তোকে ছাড়া আমি শূন্য পর্ব-১৬+১৭

0
4605

#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ১৬
#Faria_Siddique




২৭




সকালে


আমার ঘুম ভাঙলো আমার দুই ভাই আর বিশালের ডাকে।আমি ঘুমু ঘুমু চোখে ওদের দিকে তাকালাম।আমি ঠোঁট উল্টো করে ওদের দিকে মিটমিট করে তাকালাম।আমার এইভাবে তাকানো দেখে ওরা সবাই হেসে দিল।
দাভাইঃতোকে একদম বাচ্চাদের মত লাগছে টুকু।
ভাইয়াঃলাগছে কি ওতো এখনো বাচ্চাই।
বিশাল মাঝখান দিয়ে ফোরন কেটে বলল
বিশালঃহো বিয়া দিলে কয়দিন পর বাচ্চার মা হবে।আর তোমরা এখনো ওকে বাচ্চা বলো।
আমি রেগে একটা বালিশ বিশালের দিকে ছুড়ে মারলাম।
দাভাইঃহয়েছে হয়েছে এখন তারাতারি রেডি হয়ে নিচে চলে আয়।
আমিঃআচ্ছা দাভাই।
এই বলে তারা সবাই নিচে চলে গেল।আর আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম




আমি ফ্রেশ হয়ে এসে ভার্সিটির জন্য রেডি হতে লাগলাম।
আজ আমি কালো কালারের থ্রিপিস পরেছি।চুলগুলা ছেড়ে দিয়েছি।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর কাজল।



আমি নিচে নেমে দেখি সবাই রেডি হয়ে খাবার টেবিলে বসে আছে।দাভাই আর ভাইয়া অফিসে যাবে আর আমি,বিশাল ভার্সিটিতে যাব।
আমরা সবাই নাস্তা করে বেরিয়ে পরলাম।দাভাই আর ভাইয়াও অফিসে চলে গেল।আমি আর বিশাল ভার্সিটিতে চলে গেলাম।




In varsity



আমি আর বিশাল গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই
রুশা আমাদের দিকে এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।আমি আর বিশাল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
আমিঃরুশা কি হয়েছে তুই কাদছিস কেন??
রুশাঃ……………..
বিশালঃবলবি তো কি হইছে??
রুশাঃচল আমার সাথে চল।আজকে আর ক্লাস করব না।তোদের সাথে আমার ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।
আমিঃওকে চল।




আমি,বিশাল আর রুশা বসে আছি ক্যান্টিনে।আমি রুশার দিকে রাগিভাবে তাকিয়ে আছি,বিশালও একইভাবে তাকিয়ে আছে।
কারন রুশার কাছ থেকে ভাইয়া আর রুশার ব্যাপারে সব কিছু শোনার পর রুশার উপর আমার প্রচুর রাগ হচ্ছে। আর রুশা কান্না করেই যাচ্ছে।
আমিঃদেখ রুশা আমি কিছুই করতে পারব না।
রুশাঃতুই আমার সাথে রাগ করিস না প্লিজ।আমাকে মাফ করে দে।আমি চাই নাই ফারহান কে এভাবে কস্ট দিতে।
আমিঃতুই জানিস তোর জন্য আমার ভাই কালকে প্রথম আমাদের কাছে মিথ্যা বলেছে।
আমি তোর সাথে আর কথাই বলব না।
বিশালঃএকদম ঠিক।
রুশাঃতোরা যদি এমন করিস তাহলে আমার যে আর আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় নাই।
আমি এবার নরম হয়ে গেলাম।আমি আর বিশাল রুশার কাছে গিয়ে বললাম।
আমিঃআমার ভাইক খুব জেদি রে।তুই ওকে রাগিয়েছিস তোকেই তার রাগ ভাঙাতে হবে।
বিশালঃহুম।
আমিঃআচ্ছা এখন চল পুকুরপাড় এ যাই।




তারপর আমরা তিনজনে পুকুরপাড়ে গেলাম।ওখানে গিয়ে বিশাল এমন একটা কান্ড করবে ভাবতেই পারি নাই।আমি আর রুশা তো বিশালের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।কারন এখানে আসার পর আমরা দেখলাম ভাবনা আর তার বন্ধুরা পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে।বিশাল কোন কথা না বলে গিয়ে আচমকাই ভাবনাকে কোলে তুলে নিয়ে পুকুরে ফেলে দিল।তারপর বলল
বিশালঃআমি কখনো কারোর কাছে ঋণী থাকি না।
এই বলেই বিশাল চলে আসল।আমি আর রুশাও চলে আসলাম।
ভাবনা এখনো হাবার মত তাকিয়ে আছে।কি থেকেকি হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারল না।আর যখন বুঝতে পারল তখন আমরা সেখান থেকে চলে এসেছি।ভাবনা বেচারি চিল্লাতে চিল্লাতে শেষ। আর সবাই তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।



