তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব-৬+৭

0
380

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৬
#Jhorna_Islam

রুমে এসে পায়চারি করছে আর রাগে ফুঁসছে সোহা।ঐই
লু/ইচছা ছেলেরে সামনে পেলে কাঁ’চা চি’বিয়ে খেতো।ওড়নার কষ্টে কান্না পাইতেছে।
দায়ান তো এমন না করলেও পারতো।ওড়নাটা এনে দিলে কি এমন হতো? দয়া মায়া’হীন লোক একটা।

এসব নানান কথা ভেবে অনেকক্ষন থো’ম মেরে বসেছিল।ভাবতে ভাবতে কখন যে বিছানায় এসে শুয়ে ঘুমের রাজ্যে হাড়িয়ে যায় খেয়ালই করেনি।

পেটে খিদে থাকায় ঘুমটা ভেঙে যায়।আড়মোড়া ভেঙে ওঠে বসে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নয়টা বেজে গেছে। ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়।

রান্না ঘরে যাওয়ার টাইমে সোফার রুমে চোখ যায়। দায়ান সোফায় পা তুলে বসে,পায়ের উপর ল্যাপটপ নিয়ে একমনে কাজ করছে।

“দেখো এখন এনাকে দেখে মনে হচ্ছে। এনার থেকে ভালো মানুষ আর একটাও নেই।” যেমন ভাজা মাছটা উ’ল্টো করে খেতে জানেনা হুহ।বলেই মুখ ভে’ঙচি দিয়ে চলে গেলো।

দায়ান সোহার উপস্থিতি টের পেয়ে একবার চোখ তুলে তাকায়।সোহা রান্না ঘরে যাচ্ছে। তাই সে আবার ল্যাপটপে চোখ রেখে কাজে মন দেয়।

প্রায় একঘন্টা পর সোহা রান্না ঘর থেকে বের হয়।হাতে খাবারের প্লেট। সব সাজিয়ে ডাইনিং এ রাখে।ফ্রেশ হওয়া দরকার।ঘামে শরীর চিপ’চিপ হয়ে গেছে।তাই রুমের দিকে হাটা দেয়। রুমে যাওয়ার সময় দায়ানের দিকে আবার তাকায়।দায়ান এক মনে কাজ করছে।তার যেনো অন্য দিকে কোনো ধ্যা’ন জ্ঞা’ন নেই।

পা’ক্কা পনেরো মিনিট পর বের হয়ে আসে সোহা।এসে দেখে সোফা ফাঁ’কা। গেলো কই এই ব্যা’টা? খাবে না নাকি?
এদিক ওদিক তাকাতেই ডাইনিং এ চোখ যায়।আর যা দেখে তাতে চোখ বড় বড় হয়ে যায়।এ কি দেখছে সোহা? দায়ান অলরেডি খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। কেমন পা/ষাণ লোক এটা? একেইতো বিকেলে কতো গুলো কথা শুনালো সরি বলে নাই।তারউপর এতো ক’ষ্ট করে ঘেমে নেয়ে রান্না করলো।একটু অপেক্ষা তো করতে পারতো।

হায়রে সোহা তুই কার থেকে কি আশা করস? এই বে’টাতো তরে দেখতেই পারেনা।আর না বউ হিসাবে মানে।

গু’টি গু’টি পায়ে এগিয়ে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পরে।নিজেও খাওয়া শুরু করে।

বাড়িতে ফোন করে বলে দিবা, যেনো তোমার সব কাগজ পত্র আর টি.সি নিয়ে রাখে।ড্রাইভার কে কাল পাঠাবো আনার জন্য। হঠাৎ দায়ানের কথায় মুখ তুলে একবার দায়ানের দিকে তাকায়।কিছুই বলে না।আবার খাবারে মন দেয়।

