেন ক্যান নিচে?”

বর্ষা ওর কথার উত্তর দিলো না। কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না বর্ষা। শান্তা বর্ষাকে ধরে টেনে রুমে এনে খাটে বসালো।
বর্ষা বিছানায় শুয়ে পড়লো। ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে দেখল একপাশে কাচ ভাঙ্গা। শান্তা বোধহয় গুছিয়ে রেখেছে। কাঁচ কোথায় থেকে এলো।
ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখল ড্রেসিং টেবিলের আয়না ভাঙা। ব্যালকনি থেকে বেরিয়ে একটা তীব্র শব্দ কানে এসেছিল তাহলে এইটাই সেই আওয়াজের…

‘ ব‌উমনি আমনের কপাল থিকা তো রক্ত বের হ‌ইতাছে।’

‘ হোক তুই যা এখানে থেকে।’

‘ কি‌‌ কন এই সব আমি অনেক জামু। আপনের এমনে একা রাইখা‌। রক্ত বের হ‌ওয়া বন্ধ করতে হবে তো।’

‘কিছু করতে হবে না! তোকে যেতে বলছি তুই যা। আমার মাথা ব্যাথা করছে আমি ঘুমাবো।’

‘হায় হায় কি কন! এই অবস্থা আপনার রাইখা আমি একলা যামু।’

‘আমার কিছু হয়নি একটু পরে একাই বন্ধ হবে রক্ত বের হওয়া তুই চিন্তা করিস না। যা!’

বর্ষার কথা শুনতে নারাজ শান্তা। সে যাবে না। তাই বর্ষা একটা ধমক দিল শান্তাকে। শান্তা এবার সুর সুর করে চলে গেল মন খারাপ করে। বর্ষা চোখের জল ফেলছে। ব্যাথায় কুলাতে না পেরে একাই ফার্স্ট এইড বক্স এনে রক্ত মুছে ব্যান্ডেজ করে নিলো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে একাই পায় বর্ষা। তারমানে তূর্য রাতে বাসায় আসে নি। এসব না ভেবে নিচে নেমে আসে। অনেক বেলা করে উঠেছে বর্ষা। তাই ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসেছে। মাথাটা ব্যাথা আছে এখন কিন্তু কম। খাবার খেয়ে টিভির সামনে বসে থাকে। এগারোটার দিকে কলিং বেল বেজে উঠল। শান্তা দরজা খুলে দিলো। বর্ষা তূর্য ভেবে কোন প্রতিক্রিয়া করলো না। কিন্তু তূর্য না শাওন এসেছে। শাওনকে দেখে বর্ষা আরো রেগে গেল। এই লোকটাকে তূর্য এর সমান ঘৃণা করে। শাওন কাচুমাচু মুখ করে বর্ষার দিকে এগিয়ে এসে বললো,

‘ আসসালামু আলাইকুম ভাবি!’

বর্ষা শব্দ করলো না। মনে মনে সালামের জবাব দিলো। আর দৃষ্টি টিভির দিকে নিবদ্ধ করে রেখেছে।

শাওন আমতা আমতা করে আবার বলে উঠলো, ‘ ভাবি ব্রো কি বাসায়? কাল রাত থেকে কল করছি ফোন ধরছে না কেন?’

বিরক্তিকর চোখে তাকালো শাওনের দিকে। শাওন বর্ষার তাকানো থেকে ঢোক গিললো‌। আর ভাবছে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে ভষ্স করে দিবে আমাকে। এই চাহনী দেখলো কেন জানি শাওন ও ভয় পায়।

‘ আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন? উনার খবর আমি জানবো কি করে? এসব তো আপনার জানার কথা।’

‘ হুম। কিন্তু আমি তো ব্রো কে পাচ্ছি না। আজকে একটা আর্জেন্ট কাজ আছে আমাদের। কিন্তু সকাল থেকে ব্রো কে পাচ্ছে না এখন কি হবে।’

