তুমি শুধু আমার পর্ব-০৮

0
783

#তুমি শুধু আমার
#written by ayrin
#part8

রান্না করে খাওয়াও না হয় এভাবেই জরিয়ে ধরে ঘুমাব,,ইশশ ডং কতো রিহান কে ব্যাঙ করে বলছে।
এই রাতে এখন রান্না করা লাগছে,,শুধু মাত্র রাত দেখে কিছু বললাম না। দিনের বেলা হলে রে রিহাইন্নার বাচ্চা কিহাইন্নআ তোকে আমার হাত থেকে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বাচাতে পারতোনা। মেহের রান্না ঘরে রান্না করছে আর মনে মনে রিহান কে বকাবকি করছে।

তখন পিছন থেকে রিহান বলল তুমি এত ফাস্ট জানতাম না আমার বাচ্চার নাম ও ঠিক করে ফেলেছো দেখছি ।

মেহের রিহানের আওয়াজ শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখে রিহান দাড়িয়ে আছে। তারপর রিহান কে জিজ্ঞাসা করলো আপনার বাচ্চার নাম ঠিক করেছি মানে?

রিহান বলল এই যে কিছুক্ষণ আগে বললে রিহানের বাচ্চা কিহান।

মেহের চখ বড় বড় করে রিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।

রিহান সেটা দেখে বলল এভাবে তাকানোর কি আছে। আচ্ছা এখন এগুলা বাদ দাও বাচ্চার নাম ঠিক করার জন্য সারারাত রয়েছে। এখন আমকে খেতে দাও, ক্ষুদায় পেটে ইদুর গুলো লাফালাফি করছে।

মেহের- আপনি প্রেগন্যান্ট আগে বলবেন তো তাহলে তারাতাড়ি আপনাকে খেতে দিতাম। তাও আবার কতগুলা বাচ্চা।একটা হলেও হতো।

রিহান- প্রেগন্যান্ট মানে,কি বলো এসব?

মেহের- প্রেগন্যান্ট মানে হলো গর্ভবতী এটাও জানেননা। কানাডা থেকে পরাশুনা করে এতটুকু শিখতে পারেন নি।

রিহান- প্রেগন্যান্ট মানে গর্ভবতী আমি জানি কিন্তু আমি কখন বললাম আমি প্রেগন্যান্ট?

মেহের- আপনিই তো একটু আগে বললেন আপনার পেটে ইঁদুরগুলো লাফালাফি করছে। তার মানে হলো আপনার পেটে ইঁদুর আছে। কোন প্রানী পেটে থাকা মানেই প্রেগন্যান্ট।

মেহেরের লজিক শুনে রিহানের মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম। সে প্রেগনেন্ট তাও আবার তার বাচ্চা হলো ইদুর এর বাচ্চা৷ তার বমি বমি পাচ্ছে। ইয়াক ইয়াক করতে করতে বেসিনের দিকে গেলো। মেহের রিহান কে ইয়াক ইয়াক করতে দেখে মনে মনে বললো এখন কেমন লাগে বাছা। আমাকে এই রাতের বেলায় ঘুম থেকে উঠিয়ে রান্না করানো?

তারপর নিজে নিজেই একটু ভাব নিয়ে বললো আগে আগে দেখো হুতাহে কেয়া।

তারপর একটু লেবু কেটে এক গ্লাস সরবত বানিয়ে রেখে দিলো। আর একটু লেবু নিয়ে বেসিনের দিকে গেলো।

রিহান কতক্ষন ধরে ইয়াক ইয়াক করছে কিন্তু তার বমি আসছে না। সারাদিন কিছু খায়নি বমি আসবে কিভাবে।

যখন বের হলো তখন দেখলো মেহের দাড়িয়ে আছে। রিহান মনে মনে সেই খুশি৷

রিহান ভাবছে মেহের তাকে নিয়ে চিন্তিত তাই এখানে এসে দাড়িয়ে আছে।কিন্তু তার এই খুশি আর বেশিক্ষণ টিকলো না যখন মেহের বললো

লেবু টা খেয়ে নিন এই সময় একটু টক টক খেতে হয়।

রিহান নিজেই নিজেকে বলছে কেন যে তখন পেটে ইঁদুর আছে কথাটা বলতে গেলাম। এখন নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেলাম।

মেহের রিহানের হাতে লেবুর খোসা টা দিয়ে আবার রান্নাঘরে চলে আসলো। তারপর খাবার নিয়ে এসে ডাইনিং এ রাখছে।

রিহানের খাবার দেখে ক্ষুধা আরো বেরে গেছে। ও তারাতাড়ি খেতে বসে গেলো। যখন চিকেন নিয়ে খেতে যাবে তখন মেহের ঐটা সরিয়ে রেখে বললো এই সময় এত মশলা মাখানো খাবার খেতে নেই। আমি বরং আপনাকে শাক দেই।

রিহান বললো এই সব ঘাস পাতা কে খায়।

মেহের – এই সময় এসব খাবার ই খেতে হয়,, তাতে বেবি হেলদি এন্ড ফিট হয়।

রিহান- তোমার দেখি সবকিছু সম্পর্কে ভালো ধারণাই আছে। তাহলে তুমিও বেবি নিয়ে নাও। কি বলো লাগবে নাকি। বলে মেহেরকে চোখ মারলো।

মেহের – সবকিছু সম্পর্কে ধারণা রাখাই ভালো৷ কারণ মানুষ কখন কিসের জন্য ভালো মানুষের মুখোশ পরে পিছন দিক থেকে আঘাত করবে তা কেউ জানেনা। তাই আগে থেকে ধারণা রাখা ভালো।

রিহান- তুমি কি ইন্ডাইরেক্টলি আমাকে কথাটা বলছো?

