তোকে ছাড়া আমি শূন্য পর্ব-১৫

0
4761

#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ১৫
#Faria_Siddique




২৬



নিঃসীম শূণ্যতা কিংবা আনন্দ ভরা উচ্ছ্বলতা সবকিছুকে আপন করে নিতে জানে ওই আকাশ। ভরা বর্ষায় তার বুকে ধূসর-কালো মেঘকে যেমন জড়িয়ে নেয়, তেমনি প্রখর রৌদ্র গায়ে মেখে চৈত্রের দুপুরকে উত্তপ্ত করেও দেয়। শুধু কি তাই? শরতের তুলো তুলো মেঘ আর হেমন্তের ঝিলিক দেয়া সোনালী আলোয় ঘাসের ডগা চিকচিক করে আকাশের বুক থেকে ঝরে পড়া সূর্যকিরণচ্ছটায়। এই আকাশই অন্ধকার গায়ে মেখে হাজার তারার আলোয় বিরহ-যন্ত্রণায় কাতর করে, আবার আনন্দ ছড়িয়ে দেয় মেঘকে সরিয়ে দিয়ে চাঁদকে প্রকাশিত করে। এতো কথা বলছি, কারণ একটাই, আকাশ আমার বড়ো প্রিয়। কেউ যদি বলে চাঁদনী রাত চাই নাকি আকাশের বুকে তারাদের টানানো সামিয়ানা? আমি তারা-নক্ষত্রদের কথাই বলবো। কারণ ওই আবছা আলো-অন্ধকারে ঢাকা আকাশকে বড়ো আপন লাগে। জীবনটা যে শুধু চাঁদনী রাত নয়, তারার আলো মাখানো রাতও।




সেই ছোট্টবেলা থেকেই নীল আকাশের সাথে আমার কথোপকথন। বলতে গেলে জীবনের প্রথম প্রেম আমার নীল আকাশ। আর নীলাকাশের সবচেয়ে সুন্দর রূপ দেখা যেতো শরৎ কালে। যদিও এখন আর সেই ঋতু বৈচিত্র্য কোথায়! যখন বড়ো হলাম, আস্তে আস্তে রাতের আকাশও আপন হতে লাগলো। বন্ধুদের প্রিয় ছিলো শুক্লপক্ষ, আর আমার কৃষ্ণপক্ষ। কারণ একটাই অজস্র তারাদের আলো খেলা করতো মাথার ওপর। শমশেরনগর চা’ বাগান জানে আমার সন্ধ্যা থেকে রাত কিভাবে কাটতো। বাগান মাঠে সন্ধ্যা পার করে রাত নয়টা পর্যন্ত আড্ডা চলতো।আমি,আমার ভাইয়ারা আড্ডা দিতাম। তবে আসরটা আমার জোরেই বসতো। ঢাকা বা সিলেট চলে গেলে ওই আসর বসতো না। মোটামুটি প্রায় সকলেই আমার অপেক্ষায় থাকতো। যাক সেসব কথা। দাভাইয়ের সবচেয়ে আনন্দের সময় যেদিন আকাশে চাঁদ উঠতো। আমায় বলতো, “তুই কি রে চাঁদের আলোর প্রতি টান নেই?” অনেকেই অবাক হতো। আজও চাঁদের প্রতি আমার আকর্ষণ কম, যতোটা টান ওই তারাদের প্রতি। কতো কতো তারা-নক্ষত্রের নাম যে জেনেছিলাম “ভোরের কাগজ” পত্রিকা থেকে। একটা কলামই থাকতো কোথায়, কোনদিকে কোন তারা-নক্ষত্রকে দেখা যাবে। বিশৃঙ্খলভাবে ছড়ানো ওই তারাদের মধ্যে যে একধরণের শৃঙ্খলা আছে সেসব জেনেছিলাম পত্রিকা থেকেই। তবে এখন আর তেমনভাবে মনে নেই। যে কয়েকটি মনের ভেতরে জায়গা করে নিয়েছে, সেসবের কথাই বলি। যাদের গল্প করতে যাচ্ছি, এদেরকে কিন্তু খালি চোখেই দেখা যায়।



