তোমাতেই সীমাবদ্ধ পর্ব-০৮

0
889

#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part :8
#Mishmi_muntaha_moon

মাথা নিচু করে কান্না করছি।ভুলেও মাথা উচু করছি না।আর আম্মু আমার সামনে দাঁড়িয়ে নন্সটপ বকে যাচ্ছে।আমি যখন আন্টিদের বাসায় ছিলাম তখন আম্মু আমার টেবিল থেকে একটা লেটার পেয়েছে যেটা আমার ফ্রেন্ড রা প্রাংক করে আমার ব্যাগে রেখেছিলো সেইটা আম্মু আমার পড়ার টেবিল পরিষ্কার করতে গিয়ে পেয়েছে।
আর আপুর কাছে সেই চিঠির কথা শুনে কানফর্ম হয়েছে আমি প্রেম টেম করে বেরাচ্ছি তাই আজ আমাকে এই থাপ্পর খেতে হলো তাও আবার আরিশ ভাই এর সামনে।

আম্মু আমাকে বকে রুম থেকে চলে গেলো আরিশ ভাইয়া ও আম্মুর পিছে পিছে গেলো। আমি কিছুক্ষন এভাবেই বসে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে ফিরে এলাম।আপু কিছুক্ষন আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আরিশ ভাইয়া আসায় চলে যায়।আমার দৃষ্টি বাহিরের দিকে। এতো বাতাস,ভাজ হওয়ার পরে সব মেঘ উড়ে চলে গেছে এখন আকাশ পুরো পরিষ্কার,নিঃস্তব্ধ পরিবেশ।কেউ মাথায় হাত রাখায় ফুলেফেপে ওঠা চোখ নিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাই।আরিশ ভাইয়া আমার চোখের পানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলাম আমার একটা বদঅভ্যাস আছে কান্না একটু থামার পর যদি কেউ আদুরে গলায় কিছু বলে অথবা সিমপাথি দেখায় তাহলে সব কান্না উপচে পড়ে।আমি চলে যেতে নিতেই আরিশ ভাইয়া হাত চেপে ধরে। হাতে টান পেয়ে টলমল চোখে ভাইয়ার দিকে তাকাই।উনি আমাকে একদম উনার কাছে দার করিয়ে মাথাটা বুকে চেপে ধরে।আমিও একদম চুপটি মেরে রইলাম ঠোঁট জোড়া কামড়ে কান্না থামানোর অযথা চেষ্টা করলাম।কিছুক্ষন পর আমি উনার বুক থেকে মাথা তুলে দূরে গিয়ে দারাতেই উনি বলে

–আজ পরাবো না।অনেক লেট হয়ে গেছে।আমি চললাম তুই রেস্ট নে।

কথা শেষ করে উনি চলে গেলেন।উনি চলে যাওয়ার পর আমিও কিছুটা শান্ত হলাম।রাতে আর খেতে গেলাম না।ঘুমিয়ে পরলাম।আব্বু আপু ডাক দেয়ার পরও ঘাপটি মেরে ঘুমিয়ে রইলাম।
সকাল হতেই খেয়ে আপুর কাছে যাই ওই নাহিদ ভাইয়াকে দেওয়া চিঠিটা উনার কাছে কি করে এলো তা জানতে তো হবে।আপু ছাদে ছিলো।আমি যেতেই আমার দিকে তাকালো।
আমি কোনো ভনিতা না করে আপুকে সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করলাম

–আপু কালকে তুই কোন চিঠির কথা বলছিলি?

আপু আমার কথায় ব্রু চুলকে বলল

–আমি আন্টিদের বাসা থেকে আসার সময় অদ্রি আর রাত্রি দিয়েছিলো চিঠিটা।

আপুর কথা শুনে চিন্তিত ভঙিতে বললাম

–ওরা পেলো কোথায়?

–এইটা তো জিজ্ঞেস করি নি।

আপুর কথায় বিরক্ত হয়ে বললাম

–তুই আসলেই একটা গাধী।

রেগে ছাদ থেকে নেমে পরলাম।একটা চিঠি পেয়ে আর কোনো দিকে খেয়াল নেই কোথা থেকে পেলো ওকে কেনো দিলো কোনো কিছুর খবর নেই।

আরিশ ভাইয়াদের বাসায় যাওয়ার সুযোগ খুজছি।কিন্তু এখন কীভাবে যাবো নাহিদ ভাইয়াও বাসায়। কিছুক্ষন আগে উনিও আমাকে বিভিন্ন কথা বলে গেলো।চিঠিটা ছিলো উনার নামে কিন্তু এখন উনিই আমাকে বুঝাচ্ছে।
ওই চিঠিতে নাহিদ ভাইয়ার নাম উল্লেখ করা ছিলো না বলে নাহলে আজ আরও উথাল-পাতাল হতো।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাহিরে উকি দিলাম আম্মুর মুখটা অনেক খুশি খুশি লাগছে।নাহিদ ভাইয়াও চলে গেছে।
আপু আমাকে এভাবে উঁকি দিয়ে থাকতে দেখে হাত টেনে খাটে বসালো।তারপর খুশি হয়ে বলল

–নাহিদের আব্বু আম্মুরা পরের সপ্তাহেই আমাদের বিয়ের ডেট ফেলতে চাচ্ছে।

আপুর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম

–কেনো উনারা না 1 বছর পর বিয়ের কথা বলেছিলো?

