তুমি শুধু আমার পর্ব-০৪

0
777

#তুমি শুধু আমার
#written by ayrin
#part4

মিস্টার রিহান আপনি বিরিয়ানি খাবার জন্য আমার বাড়িতে চলে এসেছেন। আপনি যে এসেছেন আপনার তো জানা ছিলো যে এই বাড়িতে একজন মেয়ে থাকে। যার নজর সবসময় বড়লোকদের উপর থাকে। আপনার কি নিজেকে বড়লোক বলে মনে হয়না?এখন যদি আপনাকে ফাঁসিয়ে দিই,,,

রিহানের রাগে অপমানে মেহের কে মাথায় তুলে আছাড় মারতে মন চাচ্ছে,, কেন এসেছিলো এই অহংকারি মেয়েকে দেখতে। জন্মের দেখা দেখে নিয়েছে। আর জীবনেও এই বাড়িতে আসবেনা।
কিসের বিরিয়ানি কিসের কি না খেয়েই বাড়িতে চলে এসেছে। পেছন থেকে রাবেয়া খালা অনেক বার ডেকেছে কিন্তু তার কথা না শুনই বেড়িয়ে পরে রিহান।

রিহান রাস্তায় হাটছে আর ভাবছে আমি যে রাগ করে না খেয়েই চলে এসেছি তাওতো ঐ মেয়েটা আমাকে ডাকলোনা। ডাকবে কেনো আমি ঠিকই ভেবেছিলাম ঐ মেয়েটা অহংকারী।

রিহান নিজেই নিজেকে বলছে দেখ রিহান তুই ঐ মেয়েটার কথা ভেবে এতদিন পাগল হয়েছিলিস। আর এই মেয়েকে দেখ তোকে দেখতে পেয়ে অপমান করতে ভুলেনি। ভুলেও এই মেয়েকে আর মনে করা যাবে না।

রিহান যাওয়ার কিছুক্ষন পরই মেহেরের বাড়িতে নিহান আসলো। মেহের নিহানকে রিহানের আসার কথা বললো। নিহান সবটা শুনে কিছুটা অবাকই হয়েছে। তার ভাই সামান্য বিরিয়ানি খাবার জন্য মেহেরের বাড়িতে এসেছে। যে মেহেরের জন্য সে এতদিন দেশের বাহিরে ছিলো। আর আজকে সামান্য বিরিয়ানির জন্য সেই মেয়ের বাড়িতে এসেছে। কথাটা নিহান কিছুতেই মানতে পারছে না।

তাও নিহান বললো ভাইয়া খেয়ে গেছে?

মেহের কে যে রিহান সেদিন অপমান করেছে মেহের সেগুলো নিহান কে জানায় নি। তাই আজকে মেহেরের কথাগুলোও বলতে পারছেনা।

কারণ তার জন্য এমনিতেই দুই ভাইয়ের মধ্যে মনমালিন্য। এখন যতটুকু ঠিক হয়েছে,, এই কথাগুলো শুনলে আবার ভুল বুঝাবুঝি হবে।

তাই মেহের বললো কি যেন আর্জেন্ট কাজ আছে বলে না খেয়েই চলে গেলো।

নিহান যাবার সময় রিহানের জন্য বিরিয়ানি নিয়ে গেলো।

নিহান বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রিহানের জন্য নিয়ে আসা বিরিয়ানিটা নিয়ে রিহানের রুমে গেলো,,,

নিহান রিহানের রুমের দরজায় নক করে বললো ভাইয়া আসবো?

