তোকেই ভালোবাসি পর্ব-১০

0
2364

#তোকেই ভালোবাসি
#লেখক – তানভীর হৃদয় নীল
##পর্ব – ১০

– চিঠিটা খুলে পরতে শুরু করলাম। চিঠিতে লিখা ছিলো, বাবা তোমারা আমাকে ক্ষমা করে দিও।জানি আমি অনেক বড় ভুল করছি। কিন্তু বিশ্বাস করো। আমি ইচ্ছে করে তোমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেনি।

– ওইদিন যদি আমি মিথ্যা কথা না বলতাম। তাহলে আমার স্ত্রীর অপারেশন করা হতো না।বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে। আমার মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করে দিতো। আমার মেয়ের ইজ্জত আর স্ত্রীর জীবন রক্ষা করতে। তোমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেছিলাম।

– জানি আমি ক্ষমার অযোগ্য। তারপর ও বলছি তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর হে তোমার বড় মামাকে খুন তোমরা করোনি। তোমার ছোট্ট মামা আসাদ চৌধুরী। তোমার বড় মামাকে নিজ হাতে খুন করেছে।

– তোমার ছোট্ট মামা অনেক অপরাধ মূলক কাজের সাথে সাথে জড়িত ছিলো। যেগুলো তোমার বড় মামা কিছুতেই মেনে নেয় নি।

– তোমরা কক্সবাজারে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে। এইসব নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রেগে গিয়ে তোমার বড় মামা তোমার ছোট্ট মামার গায়ে হাত তুলে। এবং এগুলো ছেড়ে দিয়ে ভালো যেতে বলে।আরো অনেক কথা কাটাকাটি হয়।

– কিন্তু তোমার ছোট্ট মামা তোমার বড় মামার কথা শুনে নি।তার বন্ধু আনিস রায়হানের কথা মতো। সামান্য টাকা আর ক্ষমতার লোভে। তোমার বড় মামাকে নিজ হাতে খুন করে। সবকিছু তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছিলো।সবার সামনে তোমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলার জন্য।

– যদি তাদের কথামতো কাজ না করি। তাহলে আমার স্ত্রীর অপারেশন করতে দিবে না। আমার মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করে দিবে বলেছে। আমি আমার স্ত্রীর জীবন। আর মেয়ের ইজ্জত রক্ষা করতে। ওইদিন তোমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেছি।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।

– চিঠিটা পড়ে পুরো অবাক হয়ে গেলাম। ছোট্ট মামা যে এতোটা খারাপ হতে পারে।তা আমার ধারনার বাইরে ছিলো। সামান্য টাকা আর ক্ষমতার লোভে।নিজের বড় ভাইকে মেরে ফেললো। যে ব্যক্তি নিজের ভাইকে খুন করতে পারে।তার কাছে তো বোনের ছেলে কিছুই না।

– বাবা তোমার কাছে কিছু বলার নেই।যদি পারো আমার স্বামী কে ক্ষমা দিও।(কেঁদে কেঁদে)

– প্লিজ ভাইয়া। আমার আব্বুকে ক্ষমা দিয়েন।(কেঁদে কেঁদে)

তানভীর – আরে আপনারা কাঁদছেন কেন? প্লিজ কাঁদবেন না। আমি ওনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।আমাকে বলুন ওনার কীভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছিলো?

– জানি না। এই চিঠি আমার কাছে দেওয়ার। দুইদিন পর খবর আসে এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে।আমাকে বলেছিলো তোমার মামা লোকজন দিয়ে ওকে মেরে ফেলতে পারে। আমার হাতে এই চিঠিট দিয়ে বলেছিলো। যদি কোনদিন তোমরা আমাদের এখানে আসো। তাহলে তোমাদের যেন এই চিঠিটা দিই।

তানভীর – আপনাদের পরিবারে আর কেউ নেই?

– আমার এক বড় ভাই আছে।

তানভীর – সে এখন কোথায়?

