#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৫
নিস্তব্ধ যামিনী। খোলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দুয়া। মায়াবী আঁখি যুগল নোনা জলে সিক্ত। গড়িয়ে পড়ছে কপোল ছুঁয়ে ছুঁয়ে। ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত হচ্ছে কায়া। র’ক্তিম আভা ফুটে উঠেছে মুখশ্রীতে। ঠিক তখনই ডান কাঁধে কারোর হাতের ছোঁয়া পেয়ে মেয়েটি থমকে গেল। তড়িৎ বাঁ হাতের উল্টো পিঠে অশ্রু কণা মুছে নিলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো বাবা দাঁড়িয়ে। চিন্তিত মুখে সাজ্জাদ সাহেব মেয়ের পানে তাকিয়ে রয়েছেন। শুধোলেন,
” কি হয়েছে মা? কাঁদছিলে কেন? আপুর জন্য খারাপ লাগছে? ”
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো দুয়া। সাজ্জাদ সাহেব মলিন হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বললেন,
” কাঁদে না মা। সব মেয়েদের জীবনে এই দিনটি একদিন না একদিন আসবেই। এটা যে আল্লাহ্’র নির্দেশ। আপন গৃহ, মা-বাবা পরিবারকে ছেড়ে পরের ঘরে যেতে হবে। ”
আবেগআপ্লুত হয়ে দুয়া বাবার কাঁধে মাথা রাখলো। ভেজা কণ্ঠে বললো,
” আপনজনদের ছেড়ে যেতে কতটাই না কষ্ট হয়! কেউ কি করে এই কষ্টটা সহ্য করে আব্বু? আপুর খুব খারাপ লাগছে তো। বড়াপু! বড়াপুরও তো কষ্ট হয়েছিল। ”
” হাঁ হয়েছিল। তবে এই কষ্টটা সাময়িক। আল্লাহ্ ঠিক এই কষ্টটা ভুলতে সহায়তা করেন। নইলে আপনজন – দের ছেড়ে অন্য পরিবারের অংশ হওয়া দুষ্কর হয়ে উঠতো। কেউ পারতো না। ”
দুয়া বাবার শার্ট খামচে ধরে মৃদু স্বরে বললো,
” আমি কখনো বিয়ে করবো না। তোমাদের ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে স সম্ভব নয়। আমি দূরে য যেতে পারবো না। ও আব্বু? শুনছো? আ আমি বিয়ে করবো না। ”
মেয়ের কথায় নিঃশব্দে হাসলেন সাজ্জাদ সাহেব। কাঁধ থেকে মেয়ের মাথা সরিয়ে নিজের মুখোমুখি আনলেন। আলতো করে মুছে দিলেন অশ্রু বিন্দু। মেয়ের ললাটে চুমু এঁকে বললেন,
” ঠিক আছে। আমার মা’কে দূরে যেতে হবে না। সে আমাদের সঙ্গেই থাকবে। ”
দুয়া মায়াবী আঁখি পল্লব ঝাপটালো। শুধালো,
” সত্যি? ”
” হুঁ। সত্যি। ”
খুশি হলো মেয়েটা। উৎফুল্ল চিত্তে বাবাকে আলিঙ্গন করলো। মুচকি হাসলেন সাজ্জাদ সাহেব। আদুরে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন মেয়ের কেশে। সামান্য কিছুটা দূরে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তূর্ণ। অবলোকন করলো পিতা কন্যার মিষ্টি মুহুর্ত। প্রসারিত হলো তার অধর কোল।
•
ফুলে সজ্জিত কক্ষ। বাহারী ফুলের সুগন্ধে মাতোয়ারা পরিবেশ। বিছানার মধ্যিখানে বসে সিনথিয়া। ঘোমটা আবৃত মুখশ্রী। কক্ষের বাহির থেকে বেশ কয়েকজনের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। যার মধ্যে তার অর্ধাঙ্গ কবিরও অন্তর্ভুক্ত। ধুকপুক ধুকপুক করছে মেয়েটার হৃদযন্ত্রটি।
অবশেষে দরদাম কষে ছাড়া পেল কবির। ভাইবোনদের পাওনা মিটিয়ে বদ্ধ দ্বার উন্মুক্ত করে ভেতরে প্রবেশ করলো। দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো স্ত্রীর পানে। মুচকি হাসলো কবির। তৃপ্তিময় সে হাসির রেখা। আস্তে ধীরে সিনথিয়ার পানে অগ্রসর হতে লাগলো কবির। যা অনুভব করে মেয়েটির অন্তঃস্থল কম্পিত হতে লাগলো। দু হাতে আঁকড়ে ধরলো লেহেঙ্গা।
