তোমাতেই সীমাবদ্ধ পর্ব-০২

0
1224

#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part:2
#Mishmi_muntaha_moon

ভয়ে হাত পা কাপছে।রুমের দরজা অফ করে বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিলাম।আরিশ ভাইয়াকে হঠাৎ পিছে দেখে তাও আবার এতো রাগী ভাবে বুক টাই কেপে উঠেছিলো।আমি গিয়ে খাটে বসলাম

–উফফ আর কখনো উনার রুমেই যাবো না।আমি যা দুর্বল হার্টের আরেকটু হলেই হার্ট এট্যাক করতাম।

বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গেলাম আবারও আরিশ ভাইয়ার রুমের বারান্দায় চিরকুট টার খোজে তাকাতেই দেখি আরিশ ভাইয়া ফোনে কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।

–উনাকে হাসিতে কতো সুন্দর লাগছে।

আমি সামনে তাকালাম।আন্টিরা ৫ তলায় থাকে।বিল্ডিঙের ডানে বামে সামনে অনেক গুলো বিল্ডিং আছে কিন্ত পিছের দিকে খোলা মাঠ।আমাকে দেওয়া থাকার রুমটার বারান্দা টা পিছন দিকেই অনেক বেশি বাতাস আসে।
হঠাৎ কালকের ঘটনা মনে আসে।নাহিদ ভাইয়া আমার ক্রাশ ছিলো আর এই টাই আমার অকর্মণ্য ফ্রেন্ড দের বলায় সোজা প্রপোজ করার এডবাইস দেয়।আর আমিও বোকার মতো কিছু না ভেবেই প্রেম পএ আই মিন চিরকুট রেখে আসি।
কিন্তু আমার প্রথম দিক দিয়ে খারাপ লাগলেও এখন বেশি ছ্যাঁকা ছ্যাঁকা ফিলিং হচ্ছে না।যাক ভালোই হয়েছে চিরকুট টা হাড়িয়ে গেছে।
নিচ থেকে আন্টির ডাকার আওয়াজ পেয়ে এতো এতো ভাবনা চিন্তা সাইডে রেখে দরজা খুলে নিচে গেলাম।রান্নাঘরে আন্টি বিরিয়ানি রান্না করছে মাই ফেভারিট।আন্টি বলেছিলো আরিশ ভাইয়ার ও বিরিয়ানি ফেবারিট হয়তো তাই রান্না করছে।
আন্টি আমাকে দেখে খুন্তি সাইডে রেখে আমার কাছে এসে অনুরোধের সুরে বলল

–জিনাত মা একটু আরিশের রুমে গিয়ে দেখ তো কেনো ডাকছে।আমি বললাম আমাকে বলতে কিন্তু ওর তোকে দিয়েই নাকি কি কাজ আছে।একটু গিয়ে দেখে আয় না।

আরিশ ভাইয়ার রুমে যাবার কথা শুনে গলা শুকিয়ে গেলো। উফ একটু আগে প্রতিজ্ঞা নিলাম আরিশ ভাইয়ার রুমে যাবো না কিন্তু সেই প্রতিজ্ঞা একদিনও টিকবে না সেইটা ভাবি নি।কি করার আর।আমি মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে বললাম

–জ্বী আন্টি যাচ্ছি।

আস্তে আস্তে হেটে আরিশ ভাইয়ার রুমের দিকে যাচ্ছি আর একটু এগুলেই ভাইয়ার রুমের কাছে এসে পরবো কিন্তু পা চলছে না।
উনার রুমের বারান্দায় লুকিয়ে চিরকুট নিচ্ছিলাম সেইটার শাস্তি দিতেই ডেকেছে হয়তো যা রেগে গিয়েছিলো। সব ভাবনা ভুলে সামনে তাকাতেই দেখি আরিশ ভাইয়ার রুম পেরিয়ে আরো সামনে এসে পরেছি। মাথায় একটা চাটি মেরে আবার পিছনের দিকে তাকিয়ে ভাইয়ার রুমের সামনে দারালাম।নক দিতেই দরজা খুলে গেলো। ভিতরে ঢুকে দেখি কেউই নেই।আরিশ ভাইয়াকে না পেয়ে এদিক সেদিক তাকাতেই দেখি শাওয়ার নিয়ে বের হচ্ছে। আমাকে দেখে শার্টের বাকি বোতাম গুলো লাগিয়ে আমার সামনে দারালো।চুল গুলো ভেজা থাকায় কপালের চুল গুলো থেকে পানি পরছে।কি ড্যাশিং লাগছে হায়!!! উনাকে দেখে আমি মৃদু কন্ঠে বললাম

–ডেকেছিলেন ভাইয়া?

