তৃ-তনয়া পর্ব-২৭+২৮+২৯

0
880

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ২৭
(নূর নাফিসা)
.
.
নাহিদা আর শান্তির ঘুমটা নষ্ট করে তাকে ঠেলে উঠলো না। এতোটা সময় সে মেহেদীর ঘুমন্ত মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। মেহেদী আজ গড়াগড়ি দিয়ে চোখ খুলেনি। হয়তো নড়াচড়ায় বাধা পেয়েছে তাই খুব শান্তভাবে চোখের পাতা খুলে তাকিয়েছে। ব্রু কুচকে গেছে, কপালে সূক্ষ্ম ভাজ পড়েছে। ঘুমঘুম চোখে মেহেদীকে তাকাতে দেখে নাহিদা লজ্জা পেলো। তাই দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো এবং মেহেদীর গলা থেকে আস্তে আস্তে হাত সরিয়ে নিলো। মেহেদী এতোক্ষণে খেয়াল করলো সে নাহিদাকে এভাবে জড়িয়ে রেখেছে! সেও হাত পা সরিয়ে নিলো। নাহিদা ছাড়া পেয়ে শাড়ি ঠিক করে সাথে সাথেই উঠে বসলো। আর মেহেদী অন্যদিকে ঘুরে বুকে ভর দিয়ে শুয়ে রইলো। নাহিদা ফ্রেশ হয়ে আসতেই মেহেদী বাথরুমে গেলো। বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই নাহিদা বারান্দা থেকে রুমে এসে তার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো,
– বাবা কথা বলবে।
– আব্বু?
নাহিদা দু’দিকে মাথা নাড়াতেই মেহেদী বুঝে গেলো নাহিদার বাবা। সে পানি পান করে গলা পরিষ্কার করে ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। সালাম দিয়ে কথা বলতে লাগলো। নাহিদা এতোক্ষণে বিছানা গুছিয়ে নিলো। মেহেদী কথা শেষ করে কল কেটে ফোন বিছানায় রেখে দিতেই নাহিদা বললো,
– কাপড়চোপড় কার জন্য রেখে দিয়েছেন! আমার এতো ঠেকা পড়েনি আপনার কাপড়চোপড় ধুয়ে দেওয়ার। মর্যাদা দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি সেই মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য নন!
– হাসের মতো প্যাকপ্যাক কম করো! পড়ে থাকুক, তাতে তোমার কি! পারলে ধুয়ে দাও না হলে থাকুক পড়ে।
– পারবোনা সেটা তো আগেই বললাম।
– না পারলে নেই!
– পচে যাবে আপনার পোশাক।
– পচুক! আরও আছে।
– এমনিতেই দুটো জমা। একটু পর আবার গোসল করলে তো আবারও একটা শেষ! এমন করে কয়টা শেষ করবেন?
– হতে থাকুক যত গুলো শেষ হওয়ার। তাতে তোমার কি! আমার গুলো পচা ধরলে তোমার গুলো উধাও হয়ে যাবে।
– কিহ!
– জ্বি!
মেহেদী ফোন ওয়ালেট নিয়ে বেরিয়ে যেতে গেলে মনে হলো চাবি নাহিদা খাটের নিচে ফেলে দিয়েছে! সে ফোনের লাইট জ্বালিয়ে খাটের নিচ থেকে চাবি বের করে নিলো। অত:পর দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। নাহিদা বিড়বিড় করতে করতে বাথরুমে যেতে লাগলো,
– বিয়ে করেছে, বউ মানে না! আবার উনার কাজ ঠিকই করায়! যেন বউ না, উনার পার্সোনাল মেড আমি! রাবিশ একটা!
নাহিদা তার জামাকাপড় ধুয়ে বারান্দায় শুকাতে দিলো। পেটে ক্ষুধা হাক দিচ্ছে! তাই সে আর সময় নষ্ট না করে নিজের পার্স থেকে এক্সট্রা চাবি বের করে রুম লক করে নিচে নেমে এলো। রিসিপশনের এসে চাবি দিয়ে সে রেস্টুরেন্টে চলে গেলো। মেহেদীদের এতোক্ষণে অর্ধেক খাওয়া শেষ। নাহিদাকে দেখে রায়ান বললো,
– ভাবি, আপনার খাবার প্যাকেট করা হয়েছে রুমে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। আপনি তো এখানেই চলে এলেন। একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ুন।
– সরি এন্ড থ্যাংকস টু।
নাহিদা অন্য টেবিলে এসে বসে পড়লো এবং ওয়েটারকে ডাকলো। মেহেদী প্যাকেট করা খাবার নিয়ে উঠে এসে তার সামনে রেখে বললো,
– কি বললো তোমার কানে যায়নি! এগুলো খাবে কে?
– আমি কি জানি! আপনি কিনেছেন কেন! এবার আপনি খান বেশি করে। কারো খোটা শুনার জন্য আমি বসে নেই।
– সিনক্রিয়েট করছো এখানে! চুপচাপ এগুলো খাও! না হলে তোমার খবর আছে!
মেহেদী জেদ নিয়ে কথা বলে চলে গেলো তার সিটে। নাহিদা তার দিকে তাকিয়ে রইলো! তারও খুব রাগ হচ্ছে! নিজে একা একা এসে খেয়ে নিয়েছে, সেখানে কে বলেছে খাবার কিনে তার প্রতি এমন দরদ দেখাতে! ওয়েটার নাহিদাকে কি অর্ডার করবে জিজ্ঞেস করলে নাহিদা ওয়েটারকে বলে দিলো অর্ডার করবে না। খাবার নিয়ে সে চেয়ার ছেড়ে উঠে মেহেদীর কাছে এসে তার সামনে টেবিলে রেখে দিলো প্যাকেটটা এবং হনহন করে বেরিয়ে গেলো রেস্টুরেন্ট থেকে! বারবার এমন ইগনোর করায় মেহেদীর প্রচুর রাগ হলো! নিজেকে কন্ট্রোল করে সে খাবার শেষ করে রায়ানের হাতে বিল ধরিয়ে দিয়ে খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে বেরিয়ে এলো। সে এক দৌড়ে সিড়ি বেয়ে প্রথমে রুমের সামনে এলো। এখানে দেখলো তালা দেওয়া, তাই সে ভেবে নিলো সমুদ্রের তীরে গেছে। সে সেখানেই গেলো। যা ভেবেছে তা-ই! নাহিদা সমুদ্রের তীর ঘেঁষে হাটছে। সে ঘন কদম ফেলে এখানে এসে তার বাহু চেপে ধরে বললো,
– এগুলো রেখে এলে কেন?
– আহ! হাত ছাড়ুন!
– আমি কি জিজ্ঞেস করেছি, সেটার উত্তর দাও।
– খাবো না তাই রেখে এসেছি।
ঢেউ নিকটে আসতেই মেহেদী ঢিল মেরে প্যাকেটটা ঢেউয়ের মধ্যে ফেলে দিয়ে বললো,
– এতো পাওয়ার কোথা থেকে পাও! খুব টাকা ওয়ালা হয়ে গেছো? দেখি কত টাকা আছে!
