তোকে ছাড়া আমি শূন্য পর্ব-১৪

0
4978

#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ১৪
#Faria_Siddique

২৪




বসন্ত আসেই যেন আমাদের হৃদয়ে অকারণ খুশির দোলা দিতে। যেদিকে চোখ যায়, যেন রঙের রায়ট। এদিকে চোখ গেল তো গোধূলিরঙা পলাশ, আরেক দিকে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। দখিনের জানালা খুললেই মিষ্টি বাতাস আর সারাদিন নরম কুসুমের মতো রোদ। এমন দিনেই তো উৎসব জমে ওঠে। বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বনের সূচনাও হয় এমনই এক ঋতুতে, যখন মানুষের মন ঠিক যেন কবিগুরুর ভাষায় ‘অলক্ষ্য রঙে’র ছোঁয়ায় অকারণের সুখে’ ভরে ওঠে।পাতাঝরা শুষ্ক শীতের শেষে আসে রঙে রঙিন বসন্ত। চারদিকে নতুন পাতা আর ফুলের সমাহার। বাংলার ছেলে-বুড়ো সবার প্রিয় ঋতু বসন্ত। বসন্ত বারবার নানা রঙে ও নানা রূপে ফুটে উঠেছে হাজারও কবির কবিতায়, শিল্পীর তুলির আঁচড়ে। কখনও বন্দনা বসন্তের বাতাসের, তো কখনও আরাধনা বসন্তের ফুলের সুবাসের। এই নির্মম শহরেও মাঝেমধ্যেই শোনা যায় কোনো এক গাছের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা কোকিলের কুহু ডাক। বসন্তই তো ফাগুনের রঙে রাঙিয়ে ওঠার দারুণ উপলক্ষ।




আজি দখিন-দুয়ার খোলা,

এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো।

দিব হৃদয়দোলায় দোলা,

এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো॥

প্রকৃতি যখন তার দখিন-দুয়ার খুলে দেয়, বইতে শুরু করে ফাগুন হাওয়া, মধুর অমৃত বাণী শোনা যায় কোকিলের কণ্ঠে, রঙের উচ্ছ্বাস জাগে অশোক-পলাশ-শিমুলে, বেরিয়ে আসে শীতের খোলসে ঢুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম, আর এসব ফুলে ফুলে ভ্রমর করে খেলা; তখনই যেন প্রবল বিক্রমে আগমন ঘটে রাজাধিরাজের, ঋতুরাজ বসন্তের। পহেলা ফাল্গুন দিনটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মর্ত্যলোকে অভিষেক ঘটে ঋতুরাজের, আর তাকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতি নেয় এক বর্ণিল সাজ। গাছে গাছে জাগে নতুন পাতা, নতুন ফুলের সমারোহ। সবাই যেন মত্ত শীতের শুষ্কতাকে প্রাণপণে আড়াল করার চেষ্টায়। অবশ্য ফুল যদি না-ও ফোটে, বসন্তের আগমনধ্বনিকে কোনোভাবেই চাপা দেয়া যায় না। কারণ কবি যে বলেই দিয়েছেন, ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত।’





রুদ্র আমাকে নিয়ে একটা মেলায় গেল।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।কারন রুদ্রের যে মেলা ভালো লাগতে পারে তা আমি কল্পনাও করতে পারি নাই।আমার
অবাক হয়া দেখে রুদ্র মুচকি হাসল।
রুদ্রঃএভাবে অবাক হয়ে কি দেখছ???
আমিঃ আপনার মেলা পছন্দ!!!!
রুদ্র আবারও মুচকি হেসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরল।
রুদ্রঃহুম আমার মেলা খুব পছন্দ।জানো আমার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল যে হাত এভাবে শক্ত করে ধরে আমি আর আমার সে মেলায় হাটবো।আমি তাকে চুরি,গাজরা,শাড়ী এসব কিনে দিব।পুরা মেলা ঘুরবো তারপর হাওয়াই মিঠাই,সন্দেশ এগুলা খাব।জানো ছোটবেলায় একবার এসেছিলাম মেলায় বাবার সাথে সেখান থেকেই এই ইচ্ছা জাগে।আর তাই তো আমার সেই ইচ্ছা পুরন করার জন্য তোমাকে নিয়ে মেলায় চলে আসলাম।



আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি আর শুনছি।লোকটা এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে কে জানতো।তার এই ডেভিল এর পিছনে যে এত সুন্দর একটা মানুষ লুকিয়ে আছে সেটা কে জানত।
আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র বলল
রুদ্রঃএভাবে তাকিয়ো না প্রেমে পরে যাবে।
আমি তারাতারি চোখ সরিয়ে নিলাম।