– অফিসে গেছে। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে।

তানভীর – ঠিক আছে। আপনার বড় ভাই বাসায় আসলে। আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবেন।(নাম্বার দিয়ে)

– ঠিক আছে ভাইয়া।

তানভীর – তাহলে আমরা এখন আসি।এই চিঠিটা নিয়ে গেলাম।

– ঠিক আছে।

– ওনাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাহিরে চলে আসলাম। বাহিরে এসে আমাদের লোকজন পাঠিয়ে দিলাম।আনিস রায়হানের সম্পর্কে সমস্ত কিছু জানার জন্য।

– তারপর আমি আর মামুন ভাই কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে। একটা জায়গায় ওদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। দুপুরে আমাদের লোকজন আসলো।

– ভাই আনিস রায়হান এখানকার এমপি। রিয়ার সাথে ওর ছেলে অনিকের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।

তানভীর – তার মানে অনিক আনিস রায়হানের ছেলে।যার কথায় বড় মামাকে খুন করছে। আবার তার ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছে।

মামুন – এবার ভেবে দেখো ঠিক কতোটা খারাপ হলে ।এইরকম কাজ করতে পারে?

তানভীর – ছোট্ট মামা যে এতোটা খারাপ হতে পারে।সেটা আমার ধারনার বাইরে ছিলো।

মামুন – এইসব পরে দেখা যাবে।চলো একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আসি।

তানভীর – হুম চলেন।

– তারপর সবাইকে সাথে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেস্টুরেন্টের বিল দিয়ে বাইরে চলে এলাম। বাহিরে এসে গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম সোজা পার্কে।

– গাড়ি থেকে নেমেই মামুন ভাই বললো, তুমি একটু এখানে দাঁড়াও। আমার একটা ফোন এসেছে।(বলেই চলে গেলেন)

– দুই মিনিট পর মামুন এসে বললো, ছোট্ট চলো তাড়াতাড়ি।

তানভীর – কোথায় যাবো?

মামুন – শপিং মলের সামনে।

তানভীর – শপিং মলের সামনে মানে?

মামুন – ওইখানে নুসরাত আর ওর একটা ফ্রেন্ডের গেছে। শুনলাম আজকে রাতে নাকি অনিকের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।

তানভীর – হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত নিলো কেন?আর আপনি এইসব কার কাছ থেকে জানলেন?

মামুন – পরে সব বলবো তোমাকে। এখন তাড়াতাড়ি চলো।

– তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠলাম। কিছুক্ষণ পর মামুন একটা শপিং মলের সামনে নিয়ে গাড়ি থামলো। সামনে তাকিয়ে দেখি।নুসরাত দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের সাথে গল্প করছে।

– গাড়ি থেকে নেমে মামুন ভাই বললো, নুসরাত কে নিয়ে এসো। ওখানে আগে থেকেই সব কিছু বলা আছে।

তানভীর – চল আমার সাথে।(হাত ধরে)

নুসরাত – কে আপনি?আর কোথায় যাবো আপনার সাথে?

তানভীর – আমি তানভীর। এখন আমার সাথে কাজী অফিসে বিয়ে করতে যাবি।

– নুসরাত কিছু বলার আগেই। নুসরাতের নিয়ে গাড়ি উঠালাম। গাড়িতে উঠে নুসরাত আমার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কোনো কথা বলছে না।

– কিছুক্ষণ পর কাজি অফিসের সামনে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে। নুসরাতকে নিয়ে ভিতরে গেলাম। ভিতরে গিয়ে মামুন বললো,কাজী সাহেব বিয়ে কাজ শুরু করেন।

– কাজীকে বলার পর।কাজী সাহেব বিয়ে পাড়াতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পর বিয়ে পড়ানো শেষ হলে। কাজীর কাছ থেকে বিয়ের কাগজপত্র নিয়ে বাহিড়ে চলে আসলাম।

– বাহিরে এসে নুসরাত বললো, আমি এখন বাড়িতে যাবো না।

তানভীর – কেন? কী হয়েছে?

নুসরাত – আমার ভয় করছে।রাতে অনিকের সাথে বিয়ের হওয়ার কথা। কিন্তু সবাইকে মিথ্যা বলে বাড়ি থেকে এখানে এসেছি।

তানভীর – মিথ্যা বলে এসেছিস মানে?