মেহেদী নাহিদার হাত থেকে পার্স নিয়ে নিলো। নাহিদা বললো,
– কি আশ্চর্য! আপনি এমন করছেন কেন!
– কেন করছি জানো না তুমি! আমার টাকা গুলো নষ্ট করালে কেন!
– আমি আপনার টাকা নষ্ট করিনি। আপনি স্বেচ্ছায় কিনেছেন। আমার পার্স দিন।
– পার্স আর পাবে না। স্বেচ্ছায় আর যেভাবেই হোক, কিনেছিলাম তো! তুমি খাওনি তাই নষ্ট হয়েছে। সুতরাং তুমিই টাকা নষ্ট করেছো। এবার দেখি খাবার কোথায় পাও। আমার টাকা ও পাবে না, তোমার টাকাও পাবে না। না খেয়ে মরো!
মেহেদী খুব রাগ নিয়ে কথাগুলো বলে পার্স নিয়ে চলে গেলো! নাহিদারও খুব রাগ হচ্ছে তার উপর কিন্তু কিছুই করতে পারলো না! কি করবে! এখানে পার্স নিয়ে টানাটানি করবে! সমুদ্র তীরে এটা কেমন দেখায়! আর টানাটানি করলেই কি! তার জোরের সাথে কি পারতো সে! নিয়ে যাক পার্স! কিছু বলবে না। খাবেও না!
নাহিদা ঢেউয়ের নাগালেই হাটতে লাগলো। কিছুটা পথ এগিয়ে আসতেই দেখতে পেল পরি আর পারভেজকে! দুই ভাইবোন ঢেউয়ের অপেক্ষা করছে। যখন দেখছে ঢেউ আসছে তখন লাফানো শুরু করেছে। আর ঢেউ চলে গেলে তারা দ্রুত চুনা শামুক ও ঝিনুক কুড়িয়ে আবার ঢেউয়ের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে। নাহিদা মুচকি হেসে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।
– পরি, কি করছো তোমরা?
– শামুক, ঝিনুক নেই। আপনে আবার কিনবেন?
– এখন তো আমার কাছে টাকা নেই!
– ওহ্, আচ্ছা।
– তোমরা খেয়েছো কিছু?
– হু।
– এগুলো এভাবে না বিক্রি করে, মালা গেথে কিংবা ব্রেসলেট বানিয়েও তো বিক্রি করতে পারো। একটু কষ্ট করলে এতে আরও বেশি টাকা পাবে।
– পারি না তো!
– সুচ আর সুতা দিয়েই করা যায়।
– দেখায় দিবেন? দাদিও কইছিলো মালা বানাইতে। উনি তো চোখে কম দেখে হের লাই শিখাইতে পারে না।
– আমি এখন কিভাবে দেখাবো! সুচ সুতা তো নেই আমার কাছে! তোমার কাছে আছে?
– না। বাড়িতে আছে, খোজলে পাওয়া যাইবো।
– আচ্ছা, তাহলে নিয়ে এসো। আমি দেখিয়ে দিবো।
– আপনারে পামু কই!
– ওই রেস্টুরেন্টটা দেখেছিলে না আমি সেখানেই রুম ভাড়া নিয়েছি। কাল চলে যাবো। ইচ্ছে থাকলে আজকের মধ্যেই নিয়ে এসো। কেমন?
– আচ্ছা।
আবার ঢেউ আসতেই ভাইবোন লাফাতে শুরু করলো। ঢেউ তাদের কোমড় পর্যন্ত ভিজিয়ে দিয়ে গেলো। নাহিদা পিছিয়ে এসেছিলো বিধায় তার পায়ের গোড়ালির উপর পর্যন্ত ভিজেছে। ঢেউ চলে যাওয়ার সাথে সাথে সে শামুক, ঝিনুক কুড়িয়ে পরি ও পারভেজের কাছে দিলো। তাদের সাথে যুক্ত হয়ে ঢেউয়ের সাথে লুকোচুরি খেলা ও শামুক ও ঝিনুক কুড়াতে কুড়াতে নাহিদার মন ভালো হয়ে গেছে। সে ভুলেই গেছে মেহেদীর কথা! বেশ কিছুক্ষণ এখানে কাটানোর পর পরীরা চলে যাবে তাই নাহিদাও রিসোর্টে ফিরে এলো। কেননা সে কিছুটা ভিজে গেছে। সে চাবি নিয়ে রুমে এসে গোসল সেড়ে নিলো। কিছুক্ষণ, অযথা রুমে বসে রইলো। কিন্তু ভালো লাগছে না এখানে থাকতে। ফোনটাও নেই সাথে, যে সময় কাটাবে। পরক্ষণে মনে হলো মেহেদীর আরেকটা ফোন ব্যাগে রাখা আছে। গেমস খেলে সময় কাটানো যাবে। পরে আবার ভাবলো, না! তার ফোন সে ধরবে না। এমনিতেই কথায় কথায় যেই খোটা দেয়! তার খোটা শুনার জন্য সে বসে নেই। রুমের বারান্দায় কিছু সময় কাটিয়ে আবার রুম লক করে চাবি দিয়ে বেরিয়ে এলো রিসোর্ট থেকে। থ্রিপিচ পড়ায় এবার ওড়নাটা মাথায় হিজাব ন্যায় পেচিয়ে নিয়েছে। সে বালিতে হাটতে লাগলে সামনে পড়লো মেহেদীসহ তার বন্ধুরা। কোথাও যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে মনে হচ্ছে নাকি খেলতে নামবে এই রোদের মাঝে! প্যান্ট ফোল্ড করে কোয়ার্টার বানিয়ে নিয়েছে সবাই। মেহেদী যেন তাকে পার্সটা দেখিয়ে দেখিয়ে যাচ্ছে। যাক না! সে চাইবে না তার কাছে! জিহাদ বললো,
– ভাবি, যাবেন নাকি? আমরা হাতিয়া ও মনপুরা দ্বিপে যাচ্ছি।
– নাহ। আপনারাই যান।
– স্পিডবোটে উঠতে ভয় পান?
– উঠিনি কখনো।
– তাহলে চলুন। মেহেদী, ভাবিকে নিয়ে নে সাথে।
– না ভাইয়া। আমি যাবো না।
নাহিদা উত্তর দিতে দিতে সেদিকে মেহেদীও বললো,
– না, যার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে ঘুরে বেড়াক! আমি কারো ভার বহন করবো না।
জিহাদ তার কাধ চাপড়ে বললো,
– ধ্যাৎ, ব্যাটা! তুই মানুষই না!
– সরতো!
মেহেদী আগে পা চালালো আর জিহাদ বলে গেলো নাহিদাকে সাবধানে থাকতে। তারা দুতিন ঘন্টার মধ্যেই ফিরে আসবে। তারা চলে গেলে নাহিদা আবার হাটতে লাগলো। বালির উষ্ণতা অনুভব করতে সে জুতা খুলে হাতে নিয়ে খালি পায়ে হাটতে লাগলো। হঠাৎ দেখলো পিচ্চি দুইটা অন্যান্য পিচ্ছির সাথে দৌড়ে যাচ্ছে ভেজা কাপড়েই! হাত আছে শামুকের ব্যাগ আর ডাব! নাহিদা তাদের উদ্দেশ্যে বললো,
– এখনো বাসায় যাওনি! অসুস্থ হয়ে পড়বে তো, ভেজা কাপড়ে!
