তোকে ছাড়া আমি শূন্য পর্ব-২০+২১

0
3987

#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ২০
#Faria_Siddique

।।

।।

।।

মেহেক দাদাভাই কে ফোন করলে দাদাভাই ফোন ধরে না।তাই মেহেক দ্বিতীয় বার ফোন লাগালো এবারও দাদাভাই ফোন কেটে দিলো। তাই মেহেক রাগ করে আর ফোন করলো না। আজ দাদাভাই দের বিয়ে নিয়ে কথা বলছিলাম তো দাদাভাই বললো তার পছন্দের কেউ আছে।দাদাভাই বিয়ের ব্যাপারে মেহেক কে জানাতে বেরিয়ে পড়ে এদিকে মেহেক ও রেগে অফিস এ যেতে থাকে।তখনই ওর এক আগের কলেজ ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয় ওর নাম ফারান এদিকে মেহেক ওর সাথে হেসে হেসে কথা বলতে থাকে।আর ওকে ওর কেবিন এ নিয়ে যায়। দাদাভাই মেহেক এর কেবিনে ঢুকে দেখে মেহেক একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে আর ওরা অনেক টা ক্লোজ তা দেখে ওর মাথায় আগুন ধরে যায়। যাই হোক ও তো মেহেক কে ভালোবাসে। মেহেক তাকিয়ে দেখে দাদাভাই দারিয়ে আছে। ও দেখেও না দেখার ভান করে।কেন না এখন ও রেগে আছে দাদাভাইয়ের ওপর। দাদাভাই তা দেখে আরো চেতে যায়।

দাদাভাই মেহেক এর দিকে চোখ পাকিয়ে বলে,”মেহেক একটু আসো তো কথা আছে?”

ফারান দাদাভাই কে দেখে না চিনে মেহেক এর দিকে তাকায় মেহেক ফারান কে বলে,”ইনি আমাদের বিজনেস পার্টনার আমার ভাইয়ের মতো”হেসে দাদাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে।

দাদাভাই এবার পারে না মেহেক কে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে।দাদাভাই বলে, “আপনি যদি একটু বাহিরে যেতেন আমি মেহেক এর সাথে কথা বলতাম।”

মেহেক দাদাভাই কে বলে,”ওর বাহিরে যাওয়ার কি দরকার? ” দাদাভাই কে জেলাস ফিল করাতে বাট এখন দাদাভাই ওকে পুড়িয়ে ফেলবে।

ফারান বলে,”নানা আমি অন্য একদিন আসবো এখন তো দেখা হতেই থাকবে মেহেক” এটা বলে চলে গেলো।

মেহেক বললো,”দেখলেন আপনার জন্য চলে গেলো ও”।

মেহেক সামনে তাকিয়ে দেখে দাদাভাই গেট লক করছে এটা দেখে মেহেক বলে, “আপনি গেট লক করছেন কেন?”

দাদাভাই মেহেক কে একটান এ ওর তার সাথে মিশিয়ে ফেলে আর বলে,”ওই ছেলেটা কে যে ওর সাথে এতো লেগে লেগে হেসে কথা বলছিলে? হুম”

মেহেক কড়া গলায় বলে, “আমার ফ্রেন্ড”
আর মনে মনে বলে,তাহলে জেলাস হয়েছে বাবু আসলে তখন মেহেক দাদাভাই কে দেখে ওর সাথে লেগে বসে কথা বলছিলো।আর কাজে দিয়েছে তা।

দাদাভাই মেহেক কে ঘুরিয়ে ওর বুকে মেহেক এর পিঠ ঠেকিয়ে বলে,”এতোই ভালো ফ্রেন্ড যে হেসে কথা বলতে হয়। নাক দিয়ে মেহেক এর ঘাড়ে স্লাইড করতে করতে.।

মেহেক কেঁপে ওঠে স্লাইড এর কারণে।দাদাভাই এবার মেহেক কে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নিজের কপাল মেহেক এর কপাল ঠেকিয়ে। বলে,”বেশি হেসে কথা বলবে না ওর সামনে”