অর্ধাঙ্গিনীর মুখোমুখি বসলো কবির। অপলক চাহনিতে তাকিয়ে রইলো খানিকটা সময় ধরে। অতঃপর দু হাত বাড়িয়ে দিলো। আলতো করে ঘোমটা তুলে উন্মুক্ত করলো কাঙ্ক্ষিত মুখশ্রী। মুখ ফুটে অস্ফুট স্বরে আওড়ালো,
” মাশাআল্লাহ্! ”
লাজে রাঙা মেয়েটি আরো জড়োসড়ো হয়ে বসলো। তা লক্ষ্য করে মুচকি হাসলো কবির। শুধালো,
” আমি কি আমার অর্ধাঙ্গিনীকে আলতো করে ছুঁতে পারি? ”
না চাইতেও ভীত হলো সিনথিয়া। কিছু বলবে বলবে করেও বলতে ব্যর্থ হলো। যেন অবরোধ হয়ে গিয়েছে কণ্ঠনালী। সিনথিয়ার সাড়া না পেয়ে কবির নিজে থেকেই অগ্রসর হলো। স্ত্রীর কপালে হাত ছুঁয়ে রেখে পড়লো দোয়া। অতঃপর চুম্বন করলো ললাটের মধ্যিখানে। আঁখি পল্লব বন্ধ করে স্বামীর প্রথম স্পর্শ অনুভব করলো নববধূ। ঘোর কেটে গেল কবিরের কণ্ঠ শুনে।
” এত ভারী পোশাক পড়ে নিশ্চয়ই অস্বস্তি হচ্ছে? কাবার্ডে তোমার জন্য ড্রেস রাখা আছে। ফ্রেশ হয়ে এই ভারী পোশাক বদলে নাও। ”
তৃপ্তিময় হাসলো সিনথিয়া। হাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে দু হাতে ভারী লেহেঙ্গা সামলিয়ে বিছানা ত্যাগ করলো। কবির হাতের ইশারায় কাবার্ড দেখিয়ে দিলো। সিনথিয়া প্রথমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। একে একে খুলে ফেললো সকল গহনা। অতঃপর চুল ছাড়াতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হলো। যা লক্ষ্য করে বিছানা থেকে নেমে এলো কবির। নীরবে এগিয়ে গেল। সহায়তা করতে লাগলো সঙ্গিনীকে। না বলতেই অর্ধাঙ্গ এগিয়ে এলো! এতে পুলকিত হলো সিনথিয়ার হৃদয়। মনে মনে শুকরিয়া আদায় করলো স্রষ্টার।
•
দিবাকরের আলোয় আলোকিত ধরিত্রী। নতুন এক দিনের সূচনা। দুয়া হাই তুলতে তুলতে ডাইনিং রুমে এলো। চেয়ার ইতোমধ্যে প্রায় পূর্ণ। দুয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেলো পাশাপাশি দু’টো চেয়ার খালি। মৃদু হেসে দুয়া একটি চেয়ার টেনে বসে পড়লো। হঠাৎই ধপ করে পাশের চেয়ার দখল করলো একজন। বরাবরের মতই মেয়েটা আঁতকে উঠলো। ভীতসন্ত্রস্ত নয়নে তাকালো ডান পাশে। আর হতাশ হলো! পাশে কে বসেছে? ওয়ান অ্যান্ড অনলি আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ! উফ্! এই লোকটা পিছু ছাড়বে না কি? তূর্ণ প্লেট সোজা করে বাম পাশে তাকাতেই হকচকিয়ে গেল!
” এ কি! সূর্য আজ কোনদিকে উঠেছে? সকাল সকাল দুয়া ম্যাডামের দর্শন! এ যে অবিশ্বাস্য! অভাবনীয়! ”
হেসে উঠলো উপস্থিত সকলে। একমাত্র দুয়া ব্যতীত। সে বাঁকা জবাব দিলো।
” সূর্য মামা তার হিসেবমতো পূর্ব দিকেই উঠেছে। এখন তুমি যদি উত্তর কিংবা দক্ষিণে ভুলভাল দেখো তাহলে কি করার? হয়তো তোমার চশমার পাওয়ার চেঞ্জ হয়েছে। ”
বক্র হাসলো তূর্ণ।
” নাউ আ’ম শিওর। এটা আমাদের পুতলা ই। ও ছাড়া এতো চ্যাটাং চ্যাটাং কথা অন্য কেউ বলেই না। ”
” চ্যাটাং চ্যাটাং কথা! এ আবার কি? ”
তৃষার প্রশ্নের জবাবে তূর্ণ বললো,
” এ এক ধরনের স্পেশাল কথা। ত্যাড়া বাঁকা। সবাই পারে না। ও তুই বুঝবি না। ”
” হুঁ। আমি তো কচি খুকি! ”
ভেংচি কাটলো তৃষা।
” এক্সাক্টলি। তুই কচি খুকি। আর এইজন ফটরফটর করতে ওস্তাদ। ”
তূর্ণের অহেতুক কথায় দুয়া প্রতিবাদ জানালো।