– ডাব পাইরা আনছি! এহন যামু। যাইবেন আমাগো বাড়িতে?
– না যাও।
– চলেন গেলে। দূরে না। কাছেই আমাগো বাড়ি। কাল তো ফিরাই যাইবেন। আরেকটু জায়গা ঘুইরা যান।
– আচ্ছা! তা কোথায় ঘুরাবে আমাকে?
– আমাগো বাড়ির পথঘাট।
ঠিকই তো! সে একা একা তো সারাক্ষণ এই বালির মাঠ আর সমুদ্রের তীরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর বাইরে কিছু দেখলে মন্দ কি! সাহেবও তো বউ রেখে একা একাই সব ঘুরাঘুরি করছে! তাহলে সে কেন বসে থাকবে! এই ভেবে নাহিদা পরীকে বললো,
– কতোক্ষন লাগে তোমাদের বাড়ি যেতে?
– আপনে যেইহানে থাকেন এর চেয়ে কতখানি পিছনেই। বেশি সময় লাগে না। যাইবেন?
– আচ্ছা, চলো। পথ কিন্তু আমার চেনা নয়। তুমি আবার দিয়ে যাবে আমাকে এখানে।
পরী খুশি হয়ে বললো,
– আচ্ছা।
নাহিদা তার সাথে চলতে লাগলো। মধ্যাহ্নের নিরিবিলি পথ, সারি সারি নারিকেল গাছে ভরে আছে রাস্তার দু ধার। অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে নাহিদার মনে। রিসোর্ট থেকে দশ-বারো মিনিটের পথ অতিক্রম করে এসেছে পরীদের বাড়িতে। ছোট ঘরখানায় অনাথ ভাই বোনের বসবাস। অন্যরকম একটা মায়া কাজ করে বাচ্চা দুটোর উপর। একদিনের পরিচয়েই মনে হচ্ছে যেন তারা বহু দিনের পূর্ব পরিচিত! নাহিদার অনেক ইচ্ছে করছে বাচ্চাদেরকে একটু সাহায্য করার কিন্তু কি দিবে! দেওয়ার মতো তো তার হাতে এখন কিছু নেই! শুধু গলায় একটা চেইন, আর হাতে এনগেজমেন্ট এর রিংটা আছে। গহনা তো শখ করে তাকে উপহার দিয়েছে তার শ্বাশুড়ি। সেটা কিভাবে দিবে! টাকা থাকলে না হয় দেওয়া যেতো। নিরুপায় হয়ে আপাতত শুধু একটু দোয়া করলো মনে মনে। পাশের ঘরের বুড়িটাকে তারা দাদি বলে ডাকে। নাহিদা বুড়ির সাথেও পরিচিত হলো। অত:পর সুচ সুতা দিয়ে দেখিয়ে দিলো কিভাবে মালা গাথতে হয়। শুধু মালা ই না, তার জানা ঝাড়, ফুলদানি সহ আরও জিনিসপত্র বানানোর প্রক্রিয়া দেখিয়ে দিলো তাদের। এসব দেখাতে দেখাতে তার প্রায় অনেকটা সময় কেটে গেলো এখানে।

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ২৮
(নূর নাফিসা)
.
.
এদিকে আসরের সময়ে মেহেদীরা দ্বিপ থেকে ফিরে এসেছে। রিসোর্টে এসে নাহিদাকে পেল না। ভাবলো সমুদ্র তীরেই ঘুরাঘুরি করছে হয়তো! দুপুরে কি খেয়েছে কিছু! মেহেদী ফাস্টফুডের প্যাকেটটা ধরে দেখলো বিস্কুট, কেক যা অবশিষ্ট ছিলো সবই আছে। আর চিপস তো রাতেই খেতে দেখেছিলো। তার কাছে তো টাকাও ছিলো না। নিশ্চয়ই সেই ব্যাগ থেকে নেওয়ার সাহস দেখাবে না। তার মানে খায়নি কিছুই। মেহেদী নিজে গোসল সেড়ে ফ্রেশ হয়ে বাকিদের সাথে নিচে নেমে এলো। রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করতে যাবে তখন ভাবলো, শাস্তি অনেক দেওয়া হয়েছে। সকালে কিছু খায়নি, দুপুরেও কিছু খায়নি এবার পার্স ফিরিয়ে দেওয়া যায়। মেহেদী তাদের বসিয়ে রেখে সমুদ্র তীরে এলো, আশেপাশে তাকে খুজলো কিন্তু দৃষ্টিতে পড়ছে না! বাকিরা রেস্টুরেন্টে এসে বসে আছে। নাহিদার খাবার অর্ডার করবে কি করবে না এই ভেবে তারা অর্ডার করেনি। মেহেদী এলেই অর্ডার করবে। মেহেদী এদিক সেদিক খুজে নাহিদাকে না পেয়ে ভাবলো সে হয়তো রিসোর্টে ফিরে এসেছে। সে আবার রুমের কাছে গেলো। কিন্তু রুম লক করা! তারপর রিসিপশনের কাছে এসে রুম নম্বর বলে তার খোজ করলে জানতে পারলো দুপুরের আগে চাবি দিয়ে গেছে আর দেখা হয়নি। কথাটা শুনার পরপরই মেহেদীর মনে ভয় ঢুকে গেছে! সে রেস্টুরেন্টে এসে বললো,
– নাহিদাকে খুজে পাচ্ছি না!
সবাই একসাথে বলে উঠলো, “হোয়াট!”
– হুম। রিসোর্টে দেখলাম, সমুদ্রের তীরেও দেখলাম। কিন্তু তাকে দেখছি না তো!
রায়ান বললো,
– কল দে।
– ওর নম্বর আমার কাছে নেই। তাছাড়া, ওর ফোন পার্স সবই আমার কাছে ছিলো। তার কাছে কিছুই ছিলো না। সবসময় একটা না একটা ভেজাল সৃষ্টি করেই রাখে মেয়েটা! আয়তো একটু আমার সাথে কেউ।
মেহেদী বলার পর তারা তিনজনই উঠে চলে এলো। চারজনই সমুদ্রের তীরে লোকজনের মাঝে খুজতে লাগলো। কিন্তু কারো চোখেই পড়ছে না নাহিদাকে! দুতিনবার করে তারা রিসোর্ট ঘুরে দেখছে, সমুদ্রের তীর দেখছে, আশেপাশের রেস্টুরেন্টগুলো দেখছে কিন্তু কোনো সন্ধ্যান নেই! এমনকি রিসোর্টের সিসি ক্যামেরা ফুটেজও চেক করেছে কিন্তু তেমন কোনো তথ্য পেলো না! কোথায় গেলো, কোথায় আছে কিছুই বুঝতে পারছে না! মেহেদীর মনে ভয় কাজ করছে! কেন জানি তার হাত পা কাপছে! পাশের জনেরাও বুঝতে পারছে তার অবস্থা! একেক জনের একেক ধারণা!
কোন অজানা পথে হারিয়ে যায়নি তো!
