তোমাতে আমাতে ২ পর্ব-০৫

0
827

#তোমাতে_আমাতে_২
পর্ব ০৫
লেখা আশিকা জামান

সমস্ত ক্লান্তি যেন পড়ার টেবিলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আড়মোরা ভেঙ্গে বই এর উপর থেকে মাথাটা তুলে লায়ন শেপের দেয়াল ঘড়ির দিকে চোখ যায়। রাত আটটার ঘন্টা দিচ্ছে! আমি এইসময় ঘুমে! আমি বিকেল থেকে আটটা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছিলাম, ভাবতেই কেমন যেন লাগছে। আশেপাশে ইমনের অস্তিত্ব অনুভব করার চেষ্টা করলাম। ও স্টাডিরুমে নেই তারমানে নিশ্চয় বেডরুমে। আর এখনো আমাকে ডাকে নি কেন এটা ভাবতেই সমস্ত রাগ ইমনের উপর পড়ছে। যদিও সামনে গেলে রাগ পানি হয়ে যাবে। অবশ্য সমস্ত ক্রেডিট ওর নীল চোখের! আমার মাঝেমাঝে প্রশ্নটা হুট করেই মাথায় চেপে বসে। আচ্ছা ওর চোখটা এমন নীল কেন? সচরাচর কারো চোখতো এমন নয়। হ্যা আমি এই প্রশ্নটা ওকে করেছিলাম। হেসেই উড়িয়ে দিলো।
বললো, ” আল্লাহ, দিছে আমি কি করে বলবো?”
উল্টো আমাকে প্রশ্ন করে বসলো,
” কেন, তোমার প্রছন্দ নয়?”
আমি আর কি উত্তর দিবো? মনে মনে ভাবি আমাদের বেবি হলে কি নীল চোখ হবে ঠিক ইমনের মত?
বই এর পাতা বন্ধ করে আমি বেডরুমমের দিকে যেতে থাকি।
ইমন পিঠের নিচে বালিশ দিয়ে, সমস্ত মনোযোগ ঢেলে ল্যাপটপে কি যেন একটা করছিলো।
আমি নিঃশব্দে বিছানায় গিয়ে বসি। আমার দিকে না তাকিয়েই বললো,
” কি হলো ঘুম ভাংগলো তবে!”
” কি ভাবলে? না ডাকলে আমি উঠতে পারব না।”
ইমন ল্যাপটপটা বিছানার একপাশে রেখে আমার দিকে সরু চোখে তাকায়।
তারপর ভাবলেশহীনভাবে বললো,
” এটা কি ধরনের উত্তর হলো।”
আমি বিছানায় পা তুলে খাটের মাথায় হেলান দিয়ে আরাম করে বসলাম।
” আচ্ছা, তুমি বল আমি কোনদিকে যাবো। আমি যখন বাসায় ফিরি তখন স্টাডি রুমে আপনমনে পড়ছিলে। তোমাকে ডিস্টার্ব করতে চাইনি। এরপরে আবার গেলাম তুমি ঘুমোচ্ছো! আমার উচিৎ ছিল তোমাকে ঘুম থেকে টেনে তোলা। উফ্ সেটাই যে কেন করতে পারি না।”
ইমন কথাগুলো বলে কপাল ভাজ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
” এই কি হলো, এভাবে শুয়ে পড়লে কেন?”
” তো কি করবো। বউ এর গোমড়া মুখ দেখার থেকে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকাটাই বেটার।”
” এই, তুমি উঠবে? না হলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।”
আমি একরকম টেনে হিচড়ে ওকে শোয়া থেকে বসতে বাধ্য করলাম।
” তুমি না দিনদিন খুব পাজী হয়ে যাচ্ছ। ইশ, তোমার জ্বালায় না শান্তিতে কিছু করার উপায় নাই।”
” আমি শান্তিতে কিছু করতে দেইনা!
এই কি করতে দেইনা বলো বলো!”
” এই যে, এখন আমার তোমাকে খুব করে আদর করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু তুমি পেচাঁর মত মুখ করে আছো। তাহলে শান্তিতা পাচ্ছি কোথায়?”
” নিকুচি করেছি তোমার শান্তির!”
কথা বলে শেষ করতে পারিনি তার আগেই ইমন আমাকে হ্যাচকা টানে ওর বাহুডোরে আবদ্ধ করে ফেলে। কিছু বোঝার আগেই ও আমাকে বিছানায় টেনে নিয়ে যায়।
বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
” কিছুতো বুঝেই না খালি পারে আমার উপর রাগ ঝাড়তে।”
কথাটা বিন্দুপরিমাণ কানে আসতেই বলে উঠলাম,
” কিছু বললে? কি বললে? আমি কিছু বুঝিনা না! আমি আজাইরা রাগ ঝাড়ি?”
আমি কিছু বলার জন্য ঠোট নাড়ালেও বলতে পারলাম না। ইমন দৈত্য’র মত এসে আমার ঠোটের উপর হামলে পড়লো। গভীর চুমো’র আস্বাদনে উন্মুখ হয়ে পড়লো। নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করা আর হলোনা। দু হাতে ইমনের গলা জড়িয়ে ধরে নিজেকে সমর্পন করতেই ব্যাস্ত হয়ে উঠলাম।