” তূর্ণ ভাইয়া! সকাল সকাল আমার পিছু না নিলে তোমার পেটের ভাত হজম হয় না? ”
” ভাত! আমি তো রুটি খাবো। ভাত হজম হবে কি করে? কি যে ভুলভাল বলিস না! ”
দুয়া কিছু বলবার পূর্বেই বড় মামী সাথি বলে উঠলেন,
” তূর্ণ! এসব কি হচ্ছে বাবা? সকাল সকাল মেয়েটার পেছনে পড়েছো! ”
তূর্ণ ফটাফট জবাব দিলো,
” পেছনে কোথায় পড়লাম মামী? আমি তো ওর ডান পাশে। ”
ভাইবোনরা ফিক করে হেসে উঠলো। দুয়া অসহ্য হয়ে ডেকে উঠলো,
” তূর্ণ ভাইয়া! ”
মেয়েটার ফুলো গাল দেখে তূর্ণ আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ রুটি ছিড়ে সবজি দিয়ে খেতে লাগলো। এতে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো দুয়া। সাথি ওকে খাবার সার্ভ করে দিলেন। দুয়া এক নলা মুখে নিয়ে খেতে লাগলো। খাওয়ার এক পর্যায়ে পানির গ্লাসের দিকে হাত বাড়াতেই তূর্ণ গ্লাস হাতে নিলো। অর্ধ পূর্ণ গ্লাস পানিতে পরিপূর্ণ করে ওর হাতে দিলো। বিপরীতে সন্তুষ্ট চিত্তে হাসলো মেয়েটি।
•
নির্ধারিত কক্ষে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে তূর্ণ। কোলে ল্যাপটপ। তাতে কর্ম মগ্ন সে। চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। কিবোর্ডে অবলীলায় চলছে আঙ্গুল। তখনই দরজায় কড়া নাড়লো কেউ। অনুমতি সূচক কণ্ঠে শুধালো,
” ভাইয়া আসবো? ”
মিহাদ এর কণ্ঠ শুনে তূর্ণ চোখ তুলে তাকালো। বললো,
” হাঁ। ভেতরে আয়। ”
অনুমতি পেয়ে মিহাদ ভেতরে প্রবেশ করলো। তূর্ণ’র ইশারা পেয়ে বসলো বিপরীত দিকে।
” হাঁ বল। ”
” ভাইয়া কাল তো সিনুর রিশিপশন পার্টি। কিছু গিফটস্ কেনার ছিল। আম্মু বললো তুমি নাকি সাথে যাবে। ”
কিবোর্ডে আঙ্গুল চালাতে চালাতে তূর্ণ জবাব দিলো,
” হাঁ। তোরা রেডি হয়ে নে। আমি হাতের কাজটা সেরেই আসছি। ”
” আচ্ছা। ”
মিহাদ উঠতে গিয়েও উঠলো না। উশখুশ করতে লাগলো। তা লক্ষ্য করে তূর্ণ শুধালো,
” কিছু বলবি? ”
” হুঁ। ব বলছি সিনুর সাথে কথা হয়েছে? ”
তূর্ণ মৃদু হাসলো। তাকালো চোখ তুলে।
” ভাই রে বোনের শোকে এতটাই কাতর যে বোনের সাথে কথা অবধি বলতে দ্বিধাবোধ হচ্ছে? ”
” ন না মানে। ”
তূর্ণ ভাইয়ের পিঠ চাপড়ে দিলো। বললো,
” যা গিয়ে কল কর। বোনের সাথে কথা বল। দেখবি ভালো লাগছে। ”
” বলবো? ”
কেমন দ্বিধাগ্রস্ত কণ্ঠ। তূর্ণ মুচকি হেসে চোখের ইশারায় সম্মতি জানালো। মাথা চুলকে উঠে পড়লো মিহাদ।
” ঠিক আছে। আমি তাহলে কথা বলে রেডি হচ্ছি। ”
বলেই দ্রুত পায়ে মিহাদ কক্ষ ত্যাগ করলো। বোনের সাথে কথা বলতে তর সইছে না বুঝি। নিঃশব্দে হাসলো তূর্ণ।
•
আলো ঝলমলে কনভেনশন সেন্টার। কৃত্রিম আলোয় উজ্জ্বল চারিদিক। অতিথি সমারোহে জাঁকজমক অবস্থা। আকর্ষণীয় সজ্জিত স্টেজে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নবদম্পতি কবির এবং সিনথিয়া। তারা আগত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছে। ঠিক সে মুহূর্তে স্টেজে উঠলো দুয়া, তৃষা, তূর্ণ এবং মিহাদ।
” আপু! ”
ছুটে গিয়ে সিনথিয়াকে জড়িয়ে ধরলো দুয়া। হঠাৎ বোনের সান্নিধ্য পেয়ে হকচকিয়ে গেল সিনথিয়া। পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে নিলো। প্রসারিত হলো অধর কোণ। আবেগাপ্লুত হয়ে বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সিক্ত হলো অক্ষিকোল। দুয়াও দু হাতে বোনকে জাপ্টে ধরলো। সঙ্গী হলো তৃষা। মিহাদ মাত্র কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে। মাত্র দু’টো দিনের মতো দূরত্ব। তাতেই মনে হচ্ছে বোনকে কতদিন বাদে দেখছে! দু নয়ন জুড়িয়ে বোনকে দেখতে লাগলো সে। ততক্ষণে তূর্ণ কবিরের সঙ্গে ফর্মাল হাগ করে নিয়েছে। কুশল বিনিময় করছে।