‘ আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন? কি হবে না হবে আপনারা বুঝেন! আমাকে একদম বিরক্ত করতে আসবে না। আমি কিছু জানি না আর আপনাদের মতো লোকদের কথা আমি জানতেও চাইনা।’

শাওন নিরাশ হয়ে চলে গেলো। বর্ষার আর এসব নিয়ে মাথা ঘামাল ওনার ঘামানোর চেষ্টাও করল না।

.
কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলো বর্ষা। দুইদিন ধরে তূর্যের কোন খবর নাই। শাওন ও আর আসে নি। তূর্য কোথায় আছে আর না অন্য কেউ। চিন্তা করতে না চাইলেও চিন্তা এসে মাথায় ঘুরপাক খায়। বর্ষার এই অহেতুক চিন্তা তাও নিজের শত্রুর জন্য কেন আসে এখনো জানা হয়নি বর্ষার।
মলিন মুখেই ক্লাস শেষ করলো বর্ষা। আজ খুব বেরাতে ইচ্ছে করছে বর্ষার তাইতো ফ্রেন্ডের বলে বেড়ানোর বন্দোবস্ত করে ফেলল। অনেকদিন কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়না। তূর্য লাপাত্তা এই সুযোগে একটু ইনজয় করে নিতে সমস্যা কি‌!
সবাই মিলে ঘুরাঘুরি করে চলে এলাম রেস্টুরেন্টে। ট্রিট দেবে আজ সিয়াম কারণ কাল ওর নতুন আরেকটা গার্লফ্রেন্ড হয়েছে সেই খুশিতে।
সবাই রেস্টুরেন্টে গিয়ে একটা টেবিল ফুল করে বসে পড়লাম।

তিশা আয়েশ করে বসেই বলে উঠলো,
‘সিয়াম দোস্ত রে আমি চাই তোর প্রতি সপ্তাহে একটা করে নতুন গার্লফ্রেন্ড হোক, আর ব্রেকআপ হোক, তাহলে আমি সারা মাস রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়ে মোটা হয়ে যাবো।’

তিশার কথা শোনার একজন বলে উঠল, ‘সিয়াম এবার তুই গেছত রে দোস্ত।শারমিন যে ঝগড়া করতে পারে তোর ক্যারেক্টার ও জানলে তোরে জুতা পিটা করবে।’

সিয়াম অ্যাটিটিউড নিয়ে বলল, ‘ এই মাইয়ার উপর আমার জেদ। ওরে তো আমার পেছনে পাগলের মতন দৌড় না পারায়তে পারি তাহলে আমার নাম সিয়াম সিকদার না। শারমিন আমারে থাপ্পড় দিচ্ছিলো মনে আছে তোর ওর বান্ধবী সম্পারে প্রেমপত্র দিছিলাম দেইখা। সেই থেকে অর উপর আমার রাগ। তারপর থেকে ওর পেছনে পড়ে আছি কিন্তু ওকে মানায় তে আমার এক বছর চলে গেলো।’