দায়ান কথা গুলো বলে এক পলক তাকায় সোহার দিকে।অপরপাশ থেকে কোনো প্রতি’ক্রি’য়া না দেখে আর কথা বাড়ায় না।
চুপচাপ খাওয়ায় মন দেয় দুজনই।খাওয়ার টেবিলে আর একটা কথা ও হয়নি দুজনের মধ্যে।

দায়ান খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। রুমে যাওয়ার আগে এক পলক সোহার দিকে তাকিয়ে ঠোঁ’ট প্রসা’রিত করে।আর দাঁড়ায় না রুমে চলে যায়।

সোহা একমনে ধীরে ধীরে বসে খাবার শেষ করে। সোহার খাবার খেতে একটু লেট হয়।তাড়াতাড়ি খাবার খেতে পারে না।তাই অনেক টাইম নিয়েই খাবার শেষ করে। সব কিছু গুছিয়ে, থালা বাসন ধুয়ে রান্না ঘরে রেখে আসে।ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে হঠাৎ ই হাত থেমে যায়।চোখ জোড়া সোফার উপর নিব’দ্ধ। ঐতো সোহার ওড়না।দৌড়ে গিয়ে ওড়না টা হাতে তুলে নেয়।মুখে খুশির ঝিলিক।ওড়না গায়ে জরিয়ে রুমে ঘুরা শুরু করে। ওড়নায় চুমু খায়।

আহা আমার জামাই জা’ন টারে হুদাই আমি এতো বকছি।স’রি জামাই।মনে মনে বকা দিছি তাই মনে মনেই স’রি বলে দিলাম।যতোটা খারাপ ভাবছে লোকটা ততোটাও খারাপ না।ভিতরে একটা নরম মন আছে কাউকে দেখায় না।

দায়ান দরজার পাশে দাড়িয়ে বুকে হাত গুঁ’জে এতোক্ষন সোহার দিকেই তাকিয়ে ছিল।একটা ওড়নার জন্য এতো খুশি? আর কিছু না ভেবে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয় দায়ান।নয়তো এই মেয়ে দায়ান কে দেখে ল’জ্জায় পরতো।

——————————-

ওমি বাড়িতে এসেই চি’ল্লা চি’ল্লি শুরু করেছে।তনয়া বেগম নোহার নামে নানান কথা ওমির কানে তুলেছে। নোহা কিছু করেনা।সব তনয়া বেগম কে করতে হয়।একটা কাজে ও হাত লাগায় না।কিছু বললে মুখে মুখে তর্ক করে।ভালো ভালো খাবার গুলো বেছে বেছে খেয়ে ফেলে।
প্রতিদিন ছেলে বাড়িতে আসার পর ওনার প্রধান কাজ ই এটা।ছেলের কানে নোহার নামে বি/ষ ঢালা। অথচ একটা কথা ও সত্যি না।সারাদিন গা/ধার মতো খাটে নোহা।একটু বিশ্রাম নেওয়ার ও জো নেই। তনয়া বেগম একটা কাজ শেষ হওয়ার আগেই আরেকটা সামনে রেখে যায়।খাবার মুখে দেওয়ার ও সময় পায় না।কাজ করে যা ও খেতে বসে,ভালো খাবার জো’টে না। মাংস রান্না হলে ঝোলটাই কপালে জো’টে। তাও কিছু বলেনা নোহা।চুপচাপ মু্খ বুঁ’জে সব সহ্য করে।

ওমিটা বিয়ের প্রথম কয়দিন এমন ছিলনা।নোহার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করতো।কেয়ার করতো।কিন্তু ধীরে ধীরে সব পা’ল্টে গেলো। তনয়া বেগম তার কানে নোহার নামে
বদ/নাম করতে লাগলো।মা অ’ন্ত প্রান ওমি।মায়ের কথা বিশ্বাস করতে লাগলো।আর নোহাকে শা’রী’রিক মানসিক ভাবে অত্যাচার করতে লাগলো।

তোর সাহস তো অনেক বেড়েছে দেখছি।তুই আমার মার হাতে সব কাজ করাস কোন সাহসে? তোকে কি বাড়িতে সাজিয়ে রাখার জন্য এনেছি?