” আপু কেমন আছো তুমি? মাশাআল্লাহ্! কি সুন্দর লাগছে তোমাকে! ”
সিনথিয়া মিষ্টি হেসে জবাব দিলো,
” থ্যাংকস বোন। আলহামদুলিল্লাহ্ আমি ভালো আছি। তোরা কেমন আছিস বল? আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? ”
” আমরা আলহামদুলিল্লাহ্ জোশ আছি। আর হ্যাঁ আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি। ”
সিনথিয়া মিষ্টি করে হাসলো। তখন দৃষ্টিগোচর হলো বড় ভাই মিহাদ! ছলছল করে উঠলো আঁখি জোড়া।
” ভাইয়া! ”
সকলকে অবজ্ঞা করে মেয়েটা দু হাতে লেহেঙ্গা সামলিয়ে ছুটে গেল। আলিঙ্গন করলো ভাইকে। মিহাদ সযত্নে বোনকে আগলে নিলো। তৃপ্তিময় হাসির রেখা ফুটে উঠলো অধর কোণে। ভাইবোনের মিষ্টি মুহুর্তের সাক্ষী রইলো ওরা। স্টেজের নিচে দাঁড়িয়ে এই মুহুর্ত অবলোকন করলেন মাহফুজ সাহেব এবং সাথি। সন্তানদের সুন্দর আবেগঘন মুহূর্ত দেখে ওনারাও আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন। মিষ্টি করে হাসলো দুয়া এবং তূর্ণ।
___
দুয়া, তৃষা, নিশি এবং তানজিনা একসাথে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সকলেই পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে। চটাপট সুন্দর করে সেলফি তুললো সম্মুখে দন্ডায়মান তৃষা। নিশি তড়িৎ বললো,
” দেখি দেখি কেমন হয়েছে। ”
মোবাইল হাতে নিয়ে ফটোটা দেখতে লাগলো নিশি। মুহুর্তের মধ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ পেল মুখশ্রীতে।
” এটা কি করেছিস? ”
” কি করেছি? ”
মোবাইল এগিয়ে দিয়ে,
” কি করেছিস নিজেই দেখ। সবাই কি সুন্দর পোজ দিয়েছে! আর আমি? যেই চোখের পলক ঝাপটেছি ঠিক সেই মুহূর্তে ফটোটা তুলেছিস। কি বাজে লাগছে আমাকে! ”
তৃষা মোবাইলে ভালোমতো দৃষ্টি নিবদ্ধ করে দেখলো কথা সত্য। ফিক করে হেসে উঠলো সে। এ দেখে ক্ষি প্ত হলো নিশি।
” দাঁত কেলাবি না একদম। সর। এবার আমি সেলফি তুলবো। ঠিকমতো তুলতেই জানে না। ”
” হুঁ। এখন যত দোষ তৃষা ঘোষ। ”
” অফকোর্স। এখন সর তো। ”
তৃষাকে ঠেলে সরিয়ে দিলো নিশি। নিজে মোবাইল হাতে দাঁড়ালো। দুয়া ও তানজিনা একে অপরের দিকে তাকিয়ে সশব্দে হাসলো। এতে নিশি ক্ষে’পে গিয়ে যেই না কিছু বলতে উদ্যত হলো অমনি সকলে রেডি। ফটো তুলতে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিশি পোজ দিয়ে দাঁড়ালো। ক্যামেরা বন্দি হলো চার ললনা। কিঞ্চিৎ দূরে দাঁড়িয়ে এই মুহুর্তটুকু মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করলো একজন।
চলবে.
#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৬
সুষ্ঠু রূপে চলমান রিসিপশন পার্টি। আগত অতিথিরা একে অপরের সঙ্গে আলাপচারিতায় মগ্ন। এসবের ভিড়ে একমাত্র অস্বস্তিতে ভুগছে জাহিরাহ্ দুয়া। মেয়েটা এক কিনারে দাঁড়িয়ে। কেমন উশখুশ করছে। মায়া মায়া চোখ জোড়া সাহায্যের জন্য কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সকলেই কমবেশি ব্যস্ত। কাকে ডাকবে সে!
