#তুমি শুধু আমার
#written by ayrin
#part6
মেহের বললো নিহাইন্না ছাড় আমাকে তোর এই বজ্জাত ভাইয়ের গাড়িতে আমি যাবোনা,,,
নিহান- দেখ মেহু জিদ করবিনা৷ তোর শরীর জ্বরে পুরে যাচ্ছে। তারাতাড়ি বাড়িতে যেয়ে মেডিসিন নিতে হবে।
মেহেরের সেই এক কথা সে যাবেনা মানে যাবেনা৷
রিহান গাড়ি থেকে নেমে নিহান কে বললো তুই ড্রাইভ কর আমি এটাকে দেখছি,,,
মেহের রিহান কে দেখে নিহানের হাত শক্ত করে ধরে বললো আমি এই টিহান কিহানের সাথে যাবো না।
রিহান মেহেরের হাত থেকে নিহানকে ছাড়িয়ে দিলো। নিহান ড্রাইভিং সিটে বসলে রিহান মেহের কে কোলে তুলে নিলো।
রিহান মেহের কে কোলে নিয়েই গাড়িতে বসেছে। মেহের রিহান কে ইচ্ছেমতো খামচি চিমটি কাটছে। রিহান আর সহ্য করতে না পেরে মেহের কে জোরে ধমক দিলো,,,
জ্বরের ঘোরে মেহের বাচ্চাদের মতো করছে,,রিহানের ধমক শুনে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো।
কাঁদতে কাঁদতেই বললো আমি এতিম বলে সবাই আমার সাথে এরকম করেন তাইনা। বাবা মা ছাড়া পৃথিবীতে বেচে থাকাটা যে কত কষ্টের সেটা শুধু একমাত্র যারা এতিম তারাই জানে।
এসব বলতে বলতে সেন্স হারিয়ে ফেললো,,, রিহান পরম যত্নে মেহের কে আগলে নিলো দু বাহুর মাঝে,,,
নিহান ড্রাইভিং সিটে বসে মিররের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। তার ভাই কিনা মেহের কে জরিয়ে ধরেছে,, যাকে সে সহ্য করতে পারেনা৷
রিহান নিহানকে একটা ধমক দিয়ে বললো সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালা।
নিহান আর না তাকিয়ে মনযোগ দিয়ে গাড়ী চালাতে শুরু করলো। মেহেরের বাড়ির সামনে এসে গাড়ী থামলে রিহান মেহেরকে কোলে নিয়েই মেহেরের ফ্লাটে চলে গেলো।
মেহের কে বেডে শুইয়ে দিয়ে কমরে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। আর মনে মনে বলছে এই মেয়ে দেখতে শুটকি হলে কি হবে উজনে ছোট খাটো একটা হাতির বাচ্চা৷ রিহান রুম থেকে বের হতে নিলেই শুনতে পেলো মেহের বলছে নিহাইন্না আমি তুই খুব পচা,,, তুই ও তোর বজ্জাত ভাইয়ের মতো হয়ে যাচ্ছিস। আমাকে ছেড়ে চলে যাস না প্লিজ তুই ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই,,
রিহান- আমি বউ পাগল দেখেছি,, বর পাগল দেখেছি কিন্তু শুধু এই মেয়েকেই একমাত্র দেখলাম দেবর পাগল। কথাটা বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
রাবেয়া খালা এসে মেহেরের ড্রেস চেন্জ করে দিলো।
রিহান আর নিহান এখনো মেহেরের বাড়িতেই আছে। নিহানের এই বাড়িতে ড্রেস ছিলো তাই সেও চেন্জ করে নিলো।
রিহান এটা দেখে মনে মনে বললো আমার বউয়ের বাড়িতে আমার ড্রেস নেই অথচ আমার ভাইয়ের যাবতীয় সবকিছুই দেখি এবাড়িতে রয়েছে। বুঝলাম আমার ভাইটাও ভাবি পাগল হয়ে গেছে।