সারাদিন বাড়িতে থেকে কি করিস? কোন না/গরের সাথে আলাপ করস ঘরে বসে?খেয়ে খেয়ে তো শীরর খালি তা/জা করতেছস।আজ থেকে দিনে একবেলা খাবার খাবি।
বলেই নোহার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে,ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।

নোহা গিয়ে টেবিলের কর্ণারের কোনায় বারি খায়।ব্যা’থায় চোখ মুখ কোচ’কে আহ শ’ব্দ করে ওঠে।

ওমি এসবে পা’ত্তা না দিয়ে।নোহার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে।হনহন করে ভিতরের রুমে চলে যায়।

নোহা ওখানেই বসে থাকে।নড়ার শক্তি টাও পাচ্ছে না।

তনয়া বেগম নোহার দিকে তাকিয়ে পৈ’শা’চিক আনন্দ পায়।হাসতে হাসতে কটা’ক্ষ করে বলে।বুঝো মজা কেমন লাগে।বেশ হয়েছে।আরো দেওয়ার দরকার ছিলো।

নোহা অশ্রু’শিক্ত নয়নে শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে থাকে।এই মহিলার কোন পাকা ধানে ম’ই দিয়েছে নোহা বোঝে পায় না।
আজ যে কপালে খাবার জোটবেনা ভালো করেই জানে নোহা।খাবার গলা দিয়ে নামতো ও না।মা ছেলের এতো আপ্যা’য়নে পেট এমনিতেই ভ’রে গেছে।

—————————————

পরের দিন দায়ান সকাল সকাল অফিসের জন্য বের হয়ে যায়। অফিসের ঝামেলার এখনো কোনো সমাধান খুঁ’জে পায় নি।এই নিয়ে একটু চি’ন্তায় আছে। কন’ফিডেন’সিয়াল
ফাইল গুলো এভাবে কিভাবে চুরি হয়ে যায়।ফাইলগুলো অফিসের সিক্রে’ট রুমে রাখা হয়েছিল।ঐ রুমের চারদিকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো।ক্যামেরা চেক করতে গিয়ে দায়ান দেখে সব ঠিক ঠাক আছে।বাট মাঝখানের কিছু মুহূর্ত ফুটেজে নেই। কেউ খুবই চতুরতার সাথে কেটে দিয়েছে।
যেই কাজটা করেছে মানতে হবে খুবই চালাক লোকটা।এবং বু’দ্ধি সম্পন্ন। সাহস ও আছে বলতে হবে।তানাহলে এতো কড়া সিকিউরিটির মধ্যে এরকম একটা কাজ কোনো ভাবেই সম্ভব না।তাও আবার এতো বড় একটা কোম্পানির ফাইল-পত্র।

দায়ান নিজের ক্যাবিনে বসে,,সিসিটিভি ফুটেজ গুলো বার বার চেক করতেছিল।যদি কোনো ক্লু পায়।

সকালে সোহা ঘুমে থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায়। বাগানে গিয়ে গাছে পানি দেয়। একটু পরিচর্যা করে। বেলা হয়ে যাচ্ছে বলে ঘরে ফিরে আসে।এসেই রান্না ঘরের দিকে আগায়। এখনি রান্না করতে হবে।নয়তো দেরি হয়ে যাবে।উনি আবার অফিসে যাবে। তাড়াতাড়ি করে কি রান্না করবে ভেবে পায়না।দায়ান তো আবার সকাল বেলা তেল-চ’র্বি জাতীয় খাবার খায় ও না।অনেক ভাবনা চিন্তা করে,,,,,
ফ্রুটস সালাদ আর জেম পাউরুটি ঠিক করে নিল।এগুলাই দিবে। ডাইনিং এ প্লেট সাজিয়ে দায়ানের রুমের দিকে তাকায়। লোকটা এখনো আসছে না কেনো?