তূর্ণ, কবির এবং মিহাদ একসাথে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছিল। হঠাৎ তূর্ণ’র দৃষ্টি আবদ্ধ হলো দুয়া’তে। মেয়েটা কেমন উশখুশ করছে। আশপাশে তাকাচ্ছে। মুখখানি মলিন দেখাচ্ছে কেন? কিছু হয়েছে কি? তূর্ণ একবার এগোতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে থেমে গেল। নজর বুলাতে লাগলো আশপাশে। খুঁজে পেল কাঙ্ক্ষিত মানবীকে। অগ্রসর হলো সেদিকে।
” তৃষা! ”
তৃষা রঙঢঙ করে সেলফি তুলছিল একাকী। ভাইয়ের ডাকে পিছু ঘুরে তাকালো।
” ভাইয়া! কিছু বলবে? ”
আশপাশে নজর বুলিয়ে তূর্ণ মৃদু স্বরে বললো,
” হুঁ। দুয়া’র কাছে যা। ওর বোধহয় হেল্প দরকার। ”
” হেল্প! ওর আবার কি হলো? আচ্ছা আমি দেখছি। ”
মোবাইল হাতে নিয়ে দুয়া’র পানে অগ্রসর হতে লাগলো তৃষা। সেদিকে তাকিয়ে বড় করে শ্বাস ফেললো তূর্ণ। সরে গেল সেথা হতে।
দুয়া বড় বোনকে দেখে সেদিকে অগ্রসর হতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ওর বাম পাশে এসে দাঁড়ালো তৃষা।
” দুয়া! ”
ডাক শুনে ওর দিকে তাকালো দুয়া। ঝলমল করে উঠলো মুখশ্রী।
” কি রে কি হয়েছে? এভাবে মুখ লটকে আছিস কেন? এনি প্রবলেম? ”
” হুঁ। ”
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। তৃষা শুধালো,
” কি হয়েছে? বল। ”
দুয়া ওর কাছে এগিয়ে গেল। ক্ষীণ স্বরে বললো,
” দোস্ত লেহেঙ্গার চেইন! ”
মেয়েটার বাম হাত হিজাবের অন্তরালে পৃষ্ঠদেশে ঠেকে। সমস্যা বুঝতে সক্ষম হলো তৃষা। আশ্বস্ত করে বললো,
” নো টেনশন বেবি। ম্যায় হু না। আমার সাথে চল। ”
ওকে নিয়ে নিরালায় অগ্রসর হলো তৃষা।
___
ভোজন পর্ব শুরু হয়েছে। বড়সড় একটি টেবিল দখল করেছে তরুণ-তরুণীদের দল। পাশাপাশি বসে তূর্ণ ও দুয়া। পোলাও, রোস্ট খাচ্ছে তূর্ণ। পাশে বসে থাকা মেয়েটি পোলাওয়ের সঙ্গে ডিম কোর্মা খাচ্ছে। ওয়েটার টেবিলে থাকা সকলকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছিল। তূর্ণ এর প্লেটে গরুর মাংস সার্ভ করে দুয়া’র পাশে এসে দাঁড়ালো।
” ম্যাম আপনাকে রোস্ট দেই? ”
দুয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। ওয়েটার রোস্ট এর ট্রেতে হাত রাখতেই তূর্ণ আপত্তি জানালো।
” উঁহু। ওকে রোস্ট দিয়েন না। গরুর মাংস দিন। ”
হতবাক হলো দুয়া। তূর্ণ’র পানে মৃদু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললো,
” তুমি খাচ্ছো খাও না। আমি সময় হলে নিয়ে নেবো। এখন আমাকে রোস্ট খেতে দাও। ”
” বললাম তো না। ”
” তোমার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই তূর্ণ ভা ই য়া। ”
তূর্ণ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
” রোস্টে বাদাম মিক্স করা। তোর তো আবার অ্যালার্জি। বাদাম মুখে পড়লেই ছোলা মুরগির মতো দাপাদাপি করিস। এখন ভরা আসরে যদি দাপাদাপি করে সবাইকে এন্টারটেইন করতে চাস দেন গো অ্যাহেড। ”
মুখখানি চুপসে এতটুকু হয়ে গেল। দমে গেল মেয়েটা। আস্তে করে ওয়েটারকে বললো,
” রোস্ট লাগবে না। গরুর মাংস দিন। ”
ওয়েটার তাই করলো। এটা লক্ষ্য করে ওদের এক দূর সম্পর্কের ছেলে কাজিন শুধালো,
” এটা কি হলো? তূর্ণ ভাইয়া বলতেই দুয়া রোস্ট মানা করে দিলো! রোস্টটা কিন্তু খুব টেস্টি হয়েছে। ”
দুয়া মিনমিন করে বললো,
” রোস্টে বাদাম আছে। বাদামে আমার অ্যালার্জি। তাই ভাইয়া মানা করেছে। ”
কাজিনটা গদগদ হয়ে বললো,
” আরে বাহ্! ভাই হয়ে বোনের কি দারুণ কেয়ার! চমৎকার! ”
সকলের অলক্ষ্যে দুয়া’র মুখশ্রী উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আসলেই এই মানুষটি ওর সাথে যেমন আচরণ ই করে থাকুক না কেন বেলাশেষে এটাই চরম সত্য! মানুষটি ওর বড্ড কেয়ার করে। আগলে রাখে সর্বক্ষণ!
