তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব-৭+৮

0
243

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৭

ইউনিভার্সিটি চত্বর! বৃক্ষতলে বসে রয়েছে বন্ধুরা। সূর্য্যি মামার সংস্পর্শে স্বেদজল উপস্থিত মুখশ্রীতে। সকলে অপেক্ষায় দুই মানবীর। কিন্তু তাদের দেখা ই নেই। আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে? পুষ্পি হাত দিয়ে বাতাস করতে করতে শুধালো,

” ওই দুই মাইয়া গেছেডা কই? বাড়িত থে আসতে এতক্ষণ লাগে? মনে হইতাছে মঙ্গল থে রওনা দিছে। ”

বিশাল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

” একদম ঠিক কইছোছ। অগো বাড়ি তো মঙ্গলের এক চিপায়। জানোছ না? ”

” আস্ত অলস। ”

পুষ্পি কথাটা বলতে না বলতেই মৃদু চিৎকার করে উঠলো। ওর চিৎকারে হতবিহ্বল হয়ে গেল বাকিরা! বিন্দু বুকে হাত রেখে ভীত স্বরে শুধালো,

” ক্ কি হইছে? চিৎকার করোছ ক্যান? দিনদুপুরে ভূত দেখছোছ নি? ”

” ইয়েস বেবি। ওই যে দুই মামদো ভূত আইতাছে। ”

পুষ্পি’র ইশারা মোতাবেক ওরা তাকালো পেছনে। স্বস্তির নিঃশ্বাস নির্গত হলো। দুয়া এবং তৃষা হেলেদুলে আসছে। দুয়া এসে ধপ করে বসলো বিন্দুর পাশে। তৃষা বসলো পুষ্পির পাশে। দু’জনেই হাঁপিয়ে গেছে। দুয়া ব্যাগ থেকে ওয়াটার বোতল বের করে ঢকঢক করে তিন ঢোকে পানি পান করলো।

” পানি দে দোস্ত। ”

তৃষা হাত বাড়িয়ে। দুয়া ওর হাতে বোতল ধরিয়ে টিস্যু দিয়ে মুখশ্রী হতে স্বেদজল মুছে নিলো। পানি পান করা শেষে বোতল ফিরিয়ে দিলো তৃষা। এতক্ষণে ওরা দু’জন লক্ষ্য করলো বাকিরা ওদের দিকে কেমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

” কি হয়েছে? এমন পুলিশি নজরে তাকিয়ে আছিস কেন? ” প্রশ্ন করলো দুয়া।

” আমরা চোর না ডাকাত? নজর ঠিক কর। ”

তৃষা বলতে না বলতেই খ্যাঁক করে উঠলো বিশাল।

” ফা’জিল মাইয়া! মডেলিং কইরা হেলতে দুলতে দুলতে আইছে! আইয়া আবার ভাব নেয়। আমরা বুঝি অদৃশ্য?”

পরিস্থিতি বুঝতে পেরে দুয়া মেকি হাসলো। থেমে থেমে বললো,

” অদৃশ্য হতে যাবি কেন? দেখেছি তো। বুঝতেই পারছিস কি গরম। ”

বিন্দু ভেংচি কেটে বললো,

” হ তোদেরই খালি গরম লাগে। আমরা তো এসির তলে বসে বসে হাওয়া খাইতাছি! ”

তৃষা অবাক হওয়ার ভান করে বললো,

” এসি! ওহ্ মাই আল্লাহ্! ওই টাকলু অধ্যক্ষ এসি লাগাইলো কবে? ”

দুম করে ওর পিঠে এক ঘু ষি মে|রে দিলো পুষ্পি। ক্ষ্যা”পা ষাঁড়ের মত গর্জন করে উঠলো তৃষা।

” পুষ্পা রে! হাত সামলা। নইলে তোরে পিডাইয়া কিন্তু বিল্লু অর্জুন বানাই দিমু। ”

তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানালো পুষ্পি। শীতল কণ্ঠে বললো,

” তৃষ! ভালো হইয়া যা। ভালো হইতে পয়সা লাগে না। তোর কত বড় সাহস! আমার আল্লু বেবিরে বিল্লু ডাকোছ! ”

” ডাকছি তো কি হইছে? আল্লু না বিল্লু না ঘিল্লু! নামে কি আসে যায়? ”

” অফকোর্স আসে যায়। তোরে যদি এহন তৃষ্ণা ডাকি? ভালো লাগবে? ”

” নিশ্চয়ই লাগবে। ”

গদগদ কন্ঠে বললো তৃষা। ওদের দু’জনের কাণ্ড দেখে দুয়া’র কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে হলো। ও কিছুটা তীক্ষ্ণ চাহনি নিক্ষেপ করে ওদের দুজনকে বললো,

