তুমি শুধু আমার পর্ব-০৯

0
751

#তুমি শুধু আমার
#written by ayrin
#part9

নিহান বোকার মতো তাকিয়ে আছে রিহানের দিকে। তার ভাই এখানে কি করছে সে কিছুতেই বুঝতে পারছেনা। তখনই মেহের বেড়িয়ে আসলো নিহানকে দেখে বললো তুই চলে এসেছিস?

নিহান কিছু না বলে মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতে পারছেনা। রিহান এখানে থাকা সত্বেও মেহের কেন কোন রিয়েক্ট না করে স্বাভাবিক ভাবে কেন আছে। নিহানের মনে হচ্ছে মেহের আর রিহান দুজন দুজন কে মেনে নিয়েছে৷

রিহান নিহানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন, তোকে চলে যেতে বললাম না। এখনো যাচ্ছিস না কেনো?

মেহের নিহান কে বললো চল আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে।

রিহান- তুমি আমার সাথে যাবে। নিহান তুই চলে যা।

মেহের-নিহান আর আমি একসাথেই পড়ি। তাহলে আলাদা করে যাবো কেন,আর আপনি ঐখানে গিয়ে কি করবেন?
আর আপনি যেহেতু আমার বাড়িতে থাকবেন। আপনাকে তো আর ফ্রি তে থাকতে দিবো না। তারজন্য কাজ করতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি সবকিছু পরিষ্কার করে ফেলুন৷ আমি এসে যেন সবকিছু পরিষ্কার পাই। আর তা নাহলে আমার বাড়ি থেকে চলে যেতে পারেন।

তারপর মেহের নিহানের হাত টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে আসলো। নিহান এখনো চোখ বড় বড় করে মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে।

মেহের নিহানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

নিহান- ভাইয়া এই বাসায় কেন? কখন এ বাড়িতে আসলো। কাল হুট করে বাড়িতে এসে কারো সাথে কোন কথা না বলে দরজা আটকে বসে রইলো। আর সকালেও দেখতে পাইনি । ঐদিকে মা বাড়িতে যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছে ভাইয়ার খবর না পেয়ে।

মেহের সব কিছু নিহানকে খুলে বললো। নিহান এসব শুনে হাসতে হাসতে শেষ।

রিহান মেহেররা বেড় হওয়ার পর সেও তাদের পিছু পিছু বের হয়েছে৷
মেহের আর নিহান যখন ভার্সিটিতে আসলো তখন তাদের সামনে এসে দাড়ালো আকাশ। আকাশ নিহানকে বললো প্রিন্সিপাল তোকে খুঁজছে।

নিহান- আমাকে কেন খুজছে?

আকাশ – সেটা তো আমি জানি না।

নিহান- মেহের তুই ক্লাসে চলে যা আমি প্রিন্সিপাল এর সাথে কথা বলে আসছি।

নিহান এই বলেই চলে গেলো।

আকাশ মেহের কে বললো আজ আমাদের ফার্স্ট ক্লাস হবেনা৷ এখন কি করবে?
মেহের আকাশ কে বললো তাহলে চলো ক্যাম্পাসের দিকে যাই। তারপর তারা দুজন ক্যাম্পাস এর দিকে চলে গেলো।

এসব কিছু ধুর থেকে দাড়িয়ে রিহান দেখছিলো।মেহেরকে ঐ ছেলেটার সাথে যেতে দেখে রাগে ফুস ফুস করছে। তারপর মেহেরকে ক্লাসে না যেয়ে ক্যাম্পাসের দিকে যেতে দেখে মনে মনে বলছে,

কি যেন বলেছিলে তোমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে। তো এ ব্যাপারে লেট হচ্ছিলো৷ আর আমার ভাই ও কেমন মেহের কে রেখেই চলে গেলো। আজ আসুক বাড়িতে মেহের। এসব বলতে বলতে মেহেরের ফ্লাটের উদ্দেশ্য রওনা হলো। ঐ ছেলের সাথে কিসের সম্পর্ক সব জানবো আজ৷

কিছুক্ষণ পর,

নিহান এসে মেহেরদের সাথে বসলো।

নিহান- প্রিন্সিপাল নাকি আমার বাবার বন্ধু তাই ডেকেছে খোজ খবর নেওয়ার জন্য। আর আকাশ তুই আমাকে বললি না কেনো এখন ক্লাস নেই। শুধু শুধু ক্লাসে গেলাম কষ্ট করে।

আকাশ- তোকে বলার আগেই তো তুই চলে গেলি কিভাবে বলবো তাহলে।

মেহের- তুই একটু হেটে নাহয় ক্লাসেই গিয়েছিলি, যেভাবে বলছিস মনে হচ্ছে তোকে পাহাড়ে উঠতে হয়েছে।

নিহান- তুই কি বুঝবি ব্যাচালেরদের কষ্ট। দিন দিন ভিটামিন জিএফ এর অভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছি আমি।

আকাশ- তাহলে একটা জিএফ খুজে নিলেই পারিস।

নিহান- একটা জিএফ থাকা মানে হচ্ছে নিজের জীবন তেজপাতার শহরে বিক্রি করে দেওয়া।

মেহের- তাহলে তো ভালোই হবে,তুই ওখান থেকে তেজপাতা এনে আমাদেরকে দিবি সেটা দিয়ে আমরা বিজনেস শুরু করবো।

নিহান- মজা নিচ্ছিস?আজ সিঙ্গেল বলে সবাই মজা নেয়।

তখনি একটা মেয়ে এসে নিহান কে বললো আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার সাথে প্রেম করে তোমার সিঙ্গেল জীবনের সম্পাতি করো।