•
তমসায় আবৃত ধরিত্রী। মিহি হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে কায়া। বেলকনিতে বেতের তৈরি সোফায় বসে কবির। তখন নিঃশব্দে ডান পাশে এসে দাঁড়ালো সহধর্মিণী সিনথিয়া। ওর উপস্থিতিতে মুচকি হাসলো কবির। ডান হাতটি বাড়িয়ে দিলো কিন্তু দৃষ্টি নিবদ্ধ সম্মুখে। স্বামীর বাড়িয়ে দেয়া হাতটি দেখে লাজে রাঙা হলো সিনথিয়া। কম্পিত হাতটি তুলে দিলো স্বামীর হাতে। কোমল হাতটি আঁকড়ে ধরে ওকে ডান পাশে বসালো সিনথিয়া। পাশাপাশি বসে নবদম্পতি। নীরবে অতিবাহিত হলো কয়েক পল। নীরবতা ছেদ করে কবির শুধালো,
” কখনো কাউকে ভালোবেসেছো সিনু? ”
চমকালো মেয়েটি! এমন সুন্দর-মিষ্টি মুহুর্তে এমন প্রশ্ন সে মোটেও আশা করেনি। বুঝতে পারছে না ঠিক কেমন জবাব দেয়া উচিত। জবাব না পেয়ে কবির পুনরায় প্রশ্ন করলো,
” বললে না তো। কাউকে ভালোবেসেছো কখনো? ”
” না। ”
এক শব্দে জবাব। মৃদু হাসলো কবির।
” আমি কিন্তু ভালোবেসেছি। খুব করে ভালোবেসেছি। তার বিরহে কাতর হয়ে কাটিয়েছি অসংখ্য দিবা রাত্রি।”
হতবিহ্বল হলো সিনথিয়া! এসব কি শুনছে সে! তার স্বামী কাউকে ভালোবাসতো! কিংবা এখনো বাসে! তবে তাকে বিয়ে করলো কেন? হৃদয়ের অন্তঃস্থলে একজনকে রেখে অন্যজনকে জীবনে জড়ানো কি সমীচিন? ভাবনায় ছেদ পড়লো। কবির বাহিরে তাকিয়ে বলে গেল আপনমনে,
” তাকে প্রথমবার দেখেছি দুই মাস পূর্বে। তার পড়নে ছিল নীলাভ একটি শাড়ি। আমার সম্মুখে মাত্র কয়েক হাত দূরত্বে বসে ছিল মেয়েটি। মাথায় বড় করে ঘোমটা টেনে রাখা। অবনত লাজুক মুখশ্রী। তার লাজে রাঙা মুখখানি, অধর কোলে চিকন হাসির রেখা, গাল ছুঁয়ে থাকা ছোট ছোট চুল। সবটাই আমায় বিমোহিত করলো! নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে রইলাম অপলক দৃষ্টিতে। ধুকপুক ধুকপুক করছিল আমার হৃদয়ে। ভয় হচ্ছিল এই ধুকপুকানি অন্য কারোর কানে না পৌঁছে যায়। যেখানে আমি অপলক চাহনিতে তাকিয়ে ছিলাম সেখানে সম্মুখে বসে থাকা রমণী ছিল নি”ষ্ঠুর। তার মায়াবী আঁখি জোড়া একটিবারের জন্যও আমায় দেখলো না। ধন্য করলো না আমায়। এই প্রথমবারের মতন আমার আফসোস হলো। তবে কি আমি যথেষ্ট সুদর্শন নই? ”
মুচকি হেসে পুনরায় বলতে লাগলো,
” সেদিন মাত্র ক্ষণিকের সাক্ষাত। এরপর দ্বিতীয় সাক্ষাৎ এনগেজমেন্টের দিন। তিন সপ্তাহ বাদে। এই তিনটি সপ্তাহ আমার জন্য কতটা কষ্টকর, যন্ত্রণাদায়ক ছিল বলে বোঝানো সম্ভব নয়। প্রায় অধিকাংশ রাত্রি আমার নির্ঘুম কেটেছে। ঘুম আসবে কি করে? চক্ষুপাতায় যে এক মায়াপরী এসে এসে দেখা দিতো। আমার মনপ্রাণ ছুঁয়ে চলে যেতো নির্দয়তার সহিত। আমি টেরও পেলাম না কখন এক অনন্যা মায়াপরী আমায় ভালোবাসা নামক মায়াজালে জড়িয়ে নিলো। বানিয়ে দিলো প্রেমিক পুরুষ। শুরু হলো আমার এক নতুন সূচনা। অপ্রেমিক থেকে প্রেমিক হওয়ার যাত্রা। এরপরের সময়গুলো বোধহয় একটু দ্রুত গেল। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। হালাল রূপে আমার মন গহীনে লুকায়িত প্রেমিকা হলো চির সঙ্গিনী। ”
হতবিহ্বল মেয়েটি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে ভুলে গেল। ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো স্বামীর পানে। মুচকি হেসে কবির উঠে দাঁড়ালো। হাঁটু গেড়ে বসলো তার মায়াপরীর সম্মুখে। পুরুষালি দু হাতের আঁজলায় ভরে নিলো কোমল হাত দু’টো। সিক্ত নয়নে নয়ন মিলিয়ে বললো,