এদিকে বিশালও হাসতে হাসতে শেষ। আমি আর রুশা সরুভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
বিশালঃবুঝ মজা আমার সাথে এসেছে লাগতে।
এই বলেই আবার হাসতে শুরু করল।
আমিঃতুই কিন্তু কাজটা একদম ঠিক করিস নাই।
রুশাঃ হুম
বিশালঃছাড় তো চল ক্লাসে যাই।




২৮





কাউকে দুর থেকে ভালবাসাই সব থেকে পবিত্র ভালবাসা | কারন, এ ভালবাসায় কোন রকম অপবিত্রতা থাকে না, কোনশারিরীক চাহিদা থাকে না ….. শুধু নীরব কিছু অভিমান থাকে, যা কখনো কেউ ভাঙায় না | কিছু অশ্রু বিন্দু থাকে যা কেউ কখনো মুছতে আসে না | আর সবার অজান্তে আড়ালে একটা পৃ যেখানে একজনই রানী/রাজা । মনের মত করে স্বপ্নের একটা ভুবন তৈরী করা যায়।




কিছু কিছু মানুষ নি:স্বার্থ ভাবে শুধু ভালবাসে যায় । মানুষের উপকার করে যায় । কিছুই আশা করে না তারা । শুধু এটুকুই চায় যে তারা যখন কষ্টে থাকে তাদের পাশে যেন সবাই থাকে । সবাই না থাকলেও তার প্রিয় মানুষটি যেন থাকে । আর তাদের যেন কেউ ভূলে না যায় । কিন্তু সে সময় যখন সে কেউ ই তার পাশে থাকে না । সে অনেক কষ্ট পায় ।কিন্তু তারপর ও সে নি:স্বার্থ ভাবে ভালবেসে যায় । হয়ত এটাই জীবন অথবা এটাই প্বথিবীর নিয়ম




এসব কথা ভাবতে ভাবতেই মেহেক দাভাইয়ের অফিসে প্রবেশ করল।
দাভাইয়ের কেবিনে নক করতেই দাভাই ডুকতে বলল
মেহেক ভেবেছিলো তাকে দেখে দাভাই রিয়েক্ট করবে।কিন্তু দাভাই নরমালই আছে।



চলবে…………..

#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ১৭
#Faria_Siddique




২৯



দাভাই স্বাভাবিক ভাবেই মেহেককে আসতে বলল।
দাভাই এমন ভাব করছে যেন মেহেককে কোনদিন দেখেই নাই।দাভাইয়ের এই স্বাভাবিকভাব যেন মেহেককে আর অস্বস্তিতে ফেলছে।
দাভাইঃতা মিস……..আপনার নাম যেন কি????
মেহেকঃমেহেক চৌধুরী।
দাভাইঃতা চৌধুরীদের হয়ে আপনিই আমার সাথে ডিলটা ফাইনাল করবেন তাই তো????
মেহেকঃহুম।
দাভাইঃওকে। তা এই ডিলটা যে আপনার কোম্পানির জন্য খুবই দরকার তা কি আপনি জানেন???
মেহেকঃহুম।
দাভাইঃগুড।আমি যদি এই ডিলটা ক্যান্সেল ও করে দেই তাতে আমার কোন ক্ষতি হবে না।
মেহেক অবাক হয়ে দাভাইয়ের দিকে তাকাল।
কিন্তু দাভাই আগের মতই বসে আছে।
মেহেকঃআপনি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন??(দাতে দাত চেপে)
দাভাইঃনা তো।আমি শুধু এটাই বলতে চেয়েছি যে এই পুরো ডিলটায় আপনাকে আমার কথা মত চলতে হবে।
মেহেক আরেকদফা অবাক হয়ে দাভাইয়ের দিকে তাকাল।
মেহেকঃআমরা এখন কাজের কথায় আসি।(দাতে দাত চেপে)
দাভাইঃউহুম আজকে আর কোন মিটিং করতে ইচ্ছা করছে না।আপনি বরং আমার জন্য এক কাপ……..না তুমি আমার ছোট হবে তাই তোমাকে আপনি করে বলবো না।যাও আমার জন্য এককাপ ব্ল্যাক কফি নিয়ে আসো।
দাভাইয়ের কথা শুনে মেহেক চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো।
মেহেকঃমগের মুল্লুক নাকি?(রাগে চিল্লিয়ে)
দাভাইঃতুমি যদি আমার কথা না শুন তাহলে আমি তোমার সাথে এই ডিলটা নিয়ে আর কোন কথা বলব না।
মেহেক কিছু না বলে রাগে লাল হয়ে কফি আনতে গেল।






মেহেক যেতেই দাভাই হাসিতে ফেটে পড়ল।
দাভাইঃমেহেক রানি তুমি কি ভেবেছো???তুমি দিন এর পর দিন আমাকে কল করে জ্বালাবে আর আমি কিছুই জানব না??আমি কি এতই বোকা??মেহেক রানি তোমার ভাবনা যেখান থেকে শেষ হয় আমার ভাবনা সেখান থেকেই শুরু হয়।তুমি যতই আমার সাথে রাগ কর না কেন আমার কাছ থেকে দূরে যেতে পারবে না।
আমাকে অনেক জ্বালিয়েছ।আর না।(বাকা হেসে)