আরিশ ভাইয়া শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল

–আমার পুরো রুমটা গুছা।

উনার কথা শুনে ভ্রু কুচকে পুরো রুম পর্যবেক্ষন করলাম।একদম সাজানো গুছানো।তাহলে আমাকে কি ঠিক করবো আজব তো!আমি আরিশ ভাইয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম

–আপনার রুমটাতো আগে থেকেই গুছানো তাহলে আমাকে কেনো গুছাতে বলছেন?

আমার কথা শুনে আরিশ ভাইয়া আমার দিকে একপলক তাকিয়ে বিছানা, কাবার্ড,টেবিল সব অগোছালো করে ফেললো। উনার কার্যকালাপ দেখে আমার মুখ হা হয়ে গেলো। কি করছেটা কি উনি!আমি অবাক হয়ে বললাম

–করছেন টা কি!সব অগোছালো করছেন কেনো?

আরিশ ভাইয়া আমার কথার জবাব না দিয়ে সব অগোছালো করে টেবিল থেকে ঘড়ি হাতে পরে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল

–এখন আর গোছানো না।সো তারাতারি গুছা।বুক সেল্ফ গুছানোই আছে ওইটা টাচ করার দরকার নেই।

আরিশ ভাইয়া উনার কথা শেষ করে বাহিরে চলে গেলো। আমি স্থব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।কি হলো কিছুই মাথায় ঢুকলো না।

–আজব তো!আমার সাথে উনার কি শত্রুতা আছে যে এমন করলো? আর সব যেহেতু অগোছালো করেছে এই বুক সেল্ফ কেনো আস্তা রেখেছে যত্তসব।

আমি কিছুক্ষন শকড হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে কাজে লেগে পরলাম কি আর করার। বেড়াতে এসে এরকম কাজ করতে হচ্ছে এইটা কোনো কথা হলো। অনেক দুঃখ দুঃখ ফিল হচ্ছে।


সব কাজ শেষ করে নিচে গেলাম।কাজ করতে করতে মাথাটাই নষ্ট হয়ে গেলো আমি বাসায়ও এতো কাজ করি না। ধীর পায়ে হেটে লিভিং রুমের সোফায় বসলাম আন্টি টিভি দেখছে।আমাকে উনার পাশে বসতে দেখে বলল

–কিরে আরিশ কেনো ডেকেছিলো? এতোক্ষন কি করছিলি?আরিশ কে জিজ্ঞাস করলাম কিচ্ছুই বলল না সোজা বাহিরে চলে গেলো।

আন্টির কথা শুনে মনখারাপ করে বললাম

–তোমার ছেলে আমাকে দিয়ে কাজ করিয়েছে।

আমার কথা শুনে আন্টি টিভির সাউন্ড কমিয়ে বলল

–কিসের কাজ করিয়েছে?

কিছু না ভেবেই আরিশ ভাইয়ার করা সব কাজ আন্টিকে বলে দিলাম। আন্টি শুনে রেগে বলল

–ছেলেটা তোকে দিয়ে কাজ করালো। দারা এসে নেক। তুই মনখারাপ করিস না।আমি নুডুলস বানিয়ে নিয়ে আসছি।

আন্টি রান্নাঘরে যেতেই আমি কিছুক্ষন শোক পালন করে টিভি অন করে কার্টুন ছারলাম”নিনজা হাতোরি”খুবই ভালো লাগে দেখতে।কার্টুনে মন যেতেই এতোসব কাজ আর আরিশ ভাইয়ার কথা ভুলেই গেলাম।
কিছুক্ষন পর আন্টি নুডুলস বানিয়ে আমাকে দিলেন। আমিও মজা করে খেতে লাগলাম।