” তুমি ছিলে আমার মন গহীনে লুকায়িত প্রেমিকা। এখন হাতে হাত রেখে চলবে কি বাকিটা জীবন? হবে কি আমার চিরসঙ্গিনী? ”
ঘোরে আচ্ছন্ন মেয়েটি হাঁ সূচক মাথা নাড়লো। পুলকিত হলো প্রেমিক পুরুষটির হৃদয়! মেয়েটির বাম কপোলে আলতো করে রাখলো ডান হাতটি। অধর স্পর্শ করলো ললাটের মধ্যিখানে। অবশেষে তার হৃদয়ে লুকানো প্রেম পরিণতি পেল!
•
স্নিগ্ধ এক সকাল! বিছানায় ঠিক মধ্যিখানে শুয়ে এক ললনা। পাতলা কাঁথা জড়ানো দেহে। দীঘল কালো কেশ এলোমেলো রূপে বালিশের বুকে ছড়িয়ে। মেয়েকে ডাকতে ডাকতে কক্ষে প্রবেশ করলেন তাহমিদা।
” দুয়া! অ্যাই দুয়া! ওঠো। ”
মেয়ের কি কোনো খেয়াল আছে? সে তো গভীর ঘুমে মগ্ন। তাহমিদা গিয়ে বসলেন মেয়ের শিয়রে। কেশে হাত বুলাতে বুলাতে ডাকতে লাগলেন,
” দুয়া ও দুয়া! ওঠো মা। সাড়ে আটটা বাজে। দশটায় না ক্লাস আছে? দুয়া? ”
” উম্! ”
মায়ের স্নেহের পরশ পেয়ে দুয়া মায়ের কোলে মাথা এলিয়ে দিলো। তাহমিদা মুচকি হেসে ডাকতে লাগলেন। হাত বুলিয়ে চলেছেন কেশে। খানিক বাদে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো দুয়া। আদুরে কণ্ঠে ডাকলো,
” মা! ”
মেয়ের আদুরে কণ্ঠে পরাণ জুড়ালো ওনার।
” হাঁ মা! এবার উঠে পড়ো তো। দ্যাখো কয়টা বাজে। ভার্সিটি যেতে হবে না? ”
” হুঁ। উঠছি। তুমি একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও। ভালো লাগছে। ”
বিনা বাক্যে তাহমিদা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। মিনিট পাঁচেক বাদে ঘুম কেটে গেল। মাতৃ পরশ ছেড়ে উঠে বসলো মেয়েটি। তাহমিদা মেয়ের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিলেন। বললেন,
” ফ্রেশ হয়ে নাও। ”
” হুম। ”
হাই তুলে বিছানা ত্যাগ করলো দুয়া। পোশাকআশাক ও তোয়ালে নিয়ে পা বাড়ালো ওয়াশরুমের দিকে। তাহমিদা মেয়ের অগোছালো বিছানা গুছাতে লাগলেন।
•
” আম্মু! ও আম্মু! ”
ডাইনিং টেবিলে খাবার গুছিয়ে রাখছিলেন তাসলিমা। তখনই কর্ণ কুহরে পৌঁছালো ছেলের কণ্ঠ। মা মা করে গরুর মতো চেঁচামেচি করছে কেন? বিরক্ত হয়ে ছেলের রুমের দিকে পা বাড়ালেন উনি।
রুমের এলোমেলো দশা। খাটের ওপর পড়ে রয়েছে ভেজা তোয়ালে। কয়েকটা শার্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিছানায়। উদোম দেহে শুধুমাত্র প্যান্ট পড়ে কাবার্ড তছনছ করে চলেছে তূর্ণ। গলায় ঝুলিয়ে রাখা শুকনো একটি তোয়ালে। এমন হযবরল অবস্থা দেখে চোখমুখ কুঁচকে ফেললেন তাসলিমা। বাজখাঁই কণ্ঠে বলে উঠলেন,
” কি হয়েছে এমন ম্যাঁ ম্যাঁ করছিস কেন? ”
মায়ের কণ্ঠ শুনে তূর্ণ পিছু ঘুরে তাকালো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
” আমার নেভি ব্লু শার্টটা কোথায়? খুঁজে পাচ্ছি না। তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করে দাও। লেট হয়ে যাচ্ছে। ”
” মা’কে তুমি শাবানা পেয়েছো? যে যেমন খুশি তেমন বানিয়ে খাবে? মোটেও নয়। মায়ের এখন বয়স হয়েছে। সে আর ফ্রিতে কামলা খেটে ম”রবে না। ”
হকচকিয়ে গেল তূর্ণ! কিসের মধ্যে কি?