–কিন্তু এখন কোনো কারণে উনারা পরের সপ্তাহেই করতে চায়।এখন উনারা কেনো বলল ওইটা জানা আমদের দরকার নেই। আম্মু আব্বু শুনেই রাজি হয়ে গেছে।

আপুর মুখের চমক দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতো খুশি আপু।আমি উঠে ব্যাগ কাধে নিয়ে আম্মুর রুমে গেলাম।

–আম্মু আমি একটু আন্টিদের বাড়িতে যাবো।

আম্মু আমার দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে আবার নিজের কাজ করতে লাগলো।
আমি নিশ্চুপ হয়ে আস্তে করে বেড়িয়ে গেলাম আরিশ ভাইয়াদের বাড়ির পথে।

আন্টিদের বাসায় গিয়ে দেখি কাপড়ের ব্যাগ হাতে আন্টির ননদরা দাঁড়িয়ে আছে চলে যাবে বলে বিদায় নিচ্ছে।আমাকে দেখে আন্টির ননদ ভালোই খুশি হলো। উনার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে আমাকে উনার ভীষণ রকম পছন্দ হয়েছে।আমিও হাসি মুখে কথা বললাম কোনো এক দিন যেনো আমাদের বাসায় যায় তার জন্যও দাওয়াত দিলাম।
আংকেল কোনো কারণে বাহিরে যাওয়ায় উনারা অপেক্ষা করছেন আংকেল বাড়িতে ফিরলেই দেখা করে চলে যাবে। আমি এক সাইডে দারাতেই রাত্রি আর অদ্রি আমার কাছে এসে দারালো।আমিও সুযোগ পেয়ে গেলাম ওদের সাথে কথা বলার।

–রাত্রি আর অদ্রি তোমাদের দুজনের সাথে কিছু কথা ছিলো।

আমার কথা শুনে ওরা একে ওপরের দিকে তাকিয়ে আমাকে নিয়ে ওরা এতোদিন যেই রুমে থেকেছে সেই রুমে নিয়ে গেলো।
তারপর অদ্রি বলল

–হুম বলো তাহলে কি বলবে।

আমি মনে মনে সব কথা সাজিয়ে ওদের দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে বললাম

–তোমরা আপুকে যেই চিঠি দিয়েছো সেইটা কোথা থেকে পেয়েছো?

রাত্রি কিছুটা চটচটে হয়ে বলল

–যাকে চিঠিটা দিয়েছো তার রুমেই তো পাবো।

ওদের কথা শুনে একটু ঘাবড়ে গেলাম যাকে দিয়েছি মানে ওরা কি যেনে গেলো চিঠি টা আমি আসলে কার জন্য লিখেছিলাম!আমি ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে বললাম

–মানে!আমি কার জন্য লিখেছিলাম চিঠি আর তুমি উনার রুমে পেয়েছো কি করে?

আমার কথা শুনে রাত্রি রেগে বলল।

–বোকা ভেবেছো আমাদের।তোমার আর আরিশ ভাইয়ার মাঝে কি চলছে আমরা কি জানি না নাকি?

রাত্রি কোথায় ভ্রু কুচকে গেলো

–আরিশ ভাইয়া আর আমার মাঝে!কি আবোলতাবোল বলছো।উনি আমার ভাই হয়।

–ভাই বলে পিঠ পিছে প্রেম করে বেরাচ্ছো তাই না?

অদ্রির কথায় আমার অবাক উচ্চতর থেকে উচ্চ হলো।আমি ভ্রু কুচকে বললাম

–আজব তো কি উল্টো পালটা কথা বলছো তোমরা।কে বলেছে এই বিশ্রী কথাগুলো?

–তোমার ওই চিঠিটা আমরা আরিশ ভাইয়ার ঘরেই পেয়েছিলাম আর তাই নয় তোমাকে নিয়ে উনার ভালোবাসার কথাসমুহও পরেছি আমরা।এখন আমাদের কাছে লুকিয়ে কোনো লাভ নেই।আরিশ ভাইয়া যে তোমাকে ভালোবাসে সেইটা একদম স্পষ্ট বুঝলে।

আমি স্থব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি কি বলছে না বলছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না।আরিশ ভাইয়া ভালোবাসে তাও আবার আমায় অসম্ভব।

আমি দাঁড়িয়ে থাকার মাঝেই রাত্রি আম্মির ডাক পরতেই ওরা চলে গেলো।আমিও ধীর পায়ে হেটে নিচে গেলাম। উনারা চলে যাবে তখনই আরিশ ভাইয়ার আগমন ঘটলো।চকলেট রঙের শার্ট পরে আছে চুল গুলো ভেজা মনে হচ্ছে আরিশ ভাইয়া চুল গুলো হাল্কা ঝারা দিয়ে নিচে নেমে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালো তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল

–তুই এখানে কি করছিস?