রিহানের হঠাৎ মনে পড়লো সে মেহের কে বার বার নিজের বউ বলে স্বীকার করছে৷ তারপর অনেক ভেবে নিজেই নিজেকে বললো রিহান নিজেকে সামলা। তোর আর ঐ মেয়ের রাস্তা দুদিকে,তুই এই মেয়ের মায়ায় পরতে পারিস না।
১ মাস পর,,
আজ রিহানের ফ্লাইট,, হ্যা রিহান কানাডায় বেক করছে। এই একমাস মেহেরের মুখোমুখি হয়নি রিহান। মেহেরের সামনে গেলে রিহান নিজের অস্তিত্বই ভুলতে বসে।
জানালা দিয়ে আকাশের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে মেহের। রিহান আজ চলে যাবে ভাবতেই ওর দম বন্ধকর অনূভুতি হচ্ছে। এত কিছুর পরও মেহেরের অবচেতন মন শুধু রিহানকেই খুজে।
মেহের মনে মনে বলে মিষ্টার রিহান আমার জন্য এই দেশ ছেরে চলে যাচ্ছেন তাইনা ,, এমনও দিন আসতে পারে আবার আমার জন্যই এই দেশে ফিরে আসবেন,, অপেক্ষায় থাকবো সেদিনের। আপনার মুখ থেকে শোনার জন্য ” তুমি শুধু আমার”
রিহান কানাডায় এসেছে আজ দশ দিন হলো। মেহের কে ভুলে থাকতে এসে এখানে প্রতি মূহুর্তে মেহের কেই বেশি মনে করছে৷ একটু ঘুমাতেও পারেনি এই দশ দিনে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। তারপরও সে জিদ করে আছে সে আর বিডি তে যাবেনা। আর কিছুদিনের মধ্যে মেহের কে ভুলে যাবে সে আশায়।
এভাবেই প্রায় তিন মাস কাটলো,,,
রিহান ফেসবুক স্ক্রল করছিলো এমন সময় তার সামনে কিছু পিক আসলো যেগুলো দেখে ওর রাগে জিদে ফোনটাই আছাড় মারলো।
তারপর কাউকে কল করে ইমার্জেন্সি টিকিট কাটতে বললো বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার।
ভার্সিটিতে নিহান আর মেহেরের অনেক গুলো ফ্রেন্ড হয়েছে। কিম্তু অতটাও ক্লোজ নয়। মেহের নিহানরা সবাই ডেয়ার গেম খেলছিলো। অবশ্য মেহের খেলতে চায়নি। সবাই জোর করায় খেলতে হচ্ছে। মেহেরের ডেয়ার ছিলো ওদেরই ক্লাশমেট আকাশ নামের একজনের সাথে কাপল পিক দিতে হবে। মেহের প্রথমে রাজি না হলেও পরে গেমের রুলস এর কারনে রাজি হয়।
দুর্ভাগ্যবশত পিক টা রিহান দেখতে পায়। আর তার পরেই বিডিতে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।
রিহান এতোদিনে ভালো করেই বুঝেছে সে মেহের কে ভালোবেসে ফেলেছে।কিন্তু সে স্বীকার করতে চায়নি। কিন্তু আজ মেহেরের সাথে অন্য ছেলেকে দেখে ওর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। মেহের অন্য কাউকে ভালোবাসে এটা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারছেনা।
তিন মাসে মেহের নিজেকে অনেকটা শক্ত করে ফেলেছে। সে ডিসিশন নিয়েছে রিহান যদি তার কাছে ফিরতেও চায় তাহলেও সে যাবেনা। এখন ওর একটাই ইচ্ছে নিজের পায়ে দাঁড়ানো।