” আল্লু হেটার্স আর ডাই হার্ট ফ্যান! তোরা থামবি? গরমের মধ্যে কি শুরু করছোছ? ”

” ক্যাচাল শুরু করছে। ”

ফোঁড়ন কেটে বললো ওদের বন্ধুমহলের রত্ন! সবচেয়ে পড়ুয়া ছেলেটা। তিয়াশ! চোখে স্বল্প পাওয়ার চশমা। শ্যামবর্ণ মুখ গরমে রক্তিম হয়ে উঠেছে। পুষ্পি দাঁতে দাঁত চিবিয়ে যেই না কিছু বলতে উদ্যত হলো অমনি উঠে দাঁড়ালো তিয়াশ। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হাতঘড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে বললো,

” ক্লাস শুরু হতে পাঁচ মিনিট বাকি। তোদের ক্লাসে যাওয়ার ইচ্ছা আছে কি নেই? ”

তড়িৎ উঠে পড়লো দুয়া। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বললো,

” অফকোর্স আছে। ”

দুয়া’র দেখাদেখি বাকিরাও উঠে পড়লো। বিশাল অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বলে উঠলো,

” শুরুতেই ওই ব্যা টা টাকলার ক্লাস। ধুৎ! ভাল্লাগে না। ”

সবাই মিলে পা বাড়ালো নিজ নিজ ডিপার্টমেন্টের দিকে। তৃষা ও পুষ্পি বায়োলজি ডিপার্টমেন্ট। বাকিরা অ্যাকাউন্টিং এ।

বহু কষ্টে প্রথম ক্লাস শেষ করলো তৃষা, পুষ্পি। কাঁদো কাঁদো মুখ করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে।

” দোস্ত রেডি থাক। সুনামি আসছে। আজকের পড়া রেডি করছোছ তো? ”

পুষ্পি উৎফুল্ল কণ্ঠে বললো,

” আজ আর ভুল করিনি। ঊনসত্তর থেকে ঊনআশি পৃষ্ঠা পুরো ঠূটস্ত করে আসছি। পড়া ধরলেই ফরফর করে বলে দেবো। ”

তৃষা ওর মাথায় গাট্টা মে রে বললো,

” গা’ধির গা’ধি। পড়া দিছে ছিয়ানব্বই পৃষ্ঠা থেকে। আর উনি পড়ে আসছে কি! ”

আহাজারি করে উঠলো পুষ্পি।

” ইন্না লিল্লাহ। শেষমেষ নয়ছয় আমারে এমনে শেষ কইরা দিলো? ও আল্লাহ্ গো! এহন কি হবে? রাক্ষস যে আমারে জীবন্ত অপমান করবে! ”

তৃষা ক্ষি প্ত হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু থেমে গেল আগন্তুককে দেখে। তৎক্ষণাৎ উঠে পড়লো ওরা সকলে।

” আসসালামু আলাইকুম স্যার। ”

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ”

উপস্থিত অজস্র ছাত্রীর ক্রাশ। তাদের হার্টথ্রোব ইয়াং লেকচারার। পড়নে ফর্মাল গেটআপ। শুভ্র রঙা শার্ট কালো বেল্টের অন্তরালে ইন করে রাখা। পায়ে কালো ব্র্যান্ডেড শু। শার্টের দু স্লিভ গুটিয়ে কনুইয়ে তুলে রাখা। বাঁ হাতে দৃশ্যমান সিলভার ডায়াল ওয়াচ। বিদেশিদের মতন লালচে চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা। চোখে চিকন ব্রাউন ফ্রেমের চশমা। গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। গৌর বর্ণের মুখশ্রী অত্যাধিক আকর্ষণীয় লাগছে! লাইক অ্যা ফরেনার! ছাত্রীরা বিমোহিত নয়নে তাকিয়ে ছিল তাদের ক্রাশের পানে। আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ! নামটা যেন ওদের হৃদয়ের অলিগলিতে পোস্টার ছাপিয়ে রাখা। তূর্ণ খেয়াল করলো অধিকাংশ ছাত্রীরা ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ও যে সবাইকে বসতে ইশারা করেছে তা অবধি খেয়াল করেনি। শুধুমাত্র ছেলেরা এবং অল্প কিছু মেয়ে বসেছে। বাকিরা দাঁড়িয়ে। তূর্ণ এবার একটু উঁচু আওয়াজে বললো,

” সিট ডাউন এভ্রিওয়ান। ”

এবার বোধহয় কাজে দিলো। তড়িৎ বসে পড়লো সকলে। তূর্ণ ফিরলো পরিচিত ফর্মে! হাতে থাকা
‘ ইন্ট্রোডাক্টরি বায়োকেমিস্ট্রি ‘ বইয়ে একপলক তাকিয়ে স্টুডেন্টদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। এতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল সবার।

” সকলে গত দিনের টপিক দেখে এসেছেন তো? ”

স্টুডেন্টরা ভীত নয়নে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। এবার কি হবে? কপালে আছে কি? সসম্মানে বসে থাকা নাকি শীতলতম অপমান?