মেহেক চোখ খুলে দাদাভাই চোখে তাকিয়ে থাকে দুজন দুজনের দিকে প্রায় অনেকক্ষন। দাদাভাই তারপর ওকে ছেড়ে বলে,”যা বললাম মনে রাখবে,মেহেরজান”বলে চলে গেল।

।।
।।
।।
।।
।।

এদিকে বিশাল আর আমি বাসায় ঢুকে দেখতে পেলাম সামিয়া কে বসে থাকতে।সামিয়া কে দেখে বিশাল রেগে ওর দিকে যেতে গেলে আমি আটকিয়ে বলি,”আমাকে দেখতে দেয়”

আমি এগিয়ে গিয়ে বলি,”আপনাকে বলেছিলাম না, আমাকে আপনার মুখ দেখাবেন না।তাহলে কেন এসেছেন?





সামিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আমি সত্যি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি বিশাল প্লিজ আমাকে ক্ষমা কর তোরা।আমি আর পারছিনা।

আমি বিশালের দিকে তাকিয়ে দেখি বিশাল একদম স্বাভাবিক যেন কিছুই হয়নি।আমি বুঝলাম ওর এই স্বাভাবিক ব্যবহারের পিছনে কোনো রহস্য রয়েছে।
আমি আর কিছু বললাম না।সামিয়া আবারও বললো,”প্লিজ ফারিয়া বোঝার চেষ্টা কর আমাকে বাসা থেকেও বের করে দিয়েছে। ” ও এখন বুঝতে পারলাম ওর এখানে আসার কারণ।






বিশাল চুপচাপ রুমে চলে গেল।আসলে বিশাল সামিয়ার মা বাবা কে সব বলে দিয়েছে। যে কিভাবে সামিয়া বিশাল কে ঠকিয়েছে আর কি কি করেছে।
পরে আমি যখন রাতে খেতে বের হলাম তখন দেখলাম
সামিয়া নেই।আমি সামিয়ার মা বাবা কে ফোন করে বুঝিয়েছি ওকে অন্তত বাসা থেকে যেন না বের করে।কারণ ও তাহলে যাবে কোথায়।তাই ওনি মেনে গিয়েছেন।তাই বোধহয় সামিয়া চলে গিয়েছে। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।





আমি ব্রিজের সামনে ওর গাড়ির ভিতরে বসে আছি।
আমাকে রুদ্র ডেকেছে এখানে। কি কারণে সেটা এখনও বলেনি।তাই আমি বসে আছি। আমার ফোনে ফোন আসার পর আমি যাই রুদ্রর গাড়ির সামনে।গিয়ে দেখি রুদ্র গাড়ির পিছনের সিটে বসা।রুদ্র আমাকেও বসতে বলে পিছনের সিটে।আমি গিয়ে বসে পড়লাম।

রুদ্র : ফারিয়া তুমি জানো তোমাকে আমি এখানে কেন ডেকেছি?

আমি: না জানি না,আপনি তো বললেন নি।

রুদ্র আর কিছু না বলে পকেট থেকে একটা লাল কাপড় বের করে আমার চোখ বেধে দেয়।আমি চমকে গিয়ে বললাম,”আরে….কি..কর..ছেন কি??”

_ চুপ থাকো একটাও কথা না বুঝেছো?

_আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন বলেন না প্লিজ!(অস্হির হয়ে)

_তোমাকে আমি আজ ফেলে দিয়ে আসো বাঘ-ভালুকের বাগানে(হাসি লুকিয়ে গম্ভীর হয়ে)

–আপনি শেষ পর্যন্ত আমার সাথে এই করলেন…(পানি চোখ থেকে পরলো ওর)

_চুপ একটা কথা বলবে তো ব্রিজের ওপর থেকে ফেলে দিবো (রেগে যাওয়ার ঢং করে)

আমি আর কিছু বললাম না চুপ করে রইলাম
কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ি থামলো রুদ্র ফারিয়া কে
ধরে নিয়ে ওকে বলে,”এখন থেকে তুমি এই বাঘ-ভালুক এর বাগানে থাকো”

