তুমি শুধু আমার পর্ব-০৫

0
769

#তুমি শুধু আমার
#written by ayrin
#part5

মেহের যখন চারপাশ দেখতে ব্যাস্ত তখন পেছন থেকে কেউ বললো এখানেও কি ছেলে খুজার জন্য দাড়িয়ে আছো,,

মেহের পিছনে তাকিয়ে রিহান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। ওর আর বুঝতে বাকি রইলো না,, কথাটা রিহান বলেছে।

মেহের- ছেলে খুজতে না জামাই খুজতে দাঁড়িয়ে আছি। আপনিও আসেন খুজতে হেল্প করেন।

রিহান-তুৃমি তোমার জামাইকে বলছো,, তার জন্যই সতীন খুজতে। কেমন মেয়েগো তুমি?

মেহের অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিহানের দিকে।

রিহান মেহের কে নিজের দিকে এভাবে তাকাতে দেখে বললো কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?আমাকে কি আজকে বেশি সুন্দর লাগছে?

মেহের বললো আপনি একটু আগে কি বলেছেন আমাকে?

রিহান- তুমি কি শুনতে পাওনা। আমি বলেছি আমাকেই বলছো আমার সতীন পছন্দ করে দিতে,,, রিহান কথাটা বলে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলো। দুমিনিট লাগলো পরিস্থিতি বুঝতে ওর। নিজের উপর রিহান নিজেই বিরক্ত হচ্ছে,,

মেহের এখনো ভ্রু কুচকে রিহানের দিকে তাকিয়ে আছে৷

রিহান সেটা দেখে বললো এভাবে তাকানোর কি আছে। আমাদের এখনো ডিভোর্স হয়নি। তাই আমি বলতেই পারি।

মেহের রিহান কে আর কিছু বললো না। নিজের মতো করে হেটে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রিহান থাকায় তার আর ভয় করছে না। কারণ রিহান ওর সাথে যতই বাজে বিহেভিয়ার করোক না কেন সে জানে রিহান মেয়েদের কে যথেষ্ট সম্মান করে। এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই সামনের দিকে এগুচ্ছে মেহের আর তার পিছনে পিছনে রিহান।

রিহান- ( মনে মনে বলছে এই মেয়েকে রাস্তায় একা দেখে ওর পিছু পিছু আসলাম যাতে কোন বিপদ না হয়,,গাড়িতে আসতে বললে তো আসতো না। আর এই মেয়েকে দেখো আমাকে পিছনে বডিগার্ড বানিয়ে নিজে হেলে দুলে মনের সুখে হাঁটছে)

মেহের- মিষ্টার রিহান আপনি এখানে কেনো তা কি জানতে পারি। ইয়ে মানে আপনাদের এতগুলো গাড়ি রেখে রাস্তায় হাঁটছেন। তাই কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করলাম।

রিহান- ( কেন আমাকে যে বডিগার্ড বানিয়ে রেখে নিজে নাচতে নাচতে বাড়িতে যাচ্ছেন,, আমি না থাকলে তো মনে হয় রাস্তায় ভয়ে সেন্সলেস হয়ে পরে থাকতেন,তার জন্যই মানবতার খাতিরে এসেছি, মনে মনে বলছে) কিন্তু মেহেরের উত্তরে এটাই বললো আমার গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে তাই গ্যারেজ এ দিয়ে এসেছি। আর আমার বাড়িও এই রাস্তা দিয়েই যেতে হয়। এবং কয়েনসিডেন্ডেন্টলি তোমার চেহারা টাই আমার সামনে চলে আসে।

মেহের- পৃথিবীতে এতো ছেলে থাকতে কেনো আপনার চেহারাটাই আমার সামনে চলে আসে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আপনার এই আনলাকি চেহারাটা দেখেছি তাই তো এখন গাড়ি পাচ্ছি না। ( মেহের মনে মনে বলছে সবসময় শুধু আমাকেই অপমান করবে,, আমি কেনো নিজের খেয়ে অন্যের অপমান সহ্য করবো)

রিহান- (এই মেয়ের সাথে কথা বললে মনে হয় ক্যাকটাস গাছ কে জরিয়ে রেখেছি,,এই মেয়ের সাথে আর কোন কথাই বলবো না,,অহংকারী মেয়ে একটা) এসব বির বির করে বলে মুখ ভেঙ্গালো।

মেহের- আপনি আমাকে কিছু বলছেন মনে হলো,,

রিহান- মানুষের মনের উপর পিএইচডি করেছো মনে হচ্ছে।

মেহের আর কিছু বলেনি,, সারা রাস্তা চুপচাপ ই ছিলো।

রিহান ও বোবার মতো মেহেরের পিছু পিছু আসছে। মেহেরের বাড়ির কিছু টা সামনে নিহানকে বাইক নিয়ে এদিকে আসতে দেখলো।
এসেই মেহের কে জরিয়ে ধরে বললো তুই ঠিক আছিস তো? তোকে কে বলেছিলো আজকে টিউশনির জন্য বের হতে। আর দুইদিন রেস্ট নিলে কি হতো,,

তাও আমাকে না জানিয়ে একা একা বের হয়েছিস। ফোন দিলাম তাও রিসিভ করিস নি। আমাকে টেনশনে রাখতে তোর খুব ভালো লাগে তাইনা।

মেহের কিছু বললো না,,

ওর নিজেকে মাঝেমধ্যে ভাগ্যবতী বলে মনে হয় কারণ সে এরকম একজন কেয়ারিং বন্ধু পেয়েছে।

পিছন থেকে রিহান এসব দেখে বললো আমার ভাইটা এমন হয়েছে কেনো? কথায় কথায় অন্যের বউকে জরিয়ে ধরে। নিজের বউকে মনে হয় জরিয়ে ধরতে ধরতেই কোল বালিশ বানিয়ে ফেলবে।

নিহান রিহান কে দেখে মেহেরকে ছেড়ে দিলো। তারপর রিহান জিজ্ঞেস করলো তুই এখানে?