আমি কিছু বলতে নিবো তার আগেই আরিশ ভাইয়ার ফুপ্পির ডাকে সেখানে চলে গেলো।তারপর উনাদের বিদায় দিয়ে বাহিরে চলে গেলো। আমার মাথায় রাত্রি আর অদ্রির কথাগুলোই ঘুরছে। ওরা কি সত্যি চিঠিটা আরিশ ভাইয়ার রুমে পেয়েছে।
তাহলে কি নাহিদ ভাইয়ার ব্যাগের উপর থেকে চিঠিটা আরিশ ভাইয়াই লাপাত্তা করেছে।কিন্তু উনি জানলেনই কি করে যে আমি নাহিদ ভাইয়ার জন্য চিঠি লিখেছি

আন্টিকে বলে বাসায় ফিরলাম।তারপর সোজা রুমে চলে গেলাম।কাল এসাইনমেন্ট নিতে কলেজে যেতে হবে।তাই জেনি একের পর এক ফোনকল দিয়েই যাচ্ছে। 7ম বার কল দেওয়ায় রিসিভ করলাম।

–বল।

–কাল এসাইনমেন্ট দিবে মনে আছে তো?

–তুই কি মনে করছিস আমি পড়ালেখার ব্যাপারে কোনো খোজখবর রাখি না?

–না এমন না।যাই হোক তুই বল কাল কয়টা বাজে আসবি।

–জানি না এখন কল কাট তো ভালো লাগছে না তোর সাথে কথা বলতে।

বলে কল কেটে দিলাম।এভাবেই মাথাটা ব্যাথা করছে তারউপর অযথা বকবক একদম সহ্য হচ্ছে না।
কালকের ভাইয়ার জড়িয়ে ধরার কথা মনে পরতেই মন খচখচ করতে লাগলো তাহলে সত্যি কি আরিশ ভাইয়া আমাকে ভালো বাসেন নাকি?


সকালে উঠে দেখি 9 টা বেজে গেছে।তারতারি গিয়ে ব্রাশ করে হাত মুখ ধুয়ে রেডি হয়ে নিলাম।চুল গুলা খোপা করে কাঠি বেধে নিয়ে বের হয়ে যেতে নিতেই আম্মু ধমক দিয়ে বলল

–না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস?

আম্মুর কথায় মুচকি হেসে খাবার টেবিলে বসলাম।দীর্ঘ দুইদিন পর নরমাল ভাবে কথা বলল
কিছুটা খেয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরোলাম।
কলেজে পৌছে দেখি তুবা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মুখের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সামনে যাকে পাবে তাকেই সোজা উল্টাপাল্টা মাইর!
আমি পাত্তা না দিয়ে ওর সামনে গিয়ে দারালাম।আমাকে দেখে কিছুক্ষন গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকায় থেকে বলল

–আধা ঘন্টার মত দাঁড়িয়ে ছিলাম।

–তো?আমি তোকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিলাম নাকি?

আমার এমন পেচানো কথা শুনে আর কিছু বলল না।
কলেজের ভিতরে যেতেই জুবায়ের কে সামনে দেখে চোখ ফিরিয়ে সামনে যেতেই পিছন থেকে বলে উঠলো।

–হেই জিনুবেবি।

জুবায়ের গত 1 বছর ধরে পিছে ঘুরছে আর যেমন তেমন পিছু না মানে যেখানে জেতাম সেখানেই এসে হাজির হয়ে যেতো।এই ছেলের জন্য আমার কলেজেই আসতে ইচ্ছে করতো না।তারপর কলেজ অফ হয়ে গেলো আর এতোদিন পর আবার।আমি পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে নিতেই আবারও পিছ থেকে বলে

–হেই জিনু তুমি আমায় ইগনোর করছো কেনো?

আমি আবারও চলে যেতে নিতেই পথ আটকে দারালো।

–তুমি আমায় ইগনোর করবে তা তো আমি হতে দেবো না। এতোদিন তোমায় কতো মিস করেছি তুমি ভাবতেও পারবে না।আমি তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি নাও।

আমি না নিতে চাইলে জুবায়ের হাতে জোর করে দিতে নেয়।তখনই আরিশ ভাইয়াকে আমার পাশে এসে দারাতে জুবায়ের ছেলেটা ভদ্রভাবে দাঁড়িয়ে বোকা হেসে বলে।

–আরে আরিশ ভাই আপনি?

আরিশ ভাইয়া জুবায়েরের কথাকে পাত্তা না দিয়ে কিছুক্ষন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আচমকা জুবায়েরের মাথার চুল টেনে ধরে গালে জোরসে থাপ্পর লাগায়।উনার এমন কাজে হতভম্ব হয়ে যাই।

চলবে,,,