তোকে চাই পর্ব-০৬

0
1206

#তোকে_চাই
#পার্ট_৬
#লেখনীতে_সুহাসিনী_চৌধুরী(ছদ্মনামের লেখিকা)

সেদিনের পর রোজকে আরো দুইদিন হসপিটালে থাকতে হয়।তারপর রোজ আর রাইতাকে নিয়ে সবাই রওনা হয় সবার চিরচেনা সেই ঢাকা শহরের উদ্দেশ্যে।রোজকে হোমে রাখার জন্য মিরা,জেরিন,শান্ত আর শাহাফ আসে।এসেই সর্বপ্রথম দেখা করে মিস জুলি অর্থাৎ রোজের মাদারের সাথে।এই হোমে মূলত খ্রিস্টান ধর্মের মেয়েরাই বেশি।মিস জুলি নিজেও একজন খ্রিস্টান।তবে রোজ যে মুসলিম তা মিস জুলি রোজকে যেদিন পায় সেদিনই বুঝে যায়।কারণ রোজের গলায় আল্লাহু লেখা একটা লকেট ছিলো।তাই রোজকে মুসলিম ধর্মানুসারেই মানুষ করা হয়।মিস জুলি রোজের এই গুলি লাগার খবরটা শুনে বেশ কষ্ট পান।আর রোজের দুই সঙ্গী সাফরিন আর লিয়া তো কেঁদেই দিয়েছিল।রোজের সাথে সাফরিন আর লিয়ার সম্পর্কটা খুব গভীর।তাই কারো কিছু হলেই বাকি দুজন অস্থির হয়ে পরে।সবার সেবা যত্নে রোজ সাতদিনের মধ্যেই মোটামুটি সুস্থ হয়ে যায়।

আজ সোমবার।রোজ বাগানে বসে আছে।বাতাসে চুলগুলো উড়ে বারবার মুখের সামনে আসছে।রোজ বিরক্ত না হয়ে প্রতিবারই চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে।

আকাশে আজ মেঘেরা ভীর করেছে।নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে রোজ মুগ্ধ নয়নে সূর্যাস্ত দেখছে।দমকা হাওয়ায় মাঝে মাঝে শিওরে উঠে আবারো প্রকৃতিকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরে রোজ।এরই মাঝে একটা পার্সেল আসে রোজের নামে।রোজ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পার্সেলের দিকে।আর ভাবছে ওকে কে পার্সেল পাঠালো?ওর ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে সাফরিন আর লিয়া রোজের দুই পাশে বসে বললো,

“এই এতো কি ভাবছিস?”

“ভাবছি আমাকে কে পার্সেল পাঠালো?আর কেনই বা পাঠালো?”

“এতো না ভেবে প্যাকেটটা খুলে দেখ কি আছে ওর মধ্যে”

“আচ্ছা খুলছি দারা”

এই বলেই রোজ প্যাকেটটা আর একবার ভালো করে দেখে নিলো।সাদা কালার র্যাপিং পেপার দিয়ে মুড়ানো সুন্দর করে ডেকোরেট করা একটা বক্স।কৌতুহল নিয়ে প্যাকেটটা খুলতেই সেখানে একটা নীল খামে মুড়ানো চিঠি পেলো সে।বক্সের ভিতরে আর কি কি আছে তা দেখার জন্য বক্সের দিকে তাকাতেই একটা রেড টেডিবিয়ার পেলো।সাথে একটা স্যরি+থ্যাংক ইউ কার্ড।রোজ অবাক হয়ে ভাবছে ওকে এগুলো কে পাঠালো?

লিয়া খুশি হয়ে বললো,

“ওয়াও,কত্তো সুন্দর গিফ্ট।এই তোকে এগুলো কে পাঠালো রে?”

“আমি নিজেও জানিনা।”

“আরে তোর হাতের খামটা খুলে দেখ।নিশ্চয় ওখানে কোনো ক্লু পাবি যে তোকে এগুলো কে পাঠিয়েছে।”

সাফরিনের কথা মতো রোজ খামটা খুলে একটা চিঠি পেলো।চিঠিতে লেখা,

“আমি জানি আমার জন্যই আজ তুমি মৃত্যুর সাথে লড়াই করে নিজেকে বাচিয়েছো।আজ হয়তো তোমার জায়গাতে আমি থাকতাম।কিন্তু তোমার জন্য আমি অক্ষত আছি।তোমার এই ঋণ আমি কখনো ভুলবো না।আর হ্যা নিজের যত্ন নিও।পারলে আগামীকাল থেকে অফিস জয়েন করো।”

চিঠিতে শুধু এটুকুই লিখা ছিলো।কিন্তু রোজ বুঝতে পারলো এই চিঠিটা আর পার্সেল সবই ঐ Mr. Arrogant পাঠিয়েছে।এই কথাটা ভাবতেই রোজের মুখে অটোমেটিক হাসি ফুটে উঠলো।তা দেখে লিয়া রোজকে বললো,

“কিরে এভাবে একা একা হাসছিস কেন?”