ক্যান্টিনে বসে রয়েছে বন্ধুরা। পুষ্পির মুড অফ। তা লক্ষ্য করে তিয়াশ শুধালো,

” এর আবার কি হয়েছে? মুখ পেঁচার মতো করে রাখছে কেন? ”

” আর বলিস না ভাইয়া..! ”

তৃষা কথাটা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই ক্ষি প্ত বাঘিনী রূপে আবির্ভূত হলো পুষ্পি।

” খবরদার তৃষা! তোর ওই ব’জ্জাত ভাইয়ের নাম মুখেও নিবি না। আস্ত এক বদ মাস্টার! মাইয়াগো ক্রাশ দেইখা সাপের পাঁচ পা দেখছে নি? ”

বন্ধুরা কেউই কিছু বুঝতে পারলো না। দুয়া ভেজিটেবল রোল এ কা’মড় বসিয়ে শুধালো,

” কি হয়েছে পুষ্পি? তূর্ণ ভাইয়ার উপর এত ক্ষে পে আছিস কেন? সে না তোর একশো উনপঞ্চাশ তম ক্রাশ? ক্রাশের ওপর কেউ এভাবে ক্ষি প্ত হয় নাকি? ”

” আর ক্রাশ! বা* ক্রাশ। আস্ত এক বদ। ”

তিয়াশ শুধরে দিলো,

” মুখ খারাপ করিস না পুষ্পি। মনে রাখিস সে আমাদের লেকচারার। সম্মানীয় লোক। ”

” রাখ তো তোর সম্মান। উনি আমার সম্মান রাখছে যে আমি ওনারে সম্মান দেবো? ”

বিশাল ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,

” মানে? উনি তোর সম্মান বাজারে বিক্রি করে দিছে নাকি? ”

” তার চেয়ে কম কিছু না। পুরো ক্লাসের সামনে আমাকে..! ”

দুয়া এবার একটু সিরিয়াস হলো।

” তোকে কি করছে সেটা খোলাসা করে বলবি তো? তূর্ণ ভাইয়া কিন্তু অহেতুক কিছু করে না। সত্যি করে বল আগে তুই কি কুকর্ম করছিস? ”

” আমি কুকর্ম করছি? ”

তেঁতে উঠলো পুষ্পি। ওকে সামলিয়ে তৃষা মৃদু স্বরে বললো,

” আর বলিস না। এই মাইয়া ভাইয়ের ব্যাক টু ব্যাক তিন ক্লাসে পড়া পারে নাই। তুই তো জানিস ই তূর্ণ ভাইয়া একবার, দুইবার পর্যন্ত ছাড় দেয়। কিন্তু তৃতীয়বার? সোজা শাস্তি। ”

” শাস্তি? চমৎকার তো! তা কি শাস্তি দিছে? ”

বিন্দুর কৌতূহলী মুখ দেখে পুষ্পির মেজাজ খারাপ হলো‌। কেমন শ*তান বন্ধু! তৃষা হাসি চেপে বললো,

” পুরো ক্লাসের সামনে ওকে হোয়াইট বোর্ডে ত্রিশ বার লিখিয়েছে ‘ আমি পড়া চোর। ‘ বুঝতেই পারছিস হোল ক্লাসের সামনে, এর উপর ওর কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং হাতের লেখা‌। সব মিলিয়ে প্রেস্টিজ পুরো পাংচার! ”

হা হা করে হেসে উঠলো ওরা সবাই। তিয়াশ অবধি বাদ গেল না। লজ্জায় পুষ্পির মুখখানি এতটুকু হয়ে গেল।

” বদ মাস্টার। এর কোনোদিন ভালো হইতো না। বউ হইবো ফেল্টু। পড়া চোর! দেখে নিস। ”

দুয়া তড়িৎ প্রতিবাদ জানালো।

” ও য়ে! আমার না হওয়া ভাবীর নামে বদ দোয়া দিবি না। মে রে ভূত বানিয়ে দেবো। এমনিতেই তূর্ণ ভাইয়ার বিয়ে খাওয়ার জন্য কত্ত এক্সাইটেড হয়ে আছি। কবে যে ভাই বিয়ে করবে! ”

দীর্ঘশ্বাস ফেললো দুয়া। বাকিরা মুখ টিপে হাসতে লাগলো। পুষ্পি’র মুখখানি দেখার মতো হয়েছে কিনা!