ভেতর থেকে রিহান বললো আয়,,

নিহান বিরিয়ানিটা নিয়ে রিহান কে বললো এই নে তোর বিরিয়ানি,যেটা খাবার জন্য নিজের শত্রুর বাড়িতে গেলি। শুনলাম সেটা না খেয়েই চলে এসেছিস। তাই তোর জন্য নিয়ে আসলাম।

রিহান মাত্র দুপুরের খাবার খেয়ে রুমে এসেছে। এখন নিহান জোর করে রিহানকে বিরিয়ানি খাইয়ে দিচ্ছে। আর বলছে তোর এত খেতে ইচ্ছে করছিলো তাহলে এখন খাচ্ছিস না কেনো, তারাতাড়ি খা।

রিহান মনে মনে বলছে মেয়েটা আমার ভাইকেও তার মতো বানিয়ে ফেলেছে। আমি জানি নিহান ইচ্ছে করেই আমাকে এভাবে খাওয়াচ্ছে,, কারণ ও বুঝতে পেরেছে আমি মেহের কে দেখতেই ওখানে বিরিয়ানি খাবার নাম করে গিয়েছিলাম।
তাই আমার মুখ থেকে সত্যি কথা বের করানোর জন্য ইচ্ছে করে এসব করছে। কিন্তু আমিও স্বীকার করবোনা।

রাত প্রায় একটা বাজতে চললো এখনো রিহানের চোখে ঘুম ধরা দেয়নি । আজ মেহেরকে আরো বেশি মনে পরছে। কতক্ষণ এপাশ ওপাশ করে উঠে পরলো,,, সিদ্ধান্ত নিলো মেহের কে দেখে আসবে লুকিয়ে লুকিয়ে,,

আর কিছুদিনের মধ্যেই কানাডা বেক করবে। এখানে থাকলে শুধু ঐ মেয়ের কথাই মনে পরবে।

এসব ভেবে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো,,,

কিছুক্ষনের মধ্যেই মেহেরের বাড়ির সামনে চলে এলো। কিন্তু গেট বন্ধ থাকার কারণে ভিতরে যেতে পারছে না।

তাই বাহিরে দাড়িয়ে আছে।মশার কামর খেতে খেতে অবস্থা খারাপ। রিহান নিজেই নিজেকে গালমন্দ করছে,,কোন দুঃখে এখানে এসেছে।

একঘন্টার মতো দাড়িয়ে থেকে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো৷

পরের দিন,,

মেহের আজ টিউশনির জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছে।অসুস্থ থাকার কারণে এই কয়েকদিন পরাতে পারেনি। নিহান কে বললে যেতে দিতোনা তাই নিহান কে না জানিয়ে একাই বের হয়েছে। রাস্তায় ওদের ক্লাসমেট একজন ছেলের সাথে দেখা হয়ে গেলো।দুজনই টুকটাক কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে৷

দুর থেকে রিহান ওদেরকে দেখছে। মেহের কে অন্য একজন ছেলের সাথে দেখে ওর রাগ হচ্ছে। সে রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে মেহেরের সামনে গিয়ে মেহেরের হাত ধরে রিহান তার গাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে ।

মেহের- কি ব্যাপার? আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। আর এভাবে টেনে নিয়ে আসছেন কেন?

মেহের আর রিহান দু’জনেই রিহানের গাড়িতে বসে আছে। রিহান গাড়িতে বসেও রাগে ফুস ফুস করছে। মেহের একবার রিহানের দিকে তাকিয়ে বললো আপনি ঠিক আছেন?

রিহান কিছু বললো না,, আগের মতোই বসে আছে।

মেহের আর কিছু না বলে দরজা খুলে বের হতে চাইলে রিহান গাড়ি লক করে দেয়। যার জন্য মেহের আর বের হতে পারে না৷

প্রায় পাঁচ মিনিট দুজনেই নিশ্চুপ থাকে৷ মেহেরের বিরক্ত লাগছে কথা নেই বার্তা নেই হুটহাট তুলে এনে গাড়িতে বসিয়ে রাখছে,, না নিজে কিছু বলছে আর না আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে,,