রোজ নিজেও জানেনা কেন হাসছে ওও।তবে এতোটুকু জানে ওর ভালো লাগছে।

“ও কিছুনা।সন্ধ্যা হয়ে গেলো তো।চল এবার আমরা রুমে যায়।”

সাফরিন বসা থেকে উঠতে উঠতে বললো,

“এই পার্সেলটা কে পাঠিয়েছে?”

“রিক্ত স্যার পাঠিয়েছে”

রোজের কথায় লিয়া চিল্লিয়ে বললো,

“কিইইইইইইই রিক্ত মানে তোদের অফিসের ঐ সিনিয়র অফিসার?”

“হুম”

“কিন্তু তোকে কেন সে পার্সেল পাঠালো?”

“হয়তো তাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার আঘাত লেগেছে এজন্য।”

~অফিসে~

রোজ অফিসে আসার সাথে সাথেই সবাই ও কেমন আছে তা জানতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।রোজ সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে বললো সে এখন একদম ঠিক আছে।এর মাঝেই খবর আসলো রোজকে রিক্ত ওর কেবিনে ডেকেছে।রোজ সবাইকে ‘আসছি’ বলে রিক্তর কেবিনে চলে গেলো।গিয়ে নক করলো,

“মে আই কাম ইন?”

“ইয়েস”

ওপাশ থেকে রিক্ত গম্ভীর কন্ঠে বললো।

রোজ ভেতরে গিয়ে দেখলো রিক্ত চেয়ার ছেড়ে থাই গ্লাসের জানালার সামনে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।

“আমাকে কেন ডেকেছেন স্যার?”

“কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি?”

“হুম,ভালো”

“কোনো কাজ আছে কি?”

“তুমি কে?”

রিক্তর কথা শুনে রোজ অবাক হয়ে গেলো।এ কেমন প্রশ্ন?

“আমি কে মানে?”

“মানে তোমার পরিচয় কি?”

“আমি জান্নাতুল রোজ রিনজা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।আর এখন আমার পরিচয় আমি একজন জুনিয়র অফিসার অফ সিআইডি টিম।”

“এছাড়া আর কোনো পরিচয় নেই তোমার?”

“না”

হঠাৎই রিক্ত রোজের সামনে এসে রোজের হাত দুটো দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে রোজের চোখে চোখ রেখে বললো,

“কে তুমি?সত্যি করে বলো।কেন তোমাকে দেখলেই আমার সবকিছু এলোমেলো লাগে?কেন?কেন?কেন?”

“আরে আজব এমন করছেন কেন?ছারুন আমাকে।”

এই বলেই রোজ নিজেকে রিক্তর থেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেলো।কিন্তু একটা ছেলের সাথে কি একটা মেয়ে পেরে উঠতে পারে?রোজ যখন দেখলো ওর দ্বারা এই খাটাশের থেকে ছাড়া পওায়া সম্ভব না তখনি ওও গেটের দিলে তাকিয়ে বলে উঠলো,

“মিরাপু”

রিক্ত রোজের কথা শুনে ওকে ছেড়ে দিয়ে গেটের দিকে তাকাতেই রোজ এক দৌড়ে বেরিয়ে আসে।এসেই হাপাতে লাগে।

“উফ শালা খাটাশ।প্রথম দিন থেকেই আমার পিছনে পড়ে আছে।এর সমস্যাটা কোথায়,আল্লাহ মালুম।”

পেছন থেকে রাইসা এসে জিজ্ঞেস করলো,

“কি হয়েছে রোজ?এভাবে হাঁপাচ্ছ কেন?”

“ওও কিছুনা।আমাকে একটু পানি দাও প্লিজ”

“হ্যা দিচ্ছি দাড়াও।”

এি বলেই রাইসা পানি আনতে গেলো রোজের জন্য।একটুপর পানি নিয়ে এসে রোজের হাতে দিলো।

“এই নাও পানি।”

রোজ পানির বোতলটা নিয়ে পানি খেয়ে বললো,

“থ্যাংক ইউ”

“ওয়েলকাম”

মেরিন রাইসা আর রোজকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,

“সবাই কনফারেন্স রুমে চলো।আজ নতুন আর একটা কেস নিয়ে কথা বলবে এসইপি স্যার।”

এরপর ওরা তিনজন কনফারেন্স রুমে গিয়ে দেখে সবাই উপস্থিত সেখানে।রোজের চোখ রিক্তর দিকে পরতেই রিক্ত রাগী চোখে ওর দিকে তাকালো।যেন চোখ দিয়েই বলছে,

“একবার শুধু হাতের কাছে পাই তোমাকে,দেখিয়ে দিবো এই রিক্ত কি জিনিস!”

