তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব-০৯

0
431

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_৯)

পাশে তাকিয়ে দেখে তুহার মন খারাপটা নিমিষেই উধাও‌ হয়ে গেলো। নিজের অজান্তেই মুখের কোনো হাসি ফুটে উঠলো।

ফারাবি ট্রেন কামরাতে দেখে সকলেই অবাক হয়ে যায়। মিহা তো অবিশ্বাস্য স্বরে বলল…
-হ্যান্ডসাম তুমি কি সত্যি এসেছো।

মিহার এমন কথা শুনে তিশা,অয়ন আর ফারাবি হেসে উঠলো। ফারাবি মুচকি হেসে বললো…
-হুম মিহু সোনা আমি সত্যি এসেছি।

তুহা যতটা না অবাক হয়েছিলো ফারাবিকে দেখে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি অবাক হলো মিহাকে মিহু সোনা বলাতে। সকলেই খুব খুশি ফারাবি আসাতে। ফারাবি সবাইকে আরো একবার চমকে দিয়ে বললো…
– আমি একা নয় আমার সাথে আরো একজন আছে।
– কে?

সবার প্রশ্ন একটাই কে আছে ফারাবির সাথে। ফারাবি তাকে ডাকতেই একটা সুন্দরী মেয়ে ওদের কামরার মধ্যে চলে আসলো। মেয়েটির পরনে একটা শর্ট কূর্তি, জিন্স আর গলায় স্কার্ফ ঝুলিয়ে রাখা। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, আর চোখে কাজল, চুলগুলো পনিটেইল করা। মেয়েটা দেখতে খুবই সুন্দরী, এককথায় যেকোনো পুরুষেরই নজর কাড়তে বাধ্য। কিন্তু মেয়েটা কে?

মেয়েটাকে দেখা মাত্রই কুহু গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। মেয়েটাও হাসি মুখে আগলে নিলো কুহুকে। আর বাকিরা কেউই ঠিক বুঝতে পারছে না মেয়েটা কে। কাব্য অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকার পর বললো…
-তুমি মনিকাদি না।
-হুম। তাহলে চিন্তে পারলে।

কাব্য হেসে দিলো। মনিকা নামটা শুনে অনেকেই বুঝতে পারলো মেয়েটা কে। তবে এখনো বিষয়টা তুহার কাছে খোলসা হলো না। তুহা মেধাকে খোঁচা মেরে কিছু একটা জিজ্ঞাসা করবে তার আগেই ফারাবি বললো…
– আমি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। ওটা হলো মনিকা আমার কাজিন + বেস্টফ্রেন্ড। মনিকা আমার মামাতো বোন, এতদিন বিদেশে ওদের বাড়িতেই ছিলাম আমি।

সকলেই মনিকার সাথে পরিচিত হলো। মনিকা তুহার সামনে দাঁড়িয়ে বললো…
-তুমিই তুহা না।
-জ্বি।
– সত্যি তুমি খুব সুন্দর। একেবারে কিউটের ডিব্বা।

তুহা মনিকার মুখে নিজের প্রশংসা শুনে একটু অবাক হলো। এতটা সুন্দরী একটা মেয়ে ওর প্রশংসা করছে ভাবতেই পারছে না। তুহা মুখের কোনো হাসি ফুটিয়ে বললো..
– তোমাকেও খুব সুন্দর দেখতে। আমি ছেলে হলে তো ক্রাশ খেয়ে যেতাম।

তুহার কথাতে সকলেই হেসে দিলো। ট্রেন তার গতিতে চলতে লাগলো। ট্রেন জার্নির একটা আলাদা রকম আনন্দ আছে। কথাতে কথাতে বলাই হয়নি। ওরা ঘুরতে যাচ্ছে দীঘা সমুদ্র সৈকতে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত সমুদ্র সৈকতটি। বলা হয় যে, দীঘা সমুদ্র সৈকতের ওইতীরে কি আছে তা আজ পর্যন্ত এই তীরের মানুষ আবিস্কার করতে পারেনি। প্লেন ওহ কখনোই উওর-দক্ষিণে রওনা দেয় না। ওই অঞ্চলের মানুষদের পেশা হলো মাছধরা। জেলেরা নিজেদের নৌকা, লঞ্চ নিয়ে সমুদ্র থেকে মাছ ধরে নিয়ে এসে বিক্রি করে। স্বল্প খরচে অসাধারণ একটা ঘোরার জায়গা হলো দীঘা। তো বাকিটা আস্তে আস্তে ঘুরবো আর জানবো। এখন গল্পে‌ ফেরা যাক..