আঁধার রজনী। কলিংবেলের শব্দ পেয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন তাহমিদা। শাড়ির আঁচলে ভেজা হাত মুছতে মুছতে দরজার দিকে অগ্রসর হলেন। পুনরায় কলিংবেল বাজতে না বাজতেই দরজা খুলে গেল। চক্ষুতারায় দৃশ্যমান হলো বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা মানবের ক্লান্ত বদন।

” আসসালামু আলাইকুম। ”

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ”

সালামের জবাব দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন সাজ্জাদ সাহেব। ওনার হাত থেকে অফিসের ব্যাগ এবং পলিথিন এর ব্যাগ দু’টো নিলেন তাহমিদা। সাজ্জাদ সাহেব ক্লান্ত দেহে সোফায় বসে পড়লেন। তাহমিদা দ্রুততার সহিত গোলাকার টি টেবিলের ওপর পলিথিনের ব্যাগটি রেখে সোফায় রাখলেন অফিস ব্যাগ। অতঃপর ফুল স্পিডে ফ্যান চালু করে ডাইনিং টেবিল হতে এক গ্লাস পানি নিয়ে এলেন। সাজ্জাদ সাহেব ততক্ষণে শার্ট ঢিলে করে আয়েশ করে বসেছেন। স্ত্রীর হাত থেকে পানি নিয়ে উনি তিন ঢোকে পানি পান করলেন। সন্তুষ্ট চিত্তে হাসলেন। তাহমিদা মুচকি হেসে গ্লাস রাখলো টি টেবিলের ওপর। তখনই নিজ বেডরুম থেকে বেরিয়ে এলো দুয়া। পড়নে তার মেরুন কালার লং টপস এবং প্লাজো পাজামা। গলায় ঝুলানো স্কার্ফ। বাবাকে দেখে মেয়েটি খুশি হলো। ছুটে গেল বাবার কাছে। বসলো বাবার বাম পাশে।

” আব্বু! আসসালামু আলাইকুম। আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? ”

সাজ্জাদ সাহেব আদুরে কন্যাকে পেয়ে মুচকি হাসলেন। মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বললেন,

” ওয়া আলাইকুমুস মা। আল্লাহ্’র রহমতে আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি। ”

” তাহলে দেরি হলো কেন? আমি সেই কখন থেকে ঘড়ি দেখছি। ”

আদুরে কণ্ঠ শুনে সাজ্জাদ সাহেব মুচকি হাসলেন।

” রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম ছিল মা। তাই একটু দেরি হয়েছে। তোমার ভাইয়্যু কোথায়! ওকে দেখছি না যে? ”

” কোথায় আবার? তোমার হাই কোয়ালিটি ব্রিলিয়ান্ট বাবু হোমওয়ার্ক করছে। ”

মা-বাবা দুজনেই নিঃশব্দে হেসে উঠলো। দুয়া খেয়াল করলো টেবিলের ওপর পলিথিনের ব্যাগ রাখা।

” আব্বু ওটাতে কি? ”

বলতে না বলতেই হাঁটু গেড়ে টেবিলের পাশ ঘেঁষে বসলো। পলিথিনের ব্যাগ চেক করে দেখতে লাগলো কি এনেছে। দেখেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল!

” ওয়াও! চকোলেট আইসক্রিম! থ্যাংক ইউ সো মাচ আব্বু। ”

আইসক্রিমের বাটি হাতে উঠে দাঁড়ালো দুয়া। খুশিমনে রুমে যাওয়ার পূর্বে আব্বুর গালে চুমু দিতে ভুললো না। হেসে উঠলেন সাজ্জাদ সাহেব। তাহমিদা পেছন থেকে বলে উঠলেন,

” ভাইকে দিয়ো কিন্তু। নিজেই সব খেয়ো না। ”

রুম থেকে শোনা গেল,

” আচ্ছা।‌ অল্প একটু দেবো নে। ”

” পা’গলী মেয়ে! ”

চলবে.

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৮

তমসায় আবৃত ধরিত্রী। কক্ষ জুড়ে পায়চারি করছে দুয়া। অস্থিরতা ছড়িয়ে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সে ভাবতেই পারছে না চোখে দেখা দৃশ্য ভুল কি করে হতে পারে? সে স্পষ্ট দেখেছে তূর্ণ ভাইয়া এবং এক কিশোরী কন্যা একসাথে! দু’জনের হাতে হাত। কাছাকাছি দাঁড়িয়ে।

” উফ্! এসব কি হচ্ছে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। তূর্ণ ভাইয়া কি করে এক পিচ্চি মেয়ের সাথে? উঁহু। উঁহু। নিশ্চয়ই আমার বুঝতে ভুল হচ্ছে। তূর্ণ ভাইয়া মানুষটা হয়তো ত্যা ড়া তবে চরিত্রহীন নয়। তার চরিত্র যে একদম ঝকঝকে তকতকে তা এলাকার সব্বাই খুব ভালো করেই জানে। আ আমিও জানি। তাহলে ওখানে হচ্ছিলো টা কি? তূর্ণ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করবো? ”