রোজ রিক্তর চোখের ভাষা বুঝতে পেরে হেসে অন্যদিকে তাকালো।

তখনই এসইপি স্যার মিস্টার খান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“গতবারের কেসটা তোমরা সবাই খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন করেছো।আর রোজ,তুমি নিজের জীবন বাজি রেখে এই কাজটা করেছো।আসলেই তুমি খুব সাহসী।তবে গতবারের চেয়ে এই বারের কেসটা আর একটু জটিল।এইবার তোমাদেরকে যেতে হবে বান্দরবনে।সেখানকার থানচি উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে লুকিয়ে আছে একদল বিখ্যাত ডাকাত।যাদের লিডারের নাম ‘অর্কিড’।যার নেশা ডায়মন্ডের।রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশ থেকে দামী দামী ডাইমন্ড চুরি করে আনায় এই দলের প্রধান কাজ।এই পর্যন্ত প্রায় ৯টি দেশ থেকে ২১ টি ডায়মন্ড চুরি করেছে এই ‘অর্কিড’ টিম।যার মূল্য আনুমানিক প্রায় ১০কোটি টাকা।এই দল এখন আমাদের দেশে এসেছে এখানকার মূল্যবান ডাইমন্ড চুরি করতে।আমাদের মূল টার্গেট এইবার এই ‘অর্কিড’ টিমকে ধরা।

সবাই এতোক্ষণ মনোযোগ সহকারে শুনছিল এসইপি স্যারের কথা।রোজ এসইপি স্যারকে উদ্দেশ্য করে বললো,

” স্যার,আমার মনে হচ্ছে এই টিম যথেষ্ট পরিমাণে চালাক।তাই এদেরকে ধরতে গেলে আমাদেরকেও বড় ধরনের একটা ফাঁদ পাত্তে হবে।”

শুভ সবার মাঝে থেকে বললো,

“আমি রোজের সাথে সহমত।আমাদের একটা ভুলের জন্য এই টিম পালিয়ে যেতে পারে।তাই আমাদের যা করতে হবে খুব সতর্কতার সাথে করতে হবে।”

রিক্ত সবার উদ্দেশ্যে বললো,

“কার মাথায় কি প্ল্যান ঘুরছে সেটা বলো সবাই।”

রোজ চট করে দাড়িয়ে বললো,

“আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে।”

রিক্ত ওর স্টাইলে এক ভ্রু বাকিয়ে রোজের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কি রকম প্ল্যান?”

রোজ খুব সুন্দর এবং সাবলীল ভাষায় বলতে লাগলো,

“ওরা যেহেতু বাংলাদেশে এসেছে ডাইমন্ড চুরি করতে।আর আমার সিক্স সেন্স বলছে এইবার ওদের মিশন হবে বান্দরবনের কোনো একটা ডাইমন্ড জুয়েলারি শপ।আমাদের উচিত প্রত্যেকটা জুয়েলারি শপে কড়া নজর রাখা।আর বান্দরবনে একটা এক্সিবিশন হবে কিছুদিন পরেই।আর সেখানেই একটা ডাইমন্ড নিলামে তোলা হবে।আমার মনে হয় ‘অর্কিড’ টিম ঐ ডায়মন্ডটা চুরি করতে আসবে সেই এক্সিবিশনে।তাই আমাদের সবাইকে সতর্কতার সহিত ঐ এক্সিবিশনে যেতে হবে ছদ্মবেশে যাতে করে কেউ আমাদের চিনতে না পারে।এবং সেখানেই একটা ফাঁদ পেতে রাখতে হবে সেই ডাইমন্ড চুরি করা ‘অর্কিড’ টিমের জন্য।আমরা সেই ডায়মন্ড যেখানে রাখা হবে সেখানে ওয়ার্নিং বেল লাগিয়ে রাখতে পারি।তাহলে শব্দের উৎস ধরে আমরা সহজেই ঐ টিম টাকে ধরতে পারবো।”

রোজ কথা বলা শেষ করে সবার দিকে তাকাতেই ভয় পেয়ে গেলো।কারন সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।তখনি রিক্ত,,,,,,

চলবে???