তুমি শুধু আমার পর্ব-০৭

0
754

#তুমি শুধু আমার
#written by ayrin
#part7

রিহান এয়ারপোর্ট থেকে সোজা মেহেরের ফ্লাটে চলে এসেছে৷ মেহেরের বাড়ির চাবি ওর কাছে ছিলো।রাবেয়া খালা এ বাড়িতে থাকতে উনার কাছে একটা চাবি ছিলো যেটা খালা মেহেরকে আর ফেরত দেয়নি। পরে রিহানকে বলেছিলো চাবি টা দিয়ে মেহোরকে দিয়ে দিতে। রিহান সেটা নিজের কাছেই রেখেছিলো। তাই ওর ভিতরে ডুকতে কোন অসুবিধা হয়নি। আসার পর মেহের কে না পেয়ে ক্লান্ত থাকায় মেহেরের বেডের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে।

মেহেরের চিৎকার শুনে ধরফর করে ঘুম থেকে উঠে রিহান। এদিকে মেহের রিহান কে দেখে ভুত ভুত বলে চিৎকার করে উঠে।

রিহান এমনিতেই মেহেরের উপর রেগে ছিলো। তার মধ্যে এসব চেচা মিচির করার কারণে তার মাথা ব্যাথা করছে। সে উঠে গিয়ে মেহেরের মুখ চেপে ধরলো।

রিহান-এই মেয়ে চুপ করো,, আমাকে কি দেখতে ভুতের মতো লাগছে,,,যে নিজের স্বামী কে ভুত মনে করছো। কেমন মেয়ে তুমি নিজের স্বামী কে চিনতে পারোনা।

মেহের এতক্ষণে ভালো করেই বুঝেছে এটা কোন মনের ভুল বা ভুত নয়। রিহান সত্যি সত্যিই এসেছে। রিহান ফিরে এসেছে ভাবতেই ওর মনটা ভালো হয়ে গেছে।

কিন্তু পরক্ষনেই মনে পড়লো বাস্তবতার কথা,, সে আর দেরী না করে রিহানের হাত তার মুখ থেকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো। তারপর বললো আপনি এখানে কেন?

রিহান- আমার সামনে কি টাওয়াল পরেই থাকবে। ড্রেস পরার কি কোন ইচ্ছে নেই। অবশ্য তুমি এভাবে আমার সামনে থাকলে আমার কোন অসুবিধা নেই।

মেহের তার নিজের অবস্থান ভুলেই গিয়েছিলো ,, রিহানের সামনে এভাবে চলে এসেছে ভাবতেই ওর লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেছে।

ফর্সা গালে লজ্জার আভা পুরোপুরিভাবেই ফুটে উঠেছে। রিহান সেটা দেখে বাকা হাসলো। তারপর বললো কি ব্যাপার আমার সামনে এভাবেই থাকবে নাকি?

মেহের একটা ড্রেস নিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। রিহান সেটা দেখে খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। তারপরই ওর মনে পড়লো মেহেরের কাপল পিক এর কথা। তৎক্ষনাৎ সে রেগে গেলো এবং মেহেরের বের অপেক্ষা করছে।

এদিকে মেহের চেঞ্জ করে বাহিরে বেরিয়ে আসলো। এসে রিহান কে বললো মিস্টার রিহান আপনি আমার বেড রুমে কার পারমিশন নিয়ে এসেছেন তা কি জানতে পারি,,,

রিহান- নিজের বউয়ের বেড রুমে আসতে পারমিশন লাগে বুঝি।

মেহের- কে কার বউ?

রিহান- ওমা ভুলে গেলে তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। তাও আবার পাচ বছর আগে।

মেহের- সে বিয়ে কি আপনি মেনেছিলেন। মানেন নি তো? তাহলে এখন কেন বউ বউ করছেন। আমার আপনাকে প্রয়োজন নেই। আর হে এবার দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে অন্তত ডিভোর্স টা দিয়ে যাবেন।

রিহান- নতুন কাউকে পেয়েছো তাইনা,,এখন কি আর আমাকে প্রয়োজন হবে? আর এখন থেকে আমি যা বলবো তুমি তাই করবে,,

মেহের – আমি কি করবো না করবো সেটা আপনার না জানলেও চলবে।আপনি নিজের চরকায় তেল দেন আমাকে নিয়ে না ভাবলেও চলবে।

রিহান- এতোদিন কিছু ভাবিনি এখন থেকে ভাববো,, আজকে থেকে আমাদের বাড়িতেই তুমি থাকবে,,,প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নেও।

মেহের- আমি কেন আপনাদের বাড়িতে যাবো। আপনার মায়ের গালিগালাজ আর চড় থাপ্পড় খেতে। আর কোন হিসেবে আপনাদের বাড়িতে যাবো,,,

রিহান- আমার স্ত্রী হিসেবে থাকবে। আর চড় থাপ্পড় খেতে হবে না তুমি সিউর থাকতে পারো। একটা থাপ্পড় খেয়েই এতোকথা বলছো মনে হয় তোমাকে প্রতিদিন মেরেছে?

