তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব-০২

0
811

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব_২)

তুহা আর মেধা আড্ডা দিচ্ছে। ওরা দুজন সমবয়সী হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই ওদের মাঝে একটা দারুন সম্পর্ক আছে। দুজন দুজনের বেস্টফ্রেন্ড। খুশির সাথে ওদের বন্ধুত্ব ক্লাস ৯ থেকে সেই থেকেই ওরা তিনজন একসাথে আছে।

তুহার মায়েরা চারভাই বোন। বড়ো মামার (ফারাবির বাবা) একটা সন্তান ফারাবি। সকলের আদরের চোখের মনি। ছোটমামার তিনটে ছেলে মেয়ে কথা,কাব্য আর কুহু। কথা বিবাহিত। কাব্য এম.এ পড়ছে আর কুহু মিহার সববয়সী। তুহার বড়ো খালার দুই মেয়ে, মেধা আর তিশা। তিশার বিয়ে ঠিক আছে আর কয়েকদিন পরেই বিয়ে হবে। আর মেধার কথা তো সবাই জানো।আর বাকি রইল তুহার মায়ের কথা সেটা তো আগেই বলে দিয়েছি। যাই হোক গল্পে ফেরা যাক।

দুজনের আড্ডার মাঝেই মিহা ঘরে প্রবেশ করলো।

-এই দিভাই আর মধুদি তোদের নীচে মা ডাকছে।
– এই মিহা তোকে বলেছি না আমাকে মধু বলবি না আমার নাম মেধা। তুই তো বড়ো হয়ে গেছিস এবার ঠিক করে ডাক।
– আরে মধুদি পুরানো অভ্যাস কি বদলানো যায় বলো। এই দ্যাখো না ফারাবি হ্যান্ডসামকে কি আমি আর দাদাই বলতে পারি বলো।

মেধা আর তুহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো মিহার দিকে।তুহা খানিকটা রাগ নিয়ে বললো…

-এই মিহু কি বললি তুই ফারাবি হ্যান্ডসাম।
– তবে নয় তো কি দিভাই ওর মতো একটাও ছেলে দেখাতে পারবি আমার তো ইচ্ছা করে কিস করে দিতে।

মেধা আর তুহার চোখ তো ঠিকরে বেরিয়ে আসার উপক্রম। এই মিহার কি মাথা কি গেছে নাকি।

– ওই মেধা ওর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কাজিনকে ওইরকম কেউ বলে।
– আরে দিভাই তুইও যদি একবার মন থেকে ফারাবিকে দেখিস না তাহলে তুইও ওর প্রেমে পড়ে যাবি।

তুহার মায়ের ডাক পড়ায় মিহা ওখান থেকে চলে যায়। তুহার কানে এখনো মিহার বলা কথা গুলো বাজছে। তুহাকে শকে চলে যেতে দেখে মেধা খোঁচা দিয়ে বললো…
-কি তুহারানি দাদাই এর প্রেমে পড়ে গেলি নাকি।

তুহা রাগী লুক নিয়ে বললো..
-ওই শয়তানের প্রেমে কখনোই না। শয়তান ছেলে আমার পেছনে সবসময় পড়ে থাকে আমি বুঝি না ওনার কি শত্রুতা আমার সাথে।

তুহা রাগ করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মেধা কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো।তুহার মা মেধা কে খেতে দেয় আর পাশে তুহা বসে আছে।

-কিরে তুশার কবে বিয়ে হবে।
– খুব তাড়াতাড়ি জিজু দেশে আসলেই বিয়ে হয়ে যাবে।
– আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো খবর।
– কি মজা একটা বিয়ে খাবো।‌মা দিভাই এর বিয়েটাও দিয়ে দাও না।
– মিহার বাচ্চা।
– সরি দিভাই আমি তহুরা আর মিরাজের বাচ্চা।
-তোকে তো আমি।

মিহার পেছন পেছন তুহা ছুট লাগায়। তুহার মা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। মেধা হাসতে হাসতে শেষ।

পরেরদিন..

-কিরে তুহা তুই কাউকে কিছু না বলে কাল চলে গেলি কেন?
– আরে খুশি তেমন কিছু না। চুপ কর স্যার আসছে।

ক্লাসটা ফারাবির। ফারাবি ক্লাসে আসতেই মেয়েগুলো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। তুহা বোঝে না মেয়েগুলো ওর মাঝে কি পাই যার জন্য ওইভাবে গিলে খাই।

– গুড মর্নিং স্টুডেন্ট (মুচকি হেসে)
– গুড মর্নিং স্যার।(সবাই একসাথে)

স্যারের মুচকি হাসি দেখে মেয়েরা তো হার্টফেল করে ফেলবে এইরকম ভাব করছে। তুহাকে খুশিকে খোঁচা মেরে বললো..
-ভাই দ্যাখ না ফারাবি স্যারের হাসিটা কি সুন্দর।

খুশির কথা শুনে তুহার মাথায় আগুন ধরে গেছে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো..
-এই খুশি আমার সামনে ওই ব্যাটার কিছু বলবি না। মে*রে রেখে দেবো।

খুশি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারাবি গম্ভীর গলায় বলল…
– তিননম্বর টেবিলের ব্ল্যাক ড্রেস উঠে দাঁড়াও।

