তুমি শুধু আমার পর্ব-১০

0
756

#তুমি শুধু আমার
#written by ayrin
#part10

মেহের ঘুম থেকে উঠে রিহানের কপালে হাত দিয়ে দেখলো এখনো জর আছে কিনা। রিহান এখনো ঘুমিয়ে আছে জ্বর নেই বললেই চলে।মেহের এতক্ষনে খেয়াল করলো সে রিহান কে জরিয়ে ধরে আছে। তাই তারাতাড়ি করে রিহানকে ছাড়িয়ে উঠতে নিলে রিহান মেহেরকে চার হাত পা দিয়ে পেচিয়ে ধরে শুয়ে পরে। মেহের নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছোটাছুটি করছে৷ এসব দেখে রিহান চোখ বন্ধ করেই মুচকি মুচকি হাসছে।

মেহের হঠাৎ রিহান কে হাসতে দেখলো। আর এটাও বুঝতে পারলে রিহান ইচ্ছে করেই তাকে এভাবে ধরে আছে।

তাই মেহের রিহানের কানের সামনে আয়ায়ায়াহ বলে জোরে চিৎকার দিলো। রিহান ধরফর করে মেহেরকে ছেড়ে দিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসলো।

রিহান- এসব কি হলো, তোমার মাথায় কি একটুও সেন্স নেই?একজন ঘুমন্ত ব্যাক্তিকে কিভাবে ডাকতে হয় জানোনা?

মেহের- আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন, আমি ভেবেছিলাম আপনি সেন্স হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাই এত নড়াচড়া করার পরও আপনার ঘুম ভাঙ্গেনি।তাই আপনার সেন্স ফেরানোর জন্য এমন করলাম। এখন দেখি কারো ভালো করতে নেই৷

রিহান- হ্যা আমার অনেকে ভালো করেছো৷ আচ্ছা আমি এখানে আসলাম কি করে৷ আমার যতটুকু মনে আছে আমি তো সোফায় ঘুমিয়ে ছিলাম। বাই এনি চান্স তুমি কি আমাকে নিয়ে এসেছো। কি মতলবে নিয়ে এসেছো তারাতাড়ি বলে ফেলো?( রিহানের সব কিছুই মনে আছে জাস্ট মেহেরকে জালানোর জন্য জিজ্ঞেস করলো)

মেহের- আমাকে কি দেখে আপনার হাতি মনে হয়। মাথায় কি শুধু গোবর ই আছে৷ একটু হলেওতো বুদ্ধি থাকার কথা। আপনার মনে হয়না আপনার মতো একটা হাতিকে সোফা থেকে নিয়ে এখানে আসা একটা মেয়ের পক্ষে অসম্ভব কিছু।

রিহান- না মনে হয় না কারণ তুমিও আমার মতো একটা হাতি।
মেহের আর কিছু না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।
তারপর রান্নাবান্না শেষ করে শাওয়ার নিয়ে এসে খেতে বসলো৷ রিহান আছে সাথে,

রিহান- কি ব্যাপার আমাকে না খাইয়ে নিজে খেতে বসে গেলে কেনো, ওহ বুঝতে পেরেছি আগে তুমি খেয়ে তারপর আমাকে খাওয়াবে।

মেহের মাঝে মাঝে ভাবে এই ছেলে কি এতোটাই বোকা কিছুই কি বুঝে-না, নাকি বুঝে না বুঝার ভান করে।
মেহের কিছু না বলে রিহানের খাবার বেড়ে দিয়ে নিজে খেতে থাকলো।

রিহান বুঝতে পারলো মেহের তাকে খাইয়ে দিবেনা, তাই নিজের হাতেই খেতে শুরু করলো। মেহের রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বের হওয়ার আগে রিহান কে বললো আপনি আমার এখানে থাকতে পারবেন না। আপনার বাড়িতে চলে যান। আপনার মা আপনার জন্য টেনশন করছে৷ তারপর বেড়িয়ে আসলো,

রাস্তায় নিহান মেহেরের জন্য ওয়েট করছিলো। মেহের আসতেই নিহান মেহের কে বললো ভাইয়া কি এখানেই থাকবে?