বিছানায় বসলো দুয়া। নিজের কথায় নিজেই আপত্তি জানালো।

” নো ওয়ে। তূর্ণ ভাইয়া যে ত্যা ড়া লোক! সোজাসাপ্টা উত্তর কোনোকালেই দেবে না। উল্টো তিলকে তাল বানিয়ে ফেলবে। তাহলে এখন উপায় কি? ”

ভাবনায় পড়ে গেল মেয়েটা। ভেবে চলেছে। ভেবে চলেছে। প্রশ্নের উত্তর না পেলে তার যে অস্থিরতা কমবে না। উল্টো রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। তাই যে করেই হোক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতেই হবে।

” ইয়েস! পেয়ে গেছি। এত সহজ উপায় আমার মাথায় আগে এলো না কেন? আমি বোধহয় দিন দিন গাধা হয়ে যাচ্ছি। ওপস্! গাধা নয়। গাধি। ওটা তো মেল ভার্সন! ”

একাকী মৃদু হেসে উঠলো মেয়েটা। তখনই বাহির হতে শোনা গেল মায়ের কণ্ঠ।

” দুয়া! ডিনার করতে আসো। ”

” আসছি। ”

সামান্য উঁচু কণ্ঠে মা’কে জানালো মেয়েটা। সমস্ত অস্থিরতা একপাশ করে নিজেকে সামলিয়ে নিলো। অতঃপর ফ্যান অফ করে পা বাড়ালো ডাইনিং রুমের দিকে।

অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষ। বিছানায় শুয়ে এক মধ্যবয়স্ক নারী। চক্ষু বন্ধ করে বিশ্রাম নিচ্ছে। জানালার পর্দা সামান্য সরিয়ে রাখা। চন্দ্রের মৃদু আলো জানালা গলিয়ে কক্ষে প্রবেশ করছে। হঠাৎ ভেজানো দরজা উন্মুক্ত হলো। দ্রুত পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলো এক মানব। বাঁ হাতে জ্বালিয়ে দিলো কক্ষের আলো। মুহুর্তের মধ্যেই আলোকিত হলো চারিদিক। চোখের ওপর আলো পড়ায় কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলো শুয়ে থাকা নারী। চোখমুখ কুঁচকে ফেললো। বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে তার দিকে ছুটে গেল সুদর্শন মানবটি। বসলো শিয়রে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আদুরে কণ্ঠে ডেকে উঠলো,

” মা! তোমার এখন কি অবস্থা? খারাপ লাগছে? ”

মুচকি হাসলেন নারীটি। আস্তে করে চোখ মেলে তাকালেন। ছেলেকে দেখে তৃপ্ত হলো ওনার হৃদয়। ক্ষীণ স্বরে বললেন,

” আমি ঠিক আছি বাবা। অস্থির হোস না। ”

” তুমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে মা। আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন বোধ অবধি করোনি! তুমি জানো তানুর মুখে তোমার অসুস্থতার কথা শুনে আমার কি অবস্থা হয়েছিল? আমার শ্বাসরোধ হয়ে আসছিল। ”

নারীটি আশ্বস্ত করতে বললো,

” এখন সব ঠিক আছে। ”

ছেলেটা কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

” তুমি সবসময় নিজের অবহেলা করো কেন? তুমি জানো না তুমি ছাড়া আমাদের দুই ভাইবোনের আপন কেউ নেই? ত্ তোমার কিছু হলে আ আমাদের কি হবে?”

শেষোক্ত কথাটা বলতে গিয়ে কণ্ঠ কিঞ্চিৎ কম্পিত হলো। ছেলের মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে নারীটি ছেলের বাম গালে হাত রাখলো।

” আল্লাহ্ আছে তো। কিছু হবে না। এখন অনেক হয়েছে। আর মন খারাপ করতে হবে না। অফিস থেকে ক্লান্ত শরীরে ফিরেছিস। যা রুমে যা। ফ্রেশ হয়ে নে। তানুটাও না? আস্ত বোকা। ছেলেটা ফিরতে না ফিরতেই ঘাবড়ে দিলো। ”

মায়ের ললাটে চুমু এঁকে ছেলেটা বললো,

” তানু ভুল কিছু করেনি। একদম ঠিক কাজ ই করেছে। নইলে আমি তো জানতেই পারতাম না তুমি আজ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে। ”

” তোকে কি এমনি এমনি জানাতে নিষেধ করেছি? জানতে পারলে তো কাজকর্ম ফেলে দিয়ে ছুটে আসতি। ওটা কি ঠিক হতো? ”

” নিশ্চয়ই ঠিক হতো। আমার কাছে সবার আগে আমার জন্মদাত্রী মা। তারপর জাগতিক সবকিছু। ”