যে যার মতো কথা বলছে শুধু নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে বর্ষা। হাত ভাঁজ করে টেবিলে রেখে থুতনি ঠেকিয়ে চুপ করে আছে। কথা বলতে ওর ভালো লাগছে না। কেন ভালো লাগছে না তাও জানে না। হঠাৎ একটা টেবিলে চোখ যেতেই স্তব্ধ হয়ে যায় বর্ষা। থমকে যায় ওর চোখ দুটো। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে বর্ষা ওদের দেখে কিছু দূরে এক সিটের দিকে। সেখানে বসে আছে তূর্য। ও একটা মেয়ে মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। সাইট দেখা যাচ্ছে শুধু। তূর্য হেসে কথা বলছে। মেয়েটা হঠাৎ তূর্য এর হাত আঁকড়ে ধরলো। তূর্যের মুখে তাতে কিছুটা অস্বস্তি ফুটে উঠলেও মুখে আবার তার নজর কাড়া হাসি দিলো। দুজনে দুজনের ধ্যানে মগ্ন। আশেপাশের কোন দিকেই তাদের খেয়াল নেই। থাকলে অবশ্যই বর্ষাকে দেখতে পেতো। বর্ষা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেয়েটার মুখ দেখার চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু পারছে না। হঠাৎ মেয়েটা এদিকে ফিরল একটু সাথে সাথে তার মুখটা স্পষ্ট দেখলো বর্ষা। এ তো জেসি আপু! উনার সাথে তূর্য কি করছে? দুইদিন বাসায় যায়নি আর এখানে তিনি এই মেয়ের সাথে..? রাগে বর্ষা গজগজ করে উঠলো। আমাকে আঘাত করে এখানে প্রেম করতে ব্যস্ত হয়ে পেরেছে। আমি কি অবস্থায় আছি একটুও খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। রাগে বর্ষা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা তূর্য দের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো। আচমকা বর্ষাকে এখানে দেখে তূর্য চমকে দাঁড়িয়ে পরে।

‘ বর্ষা তুমি এখানে কি করছো??’

বর্ষা জেসির দিকে কটমট করে তাকিয়ে তূর্যের দিকে তাকালো বললো,

‘ আমি যাই করি না কেন তাতে আপনার কি?’

তূর্য বললো, ‘ চারটা বাজে এখনো বাসায় যাও নি কেন? কলেজ তো একটায় ছুটি হয়ে গেছে!’

‘ হ্যা তো? আপনার বন্দিনী হয়ে থাকতে হবে আমাকে? আমি বাসা থেকে বের হতে পারবো না। কোথাও যেতে পারবো না। আর আপনি সারা দিন ট‌ইট‌ই করে ঘুরে বেড়াবেন মেয়েদের নিয়ে তাই না।’

বর্ষার কথা শুনে তূর্য এর রাগ হলেও রাগ সংযত করে নিলো। আর জেসির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ মিস জেসি, আপনার সাথে পরে কথা বলবো। বাই!

বলেই বর্ষার বাহু চেপে ধরে বেরিয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে।

বর্ষা চিৎকার করে বলছে, ‘ ছারুন আমাকে আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে এসেছি ওদের সাথেই যাব। আপনি ওই জেসির সাথে কথা বলেন গিয়ে যান। ছারুন আয়ার হাত‌।’

বর্ষার ফ্রেন্ডরাও তূর্য ও বর্ষাকে দেখে এগিয়ে এসেছিল কিন্তু তূর্য কে কিছু বলার সাহস পায় নি।

#চলবে…..

(রি-চেক করা হয়নি‌। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#part_45(৩য় অংশ)

(“কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ”)

‘ নিজের হাজবেন্ড কে পরনারীর সাথে দেখে এত্তো জেলাস ফিল করছ বর্ষা মনি যে নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলেছো।‌ এত্তো ভালোবাসো আমাকে বলো না। স্বীকার করো না কেন?’

গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে কাদছিলো বর্ষা। তূর্যের কথা শুনে থেমে গেলো বর্ষা। আর ঘাড় বাঁকিয়ে বললো,

‘ নির্লজ্জ, চরিত্রহীন, বদমাইশ কোথাকার! ছিঃ লজ্জা করে না বিবাহিত হ‌ওয়া সত্তেও অন্য মেয়ের হাত ধরে বসে থাকতে?’

