তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি ২ পর্ব-০৮

0
726

#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_০৮
#Anika_Fahmida

বেশ কিছুদিন হয়ে গেল আদ্রের সাথে অনুর আর কোনো যোগাযোগ নেই। অনু এই ভেবে অবাক হলো যে আদ্র অনুকে আর কোনো ফোনও দিল না। অনু এতে প্রথমে অবাক হলেও পড়ে নিজেকে মনে মনে বুঝালো,

–আদ্র ভাইয়ার সাথে আমার দেখা হলেও কি আর না হলেও কি? কথা বললেও কি আর না বললেও কি? আমার কি তাতে? আমার কিছু আসে যায় না। আমি তো বরং বেঁচে গেছি। আর কোনো ঝামেলা নেই। আমাকে আর কেউ জ্বালাবে না।

আজ অনু ভার্সিটি যায় নি। বিছানায় শুয়ে ছিল অনু। মনটাও কেন যেন অনুর ভালো নেই। সবকিছু বিরক্ত লাগছে। এমন সময় অনুর ফোন বেজে উঠল। অনু ফোনটা হাতে নিয়ে আঁতকে উঠল। অনু ভয় পেয়ে কাঁপা স্বরে মনে মনে বলল,

–কয়েকদিন তো ভালোই ছিলাম। এতোদিন পর আবার আদ্র ভাইয়া কেন আমাকে ফোন দিল? ধুর ভালো লাগে না। এখন ফোন না ধরলে না জানি কি করে!

অনু ফোনটা রিসিভ করে ভয় পাওয়া স্বরে বলল,

–হ্যালো আদ্র ভাইয়া।

আদ্র অনেকদিন পর অনুর কন্ঠস্বরটা শুনলো। আদ্রের মনের ভিতর একটা আলাদা শান্তি অনুভব হলো। আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে জিজ্ঞেস করল,

–কেমন আছো অনু?

অনু আদ্রকে জবাব দিল,

–আমি ভালো আছি।

তারপর অনু চুপ করে রইল। অনু আর কোনো কথা বলছে না। তাই আদ্র অনুকে বলল,

–অনু আমাকে একটাবার জিজ্ঞেসও করলে না আমি কেমন আছি? একটুও জানতে তোমার মন চাইলো না?

অনু আদ্রের কথা শুনে হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল। কেন এমন মনটা কেঁপে উঠল অনুর অজানা। অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,

–আপনি কেমন আছেন আদ্র ভাইয়া?

আদ্র এবার অনুর কথায় শব্দ করেই হেসে ফেললো। খুশিতে আদ্র হাসে নি। কষ্ট পেয়েই আদ্র হেসেছে।শুধু এটা ভেবেই আদ্রের মনটা কষ্ট পাচ্ছে যে অনু একবারও জানতে চাইলো না আদ্র কেমন আছে। অনু অবাক হয়ে আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

–হাসছেন কেন?

আদ্র হাসতে হাসতে বলল,

–এমনি। আমি ভালো আছি। তোমাকে আমি সারপ্রাইজ দিবো বলেছিলাম তাই না অনু? আজকে তুমি সেই সারপ্রাইজটা পাবে।

আদ্রের কথা শুনে অনুর গলাটা শুকিয়ে আসছে। অনু শুকনো ঢুক গিলে আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

–সারপ্রাইজটা কখন দিবেন আদ্র ভাইয়া?

আদ্র হেসে অনুকে বলল,

–একটু পর তুমি এমনিতেই সারপ্রাইজটা পেয়ে অবাক হয়ে যাবে অনু। আমার তোমার সেই অবাক হওয়া মুখটা ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু না। আমি নিজের ইচ্ছেটা নিজের মনেই রেখে দিলাম। আমি ফোন রাখলাম। বাই অনু।

আদ্র ফোনটা কেটে দিল। অনু কিছুই বুঝতে পারছে না। কি এমন সারপ্রাইজ যে অনু অনেক অবাক হবে?

দুপুরবেলা ড্রইংরুমের সোফায় বসে অনু চিপস খাচ্ছিল এবং মোবাইলে গান শুনছিল। অনুর গান শুনতে ভীষণ ভালো লাগে। এমন সময় বাইরে থেকে বাসায় আসলো আরমান রহমান। সকাল বেলা আরমান রহমান বাসা থেকে বের হয়েছিলেন আর এখন বাসায় আসলেন। অনুর বাবা আরমান রহমান ড্রইংরুমে এসে অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,

–অনু তোকে আমার একটা কথা বলার ছিল। কথাটা তোকে রাখতে হবে মা।

অনু আরমান রহমানকে জিজ্ঞেস করলো,

–কি কথা আব্বু?

আরমান রহমান বেশ ঘাবড়ে গিয়ে অনুকে বলল,

–আগে আমাকে কথা দে তুই আমার কথা রাখবি? আমার কথাটা শুনে তুই কিন্তু না করতে পারবি না?

অনু চিপস খেতেই খেতেই আরমান রহমানকে বলল,

–ঠিক আছে আব্বু কথা দিলাম তোমার কথা আমি রাখবো। এবার তো বলো কি কথা?