মেহের বললো আমি কি জানি। এখান থেকে গেলে আমাকে জালাবে কি করে? কাল রাতে জ্বর এসেছিলো। কিছু হলে তোর মা আমাকে দোষারোপ করবে।

মেহের ভার্সিটি শেষে বাড়িতে এসে পড়লো আজ আর টিউশনে যাবেনা।কিন্তু বাড়িতে এসে দেখলো রিহান এখনো এই বাড়িতেই আছে৷ মেহের কিছু না বলে রুম থেকে ফ্রেস হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বাহিরে আসলো।
তারপর রিহানকে বললো চলুন,

রিহান- কোথায় যাবো?
উত্তরে মেহের বললো আপনাদের বাড়িতে। রিহান খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালো তারপর বললো চলো। তারপর ওরা রিহানদের বাড়িতে চলে আসলো। রিহানদের বাড়িতে ডুকডেই একটা মেয়ে দৌড়ে এসে রিহান কে জরিয়ে ধরলো। মেয়েটাকে দেখে রিহানও খুশি হয়ে মেয়েটাকে জরিয়ে ধরে বললো কেমন আছিস সিমি?

সিমি- আমি তোর উপর রেগে আছি রিহান। তুই বাংলাদেশে এসেছিস তাও আমাকে জানাসনি। আর আমিই নিজেই তোর সাথে দেখা করতে এসে দেখলাম তুইই বাড়িতে নেই৷ আর খালামুনি কিছুই জানেনা তুই কোথায় আছিস।

রিহান- রিহানের এতক্ষণে মনে পরলো মেহের তার পাশে দাড়িয়ে আছে৷ সে তাড়াতাড়ি সিমিকে ছেড়ে দিলো।

মেহেরের এসব দেখে চোখ ছলছল করছে। কোন মেয়েই তার স্বামীর পাশে অন্য কোন মেয়েকে সহ্য করতে পারেনা। মেহের ও মানতে পারছেনা। তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছে কারণ মেহের মনে করে সে সত্যিই রিহানের যোগ্য না। তবে এই কয়েকদিনের আচরণে মেহের মনে মনে ভেবেছিলো রিহান তাকে সত্যিই ভালোবাসে। আর রিহান সিমিকে নিয়ে ছোটবেলা থেকেই একটু পজেসিভ,হয়তো ভালোও বাসে। রিহান আরও সিমি সম্পর্কে খালাতো বোন। মেহের যখন এই বাড়িতে থাকতো তখন সিমি আসলে মেহেরের জীবনটাই নরক বানিয়ে ফেলতো।সবসময় কাজের লোকের মতো ট্রিট করতো।

সিমি মেহেরকে দেখে বললো তুই এখানে কি করছিস।আর রিহান তুই এই মেয়ের সাথে কেনো? আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। তুই কি এতোদিন এই থার্ড ক্লাস মেয়েরর সাথে ছিলিস নাকি? তুই আবার সেই বিয়ে নামক নাটকটা মেনে নিয়েছিস নাকি?

রিহান এসব কথা শুনে মনে মনে রেগে গেলো তারপর ভাবলো তার কারণেই সবাই মেহেরের সাথে এরকম ব্যাবহার করে।সে যদি শুরু থেকেই মেহেরকে সব অধিকার দিয়ে দিতো তাহলে হয়তো কেউ এসব কথা বলার সাহস পেতোনা। রিহান কিছু বলবে তার আগেই মেহের বললো আসলে আমি নিহানের কাছে এসেছিলাম।
তারপর রিহানের দিকে তাকিয়ে বললো আমি উনার সাথে আসিনি,আর না উনি আমার সাথে ছিলো। বলে মেহের বাড়ির বাহিরে বের হয়ে আসলো৷