আজ মেহেরদের নবীনবড়ন অনুষ্ঠান। না চাওয়া সত্বেও আজ মেহের কে শাড়ি পরতে হচ্ছে।
শাড়ি পরে লাফাতে লাফাতে হাঁটছে মেহের।পিছন থেকে নিহান হাসতে হাসতে ওর পিছু পিছু আসছে। আর মেহের কে বলছে মেহু তোকে আজ না পুরো ব্যাঙ এর মতো লাগছে।
মেহের পিছন ফিরে নিহান কে বললো মেয়েদের শাড়ি পরতে বলেছে তোদের কেও লুঙ্গি ড্রেসআপ দেয়া উচিত ছিলো।
তাহলে তুই ও আমার সাথে ব্যাঙ এর মতো লাফাতে লাফাতে হাঁটতি।
মেহের ভার্সিটির সামনে এসে নিজেকে যথাসম্ভব গুছিয়ে হাঁটছে৷ আর নিহানকে বলছে তুই আমার পিছু পিছু আসতে থাক,, আমি যদি বাই এনিচান্স পরে টরে যাই,,তাহলে সাথে সাথে আমাকে কেচ করে নিবি।
নিহান- হ্যা এমন ভাবে কেচ করবো যেন তুই আমার হাতের মুঠোয় থেকে ফুটবল হয়ে বের হবি। আর কখনো সোজা হতে পারবিনা।
সামনে এগুতেই আকাশের সাথে মেহের আর নিহানের দেখা হলো। মেহেরকে দেখে আকাশ বললো আরে আমার ডেয়ার গেমের প্রেমিকা আপনাকে শাড়িতে তো পরি পরি লাগছে৷
পিক আপলোড করার পর আকাশের সামনে যেতে মেহেরের লজ্জা লাগে। ঐ ঘটনার পর আর আকাশের সামনাসামনি হয়নি।
নিহান বুঝতে পেরে আকাশ কে বললো আকাশ মেহের ঐ ব্যাপারটা নিয়ে আন ইসি ফিল করছে। এজন্য এসব ব্যাপারে কথা না বলাটাই ভালো হবে।
আকাশ – মেহের এটা নিয়ে সিরিয়াস হবার কোন কারণ নেই। আমরা ফ্রেন্ড আমাদের মধ্যে এসব মজা হতেই পারে। একটু নরমাল হও এবার,,
মেহের বললো আমি বুঝতে পেরেছি। চলো এবার ভেতরে যাই,,নাহলে দেরী হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠান শেষে মেহের আর নিহান একসাথে বাড়িতে ফিরছে। মেহেরকে ওর ফ্লাটের সামনে নামিয়ে নিহান ওর বাড়িতে চলে গেলো।
মেহের তাদের পাশের ফ্লাটের একটা পিচ্চিকে দেখলো একা একা কান্না করতে। মেহের পিচ্চিটার সামনে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো। মেহের কে দেখে মেহেরের গলা জরিয়ে পিচ্চিটা কাঁদতে কাঁদতে বললো মেহু আন্টি সবাই আমাকে না নিয়েই পার্কে খেলতে চলে গেছে।
মেহের পিচ্চিটাকে কান্না থামাতে বললো এবং বললো সে পার্কে নিয়ে যাবে। পিচ্চিটা মেহেরের কথা শুনে ওর সারা মুখে চুমু খাচ্ছে।
মেহের পিচ্চিটাকে বললো তুমি তোমার আম্মুকে বলে আসো আমি ড্রেস চেন্জ করে আসছি।
মেহের রুমে গিয়ে কোনদিকে না চেয়েই ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। একেবারে শাওয়ার নিয়ে বের হলো,,কিন্তু জামা কাপর না নিয়ে যাওয়ায় টাওয়াল পরে বেড়িয়ে আসলো নিশ্চিন্তে। কারণ এ বাড়িতে মেহের ছাড়া আর কেউ থাকেনা। বের হয়ে ওর বেডে একটা ছেলেকে শুয়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে উঠলো,,,,
#চলবে