বলেই নাক টানতে লাগলো বর্ষা। তূর্য গাড়ি একসাইড করে থামিয়ে। সিট বেল খুলতে লাগল বর্ষার। বর্ষার সেদিকে নজর নাই। ও তো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তূর্য বর্ষার কোমর ধরে টেনে নিজের কোলের উপর বসিয়ে দিলো। বর্ষা কিছু বুঝে ওঠার আগেই এমন কান্ড ঘটল ও চেঁচিয়ে উঠলো শুধু। তূর্য বর্ষার মুখের দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে।সেই দৃষ্টিতে আছে ধারালো নেশা। কাউকে কাছে পাওয়ার নেশা। ভালোবাসার নেশা। বর্ষার তূর্যের এমন চাহনীর দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠলো। এতোক্ষণ ছুটার জন্য ছটফট করলেও এখন এই ধারালো গভীর নেশাতুর দৃষ্টি থেকে নিজের চোখ সরাতে পারছে না।
ঢোক গিলে চোখ ফিরিয়ে নিলো। তূর্য বর্ষার বাম গালে ডান হাত ডুবিয়ে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আনলো। আর নেশা ধরা কন্ঠে বলল,

‘ নিজেকে আমার চোখ গভীরে হারাতে ভয় পাচ্ছ বর্ষা মনি। এতো ভয় তোমার? এতো ঘৃণা এই চোখে নিয়ে এই নিষ্ঠুর, পাষাণ, খারাপ মানুষটাকে কিভাবে এতোটা ভালোবেসে ফেললে বর্ষা মনি? তুমি তো হেরে গেলে! নিজেকে এতো কন্ট্রোল করতে চেয়েও এই নিষ্ঠুর লোকটাকে ভালোবাসা থেকে তোমার মনটাকে আটকাতে পারলে না।’ বলতে বলতে তূর্য বর্ষাকে আরো কাছে টেনে নিলো। বর্ষা কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। ওর হৃদস্পন্দন জোরে জোরে বিট করছে। শরীরের প্রত্যেকটা শিরা উপশিরা কেঁপে কেঁপে উঠছে। ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। তূর্য বর্ষার কপালের সাথে কপাল মিলিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। তূর্যের গরম নিঃশ্বাস চোখে মুখে পরছে বর্ষার। বর্ষা ধাক্কিয়ে ও তূর্য কে সরাতে ব্যর্থ হচ্ছে। এইভাবে আর দুই সেকেন্ড থাকলে নিশ্চিত দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে বর্ষা। তাই ও কাঁপা গলায় বলে উঠলো,
‘ ছারুন আমাকে কি অসভ্যতামি শুরু করেছে মাঝ রাস্…

কথা শেষ করতে পারলো না বর্ষা। তূর্য ওর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো। তূর্য বর্ষার কপালে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

‘ কাছে আসলে দূরে সরাতে ব্যস্ত হয়ে পরো।‌আবার দূরে গেলে এই আমার জন্য কেঁদে কেটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলো এ কেমন বিচার?’

বর্ষা চমকে উঠে বললো, ‘ মানে কি সব বলছেন?

‘ তুমি যা বুঝেছো আমি তাই বলেছি সুইটহার্ট! কিন্তু আমার কথা হচ্ছে তুমি এতো বোকা কেন বলোতো বর্ষা মনি?’

বর্ষা চোখ বন্ধ করে তোতলাতে তোতলাতে বললো, ‘ আ মি বো কা ?

‘ অফকোর্স। না হলে কেউ ওয়াশরুম রেখে রুমে ড্রেস চেঞ্জ করতে পারে? তোমার ওই অবস্থায় দেখে আমার কি অবস্থা হয় তুমি বুঝতে পারছো?’

কথাটা শুনতেই বর্ষা লাফ দিয়ে উঠে পরলো। ওর সমস্ত শক্তি আবার ফিরে এসেছে যেন। এ কি বললো তূর্য উনি আমাকে…

‘ কি বললেন আপনি?’ বড় বড় চোখ করে!

‘ তুমি যে রুমে সারাদিন গাল ফুলিয়ে বসে থাকো। আমার ছবির দিকে তাকিয়ে বিরবির করো! আমার কথা চিন্তা করে চোখের জল ফেলো এস..

বর্ষা চেঁচিয়ে উঠলো, ‘ আপনি এসব জানলেন কি করে?’

‘ গাধা রুমে যে সিসি ক্যামেরা সেট করা আছে জানো না তুমি?’