কিডন্যাপড হয়নি তো!
সমুদ্রে তলিয়ে যায়নি তো!
মেহেদী এখন কি করবে বুঝতে পারছে না! এই প্রথম তার হাতে কারো দায়িত্বের লঙ্ঘন হলো! এমনটা হবে জানলে কখনো সে একা রেখে যেতো না! ভেবেছে নাহিদা গতদিনের মতো এখানেই স্থির ও নিরাপদে থাকবে! একটু চোখের আড়াল হতেই যে এভাবে হারিয়ে ফেলবে সেটা ভাবতে পারেনি! এখন যদি তাকে খুজে না পাওয়া যায় তাহলে বাসায় কি জবাব দিবে! বাবাকে কি জানাবে ব্যাপারটা! বাবা জানতে পারলে তাকে খুন করে ফেলবে! তা নিয়েও তো আফসোস থাকবে না! কিন্তু নাহিদাকে কি খুজে পাওয়া যাবে! পুলিশকে কি জানাবে! পুলিশ জানালে তো মিডিয়া জেনে যাবে! আর বাড়িতেও জেনে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়বে!
বিকেল গড়িয়ে গেছে। পরী নাহিদাকে এগিয়ে দিয়ে গেলো। নাহিদা ভাবলো গতদিনের মতো আজও সূর্যাস্ত দেখে নেওয়া যাক! তাই সে রিসোর্টের দিকে না গিয়ে সমুদ্র তীরে এলো। একপাশে দাড়িয়ে সে সূর্যাস্ত দেখে তারপর রিসোর্টের দিকে এলো। প্রকৃতির আলো নিভে পশ্চিমাকাশ লালবর্ণ ধারণ করেছে। ভুবনে নেমে এসেছে আবছা অন্ধকার। নাহিদা রিসোর্টে এসে দেখলো ভবনের সামনে বেঞ্চিতে হিমেলের সাথে মেহেদী মাথা নিচু করে দু’হাতে মাথার চুল আকড়ে ধরে বসে আছে। বাকি দুজন দাড়িয়ে। জিহাদ তাকে ধমকে বলছে,
– বলেছিলাম নিয়ে নে সাথে! শুনেছিলি কিছু! তোর মতো মানুষ আমি জগতে দেখিনি! বিয়ের পর নাকি ছেলেরা বউ পাগলা হয় আর তুই বউ ঘৃণ্য পাত্র! পন্ডিতি করে আবার ফোন পার্স সব রেখে দিয়েছে! একা একটা মেয়েকে, অচেনা জায়গায় একা কিভাবে রেখে গেলি! এখন আবার অস্থিরতা দেখাচ্ছিস!
রায়ান বললো,
– মেহেদী এভাবে বসে থাকিস না। থানায় চল।
নাহিদা তাদের কথোপকথন কিছুই বুঝতে পারছে না। সে ভবনের দিকে না গিয়ে তাদের কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,
– কি হয়েছে?
মেহেদী সহ সবাই চমকে তাকালো! দুজন বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। রায়ান বললো,
– ভাবি, আপনি কোথায় ছিলেন! আমরা খুজে খুজে হয়রান!
– কেন, আমাকে খুজছেন কেন!
এমন কথায় বাকিরা বিস্মিত হলো এবং মেহেদী রেগে গিয়ে চেচিয়ে বললো,
– কেন তুমি জানো না! আমাদের টেনশনে ফেলে এখন পালটা প্রশ্ন করছো কোন সাহসে! পা লম্বা হয়ে গেছে খুব! কোথায় গেছো, কাকে বলে গেছো! বলো!
মেহেদী কথার সাথে সাথে হাতও তুলে ফেলেছিলো থাপ্পড় দেওয়ার জন্য কিন্তু নিজেই থামিয়ে নিয়েছে। রাগে তার শরীর কাপছে! তার এমন জিদ্দি চেচানো কণ্ঠ শুনে আশেপাশের লোকজন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে আর নাহিদা একটু ঘাবড়ে গেছে! নাহিদা তার জবাব না দিয়ে ডানেবামে তাকিয়ে মানুষজনকে দেখছে আর লজ্জা বোধ করছে। জিহাদ দাতে দাত চেপে মেহেদীকে বললো,
– মেহেদী, করছিস কি তুই! দোষ তোরই! তাছাড়া তুই ভালোমন্দ কিছু জিজ্ঞাসা করার বদলে এভাবে রেগে যাচ্ছিস কেন! মানুষ দেখছে!
মেহেদী তাদের উপেক্ষা করে নাহিদার হাতে ধরে টেনে রুমে চলে এলো। দরজা লক করে নাহিদাকে জিজ্ঞেস করলো,
– কোথায় ছিলে এতোক্ষণ? কি হলো, বলো! মুখে কথা ফুটে না কেন!
– পরীদের বাসায় গিয়েছিলাম।
– পরী! পরী কে?
– গতকাল রেস্টুরেন্টে ছোট বাচ্চা দেখেছিলেন না। সে।
– কি হয় তোমার?
– কিছু না। এমনি ঘুরতে ইচ্ছে হলো তাই গিয়েছি।
– এতো সাহস কোথায় পাও তুমি! চেনা নেই জানা নেই, চলে গেছো ডিরেক্টলি তাদের বাড়িতে! আমি এদিকে কতো টেনশনে ছিলাম জানো তুমি! কার কাছে বলে গেছো! বলে গেছো আমার কাছে!
– আস্তে কথা বলুন। আপনার কাছে কেন বলে যেতে হবে! আপনি সেই মর্যাদা রেখেছেন!আপনি নিজের ইচ্ছেমতো এদিকসেদিক ঘুরে বেড়ান, কই আমাকে বলে যান কখনো! যখন যা ইচ্ছে তা-ই করেন, আমি আপনার কাজে বাধা দিয়েছি কখনো! তাহলে আমার বেলায় কেন বলে যেতে হবে আপনাকে!
– কারণ তুমি আমার দায়িত্বে এখানে এসেছো। তাই কখন কি করবে, না করবে সব বলতে হবে।
– দায়িত্ব! কিসের দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন শুনি! আপনি পালন করেছেন কোনো দায়িত্ব! এখানে বেড়াতে নিয়ে এসেছেন, বন্ধুদের সাথে মেতে একা একাই সবসময় বেড়াচ্ছেন। আমাকে একা ফেলে আপনি দ্বিপে ঘুরতে চলে গেছেন, এই পালন করছেন দায়িত্ব! আমার বাবা-মা তো আপনার উপর দায়িত্ব দিয়েই বিয়ে দিয়েছেন, গতদিনে কোনো দায়িত্ব কি আপনি ঠিকমতো পালন করেছেন! আপনি তো বিয়েই মানেন না! বউও মানেন না! শুধু আপনার বাবা বললো দেখে দেখে নিয়ে আসতে আর নিয়ে যেতে এতেই আপনার দায়িত্ব পালন হয়ে যাবে! ঘুরাফেরা সহ আমার খাওয়া দাওয়াও বন্ধ করে রেখেছেন, এই আপনার দায়িত্ব! আমি কি এখানে বসে থাকার জন্য এসেছি! আপনি স্বেচ্ছায় ঘুরতে পারলে আমি কেন আমার ইচ্ছা পূরণ করতে পারবো না! মনে হয় না বিয়ের তিনদিনের মধ্যে কোনো মেয়েকে এতো কাদতে হয়েছে স্বামীর আচরণের জন্য, যতটা আমি কেদেছি! কি অন্যায় করেছি সেটাই ভেবে পাই না আমি! বিবাহিত জীবনে পদার্পণ না করতেই এতো অবহেলা সহ্য করছি, নিজেকে এখন মানুষই মনে হয় না!