বলে চলে গেল।





আমি অনেক ডাকলাম কিন্তু কোন সাড়া দিল না রুদ্র।আমি এবার কান্না করে দিলাম।কান্না করে করে রুদ্রকে ডাকতে লাগলাম কিন্তু কোন কাজ হল না।আমি কান্না করতে করতে মাটিতে বসে পরলাম।





চলবে

#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ২১
#faria_Siddique

★★

আমি কাঁদতে কাঁদতে মাটি তে বসে পরি।তারপর হঠাৎ করে দাদা ভাইয়ের গলা শুনে উঠে বসি ও তাকিয়ে দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি। তার মানে এতোক্ষণ আমি সপ্ন দেখছিলাম। বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজে কে
শান্ত করার কিন্তু চেষ্টা করলেই কি সব সময় সব সময় নিজেকে শান্ত করা যায়।আমি ঘামছি এসি ছাড়া থাকা
সত্বেও তা দেখে দাদাভাই বলে,”কিরে তুই এসি ছাড়া থাকা সত্বেও এতো ঘামছিস কেন আর তুই এতো ভয় পেয়ে আছিস কেন কোনো খারাপ সপ্ন দেখেছিস?”





দাদাভাইয়ের কথা শুনে আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম দাদাভাইকে সপ্নের ব্যাপারে বলবো নাকিা বলবো না?
দাদাভাই আবারও বলে উঠলো,”তুই কিছু বল বোন আমার নাহলে আমার চিন্তা বেড়ে চলছে কিন্তু?”এবার দাদাভাই কিছু টা অস্থির হয়ে বললো কথাটা।
আমি এই কথার মাঝেই হেঁসে উঠলাম দাদাভাইয়ের আমার প্রতি কেয়ার দেখে অবশ্য এটা নতুন কিছু না।






আমি বললাম,”দাদাভাই ওই আরকি মাকে নিয়ে সপ্ন দেখেছি তো তাই মন টা খারাপ হয়ে গিয়েছে। ”
দাদাভাইয়ের মনটাও খারাপ হয়ে গেল মায়ের কথা শুনে।তা দেখে আমি বললাম,”তুমি নিজে আমার চিন্তার কথা জিজ্ঞেস করে নিজেই চিন্তায় পড়ে গেলে?
দাদাভাই আমার মাথা তার কোলে রেখে বললো,”বোন তোর বিয়ে হয়ে গেলে তো তুই আমাদের ছেড়ে চলে যাবি। ”





এই কথা শুনে আমি বুঝলাম না হঠাৎ করেই কেঁদে দি।তা দেখে দাদাভাই ভড়কে যায়।দাদাভাই বলে উঠে,”বোন কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?”বলে নিজেই কেঁদে দিল আমরা দুজন কান্না করছিলামই তখন আরো কারোর কান্নার আওয়াজ পেয়ে দরজার দিকে তাকাই দেখি বাবা আর ভাইয়া।ওদের আমি আর দাদাভাই জিজ্ঞেস করি ,” তোমরা কান্না করছো কেন?

ওরা বলে,”তোরা কান্না করছিস কেন?”

আমি আর দাদাভাই হেঁসে উঠলাম।আমাদের দেখাদেখি ওরাও তাই করলো।





ভাইয়া আর বাবা এসে আমাদের পাশে বসলো।
আমরা তিনভাইবোন বাবার কোলে মাথা রাখলাম।
বাবা আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
বাবাঃআমার তিনটা সোনামনি যে কখন বড় হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না।(চোখ মুছে)
আর কিছুদিন পরই আমার তিন সোনামনির বিয়ে হয়ে যাবে।
আমিঃআমি বিয়ে করবো না বাবা(কান্না করে)
দাভাইঃধুর পাগলি।তুই কি আমাদের থেকে দূরে চলে যাবি নাকি।
আমি আবার কান্না করতে লাগলাম।





ঠিক তখনি বিশাল এলো। ও এসেই বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে।
বিশালঃহ আমি ত ভাইসা আইছি।(মুখ কালো করে)
আমিঃতুই কে???যা ভাগ।
বিশালঃএটা কিন্তু ঠিক না।
আমরা সবাই জোরে জোরে হেসে দিলাম।
আর বিশাল মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে।




