তোকে ছাড়া আমি শূন্য পর্ব-১২

0
5810

#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ১২
#Faria_Siddique

২১.

সকালে




বসন্তের মৃদু বাতাসে আর কোকিলের ডাকে সকালটা অনেক সুন্দর হয়ে উঠে।মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য।চারদিকের গাছে নতুন নতুন ছোট ছোট পাতা।বাতাসের তালে তালে নড়ছে।আর সেই বাতাস এসে আমার গায়ে বারি খাচ্ছে।আমাদের বাগানে নানা ধরনের ফুল ফুটে আছে। সেগুলার নাম আমি জানি না।কিন্তু ফুলগুলা দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে।





আজকে আমার খুব সকালেই ঘুম ভেঙে গেল। আমি গিয়ে বারান্দায় দাড়ালাম আর বসন্তের সকাল উপভোগ করতে লাগলাম।
হঠাৎ করেই আমার কাল রাতের কথা মনে হল।
আমিঃরুদ্র কি সত্যি এসেছিল?নাকি আমি স্বপ্ন দেখেছি??যদি সত্যি রুদ্র আসত তাহলে কই গেল??আচ্ছা আমি তো বসে বসে ঘুমিয়ে ছিলাম তাহলে বিছানায় গেলাম কেমনে???তার মানে রুদ্র এসেছিল।
উফফ আমি পাগল হয়ে যাব।
বিশালঃকেন রে পাগল হয়ে যাবি কেন??



আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি বিশাল দাঁড়িয়ে আছে।
আমিঃকিছু না।তুই এত সকালে এখানে আর এভাবে রেডি হয়ে কই যাচ্ছিস??
বিশাল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
বিশালঃ৯ টা বাজে।তুই ভার্সিটিতে যাবি না?
আমিঃকিইইইই??(চিল্লিয়ে অবাক হয়ে)৯ টা বাজে!!!!!!
বিশালঃহুম।এখন তারাতাড়ি আয়।আমি খেতে গেলাম।
এই বলে বিশাল চলে গেল।




আমি তারাতারি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হচ্ছি আর রুদ্রকে বকছি।
আমিঃশালা হারামি,গন্ডার,হাতি।তোরে নিয়া ভাবতে ভাবতে আমার দেরি হয়ে গেল।




আমি রেডি হয়ে নিচে গেলাম।আজকে আমি লাল শার্ট আর কালো কালারের জিন্স পরেছি।চুলগুলা ছেড়ে দিয়েছি।চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। ব্যস আমি রেডি।



বিশাল আজ সাদা শার্ট আর কালো জিন্স পরেছে। চুল একসাইডে স্পাইক করা।হাতে ঘড়ি।আর চোখে একটা সানগ্লাস। ব্যস এতেই কুত্তা থেকে একদম হিরো হয়ে গেল।





আমি নিচে গিয়ে দেখি ভাইয়ারা আর বিশাল বসে আছে আমার জন্য। বাবা বাসায় নাই।বাবা এক সাপ্তাহের জন্য লন্ডন গেছে।


আমি গিয়ে দুইভাইয়ের মাঝখানে বসলাম। তারপর সবাই খেতে লাগলাম।
দাভাইঃআমার আর কোন চিন্তা রইলো না টুকুকে নিয়ে।
আমিঃকিসের চিন্তা???
দাভাইঃএই যে তুই ভার্সিটিতে একা একা যেতিস ওইটা নিয়ে চিন্তা হত।কিন্তু এখন আর হবে না।
আমিঃকেন?
ভাইয়াঃবিশাল আছে না এইজন্য।
বিশালঃআমি জানুর বডিগার্ড আজ থেকে।
বিশালের কথা শুনে আমরা হেসে দিলাম।
দাভাইঃও আরেকটা কথা।
আমিঃ কি কথা?
দাভাইঃরুদ্র বলেছে ও তোর ভার্সিটি শেষ এ তোকে নিয়ে প্রজেক্টের জায়গায় যাবে।
আমি বিষম খেয়ে উঠলাম।কারন আমার মনেই ছিল না যে আজকে রুদ্রের সাথে যাওয়ার কথা।




দাভাই আর ভাইয়া আমাকে পানি দিল।আমি পানি খেয়ে বিশালকে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।




In varsity




আমি গাড়ি পার্ক করে আসতেই দেখি একদল ছেলে মেয়ে বিশালকে ঘিরে আছে।আমি গিয়ে দেখলাম একটা মেয়ে বিশালের গালে থাপ্পর মেরে দিল।আরেকটা মারার আগেই আমি গিয়ে মেয়েটার হাত ধরে ফেললাম।
আমিঃকি হচ্ছে কি এসব???(রেগে)
মেয়েঃকি হচ্ছে সেটা ওনাকে জিজ্ঞেস করুন।
আমিঃআমি ওনাকে পরে জিজ্ঞেস করবো। আগে তুমি বল তুমি কেন ওকে থাপ্পড় মারলা?(রেগে)
মেয়েঃউনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছে।আর দেখুন আমার জামার অবস্হা কি করেছে?
আমি খেয়াল করে দেখলাম বেচারির জামার অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ হয়ে গেছে।