হাওড়া স্টেশন থেকে দীঘা স্টেশনে যাবার জন্য মেলট্রেনে লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা। আর লোকাল ট্রেনে যেতে গেলে প্রায় ৬-৭ ঘন্টা লেগেই যায়। তুহাদের যাত্রাটা মেলে ছিলো বলেই খুব তাড়াতাড়িই পৌঁছে গেছে। সারাটা রাস্তা সকলেই খুব আনন্দ করেছে। তবে কোথাও না কোথাও তুহা খুশি হতে পারেনি।

স্টেশন থেকে গিয়ে সমুদ্রের কাছাকাছি এলাকায় থাকার জন্য রুম ভাড়া করে নেয় ওরা। মোট চারটে রুম ভাড়া করা হয়। একটা রুমে তিশা আর অয়ন। ওরা যেহেতু নিউ কাপল তাই ওদের একাদের ছেড়ে দেওয়ায় ভালো। দ্বিতীয় ঘরে ফারাবি,কাব্য আর মেহতাব। আর তৃতীয় ঘরে মেধা, তুহা,মিহা আর চতুর্থ ঘরটাই কুহু আর মনিকা।

সকলেই ফ্রেশ হয়ে সমুদ্রের ধারে যাবে ঠিক করলো। ট্রেন জার্নি করে‌ এসে সকলেই খুব ক্লান্ত। সকলেই সমুদ্রের ধারে এসে খুশি হয়ে যায়। তুহা আর মিহা তো‌ বিশাল খুশি কারন ওর বাবা কখনোই ওদের একা কোথাও ঘুরতে পাঠাননি। এই প্রথম তাও আবার সমুদ্র সৈকতে। দুইবোনের আনন্দ তো‌ ধরে রাখা দায়। সমুদ্রে প্রচন্ড পরিমানে স্রোত। এখনো‌ ভাটা পরেনি। পানির চাপটা প্রচুর। সময়টা শীতকাল হলে এতটাও পানির চাপ থাকে না কিন্তু বর্ষা কাল হওয়াতে পানির চাপ খুব। এত স্রোতে কেউ নামতে পারছে না ভয়ে। সকলেই পাথরের উপরে বসে সমুদ্রের ঢেউ দেখে চলেছে।

অয়ন ওদের সকলের উদ্দেশ্যে বললো…
– এখন তো নামা যাবে না ভাটা পড়ুক তারপরে না হয় নামবো কি বলো‌ সকলে।

সকলেই সহমত জানালো কিন্তু ফারাবি বাঁধা দিয়ে বললো..
– মেয়েদের নেমে কাজ নেয়।
– কেন?(কাব্য্)
– এত বাইরের ছেলেদের মাঝে মেয়েগুলো নামবে। ওদের দিকে কেউ লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাবে সেটা আমার সহ্য হবে না তাই নামতে‌ হবে না।

মেয়েগুলোর মন নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো। অয়ন ওদের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল…
– আরে ব্রো‌ দ্যাখো সকলেই নিজেদের কাজে ব্যস্ত তাই কেউ কিছুই নজর‌ দেবে না। তাই রিল্যাক্স করো আর ওরা এতদুর আসলো আর ভিজবে না এটা কিভাবে হয়।
– আমি আর কথা শুনতে‌ চাই না। ওই সামনে গিয়ে বসবে,ঢেউ গায়ে লাগবে তাতেই হবে।

ফারাবি তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে চলে যায়। সব মেয়েগুলোর মুখগুলো বাংলার পাঁচ হয়ে যায়। কিছুটা দূর হাঁটাহাঁটি করার পর একটা পার্ক দেখতে পাওয়া যায়। পার্কের ভেতরে একটা মাটির পাহাড় আছে যেখান থেকে সমুদ্রটাকে অসাধারণ লাগছে। ফারাবি সবার মন ভালো করার জন্য ওই পার্কে ওদের নিয়ে যায়। দৃশ্যটা দেখে কিছুটা হলেও ওদের মনটা ভালো হয়।

অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পরেও সমুদ্রে ভাটা না পড়াতে ওরা রুমে ফিরে যায়। খাওয়া দাওয়া করে আবার আসবে ঠিক করে।

রুমে গিয়ে মিহা মুখটা গম্ভীর করে বললো…
– এই দিভাই হ্যান্ডসাম কি এটা ঠিক করলো‌ বল
– আমি কি জানি।
– হুঁ।

ছেলেগুলো সবাই নেমেছে আর মেয়েগুলো‌ পাহাড়া দিচ্ছে ওদেরকে 😐 মিহা আর কুহু তো‌ মন খারাপ করে‌ বসে আছে। তিশা ওদেরকে বললো…
– ওই চল সামনে টাই গিয়ে বসি।
– আচ্ছা।

সকলেই সমুদ্রের কাছাকাছি একটা পাথরের উপরে গিয়ে বসলো। পানির স্রোত বেশি হওয়াতে ওদের গায়েও পানি ছিটকে পড়ছে। একটা ওয়াও ওয়াও ফিলিংস হচ্ছে। মিহা ছেলেগুলো কে দেখে আফশোস করে বললো..
– আজ ছেলে‌ হলে‌ আমরাও নামতে‌ পারতাম।

সকলকে চমকে দিয়ে ফারাবি ওদের কাছে এসে ,,মিহাকে আর কুহুকে ওর হাত ধরে‌ নামতে বললো। বাকিদের মুখটা বাংলার পাঁচের মতো‌ হয়ে আছে। একে একে সকলকেই নামিয়ে দিলো ফারাবি, বাকি থাকলো শুধু আমাদের তুহা রানি। তুহা সবার আনন্দ করা দেখছে ওর মনে হচ্ছে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে। ফারাবি ওঠে এসে ওর‌পাশে বসতেই তুহা অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ফারাবি আলতো হেসে বলল…
– কি হয়েছে তুই নামবি।
– হুম।
– কিন্তু কি করে নামবি তুই তো..

ফারাবির কথা শুনে‌ তুহার চোখ চড়কগাছ। ফারাবি জানলো‌ কিভাবে?

#চলবে…