বর্ষা ধপ করে নিজের সিটে বসে পরলো মাথায় হাত দিয়ে। তারমানে ও রুমে যা করছে তূর্য সব দেখেছে ছিঃ ছিঃ ছিঃ। লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো বর্ষা মুখ মন্ডল। কতো শত বার রুমেই ড্রেস চেঞ্জ করেছে হিসেব নাই। তূর্য বাসায় থাকে না আর বাসায় পুরুষ মানুষ ও নাই। তাই এই কাজ করেছে কিন্তু এখন কি শুনলো এটা। দুহাতে মুখ ডেকে বসে র‌ইলো বর্ষা।

‘ এখন এতো লজ্জা পেয়ে কি হবে যা দেখার তা তো দেখা হয়েই গেছে।’

‘ বাজে লোক! আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না একদম ছিঃ! আপনার মতো বদমাইশ লোক আমি জীবনে দেখি নাই।’ কাঠ গলায় বলল।

.
বাড়িতে আসার পর থেকেই বর্ষা খালি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কারণ ও রুমের ক্যামেরা গুলো কোথায় আছে সেগুলোই খোঁজে চলেছে। তূর্য এখন ঘুম। আসার পর‌ই শাওয়ার নিয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। বর্ষার চোখে ঘুম নাই। ও ঘুমন্ত তূর্য এর দিকে হা করে কতোক্ষণ তাকিয়ে ছিলো। তারপর কাজে লেগে গেছে। সিসি ক্যামেরা আছে জানার পর থেকেই লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে ওর। কতো কিছু করছে ঠিকমতো ওরনা ও গায়ে রাখে নি। ওইভাবে তূর্য ওকে দেখেছে ভাবলেই গা শিউরে ওঠে।
আর কখনো ওরনা ছাড়া এই রুমে থাকবে না ও। তূর্যের মতো খচ্চর আর একটা দেখে নি বর্ষা। কোন মেয়ের বেডরুমে কি কেউ ক্যামেরা সেট করতে পারে কেউ? আগেই ভাবা উচিত ছিল আমার তূর্য বাসায় এমন প্রটেক্ট ছাড়া রাখার মানুষ না। সোফায় বসে নখ কামড়াচ্ছে বর্ষা। ওর ধ্যান কোথায় আছে কে জানে?

হঠাৎ উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে বর্ষা। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে বিছানা ফাঁকা। আর তূর্য অকে জাপ্টে ধরে ঘাড়ে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিচ্ছে! ধাক্কা দিয়ে তূর্য কে সরাতে গেলে তূর্য আরও শক্ত করে চেপে ধরে। ওইভাবে থেকে তুর্য বলে ওঠে,

‘এখনো খুঁজে পাওনি ক্যামেরাগুলো?’

তূর্য আতকে উঠে বলে, ‘ মা–নে

‘তুমি যে এতক্ষণ খুব মনোযোগ দিয়ে ক্যামেরাগুলো খুজতেছিলে আমি খুব ভাল করেই জানি!’

‘জানেন যেহেতু তাহলে তাড়াতাড়ি বলুন কোথায় ক্যামেরা? তাড়াতাড়ি ক্যামেরা খুলে রাখুন। আপনার লজ্জা করেনা এই রুমে ক্যামেরা লাগাতে।’

‘লজ্জা করবে কেন?লজ্জাজনক কাজ এখানে করো কেন? ওয়াশরুম রেখে। আমার বাসায় কি ওয়াশরুম নাই নাকি! আমি তো আমার বউকে দেখার জন্য সর্বখন এই ব্যবস্থা করে রেখেছি। তাছাড়া এ বাসার প্রত্যেকটা কোনায় ই ক্যামেরা ফিট করা আছে। সেটা তোমার আগেই বোঝা উচিত ছিল বর্ষা মনি।’

বর্ষা কিছু বলতে যাবে। তূর্য ওকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো আর বললো,

‘রোমান্স পরে হবে আগে চলো খেয়ে আসি বড্ড খিদে পেয়েছে। উফ দুদিন ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারিনি।’

বলেই বেরিয়ে গেলো বর্ষা ওইভাবেই থ মেরে বসে র‌ইলো।
তূর্য বাবার সাথে দেখে করে নিচে এসে খেতে বসলো। বর্ষা আসেনি তাই শান্তাকে বললো,

‘ বর্ষা ক‌ই?’