প্রত্যেকেই একটি তারার সাথে পরিচিত সেটি হলো “সন্ধ্যাতারা”, ভোরবেলায় যাকে “ধ্রুবতারা” বলা হয়। এই ধ্রুবতারাই পথ দেখায়, তাই একে পথপ্রদর্শক বলা হয়ে থাকে। সেই আদিকাল থেকে পথিকদের দিক নির্দেশ করতো ধ্রুবতারা। তারপর সবচেয়ে পরিচিত নক্ষত্রমন্ডলি হলো “সপ্তর্ষীমন্ডল”, সাতটি তারার সমাহার, একটা বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে ঝুলে আছে আকাশের গায়ে। এসব ভূগোল থেকে জেনেছিলাম। প্রতিটি তারার একেকটির নাম সাতজন ঋষির নামে, সেটা প্রথম জেনেছিলাম। কি অদ্ভূত, অষ্টম শ্রেণী পাশ করা একজন মানুষের এতো জ্ঞান কিভাবে হয়! ছোট্ট একটা দূরবীণ কিনেছিলাম, ওই তারাদের দেখার জন্য। অতো দূরের তারাগুলো আমায় ছুঁয়ে দিতো, সে যে কি শিহরণ, বলে বোঝাতে পারবোনা। যেদিন প্রথম “কালপুরুষ” দেখি, কেমন একটা অনুরণন মনের গহীনে। সবচেয়ে বেশী উজ্জ্বল নক্ষত্রের সমাহার এই কালপুরুষে। এমনভাবে নক্ষত্রগুলো সাজানো দেখে মনে হয় একজন যোদ্ধা দাঁড়িয়ে আছে একহাতে ঢাল আর অন্যহাতে তলোয়ার নিয়ে। কালপুরুষ চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো কোমরের তিনটি উজ্জ্বল নক্ষত্র যা দেখতে একটি সরল রেখার মতো। আমি নিশ্চিত যেসব মেয়েরা কালপুরুষ দেখবে, তার প্রেমে পড়তে বাধ্য। কুমকুম আপা, রীতা, ভারতী এমনকি রুমাকে যেদিন প্রথম দেখাই ওরা প্রত্যেকেই ভালোবেসে ফেলেছিলো। দেখলেই একজন ব্যক্তিত্ত্ববান পুরুষের মতো মনে হয়। তারপর আসি “ক্যাসিওপিয়া” নক্ষত্রমন্ডলের কথায়। দেখতে একেবারে ইংরেজী “M” অথবা “W”-এর মতো লাগে। চেনা খুবই সহজ। এর অবস্থান উত্তর আকাশে। এই হ্যামিল্টনে আসার পর আমার সাথে দু’বার ক্যাসিওপিয়া আর কালপুরুষের দেখা হয়েছিলো। মাঝে-মধ্যে দেখতে এমনও লাগে যেনো চেয়ারে বসে থাকা এক মহিলা। কমলা রঙের একটি নক্ষত্র আছে ওটার নাম “রোহিনী।” রোহিনীকে চেনা কঠিন না, তার রঙ-ই তাকে চিনিয়ে দেয়। “সেভেন সিস্টারস” নামে একটি তারকাপুঞ্জ আছে, বাংলায় একে বলে “কৃত্তিকা।” আর এটি-ই পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের উজ্জ্বল তারকাপুঞ্জ। আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম “অভিজিৎ”, ইংরেজীতে “Vega” বলা হয়ে থাকে। একসময় একেই “ধ্রুবতারা” হিসেবে ধারণা করা হয়েছিলো। বহুবছর আগে পড়েছিলাম অভিজিৎ নক্ষত্রের মৃত্যু এক বিলিয়ন বছরের মধ্যে হবে। সত্যি বলতে কি আমার অসম্ভব প্রিয় একটি তারা এটি। শরৎ কালেই অসাধারণ সব তারকাদের দেখা মেলে। অভিজিৎকে চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় মধ্য আকাশে ঠিক মাথার উপরেই তিনটি উজ্জ্বল নক্ষত্রকে ত্রিভুজ আকৃতির মতো দেখা যায়, সবচেয়ে উজ্জ্বল যে নক্ষত্রটি ওটি-ই অভিজিৎ। এবারে আসি “পেগাসাস” নক্ষত্রের কথায়। শরৎকালেই আকাশে দেখা যায় একে। এটির আকৃতি চতুর্ভূজ। সহজেই চোখে পড়ে এই বিশাল মন্ডলিটি। “এন্ড্রোমেডা” নামটি কি পরিচিত লাগছে না? এই পেগাসাসের সাথেই সংযুক্ত এন্ড্রোমেডা নামে আরেকটি নক্ষত্র মন্ডলি। আরোও অনেক আছে, কিন্তু স্মরণশক্তি আমায় আর সঙ্গ দিচ্ছেনা। একটা কথা বলে রাখি যারা তারা-নক্ষত্র ভালোবাসেন, দেখার প্রকৃত সময় কিন্তু এখন। আকাশের একটা মানচিত্র নিয়ে রাতে খোলা আকাশের নীচে বসুন, অবাক হয়ে যাবেন কতো দূর থেকে আলো বিলিয়ে যাচ্ছে কোথাকার কোন এক পৃথিবীকে।