অফিসের সময় তো প্রায় চলে গেলো।ঘুম কি এখনো ভাঙেনি? নাকি মনেই নেই অফিসে যে যাওয়া লাগবে?

কিছু একটা ভেবে দায়ানের রুমের দিকে আগায়।দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। ডাকবে নাকি ডাকবেনা দ্বি’ধায় পরে যায়।
অনেক ভাবনা চিন্তা করে দরজায় হালকা করে টোকা দেয়।কিন্তু ঐপাশ থেকে কোনো প্রতি’ক্রি’য়া পায় না। এইবার শুকনো গলায় ঢুক গিলে ডাক দেয়।” শুনছেন”? তাও কোনো সারা শব্দ নেই।আবার ডাকে “শুনছেন,অফিসে যাবেন না? টাইমতো চলে গেলো!
,,,,,,,,,,,,,,
এইবার সাহস নিয়ে কাঁ’পা কাঁ’পা হাতে দরজার নবটা ঘুরায়।দায়ানের রুমে এখনো পর্যন্ত যাওয়া হয়নি।আস্তে আস্তে করে দরজাটা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে।

রুমে প্রবেশ করতেই শরীরে একটা শীতল হাওয়া এসে লাগে।সাথে পারফিউম এর তী’ব্র গ’ন্ধ। রুমের চারিদিকে চোখ বোলায়,,,,পুরো রুমে দামি দামি আসবাবপত্রে জায়গা করে আছে।রুমটা অনেক বড়।দেয়ালে একটা ফ্যামিলি ফটো।দায়ানের একপাশে একজন পুরুষ আর অন্য পাশে একজন সুন্দরী রমনী। পুরুষটির চেহারা আর দায়ানের চেহারা একইরকম দেখতে।বুঝে নিলো এরাই দায়ানের বাবা- মা। ওদের সম্পর্কে সোহা তেমন কিছুই জানেনা।শুধু জানে এরা আর পৃথিবীতে নেই। বেড সাইড টেবিলের উপর আরেকটা দায়ানের হাস্য’উজ্জ্ব’ল ছবি।ছবি দেখে সোহাতো পুরাই অবাক।এই লোক হাসতেও জানে? ইসসস হাসলে কতোই না সুন্দর লাগে গো আমার জামাইটারে।কিন্তু এই বেটায় কেমন গু’ম’রা মুখ করে থাকে।

হঠাৎ ই মনে হলো কি কাজের জন্য সোহা রুমে এসেছে।দায়ান কে আবার খুজতে লাগলো।কোথাও নেই।বারান্দায় গেলো ওখানেও নেই।বাথরুমের ও দরজা খোলা।কই গেলো এই লোকটা? চলে যায়নিতো অফিসে?

মনে হয় চলে গেছে। ভেবেই রুম থেকে বেরিয়ে আসে সোহা।
নিজেকে খুবই তু’চ্ছ মনে হচ্ছে সোহার।একটাবার কি বলে যাওয়া যেতো না।স্ত্রী হিসেবে না হোক,,,,একই বাড়িতে থাকে।সেই মানবতার খাতিরে না হয় একটু বলে যেতো।

খেতে ইচ্ছে করছেনা সোহার।মনটাই বি/ষিয়ে গেছে।তাও জোড় করে এক টুকরো জেম পাউরুটি মুখে দিয়ে পানি দিয়ে গিলে ফেলে,উঠে দাঁড়ায়।

তখনই কলিং বেল টা বে’জে ওঠে।ভ’য় পেয়ে যায় সোহা।এই সময় আবার কে আসলো? এখন কি কারো আসার কথা? উনিও তো বাসায় নেই।কি করবো আমি?