মেহের- আমাকে কি খেলনা পেয়েছেন যে যখন প্রয়োজন খেলবেন খেলা শেষে আবার ছুড়ে ফেলে দিবেন,,

রিহান- এত কিছু এখন বলতে পারবো না। তোমার কিছু না লাগলে এভাবেই চলো,,,

মেহের- স্টপ,,, আপনার নাটক করা শেষ হলে আপনি এখন যেতে পারেন। যত্তসব,, সারাদিন পর বাড়িতে এসে একটু রেস্ট করবো তাও পারলাম না।

রিহান একটু কষ্ট পেলো মেহেরের কথায় তাই আর কিছু না বলে বেড়িয়ে গেলো মেহেরের বাড়ি থেকে।

রিহান সোজা নিজের বাড়িতে চলে গেলো,,রিহানকে দেখে বাড়ির সবাই অবাক হয়ে গেছে। তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছে যখন রিহান কারো সাথে কোন কথা না বলে নিজের রুমে চলে গিয়েছে।

রিহান মনে মনে বলছে,,

তাকে কি কেউ বলেছিলো এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে নাকি আমি বলেছিলাম। তাহলে বাড়ির বাহিরে যাবে কেন? আমি প্রথম বার আসার আগে মা তো বলেছিলো মেহের মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে চলে গিয়েছিলো। তাহলে মেহের কেন বললো এই বাড়িতে আমার মায়ের চর থাপ্পড় খেতে আসবে।

আর মা তো বলেছিলো মেহেরকে শুধু ঐদিন রাগের মাথায় বকাবকি করেছে এবং থাপ্পড় মেরেছে।

রিহান জানেনা,, রিহানের মা রিহান চলে যাওয়ার পর মেহেরের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে,,

রিহানের মা রিহান কে বলেছিলো মেহের তার সাথে খারাপ বিহেভিয়ার করে। এবং মেহেরের নাকি এ বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করেনা তাই এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে না কার কথা বিশ্বাস করবে।

এসব কিছু কিছু ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো। এদিকে বাহির থেকে রিহানের মা রিহান কে অনেক্ক্ষণ যাবৎ ডাকছে,,
রিহান উত্তর না দেওয়ায় তিনি চলে গেলেন।

রাতে রিহানের প্রচন্ড পানি পিপাশায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘরে পানি না থাকায় বাহিরে গেলো,, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত দুটো বাজে,,,

পানি খেয়ে আবার রুমে ফিরে আসলো। আসার পর থেকে ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুমাতে পারছেনা। ওর ক্ষুধাও লেগেছে বাংলাদেশে আসার পর আর কিছু খাওয়া হয়নি তার। রান্না ঘরে গিয়ে দেখে সব খাবার ফ্রিজে রাখা আছে। এখন গরম করে খাবে তাও করতে ভালোলাগছে না । তৎক্ষনাৎ মনে পরলো মেহেরের কথা তারপর নিজে নিজেই বলতে শুরু করলো আমার বউ থাকতে আমি কেন রান্না করবো,,

তার চেয়ে ভালো আমার বউয়ের কাছেই চলে যাই,,
তারপর মেহেরের বাড়ির উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলো।

ঘুমের মাঝে মেহেরের মনে হচ্ছে কেউ তার দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে। মেহের আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো ওর সামনে একটা ছায়া মুর্তি, দেখে সে ভয় পেয়ে গেলো। ভয়ে চিৎকার করে উঠলো।
কিন্তু চিক্কুর দেওয়ার আগেই একটা হাত তার মুখ চেপে ধরলো। আর তাকে ফিস ফিস করে বললো,,

আরে আমি রিহান তোমার স্বামি,, চিৎকার করো কেন।
তখন যে আমি কষ্ট পেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম তোমার উচিত ছিলোনা,, আমাকে একটা কল করার?
ভাবলাম আমার চিন্তায় না খেয়ে বসে থাকবে,,

কিন্তু এখানে এসে দেখলাম মহারাণীর মতো পরে পরে ঘুমাচ্ছো,, এমন কেন গোওও তুমি?

মেহের কখন থেকে উম উম করে রিহানের হাত সরাতে বলছে৷ কিন্তু বোকারাম টা না বুঝেই বকবক করতে শুরু করেছে।

মেহের রিহানের হাত টানাটানি করছে ছাড়ানোর জন্য,, রিহান বুঝতে পেরে হাত সরিয়ে নেয়।

মেহের উঠে বসে রিহান কে বললো আপনি আমার রুমে কিভাবে আসেন?

রিহান বললো রাবেয়া খালার কাছে যে চাবিটা ছিলো ঐটা নিয়ে এসেছি।

মেহের- এখানে আসার কারণ কি জানতে পারি?

রিহান- নিজের বউয়ের কাছে আসতে আবার কারণ লাগে জানা ছিলোনা।

মেহের- বাজে কথা বন্ধ করে আসল কাহিনী টা তারাতাড়ি বলে ফেলুন।

রিহান- কি বুদ্ধি গো তোমার,, সব কিছু বলার আগেই বুঝতে পেরে যাও। আমার ক্ষুধা লেগেছে তাই খাবার জন্য এসেছি।

মেহের – আপনার বাড়িতে কি কোন খাবার নেই। রাত বিরেতে অন্যের বাড়িতে খাওয়ার জন্য চলে আসেন?

রিহান- তোমার কটু কথা বলা শেষ হলে কিছু খেতে দাও সত্যিই ক্ষুধা লেগেছে আমার। যদি না দাও তাহলে আমি ঘুমাতে গেলাম বলেই মেহের কে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো,,

মেহের – কি করছেন কি আপনি ছাড়ুন আমাকে।

রিহান- তাহলে রান্না করতে যাও তাড়াতাড়ি,, নাহলে আমি এভাবেই ঘুমাবো। মেহেরকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বললো,,

#চলবে