তৃপ্তিময় হাসলেন নারীটি।

” তাই? আচ্ছা ঠিক আছে বাবা। এখন যা তো। রুমে যা। ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি। ”

তৎক্ষণাৎ আপত্তি জানালো ছেলেটা।

” একদম নয়। তুমি এখন চুপচাপ রেস্ট নেবে। আমি তোমার খাবার নিয়ে আসছি। মা ছেলে একসাথে খাবো। ”

” বা রে! আমি বুঝি বানের জলে ভেসে এসেছি? ”

দরজায় তাকালো দু’জনে। তানুকে দেখে মুচকি হাসলো তারা। ছেলেটা বললো,

” হাঁ। তোকে তো বুড়িগঙ্গার তীরে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। ভুলে গেছিস? ”

” ভাইয়া! ”

মেয়েটার মলিন বদন দেখে হেসে উঠলো তারা দু’জনে। ছেলেটা আর দুষ্টুমি না করে ডান হাত বাড়িয়ে দিলো। কাছে আহ্বান করতেই ছুটে এলো তানু। আছড়ে পড়লো ভাইয়ের বুকে। তা দেখে সন্তুষ্ট চিত্তে হাসলেন নারীটি।

অপরাহ্ণের শেষ প্রহর। শুভ্র রঙা সমতল দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দুই বোন। দুয়া’র হাতে বাদামের ছোট্ট ঠোঙা। তা থেকে বাদাম নিয়ে খোসা ছাড়াতে ব্যস্ত তৃষা। মুখে তিনটি বাদাম ঢুকিয়ে শুধালো,

” আর কতক্ষণ দাঁড়াই থাকবো? পায়ের তলা তো ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ”

দুয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,

” মাত্র পাঁচ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছিস। এতেই পায়ের তলা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে? ”

” ইয়াহ বেবি। আমার আবার পেডিকিউর মেনিকিউর করা কোমল কোমল ফর্সা পা। দু মিনিট দাঁড়ালেই ‘ক্ষ’ তে ক্ষয় হতে শুরু করে। ”

ফিক করে হেসে উঠলো দুয়া। তৃষা এবার সামান্য সিরিয়াস হলো। শুধালো,

” কাজটা কি ঠিক হচ্ছে দুয়া? আই মিন ভাইয়া জানলে? আমরা কিন্তু শুধু শুধু জাসুসি করছি। ”

বাদাম মুখে পুরে দুয়া জবাব দিলো,

” শুধু শুধু কোথায়? আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে। তার সমাধান দরকার। আমি আবার অহেতুক সন্দেহ করার লোক নই। জানিস ই তো। ”

” হ তুমি তো লেডি শার্লু থুক্কু শার্লক হোমস। সামান্য খটকা লাগলেই আমারে ওয়াটসন বানাইয়া মাঠে নাইমা পড়ো। ”

” তো কি করবো বল? তুই তো আমার ওয়ান অ্যান্ড অনলি চিরসাথি। ”

” আসতাগফিরুল্লাহ্! শেষমেষ চিরসাথি! ওই মাইয়া তোরে আবার স** ভূতে ধরে নাই তো? ”

এমন বি শ্রী কথা শুনে নাকমুখ কুঁচকে ফেলল দুয়া। বাজে একটা গা লি দিতে গিয়েও দিলো না। কেননা ওদের আকাঙ্ক্ষিত মানুষ চলে এসেছে।

” ওই যে এসে পড়েছে। ”

দুয়ার ইশারা মোতাবেক বাম পাশে তাকালো তৃষা। দেখলো রিয়া আসছে। ষোড়শী কিশোরী কন্যা রিয়া। দেখতে মাশাআল্লাহ্! নজরকাড়া! তাই বলে আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ! নো নো নো। ঘাড় থেকে ভূত ছাড়ালো দুয়া। দু’জনে হাসি হাসি মুখ করে এগিয়ে গেল। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কোচিং থেকে ফিরছিল রিয়া। হঠাৎ সম্মুখে দুই পড়শীকে দেখে ঈষৎ চমকালো!

” আ আসসালামু আলাইকুম আপু। তোমরা? ”

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ইয়েস বেবি আমরা। কেমন আছিস বল? এক সপ্তাহ বাদে দেখা! ”

তৃষার কথা শুনে মেয়েটা মৃদু হাসলো।

” আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তোমরা ভালো আছো? ”

দুয়া মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বললো,

” হাঁ আমরাও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। কোচিং থেকে ফিরলে বুঝি? ”

” হাঁ। ”

” পড়াশোনা কেমন চলছে বল? ”

তৃষার প্রশ্ন শুনে দুয়া মনে মনে হাসলো। কার মুখে কেমনতর প্রশ্ন! ভাবা যায়?