মেহের – ডিরেক্টলি তো আপনাকেই বললাম তাও বুঝতে পারলেন না। এই তো কিছু মাস আগে আমাকে আপনার বাড়িতে দেখে নিজের বাড়ি ছেড়েই চলে যেতে চাচ্ছিলেন। আবার সেই আপনি এখন আমার বাড়িতে এসে আমার সাথে ভালো বিহেভিয়ার করছেন। তাই সন্দেহ করাটা কি অস্বাভাবিক কোন কিছু?

রিহান-এখন কি খেতে পারবো নাকি না খেয়েই থাকবো। যদি তোমার অপমান করা শেষ হয়ে থাকে তাহলে প্লিজ আমাকে ডিস্টার্ব না করে খেতে দাও।

আর তুমি যদি ভেবে থাকো আমাকে হার্ট করে কথা বললে তখনকার মতো চলে যাবো। তাহলে তুমি ভুল ভাবছো। আমি যদি এখান থেকে যাই তাহলে তোমাকে নিয়েই যাবো।

আর যতদিন পর্যন্ত তুমি আমার সাথে না যাবে ততোদিন পর্যন্ত আমি এখানেই থাকবো।

আর আমি তোমাকেই আমার স্ত্রী হিসেবে চাই। আর যত তারাতাড়ি সম্ভব তুমিও আমাকে মেনে নাও। তাহলে তোমার জন্যই ভালো হবে।

মেহের আর কিছু না বলে ওখান থেকে চলে আসলো। বেডরুমের দরজা থেকে চিল্লিয়ে রিহান কে বললো আপনার খাওয়া শেষ হলে সব কিছু ক্লিন করে সোফায় ঘুমিয়ে যাবেন। আর হ্যা আমাকে ডাকাডাকি করবেন না। আর ডাকলেও আমি দরজা খুলবো না। বলে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো। ভিতর থেকে লক ও করে দিলো।

রিহান ডাইনিং এ বসে বসেই চিল্লিয়ে বলছে হ্যা আল্লাহ আমার বউটাকে একটু বুঝ শক্তি দাও। সে যেন তার স্বামীর মনের সমস্ত দুঃখ গুলো চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পায় আমিন।

মেহের রুমের ভিতর থেকেই রিহানের কথা শুনেছে। সে হাসতে হাসতে বিছানায় লুটোপুটি খাচ্ছে। আর মনে মনে বলছে মিষ্টার রিহান জামাই হিসেবে আপনাকে তো কবেই মেনে নিয়েছি। এখন জাস্ট একটু আপনাকে জালানোর পালা আমার। কাল থেকে মিশন জামাইকে জালানো শুরু করবো৷

এসব ভাবতে মেহের ঘুমিয়ে গেলো। আর অন্যদিকে রিহান মশার কামর খেতে খেতে শেষ।

রিহান- আল্লাহ তুমি এই অবলা ছেলেটার অবস্থাটা দেখো।এই মশার কামরে কি ঘুমানো যায়,কি করবো এখন গালে হাত দিয়ে ভাবছে। তারপর কিছু একটা ভেবে ফোন নিয়ে গুগুল এ সার্চ করলো বউকে পটানো যায় কিভাবে।

সেখানে দেখলো নানান রকম গিফ্ট এর কথা আছে,,,
তারপর রান্না করে খাওয়ানোর কথাও আছে। রিহান রান্না করাটাই ভালো মনে করলো।

তারপর ভাবতে বসে গেলো কি রান্না করবে। মেহের কিরকম খাবার খেতে পছন্দ করে সেটাই তো জানেনা।
এসব ভাবতে ভাবতে সোফায়ই ঘুমিয়ে গেলো।

মেহের সকালে ঘুম থেকে উঠে বাহিরে এসে দেখলো রিহান ফ্লোরে মাথা রেখে সোফায় পা তুলে ঘুমোচ্ছে।

মেহেরের রিহানের অবস্থা দেখে খুব হাসি পাচ্ছে। ও ধীরে ধীরে রিহানের দিকে এগিয়ে গেলো।

রিহানকে টেনে টুনে সোফায় শুইয়ে দিলো। এতটুক করেই ওর জান বেড়িয়ে যাওয়ার ফিলিংস হচ্ছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে মেহের

তারপর রিহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর হাতে পায়ে কতগুলো মশার কামরের দাগ।

এসব দেখে মেহেরের খারাপ লাগছে।কিন্তু তারপর মেহের নিজেই নিজেকে বলছে আমি কি জানতাম নাকি এখানে এতো মশা। আর আমাকে ডাকলেই তো হতো।

মেহের রান্না ঘরে গিয়ে সকালের ব্রেকফাস্ট তৈরি করে নিলো। তারপর সাওয়ার নেওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে গেলো। কলিংবেল এর আওয়াজে রিহানের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ ডলতে ডলতে দরজা খোলে দিলো।

নিহান মেহেরকে নিতে এসেছে ভার্সিটিতে যাবার জন্য। কিন্তু দরজা খোলে যে ওর ভাইকে দেখবে সে ভাবতে পারেনি।

ও গোল গোল চোখ করে রিহানের দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে রিহান বললো জীবনে কি আমাকে দেখোস নাই,এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?

নিহান থতমত খেয়ে বললো ইয়ে মানে মেহের কে নিয়ে যেতে এসেছি।

রিহান- আমার বউকে নিয়ে যাবার জন্য আমি একাই যথেষ্ট,তোর এসব আর করা লাগবেনা।যা ভাগ

#চলবে