কথাগুলো বলতে বলতে নাহিদার চোখে অশ্রুধারা বইছে। মেহেদী আর কোনো কথা বললো না। পকেট থেকে ফোন আর ওয়ালেট বের করে ঢিল মেরে বিছানায় ফেলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। নাহিদা চোখ মুছে নিজেকে শান্ত করতে লাগলো। মেহেদী চোখেমুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। সে এলে আবার নাহিদা গেলো। মেহেদী নাহিদার পার্স নিয়ে ফোন সুইচ অন করে খাটের উপর সামনেই রেখে দিলো। নাহিদা বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে খাটে যা ছিলো সব সরিয়ে টেবিলে রেখে চাদর টেনে শুয়ে পড়লো। ক্ষুধায় পেট ব্যাথার সাথে মাথাটাও ব্যাথা করছে এখন! গতকাল দুপুরে যে খেয়েছে, আর খাওয়া হয়নি তার! মেহেদী এতোক্ষণ বারান্দায় ছিলো এখন রুমে এসে বললো,
– শুয়ে পড়লে কেন! সারাদিন খেয়েছো কিছু?
নাহিদা কোনো জবাব দিলো না, চোখ বন্ধ করে রেখেছে। মেহেদী তার চোখমুখ দেখেই বুঝে নিয়েছে সে হয়তো ক্ষুদার্ত। হবেই না কেন! গতরাতেও যে খায়নি সেটা মেহেদীর অজানা নয়। নাহিদার জবাব না পেয়ে সে আবার বললো,
– কথা বলছো না কেন? রেস্টুরেন্টে চলো, খেতে যাবো।
এবারও নাহিদার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। মেহেদী তার হাত ধরে টানলো কিন্তু নাহিদা হাত ঝাড়ি দিয়ে ছুটিয়ে নিয়ে বললো,
– খাবো না আমি৷
অন্যসময় হয়তো মেহেদীর খুব বিরক্ত লাগতো তবে এখন সেটা লাগছে না। কোনো না কোনো দিক থেকে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। সে তার মায়ের কাছে কল করে কথা বললো। দিনে ঘুরাঘুরি করছে বলে কথা কাটিয়ে দিয়েছিলো। তাই এখন মাকে দিয়ে নাহিদার অভিমান ভাঙাতে কল করলো। নিজের টুকটাক কথা শেষ করে ফোন নাহিদার কানের উপর রেখে দিলো। মেহেরুনের কণ্ঠ শুনে নাহিদা চোখ খুলে তাকালো এবং ফোন ধরে উঠে বসে সালাম দিয়ে কথা বলতে লাগলো। কথা শেষ হতেই আবার শুয়ে পড়বে এমন সময় মেহেদী বললো,
– এখন নিচে না গেলে আমি আবার কল করে বলবো তুমি কাল থেকে না খেয়ে আছো। আবার আমাকে না জানিয়ে অচেনা জায়গায় বেড়াতে চলে গেছো।
– বলুন, আমিও বলে দিবো আপনি আমাকে রেখে দ্বিপে বেড়াতে গিয়েছেন।
– তখন আমিও বলে দিবো, তুমি স্পিডবোটে উঠতে ভয় পাও তাই আমার কিছু করার ছিলো না।
– কতো বড় মিথ্যুক আপনি! আমি তো কখনো স্পিডবোটে উঠিই নি! আপনি জানলেন কিভাবে!
– না জানলেও জানিয়ে দিবো। কখনো উঠোনি যে, এটাই তার প্রমাণ। এবার তারাতাড়ি চলো।
– যাবো না।
– আমি কিন্তু দুপুর থেকে না খেয়ে আছি তোমাকে খুজতে খুজতে!
– তো খেয়ে নিন। না করেছে কে!
– যাবে নাকি আমি তোমার বাবা মায়ের কাছে কল করে জানাবো তুমি আমার কথা শুনো না!
নাহিদা বিরক্তি নিয়ে উঠে পড়লো। মাথার চুল খোপা করে ক্লিপ আটকে মাথা ওড়না দিয়ে ঢেকে নিলো। নাহিদা যাবে বুঝতে পেরে মেহেদীও ফোন ওয়ালেট পকেটে নিয়ে নিলো। রুম লক করে দুজনেই রেস্টুরেন্টে এলো বাকিদেরও ডাকলো মেহেদী। পাচজন এক টেবিলে বসে খেতে লাগলো। নাহিদা তার জন্য একটা আইটেম অর্ডার করলো শুধু। ক্ষুধা বেশি থাকলেও বেশি পরিমাণ খাবার খাওয়ার রুচি নেই। তুলনামূলক আরও কম খেয়ে উঠে পড়লো। এসিটিটি থেকে বাচাতে মেহেদী তার হাতে চাটনি ধরিয়ে দিয়ে বসিয়ে রাখলো। তাদের খাওয়া শেষ হতে হতে যেন সে এটা শেষ করে! চাটনির মধ্যে ভিন্ন স্বাদ পেলো নাহিদা। কি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। শুধু পুদিনা পাতার ঘ্রাণ বুঝতে পারছে বাকি উপাদান অজানা! খাওয়া শেষে সবাই বেরিয়ে এলে মেহেদীর বন্ধুরা আগে পা চালালো আর মেহেদী নাহিদাকে বললো,
– চলো, সন্ধ্যার সৈকতে ঘুরবো।
নাহিদা বেশ বুঝতে পারছে এখন মেহেদীর ঘাড়ে দায়িত্বের ভুত চেপেছে আর একটু পরেই ভুত লাফ দিয়ে নেমে যাবে। সে তার কথায় সাড়া না দিয়ে রুমে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে মেহেদী তার হাত ধরে বললো,
– কথা কানে যায়নি! এখন বলছি এখন যাবে না একটু পরেই আবার বলে বলে কান্না করবে! আর বাড়িতে গিয়ে আব্বু আম্মুকে শুনাবে হানিমুনে এসে আমার কেয়ারস পাওনি!
– যাবো না আমি। আপনিই ঘুরেন বেশি করে। বাড়িতেও কিছু জানাবো না। হানিমুনের শখ মিটে গেছে আমার।
মেহেদী তাকে কাছে টেনে এনে বললো,
– এতো তারাতাড়ি শখ মিটে গেলে চলবে নাকি! আরও বাকি আছে তো! মাত্র তো শুরু হলো! চলো।
মেহেদী হাত না ছাড়ায় নাহিদাকে যেতেই হলো তার সাথে। নাহিদা তার হাত ধরে হাটছে, মাঝে মাঝে দৃষ্টি মেহেদীর দিকে পলক ফেলছে। মন বলছে, সবসময় এমন থাকলে না হতো! বুঝে না কেন লোকটা! সন্ধ্যায় বালিতে গড়ে উঠা ছোট ছোট দোকানগুলো জমেছে বেশ। মেহেদীর বন্ধুরা আগে হাটছে, দুষ্টুমি করছে আর মেহেদী পেছনে শান্ত হয়ে নাহিদার হাত ধরে হাটছে। নাহিদা তাকে বললো,
– পাচশো টাকা আছে আপনার সাথে? ধার দিন, রুমে গিয়ে দিয়ে দিবো।
– কেন?