” ভালো চলছে। ”

দুয়া এবার আর ইতিউতি না করে সোজাসুজি বললো,

” রিয়া তোর সাথে আমাদের একটু দরকারি কথা ছিল। এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলা সম্ভব নয়। চল কোথাও গিয়ে একটু বসি। ”

কথাটা শুনে রিয়া একটু অপ্রস্তুত হলো। তবে প্রতিবেশী বড় আপুদের কথা অমান্য করলো না। ওদের সঙ্গে চললো। মিনিট পাঁচেক দূরত্বে ছোটোখাটো একটা পার্ক। মূলত জগিং এরিয়া হিসেবে পরিচিত এই পার্কটি। বিকেলবেলা কেউ কেউ সময় কাটাতে আসে। এখন অবশ্য লোকসমাগম সামান্য। ওরা ফাঁকা দেখে একটি বেঞ্চে বসলো। রিয়া ওদের দিকে জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে। দুয়া গলা খাঁকারি দিয়ে প্রশ্ন করলো,

” গতকাল দুপুরে কি হয়েছিল রিয়া? ”

প্রশ্নটা শুনেই মেয়েটার মুখখানি কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল। যা ওদের দুজনের চক্ষু এড়ালো না।

” কি ব্যাপার রে? কাল দুপুরের কথা শুনে তোর মুখখানি কাগজের মতো ফর্সা হয়ে গেল কেন? এনি প্রবলেম? ”

তৃষা প্রশ্ন করতেই দুয়া এবার নরম কণ্ঠে বললো,

” রিয়া কি হয়েছে আপু? কোনো সমস্যা হলে আমাদের বল। তৃষা, আমি আছি তো। ঠিক সমাধান করে দেবো।বল। ”

রিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

” আ আসলে.. ”

” হুঁ? বল। ” দুয়া জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে।

” কাল দুপুরে.. ”

কিশোরী মেয়েটি ভীত হয়ে পড়ছে। কেমন ঘেমে যাচ্ছে। দুয়া আরো মোলায়েম স্বরে ওর হাতের ওপর হাত রেখে বললো,

” দুপুরে তূর্ণ ভাইয়া তোর সাথে কি করছিল রিয়া? নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে বলতে পারিস। মনে কর এই মুহূর্তে আমরা তূর্ণ ভাইয়ার বোন নই। শুধুমাত্র তোর প্রতিবেশী। শুভাকাঙ্ক্ষী। নির্দ্বিধায় আমাদের বলতে পারিস। বল না কি হয়েছিল? ”

” ভাইয়া? ”

তৃষা আর বলতে পারলো না। সম্মুখে থাকা মেয়েটার অক্ষিকোল সিক্ত দেখে দু’জনেই হকচকিয়ে গেল।

” আরে আরে কাঁদছিস কেন? এই রিয়া? ” তৃষা ঘাবড়ে গিয়েছে।

দুয়া আলতো করে মেয়েটার ভেজা দু কপোল মুছে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো কিছুক্ষণ। আস্তে ধীরে স্বাভাবিক হলো রিয়া। নিজেকে ধাতস্থ করে মৃদু স্বরে থেমে থেমে বলতে লাগলো গতকালের সেই অঘটন!
_________

অপরাহ্ন প্রহর। আজ কোচিং একটু তাড়াতাড়ি ছুটি হয়েছে। বান্ধবীর সঙ্গে হেঁটে বাড়ির পথে চলছে রিয়া। দু’জনে গল্প করতে করতে অনেকটা পথ পাড়ি দিলো। বান্ধবী তার গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছে। তাকে বিদায় জানিয়ে একাকী পথ চলতে লাগলো রিয়া। কয়েক কদম এগোতেই মেয়েটা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো। রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে আড্ডায় মগ্ন তিন চারজন বখাটে টাইপ ছেলেপেলে। এলাকায় তাদের বেশ দুর্নাম রয়েছে। ভালো ঘরের বখে যাওয়া সন্তান ওরা। রাস্তাঘাটে মেয়েদের ইভটিজিং করে বেড়ায়। আজ একাকী এদের সামনে পড়ে ভীত হলো মেয়েলি হৃদয়। রিয়া দ্রুত পায়ে তাদের পাশ কাটিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু আফসোস! ঠিক ওদের নজরে পড়ে গেল।

” ও রিয়া! ও রিয়া! ”

গানের সুরে পেছন হতে ডেকে উঠলো একজন। রিয়া থমকে গেল। এক পল দাঁড়িয়ে দোয়া পড়তে পড়তে পুনরায় পা চালালো। অবশ্য লাভ হলো না। দ্রুত গতিতে ওর সম্মুখে এসে দাঁড়ালো চারজন।

” ও রিয়া! ডাক দিয়েছি তোমায়। ও রিয়া! তুমি শুনতে কি পাও না? ”