আমি আর রুদ্র মেলায় অনেক ঘুরলাম।রুদ্র আমাকে চুরি,শাড়ী সব কিনে দিল।আমি না করার সত্ত্বেও কিনে দিল।আমরা অনেক কিছু খেলামও।রুদ্রকে আজকে পুরা বাচ্চাদের মত লাগছে আমার কাছে।আমি তাকে দেখে আনমনেই হেসে দিলাম।
এই পুরা সময় রুদ্র একবারের জন্যও আমার হাত ছাড়ে নি বরং আরও শক্ত করে ধরে ছিল।




২৫




আজকের দুইদিনের অতিরিক্ত গরমে পুরা শহরের মানুষ অতিষ্ট।বসন্তের সবচেয়ে বিরক্তিকর জিনিস হচ্ছে গরম।গরমে মনে হচ্ছে পুরা শহর জ্বলে যাচ্ছে।
কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও মানুষের ব্যস্ততার শেষ নেই।মানুষ মানুষের কাজ করেই যাচ্ছে।এই গরমকে হার মানিয়ে মানুষ বেচে থাকার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে।



ভাইয়া আর রুশা বসে আছে একটা রেস্টুরেন্টে।ভাইয়ার মুখে গম্ভীর ভাব আর রুশার মুখে ভয়ের চিহ্ন।
ভাইয়াঃতুমি আসতে ২ ঘন্টা দেরি করেছ।তার উপর আবার আসতে চাচ্ছিলে না।ব্যাপারটা কি?
রুশা এবার রেগে গেল।আর চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলল
রুশাঃআপনার সমস্যা কি হা??আপনার জন্য কি আমি একটু শান্তিও পাব না?মানছি আমি ওইদিন ভুল করে ফেলেছি তাই বলে আপনি এইভাবে আমার উপর টর্চার করবেন?এই আপনার শিক্ষা??আপনার বাবা মা…………
আর কিছু বলার আগেই ভাইয়া ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিল রুশার গালে।তারপর রুশার গালগুলা জোরে ধরে বলতে লাগলো।
ভাইয়াঃতোকে কিছু বলছি না বলে যা নয় তাই বলছিস!!!আমার মা বাবা পর্যন্ত চুএ গিয়েছিস!!তোকে ভালোবাসি বলে আজকে তোকে ছেড়ে দিলাম।তোর জায়গায় অন্য কেউ হলে তাকে এখানেই মেরে পুতে দিতাম।আর কখনও যদি তুই আমার সামনে পরেছিস তাহলে আমি তোর কি হাল করবো তুই তা চিন্তাও করতে পারবি না।
এই বলেই ধাক্কা দিয়ে রুশাকে নিচে ফেলে দিয়ে চলে গেল।
চারদিকের মানুষ সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।
রুশা কাদতে কাদতে বের হয়ে গেল।




রাত ১ঃ০০ টা



আমি আর দাভাই হল রুমে বসে আছি।আমি বসে ভাইয়াকে কল দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু ভাইয়ার কোন রেসপন্স পাচ্ছি না।দাভাই ভাইয়ার পিএ কে কল করে করলো
দাভাইঃছোটু এখনো বাসায় আসে নাই।তুমি জানো কই??
পিএঃনা স্যার।আমি তো দুপুরের পরের থেকে স্যারের সাথে নেই।স্যার তো আমাকে দুপুরের পরেই আজ ছুটি দিয়ে দিয়েছে।
দাভাইঃ কেন???
পিএঃআমি জানি না স্যার।আমাকে বলল কার সাথে যেন দেখা করতে যাবে।
দাভাই আর কিছু না বলে কল কেটে দিল।



আমি কান্না করছি আর ভাইয়াকে কল করে যাচ্ছি।
আমিঃ দাভাই আমার ভাইয়া ঠিক আছে তো???
দাভাই কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
দাভাইঃ আমার ছোটুর কিচ্ছু হতে দিব না আমি।আমি যতদিন বেচে আছি তোদের গায়ে একটা আছড় লাগতে দিব না।





ভাইয়া ফুল স্পিড এ গাড়ি চালাচ্ছে।গাড়ি চলাচ্ছে আর কান্না করছে।
ভাইয়াঃ আজকে আমার জন্য আমার মা বাবাকে কথা শুনতে হল।(কান্না করে করে)
হঠাৎ করেই ভাইয়া গাড়ি থামাল একটা কবরস্থানের কাছে।
ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে একটা কবরের সামনে গিয়ে কাদতে লাগলো।
ভাইয়াঃমা ওমা আমি যে তোমায় খুব মিস করি।
এই বলেই কবরের কাছে বসে কান্না করতে লাগলো।
ঠিক তখনি কারোর হাতের স্পর্শ পেল ভাইয়া।
পিছনে ফিরে দেখে……

চলবে……