– কিছু কিনবো।
– কেনো যা কেনার।
নাহিদা যত দেখছে একটু একটু করে ততই অবাক হচ্ছে! সে তার এতো কেয়ারে নেমে গেলো! মানুষ কি এতো তারাতাড়িই শুধরে যায়! বেশি কিছু না ভেবে সে নাফিসার জন্য কিছু কিনে নিলো। সাথে আয়াশ ও আরিশার জন্যও খেলনা নিলো। পাচশোর কথা বলে প্রায় পনেরো শো হয়ে গেছে! কিন্তু এতে মেহেদী কিছু বললো না। নাহিদা কিনলো আর সে টাকা দিয়ে গেলো। আরও কিছুক্ষণ ঘুরেফিরে তারা একসাথে রিসোর্টে ফিরে এসেছে। ঘুমানোর সময়ও বালিশ একটার সাথে একটা লাগিয়ে নাহিদার পাশাপাশি শুয়েছে। নাহিদার মাঝে বিস্ময়ের ধারাবাহিকতা চলছে।

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ২৯
(নূর নাফিসা)
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠেই তারা ব্যাগ গুছিয়ে নিলো রিসোর্ট ছেড়ে দিবে বলে। অত:পর রেস্টুরেন্ট এসে খাবার অর্ডার করলো। হিমেল বললো,
– এখন কি সোজা সীতাকুণ্ডে যাবি নাকি অন্যকোথাও?
মেহেদী জবাব দিলো,
– না, এখন হিমছড়ি উদ্যানে যাবো। এরপর সীতাকুণ্ড।
– ওকে।
নাহিদা বুঝতে পারছে না তাদের কথাবার্তা। তারা তিনদিনের ট্রিপে এসেছে। তিনদিন তো শেষ, তাহলে কি আজ বাড়ি ফিরে যাবে না! খাওয়াদাওয়া শেষ হলে সবাই বেরিয়ে এলো যারযার ব্যাগ নিয়ে। নাহিদা ও মেহেদীর দুইটা লাগেজ ও একটা ব্যাগ থাকায় একটা লাগেজ বন্ধুদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সে একটা লাগেজ ও একটা ব্যাগ নিলো। নাহিদার কিছু টানতে হচ্ছে না। শুধু তার পার্সটা হাতে। তারা গাড়ির জন্য রাস্তায় এসে দাড়ালো। নাহিদা মেহেদীর পাশে এসে বললো,
– এখন কি ঢাকা ফিরবেন না?
– না, এখন হিমছড়ি উদ্যানে যাবো। আগামী একমাসের জন্য ঢাকা যেতে পারবে না।
– কি! একমাস!
– জ্বি।
– আমি যাবো না কোথাও। আমাকে ঢাকা ফিরিয়ে দিয়ে এসে আপনারা ঘুরাঘুরি করুন।
মেহেদী বিদ্রুপস্বরূপ বললো,
– সেকি! বউ ছাড়া হানিমুন হয় নাকি! আমরা তো হানিমুনে এসেছি!
– অনেক হয়েছে হানিমুন। আমি ঢাকা যাবো।
– তো যাও।
– একা কিভাবে যাবো!
– আমি কি জানি! এসেছো কেন!
– আমি তো আসতে চাইনি। বাবা মা বলেছে তাই এসেছি।
– তাহলে বলো বাবা-মাকে নিয়ে যেতে।
– আপনাকে সাথে করে নিয়ে যেতে বলেছেন উনারা।
– আমি যাচ্ছি না। চুপচাপ লেজের মতো পিছু পিছু চলো। বেশি কথা বলবে তো এখানেই ফেলে যাবো।
– বসে থাকবো নাকি এখানে! রাস্তা চিনে গেছি। চলে যাবো আমি একা একাই। স্টেশন গিয়ে ঢাকার ট্রেনে উঠে পড়বো।
– বাহ! ভালো চিনে গেছো! এখন ভালোয় ভালোয় আবার ভুলে যাও। এবং চুপচাপ গাড়িতে উঠো।
– যাবো না আমি।
মেহেদী বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকালে নাহিদা দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো। গাড়ি ঠিক করা হয়ে গেলে সবাই উঠতে লাগলো আর সে দাড়িয়েই রইলো। একটুও ইচ্ছে করছে না তাদের সাথে যেতে। শুধু ইচ্ছে করছে বাড়ি ফিরে যেতে। তাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেহেদী রাগান্বিতভাবে তার দিকে তাকাতেই সে মনে মনে ফুসতে ফুসতে উঠে বসলো গাড়িতে। চলে এলো হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানে। সেখান থেকে আবার টেকনাফ ওয়াইল্ডলাইফে এসেছে। একাধারে ওয়াইল্ডলাইফ ও ইনানী ঘুরাফেরা করেছে। লাঞ্চ সেড়ে এখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে তারা আবার সিএনজি রিজার্ভ করে রওনা দিলো সীতাকুণ্ডের উদ্দেশ্যে। নাহিদার প্রথমে ইচ্ছে না থাকলেও এখন খুব ভালো লাগছে। মেহেদী যেনো তাকে চোখে চোখেই রাখছে। বারবার তাকে সাথে সাথেই হাটতে বলছে। সন্ধ্যায় তারা সীতাকুণ্ড এসেছে। এক রাতের জন্য দুটি রুম ভাড়া করে নিয়েছে। সন্ধ্যার পর তাদের সময় কাটলো রেস্টুরেন্ট ও রুমেই। সকালে তারা ঘুরতে বেরিয়েছে। সারাদিন তারা সীতাকুণ্ডের মহামায়া লেক, চন্দ্রনাথ পাহাড়, গুলিয়াখালী সী বীচ, বাশঁবারী সী বীচ ভ্রমণ করলো। খুব গভীরভাবে উপভোগ করলো নাহিদা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য! সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছিলো সেই মুহূর্তটা যখন চন্দ্রনাথ পাহাড়ে দাড়িয়ে সে বিরুপক্ষ মন্দির দেখছিলো তখন মেহেদী তার পেছনে হাত রেখে গা ঘেঁষে দাড়িয়েছিলো কাপল ছবি তোলার জন্য! রায়ান ফটোশুট নিয়েছে তাদের। যদিও মেহেদী বলেছিলো বাসায় গিয়ে দেখাবে বলে তুলেছে তবুও নাহিদার ভালো লেগেছে। এমনকি তাদের চার বন্ধুর ছবি তুলতে নাহিদা ফটোশুট নিয়েছে। সবমিলিয়ে অনেক ভালো কেটেছে আজকের দিনটা। এছাড়া মজা বাড়িয়ে দিতে তাদের বন্ধুদের ছোটাছুটি দুষ্টুমি তো আছেই। এই মারামারি, এই ঠেলাঠেলি আবার এই গলা জড়িয়ে হাটাহাটি! তবে নাহিদাকে দৃষ্টির আড়ালে রাখেনি মেহেদী।