আর এদিকে মেহেক কফি বানাচ্ছে আর আমার দাভাইকে বকা দিচ্ছে।
মেহেকঃকুত্তা,বিলাই,হনুমান,কালা বান্দর,তেলাপোকা, হাতি,জলহস্তী,গন্ডার,কালা বিলাই। আর কি কি বাকি আছে??বজ্জাত ব্যাটা আমাকে দিয়ে কফি বানানো!! দাড়াও খাওয়াচ্ছি তোমায় কফি।
এই বলেই কফির মধ্যে লবণ দিয়ে দিল।
আর মনে মনে বাকা হাসি দিয়ে কফি নিয়ে গেল দাভাইয়ের জন্য।







নক করার আগেই দাভাই আসতে বলল।মেহেক মনে মনে বাকা হাসি দিয়ে দাভাইকে কফি এগিয়ে দিল।দাভাই হাসি দিয়ে কফি নিল।তারপর মেহেকের দিকে গেল।
মেহেকঃখাও খাও আমাকে দিয়ে কফি বানানোর মজা বুঝো এবার।(মনে মনে)
দাভাই মেহেকের কাছে গিয়ে তার সামনে কফি ধরে বলল
দাভাইঃখাও।(গম্ভীরমুখে)
মেহেকঃকি!!(না বুঝে)
দাভাইঃবললাম যে কফি খেতে।
মেহেকঃআমি খাব না।
দাভাইঃতোমাকে খেতেই হবে।(রাগি ভাবে)
মেহেক আর কোন উপায় না পেয়ে চোখ মুখ কুচকে কফি মুখে দিল।
কফি মুখে দিয়েই সাথে সাথে ওয়াশরুমে চলে গেল।
আর দাভাই তো হাসতে হাসতে শেষ।




৩০



মন হল জলের নৌকা !! কখনো সুখের পাল তুলে ,, কখনো দুখের স্রোতে ভাসে ..কখনো স্রোতে চলে ভালবাসার টানে ,, কখনো থেমে যায় অজানা অভিমানে ………..!!কখনো উচ্ছল হাসিতে ঝলমলে রং ছড়ায়,,, আবার কখনো বিষাদের নিকষ আধারে হারায়….. প্রাণবন্ত প্রজাপতির মতো ফুলের বুকে মাতোয়ারা”” ভালোবাসা হারিয়ে কখনো বিমর্ষ ঘর ছাড়া।।!




ভালবাসা একটি টস্ করা পয়সার মত…… যার একদিকে থাকে প্রেম আরএকদিকে থাকে ঘৃণা; যখন কাউকে ভালবাসো তখন পয়সাটি ঘুরতে থাকে… তুমি যখন এই ঘূর্ণন থামাবে তোমার সামনে আসবে – হয় প্রেম , নয়তো ঘৃণা ♥♥.




আমার ভাইয়ার অবস্থা কিছুটা উপরের কথা গুলার মত।ভাইয়া এখন রুশাকে ভালোবাসার চেয়ে ঘৃণাটাই বেশি করে।তার একমাত্র কারন হচ্ছে রুশা মা বাবাকে নিয়ে কথা বলেছে।আমার ভাইয়া সব কিছু সহ্য করতে পারে কিন্তু মা বাবাকে নিয়ে কোন কথা সহ্য করতে পারে না।তাই ভাইয়া আর রুশাকে না ভাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।



অন্যদিকে



রুদ্র অনেক জোরে গাড়ি চালাচ্ছে।রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।কারনটা জেনে আসি চলুন।


ফ্ল্যাশব্যাক



রুদ্র আমার জন্য ভার্সিটির বাইরে অপেক্ষা করছিল।আমি আর বিশাল ক্লাস শেষে গেইট দিয়ে বের হলাম।ঠিক তখনি একটা ছেলে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।তারপর ছেলেটার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দেখলাম ছেলেটাকে।ছেলেটাকে দেখে আমার খুশি আমি ধরে রাখতে পারলাম না।তাই আবার রাহিল বলে জড়িয়ে ধরলাম।
ছেলেটার নাম রাহিল।লন্ডনে আমাদের পাশের বিল্ডিং এ থাকত।আমার থেকে ছোট হলেও দেখতে আমার থেকে বড়ই লাগে।



দূর থেকে আমাদের এসব দেখে রুদ্র রেগে গাড়িতে একটা ঘুষি মেরে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।রুদ্রকে যাওয়ার সময় আমি দেখে ফেললাম।
আমিঃরুদ্র ছিল নাকি?সর্বনাশ এখন কি হবে??রুদ্রকে বলতে সবকিছু বলতে হবে।নাহলে আল্লাহই জানে এই সাইকো কি করবে।




ফ্ল্যাশব্যাক শেষ



আমি বিশালের সাথে রাহিলকে পাঠিয়ে দিয়ে আমি রুদ্রের পিছন পিছন ছুটলাম গাড়ি নিয়ে।



চলবে…………