দাড়োয়াব চাচাতো লোকটাকে না চেক করে ঢুকতে দেয়নি।এটা ভেবেই দরজার দিকে এগিয়ে যায়।ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে। সামনে থাকা ব্যক্তিকে কিছু বলার আগেই লোকটা,,,,,,,,,,,,

#চলবে

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৭
#Jhorna_Islam

দরজার অপর পাশের ব্যক্তি’টার মুখই দেখা যাচ্ছে না,বড় একটা বক্স এর কারণে। সোহা উঁ’কি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে।কিন্তু ব্যর্থ হয়।

ম্যাম একটু সাইড দিবেন প্লিজ? না মানে দরজার পাশেই বক্স টা রাখতাম।ভিতরে যাওয়ার অনুমতি নেই।

আমনে কি’ডা? আর এইহানে কিয়ের লিগা এই জাদুর বাক্স টাক্স লইয়া আইছেন?

সোহার এরকম ভাষা শুনে লোকটা থতমত খেয়ে যায়।
তাও নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,,আসলে ম্যাম এটা আপনার পার্সেল। যদি অনুমতি দেন তাহলে রাখি? রেখে কথা বলি?
সোহা লোকটার আগা গো’রা স’ন্দেহের দৃ’ষ্টিতে তাকিয়ে এক পাশে সাইড হয়ে দাঁ’ড়ায়।

লোকটা বাক্সটা রেখে এবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ম্যাম এইটা আপনার পার্সেল।আর এইখানে আপনার একটা সিগনেচার লাগবে।একটা খাতা আর কলম সোহার দিকে এগিয়ে দিয়ে।

আমার পার্সেল? আমিতো কোনো কিছু অর্ডার দেইনি। সত্যি করে বলেনতো আপনি কোনো চোর ননতো? নাকি মেয়ে’ধ’রা? ব্রু নাচিয়ে লোকটার কাছে জানতে চায়।

লোকটা কিছু বলতে মুখ খুলবে,,,,তার আগেই আবার বলে উঠে,,এক মিনিট। আপনি নিশ্চয়ই সব খোঁজ খবর নিয়ে এসেছেন তাইনা? এই সময় আমি একা বাড়িতে থাকি।কেউ নেই সেই সুযোগে আপনি আমায় কিড’ন্যাপ করবেন।তারপর আমার জামাইর কাছ থেকে টাকা হাতা’বেন তাইনা?

লোকটার এবার মুখের চেহারা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।

ম্যাম আপনি আমায় ভুল ভাবছেন।তেমন কিছুই না এটা মিষ্টার শেখ অর্ডার করেছেন।এবং বাড়ির ঠিকানা দিয়ে পার্সেল করতে বলেছেন।আপনি মিসেস শেখ না?

সোহা ছোটো করে বলে হুু।

তাহলে বিশ্বাস না হলে স্যার কে ফোন দিয়ে কনফার্ম হয়ে নেন।তাও গ’ণ ধো’লা’ই খাওয়ার ব্যবস্থা করিয়েন না।

কই থেকে ফোন করবে দায়ানের নাম্বার সোহার কাছে থাকলে তো।তাই আর কথা বাড়ালোনা।চুপচাপ কাগজে সাইন করে দিয়ে দিলো।

লোকটা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁ’চল। একপ্রকার দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো।

সোহা বক্সটার দিকে তাকিয়ে টেনে টুনে ড্রয়িং রুমের সোফার পাশে রাখলো। নিজে সোফায় বসে ভাবতে লাগলো কি আছে এই বক্সে? দায়ান কি পাঠালো?