টিভি দেখে আর স্নেক্স খেয়ে রাত পর্যন্ত ভালোই সময় কাটলো।কিন্তু আরিশ ভাইয়া বাড়িতে আসার পর থেকেই আবার জ্বালাচ্ছে বুঝলাম না কিন্তু প্রথম দেখার পর তো এমন করে নি দেখেও মনে হচ্ছিলো একটু গম্ভীর টাইপের অন্য সবার সাথেই তো বেশি কথাও বলে না আর বললেও ভালো ভাবেই বলে কিন্তু আমার সাথে এমন করে কেন আজব।
আরিশ ভাইয়া বাড়িতে এসেই আমার থেকে রিমোট নিয়ে নিলো। রিমোট নিয়ে চ্যানেল পাল্টাতে লাগে।আমি রেগে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম

–আপনি তো কিছু দেখবেন বলে মনে হচ্ছে না তাহলে আমাকে কেনো দেখতে দিচ্ছেন না।

আরিশ ভাইয়া টিভি টা অফ করে দিয়ে চুলে আঙুল চালাতে চালাতে বলল

–আমার মাথা ব্যাথা করছে মাথা টা টিপে দে তো।

আমি কিছু বলতে নিবো তখনই আন্টি আরিশ ভাইয়াকে উনার রুমে ডাকলেন।আরিশ ভাইয়া আমাকে একটু পর উনার রুমে যেতে বলে আন্টির রুমে চলে গেলো।
আরিশ ভাইয়া যেতেই আমি মনখারাপ রুমে চলে গেলাম।রুমে গিয়ে লাইট জ্বালাতে নিয়েও বারান্দা থেকে চাঁদের আলো দেখে লাইট না জ্বালিয়ে বারান্দায় গেলাম খুব ভালো লাগছে। আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে নিজ মনে বিরবির করতে লাগলাম

–আর কখনো আসবো না আন্টিদের বাড়ি।আর কাল কেই চলে যাবো আমাদের বাসায়।আরিশ ভাইয়াকে কি করেছি আমি যে আমার সাথে এমন করছে,,,,

অনেক ক্ষন বারান্দায় সময় কাটিয়ে রুমে গিয়ে লাইট জ্বালালাম সন্ধ্যা পর্যন্ত এতো কিছু খেয়ে পেটে জায়গাই নেই।এখন আর খাবো না ভাবছি।বেডের দিকে যেতে নিতেই ঘড়ির দিকে চোখ গেলো ৯ টার কাছাকাছি বাজে।ঘড়ি দেখে আরিশ ভাইয়ার কথা মনে হলো ভাইয়া উনার রুমে যেতে বলেছিলো আমি তো এখনও গেলাম না।
আর কিছু না ভেবে আরিশ ভাইয়ার রুমের দিকে ছুট দিলাম। দরজা খুলে রুমে গিয়ে দেখি টেবিলের পাশের লেম্প জ্বালিয়ে কপালে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।আহ কি শান্ত শিষ্ট লাগছে। মুগ্ধ চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পা টিপে টিপে আরিশ ভাইয়ার কাছে গিয়ে দারালাম।প্রথম উনাকে দেখেই ক্রাশ খেয়েছিলাম কিন্তু ভাই বলে নিজেকে সামলিয়েছি।আর এরকম সুন্দর ছেলে দের প্রেমে পরলেও ছ্যাঁকা খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই আগে থেকেই দূরে থাকা ভালো। আরিশ ভাইয়াকে প্রথম দেখেই উনার চুল গুলো ধরার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো।

আমি কিছু না ভেবে আস্তে করে উনার চুলে হাত দিলাম আহা,,কি সফট।চুলে হাত দিয়ে স্লাইড করতে নিবো তখনই আরিশ ভাইয়া কপাল থেকে হাত সরিয়ে ঘনপল্লব খুলে আমার দিকে তাকালো।

চলবে,,,