নূসরাত – কিছু না। আমি এখন বাড়িতে যাবো না। প্লিজ।তোর সাথে নিয়ে চল।

তানভীর – চল এখন বাড়িতে।রাতে আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।

নুসরাত – আমি যাবো না।

তানভীর – চুপচাপ গাড়িতে উঠ।বলছি তো রাতে আমি যাবো।(ধমক দিয়ে)

– নুসরাত কিছু না বলে। চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসলো।

মামুন – নুসরাতকে বাড়িতে নামিও দিয়ে আসো।আমরা তোমার জন্য পার্কের সামনে অপেক্ষা করছি।

তানভীর – ঠিক আছে।

– তারপর নুসরাতকে নিয়ে বাড়ির নামনে নামিয়ে দিয়ে আসলাম। বাড়িতে যাওয়ার পথে নুসরাত আমার সাথে কোনো কথা বলেনি।মাথা নিচু করে চুপচাপ গাড়িতে বসে ছিলো। মাঝে মধ্যে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু কোনো কথা বলে নি।

– নুসরাত কে দিয়ে এসে। পার্কের সামনে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি মামুন ভাই একা দাঁড়িয়ে আছে। আমি মামুন ভাইয়ের কাছে যেতেই বললো, লোকজন পাঠিয়ে দিয়েছি।রনিও তার বন্ধু ছামি কে তুলে আনার জন্য।

তানভীর – আমরা এখন কোথায় যাবো?

মামুন – কিছুটা সামনে চলো। ওখানে নির্জন জায়গায় আছে। সন্ধ্যার সময় মানুষের চলাচল কম। ওখানে দুইটাকে শেষ হয়ে দিবো। হাতে সময় খুব কম।

তানভীর – চলেন তাহলে‌‌।

– মামুন ভাইয়ের কথা মতো।গাড়ি নিয়ে ওখানে চলে গেলাম। জায়গায় টা মেইন রোডের পাশাপাশি। সত্যিই লোকজনের চলাচল কম। লোকজন নেই বললেই চলে।

– হঠাৎ রাকিব ফোন দিয়ে বললো, ভাই কোথায় তুই?

তানভীর – কেন? কোনো সমস্যা?

রাকিব – সমস্যা মানে। সন্ধ্যার পর নুসরাতের বিয়ে।কিছু একটা কর।

তানভীর – তুই কোনো চিন্তা করিস না। আমি সন্ধ্যার পর আসছি।

রাকিব – ঠিক আছে।

– কিছুক্ষণ রাকিবের সাথে কথা বললাম। সন্ধ্যার পর আমাদের লোকজন আসলো। এসেই একজন বললো,ভাই রনিকে তুলে আনতে পারে নি।ও বিকালে বাড়ি থেকে বের হয়নি। ওর বন্ধুকে তুলে নিয়ে এসেছি।(ছামিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে)

তানভীর – ওর মুখের ব্যান্ডেজ খুলে দাও।

– ছামির মুখের ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়ার পর বললো,আমাকে এখানে তুলে এনেছিস কেন?

তানভীর – জামাই আদর করতে। মুক্তাকে কেন ধর্ষন করে ছিলি? কী ক্ষতি করেছিলো তোদের?

ছামি – তোদের কেন বলবো? বাঁচতে চাইলে ছেড়ে দে আমাকে।

মামুন – ছোট্ট ভাই এর সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করে লাভ নেই।সোজা মেরে ফেলো।

– পর পর কয়েকটা গুলি করলাম ছামির বুকে। সাথে সাথে মাটিতে পড়ে গেল।

তানভীর – ওর লিংঙ্গ কেটে ওর বডিটা রাস্তার মাঝে ফেলে দিয়ে আসো।এই চিরকুট ওর বুকের উপর রেখে দিও।(একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে)

মামুন – যা করার তাড়াতাড়ি করো।

– ঠিক আছে ভাই।

– কিছুক্ষণ পর আমাদের লোকজন এসে বললো,ভাই আমাদের কাজ শেষ।

মামুন – ঠিক আছে। চলো সবাই।

– তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে পড়লাম। তারপর মামার বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে গেলাম। ভেতরে যেতেই একজনের সাথে ধাক্কা লেগে যায়। ওনার হাত থেকে কি যেন একটা মাটিতে পড়ে যায়।

– ওনার দিকে তাকিয়ে পুরো অবাক গেলাম।এটাতো আমার আম্মু। আমি কিছু বলার আগেই আম্মু বললো…..

চলবে।