এটার মধ্যে বো’মা টো’মা পাঠায়নিতো দায়ান আবার? এমনিতেই সোহাকে পছন্দ করে না। এখন তো বাড়িতে কেউ নেই।এটা ফেটে ম/রে গেলে। কিভাবে ম/রলো কেউ বুঝতেই পারবেনা।দায়ানের জন্য সুবিধা হবে।বলবে আমি বাড়িতে ছিলাম না।আগুন লেগে পু*ড়ে মা/রা গেছে।মোবাইলে অনেক নিউজ দেখেছে।জামাইর বউ পছন্দ না হলে মে/রে ফেলে।

অনেক ভাবনা চি’ন্তা করেও কিছুই লাভ হলো না।মনটা আঁকু’পাঁকু করতেছে খুলে দেখার জন্য ভিতরে কি আছে।
বু’কে থু’থু দিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে বক্স টা খুলতে লাগলো।

বক্স খুলে দেখে রঙ,বেরঙের ওড়নায় ভরপুর বক্সের ভিতর।সোহার হাত আপনা আপনিই মাথায় চলে গেলো।এসব কি করেছে লোকটা? পুরু দোকান উঠিয়ে এনেছে।

—————————-
দায়ান অফিসে নিজের ক্যাবিনে বসে মিটিং এর জন্য ফাইল তৈরি করতে ছিলো।হঠাৎই মনে পরে গেলো,আজ ড্রাইভার কে গ্রামে সোহার বাড়িতে পাঠানোর কথা।কাগজপত্র আনানোর জন্য। এতো ঝামেলার মধ্যে ভুলেই গেছে।
পড়াচোর মেয়েটা তো জীবনে ও মনে হয় দায়ান কে মনে করে দিতোনা। দায়ান ভুলে গেলেই যেনো বেঁ’চে যায়।
দায়ান ড্রাইভার কে ডেকে পাঠায়।

ড্রাইভার আসলে সব বুঝিয়ে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে,আবার নিজের কাজে মন দেয়।

———————————–
সোহা পুরু ড্রইং রুম ছড়িয়ে ফেলেছে ওড়না দিয়ে। পুরো একশোটা ওড়না।আল্লাহ মাথা ঘুরাইতেছে এগুলা দেখে।
লোকটার টাকা মনে হয় বেশি হইছে।এমন কাজ কেউ করে? এতো ওড়না দেখে সোহার ওড়না পরা থেকেই মন উঠে যাইতেছে।

হাঠাৎই কালকের ছাদের কথাটা মনে হলো,দায়ান বলেছিলো রুমে যাও তোমায় আরো একশোটা ওড়না এনে দিবো।

এই পা/গল লোক দেখি বলছে বলে,মুখের ভাষা সত্যি করার জন্য সত্যি সত্যিই ওড়না এনে হাজির করছে।

এসব দেখে দায়ানের উপর যা রাগ ছিলো গ’লে গেলো।আমার কথা ভেবে লোকটা এই পা/গলামো করেছে।ভাবতেই মনটা আনন্দে নেচে উঠে।

লোকটাকে যতো বারই খারাপ ভাবতে চাই। ততোবারই প্রমাণ করে দেয় লোকটা এতোটাও খারাপ না।মনটা ভালোই।

এখন থেকে লোকটাকে একটু বেশি বেশি য’ত্ন করতে হবে।সব দিক দিয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
সোহা তর জামাইর মন জয় করার মিশন এখন থেকেই শুরু।

” মিশন জামাইর মন জয় ”

—————————–

রাতে না খাওয়ায় সকালে নিজের শরীর টা নিয়ে উঠে দাঁড়ানো ও দায় হয়ে দাড়িয়েছে নোহার।একেইতো কাল সারাদিন কাজ করেছে।তার উপর তেমন কিছু খাওয়া ও পরেনি।

অনেক কষ্টে শরীর টা নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এখন আবার কিছু খেয়ে কাজে লেগে পরতে হবে।নয়তো আজ হয়তে মা- ছেলে মিলে মেরেই ফেলবে নোহাকে।