আমি এবার বিশালের দিকে তাকালাম।
বিশাল আমার দিকে না তাকিয়ে মেয়েটার কাছে গিয়ে বলতে লাগলো।
বিশালঃতোমাকে আমি বলেছি যে আমি ইচ্ছা করে ধাক্কা মারি নি তাও তুমি আমাকে থাপ্পড় মারলে।(রেগে)
মেয়েঃআবার মারব………
মেয়েটা আর কিছু বলার আগেই বিশাল মেয়েটার গালে একটা থাপ্পর মারল।
আমি অবাক হলাম না কারন আমি জানতাম যে এমনটাই হবে।



মেয়েটা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বিশাল বলতে লাগলো
বিশালঃআমি কারোর হিসাব বাকি রাখি না।তাই থাপ্পড়টা তোমাকে ব্যাক করলাম।
এই বলেই বিশাল আমার হাত ধরে ওখানে থেকে নিয়ে আসল।




আসুন এবার মেয়েটার পরিচয় জানা যাক।




মেয়েটার নাম ভাবনা ইসলাম।মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে।দেখতে খুব সুন্দর। উচ্চতা ৫” ৩।বাবা একজন সরকারি কর্মচারী।আর মা গৃহিণী।তার একটা ছোট ভাই আছে।




আমাদের যাওয়া দেখে ভাবনাও কাদতে কাদতে বটতলায় গিয়ে বসল।ও রাগ দেখাতে পারছে না বলে কান্না করতে থাকে।আর ওর ফ্রেন্ডরা ওকে বুঝাতে থাকল।
কিন্তু না ও বিশালকে নাকি শাস্তি দিয়েই ছাড়বে।
ভাবনাঃওই ব্যাটাকে তো আমি ছাড়ছি না।আমার গায়ে হাত তুলা!!!দাড়াও দেখাব মজা।
বলেই উঠে ব্যাগ নিয়ে বাসায় চলে গেল।



২২



দাভাই অফিসে বসে কাজ করছে।ঠিক এমন সময় একটা কল আসল।কলটা আর কেউ না ওই মেয়েই করেছে।
দাভাইঃএই মেয়ে প্রত্যেকদিন আমাকে জ্বালাতন করে আজকে একটা রামদোলাই দিব।
দাভাই কল রিসিভ করে বলতে লাগলো।
দাভাইঃএই মেয়ে তোমার সমস্যা কি?মা বাবা ভদ্রতা শিখায় নাই?আমার লাইফটা যাস্ট হেল করে রেখে দিয়েছ।এতই যদি ছেলেদের সাথে কথা বলার শখ থাকে তাহলে তাহলে পার্কে গিয়ে ছেলেদের সাথে কথা বল।বাজে মেয়ে একটা।
বলেই কল রেখে দিল।



অন্যদিকে



মেয়েটাকে এভাবে বলায় মেয়েটা কান্না করতে লাগলো। ঠিক তখনি একটা মহিলা মেহেক বলে ডাক দিল।মেহেক পিছনে তাকিয়ে দেখে তার মা দাঁড়িয়ে আছে।
মাকে দেখে চোখ মুছে ফেলল।তারপর হাসিমুখে মাকে বিছানায় বসালো। তারপর মায়ের কোলে মাথা রেখে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল।
মেহেকের মা মেয়ের এই অবস্থা দেখে মুচকি হেসে বলল
মেহেকের মাঃকাদছিস কেন??
মেহেকঃকই কাদছি না তো??
মেহেকের মাঃআমি তোর মা আমি সব বুঝি রে।এখন বল কি হয়েছে??
মেহেকঃকিছু না মা।এমনিতেই কাদছি।
মেহেকের মাও আর কিছু বলল না কারন জানে মেয়ে তার একবারে যা বলে না তা বলেই না।
মেহেকঃতুমি কেন এসেছিলে মা?
মেহেকের মাঃতোর বাবা তোকে ডাকছে।




মেহেকের বাবা মেহেককে তার কাছে বসালো।
মেহেকের বাবাঃমামনি কালকে আমার একটা ডিল আছে F.S গ্রুপের সাথে।
F.S গ্রুপের নাম শুনতেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
কারন এটা আমাদের কোম্পানির নাম।
মেহেকঃতাতে আমি কি করব বাবা?
মেহেকের বাবাঃআমি চাই তুমি ডিলটা দেখাশুনা কর।আর কালকে মিটিং ও তুমি কর।
মেহেকঃকিন্তু বাবা………
মেহেকের বাবাঃআমি আর কিছু শুনতে চাই না।
মেহেক আর কিছু না বলে উঠে চলে আসল।

চলবে………..