পুনরায় সুরে সুরে বললো। রিয়া ভেজা কণ্ঠে বললো,

” আ আমাকে যেতে দিন। আম্মু অ অপেক্ষা করছে। ”

” যাবে তো সোনা। আগে একটু ভাইয়াদের সাথে কথা বলো। আলাপ করো। ভাল্লাগবে। ”

নরম হৃদয়ের অধিকারিণী মেয়েটি প্রচুর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো। তার সুযোগ নিলো ওরা। ইচ্ছেমতো বাজে কথা, বি শ্রী ইশারা করতে লাগলো। ঠিক সে মুহূর্তে বাম পাশে এসে দাঁড়ালো একটি শুভ্র রঙা গাড়ি। হঠাৎ গাড়ি দেখে ওরা কিছুটা হকচকিয়ে গেল। রিয়া বিপদের মূহুর্তে গাড়ি দেখে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে কয়েক কদম সরে গেল। মনে মনে স্রষ্টার নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করতে লাগলো। প্রার্থনা বুঝি কাজে দিলো। খুলে গেল গাড়ির দ্বার। বেরিয়ে এলো ফর্মাল পোশাকধারী সুদর্শন আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ! ছেলেগুলো তূর্ণকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

” এ! হাহ্! ভাবলাম কে না কে? ”

একজন বিদ্রুপের স্বরে বলে উঠলো। শৌর্যের সহিত জমিনের বুকে কদম ফেলে ওদের ঠিক মুখোমুখি হলো তূর্ণ। শীতল কণ্ঠে শুধালো,

” এখানে কি হচ্ছে? ”

একটা ছেলে কিছু বলবার পূর্বেই রিয়া ভেজা কণ্ঠে ডেকে উঠলো,

” ভাইয়া! ”

ওকে লক্ষ্য করতেই সবটা স্পষ্ট হলো। তূর্ণ রাগান্বিত চাহনিতে তাকালো চারজনের দিকে। একজন সালাম দিলো।

” আসসালামু আলাইকুম ভাই। ভার্সিটি থেকে আসছেন নাকি? কেমন আছেন বলেন? ভালো তো? ”

” মেয়েটাকে সসম্মানে যেতে দে। ” শীতলতা বিরাজমান কণ্ঠে।

” হাঁ ভাই যাবে তো। ও-ই টুকটাক আলাপচারিতা করছিলাম। পাড়াতো ভাই কিনা। দায়িত্ব আছে তো। ” বললো আরেকজন।

” হাঁ ভাই। আপনি যান। আমরা নিজ দায়িত্বে ওরে পৌঁছে দিয়ে আসবো। ”

তূর্ণ গম্ভীর স্বরে বললো,

” দায়িত্ববান হওয়া ভালো। তবে চরিত্রহীন নয়। ”

এতেই তেঁতে উঠলো একজন।

” চরিত্রহীন? কারে চরিত্রহীন বললেন? নিজের চরিত্রের নাই ঠিক। খালাতো বোনের সাথে অনবরত রাসলী* ”

আর বলা হলো না। শক্তপোক্ত এক থা|প্পড়ে মাটিতে ছিটকে পড়লো ছেলেটা। হকচকিয়ে গেল বাকিরা। তূর্ণ নিজস্ব ভাবমূর্তি বজায় রেখে আঙুল তাক করে অত্যন্ত গাম্ভীর্যের সহিত শাসনের স্বরে বললো,

” সবাইকে নিজেদের মতো চরিত্রহীন ভাববি না। এখনো সময় আছে। শুধরে যা। নারীরা মায়ের জাত। সম্মান দিতে শেখ। নইলে একসময় তোদের পাপের ফল তোদের ঘরের মা-বোনদের না পেতে হয়। ”

ছেলেটা এখনো হতবিহ্বল! ভাবতেই পারছে না সদা সর্বদা শান্তশিষ্ট, ঠাণ্ডা মেজাজের আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ কিনা তাকে চ ড় মা”রলো! তা-ও আবার এক চ’ড়েই দাঁত নড়ে উঠেছে! অবিশ্বাস্য! ছেলেটার ধ্যান ভঙ্গ হলো তূর্ণ’র শীতলতম হুমকিতে। আঙ্গুল নাড়িয়ে ওদের প্রস্থান করার আদেশ করছে তূর্ণ! হতবিহ্বল ছেলেটাকে ওর বন্ধুরা জাপটে ধরে দ্রুত পায়ে সেথা হতে প্রস্থান করলো। ওরা এখনো ঘোরের মধ্যে। তূর্ণ’র এই নতুন অবতার বিশ্বাস ই করতে পারছে না।

তূর্ণ এবার পাশ ফিরে তাকালো। রিয়া মাথা নিচু করে কেঁদে চলেছে।

চলবে.