মেহের নিহান আকাশ তিন জনেই সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা স্কুল ইউনিফর্ম পরা মেয়ে। এই পিচ্চি মেয়ে এই কথা বলেছে ভেবেই ওদের তিন জনের চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো।

আকাশ মেয়েটাকে বললো কিগো পিচ্ছি তোমার নাম কি?
উত্তরে মেয়েটা বললো আমার নাম লামিয়া মুনতাহা।
আকাশ – তো লামিয়া তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
লামিয়া- আমি এইবার নবম শ্রেণিতে পড়ি।

নিহান- নাইনে পড়েই এই অবস্থা। বাড়ির সবাই কি জানে তুমি ছেলেদের ভালোবাসি বলে বেড়াও রাস্তায় রাস্তায়।

লামিয়া- সব ছেলেদের তো বলিনা। শুধু তোমাকেই বললাম কারণ তোমাকে আমার ভালো লেগেছে।
বলেই দুইহাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেললো, লজ্জা পাওয়ার বাহানা করে।

এদিকে মেহেরের চোখ মনে হয় বেড়িয়ে আসবে। একটা নাইনের পিচ্ছি মেয়ে কিনা ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেকে প্রপোজাল দিচ্ছে। ভাবা যায় এগুলো,

লামিয়া নিহানকে বললো তাড়াতাড়ি আমাকেও বলে ফেলো বাবু, লামিয়া আমিও তোমাকে ভালোবাসি।

নিহান- তোমাকে ভালোবাসবো কোন দুঃখে। তোমাকে বড় করতে করতে আমি বুড়ো হয়ে যাবো। পরে তুমি বলবে আমার মতো বুড়ো কে তোমার আর ভালো লাগেনা।

লামিয়া – হুম ঠিক বলেছো, তাহলে এখন থেকে বাচ্চা ছেলে বিএফ বানাবো। যেন আমি বুড়ি হয়ে গেলেও আমার বিএফ স্মার্ট থাকে বুড়ো নাহয়।

বলে হেলতে দুলতে দুলতে চলে গেলো।
লামিয়া যাওয়ার পর মেহের নিহান আকাশ উচ্চশুরে হেসে ফেললো।
তারপর থেকে শুরু হলো মেহের আর আকাশের নিহানকে পঁচানো।

ভার্সিটি শেষে টিউশন করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে মেহেরের সন্ধা হয়ে গেছে। রিহান যে এ বাড়িতে আছে সেটা সে বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলো। ড্রইং রুমে রিহানকে বসে থাকতে দেখে ওর কথা মনে হলো।

মেহের রিহানকে কিছু না বলে বেডরুমে চলে গেলো। তারপর ফ্রেস হয়ে কিচেনের দিকে গেলো। মেহের মনে মনে ভাবছে রিহান খাবার খেয়েছে কিনা? রান্নাঘর সকালে যেভাবে ছিলো এখনো তেমনি আছে। তারমানে রিহান এখনো কিছু খায়নি।

মেহের ওর আর রিহানের দুজনের জন্যই রান্না করলো। মেহের মনে মনে বলছে কি ব্যাপার আজ মিষ্টার রিহান কোন কথা বলছে না কেন?
মেহের ডাইনিংয়ে খাবার রেখে রিহানকে খাওয়ার জন্য ডাকলো।কিন্তু রিহান কোন উত্তর না দিয়ে একিভাবে বসে আছে।
তাই মেহের আর না ডেকে নিজেই খেয়ে নিলো।

খাবার শেষ করে মেহের রিহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো রিহান সোফায় বসে ঘুমিয়ে গেছে। মেহের একটা কুশন নিয়ে রিহান কে শুইয়ে দিলো।গায়ে হাত দিয়েই বুঝতে পারলো রিহানের অনেক জ্বর। মেহের রিহান কে ডাকলো,
রিহান বললো কি হয়েছে ডাকছো কেন?
মেহের রিহান কে বললো রুমে চলুন। আর জ্বর কখন আসলো?
রিহান- জ্বর কি আমাকে বলে এসেছে। বলবে রিহান আমি জ্বর তোর কাছে আসছি।

মেহের রিহানকে টেনেটুনে রুমে নিয়ে আসলো। তারপর থার্মোমিটার দিয়ে মেপে দেখলো ১০৪°।মেহের তাড়াতাড়ি কিছু খাবার নিয়ে এসে রিহানকে খাইয়ে দিলো।রিহানকে খাওয়াতে গিয়ে অনেক কামর খেয়েছে মেহের। ইচ্ছে করে কামর দিচ্ছিলো রিহান। মেহের রাগী দৃষ্টিতে তাকালেই ইনোসেন্ট ফেস করে কিউট করে সরি বলে,মেহের আর কিছু বলেনি।

তারপর ঔষধ খাইয়ে দিলো। তারপর জলপট্টি দিতে শুরু করলো। রাত ১২ টার দিকে রিহানের জ্বর কমলো।মেহের কখন ঘুমিয়েছে বলতে পারবেনা।

সকালে রিহান ঘুম থেকে উঠে দেখলো মেহের ওকে জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।
রিহানের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। পরে ধীরে ধীরে কালকের কথা মনে হলো। রিহান মনে মনে ভাবছে ইশশ জ্বর এসে ভালোই করেছে বউয়ের একটু সেবাযত্ন পেলাম। মেহেরকে নড়াচড়া করতে দেখে আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলো।

#চলবে