সেদিন রাতেই তারা ফেনীতে চলে এসেছে। সকালে নাস্তা করে ফেনীর কিছু অঞ্চল ঘুরে তারা দুপুরে রওনা দিলো কুমিল্লার উদ্দেশ্যে। দুই রাত একদিন কুমিল্লা কাটিয়ে পরদিন খুব সকালে রওনা দিয়ে সকাল দশটার আগেই তারা ঢাকা ফিরে এসেছে। বাড়িতে শুধু মেহেরুন ইসলাম আছে। তার সাথে দেখা করে রুমে এসে ঝটপট গোসল সেড়ে মেহেদী ধপাস করে বিছানায় পড়লো। কতোদিন সে তার বিছানা থেকে দূরে। আজ মনের মতো একটা ঘুম দিবে। আর নাহিদা কাপড়চোপড় যথাসম্ভব গুছিয়ে রেখে গোসল করতে গেলো। মেহেদী গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। মেহেরুন খাওয়ার জন্য ডেকে গেলেন কিন্তু তার কানে যায়নি। নাহিদা মেহেরুনের সাথে কিছুক্ষণ বসে থেকে পরে আবার রুমে এসে মেহেদীর একপাশে শুয়ে পড়লো।
দুপুরের শেষদিকে নাহিদার ঘুম ভাঙলো। মেহেদীকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করতে দেখলো। তার দেহে চাদরও দেখতে পেল। মেহেদী দিয়েছে সে নিশ্চিত। মেহেদীকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে মাত্র ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসেছে। নাহিদাও আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। মাথাটা তার ব্যাথা করছে একটু। বিছানা ঠিক করে সে বাথরুমে ফ্রেশ হয়ে এসে আর মেহেদীকে দেখতে পেল না। রুম থেকে বেরিয়ে সে কিচেনের দিকে এসে দেখলো মেহেরুন ইসলাম রান্নার ব্যবস্থা করছে আর মেহেদী কেবিনেটের উপর বসেই প্লেট হাতে নিয়ে ভাত খাচ্ছে। নাহিদাকে আসতে দেখে মেহেরুন বললো,
– নাহিদা, তুই কি অসুস্থ? এমন দুর্বল দেখাচ্ছে কেন তোকে!
– না, মা। এমনি। জার্নি করার ফলে মাথাটা একটু ব্যাথা করছে।
– আমি জানতাম তো, এই অভদ্র ছেলেটা তোর একটুও খেয়াল রাখবে না!
মেহেদী খাওয়ার মাঝেই বলে উঠলো,
– আম্মু, তুমি সবসময় এতো বেশি জেনে যাও কেন! আমি খেয়াল না রাখলে এখনো তোমার সামনে দাড়িয়ে আছে সে! তুমি নাহিদার কাছেই জেনে নাও খেয়াল রেখেছি কিনা!
– নাহিদার বলতে হবে কেন! আমি স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি না!
– আচ্ছা, তুমিই বলো। তিন প্লেট খাবার সামনে দিলে যদি এক প্লেট গিলে তাহলে সেখানে আমার কি করার থাকে! বড়জোর বাকি দুই প্লেট আমার পেটে ভরে নিতে পারবো। এর বাইরে তো আর কিছু করার নেই!
মেহেরুন ইসলাম হেসে উঠলেন এবং বললেন,
– তুই তোরটা গিলেও আবার নাহিদার দুই প্লেট গিলে নিয়েছিস!
– ধুর! কথার কথা বললাম। আপু কবে গেছে?
– তোরা যাওয়ার তিনদিন পরই চলে গেছে। নাহিদা, ভাত তরকারি আছে। খেয়ে নে।
– না, মা। এখন খেতে ইচ্ছে করছে না। এখন কি রান্না বসাবেন?
– হ্যাঁ। সন্ধ্যার আগে আগেই রান্না শেষ করে নিবো।
– আমি কেটেকুটে দিবো কিছু?
– না, আগে খেয়ে নে। আমার বাড়িতে কেউ একবেলাও না খেয়ে থাকতে পারবে না। এমনিতেই রোগা হয়ে গেছিস ক’দিনে! তারাতাড়ি প্লেট হাতে নে।
মেহেরুনের কথায় বাধ্য হয়ে নাহিদা অল্প খেয়ে নিলো। তারপর রান্নার কাজে হাত লাগালো। সন্ধ্যার পর নামাজ পড়ে ড্রয়িংরুমে বসে মেহেরুন নাহিদার মাথায় তেল মালিশ করে দিতে লাগলো। খুব মনে পড়ছে নাজিয়ার কথা! এ ও তো এক শ্বাশুড়ি আর বড় আপুর ঘরেও তো এক শ্বাশুড়ি! মানুষের মধ্যে এতো তফাত কেন হয়! ইনি পুরো মায়ের আসন দখল করে নিচ্ছেন আর উনি শ্বাশুড়ি শব্দটাকেই কলঙ্কিত করে ফেলছেন! এভাবে একটু ভালো আচরণ করলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যায়! ভাবতে ভাবতে নাহিদার চোখে পানি এসে পড়েছে। এদিকে মেহেরুন দু এক সপ্তাহের মধ্যে নাহিদার বাবা-মা ও বোনদেরকে দাওয়াত করবে সেই কথা বলে যাচ্ছেন। হঠাৎই কলিং বেল বেজে উঠলো। নাহিদা চোখ মুছে বললো,
– মা, আমি যাচ্ছি।
– না, তুই বস। আমিই যাচ্ছি।
নাহিদা মাথায় ঘোমটা টেনে বললো,
– হাতে তো তেল মাখানো। খুলবেন কিভাবে! আমি খুলে দিয়ে আসি।
– আচ্ছা।
নাহিদা দরজা খুলে দিয়ে দেখলো মেহেদী এসেছে। অথচ এদিকে মাত্র ইশার আযান পড়ছে। তাই নাহিদা জিজ্ঞেস করলো,
– নামাজ পড়েননি?
– না।
এদিকে মেহেরুন বললো,
– তা পড়বে কেন! নামাজ পড়লে তো দেহে ঠোসা পড়বে! আমারই ভুল হয়েছে! কেন আমি মাদ্রাসায় না ভর্তি করে স্কুলে ভর্তি করতে গেলাম! এসব ছেলেদের কোনো স্বাধীনতা দিতে হয়না! সারাদিন বন্দী রাখাই শ্রেয়!
মেহেরুন কথা বলছে আর মেহেদী দুই কানে আঙুল দিয়ে রুমে চলে গেলো। নাহিদার খুব খারাপ লাগলো বিষয়টি! সে দরজা লাগিয়ে আবার মেহেরুনের কাছে এসে বসলো। তেল লাগানো শেষ হতেই মেহেরুন নামাজ পড়ার জন্য চলে গেলো আর নাহিদা রুমে চলে এলো। মেহেদী পায়ের উপর পা তুলে হাতে ফোন নিয়ে খাটে শুয়ে আছে। নাহিদা বললো,
– বাইরে থেকে এলেন অথচ নামাজ পড়ে এলেন না কেন! আবার মায়ের কথায় কানে আঙুল দিয়ে চলে এলেন! এটা কি ঠিক হয়েছে!