তুহা দেখলো সেই কালো ড্রেস পড়ে আছে তার মানে বজ্জাতটা ওকেই দাঁড়াতে বলছে। তুহা কোনো উপায় না দেখে মেধার দিকে করুন চোখে আর খুশির দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

– কি কথা বলছিলে আমাদের ও বলো আমরাও শুনি।(গম্ভীর গলায়)
– স্যার এই খুশি বলছিলো আপনার হাসিটা খুব সুন্দর। আর আমি বলেছি ভালো নয়। ( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো)

ক্লাসের সকলে হা করে তাকিয়ে আছে তুহার দিকে। তুহা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফারাবির মুখের প্রতিক্রিয়াটা কি সেটা বোঝা যাচ্ছে না। ফারাবি ওদের বেঞ্চের পাশে এসে দাঁড়াল। ভাব নিয়ে মুখের কোনো একটা বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বললো…
– তাই বুঝি এই কথায় হচ্ছিলো। তুই বুঝি আমার হাসিটা খেয়াল করেছিস গভীর ভাবে।(প্রথমের কথাটা জোরে বললেও শেষের কথাটা আসতে বললো ফারাবি।)

ফারাবির কথা শুনে তুহা চোখ বড়ো বড়ো করে ফারাবির দিকে তাকালো। ফারাবি নিজের মুখের গম্ভীরতা ফিরিয়ে এনে বললো..
-কি হলো উত্তর দাও।
– হ্যা ওটাই বলেছি।
– পরের ক্লাসে বসে আমার চর্চা বা অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা হলে সবার অবস্থান ক্লাসের বাইরে হবে বলে দিলাম।

ফারাবিকে সকলে পছন্দ করলেও ওর রাগকে সকলেই ভয় পাই। ক্লাস শেষ করে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে পিওন এসে বললো..
– তুহা কে ফারাবি স্যার ডাকছে।

তুহা রাগে ফোঁস ফোঁস করে উঠলো‌ এটা নতুন নয় আগেও ডেকে গেছে কিন্তু যায়নি। এই নিয়ে ৫ বার ডাক পড়লো তুহার। মেধা তুহার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল..
-বোইন যা না নাহলে দাদাই পরে তোর বারোটা বাজিয়ে দেবে।

তুহা রাগ নিয়ে অন্য দিকে ঘুরে এদিক ওদিক যেতে লাগলো। হুট করেই আরো একবার কেউ ওকে টেনে নিলো।তুহার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো…
-তাহু পাখি আমি।

গলাটা শুনে বুঝলো অন্য কেউ নয় তার প্রেমিক পুরুষই তাকে টেনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু মনের মধ্যে রাগ হতে লাগলো। রাগে গর্জে ওঠে বললো…
-এই আপনি কি আমাকে ঠিক করে থাকতে দেবেন না নাকি। আর কেন বা আপনি এতটা লুকোচুরি খেলা খেলছেন। সাহস থাকে তো সামনে চলে আসুন।

সামনের ব্যক্তিটা তুহার কোমড় টেনে নিয়ে গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে একটা কামড় দিলো। তুহা বুঝলো মানুষটা রেগে গেছে খুব।

– ছাড়ুন আমাকে।

– তুমি আমার থেকে ছাড়া পাবে না তাহু পাখি।‌ তুমি শুধু আমার। আর সামনে আসার কথা,আমি এতটাও কাপুরুষ নয় যে সামনে আসতে ভয় পাবো তবে কিছু কারনে আমি এখনি তোমার সামনে আসতে পারবো না। তবে খুব তাড়াতাড়িই আমি তোমার সামনে আসবো সহ্য করতে পারবে তো আমাকে না আমার রুপ দেখে জ্ঞান হারাবে।( ফিসফিসিয়ে শীতল কন্ঠে)

ব্যক্তিটির কথা শুনে তুহার সারা শরীরে শিহরন বয়ে যাচ্ছে।তুহার কপালে একটা চুমু দিয়ে সে চলে যায়। তুহার মনের কোনো একটা প্রশ্ন আসতেই থাকে কি সেই কারন যেটার জন্য উনি সামনে আসছেন না। একটা কথা মনে আসতেই তুহার রাগ লাগলো।

– অ্যা। রুপ দেখে জ্ঞান হারাবে নাকি। খালি নিজের রুপের অ্যাটিটিউট ফারাবির মতো।

কথাটা বলে তুহা থমকালো। কি বললো ও নিজেই ফারাবির মতো।

-কি সব ভাবছি আমি ওই ব্যাটা তো আমাকে দেখতেই পারে না। আবার নাকি পছন্দ করবে। আস্ত একটা শয়তান দেখবি তোর বউ জুটবে না।আর জুটলেও জল্লাদ বউ হবে, হুঁ।

তুহার ফোন বাজার শব্দ পেয়ে ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে। মেধা ফোন ধরেই বললো…
– তুহা তাড়াতাড়ি আয় একটা সারপ্রাইজ আছে।

তুহা কিছু বলার আগেই মেধা ফোন কেটে দিলো। তুহা মেধার কাছে যায়।

-কি বল?

মেধা কিছু একটা জিনিস ইশারায় দেখায় তুহা খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।

#চলবে….

বিঃ দ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে সকলেই বলবেন।

হ্যাপি রিডিং 🙂