মেহের নিজেকে শান্ত করে রিহান কে আবারো বললো,, আমাকে এখানে নিয়ে আসার কারণ টা কি জানতে পারি?
যদি কোন কারণই না থাকে তাহলে আমাকে বসিয়ে রেখেছেন কেনো। আপনার মতো ঘরের মধ্যে বসে থেকে খাবার পাইনা আমি। তারজন্য কাজ করতে হয় আমার। এখন এখানে নিয়ে এসে যে বসিয়ে রেখেছেন,, তাতে আপনার কিছু না হলেও আমার অনেক ক্ষতি হবে।

এমনিতেই আমি আপনার জীবন নষ্ট করে দিয়েছি।এখন কিন্তু আমি আপনার পরিবার থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছি। আমাকে এভাবে বসিয়ে রাখার কোন মানেই হয় না । গাড়ির লক খুলুন আর আমাকে বের হতে দেন।

রিহান- বের তো হবেই কারণ ফাসানোর মতো কাউকে পেয়ে গেছো না? একটু আগে যার সাথে দেখলাম সেই নিশ্চয়ই তোমার নেক্সট টার্গেট। তোমার মতো মেয়ে আর কিই বা করতে পারে।

মেহের – আমি যাকে ইচ্ছে তাকে ফাদে ফেলবো। এসব নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে। আপনার মনে হয় খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই তাইনা,, আমার পিছু কেন নিয়েছেন। আর একদম চিন্তা করবেন না আপনাকে কয়েকদিনের মধ্যেই মুক্তি দিয়ে দিবো।

রিহান- মুক্তি তো দিবেই নতুন কাউকে পেয়েছো।আর তোমার মতো মেয়ের পিছু নিবে এই রিহান, সপ্ন দেখছো না তো?

মেহের – আমি সপ্ন দেখিনা আর দেখতে চাই নাও৷ আমাকে যেতে দিলে আমি খুশি হবো।

রিহান আর কিছু না বলে লক খুলে দেয়। মেহের গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাত ধরে হাটতে থাকে। আর রিহানের বলা সমস্ত কথাগুলো ভাবতে থাকে।

মেহের আজ পর্যন্ত সকল কাগজ কলমে নিজেকে বিবাহিত বলে পরিচয় দিয়ে এসেছে। এবং রিহান কেই স্বামী হিসেবে মানে। কিন্তু সে রিহানের সাথে নিজেকে জরাতে চায়না। কারন তাদের দুজনের পথ আলাদা। তাই মিথ্যে সপ্ন দেখা বন্ধ করে দিয়েছে।

মেহের সবগুলো টিউশনি শেষ করে বাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছে৷ তখন নিহানের নাম্বার থেকে ফোন আসলো,, মেহের রিসিভ করলোনা,,কারন গাড়ির হর্ণ এর আওয়াজে নিহান বুঝে যাবে মেহের বাড়ির বাহিরে আছে। এদিকে মেহেরের শরীর টাও খারাপ করছে। আশেপাশে তাকিয়ে রিক্সা খুঁজলো কিন্তু একটাও খালি রিক্সা পাচ্ছে না। এদিকে সন্ধা হয়ে আসছে। সামনের রাস্তাটা অনেক নিরিবিলি, তা নাহলে হেটেই যেতে পারতো। আরো কিছুক্ষণ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো,, কিছুক্ষন পর একটা খালি রিকশা আসতে দেখে মেহেরের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো । কিন্তু সেই হাসি আর বেশিক্ষণ টিকলোনা যখন অন্য একজন লোক সে রিকশার মধ্যে চড়ে বসলো।এদিকে রাত হয়ে যাচ্ছে তাই মেহের একাই হেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। হাটতে হাটতে নির্জন এলাকায় যখন আসলো,, তখন চারপাশে কাউকে না দেখে মেহের কিছুটা আশাহত হলো,,সে ভেবেছিলো অন্তত দু একজন থাকবে,,

মেহের যখন চারপাশ দেখতে ব্যাস্ত তখন পেছন থেকে কেউ বললো এখানেও কি ছেলে খুজার জন্য দাড়িয়ে আছো,,

#চলবে