এতো নক্ষত্রের গল্প আজই কেন?, আকাশে বিশাল বড়ো চাঁদ আর এতোটাই অন্যরকম দেখতে, মনে পড়ে গেলো এই ১৪ নভেম্বর তারিখেই তো “সুপারমুন” দেখা যাবে আকাশে। ওইদিনই পৃথিবীর সর্বোচ্চ কাছে চলে আসবে চাঁদ। এর আগেও যে এসেছিলো কাছে, তারচেয়েও আরোও অনেক কাছে। সেই কবে আটষট্টি বছর আগে ১৯৪৮ সালে পৃথিবীর খুব কাছে থেকে এর উজ্জ্বলরূপ দেখা গিয়েছিলো, শুধু তাই নয় আকৃতিতেও বিশাল ছিলো। আমরা ভাগ্যবান যে এমনই আরেক রূপ দেখতে পাবো এই ১৪ নভেম্বর তারিখে। তারপর আবার চাঁদের এমন রূপ দেখা যাবে আঠারো বছর পরে ২০৩৪ সালের ২৫ নভেম্বর তারিখে। আগেও বলেছি চাঁদের চেয়ে নক্ষত্র আমার প্রিয় বেশী, কিন্তু সুপারমুন না দেখে পারবো না। পৃথিবীর এতো কাছে চাঁদ কেমন করে আলো ছড়ায়, তাকে তো দেখতেই হবে। যদিও ২০৩৪ সালে আসবে আবার কাছে, কিন্তু আমি যে ভবিষ্যতের চেয়ে বর্তমানে বিশ্বাস রাখি বেশী।




আকাশ তুমি কি কথা বলো!
নিঃসীম শূণ্যতায় কোন আলো মাখো গায়ে?
দিনের শুরু থেকে শেষ কতো রূপে জড়িয়ে নাও নিজেকে
মেঘের চাদরে আর সন্ধ্যা থেকে ভোররাত
তোমার বুকে তারা-নক্ষত্ররা হরেক রকম কারুকার্য আঁকে
মুগ্ধতা লেপ্টে থাকে তোমায় জুড়ে।
নীল আকাশ আমার এতো প্রেম কেন তোমার বুকে?
সমস্ত আবেগ দিয়ে জাপটে ধরে রাখতে চাই নিজের কাছে,
সে কি জানো?
ও আকাশ তুমি কি আমার কথা শুনতে পাও।




আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসব কথা ভাবতে লাগলাম।আজ এসব কথা আমার মনে হচ্ছে কারন আমার মনটা খুবই খারাপ।কারন একটু আগে দাভাই ভাইয়াকে খুব বকেছে।



ফ্ল্যাশব্যাক


আমি আর দাভাই ভাইয়াকে খুজতে খুজতে মার কবরে চলে গেলাম।কারন আমরা জানতাম ভাইয়াকে এখানেই পাওয়া যাবে।আমাদের তিনভাইবোনের যখন মন খারাপ হয় তখন আমরা এখানে আসি।
আমরা গিয়ে দেখি ভাইয়া ওখানে বসে কাদছে।আমি আর দাভাই গিয়ে ভাইয়ার কাধে হাত রাখলাম।ভাইয়া পিছনে ফিরে আমাদের দেখে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ভাইয়ার গালে দাভাই একটা থাপ্পড় দিল।থাপ্পড় এর আওয়াজ এতই জোরে ছিল যে আমিও কেপে উঠলাম।
দাভাই ভাইয়াকে অনেক বকল।তারপর আমাকে আর ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।
তারপর আমরা তিনজন মিলে বাসায় আসলাম।
বাসায় এসে তিনজনে একসাথে খাবার খেলাম।আজ আমি আমার দুইভাইকে খাইয়ে দিয়েছি।
খাওয়া শেষে সবাই সবার রুমে চলে আসলাম।



ফ্ল্যাশব্যাক শেষ




আমি বারান্দায় এখন দাঁড়িয়ে আছি।আমার দুইভাইয়ের চোখেও ঘুম নাই।দাভাই বার বার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে।আর ছোটভাইয়া এক ধ্যানে তাকিয়ে মোবাইলে থাকা রুশার ছবির দিকে।তারপর একে একে সব ছবি ডিলিট করে মোবাইল বিছানায় ছুড়ে মারল।



জানি না কালকে কি হবে আমাদের তিনজনের সাথে।
এসব ভাবতে ভাবতেই আমি ঘুমিয়ে গেলাম




চলবে……………