রিহান পিছন থেকে অনেকবার ডেকেছে মেহের উত্তর দেয়নি৷ রিহান বুঝতে পেরেছে সিমির ব্যাবহারে মেহের কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু রিহান সিমিকে নিজের বোনের মতো ভালোবাসে। তাই সে মনে মনে ঠিক করলো একটু পর মেহেরের বাড়িতে গিয়ে ওর কাছে সরি বলবে।

সিমি- কি ব্যাপার রিহান তুই ঐ মেয়েকে ডাকছিস কেন? ভিতরে চল আন্টি তোর জন্য এই কয়েকদিন অনেক টেনশন করেছে।

রাত আটটা বাজতে চললো এখন সিমি রিহান কে একা ছাড়েনি। রিহানের এখন বিরক্ত লাগছে। তাছাড়া সিমির ব্যাবহার তার কাছে ঠিক লাগছেনা। রিহান সিমির থেকে প্রায় তিন বছরের বড় তারপরও রিহানের নাম ধরে ডাকছে৷ রিহান অনেকবার বলেছেও ভাই বলে ডাকতে, উত্তরে সিমি বলেছে ভাই বললে ডাকা নাকি ওল্ড ফেশন।

আর এদিকে রিহানের মায়ের মনে, মনে হয় ঈদ লেগেছে। এতদিন পর ছেলেকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে একটু পর পর নিয়ে এসে রিহানকে খাওয়াচ্ছে। রিহানের এমনিতেই সিমিকে সহ্য হচ্ছে দ্বিতীয়ত মেহেরের কাছে যেতে পারছেনা আর তার মধ্যে তার মায়ের এমন খাওয়ার অত্যচার। সব মিলিয়ে রিহান অতিষ্ঠ হয়ে নিজের মনেই নিজেকে বলছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।

উপর থেকে নিহান রিহানের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে ফ্লোরে লুটোপুটি খাচ্ছে। নিহান সিমিকে সহ্যই করতে পারেনা। অতিরিক্ত নেকামি করে মেয়েটা সাথে অহংকার ফ্রী। সারাক্ষণ শুধু রিহান রিহান বলে মুখে ক্ষই ফুটতে থাকে।নিহানের মাঝে মাঝে মনে রিহান আর মেহেরের লাভস্টোরিতে সিমি হবে ভিলেন।

রাত দুটো বাজে রিহান নিজের রুমের বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে ধুর আজ মেহেরের কাছে যেতে পারলাম না। এখন যদি মেহের আমাকে ভুল বুঝে তাহলে কি হবে৷ একটা কল দিবো, না থাক যদি ঘুমিয়ে থাকে তাহলে ডিস্টার্ব হবে৷ অনেকক্ষন নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে মেহের কে কল দিয়েই দিলো৷ কিন্তু মেহেরের নাম্বার বিজি বলছে। রিহান ভাবলো হয়তো নিহানের সাথে কথা বলছে। এছাড়া আর কেই বা আছে।

রিহান নিহানের রুমে গিয়ে দেখে নিহান ঘুমিয়ে আছে। এবার রিহান মনে মনে ভাবছে মেহেরের সাথে ঐছলেটার সত্যিই কোন সম্পর্ক নেই তো৷ মেহেরকে ও তো ঐ ছেলেটার সাথে কিসের সম্পর্ক জিঙ্গেস করা হলোনা।এখন ঐ ছেলেটার সাথে কথা বলছে নাতো?
ধুর আজকে মনে হয় আমার আর ঘুম হবেনা। কাল ঐ সিমির বাচ্চার ঘুম থেকে উঠার আগেই এখান থেকে ভাঘতে হবে। নাহয় আমার আর বাড়িতে থাকা হবেনা৷

#চলবে