রান্না ঘরে একটা বয়ামে মুড়ি রাখা ছিল।খিদের তাড়নায় মুড়িই তাড়াতাড়ি নামিয়ে খেতে শুরু করে। শুকনো মুড়ি গলায় গিয়ে আটকে যায়।খুক খুক করে কেশে উঠে। তাড়াতাড়ি পানি ঢালতে গিয়ে স্টিলের গ্লাস মেঝেতে পরে যায়।মেঝেতে পরে ঝন ঝন শব্দ করে গড়িয়ে পরে। নোহা আঁ’তকে উঠে। ভয়ে ভয়ে রান্না ঘরের বাইরে তাকায়। কেউ জেগে গেছে কিনা।

বাইরে কাউকে না দেখতে পেয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচে। গ্লাস টা উঠিয়ে আবার ধুয়ে পানি ভরে খেয়ে নেয়।

একটু সময় নিয়ে রান্নার কাজে লেগে পরে।তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করতে হবে। নয়তো ঠিক টাইমে খাবার না পেলে আবার শাশুড়ী তুল’কালাম বাঁ’ধাবেন।

রান্না শেষ করে আবার কাপড় ধুয়ে দিতে হবে। এক গাদা কাপড় বাথরুমে জমিয়ে রেখেছেন। একদিন পর পরই কাপড় ধুতে দেন।ধুয়া কাপড় ই আবার ধুতে দেন।

মানুষের যখন দেয়ালে একেবারে পিঠ ঠেকে যায়, তখন সে ঘুরে দাড়ানোর একটা শেষ চেষ্টা করে। সব সময় নিচ জায়গা দিয়েই পানি যায়।নোহা এদের সব অত্যা’চার মুখ বোজে মেনে নেয় দেখে এরা আরো পেয়ে বসে।আর কতো দিন? সময় মানুষের আওতায় থাকেনা।একদিন সময়ের চাকা ঘুরে নোহার ও সময় আসবে।শুধু সেই দিনটার অপেক্ষা।
—————————–

বিকেলের মধ্যেই সোহার সকল কাগজপত্র ড্রাইভার নিয়ে আসে,সোহার গ্রাম থেকে। সব কিছু দায়ানের কাছে বুঝিয়ে দেয়।

দায়ানের আজ বিকেল পাঁচটার মধ্যেই সকল কাজ শেষ।তেমন কোনো কাজ ছিলোনা শুধু একটা মিটিং ছিলো।
আর অফিসের ঝামেলাটা নিয়ে তদ’ন্ত চলছে।
রুশ এখনো এ বিষয়ে তেমন কিছু জানে না।দায়ানই জানায়নি।এতোদিন অন্য একটা প্রজে’ক্ট এর দায়িত্বে ছিলো রুশ।তাই এ বিষয়ে কোনো টেনশনে ফেলে দিতে চায় নি।

গাড়ির চাবি নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পরে বাড়ির উদ্দেশ্যে।মাথাটা খুব ভার হয়ে আছে।বাড়ি গিয়ে লম্বা একটা শাওয়ার নিতে হবে।আর কফি খেতে হবে।

আজ বাড়িতে এসে নিজে চাবি দিয়ে লক খুলে ভিতরে ঢুকলো না।কলিং বেল বাজালো।
কলিং বেল বাজাতে দেরি,দরজা খুলতে দেরি হয়নি সোহার।
এতো তাড়াতাড়ি দরজা খোলায় দায়ান কিছুটা ভ’রকে গেলো। মনে হয় দায়ানের বে’ল বাজানোর অপেক্ষাতেই ছিলো দরজা খোলার জন্য।

সত্যিই তাই গাড়ির আওয়াজ শুনে বারান্দায় গিয়ে ছিলো সোহা।দেখার জন্য কে এসেছে। যখন দেখলো দায়ান, তখন দরজার পাশে এসে দাড়িয়ে ছিলো। দরজা খোলার জন্য।

দায়ান নিজেকে স্বাভাবিক করে, সোহার হাতে তার কাগজপত্র গুলো এগিয়ে দেয়।আর বলে কাল রেডি থেকো ভার্সিটি তে নিয়ে যাবো।বলেই হাঁ’টা দেয়।

আর একটা কথা এক কাপ কফি দিতে পারবে?