তারপর বাপ, বেটি আর সবাই মিলে খুব মজা করলাম।

______________

~সকালবেলা~





সকাল সকাল উঠে আমি আজ ভার্সিটি তে চলে গেলাম
ক্লাস শেষে আমি বিশাল এর সাথে কথা বলছিলামই তখন দেখি রুদ্র গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আর সব লুচ্চি মেয়ে গুলো ওর কে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে যা দেখে আমি রীতি মতো রেগেমেগে ওর দিকে
এগিয়ে যাওয়ার জন্য হাটঁতে লাগলাম আর পা বেজে পড়ে গেলাম কিভাবে যেন।আর যখন ওঠার চেষ্টা করলাম বুঝতে পারলাম আমার পা মচকে গেছে।তাই
আমি কান্না করে দিলাম।তা দেখে রুদ্র তারাতাড়ি করে আমার কাছে এগিয়ে এসে বললো,”কি হয়েছে কান্না করছো কেন? ”





আমি-আমার পা মচকে গেছে। বলে আবারো কেঁদে দিলাম।আমাকে অবাক করে রুদ্র সবার সামনে আমাকে আর কিছু না বলে কোলে তুলে নিলো।আমি দেখলাম সবাই আমাদেরকেই দেখছে তাই লজ্জা পেলাম।কিন্তু দেখালম লুচ্চি মেয়ে গুলো যারা রুদ্র দিকে তাকিয়ে ছিল তারা রাগে জ্বলে যাচ্ছে তাতে আমার কি আমার হবু বর তোদের কোলে নিবে নাকি।





রুদ্র আমাকে কোলে করে নিয়েই গাড়ির ড্রাইভিং সিটে
বসে পড়লো।তারপর পা গুলো পাশের সিটে দিয়ে আমার মাথা ওর বুকে রাখলো।এরপর বললো,”তুমি
তখন ওইভাবে দৌড়িয়ে আসছিলে কেন?তাও কোথাও না দেখে আরো বড় কিছু হতো যদি?”
আমি- তাহলে আরকি তোমার আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতো আর খেয়াল রাখতে হতো বেশি বেশি।
রুদ্র-আর আমাদের বিয়ের কি হতো?হুম
আমি- হসপিটালে বিয়ে করতাম হাও ইন্টারেস্টিং
রুদ্র-ইন্টারেস্টিং হ্যা না হাও ইন্টারেস্টিং। বলে আমাকে কাতুকুতু দিতে লাগলো আর আমিও হাসতে লাগলাম।
তারপর আর শয্য না করতে পেরে আমি বললাম,”ব্যস রুদ্র আর না। “বলে বড় বড় নিশ্বাস নিতে লাগলাম





রুদ্র গাড়ির পিছনের সিট থেকে কি যেন একটা ব্যাগ
এনে আমার হাতে দিল।আর বললো-
রুদ্র-শোনো এই পাকেটে একটা কালো শাড়ি আছে ওইটা পড়ে সন্ধার দিকে চলে আসবে।আমি ওয়েট করবো।
আমি-ওকে।
তারপর রুদ্র আমাকে ড্রপ করে দিয়ে চলে যায় আর আমিও রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দি।

_____________

রুশা আর ভাইয়া দাড়িয়ে আছে।কেউ কোন কথা বলছে না।
নিরবতা ভেঙে ভাইয়া বলে উঠল।
ভাইয়াঃআমাকে কি কারনে এখানে ডেডেকেছ?
রুশাঃআমার কিছু কথা ছিল।
ভাইয়াঃতারাতারি বল আমাকে যেতে হবে।
রুশা কিছু না বলে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।
ভাইয়াঃআরে আরে কি করছ ছাড়।
রুশাঃপ্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।প্লিজ।
ভাইয়াঃতুমি আমাকে ছাড়।
এই বলেই ভাইয়া রুশাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল।
ভাইয়াঃতোমাকে মাফ করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
এই বলেই ভাইয়া চলে আসল।কিছুকদম যাওয়ার পরই রুশার চিৎকার শুনতে পেল।



চলবে