রিহান বললো আমার গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে তাই হেটে হেঁটে আসছি। নিহান বললো তুই আমার বাইক নিয়ে বাড়িতে চলে যা। আমি এখন মেহেরের বাড়িতে যাবো,,,

রিহান আর কিছু না বলে বাড়িতে চলে গেলো।

সে দিনের পর পাচদিন হয়ে গেলো,, রিহানের সাথে মেহেরের আর দেখা হয়নি।

রিহান যত তারাতাড়ি সম্ভব কানাডায় চলে যেতে চাচ্ছে। কারণ সে বুঝতে পেরেছে এখানে থাকলে সে মেহেরের মায়ায় জড়িয়ে যাবে,, হয়তোবা গেছে ও।

রিহানের মা রিহানের চলে যাওয়ার ডিসিশন শুনে মেহের কেই দোষারুপ করছে। কিন্তু কেন যেন রিহানের তার মায়ের কথাগুলো ভালো লাগছেনা। সত্যি বলতে মেহেরের এখানে কোন দোষই নেই।

আজ মেহেরের বাবা মায়ের মৃত্যু বার্ষিকি। তাই মেহেরের মন খারাপ,, এই দিনটায় মেহের একাই থাকতে চায়। নিহানের সাথেও আজকের দিনে কোন কথা বলেনা। নিহান প্রথম প্রথম মন খারাপ করলেও পরে সে বুঝছে আজকের দিনটা মেহের তার বাবা মায়ের স্মৃতি নিয়েই থাকতে চায়। তাই আর মেহেরকে ডিস্টার্ব করে না।

নিহান বেলকনিতে বসে অন্যমনষ্ক হয়ে এসব ভাবছিলো। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির মধ্যেই মেহের এখনো বাড়ির বাহিরে রয়েছে। তাকে নিয়েই নিহানের চিন্তা হচ্ছে৷

তখনি হাতে কফি নিয়ে রিহান বারান্দায় আসলো,, নিহান কে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে,, নিহান উত্তরে কিছু হয়নি বললো।

রিহান বুঝতে পেরেছে নিহান কিছু নিয়ে চিন্তিত,, তাই তার মন ভালো করার জন্য বললো লং ড্রাইভে যাবি?

নিহান না করতে গিয়েও থেমে গেলো,, রাস্তায় বের হলে যদি মেহের কে দেখতে পায় এই আশায় হ্যা বললো।

তারপর তারা দুজন বেরিয়ে পরলো,,

মেহের নদীর ধারে একা একা বসে বৃষ্টিতে ভিজছিলো। আজকে ওর সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু এতিম বাচ্চাদের খাইয়েছে৷ আর এখন একা একাই বসে আছে নদীর তীরে,,

আজ যদি তার বাবা মা বেচে থাকতো তাহলে হয়তো মেহের কে এত অপমান সহ্য করতে হতো না। তারপর নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দেয় এই বলে আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

মেহেরের শরীর খারাপ হচ্ছে,, তাই মেহের বাড়ির উদ্দেশ্য হাটা ধরলো।

ভিজে জামা কাপর শরীরের সাথে লেগে আছে। ওড়না নিয়ে নিজেকে যতটুকু সম্ভব কভার করেছে। কিছুদুর এগোতেই দেখলে একটা মাঠে কতগুলো বাচ্চা বৃষ্টিতে ভিজছে৷ সেও তাদের সাথে জয়েন করলো।

নিহান গাড়িতে বসে রাস্তার চারপাশে মেহের কে খুজে চলছে,,,তখনি দেখলো মেহের কয়েকটা বাচ্চার সাথে বৃষ্টিতে ভিজছে। নিহানের মেহের কে দেখে রিহান কে গাড়ি থামাতে বললো,, আর বললো তুই বাড়িতে চলে যা,আমার যেতে দেরী হবে।

আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে মেহেরের দিকে হাঁটা শুরু করলো।

রিহান আকস্মিক নিহানের আচরণ কিছুই বুঝতে পারেনি। হঠাৎ কিছু দুরে মেহেরকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে যা বুঝার বুঝে ফেললো।

মেহের কে দেখে পেয়ে রিহানের মন ভালো হয়ে গেলো। গত পাঁচদিনে একবারও মেহেরের সাথে তার দেখা হয়নি।

নিহান মেহের কে টেনে নিয়ে আসছে,, আর মেহের নিহাইন্না নিহাইন্না বলে চেঁচাচ্ছে আর বলছে ছেরে দে আমায়।

নিহানের মেজাজ খারাপ হচ্ছে,, থাকে একা বাড়িতে এই বৃষ্টিতে ভিজে শরীরে জ্বর চলে আসছে তাও বৃষ্টিতে ভিজবে উজবুক একটা,,,

নিহান রাস্তায় এসে রিহান কে দেখে বললো তুই এখনো যাস নি? না গিয়েছিস ভালো হয়েছে মেহেরের বাড়িতে চল।

মেহের বললো নিহাইন্না ছাড় আমাকে তোর এই বজ্জাত ভাইয়ের গাড়িতে আমি যাবোনা,,,

#চলবে