– বেশি প্যাকপ্যাক করো না! নিজে নামাজ পড়ে না আবার অন্যকে শাসায়!
– আপনি জানেন আমি নামাজ পড়ি কি-না!
– না জেনেই বলেছি নাকি! এতোদিন ধরে ঘুরে এলে, কই! নামাজ পড়েছো এক ওয়াক্ত! আমিতো তাও মাঝে মাঝে পড়েছি তুমি তো একটুও না! আবার নামাজীগিরী দেখায়!
– আমার সাথে আপনার তুলনা করলে চলবে! তাছাড়া আমার হিসেব নিয়ে আপনার লাভ কি! আমার কবরে আমি যাবো, আপনার কবরে আপনি যাবেন। যার যার আমল তো তাকেই সংরক্ষণ করতে হবে।
– এজেক্টলি! আমিও সেটাই বলতে চাইছি। আমার হিসেব নিতে আসছো কেন তুমি! নিজে যা করো না, অন্যকে আবার তা করতে বলো!
নাহিদা আর কথা বাড়ালো না। কেননা আপাতত তার পাল্টা জবাব দেওয়ার সেই জোরটা নেই তবে অতি শীঘ্রই দিবে। তাই চুপই রয়ে গেলো। ফোনটা হাতে নিয়ে নাজিয়ার কাছে কল করে কথা বললো কিছুক্ষণ। জহিরুল ইসলাম নামাজ পড়ে বাড়িতে ফিরলে মেহেরুন টেবিলে খাবার দিতে লাগলো। মেহেদীকে ডেকে মেহেরুনের সাথে নাহিদাও হাত লাগিয়েছে। মেহেদী চেয়ার টেনে বসে গালে হাত রেখে টেবিলে কনুই ভর দিয়ে মেহেরুনকে বললো,
– আম্মু, তুমি কিন্তু বলেছিলে নাহিদার খেয়াল রাখলে আমাকে বোনাস দিবে।
কথার সাথে সাথেই নাহিদার কাজ থেমে দৃষ্টি মেহেদীর দিকে স্থির হলো! বোনাসের জন্য তাহলে পরবর্তী দিন গুলো এতো খেয়াল রেখেছে! আজব দুনিয়ার আজব মানুষ একটা! মেহেরুন খাবার প্লেটে বেড়ে দিতে দিতে বললো,
– হুম, বলেছি। তো?
– তো আবার কি! দাও।
– দেবোই তো। এতো তাড়া কিসের!
মেহেদী পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে বললো,
– এই যে দেখো, মাত্র ত্রিশ টাকা আছে। সকালে যদি খেয়ে নিতাম তাহলে বাড়ি ফেরা হতো না! কুমিল্লায়ই থাকতে হতো! আর তোমার ছেলেকে অনাথের মতো রাস্তায় রাস্তায় লোকজনের ধারে হাটতে হতো।
জহিরুল ইসলাম রুম থেকে বেরিয়ে টেবিলের দিকে আসতে আসতে জবাব দিলো,
– তবুও তো ভালো লাগতো আমার! পেটের দায়ে তো অন্তত একটু কষ্ট করে টাকা যোগাড় করার চেষ্টা করতে তুমি।
– তুমি কি ভাবছো, আমি ভিক্ষে করতে রাস্তায় হাটতাম!
– তো?
– আরে তোমার ছবি দেখিয়ে লোকজনকে ডেকে ডেকে বলতাম, “দেখুন, কিপ্টুস ধনী লোকের সন্তান আমি। ইনি আমার আব্বু। আব্বু হয়তো জানে না আমার ওয়ালেট ফাকা হয়ে গেছে! দয়া করে কেউ আমার আব্বুকে জানানোর ব্যবস্থা করুন যাতে আপনাদেরও কিছু আয় হয়।”
জহিরুল ইসলাম বললেন,
– মেহেরুন, শুনো তোমার বজ্জাত ছেলের কথাবার্তা!
– ধুর! আব্বু তুমি একটু চুপ থাকো তো! আম্মুর সাথে জরুরি মিটিং চলছে আমার। আম্মু কখন দিবে?
– আমি না। তোর আব্বু দিবে বলেছে। আমি শুধু তোকে জানিয়েছি।
– তাই নাকি! আব্বু কখন দিবে?
– তুমি চাইলে এখনই।
– ওফ্ফ! তাহলে আর দেরি কিসে! তারাতাড়ি দাও। আমার ওয়ালেট একেবারে ফাকা!
জহিরুল ইসলাম চেয়ার ছেড়ে রুমের দিকে যেতে লাগলে মেহেদী বললো,
– পাচ হাজারের নিচে চলবে না।
জহিরুল ইসলাম জবাব দিলো,
– পনেরো হাজার পাবে।
মেহেদী অতি খুশিতে স্তব্ধ হয়ে গেছে! বাবাকে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে টেবিলে ঢোল বাজাতে বাজাতে উৎফুল্ল হয়ে বললো,
– আব্বু তুমি সত্যিই পনেরো হাজার দিবে?
– হুম।
– ওফ্ফ! আগে দিলে কি হতো! তাহলে কি আমি শুধু ঢাকা টু চিটাগং হাইওয়ে ঘুরে আসি! একটু উত্তর পূর্বেও তো যাওয়ার পরিকল্পনা করতাম!
– চতুর্থ দিনে বাড়ি ফেরার কথা ছিলো, সেখানে আজ সপ্তম দিন!
– ওইতো, হানিমুনে একটু বোনাস টাইম লাগে। তাছাড়া আমার কি দোষ! আমি তো কক্সবাজার একদিন কাটাতাম, তুমি সেখানে তিনদিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছো। এজন্যই তো ডাবল সময় কাটলো!
– ওকে, অনেক হয়েছে ঘুরাফেরা। প্রয়োজনে আবার যাবে। আমার কোনো আপত্তি নেই। এই নাও তোমার বোনাস।
– এটা কি!
– জয়েনিং লেটার। কাল থেকে তুমি অফিস জয়েন করছো। মাস শেষে বেতন পনেরো হাজার টাকা। কাজের ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হবে বেতনও বাড়বে।
– হোয়াট! এটা আমার বোনাস!
– হুম। তুমি পাচ হাজার চেয়েছো আমি সেটা পনেরো হাজারে নিয়ে এসেছি। মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথেই হাতে পেয়ে যাবে।
মেহেদীর চেহারা দেখার মতো হয়েছে! এতোক্ষণ মেহেদীর কথাবার্তা শুনে নাহিদার ইচ্ছে করছিলো প্লেট দিয়ে একটা মেরে মাথা ফাটিয়ে দিতে! আর এখন তার অফুরন্ত খুশি লাগছে! মেহেদীর টেবিল বাজানোর মতো তার এখন প্লেট বাজাতে ইচ্ছে করছে!

চলবে।