আরমান রহমান অনুকে বলল,

–আমার বন্ধু আনোয়ারের ছেলে আদ্রকে তোর বিয়ে করতে হবে। আজকে বিকেলেই আদ্রের বাসাতে গিয়েই তোর আদ্রের সাথে এনগেজমেন্ট হবে। সেখানে অনেক মানুষ উপস্থিত থাকবে। তুই কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিস মা। তুই আমাকে না করতে পারবি না।

আরমান রহমানের কথা শুনে অনুর হাতের চিপসের প্যাকেটটা মাটিতে পড়ে গেল। অনু সোফায় বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রেগে গিয়ে আরমান রহমানকে বলল,

–কখনোই না আব্বু। আমি ঐ আদ্র ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারবো না। কিছুতেই পারবো না। আদ্র ভাইয়ার সাথে আমার এনগেজমেন্টও হবে না।

আরমান রহমান শান্ত স্বরে অনুকে বলল,

–আমি আমার বন্ধুকে কথা দিয়ে ফেলেছি মা। আনোয়ার নিজে আমাকে বলেছে যে আদ্র তোকে খুব পছন্দ করে এবং আদ্র তোকে বিয়ে করতে চায়। আনোয়ার আমাকে আজ সকালে তাদের বাসায় ডেকে নিয়ে আদ্রের সাথে তোর বিয়ে দিতে রাজি হতে এতো জোর করছিল যে আমিও আর আমার বন্ধুকে না করতে পারলাম না।

অনু মন খারাপ করে আরমান রহমানকে বলল,

–আমার মতামত জানার একটুও প্রয়োজন মনে করলে না আব্বু? তুমি আমাকে ভালোই বাসো না। আমি বুঝতে পেরেছি আব্বু। এজন্যই তুমি ঐ রাগী, গুন্ডা আদ্র ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইছো।

আরমান রহমান অনুকে বলল,

–আদ্র খুব ভালো ছেলে মা। তুই আদ্রকে ভুল বুঝছিস।

অনু হতাশ স্বরে আরমান রহমানকে বলল,

–না আব্বু। আদ্র ভাইয়া ভালো ছেলে না। আদ্র ভাইয়া সিগারেট খায়, অনেক রাগী, আমাকে দুইদিন প্রচুর জ্বালিয়েছিল। কিছুদিন জ্বালায় নি বলে আমি একটু শান্তিতে ছিলাম। আদ্র ভাইয়া এবার আমার জীবনটাকে তছনছ করার জন্য আমাকে বিয়ে করতে চাইছে। তুমি বুঝতে পারছো না আব্বু।

আরমান রহমান গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

–আজকালকার ছেলেরা একটু সিগারেট খায়। এতে আদ্রকে খারাপ বলার কি আছে? আদ্র তোকে পছন্দ করে বলেই তোর সাথে হয়তো গল্প করতে চেয়েছে। এটাকে জ্বালাতন বলে না অনু মা। আদ্র তোকে ভালো রাখবে আমার বিশ্বাস। আর আদ্র তো অনেক বড়লোক। এতো বড়লোক বাড়িতে তোর বিয়ে হবে এটা তো তোর সৌভাগ্য মা।

অনু তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে আরমান রহমানকে বলল,

–আদ্র ভাইয়া বড়লোক বলে তার সাথে বিয়ে হলে আমার সৌভাগ্য হয়ে যাবে আব্বু ? কেন আব্বু আমরা মধ্যবিত্ত বলে কি আমাদের কোনো দাম নেই? আমাদের কি কোনো ইচ্ছে অনিচ্ছে থাকতে পারে না? আমি আদ্র ভাইয়াকে বিয়ে করতে চাই না আব্বু।

আরমান রহমান এবার রেগে গিয়ে বলল,

–অনু তুই আমাকে কথা দিয়েছিস যে আমার কথা রাখবি। কথা দিয়ে কথা রাখতে হয়। তোকে আদ্রকেই বিয়ে করতে হবে।

অনুর মা আমেনা বেগমও এসে অনুকে বলল,

–তোর বাবা ঠিক বলেছে অনু। আদ্র খুব ভালো ছেলে। কত সুন্দর করে আমাদের সাথে কথা বলে। আর তুই কিনা আদ্রকে বিয়ে করতে চাস না? তোর বাবার কথা শুন অনু। তুই তোর বাবাকে কথা দিয়েছিস।

অনু এবার কাঁদতে কাঁদতে বলল,

–আম্মু তুমিও আব্বুর মতো কথা বলছো?

আমেনা বেগম অনুকে বলল,

–আমরা তোর ভালোর জন্যই কথাগুলো বলছি।

অনু সোফায় বসে অনেকক্ষণ কাঁদতে লাগলো। অনুর নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। আদ্র অনুকে এমন সারপ্রাইজ দিবে অনু জীবনেও ভাবে নি। শেষে কিনা আদ্র অনুকে বিয়ের করার জন্য অনুর মা-বাবাকেও রাজি করিয়ে ফেললো! অনুর কাঁদতে কাঁদতেই মাথায় বুদ্ধি আসলো। অনুর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অনু আরমান রহমানকে বলল,

–আব্বু আমি আদ্র ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি।

আরমান রহমান খুশি হয়ে অনুকে বলল,

–তুই রাজি হয়েছিস মা! আমি জানতাম আমার মেয়ে আমার মুখের উপর কোনো কথায় না বলবে না। আজ বিকালেই আদ্রের বাসায় তোর আর আদ্রের এনগেজমেন্ট হবে।

একটু পরেই অনুর ফোনে আবারও আদ্রের কল আসলো। অনু ফোন রিসিভ করতেই আদ্র বলল,

–সারপ্রাইজটা পেয়েছো অনু?

অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,

–হুম সারপ্রাইজটা পেয়েছি আদ্র ভাইয়া। আমি খুব অবাক হয়েছি। ভীষণ অবাক হয়েছি।

আদ্র অনুকে বলল,

–আজ বিকালে আমাদের এনগেজমেন্ট হবে। তাড়াতাড়ি চলে এসো কিন্তু। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো অনু।

আদ্রের কথা শুনে অনুর মুখে রহস্যময়ী হাসি ফুটে উঠল। অনু আদ্রকে বলল,

–ঠিক আছে আদ্র ভাইয়া আমি আসবো।

#চলবে…