দায়ানের কন্ঠ টা কেমন শোনায়।

সোহা দায়ানের দিকে তাকায়।দেখেই বুঝতে পারে খুব ক্লা’ন্ত। ঘামে শার্ট ভিজে আছে।চোখ গুলো কেমন লাল হয়ে আছে।হয়তো মাথা ব্যা’থা করছে।

আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি। আপনি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হন।

দায়ান রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে নেয় ঝটপট।

সোহা কফি নিয়ে,,রুমের দরজায় নক করে।মাত্রই দায়ান শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে।পরনে একটা টাওজার,,গায়ে তোয়াল জড়ানো।চুল দিয়ে টপ টপ করে পানি পরছে।সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে। এই প্রথম দায়ান কে এই অবস্থায় দেখলো।

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বলে ঐখান থেকেই কি কফি দিবা? ভিতরে নিয়ে এসো।বলেই সোফায় মাথা হেলিয়ে চোখ ব’ন্ধ করে।
সোহা এগিয়ে গিয়ে কফি বাড়িয়ে দেয়।
দায়ান হাত বাড়িয়ে কাপটা নিয়ে চুমুক বসায়।আর সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,,,ওড়না গুলো পেয়েছো?

হুু।পাইছি।বলছি যে আপনি কি আমায় দোকান দিয়ে দিবেন?ওড়না বেচার জন্য।

দায়ান ব্রু কো’চকে তাকায় সোহার দিকে।

না মানে এতো গুলা ওড়না তো তাই ভাবলাম।হয়তো আমায় ওড়নার দোকাব দিয়ে দিবেন বেচার জন্য।

দায়ান সোহার কথা শুনে হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারেনা।

না দোকান না দিয়ে দিলে থাক।একটা সেলাই মেশিন এনে দিয়েন তাহলেই হবে।এতোগুলো ওড়নাতো আর পরে শেষ করতে পারবোনা।আর ফেলেও দেয়া যাবে না।তাই ভাবতেছি,,,জোড়া লাগিয়ে শাড়ির কাজ সেরে ফেলবো।আপনার ও টাকা বেঁচে যাবে।বুদ্ধি টা ভালো না? জানতে চায় সোহা।

সোহার কথা শুনে দায়ান বড় সরো এক ভি’ষম খেয়ে কাশতে থাকে।নাক মুখে সমানে কফি ঢুকে গেছে।

নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বলে,,,ওয়াও কি বু’দ্ধি তোমার! আই এম ইমপ্রেস। আমার কতো গুলো টাকা বেঁচে যাবে। আমিতো ক’ল্পনা ও করতে পারতেছিনা।

সোহা খুশিতে গদ’গদ হয়ে দায়ানের পাশে সোফায় বসে।তাই না আমিও জানি আমার অনেক বু’দ্ধি। কিন্তু কেউ ক’দর ই করলোনা। ভালো বু’দ্ধিমান মানুষের আজকাল দা’ম ই পাওয়া যায় না বুঝলেন?

হ্যা,, তাইতো।তুমিতো আমাদের দেশের অ’মূল্য স’ম্পদ। তোমাকে দেশের আর দেশের লোকের সামনে তুলে ধরতে হবে।যেনো তুমি তোমার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারো।চি’ন্তা করোনা।আমি তোমায় সাহায্য করবো।যেনো তুমি নিজের প্রতিভা প্রকাশ করে দেশ ও দেশের বাইরেও নাম করতে পারো।গি’নে’জ বুকে যেনো তোমার নাম ওঠে।দাঁতে দাঁত চেপে বলল দায়ান।

#চলবে