‘ ব‌উমনি তো এখনো আসে নাই।’

‘যা ডেকে নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি আসতে বলবি।’

‘ আইচ্ছা।’

দৌড়ের উপরে চলে এলো শান্তা। বর্ষাকে জোর করে টেনে নিয়ে এলো। বর্ষা আসতে চাইছিলো না। তাই জোর করে ধরে নিয়ে এসেছে।

তূর্য বাঁকা হেসে ওদের দিকে তাকালো। বর্ষা মাথা নিচু করে চুপচাপ একটু খাবার খেলো। লজ্জায় তূর্যের দিকে তাকাতে পারছে না।

তূর্য ওর অবস্থা দেখে হো হো করে হেসে উঠলো। বর্ষা এবার লজ্জায় আর থাকতে পারলো না। দৌড়ে উপরে চলে গেলো। ওর খালি একটা কথাই মনে হচ্ছে তূর্য জেনে গেছে ওর আবেগ অনুভূতি সবকিছু। তূর্যকে নিয়ে এত খামখেয়ালি চিন্তা। সারাক্ষণ তাকে নিয়ে ভাবা। সহ্য না করার পর ও লোকটাকে ভুলতে না পারার জন্য তিশার সাথে সেদিন রাগ করার পর। আবার সব কথা শেয়ার করেছে আলোচনা করেছে। আর সব শেষে তিশা একটা কথাই ভালো করে ওকে বুঝিয়েছে তা হলো কে তূর্য কে ঘৃণা করলেও এখন তার সাথে থাকতে থাকতে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু তা বর্ষা স্বীকার করতে চায়না। এসব নিয়ে কতো কথায় না বলেছে তূর্যর ছবির সঙ্গে। তার মানে তূর্য এটাও জেনেছে বর্ষা তার প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে।

বর্ষা নিজের মনেই বিরবির করতে লাগলো, যার জন্য আমার জীবনের সুখ-শান্তি আনন্দ সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। সে মানুষটা কে আমি কি করে ভালোবেসে ফেললাম? যার জন্য আমাকে আমার পরিবারকে এত কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে! যিনি একটা মিথ্যাবাদী! সমাজের চোখে মুখোশ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চোখের আড়ালে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। যিনি আমার বাবা সর্বনাশ করতে চাইত। সেই মানুষটাকে আমি কি করে ভালোবেসে ফেললাম! কিছুতেই মানতে পারছে না বর্ষা এটা। এখন আরো পারছে না তূর্য সব জেনে গেছে লুকানো অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। এসব মানতে পারছে না বর্ষা। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। নিজের বোকামোর জন্য নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। এতো বেহায়া কি করে হলাম আমি! কাঁদতে কাঁদতে বর্ষা ঘুমিয়ে পড়ল। তূর্য রুমে এসে বর্ষাকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেল। এগিয়ে গিয়ে চোখে কোনে জল দেখতে পেল। কাছে এগিয়ে ঝুঁকে চোখে পানি মুছে কপালে চুমু।
আর বিরবির করে বললো, ‘ মায়াপরী এইবার সব সত্যি জানিয়ে নিজের করে নেব তোমাকে আমার ভালোবাসার। তোমাকে এক আকাশ সমান ভালোবাসা দেবো। সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবো দেখো। সব জানার পর আমাকে ভালোবাসার জন্য তোমাকে আর আফসোস করতে হবে না।’
বলেই পর পর করো কয়েকটা চুমু খেলো কপালে তারপর বারান্দায় চলে গেলো।

#চলবে……