পাখির কলকাকলি আর কর্মবহ মানুষের কোলাহলের শব্দ কানে আসতেই মিষ্টি সকালটাকে গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে লাগলাম। ভোরের আলো চোখে পড়তেই মধুর লগনের বিদায় ঘন্টাও বুকে শেলের মত বিঁধতে লাগলো। শুরু হচ্ছে এক নতুন দিন। নিজেকে ইমনের থেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা চালালে গাড় ঘুমের মুর্ছনায় ইমন আরো গভীর থেকে গভীরতর আলিঙ্গনে জড়াতে লাগলো।
ঘুমটা নষ্ট করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। আমি ওভাবেই ঘাপটি মেরে পড়ে রইলাম।
হঠাৎ করেই রিংটোন বেজে উঠতেই ইমন ধরফরিয়ে বিছানায় উঠে বসে। কিছুক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর ফোনটা রিসিভ করলো। আমি লক্ষ্য করলাম কি যেন একটা শুনে ইমন খুশিতে আত্নহারা হয়ে যেতে লাগলো। ফোনটা কেটে দিয়ে ইমন খুশিখুশি মুখ করে আমার দিকে তাকায়।
আমি ঘুমজড়ানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
” সকাল, সকাল এত খুশির আমেজ!”
ইমন আমাকে জড়িয়ে ধরে তারপর বললো,
” আদি আমার স্কলারশিপটা কনফার্ম হয়ে গেছে। আ’ম গোয়িং টু এবরোড!”
ওর চোখেমুখে অস্বাভাবিক রকমের উচ্ছ্বাস আমার দৃষ্টি এড়ায় নি। এই মুহুর্তে আমার দুঃখ পাওয়া উচিৎ নাকি খুশি হওয়া ঠিক বুঝতে পারছিনা। মিশ্র অনুভূতি কাজ করছে।
” এই কি হলো? তুমি খুশি হওনি।”
ইমনের আলতো ধাক্কায় আমার সম্বতি ফিরে।
নিজেকে সামলিয়ে বললাম,
” এই ব্যাপারে কিছুতো, তুমি আমাকে আগে বলোনি?”
” আচ্ছা এরকম ভুলে গেলে চলবে কি করে? আমাদের ১১ টা বেবির নামগুলো যে মনে থাকবেনা এ আমি নিশ্চিত। আমি এই দুঃখ এখন কই রাখি।”
হুট করেই ওর এইসব ফাজলামো কথাবার্তাগুলো অসহ্য লাগছে যদিও অন্য সময় হলে এইগুলোই বেশী ভাল লাগতো।
আমার দিক থেকে সাড়া না পেয়ে নিজে থেকে আবার বললো,
” আমিতো তোমাকে বেশ কয়েকমাস পূর্বেই অস্ট্রেলিয়ার স্কলারশিপের ব্যাপারে ডিটেইলসে বলেছিলাম। এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে।”
তখনি মনে পড়ে গেলো , হ্যা অস্ট্রেলিয়ার স্কলারশিপের ব্যাপারে আমার সাথে অনেকদিন আগেই কথা হয়েছিলো। আশ্চর্যজনক ভাবে ব্যাপারটাকে অতোটা আমলে নেইনি। কথায় কথায় আমিও তখন সম্মতি জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখন কেন জানি অজানা আশঙ্কায় শরীর মন শিউরে উঠছে।
আমি বোধ হয় নিজের এই ইমোশনটাকে চেপে রাখতে পারছি না। আমি কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়লাম। ও অবাক চাহনি দিয়ে আমার দিকে কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টি ফেলে তারপর হাত টেনে ধরে,
” আদি, এনিথিং রং?”
” ইমন, আমার না হুট করেই মাথাটা ধরে আসছে। চোখে মুখে পানি দিয়ে আসি।”
ইমন কিছুটা আহত হয়ে আমার হাতটা ছেড়ে দিলো ঠিকি। কিন্তু ওর দুশ্চিন্তাগ্রস্থ কপালের ভাজ আমার চোখ এড়াতে পারেনি।
আমি ইমনকে মিথ্যে বলিনি। সত্যি সত্যি মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠছে। ব্রাশে টুথপেস্ট লাগিয়ে মুখে পুরতেই আবার দুশ্চিন্তা ভর করতে লাগলো। আমি দাত মাজায় মনোযোগ দিতে পারলাম না গড়গড় করে বমি করে দিলাম। একটু পূর্বেই শরীর ঠিক যতোটা ভাল ছিলো এক নিমিষেই দ্বিগুন দূর্বল হয়ে উঠলো। চোখে মুখে পানি দিয়ে বিছানায় এসে ক্লান্তভাবে শুয়ে পড়লাম।
ইমন ওয়াশরুমের দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার কি মনে করে যেন বিছানায় বসলো।
আমার কপালে আলতো স্পর্শ করে তারপর বললো,
” তোমার কি খুব বেশী শরীর খারাপ লাগছে? ঠিক কেমন লাগছে একটু বলোতো?”
আমার সারা শরীর গুলাচ্ছে তবুও দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
” ও কিছু না। আমার ঘুম ক্লিয়ার হয়নি আবার ঘুমাবো। তুমি ফ্রেস হয়ে হসপিটালে চলে যাও।”
নিজেকে লুকোনোর জন্য কাথা মুড়ো দিয়ে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে রইলাম। এরপরে ইমন যে ঠিক আমার ল্যাঞ্জা ধরে বসে থাকবে এ আমার বেশ জানা।