” তুমি এসব কি বলছো আম্মু? এখানে শাবানা আলমগীর কোথা থেকে এলো? আর কিসের কামলা খাটা? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। ”
ভেজা তোয়ালে যথাস্থানে রাখতে রাখতে তাসলিমা বললেন,
” হাঁ। তুমি তো কচি খোকা। কিছুই বোঝো না। সেখানে তোমার বয়সী বুঝদার ছেলেরা বিয়েশাদী করে এক বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে। ”
” হোয়াট? ”
” ইংরেজি ঝাড়বে না। আটাশ বছরের দা”মড়া ছেলে এখনো কোনো দরকার পড়লেই ম্যাঁ ম্যাঁ করে বেড়াও। বউ বউ করবে কখন? আটচল্লিশে গিয়ে? ”
তূর্ণ বড় করে শ্বাস ফেলে গলা থেকে তোয়ালে খুলে ফেললো। ভেজা চুলে তোয়ালে চালাতে চালাতে বললো,
” আম্মু প্লিজ সকাল সকাল শুরু করো না। ”
অগোছালো বিছানা গোছানোর ফাঁকে ছেলের দিকে তাকালেন তাসলিমা। জিজ্ঞেস করলেন,
” তাহলে কখন করবো? মাঝরাতে? নাকি গোধূলি লগ্নে? ”
” আম্মু! ”
” মু মু করবে না। বয়স হয়েছে। এখন আর ফ্রিতে কামলা খাটতে পারবো না। একটা লাল টুকটুকে বউ নিয়ে এসো। তখন শাশুড়ি বৌমা মিলে জমিয়ে সংসার করবো। ”
তূর্ণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাবার্ড থেকে কালো রঙের শার্ট বের নিলো। তা গায়ে জড়াতে জড়াতে বললো,
” সময় হলে আমি নিজেই বিয়ের কথা বলবো আম্মু। তুমি শুধু শুধু চাপ নিয়ো না। বরং ধীরে সুস্থে বৌমাকে বরণ করার আয়োজন করো। ”
ভেংচি কাটলেন তাসলিমা।
” ইহ্! বউয়ের কোনো হদিশ নেই। এখন থেকেই নাকি আয়োজন শুরু করবো। শোনো তূর্ণ! তুমি শুধু আমার জন্য লাল টুকটুকে বৌমা নিয়ে এসো। আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বরণ করে নেবো। ”
মুচকি হেসে তূর্ণ বললো,
” আচ্ছা। আজকেই বাজার থেকে তোমার জন্য লাল টুকটুকে পুতুল বৌমা নিয়ে আসবো। তুমি যত্ন সহকারে বরণ করো। ”
এবার মেজাজ খারাপ হলো তাসলিমার।
” হাঁ হাঁ তাই তো করবে। বাপের মতো বুড়ো বয়সে বিয়ে করে কোনো কচি মেয়ের জীবনটা ত্যানাত্যানা করবে। ”
তূর্ণ ভ্রু কুঁচকে শুধালো,
” কচি মেয়ে! লাইক ইউ! ”
” তা নয়তো কি? তেত্রিশ বছরে বিয়ে করতে গেছিল আপনার বাপজান। আমার মতো বিশ বছরের পুঁচকে মেয়েকে ধরে বেঁধে বিয়ে দিলো। আর কপালটা পুড়লো।”
” সত্যিই কপাল পুড়েছে? তাহলে কি ডিভোর্সের জন্য ফাইল করবো? ”
তেঁতে উঠলেন তাসলিমা। ছেলের বাহুতে আলতো চ ড় মে*রে বললেন,
” ফাজিল ছেলে! মা-বাবার সংসারে আগুন লাগানো হচ্ছে? ”
দাঁত কেলিয়ে হাসলো তূর্ণ। মা’কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পরিপাটি হতে হতে বললো,
” মা খাবার রেডি করো। আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। ভার্সিটি যেতে হবে। ”
ছেলের অগোছালো কামরা ফিটফাট করে সেথা হতে প্রস্থান করলেন তাসলিমা। মৃদু হেসে উঠলো তূর্ণ।
চলবে.